Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মেরি টিউডর (১ম পর্ব): যেভাবে সিংহাসনে এলেন ব্লাডি মেরি

সেবার প্রথম ইংল্যান্ডের রাজসিংহাসনে কোনো নারী অভিষিক্ত হলো, সেবার প্রথম কোনো রানী হাতে নিলো ইংরেজদের সুবিশাল রাজ্যের ন্যায়দণ্ডের ভার। মেরি টিউডর ছিলেন সেই ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব, যাকে ইতিহাস মনে রাখলো ‘ব্লাডি মেরি’ হিসেবে। টিউডর বংশের শেষ রাজা অষ্টম হেনরি ও তার প্রথম রানী ক্যাথরিনের প্রথম সন্তান ছিলেন মেরি। মেরি এই রাজদম্পতিরর প্রথম সন্তান না বলে একমাত্র জীবিত সন্তান বলাটাই বেশি উপযুক্ত হবে, কেননা তার আগে বেশ কয়েকবার গর্ভধারণ করলেও শেষ পর্যন্ত কোনো সন্তানই বাঁচতো না, একমাত্র মেরিই এর ব্যতিক্রম হোন। তাই বেশ ছোটবেলা থেকেই এটা নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিলো যে রাজমুকুটের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী একমাত্র রাজকন্যা মেরিই। কিন্তু শিশু থেকে কিশোরী হতে না হতেই সিংহাসনের হিসেব আর এত সহজ থাকে না, সহজ থাকে না মেরির জীবনের অংকগুলোও।

পিতার আদেশে মায়ের মৃত্যুর সাক্ষী মেরির জীবন চিরকালই থাকে রক্তের স্রোতে ভাসমান, পিতার স্নেহবঞ্চিত মেরির হৃদয় সময়ের সাথে সাথে হতে থাকে আরো শীতল আর রাজনীতির কূটকৌশল মেরির কাছ থেকে কেড়ে নেয় ভালোবাসার উষ্ণতা। পরিবারের ভালোবাসা সে পায়নি, স্বদেশকে ভালোবাসতে সে পারেনি- পরিণামে সিংহাসনে তার অধিষ্ঠান ইংল্যান্ডকে ভাসিয়ে দিয়েছিলো রক্তের স্রোতে। সামান্য অপরাধে রানী আদেশ দিতেন শিরচ্ছেদের, আজীবন কারাবাসের ভয়ে এমনকি দরবারের লোকেরাও থাকতো তটস্থ। এই রানীর আদেশেই একবার উত্তরের এক গ্রামে পুড়িয়ে মারা হলো প্রায় ছয়শো সাধারণ প্রোটেস্ট্যান্ট বিশ্বাসীকে। এভাবেই রানীর উষ্ণতাহীন নারী হৃদয় ডেকে আনে ইংল্যান্ডের বুকে এক ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ, কিশোরী রানী মেরি ইতিহাসে নিজের নাম লেখান রক্তপিপাসু মেরি হিসাবে, সাধারণ মানুষ তাকে চেনে ‘ব্লাডি মেরি’ বলে।

কুখ্যাত ব্লাডি মেরির মেরির চরিত্রায়নে মার্গো রবি (১); image source: twitter.com

১৫১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। ইংল্যান্ডের রাজ সিংহাসনের জন্য যখন উত্তরাধিকারীর অভাব সবচেয়ে প্রকট হয়ে উঠেছে, তখন এই দিনে রানীর গর্ভ থেকে পৃথিবীতে জন্ম নিলেন মেরি। রাজা-রানীর বিয়ে হয়েছে তখন প্রায় সাত বছর হয়ে গেছে, বেশ কয়েকবার সন্তানের মুখ দেখার সম্ভাবনা দেখা দিলেও সেই সৌভাগ্য তখনো অধরা এই রাজদম্পতির জন্য। এমতাবস্থায় একটি সুস্থ সন্তান রানীর কোল আলো করে আসলো। স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায়, কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলো সেই সন্তান ইংল্যান্ডের জন্য! মেরির জন্মের খবরে যখন প্রাসাদের বিশাল ঘণ্টাগুলো বেজে উঠেছিলো, সমগ্র রাজ্য আনন্দে ভেসে গিয়েছিলো, সেদিন সাধারণ মানুষ ঘুণাক্ষরেও আন্দাজ করতে পারেনি এই আকাঙ্ক্ষিত রাজকুমারীর হাতেই তাদের প্রিয় স্বদেশে কী বিপুল রক্তপাত হতে যাচ্ছে! যা-ই হোক, জন্মের পরপরই মেরিই যে হতে যাচ্ছেন সিংহাসনের ভবিষ্যৎ, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ না থাকলেও সে যে একজন মেয়ে, এই বিষয়টিও সবার মনোযোগের অগোচরে থাকলো না। এর আগে কখনোই একা একজন নারী ইংল্যান্ডকে শাসন করেনি, তাই নির্ধারিত হলো বিবাহের মাধ্যমে রাজকুমারী রাজবধূ হিসাবে স্বামীর পাশে বসে নিজের রাজত্ব সামলাবেন। ভাবতে অবাক লাগে যে, এই পৃথিবী কত শত যোগ্য রানী পেলেও কেবল রানী রাজ্য চালাবেন, তা মেনে নিতে সবচেয়ে সভ্য ও উন্নত দাবি করা জাতিগুলোরও চিরকাল ছিলো কত আপত্তি! মেরিও তার বাইরে যেতে পারেননি। তাই একদম দুগ্ধপোষ্য শিশু মেরির জন্য আসতে থাকে নানা রাজ্য ও অভিজাত পরিমণ্ডল থেকে বিয়ের প্রস্তাব। মাত্র দু’ বছর বয়সে মেরির বাগদান হয়ে যায় ফ্রান্সের রাজকুমারের সাথে। একথা অবশ্যই বলতে হবে যে, এটি ছিলো মেরির জীবনের আরো অনেক বাগদানগুলোর একটা। যেহেতু সবাই এই ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলো যে মেরিই হতে যাচ্ছেন ভবিষ্যত ইংল্যান্ডের অধিকারিণী, তাই মেরির বিয়ে কখনোই ভালোবাসা, স্নেহ বা ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপার ছিলো না, এটা ছিলো সেসময়কার রাজনীতির এক মোক্ষম অস্ত্র।

কুখ্যাত ব্লাডি মেরির চরিত্রায়নে মার্গো রবি (২); image source: twitter.com

ছোট্ট মেরি ভালোবাসতো গান, নাচ আর খেলা। সেবিকার তত্ত্বাবধানে বড়ো হতে থাকে রাজার পর রাজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি শিশু মেরি। মাত্র আট বছর বয়সে মেরিকে ভাষাশিক্ষা, রাষ্ট্রপরিচালনা জ্ঞান ও রাজনীতির শিক্ষা অর্জনের জন্য প্রথামতো পাঠিয়ে দেওয়া হয় অভিজাত শিক্ষালয়ে। একদিকে যেমন চালিত হতে থাকে ইংল্যান্ডের সিংহাসনের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, অন্যদিকে মেরিকে তার মা তার নিজের দেশের ভাষা ও পরিবেশেরও উপযুক্ত করে গড়তে থাকেন। মেরির মা, ক্যাথরিন আফ অ্যারোগেন ছিলেন খুবই প্রভাবশালী মহিলা এবং সেইসাথে ছিলেন স্প্যানিশ রাজপরিবারের একজন, যেই পরিবারের অধীন তখন ছিলো ইউরোপের অধিকাংশ দেশ। মা ক্যাথরিন সব সময় চেয়েছেন, তার মেয়ে যেন পিতার ন্যায় তার মাতৃপক্ষের উত্তরাধিকার সম্পর্কেও সমান সচেতন থাকে। ফলে মেরি খুব কম বয়সেই স্প্যানিশ ভাষায় অত্যন্ত দক্ষ হয়ে ওঠেন, স্প্যানিশ সংস্কৃতির সাথে হয়ে ওঠেন স্বদেশের মতোই পরিচিত। এভাবেই উচ্চাভিলাষী মায়ের প্রভাবে ও রাজতন্ত্রের নিয়ম মেনে ভালো এগোচ্ছিলো ইংল্যান্ডের রাজকুমারীর জীবন ও শিক্ষা। এই আপাত শান্ত জীবন তো ছিলো কেবল পরবর্তী দুর্যোগেরই পূর্বাভাস। ১৫৩৩ সালে ষোড়শী রাজকুমারীর জীবনে নেমে এলো এক ভীষণ ঝড়। সমস্ত প্রথাকে তুচ্ছ করে, তৎকালীন চার্চের বিরুদ্ধে গিয়ে মা ক্যাথরিনকে অস্বীকার করে ও ডিভোর্স দিয়ে পিতা রাজা অষ্টম হেনরি বিয়ে করলেন দীর্ঘদিনের প্রেমিকা অ্যানি বোলেইনকে।

ইতিহাসে একদিকে যখন অ্যানি বোলেইনের অধ্যায় শুরু হচ্ছিলো, অন্যদিকে শুরু হচ্ছিলো মেরির জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ের। পিতার দ্বারা মায়ের পরিত্যাগ মেরির কিশোরী হৃদয়ে এক কঠিন আঘাত হানে। মানসিক সেই আঘাতের সাথে সাথে তার জীবনে নেমে আসে বাস্তবিক দুর্ভোগও। হেনরি ও অ্যানের সন্তান এলিজাবেথের জন্মের সাথে সাথে সিংহাসনের মেরির একচ্ছত্র অধিকার হয়ে পড়ে প্রশ্নবিদ্ধ। হেনরির ক্যাথরিনকে ত্যাগ করা ক্যাথরিন-কন্যা মেরির রাজকীয় সমস্ত অধিকারের ওপর আনে হীন আঘাত।

অ্যানি বোলেইন; image source: flickr.com

এমতাবস্থায় নতুন রানী অ্যানও তার কন্যার প্রতিদ্বন্দ্বীকে সহজভাবে মেনে নেননি। মেরি যেমন অস্বীকার করে এলিজাবেথের জন্মের বৈধতা, তেমনি অ্যান মেরির তত্ত্বাবধায়ককে নির্দেশ দেন মেরি নিজেকে রাজকুমারী দাবি করলেই যেন তাকে চাবুক দিয়ে আঘাত করা হয়। পিতার অমনোযোগ ও অবহেলার শিকার কেবল তারুণ্যে পা দেওয়া এক রাজকুমারীর জন্য আসলেই সে এক চরম দুর্যোগের সময়। অন্যদিকে মা ক্যাথরিনের সাথে দেখার করার অনুমতি পর্যন্ত তার ছিলো না। পাঁচ বছরে মাত্র একবার দেখা করা হতো মায়ের সাথে। অন্যদিকে মায়ের সংস্পর্শে মেরি বড় হয়েছিলেন একজন অত্যন্ত সংবেদনশীল ও ধর্মপ্রাণ ক্যাথলিক হিসাবে। তার বিবেক তাকে রাজার নতুন চার্চ ও তার প্রধান হিসাবে পিতা হেনরিকে মেনে নিতে তীব্র অসম্মতি জানায়। এই বিদ্রোহের ফলে দেশের একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী পিতার দ্বারা কন্যা প্রায় স্পষ্টতই বহিষ্কৃত হন। এই অবস্থা চলতে থাকে বহুদিন ধরে, আর এর প্রভাব এতটাই প্রকট ছিলো যে ইতিহাসবিদরা দাবি করেন, আমৃত্যু মেরি তার ওপর হয়ে হয়ে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিশোধ নিতে থাকেন এবং নিজের সকল কাজকেই এর অংশ হিসাবে ভাবতে থাকেন।

অষ্টম হেনরি; image source: thegolfclub.info

এমন অবস্থায় ১৫৩৬ সালে ক্যাথরিনের মৃত্যু তাকে বিপর্যয়ের চূড়ান্তে পৌঁছে দেয়। তবে ঈশ্বর মানুষের জন্য একসাথে সব দরজা বন্ধ করে দেন না বলেই হয়তো তার কিছুদিন পরে অ্যানি বোলেইন ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেফতার হন। অ্যানের অপসারণ মেরির জন্য রাজার কাছে পৌঁছানোর রাস্তা প্রশস্ত করে দেয়, পিতার কাছে তার চিঠি লেখা শুরু হয়। কঠিন হৃদয়ের হেনরি অবশ্য মেরির পূর্বের বিদ্রোহের কথা কখনো ভুলে যাননি, এবং মেরিকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন- যদি মেরি তাকে চার্চের সর্বময় প্রধান হিসাবে মেনে না নেন, তবে তিনি বিশ্বাসঘাতক হিসাবে চিহ্নিত হবেন এবং তার উপযুক্ত পরিণামের সম্মুখীন হবে। নিজের বিশ্বাস, শিক্ষা, মায়ের উত্তরাধিকার, এমনকি নিজের ক্যাথলিক সত্ত্বার বিরুদ্ধে গিয়ে পিতার দেওয়া শর্তে রাজি হতে বাধ্য হয় মেরি।

তারপর? মানুষ মাত্রই ক্ষয়মান। সকল স্বেচ্ছাচারিতার অবসান ঘটিয়ে ১৫৪৭ সালে রাজা অষ্টম হেনরি মারা গেলেন। পিতৃহারা হলেও যেন মুক্তি পেলেন মেরি। সিংহাসনে বসলেন সৎভাই দশ বছরের বালক এডওয়ার্ড। মাত্র ষোলো বছর বয়সে মারা গেলেন ভগ্নদেহ বালক রাজাও। এডওয়ার্ডের মৃত্যুর পর প্রোটেস্ট্যান্ট শাসনের ধারা অব্যাহত রাখতে এডওয়ার্ডের রেখে যাওয়া দলিল মোতাবেক প্রথমে লেডি জেন গ্রে সিংহাসনে বসলেও অতি দ্রুতই তাকে উচ্ছেদ করে টিউডর বংশের শেষ দু’টি প্রদীপের একটি, মেরি টিউডর, সাথে নিয়ে আসেন প্রজাদের বিপুল সমর্থন। প্রায় পনেরো হাজার সহযাত্রীর বিশাল এক কাফেলা নিয়ে কোনোরকম শক্ত বাধা ছাড়াই রাজপ্রাসাদের দিকে এগিয়ে চলেন মেরি। অবশেষে সাঁইত্রিশ বছর বয়স্কা মেরি তার জন্মগত ন্যায্য অধিকারবলে ইংল্যান্ডের সিংহাসনে বসলেন। নতুন এক সময়ের আরম্ভ এখানেই। মেরির রাজত্বের সেই ঐতিহাসিক সময়কে থাকছে আমাদের ব্লাডি মেরিকে নিয়ে এই লেখার দ্বিতীয় পর্বে।

This article is about the beginning of the reign of Marry Tudor as the queen of England. She comes after the king Henry-8 and Edward-6 and goes through lots of ups and downs on the way to throne.

Necessary sources are hyperlinked inside.

Featured Image: besttennews.com

Related Articles