“ব্রিটেন কি ভারতবর্ষ থেকে অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ করেছে?” এই প্রশ্নটি হয়তো সরলতায় “দুই আর দুইয়ে কি চার হয়?” শ্রেণীর নিতান্ত নিরীহ প্রশ্নকেও হার মানাবে। বিশেষজ্ঞ তো নয়ই, এমনকি ইতিহাসের মনোযোগী ছাত্র হওয়ারও দরকার পড়ে না এজন্য। ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ব্যাপারে ন্যূনতম জ্ঞান রাখে এমন যে কেউই চোখ বুজে বলে দিতে পারবে, ব্রিটিশরা এই সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা ভারতবর্ষ থেকে যথেচ্ছ সম্পদ আত্মসাৎ করে নিয়ে গেছে।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ব্রিটেনে এখনও মানুষকে ভুল ধারণার বশবর্তী করে রাখা হচ্ছে। সেখানে এখনও তথাকথিত মিথের প্রচলন রয়েছে যে, ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য নাকি তাদের জন্য একেবারেই লাভজনক ছিল না, বরং প্রশাসনিক কাজে প্রচুর পরিমাণে অর্থ তাদেরকে গচ্চা দিতে হয়েছে। তারপরও এটি ব্রিটিশদের বদান্যতা যে তারা দয়া করে ভারতবর্ষে মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছে, ভারতবর্ষের ‘প্রজা’দেরকে কৃপা করে শাসন করে গেছে!
নতুন গবেষণায় মিললো যে ফল
কিন্তু আত্মবিস্মৃত ব্রিটিশদের এই ধারণা যে ঠিক কতখানি ভুল, তা ধরিয়ে দিতেই যেন কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে Dispossession, Deprivation, and Development নামক একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ উৎস পাটনায়েক। সেখানে ভারতবর্ষে ব্রিটিশদের প্রায় দুই শতকের কর ও বাণিজ্যের খতিয়ান বয়ানের মাধ্যমে তিনি সোজাসাপটা হিসাব তুলে ধরেছেন, ১৭৬৫ থেকে ১৯৩৮ সালের মধ্যে ৪৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যমানের সম্পদ পাচার করে নিয়ে গেছে ব্রিটিশরা।
সংখ্যাটি সুবিশাল। এর বিশালত্বের ব্যাপারে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে একটি ছোট্ট তথ্য আপনাদের সামনে হাজির করা যাক- এই ৪৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার আজকের দিনেও যুক্তরাজ্যের জিডিপি (গ্রস ডমেস্টিক প্রোডাক্ট)-এর ১৭ গুণ বেশি!
কীভাবে সম্ভব হলো এটি?
সম্পদ পাচারের বিষয়টি প্রধানত সংঘটিত হয়েছে বাণিজ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে। সাম্রাজ্য স্থাপনের আগপর্যন্ত ব্রিটেন ভারতবর্ষ থেকে টেক্সটাইল ও চালের মতো পণ্য ক্রয় করতো সরাসরি ভারতীয় উৎপাদকদের কাছ থেকে। আর এসব পণ্যের বিনিময় মূল্য তারা পরিশোধ করতো সাধারণ উপায়ে- প্রধানত রূপার মাধ্যমে, যেমনটি তারা অন্যান্য দেশের বেলায়ও করে থাকতো। কিন্তু ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতবর্ষের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কুক্ষিগত করার পর থেকেই এই ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটে। তারা ভারতীয় বাণিজ্যে মনোপলি স্থাপন করে।
এবং এই মনোপলির মূল ভিত্তি ছিল কর। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি উপমহাদেশ থেকে কর সংগ্রহ শুরু করে, এবং চতুরতার সাথে তারা সংগৃহীত আয়ের এক-তৃতীয়াংশ ব্যবহার করতে থাকে ব্রিটিশ প্রয়োজন মেটাতে ভারতবর্ষ থেকে পণ্য ক্রয়ের কাজে। সহজ কথায় বলতে গেলে, ভারতীয় পণ্য কিনতে নিজেদের পকেট থেকে টাকা খরচের পরিবর্তে, ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা সেগুলো কোনো অর্থ ব্যয় না করেই সংগ্রহ করতে থাকে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, তারা কৃষক ও তাঁতিদের কাছ থেকে পণ্য দাম দিয়েই কিনছে বটে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা বিনিময়ে সেই অর্থই প্রদান করছে, যা তারা কিছুকাল আগে এই কৃষক-তাঁতিদের কাছ থেকেই হাতিয়ে নিয়েছে!
একে একপ্রকার জালিয়াতিই বলা চলে। কিংবা পুকুর চুরি বলতে আমরা যা বুঝে থাকি আর কী। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, অধিকাংশ ভারতীয়ই এই বিষয়গুলো ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি। কারণ যে প্রতিনিধিরা তাদের কাছ থেকে কর সংগ্রহ করতে আসতো, ঠিক তারাই তো আবার তাদের কাছ থেকে পণ্য ক্রয় করতে আসতো না। অশিক্ষিত ভারতীয়দের পক্ষে তখন এটি বোঝা সম্ভবপর হয়নি যে গ্রহীতা ও দাতা আলাদা আলাদা ব্যক্তি হলেও, তাদের মূল উৎস আসলে অভিন্ন, এবং তাদের মাঝে যোগসাজশ বিদ্যমান রয়েছে।
ভারতবর্ষ থেকে নিয়ে যাওয়া পণ্যের গন্তব্য কী ছিল?
এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, ভারতবর্ষ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে যে পণ্য ব্রিটিশরা নিয়ে যেত, সেই পণ্য কি কেবল তারা নিজেরাই ভোগ করত? না, ওই পণ্যের কেবল কিয়দাংশই তারা নিজেরা ভোগ করত। বরং আরও লাভের আশায় ঐ পণ্যই পরবর্তীতে তারা আরও চড়া মূল্যে ইউরোপের বিভিন্ন বাজারে রপ্তানী করত। ভারতবর্ষে উৎপাদিত পণ্যের সুনাম ছিল গোটা ইউরোপ জুড়েই। এবং সেগুলো যেহেতু অন্য আর কোনো দেশের ব্যবসায়ীদের কাছে পাওয়া যেত না, তাই ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা সেই সকল পণ্যের উপর এমনকি শতভাগ লাভও করতে পারত। ভারতবর্ষ থেকে সংগৃহীত পণ্যের এরূপ পুনঃরপ্তানীর মাধ্যমেই ব্রিটেন সরাসরি কিছুর উৎপাদক না হয়েও ইউরোপের বাজারের অন্যতম বড় খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছিল।
ভারতবর্ষ থেকে আত্মসাৎ করা যেসকল পণ্য ব্রিটিশরা নিজেরাই ভোগ করত, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো লোহা, টার ও টিম্বার; কেননা এগুলো ব্রিটেনের শিল্পায়নের কাজে লাগত। এবং এভাবেই, ব্রিটেনের শিল্পবিপ্লবও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল থেকে ভারতবর্ষ থেকে করা পদ্ধতিগত চৌর্যবৃত্তির উপরই।
কাউন্সিল বিলের আগমন
১৮৪৭ সালে সিপাহী বিপ্লবের ফলস্বরূপ ব্রিটিশ রাজ সরাসরি ভারতবর্ষের ক্ষমতা নিজেদের হাতে তুলে নেয়। এর ফলে ঔপনিবেশিকদের লাভের গুড় খাওয়া কিন্তু এতটুকুও হ্রাস পায় না, বরং কর ও পণ্য ক্রয়ের ব্যবস্থায় আরও নতুন নতুন মাত্রা যোগ হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মনোপলিতে ইতি ঘটলে ভারতীয় উৎপাদকরা তাদের পণ্য সরাসরি অন্যান্য দেশে রপ্তানী করার সুযোগ লাভ করে। কিন্তু ব্রিটেন এই বিষয়টি নিশ্চিত করে যেন সব হাত ঘুরে প্রদেয় অর্থ শেষ পর্যন্ত লন্ডনেই থামে।
ভারতবর্ষ থেকে যে দেশই পণ্য ক্রয় করতে চাইত না কেন, তাদেরকে সেই পণ্য কিনতে হতো বিশেষ ধরনের কাউন্সিল বিল ব্যবহারের মাধ্যমে। কাউন্সিল বিল হলো এমন একধরনের কাগজের মুদ্রা, যা কেবল ব্রিটিশ রাজের তরফ থেকেই প্রদান করা হতো। এবং এই কাউন্সিল বিল হাতে পাওয়ার একমাত্র উপায় ছিল সরাসরি লন্ডনে গিয়ে সোনা বা রূপার বদলে তা ক্রয় করা। তাই ব্যবসায়ীরা লন্ডনকে সোনা বা রূপা দিয়ে বিল সংগ্রহ করত, আর তারপর সেই বিল কাজে লাগিয়ে ভারতীয় উৎপাদকদের দাম মেটাত। তারপর ভারতীয় উৎপাদকরা যখন স্থানীয় কলোনিয়াল অফিসে গিয়ে সেই বিল ক্যাশ করত, তারা হাতে পেত সেসব ভারতীয় রুপি, যা ব্রিটিশ রাজ কর সংগ্রহের মাধ্যমে এই ভারতীয়দের কাছ থেকেই পেয়েছে।
সুতরাং আরও একবার, ভারতীয় উৎপাদকরা যেভাবে পণ্য রপ্তানীর মাধ্যমে অর্থ আয় করত, সেখানেও ছিল ব্রিটিশদের বড় ধরনের জালিয়াতি। কেননা যে সোনা ও রূপাগুলো সরাসরি ভারতীয় উৎপাদকদের হাতে যাওয়ার কথা ছিল, সেগুলো হাতিয়ে নিয়েছে তারা নিজেরাই। আর তার বদলে ভারতীয় উৎপাদকদেরকে তারা দিয়েছে সামান্য কিছু কাগজের মুদ্রা। আর কে না জানে, কাগজের মুদ্রার দাম বাড়ে খুবই ধীরগতিতে, কিন্তু সোনা ও রূপার দাম বাড়তে থাকে হু হু করে।
এভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত একটি ব্যবস্থার শিকার হয়ে ভারতবর্ষ বাকি বিশ্বের চেয়ে বাণিজ্যিক উদ্বৃত্তে বড় ধরনের লোকসান করতে থাকে, যার ফলে বাকি বিশ্ব ক্রমশই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অনেক দূর এগিয়ে গেলেও, ভারতবর্ষ যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই পড়ে থাকে। আর তাদেরকে ঠকিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হতে থাকে ব্রিটেনের।
ভারতবর্ষের সম্পদে ব্রিটেনের উন্নয়ন
এই সবকিছুর প্রভাবে সময়ের সাথে সাথে ভারতবর্ষের বাণিজ্যিক ঘাটতি বাড়তে থাকেএই সবকিছুর প্রভাবে সময়ের সাথে সাথে ভারতবর্ষের বাণিজ্যিক ঘাটতি বাড়তে থাকে, যা পর্যবেক্ষণ করে সাদা চোখে অনেকেরই মনে হতে পারে, ভারতবর্ষ বুঝি ব্রিটেনের কাছে বোঝা হয়ে ছিল। কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা ছিল একদমই ভিন্ন। ভারতবর্ষ ছিল ব্রিটেনের কাছে সোনার ডিম পাড়া হাঁসের মতো। ভারতবর্ষ পিছিয়ে যাচ্ছিল বলেই ব্রিটেন এগিয়ে যেতে পারছিল। কিংবা আরও অকপটে বলতে গেলে, ভারতবর্ষকে ধাক্কা মেরে পেছনে ফেলে দেয়ার মাধ্যমেই এগিয়ে যাচ্ছিল ব্রিটেন।
ভারতবর্ষ থেকে আত্মসাৎকৃত অর্থের মাধ্যমেই ব্রিটেন প্রচন্ড রকমের ধনী হয়ে ওঠে, আর নব্যলব্ধ অর্থ তারা নতুন করে বিনিয়োগ করতে থাকে নতুন উপনিবেশ সৃষ্টি ও পুরনো উপনিবেশের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার কাজে। যেমন- ভারতবর্ষ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থের সাহায্যের ১৮৪০ এর দশকে চীন আক্রমণের সাহস দেখাতে পেরেছিল ব্রিটেন। আবার ১৮৫৭ সালে ভারতে সিপাহী বিপ্লব দমনের হাতিয়ারও ছিল এই অর্থই।
এজন্যই পাটনায়েক বলেন, “ভারতবর্ষের সীমানার বাইরেও নতুন সাম্রাজ্য দখল করতে ব্রিটেন যেসব যুদ্ধে জড়িয়েছে, সবসময়ই তার প্রধান ও পুরো ভাগটা এসেছে ভারত থেকে অর্জিত আয়ের মাধ্যমেই।”
এবং এখানেই গল্পের শেষ নয়। ভারতীয় অর্থনীতির আশীর্বাদধন্য হয়েই ব্রিটেন ইউরোপ এবং অন্যান্য ইউরোপীয় উপনিবেশ, যেমন কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায়, পুঁজিবাদের বিস্তার ঘটাতে পেরেছিল। তাই বলা যায়, কেবল ব্রিটেনের শিল্পায়নই নয়, গোটা পশ্চিমা বিশ্বের শিল্পায়নেই নেপথ্য ভূমিকা রেখেছে এই ভারতবর্ষই।
মোট কী পরিমাণ সম্পদ পাচার হয়েছে?
পাটনায়েক ১৭৬৫ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষকে চারটি পৃথক অর্থনৈতিক সময়কালে বিভক্ত করেন, এবং প্রতিটির মধ্য পর্যায় হতে বর্তমান পর্যন্ত ন্যূনতম ৫ শতাংশ মুনাফার হার ধরে হিসাব করে দেখান যে, ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটেনে পাচারকৃত সম্পদের মোট পরিমাণ ৪৪.৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু তার মতে এটিও খুবই রক্ষণশীল একটি অংক, যেহেতু এখানে ব্রিটিশ রাজ চলাকালীন ভারতবর্ষের উপর ব্রিটেন কর্তৃক চাপিয়ে দেয়া ঋণের বোঝাকে হিসাব করা হয়নি।
হিসাবগুলো নিঃসন্দেহে মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার মতো। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটেনে পাচার হওয়া এই বিপুল অর্থের ফলে ভারতবর্ষের ঠিক কতখানি ক্ষতি হয়েছে, তা কেবল তাত্ত্বিক পদ্ধতিতে হিসাব করে বের করা সম্ভব নয়। শুধু একটিবার ভেবে দেখুন, ভারতবর্ষের মানুষের প্রদত্ত কর যদি ভারতবর্ষের কল্যাণেই ব্যয় হতো- যেমনটি হয়েছে জাপানের ক্ষেত্রে, এবং রপ্তানির মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রাগুলো যদি সরাসরি এর উৎপাদকরাই পেত; তাহলে আজ ভারতবর্ষ বিশ্বের অর্থনৈতিক সুপারপাওয়ারগুলোর একটি হতো, শতকের পর শতক ধরে এ অঞ্চলের মানুষকে দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করে টিকে থাকতে হতো না।
উপনিবেশ প্রসঙ্গে বর্তমান ব্রিটেনের জনপ্রিয় অভিমত
কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো, আজও ব্রিটেনের অনেকেই ভারতবর্ষে তাদের করা অর্থনৈতিক শোষণের বিষয়টি স্বীকার করতে চায় না।রক্ষণশীল ইতিহাসবিদ নায়াল ফার্গুসন যেমন দাবি করেন, ব্রিটিশ শাসনের ফলে ভারতবর্ষের উন্নয়নই হয়েছে। এই চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটেছিল ২০১৪ সালের একটি জরিপেও। ব্রিটেনের সাধারণ মানুষের ৫০ শতাংশই আজও বিশ্বাস করে, ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের ফলে উপনিবেশগুলো লাভবানই হয়েছে।
অবশ্য এর বিপরীত মনোভাবও লক্ষণীয়। যেমন ডেভিড ক্যামেরন প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায়ই স্বীকার করেছিলেন, ব্রিটিশ শাসন ভারতবর্ষের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনেনি।
শেষ কথা
ভারতবর্ষে প্রায় দু’শো বছরের ব্রিটিশ শাসন চলাকালীন এ অঞ্চলের মানুষের মাথাপিছু আয়ে কোনো উন্নতিই ঘটেনি, বরং উনিশ শতকের শেষার্ধে এসে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি থেকে ক্ষমতা ব্রিটিশ রাজের হাতে যাওয়ার সময়কালে মাথাপিছু আয় অর্ধেকে নেমে এসেছিল। ১৮৭০ থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে ভারতীয়দের প্রত্যাশিত গড় আয়ু এক-পঞ্চমাংশ হ্রাস পেয়েছিল। পলিসি-প্ররোচিত দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে লক্ষ লক্ষ ভারতীয় অকালে প্রাণ হারিয়েছিল। ১৯০৯-১৪ পর্যন্ত যেখানে এ অঞ্চলের মানুষের বার্ষিক মাথাপিছু খাদ্যগ্রহণের পরিমাণ ছিল ১৯৭.৩ কেজি, ১৯৪৬ সাল নাগাদ তা কমে দাঁড়ায় ১৩৬.৮ কেজিতে।
তাই এ কথা দ্ব্যর্থহীন চিত্তে বলাই যায়, ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ব্রিটেনের কোনো ভূমিকা ছিল না। বরং পাটনায়েকের গবেষণাপত্র থেকে দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার হয়ে যায় যে, ভারতবর্ষের কাঁধে চেপেই আজকের উন্নত ব্রিটেনের জন্ম।
চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/