৫৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দ।
পাঁচ বছরের জন্য রোমান গল, বা গ্যালিয়া নার্বোনেন্সিস (Gallia Narbonensis) এর দায়িত্ব নিয়ে রোম থেকে জুলিয়াস সিজার এখানে এসে পৌঁছলেন। তার সাথে সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম রোমান লিজিওন। সিজার রোন নদীর (lower Rhône) উপত্যকায় তার হেডকোয়ার্টার স্থাপন করেন। লিজিওনের বেশিরভাগ সৈন্য অবস্থান নেয় প্রদেশের পূর্বদিকে।
গ্যালিয়া নার্বোনেন্সিস ইটালির উপকূল ধরে আল্পস থেকে হিস্পানিয়ার সীমান্ত পর্যন্ত, আর উত্তরে এর সীমানা রোন নদী এবং জেনেভা লেক (সুইজারল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যবর্তী) পর্যন্ত। এর বাইরে পিরেনিজ থেকে রোন অবধি অঞ্চলের নাম রোমানরা দিয়েছিল গ্যালিয়া কোমাটা (Gallia comate/long-haired Gaul)। এখানকার বাসিন্দাদের রোমানরা তিনটি প্রধানভাগে ভাগ করত।
অ্যাকুইটানিয়ার অধিবাসী: এরা বাস করত পিরেনিজ আর ফ্রান্সের লোইর নদীর মধ্যবর্তী স্থানে। ছোট-বড় মিলিয়ে ৩০-৩৫টি গোত্র ছিল এর অন্তর্ভুক্ত।
কেল্টস: লোইর থেকে সিন এবং মার্নে নদী পর্যন্ত এলাকায় এরা থাকত।
বেলজিয়ান গল/বেলজি: এদের বাসস্থান ছিল সিন আর মার্নে নদী থেকে রাইন অবধি। এই এলাকা মূলত বিভিন্ন জার্মান গোত্র অধ্যুষিত ছিল।
গ্যালিয়া কোমাটা একক রাষ্ট্র ছিলনা, বিভিন্ন গল জাতি বিচ্ছিন্নভাবে এখানে বাস করত। তাদের মধ্যে পারস্পরিক হিংসা হানাহানি কাজে লাগিয়ে রোম তার প্রদেশকে নিরাপদ রাখত। বেশ কিছু গল গোত্রের সাথে রোমের সুসম্পর্ক ছিল, তার মধ্যে এডুই (Aedui) অন্যতম।
অ্যারিওভিস্টাস ও সুভি
সিজারের আগমনের প্রায় এক যুগ আগে জার্মান সুভি গোত্র রাইন অতিক্রম করে এডুইদের শত্রু সেকুইনিদের সাথে জোট বাধে। সুভিদের রাজা অ্যারিওভিস্টাস এরপর এডুইদের বশীভূত করে ৫৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমের সাথে মিত্রতা গড়ে তোলেন। বর্তমান ফ্রান্সের উত্তরপূর্বে আলসাসি ঘিরে তাদের বসতি ছিল।
হেলভেশিয়ান অনুপ্রবেশ: ঐতিহাসিকেরা একমত যে সিজার যখন প্রথম গলে পদার্পণ করেন, তখন সম্পূর্ণ গল জয় করার কোনো ইচ্ছা তার ছিল না। সিজারের প্রয়োজন ছিল প্রচুর অর্থ, সেজন্য তিনি বল্কান এলাকার মুল্যবান ধাতু সমৃদ্ধ অঞ্চলে আগ্রাসন চালাতে প্রস্তুত হচ্ছিলেন। মূলত সেই কারণেই তিনি তার সেনাদের প্রদেশে পূর্বদিকে মোতায়েন করেছিলেন, যাতে এখান থেকে সরাসরি বল্কানে ঢুকে পড়া যায়। কিন্তু হেলভেশিয়ানদের আগমন হিসাব নিকাশ পাল্টে দিল। হেলভেশিয়ানদের আবাস ছিল বর্তমান সুইজারল্যান্ডের পশ্চিম এলাকাতে। ৫৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তারা ফ্রান্সের দক্ষিন-পশ্চিমে অভিবাসনের উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে আসে। উদ্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে তাদের রোমান গলের ভেতর দিয়ে যেতে হত। সিজারের কাছে তা ছিল অগ্রহণযোগ্য।
সিজারের পদক্ষেপ
সিজারে প্রয়োজন ছিল সময়। তার মূল বাহিনী তখনও প্রদেশের পূর্বাঞ্চলে। সুতরাং ৫৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মার্চে সিজার জেনেভা লেকের উপরের সেতু ধ্বংস করে রোন বরাবর রাস্তা বন্ধ করে দেন। ফলে হেলভেশিয়ানদের যাত্রা বিঘ্নিত হলো। এই অবসরে সিজার তার সেনাদল একত্রিত করেন। নতুন করে এগার ও বার নম্বর লিজিওনও তার সাথে যোগ দেয়। হেলভেশিয়ানরা বর্তমান বাসেলের মধ্য দিয়ে ফ্রান্সে ঢোকার চেষ্টা করছিল। এখানে সাওন নদী অতিক্রম করার সময় সিজার তাদের আক্রমণ করে হটিয়ে দিলেন। এরপর অগাস্ট মাসে আবার এডুইদের রাজধানী বিব্র্যাক্টের কাছে তিনি তাদেরকে পরাজিত করেন। বাধ্য হয়ে হেলভেশিয়ানরা আবার সুইজারল্যান্ডে ফিরে যায় এবং রোমের সাথে মিত্রতা স্থাপন করে।
অ্যারিওভিস্টাসের পরাজয়
সিজারের কাছে সংবাদ আসে সুভিদের কিছু অংশ রাইন পার হয়ে অ্যারিওভিস্টাসের সাথে যোগ দেবার পাঁয়তারা করছে। রোমের মিত্র বেশ কিছু গল জাতি সিজারের কাছে এর একটা বিহিত করতে আবেদন করে। সিজার দেখলেন এই সুবর্ণ সুযোগ ছাড়া ঠিক হবে না। তিনি গলে জার্মান অনুপ্রবেশের ছলে একে পরিপূর্ণভাবে রোমান নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে চাইলেন। অ্যারিওভিস্টাসকে তিনি বশ্যতা স্বীকার করতে বললে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করলেন। সিজার আক্রমণ করে অ্যারিওভিস্টাসকে তাড়িয়ে রাইন পার করে দেন। এরপর অনেক গল গোত্র তার সাথে শান্তিচুক্তি করল। কিন্তু বেলজিদের মধ্যে একমাত্র রেমিরা ছাড়া বাকিরা রোমান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একজোট হয়।
বেলজিয়ান গলদের পতন
৫৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিজার তার বাহিনীতে আরো দুটি লিজিওন যোগ করে বেলজিদের এলাকাতে প্রবেশ করেন। বেলজিয়ান জোট রোমানদের মিত্র রেমিদের এক শহর আক্রমণের সময় সিজার তাদের পরাস্ত করেন। এরপর তিনি বর্তমান বেলজিয়ামের ফ্ল্যান্ডার্স এলাকাতে ব্যাটল অফ দ্য স্যাবিসে জোটের অন্তর্ভুক্ত নার্ভিয়ান সেনাবাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করে দেন। মিউস নদীর ধারে আরেকটি সংঘর্ষে জোটের আরেক সদস্য অ্যাডাটুসিদের সেনাদল একইভাবে ধূলিসাৎ হয়ে যায়। পুরো গোত্র রোমানরা দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়।এরপর সিজার তার বাহিনী নিয়ে দক্ষিণ দিকে যাত্রা করে লোইর নদীর কাছে শীতকালীন ক্যাম্প স্থাপন করেন।
ভেনেশিদের বিদ্রোহ: সিজার যখন বেলজিতে ব্যস্ত তখন ক্রাসুসের ছেলের অধীনে সিজারের বাহিনীর একাংশ ফ্রান্সের দক্ষিণে নরম্যান্ডি আর ব্রিটানিতে অভিযান চালিয়ে স্থানীয় গোত্রগুলোকে রোমের অধীনে নিয়ে আসে। কিন্তু পরের বছরই শীতে ভেনেশি গোত্রের নেতৃত্বে ব্রিটানির গলরা বিদ্রোহ করে বসে। সিজার তাদের আক্রমণের জন্য জাহাজ নির্মাণ করতে লাগলেন। গ্রীষ্মে তার নৌবহর কুইবেরন উপসাগরে নৌযুদ্ধে বিদ্রোহীদের ধ্বংস করে দেয়। আটলান্টিকের উপকূল ধরে এরপর সিজারের অফিসাররা বিদ্রোহীদের বিচ্ছিন্ন দলগুলোকে দমন করেন।
লুকার সম্মেলন
সিজার যখন গল পদানত করছেন রোমে তখন চলছে রাজনীতির খেলা। একসময়ের মিত্র ট্রিবিউন ক্লডিয়াসের সাথে বচসার জেরে পম্পেই তার সমর্থন ছুঁড়ে দেন অন্য ট্রিবিউন মাইলোর দিকে। মাইলো সিসেরোর শুভাকাঙ্খী ছিলেন। ফলে তিনি সিসেরোর বিরুদ্ধে করা সমস্ত অভিযোগ বাতিল করেন এবং ৫৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তাকে রোমে ফিরিয়ে এনে তার সম্পত্তি ও সামাজিক মর্যাদা পুনর্বহাল করলেন। পম্পেই আর অপ্টিমেটদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সূচনা হলো, এবং তাদের সমর্থনে তিনি শহরে খাদ্যশস্য সঙ্কটের সমাধানের দায়িত্ব পেলেন। এর ফলে রোমের অধিনস্ত সকল অঞ্চলে খাদ্যশস্য সম্পর্কিত বিষয় পম্পেইয়ে অধীনে চলে আসে, যার মধ্যে ছিল বন্দর, বাজার ও পরিবহন ব্যবস্থা। পম্পেই সফলভাবে সঙ্কট সামাল দেন।
এদিকে রোমে বিরাজ করছিল চরম অরাজকতা। ক্লডিয়াস আর মাইলোর অনুসারীদের মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষে শহরের আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটে। আবার ৫৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে কাটো রোমে ফিরে এলে অপ্টিমেটরা নতুন করে গা ঝাড়া দিয়ে উঠল। পম্পেই ও ক্রাসুসের মধ্যেও চলছিল মনোমালিন্য। সিজারের কাছে এসব অজানা ছিল না। তিনি দ্রুত পরিস্থিতির লাগাম টেনে ধরতে চাইলেন।
শীতকালীন অবসর কাটানোর সময় ৫৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এপ্রিলে সিসাল্পাইন গলের লুকা শহরে (বর্তমান মধ্য ইটালির টাস্কানির অন্তর্গত) পম্পেই ও ক্রাসুসকে সাথে নিয়ে সিজার আলোচনায় বসলেন। তারা নিজেদের মধ্যকার বিবাদ নিরসন করে ট্রায়াম্ভিরকে দীর্ঘায়িত করার পরিকল্পনা সাজালেন। সেই মোতাবেক সিদ্ধান্ত হলো পরের বছর ক্রাসুস ও পম্পেই কন্সালের পদ গ্রহণ করবেন। পাঁচ বছরের জন্য পম্পেই পাবেন হিস্পানিয়া আর লিবিয়া, আর ক্রাসুস নেবেন সিরিয়া। গল থাকবে সিজারের অধীনে, এবং ৫৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মার্চে তার বর্তমান দায়িত্ব শেষ হবার পরে নতুন করে আরো পাঁচ বছরের জন্য সিজার এখানে গভর্নর হিসেবে থাকবেন। এভাবে ট্রায়াম্ভির রোম নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিল।
সেই বছর কন্সাল নির্বাচনে প্রার্থিতা দাখিলের সময় পার হয়ে গিয়েছিল। সুতরাং পম্পেই আর ক্রাসুস নির্বাচনই হতে দিলেন না। পরের বছর জানুয়ারিতে অন্য সব প্রতিদ্বন্দ্বীকে জোরপূর্বক সরিয়ে দিয়ে ক্রাসুস আর পম্পেই কন্সাল হয়ে বসলেন। তাদের তাঁবেদার ট্রিবিউন ট্রেবোনিয়াস সাম্রাজ্যের ভাগাভাগি বৈধ করে আইন পাশ করেন। সিসেরো তার প্রত্যাবর্তনের জন্য পম্পেইয়ের কাছে ঋণী ছিলেন, ফলে তিনি বাধা দিতে পারলেন না। একমাত্র কাটোই বাকি রইলেন ট্রায়াম্ভিরের বিরোধিতা করার জন্যে।
৫৫-৫৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দ
৫৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দের শীতে উসিপেটস আর টেন্সটেরি নামে দুটি জার্মান গোত্র রাইন পার হয়ে গলে চলে আসে। ৫৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিজার তাদের উপর হামলা করেন। বলা হয় যুদ্ধবিরতির সুযোগ নিয়ে রোমান সেনারা শত্রুদের কচুকাটা করে ফেলে। মাত্র কিছু সংখ্যক গল রাইনে সাঁতরে পালিয়ে যায়। অনেক নারী ও শিশু হতাহত হয়। ফলে রোমে সিনেটের সামনে কাটো সিজারের অনুপস্থিতিতে তাকে কঠিনভাবে তিরস্কার করেন।
ভবিষ্যৎ জার্মান অনুপ্রবেশ বন্ধ করার জন্য এরপর সিজার এক অভিনব পন্থা অবলম্বন করেন। তিনি রাইনের উপর একটি সেতু নির্মাণ করলেন। তার সেনারা সেতু পার হয়ে অপর পাড়ে সামরিক মহড়া দিল। এবার সিজার তাদের আবার ফেরত এনে সেতু ভেঙে দিলেন। তার মূল উদ্দেশ্য ছিল জার্মানদের মনে রোমান সামরিক শক্তি সম্পর্কে ভীতি সঞ্চার করা। তিনি মোটামুটিভাবে সফল হয়েছিলেন।
ব্রিটেনে আগ্রাসন
জার্মানদের ভয় দেখিয়ে সিজার পশ্চিম দিকে যাত্রা করলেন। এখানে জাহাজ আগে থেকে প্রস্তুত ছিল। সিজার ছোট একদল সেনা নিয়ে ডোভার প্রণালী পার হয়ে ব্রিটেনে পা রাখেন। গলদের বিদ্রোহে ব্রিটেনের কিছু জাতির প্রত্যক্ষ সহায়তা ছিল, সুতরাং সিজার তাদের শাস্তি দিতে মনস্থ করেছিলেন। তবে প্রথম অভিযানের লক্ষ্য ছিল মূলত শত্রু এলাকা বিষয়ে ধারণা পাওয়া।
৫৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ৩০,০০০ সেনা নিয়ে সিজার আবার ব্রিটেনে ফিরে গেলেন। ক্যাসিভেলানাস নামে এক গোত্রপতি রোমান অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ গোত্রগুলোর নেতৃত্ব দেন। লন্ডনের কাছে সিজার তাকে পরাজিত করে টেমস পার হন। তবে তিনি বেশি দূর আর অগ্রসর হননি। পরাজিতদের থেকে উপঢৌকন আর জিম্মি নিয়ে সিজার গলে ফিরে যান।
গলে নতুন বিদ্রোহ
স্বাধীনতাপ্রিয় গলেরা রোমান আধিপত্য মেনে নিতে পারেনি। সিজারের বিজয় তাদের ঐক্যবদ্ধ করে। ৫৪-৫৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দের শীতে বেলজিয়ান গলে নার্ভি, ট্রেভেরি আর ইবিউরন গোত্র একত্রিত হয়ে রোমান গ্যারিসনগুলোর উপর হামলা চালায়। এদের নেতা ছিলেন ইবিউরন দলপতি অ্যাম্ব্রিওরিক্স। একটি গ্যারিসনের পতন হলেও বাকিগুলো টিকে রইল। সিজার যথাসময়ে এসে বিদ্রোহীদের নির্মূল করলেন। ইবিউরন গোত্রকে দৃষ্টান্তস্বরূপ ম্যাসাকার করে দেয়া হয়। তাদের ভূখণ্ড জ্বালিয়ে দিয়ে বন্দিদের দাস হিসেবে বিক্রি করা হলো।
ভার্সিঞ্জেটোরিক্স (Vercingetorix)
গল বিজয়ের পর সিজার সেখানে রোমান আইনকানুন আর আচার অনুষ্ঠান প্রচলন করেন। স্বাধীনচেতা গল জাতি একে সহজভাবে নিতে পারেনি। কিন্তু সিজারের সৈন্যদের ভয়ে কেউই সরাসরি রোমের বিপক্ষে দাঁড়াতে চাইছিলনা। এই অবস্থায় আবির্ভাব ঘটল এক তেজস্বী গল নেতার- ভার্সিঞ্জেটোরিক্স। তার বাবা গলের অন্যতম শক্তিশালী গোত্র আরভার্নির (Arverni) একজন দলপতি ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর তিনি নিজ গোত্রের হাল ধরেন। রোমান আগ্রাসনে আগে থেকেই তিনি বীতশ্রদ্ধ ছিলেন। সিজার ইবিউরনদের নিশ্চিহ্ন করে দিলে তিনি বিদ্রোহের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি অন্যান্য অনেক গোত্রকে ঐক্যবদ্ধ করে কনফেডারেশন গঠন করলেন। নিজে নিলেন সার্বিক সামরিক কম্যান্ড। ইবিউরনদের প্রতিশোধ নিতে ভার্সিঞ্জেটোরিক্স সিনাবাম নামে একটি রোমান সেটলমেন্ট মাটির সাথে মিশিয়ে দেন।
সময় তখন ৫২ খ্রিস্টপূর্বাব্দের শীতকাল। সিজার ইতালিতে, আর তার সেনারা বিচ্ছিন্নভাবে গলের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে শীত কাটাচ্ছিলেন। গলে মূল রোমান ঘাঁটির দায়িত্বে সিজারের প্রধান সহকারী লিবেনাস (Labienus)। ভার্সিঞ্জেটোরিক্স গেরিলা কায়দায় তাকে ব্যতিব্যস্ত করে তুললেন। বিদ্রোহীদের টার্গেট ছিল রোমান সেনাদের খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা।
সিজার বুঝতে পারলেন অবিলম্বে গলে তার উপস্থিতি জরুরি। তিনি প্রথমে সিসাল্পাইন গল অঞ্চল থেকে কিছু পদাতিক ও অশ্বারোহী সেনা সংগ্রহ করে ট্রান্সাল্পাইন গলের নার্বো শহরের দিকে এগিয়ে গেলেন। সেখানে ভার্সিঞ্জেটোরিক্সের দূত লুক্টেরিয়াস নগরবাসীকে বিদ্রোহীদের কনফেডারেশন যোগদানে আমন্ত্রণ জানাতে এসেছিলেন। সিজারের আগমনের খবরে তিনি চলে যান। সিজার এবার আরভার্নিদের সীমান্তে এসে উপস্থিত হলেন। কিন্তু ভার্সিঞ্জেটোরিক্সের বাহিনীর বিশালতা দেখে তিনি অনুধাবন করলেন যে মূল রোমান বাহিনী ছাড়া তাকে পরাস্ত করা সম্ভব নয়। ফলে তিনি তখন পর্যন্ত রোমান মিত্র এডুইদের এলাকাতে সরে গিয়ে গলজুড়ে সমস্ত রোমান সেনাদের সেখানে মিলিত হতে নির্দেশ দিলেন।
গার্গোভিয়া অবরোধ এবং সিজারের মার্চ
বই জাতির প্রধান শহর গার্গোভিয়া (Gergovia)। এরা সিজারের মিত্র ছিল। সুতরাং ভার্সিঞ্জেটোরিক্স গার্গোভিয়া অবরোধ করলে তারা সিজারের কাছে সাহায্যের আবেদন করে। তিনি দুটি লিজিওন অ্যাগেন্ডিকাম শহরে রেখে বাকি সেনা নিয়ে গার্গোভিয়ার রাস্তা ধরলেন।
এদিকে ভার্সিঞ্জেটোরিক্সের হাতে গার্গোভিয়া পতন হলে তিনি সিজারের দিকে অগ্রসর হলেন। তিনি পরিকল্পনা করলেন সিজারের চলার পথে যতটা সম্ভব বিঘ্ন সৃষ্টি করতে হবে। তার পরিকল্পনা ছিল আশেপাশের সব অঞ্চল জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়া, যাতে যাত্রাপথে সিজার স্থানীয়ভাবে কোনো খাবার বা প্রয়োজনীয় সামগ্রী জোগাড় করতে না পারেন। শীতকালে এমনিও খাবারের অভাব থাকে, এর মধ্যে ভার্সিঞ্জেটোরিক্স চাচ্ছিলেন সিজারের খাবার সরবরাহ আরো দুর্বল করে দিতে, যাতে তিনি এই অঞ্চল ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
যে-ই কথা সেই কাজ। ভার্সিঞ্জেটোরিক্স সব ছারখার করে দিতে দিতে চললেন। প্রায় বিশটি বিটার্জিস নগরীর বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে সব জ্বালিয়ে দেয়া হলো। কিন্তু গোল বাধল অ্যাভারিকাম শহরে এসে। এটা ছিল বিটার্জিসদের অন্যতম প্রধান নগর। তারা কিছুতেই একে ধ্বংস করে দিতে রাজি হলো না। ফলে অনন্যোপায় হয়ে ভার্সিঞ্জেটোরিক্স শহরের ১৫ মাইল দূরে ক্যাম্প করলেন, আর নগরবাসীরা রোমানদের অবরোধ মোকাবেলার প্রস্তুতি নিল।
সিজার শহর অবরোধ চালিয়ে গেলেন। এই সময়ে মধ্যে ভার্সিঞ্জেটোরিক্স রোমানদের খাদ্য সংগ্রহকারী ছোট ছোট দলের উপর হামলা চালিয়ে গেলেন, সরাসরি সিজারের সাথে এখানে শক্তি পরিক্ষায় তিনি ইচ্ছুক ছিলেন না। অবশেষে ২৭ দিন পর অতর্কিত হামলা করে রোমানরা শহরে প্রবেশ করে। মাত্র ৮০০ অধিবাসী প্রাণ নিয়ে পালাতে সক্ষম হয়। প্রচুর খাদ্যশস্য সিজারের হস্তগত হলো, শীতও এর মধ্যে শেষ হয়ে এল।
এদিকে এডুইদের মধ্যে রাজা নির্বাচন নিয়ে বিবাদ শুরু হলে তারা সিজারের শরণাপন্ন হয়। তাদের সমস্যা মিটিয়ে সিজার সেনা সাহায্য দাবী করলেন। কিন্তু ইতোমধ্যে ভার্সিঞ্জেটোরিক্সের প্ররোচনায় এডুইদের মধ্যে বিদ্রোহের লক্ষণ দেখা দেয়, তবে শেষ পর্যন্ত তারা সহায়তা করতে সম্মত হলো। তাদের কাছে সেনাদলের খাদ্য সরবরাহ সুরক্ষার দায়িত্ব অর্পণ করে সিজার গার্গোভিয়ার দিকে চললেন।
গার্গোভিয়াতে ভার্সিঞ্জেটোরিক্স তার অশ্বারোহী সেনাদের নিয়ে রোমানদের উপর তুমুল হামলা করে। তার মিত্ররাও নতুন সেনা নিয়ে দৃশ্যপটে হাজির হয়। অন্যদিকে এডুইরা আবার বিশ্বাসঘাতকতা করে বসে। সিজার বুঝতে পারলেন যুদ্ধ চালিয়ে গেলে পরাজয় অত্যাসন্ন। তিনি সেনাবাহিনীকে পিছিয়ে যাবার নির্দেশ দিলেন। পুরো গল ক্যাম্পেইনে এটাই ছিল সিজারের বলার মতো একমাত্র পরাজয়।
রোমান শক্তিবৃদ্ধি
সিজার বুঝতে পারলেন ভার্সিঞ্জেটোরিক্সের অতিরিক্ত অশ্বারোহী তাকে বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছে। তিনি তাই জার্মান মার্সেনারীদের নিজ দলে অন্তর্ভুক্ত করেন। এরা সুদক্ষ ঘোড়সওয়ার ছিল। তিনি এডুইদের বিশ্বাসঘাতকতার সমুচিত জবাব দেন। তিনি তাদের মালপত্র দখল করে নেন। এদিকে ভার্সিঞ্জেটোরিক্সের বিজয়ে নতুন করে অনেক স্থানে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে। লিবেনাস এরকম দুই বিদ্রোহী দলের মাঝে পরে যান। তিনি তাদের একদলকে পরাজিত করে বেরিয়ে এসে সিজারের সাথে মিলিত হলেন।
ইত্যবসরে ভার্সিঞ্জেটোরিক্স রোন নদী ও আল্পসের মধ্যবর্তী অঞ্চলে বসবাসরত অ্যালোব্রোগসদের উপর আক্রমণ করেন। এরা বিদ্রোহে যোগ দেয়নি। ফলে সিজার তাদের রক্ষা করতে অগ্রসর হন। ভার্সিঞ্জেটোরিক্স ততদিনে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলেন। তিনি জানতেন সিজারের থেকে তার সেনাসংখ্যা অনেক গুণ বেশি। ফলে তিনি রোমানদের সাথে সরাসরি মোকাবেলার প্রস্তুতি নেন। প্রবল যুদ্ধে চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত সিজারের জার্মান অশ্বারোহী সেনারা ঝড়ের বেগে শত্রুদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
ব্যাটল অফ অ্যালেসিয়া
পরাজিত ভার্সিঞ্জেটোরিক্স পালিয়ে যেতে থাকলে সিজার তার পিছু ধাওয়া করলেন। ভার্সিঞ্জেটোরিক্স তার ৮০,০০০ সেনা নিয়ে পূর্ব ফ্রান্সের অ্যালেসিয়া শহরে এসে ঘাঁটি গাড়লেন। পাহাড়ের উপরে এই নগরীর দুদিক দিয়ে বয়ে চলছিল নদী, ফলে প্রাকৃতিকভাবেই তা সুরক্ষিত ছিল। এখানে ভার্সিঞ্জেটোরিক্স তার আত্মীয় ভার্কাসিভেলানাসকে কিছু অশ্বারোহী দিয়ে পাঠালেন পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে আরো সেনা জোগাড় করে আনতে।
সিজার অ্যালেসিয়া পৌঁছে অবরোধ জারির ফয়সালা করলেন। তিনি জানতেন বিশাল সেনাবাহিনী আর শহরের অধিবাসীরা মিলে বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে না। কাঠ, বাশ আর অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে শহর ঘিরে প্রায় দশ মাইল লম্বা দেয়াল তোলা হয়। এই দেয়াল থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে রোমানরা আরো একটি দেয়াল নির্মাণ করে। ভেতরের দেয়ালের উদ্দেশ্য ছিল শহর থেকে আক্রমণ প্রতিরোধ করা, আর বাইরের দেয়ালের উদ্দেশ্য সহায়তাকারী বাহিনী যাতে শহরে ঢুকতে না পারে। দু’দিকেই দেয়ালের উপর ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়, সেখানে সর্বক্ষণ পাহারাদার নিযুক্ত থাকত। বাইরে থেকে আক্রমণ ঠেকাতে সিজার তিনটি পরিখাও খনন করেন।
অবরোধ প্রাচীর নির্মাণ চলাকালে ভার্সিঞ্জেটোরিক্স অনেকবার রোমানদের উপর হামলা করেন। কিন্তু সদাসতর্ক সিজার তার সব আক্রমণ রুখে দেন। প্রাচীর নির্মিত হয়ে যায়। তীব্র অবরোধে শহরে খাদ্যাভাব দেখা দিলে ভার্সিঞ্জেটোরিক্স নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের রোমান ক্যাম্পের দিকে পাঠিয়ে দেন। তিনি আশা করেছিলেন রোমানরা হয় তাদের যেতে দেবে, অথবা বন্দি করে খাবারের ব্যবস্থা করবে। কিন্তু তারা নিজেদের অবস্থানে অটল রইল, কাউকে তাদের ক্যাম্পে প্রবেশ করতে দিল না। অসহায় নাগরিকেরা দুই দলের মাঝখানে পড়ে থেকে শেষ পর্যন্ত অনাহারে মারা যায়।
এদিকে ভার্কাসিভেলানাসকে অতিরিক্ত সেনা নিয়ে পৌঁছে যান। ফলে রোমানদের তুলনায় গলদের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় চারগুণ। রোমান অবরোধের উত্তরপূর্ব কোণে দুর্বলতা দেখে তারা সেখানে আক্রমণ করলেন। ভার্সিঞ্জেটোরিক্সও তার সেনাদের নেতৃত্ব দিয়ে শহরে থেকে বেরিয়ে রোমানদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। দুই দিকের সাঁড়াশি আক্রমনে রোমানদের অবস্থা সঙ্গিন হয়ে দাঁড়ায়। এমতাবস্থায় সিজার নিজেই তরবারি হাতে লড়াইতে নামলেন। জেনারেলের উপস্থিতিতে রোমানরা চাঙ্গা হয়ে বিপুল বিক্রমে শত্রুদের হটিয়ে দিল। সহায়তা করতে আসা সেনারা পালিয়ে যায়, ভার্সিঞ্জেটোরিক্সও নগরে ফিরে যেতে বাধ্য হন। অ্যালেসিয়ার পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র বুঝে তিনি নগরবাসীকে বাঁচাতে আত্মসমর্পণের চিন্তা করলেন।
এখানে এসে ইতিহাসে কিছুটা বিভেদ দেখা যায়। কেউ কেউ বলেন পরাজয় বুঝতে পেরে ভার্সিঞ্জেটোরিক্সের মিত্ররাই নমনীয় ক্ষমা পাবার আশায় তাকে সিজারের হাতে তুলে দেয়। তবে অন্য একটি বড় পক্ষের মত হলো তিনি নিজেই পূর্ণ সামরিক বেশে একাকী রোমান ক্যাম্পে হাজির হন, সেখানে সিজারের সামনে তিনি নিজেকে সমর্পণ করেন। যা-ই হোক না কেন সিজার তাকে বন্দি করলেন। শেষ হয়ে গেল গল বিদ্রোহ। ফলে বর্তমান বেলজিয়াম ও ফ্রান্সের সুবিশাল অঞ্চলে রোমের আধিপত্য প্রশ্নাতীতভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিজিত গলদের সাথে সিজার অত্যন্ত নমনীয় আচরণ করেন এবং পরবর্তীতে এরা সিজারকে একনিষ্ঠ সমর্থন যুগিয়েছিল। ভার্সিঞ্জেটোরিক্সের ভাগ্য এত ভাল ছিলনা, ছয় বছর পর রোমে সিজারের ট্রায়াম্ফে শৃঙ্খলিত ভার্সিঞ্জেটোরিক্সকে প্রদর্শন করে তাকে হত্যা করা হয়।
গল বিজয়ের পর সিজারের হাতে চলে আসে অঢেল ঐশ্বর্য আর অনুগত এক সেনাবাহিনী। এতদিন ট্রায়াম্ভিরেটে তিনি ছিলেন কনিষ্ঠ এক সদস্য, পম্পেই সেনা অভিজ্ঞতায় আর ক্রাসুস অর্থে তার থেকে বহু এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু গলে সাফল্যের পর সিজারের পাল্লা ভারি হয়ে গেল।
ট্রায়াম্ভিরেটের অবসান
৫৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পম্পেইয়ের স্ত্রী সিজারের কন্যা জুলিয়ার মৃত্যুর পর থেকে তাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এদিকে ক্রাসুস সিরিয়াতে পার্থিয়ান সাম্রাজ্যের সাথে লড়াইতে জড়িয়ে পড়েন। এখানে ৫৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ব্যাটল অফ কারেতে রোমান সেনারা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। ক্রাসুস শান্তি আলোচনার সময় নিহত হন। পরবর্তী প্রায় তিন শতাব্দী প্রাচ্যে পার্থিয়ানরা রোমানদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। ক্রাসুসের মৃত্যুর পরেই মূলত ট্রায়াম্ভিরেটের অবসান ঘটে।
রোমে এদিকে চলছিল তুমুল গণ্ডগোল। ক্লডিয়াস ও মাইলোর সমর্থকদের মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ পরিণত হয়েছিল নিয়মিত ঘটনায়। অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে ৫৪ আর ৫২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে কন্সাল নির্বাচন করাই যায়নি। পম্পেই চাইলে সব থামাতে পারতেন, কিন্তু তিনি চাচ্ছিলেন সিনেট তাকে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব দিক। অবশেষে ৫২ খ্রিস্টপূর্বাব্দের জানুয়ারিতে ক্লডিয়াস মাইলোর অনুসারীদের হাতে নিহত হলে শহরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল। সিনেট পম্পেইকে একমাত্র কন্সাল হিসেবে নিযুক্ত করে বিপুল ক্ষমতা তার হাতে ন্যস্ত করে। তার সেনারা শহরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। মাইলোকে বিচারের পর রোম থেকে নির্বাসিত করা হয়। পম্পেই ও অপ্টিমেট দুই দলই সিজারের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা আর ক্ষমতায় শঙ্কিত ছিল। তারা সিজারের বিরুদ্ধে জোট বাঁধল।
গলে সিজারের দায়িত্ব শেষ হবার কথা ছিল ৪৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। সিজার জানতেন সরকারি পদ না থাকলে এরপরেই সিনেট তাকে বিচারের সম্মুখীন করতে পারে। ফলে তিনি ৪৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে কন্সাল নির্বাচনে দাঁড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন। যদিও এর জন্য সশরীরে আগের বছর রোমে উপস্থিত হয়ে প্রার্থিতা নিশ্চিত করার নিয়ম ছিল, তবে ট্রিবিউনরা বিশেষ আইন করে সিজারকে অব্যাহতি দেয়। কিন্তু পম্পেই এটা নিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম করে তুললেন। এছাড়া তিনি নতুন এক আইন প্রণয়ন করেন যার দ্বারা প্রাদেশিক গভর্নর হবার আগে যেকোনো কর্মকর্তার অন্তত পাঁচ বছর সরকারি পদ থেকে দূরে থাকতে হবে। সিজার গলে পর পর দুই মেয়াদে গভর্নরের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কাজেই তিনি ধরে নেন এই আইনে তাকেই লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
পম্পেই দাবী করেন সিজারের বর্তমান মেয়াদ এই আইনে অবৈধ, সুতরাং কন্সাল হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে তাকে সাধারণ নাগরিক হিসেবে রোমে উপস্থিত হতে হবে। সিজার জানতেন, তিনি তা করতে গেলে সেটা হবে তার মৃত্যুর সামিল। কাজেই তিনি দাবী করলেন পম্পেইয়ের এই আইন তার জন্য খাটে না। দুই বছর ধরে এই নিয়ে বচসা চলতে থাকে। সিসেরো মধ্যস্ততা করতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
সিজার প্রস্তাব দেন, তিনি সিসাল্পাইন রেখে ট্রান্সাল্পাইন গলের দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন, কিন্তু সিনেট রাজি হলো না। শেষে ৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের ডিসেম্বরে তিনি পদত্যাগ করতে এবং সেনাদল ভেঙে দিতে রাজি হলেন, যদি পম্পেইও একই কাজ করেন। সিনেট এবারও রাজি হলো না, তারা সিজারের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণে অটল থাকল। ৪৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দের ৭ জানুয়ারি আইন পাশ করে সিনেট সিজারকে জনগণের শত্রু ঘোষণা করে, পম্পেইকে বলা হলো সিজারকে দমন করার। রোম থেকে সিজারের বন্ধু ও সমর্থকেরা পালিয়ে গিয়ে তার সাথে যোগ দিল। সূচনা হলো নতুন এক গৃহযুদ্ধের।