Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কার্ল ট্যাঞ্জলার: কল্পনাকে হার মানানো ‘কাছে আসার গল্প’

আজ থেকে প্রায় একশ চল্লিশ বছর আগেকার কথা। ১৮৭৭ সালে জার্মানির ড্রেসডেনে জন্ম নেয় এক ছেলে, নাম তার কার্ল ট্যাঞ্জলার। ধীরে ধীরে সময় পেরোতে থাকে, শরীরে ও মননে বড় হতে থাকে কার্লও। এভাবে একসময় যৌবনে উপনীত হয় ছেলেটি।

যৌবনে যে মানুষের মনে কত রকমের স্বপ্ন খেলা করে তা তো কারোরই অজানা নয়; সেটা জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনী নিয়েই হোক, কিংবা নিজের চমৎকার একটা ভবিষ্যৎ নিয়েই হোক। এর ব্যতিক্রম ছিলো না কার্লও। এরই মাঝে একদিন অদ্ভুত এক স্বপ্ন দেখলো সে। স্বপ্নে অনেক দিন আগেই গত হয়ে যাওয়া তার আত্মীয়া কাউন্টেস অ্যানা কনস্টান্টিনা ভন কোসেলের দেখা পায় কার্ল। কাউন্টেস তাকে সেদিন অসাধারণ রুপবতী, দীঘল কালো চুলের এক মেয়েকে দেখিয়ে বলেন যে, এই মেয়েই হবে তোমার সত্যিকারের ভালোবাসা!

স্বপ্নকে অবিশ্বাস করতে পারে নি তরুণ কার্ল, ভুলতে পারে নি স্বপ্নে দেখা সেই রমণীকেও। তাই এরপর থেকেই শুরু হয় তার অপেক্ষার পালা। এভাবে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কেটে যায়। তবুও দেখা মেলে না স্বপ্নের সেই রাজকন্যার। ততদিনে কার্লের বয়স ঠেকেছে তেতাল্লিশে।

কার্ল ট্যাঞ্জলার

১৯২০ সালের দিকে তাই ডোরিস অ্যানা শ্যাফার নামে এক মহিলার সাথে সংসার শুরু করেন কার্ল। সুখেই কাটছিলো তাদের দিনগুলো। এ দম্পতির ঘর আলো করে আয়েশা ট্যাঞ্জলার ও ক্রিস্টাল ট্যাঞ্জলার নামে দুটি সন্তানও জন্ম নিয়েছিলো। তবু কোথায় যেন একটা ‘কী নেই! কী নেই!’ ভাব কাজ করতো কার্লের মনে। যৌবনে স্বপ্নে দেখা অসাধারণ রুপবতী সেই নারীকে তিনি ভুলতে পারেন নি এই মধ্যবয়সে এসেও।

১৯২৭ সাল থেকে তাই আলাদা থাকা শুরু করেন কার্ল ও ডোরিস। আলাদা থাকলেও তারা তালাক দেন নি একে অপরকে। কার্ল ট্যাঞ্জলার নিজের নাম পাল্টে করেন কার্ল ভন কোসেন, চলে যান ফ্লোরিডার কী ওয়েস্টে। সেখানেই ইউএস মেরিন হাসপাতালে এক্স-রে টেকনিশিয়ান হিসেবে চাকরি নেন তিনি। এভাবেই শুরু হয় ‘ম্যারিড ব্যাচেলর’ কার্ল ট্যাঞ্জলার ওরফে কার্ল ভন কোসেলের নতুন পথের যাত্রা।

এক্স-রে টেকনিশিয়ান কার্ল ভন কোসেলের দিনগুলো কেটে যাচ্ছিলো বেশ ভালোভাবেই। এভাবেই কেটে যায় প্রায় বছর তিনেক। ১৯৩০ সালের একদিনের কথা। সেদিন দীঘল কালো চুলের সুন্দরী এক তরুণী ফুসফুসের কিছু সমস্যার পরীক্ষা করাতে আসলো ইউএস মেরিন হাসপাতালে। মারিয়া এলেনা মিলাগ্রো ডি হয়োস নামের সেই মেয়েটিকে সবাই চিনতো হেলেন নামে। তো হেলেনের এক্স-রে করারও দরকার হয়েছিলো। তাই সে গেলো কার্লের কাছে। সাথে সাথেই যেন আকাশ থেকে পড়লেন কার্ল। এই তো সেই মেয়ে যাকে তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন অনেকদিন আগে! যাকে তার আত্মীয়া বলেছিলেন জীবনের সত্যিকারের ভালোবাসা হিসেবে। এতদিন পর যেন হারানো কোনো অনুভূতি আবারো জেগে উঠলো তেপ্পান্ন বছর বয়সী কার্লের মনে। আফসোস, হাসপাতালের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর জানা গেলো যে হেলেন আক্রান্ত যক্ষ্মায়!

মারিয়া এলেনা মিলাগ্রো ডি হয়োস

কার্ল ট্যাঞ্জলার হেলেনকে কোনোদিন তার স্বপ্নের কথা বলেছিলেন কিনা তা জানা না গেলেও এটা জানা যায় যে, তিনি হেলেনকে নিজের মনের কথা জানিয়েছিলেন। নিয়মিতভাবেই স্বপ্নে পাওয়া রাজকন্যাকে অলঙ্কার ও বিভিন্ন সুন্দর পোষাক কিনে পাঠাতেন তিনি। তবে নিজের শারীরিক অসুস্থতার কথা বিবেচনা করেই তার প্রস্তাবে সাড়া দেয় নি হেলেন। কিন্তু তাতে কী? হেলেনের প্রতি কার্লের আগ্রহ তাতে বিন্দুমাত্রও কমে নি।

চিকিৎসাবিদ্যায় কার্লের জ্ঞান ছিলো অতি অল্প। তবুও মনের জোর ও ভালোবাসার টানে তিনি হেলেনের বাসায় গিয়ে তার চিকিৎসা করানোর প্রস্তাব দেন। হেলেনের পরিবার তার সেই প্রস্তাব সানন্দে মেনে নেয়। এরপর শুরু হয় কার্লের অদ্ভুত চিকিৎসা। বাড়তি কিছু এক্স-রে করা আর বিচিত্র সব ওষুধ খাওয়ানোর মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিলো তার সেই প্রয়াস।

এত চেষ্টার পরেও অবশ্য বাঁচানো যায় নি হেলেনকে। ১৯৩১ সালের ২৫ অক্টোবর সবাইকে কাঁদিয়ে পরপারে পাড়ি জমায় কার্লের স্বপ্নের সেই রাজকন্যা। এ ঘটনায় মারাত্মক ভেঙে পড়েন তিনি। এতকাল অপেক্ষার পর নিজের ভালোবাসাকে খুঁজে পেয়েও তাকে কাছে না পাওয়ার বেদনায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় তার মন।

হেলেনের প্রথম সমাধিসৌধ

হেলেনের শেষকৃত্যানুষ্ঠানের পুরো ব্যায়ভার বহন করতে চেয়েছিলেন কার্ল। মেয়েটির পরিবার এ প্রস্তাবে রাজিও হয়ে যায়। প্রিয়তমার জন্য কোনো সাধারণ কবর বানাতে সায় দিচ্ছিলো না কার্লের মন। তাই খরচ করে বেশ বড়সড় এক সমাধিসৌধ নির্মিত হলো হেলেনের জন্য। হেলেনের জন্য কার্লের এমন ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন তার মা-ও। তাই স্মৃতিস্মরুপ হেলেনের একগুচ্ছ চুল তিনি উপহার দেন কার্লকে। আহ, যদি তিনি জানতেন!

পরবর্তী দেড় বছর ধরে নিয়মিতভাবে একটি কাজ করে যান কার্ল। রাতের বেলায় তিনি ছুটে যেতেন কী ওয়েস্ট সিমেট্রিতে। সেখানে তিনি নিশ্চুপ বসে থাকতেন হেলেনের কবরের পাশে। এমন একটি ঘোর লাগা সময়েই একদিন তিনি স্বপ্নে দেখেন যে, হেলেনের আত্মা এসেছে তার কাছে, আকুতি জানাচ্ছে তাকে কবর থেকে নিয়ে যাবার জন্য! অন্তত এমনটিই দাবি করেছিলেন কার্ল ট্যাঞ্জলার। প্রিয়তমার এমন দাবি ফেলতে পারেন নি কার্ল। তাই ১৯৩৩ সালের এপ্রিল মাসের এক সন্ধ্যায় ছোট এক ওয়াগন নিয়ে তিনি চলে আসেন কী ওয়েস্ট সিমেট্রিতে। তারপর ভিড় একটু কমলেই শুরু হয় তার খননযজ্ঞ। কিছুক্ষণ পরই প্রিয়তমার দেহাবশেষ নিয়ে কবরস্থান দ্রুত ত্যাগ করেন তিনি, চলে যান সোজা নিজের বাসায়।

প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মানুসারে পচে গিয়েছিলো হেলেনের দেহটিও। কিন্তু প্রিয়তমাকে এভাবে দেখতে কে চায়? তাই মৃত হেলেনকে যতটা সম্ভব জীবিত হেলেনের মতো করে তুলতে শুরু হলো কার্লের অন্য রকম যুদ্ধ।

প্রথমেই মেয়েটির হাড়গুলো তার দিয়ে জোড়া লাগালেন তিনি, ব্যবহার করলেন কোটের হ্যাঙ্গার। নাড়িভুঁড়ি পচে পেটের জায়গাও তো ফাঁকা হয়ে গিয়েছিলো। সেখানে তিনি ঢুকিয়ে দিলেন ন্যাকড়া। এভাবে শরীরের ভেতরটাকেও যতটা সম্ভব স্বাভাবিক মানুষের মতো স্ফীত করলেন তিনি। হাড় তো গেলো, এখন দরকার চামড়া। এজন্য সিল্ক, মোম ও প্লাস্টার অফ প্যারিসের সাহায্য নিলেন কার্ল। চোখের ফাঁপা গর্ত পূরণ করতে ব্যবহার করা হলো চশমা। আর পড়ে যাওয়া চুলের জায়গায় নিজেই একটি উইগ বানিয়ে লাগিয়ে দিলেন কার্ল। সেই চুলগুলো কোথা থেকে এসেছিলো শুনবেন? হেলেনের মা কার্লকে যে চুলগুলো দিয়েছিলেন, সেগুলোই কাজে লাগিয়েছিলেন তিনি।

কার্লের হাতে পড়ে হেলেনের মৃতদেহের অবস্থা

এবার কাপড়চোপড়ের পালা। হরেক রকম সুন্দর পোষাক, অলঙ্কারাদির সাহায্যে মৃত প্রিয়তমাকে সাজাতে কার্পন্য করলেন না কার্ল। মৃতদেহটিতে পচন প্রক্রিয়া ধীর করার জন্য বিভিন্ন প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করেছিলেন তিনি, দুর্গন্ধ দূরীকরণে ব্যবহার করেছিলেন নানা সুগন্ধি। এভাবেই এককালের স্বপ্নে দেখা ভালোবাসাকে অন্য রুপে, অন্য মহিমায় আপন করে নিলেন তিনি!

মৃত হেলেনকে পুনরায় জীবিত করার ভূতও চেপেছিলো একসময় কার্লের মাথায়। এজন্য একটি প্লেনে করে মৃতদেহটিকে স্ট্রাটোস্ফিয়ারে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। তার বিশ্বাস ছিলো যে, সেখানে গেলে বিকিরণ ভেদ করে যাবে হেলেনের মৃতদেহ। এর ফলে আবারো হাসতে-ফিরতে-চলতে পারবেন হেলেন, হয়ে উঠবেন আগের মতোই প্রাণবন্ত!

কার্ল ও হেলেন

এভাবেই কেটে যায় প্রায় সাতটি বছর। ১৯৪০ সালের অক্টোবর মাসের কথা। কার্ল সম্পর্কে বিচিত্র কিছু গুজব হেলেনের বোন ফ্লোরিন্ডার কানে এসে পৌঁছালো। এক ব্যক্তি নাকি কার্লের বাড়ির জানালা দিয়ে তাকিয়েছিলো। তখন সে কার্লকে মানবাকৃতির এক পুতুলের সাথে নাচতে দেখে ফেলে! এমন কথা শুনে সন্দেহ জাগে ফ্লোরিন্ডার মনে। তাই তিনি ছুটে যান কার্লের বাড়িতে, দেখতে চান সেই পুতুল।

অবশেষে বেরিয়ে আসে থলের বেড়াল, সত্য উন্মোচিত হয় সবার কাছে। পুলিশ এসে পাকড়াও করে কার্লকে। তবে শেষ পর্যন্ত অবশ্য ছাড়া পেয়ে যান তিনি।

পরবর্তী অনুসন্ধানে কার্ল ও মৃত হেলেন সম্পর্কে বেরিয়ে আসতে থাকে বিচিত্র সব তথ্য। নিয়মিতই হেলেনের সেই মৃতদেহের সাথে নাচতেন কার্ল। এমনকি রাতের বেলা তাকে পাশে নিয়ে ঘুমাতেনও কার্ল! অবশ্য কার্ল হেলেনের দেহটির সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতেন কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় নি। ১৯৭২ সালে একদল গবেষক দাবি করেন যে, হেলেনের লজ্জাস্থানে এক টুকরো কাগজ টিউবের মতো করে ঢুকিয়ে এরপর তার সাথে মিলিত হতেন কার্ল। তবে বত্রিশ বছর পর তাদের এমন অদ্ভুত দাবিকে কেউই তেমন গুরুত্ব দেয় নি।

হেলেনের মৃতদেহ

ওদিকে হেলেনের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়ার পর তা নিয়ে পরীক্ষা করেন চিকিৎসক ও প্যাথোলজিস্টরা। তারপর সেটি প্রদর্শনের জন্য রাখা হয় ডীন-লোপেজ ফিউনেরাল হোমে। সেখানে প্রায় ৬,৮০০ জন মানুষ দেখতে এসেছিলো মৃত হেলেনের অদ্ভুত সেই অবস্থাকে। এরপর আবার কী ওয়েস্ট সিমেট্রিতেই কবর দেয়া হয় তাকে। তবে কবরের অবস্থান গোপন রাখা হয় জনসাধারণের কাছ থেকে।

১৯৪৪ সালে ফ্লোরিডার প্যাস্কো কাউন্টিতে চলে যান কার্ল। স্ত্রী ডোরিস এ সময় তাকে মানসিকভাবে অনেক সমর্থন দিয়ে গেছেন। হেলেনকে (প্রকৃতপক্ষে তার মৃতদেহ) হারানোর বিষাদ অবশ্য একটুও কাটাতে পারেন নি কার্ল। তাই হেলেনের একটি পুত্তলিকা তৈরি করে সেখানে তার ডেথ মাস্ক ব্যবহার করে ঐ পুত্তলিকার সাথেই থাকা শুরু করেন তিনি।

১৯৫২ সালের ৩ জুলাই অবশেষে মারা যান কার্ল। মৃত্যুর তিন সপ্তাহ পর মেঝেতে পড়ে থাকা অবস্থায় তার দেহটি পাওয়া যায়। মৃত কার্ল তখনও জড়িয়ে ধরে রেখেছিলেন হেলেনের পুত্তলিকা। কারো কারো মতে, আসলে ওটাই ছিলো হেলেনের আসল মৃতদেহ। ১৯৪০ সালে পরিস্থিতি ঘোলাটে দেখে সবার চোখের অগোচরে তিনি নাকি আরেকটি মৃতদেহ দিয়ে প্রতিস্থাপিত করে দিয়েছিলেন হেলেনের দেহটিকে! হেলেনের মৃতদেহকে পুনরায় কবর থেকে তুলে আনার দাবিও করে থাকেন কেউ কেউ!

আর এভাবেই স্বপ্নে পাওয়া রাজকন্যার সাথে অদ্ভুত এক ‘কাছে আসার গল্প’ রচনা করে সেই রাজকন্যাকে জড়িয়েই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কার্ল ট্যাঞ্জলার।

 

This article is in Bangla language. It's about the strange love story of Carl Tanzler.

References:

1) gizmodo.com/undying-love-carl-tanzlers-mummified-dream-girl-1710663454

Featured Image: couplegoalspodcast.com

Related Articles