এনিগমা কোড ও এক লুকোনো ইতিহাসের সন্ধানে (পর্ব-২)

গত পর্বে আমরা ক্রিপ্টোলজি, এনিগমা কোড এবং এনিগমা মেশিনের কার্যপদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছি। এই পর্বে আমরা এনিগমা কোড সংক্রান্ত একটি ইতিহাস সম্পর্কে জানব, যা বহু বছর লোকচক্ষুর অন্তরালে লুকিয়ে রাখা হয়েছিলো এবং এই ইতিহাসের পাতাটি না থাকলে অনেক কিছুরই অস্তিত্ব হয়তো সম্ভব ছিলো না। উল্লেখ্য, গত পর্বের তথ্যগুলো এই লেখাটিকে স্পষ্টভাবে বুঝতে সাহায্য করবে, তাই যারা আগের লেখাটি পড়েননি, তারা আগে প্রথম পর্বটি পড়ে আসতে পারেন।

এনিগমা মেশিনের জন্ম বিবর্তন

এনিগমা মেশিন জার্মানদেরই আবিষ্কার, এমন ধারণা প্রচলিত থাকলেও সর্বপ্রথম এনিগমা মেশিনের ধারণা আসে দুজন ডাচ নৌ-অফিসারের মাথায়। ১৯১৫ সালে ডাচ নৌ-অফিসার থিও এ. ভ্যান হেঙ্গেল এবং আর.পি.সি স্প্রেংলার সর্বপ্রথম ডাচ ওয়ার ডিপার্টমেন্টের জন্যে একধরনের রোটরভিত্তিক ক্রিপ্টোগ্রাফিক মেশিনের পরিকল্পনা করেন। রোটর কী এবং কীভাবে কাজ করে তা আমরা গত পর্বে দেখে এসেছি। তবে রোটর মেশিনটি পরিপূর্ণতা পায় জার্মান ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনিয়ার আর্থার শেরবিয়াসের হাতে, ১৯২৩ সালে। যদিও তিনি প্রথম রোটর মেশিনটি তৈরি করেছিলেন ১৯১৮ সালে। ১৯২২ সালে তিনি পেটেন্টের মাধ্যমে তার উদ্ভাবিত মেশিনটির স্বত্ব সংরক্ষণ করেন।তিনিই যন্ত্রটিকে এনিগমা মেশিন নাম দিয়েছিলেন বলে মনে করা হয়।

বাঁ থেকে-থিও এ ভ্যান হেঙ্গেল, আর পি সি স্প্রেংলার ও আর্থার শেরবিয়াস; image source: cryptomuseum.com

উদ্ভাবনের পর পর্যায়ক্রমে যন্ত্রটির উন্নয়নসাধন করা হয় আর্থার শেরবিয়াসের ‘শেরবিয়াস এন্ড রিটার কোম্পানি’ দ্বারা। প্রথমদিকে উদ্ভাবিত এনিগমা মেশিনগুলোর এনক্রিপ্ট করা কোড কাগজে ছাপা হতো। তবে পরবর্তীতে ছাপার ব্যবস্থা বাদ দিয়ে যন্ত্রটিতে ল্যম্পবোর্ড ব্যবহার করা হয়, যাতে টাইপ করা বর্ণগুলোর এনক্রিপ্টেড রূপ বাতির মাধ্যমে জ্বলে উঠতো। পরবর্তীতে কোডে আরও জটিলতা আনতে যন্ত্রটিতে যুক্ত করা হয় প্লাগবোর্ড। উদ্ভাবনের পর যন্ত্রটি নিয়ে কোনো গোয়েন্দা সংস্থা, গুপ্ত সংঘ বা সামরিক সংস্থা কোনো আগ্রহ প্রকাশ করেনি। তবুও বিভিন্ন কোম্পানি দ্বারা যন্ত্রটির উন্নতি সাধন এবং কেনাবেচা চলতে থাকে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং এনিগমা মেশিন

মূলত সামরিক কাজের জন্য উদ্ভাবিত হলেও প্রথমদিকে এনিগমা মেশিন ব্যবহৃত হচ্ছিলো বাণিজ্যিকভাবে।জার্মানরা সামরিক কাজে এর গুরুত্ব বুঝতে আরম্ভ করে ১৯২৬ সালের দিকে। এসময় থেকেই জার্মান মিলিটারির মধ্যে এই যন্ত্রের ব্যবহার শুরু হয়। তবে জার্মানদের আগে থেকেই ইতালিয়ান সেনাবাহিনী যন্ত্রটি ব্যবহার করে আসছিলো। ধীরে ধীরে জার্মানরা এই যন্ত্রের গুরুত্ব এবং কার্যকারিতা পুরোপুরিভাবে অনুধাবন করতে পারে এবং এনিগমাকে আরো উচ্চতর কাজে ব্যবহারের পরিকল্পনা করতে থাকে।

তখনকার বৈশ্বিক রাজনীতিও ধীরে ধীরে অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে থাকে এবং অনেকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর ইঙ্গিত পেয়ে যায়। তবে এতে সবচেয়ে বেশি ভীত হয়ে পড়ে পোলিশরা। কারণ জার্মানদের কাছে থাকা এনিগমা মেশিনের দক্ষতা সম্পর্কে এবং এটি জার্মান আক্রমণকে কতটা নিখুঁত ও দুর্ভেদ্য করে তুলতে পারে, সেসম্পর্কে তারা খুব ভালোভাবেই জানতো। সেসময় রেডিও বা টেলিগ্রাম ট্রান্সমিশন সিস্টেম হ্যাক করা ছিল নিতান্তই ছেলেখেলার মতো। তাই জার্মানরা যে নিজেদের মধ্যে যুদ্ধের গোপন বার্তা আদান-প্রদানে কোনো বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করবে না, এমনটা ভাবার কোনো কারণ ছিলো না। আর জার্মানদের যুদ্ধ-পরিকল্পনার ব্যপারে অজ্ঞাত থাকলে বিশ্বের অন্যতম এই পরাশক্তি হয়ে উঠবে আরো শক্তিশালী।

এই কথা মাথায় রেখেই ‘পোলিশ সাইফার ব্যুরো’ ১৯৩০ সাল থেকে এনিগমা কোড ভাঙার প্রচেষ্টা চালাতে থাকে।তারা একাজে ‘পোজনান ইউনিভার্সিটি’ থেকে আগত তিনজন তরুণ গণিতবিদ- মারিয়ান রেজোস্কি, জার্জি রোজিস্কি ও হেনরিক জিগলস্কিকে নিয়োগ দেয়। এই তিন্তরুণ গণিতবিদ বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত এনিগমা মেশিন নিয়ে গবেষণা শুরু করেন এবং ১৯৩২ সালে প্রথম এই যন্ত্রের আভ্যন্তরীণ গঠন সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে অবহিত হন।

হেনরিক জিগলস্কি এনিগমা মেশিনের একটি দুর্বলতা ধরতে পারেন। তিনি এই দুর্বলতাকে ব্যবহার করে কিছু তত্ত্ব আবিষ্কার করেন, যা ‘জিগলস্কি শিট’ নামে পরিচিত ছিলো ।তিনি জিগলস্কি শিট ব্যাবহার করে ‘ক্রিপ্টোলজিক বোম্ব’ নামক একটি যন্ত্র উদ্ভাবন করেন, এবং এই যন্ত্র দিয়ে প্রথমবারের মতো ১৯৩৩ সালে সফলভাবে এনিগমা কোড ভাংতে সক্ষম হন। তবে পোলিশরা এই পুরো ব্যাপারটি বিশ্বের কাছ থেকে গোপন রাখে। এখানে উল্লেখ্য, পোলিশ সাইফার ব্যুরো জার্মানদের ব্যবহার করা এনিগমা মেশিনের মাত্র একটা সেটিংসই ভাংতে পেরেছিলো (যে সেটিংসটি জার্মানরা ঐ মূহূর্তে ব্যবহার করছিলো)। তারা এর মাধ্যমে জার্মানদের আদান প্রদান করা সকল তথ্য জানতে পারছিলো।

বাঁ থেকে মারিয়ান রেজোস্কি, জার্জি রোজিস্কি ও হেনরি জিগলস্কি; Image Source: polishcenter,net

তবে প্রথম পর্বে আমরা দেখে এসেছি, একটি তিন-রোটরবিশিষ্ট এনিগমা মেশিনের মিলিয়ন মিলিয়ন সংখ্যক সেটিংস থাকতে পারে এবং এগুলো দ্বারা মিলিয়ন মিলিয়ন সংখ্যক ভিন্ন ধরনের কোড তৈরি করা যেতে পারে।১৯৩৮ সাল পর্যন্ত জার্মানরা পোলিশদের পাঠোদ্ধার করা (যদিও জার্মানরা সেটা কখনোই জানতে পারেনি) সেটিংস দিয়েই এনিগমা কোড তৈরি করছিলো এবং নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করছিল। হঠাৎ করে ১৯৩৮ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর জার্মানরা তাদের সেই প্রচলিত সেটিংস বদলে ফেলে এবং সেই সাথে তাদের সকল এনিগমা মেশিনে আরো দুটি অতিরিক্ত রোটর যুক্ত করে। এতে করে পোলিশ সাইফার ব্যুরোর এতদিনের সকল গবেষণা ধুলোয় মিশে যায় এবং অতিরিক্ত দুটি রোটর যুক্ত করায় জার্মান এনিগমা কোড হয়ে ওঠে আর দুর্ভেদ্য। জার্মানি যে খুব শীঘ্রই উল্টোপাল্টা কিছু একটা করতে যাচ্ছে, সে বিষয়েও নিশ্চিত হয় পোলিশরা।

সবশেষে উপায়ান্তর না দেখে পোলিশ সাইফার ব্যুরো তাদের গোপন অনুসন্ধান সম্পর্কে ফ্রান্স ও ব্রিটেনকে অবহিত করে (যারা জার্মানির বিপক্ষে ছিলো) এবং তাদের গবেষণা-সংক্রান্ত সকল গোপন নথিপত্র ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের নিকট হস্তান্তর করে দেয়। এরপর গোপনীয়তা রক্ষার্থে তাদের সকল যন্ত্র, নথিপত্র ও গবেষণার নিদর্শন ধ্বংস করে দেয়। প্রযুক্তিগত গবেষণার এক অনন্য ইতিহাস বেশ কিছুদিনের জন্যে ধামাচাপা পড়ে যায়।         

 ব্লেচলি পার্কের মহাযজ্ঞ

পোলিশদের কাছ থেকে গোপন তথ্য পাওয়ার পর ব্রিটেনও এনিগমা কোডের পাঠোদ্ধারের গুরুত্ব বুঝতে পারে। তারা এ সম্পর্কিত গবেষণার জন্যে তাদের গুপ্তবার্তা সংস্থা Govenment Code and Cypher (সংক্ষেপে CG and CS) ব্রিটেনের ব্লেচলি নামক একটি শহরের ব্লেচলি পার্ক নামক স্থানে স্থানান্তর ও পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। পোলিশদের মতোই ব্রিটিশরা তাদের জার্মান-কোড ব্রেকিংয়ের এই মিশনকে গোপন রেখেছিলো। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল ব্লেচলি পার্কের কোড ব্রেকিং সংক্রান্ত সকল কর্মকান্ডের চূড়ান্ত গোপনীয়তা ঘোষণা করেন এবং সে অনুযায়ী এ মিশনের নামকরণ করেন Top Secret Ultra বা সংক্ষেপে ULTRA। এমনকি ULTRA মিশনে কাজ করা সদস্যদের পরিবাররো কখনো জানতে পারেনি যে তার কী নিয়ে কাজ করছিলেন।

ব্লেচলি পার্ক; Image source: cryptomuseum.com

ব্লেচলি পার্কের প্রধান নিযুক্ত হয়েছিলেন CG and CS এর প্রধান অ্যালেস্টেয়ার ডেনিস্টন। কেমব্রিজের প্রখ্যাত গণিতিবিদ অ্যালান টিউরিংকে নেতৃত্ব দিয়ে সেখানে ব্রিটেনের সব নামী গণিতবিদ, প্রকৌশলী এবং দাবাড়ুদের নিয়ে একটি গবেষণা দল গঠন করা হয়, যাদের মধ্যে ছিলেন ডিলি নক্স, গর্ডন ওয়েলচম্যান, টমি ফ্লাওয়ার, স্টুয়ার্ট মিলনার ব্যারি, ম্যাক্স নিউম্যানসহ আরো অনেকে।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের জনক অ্যালান টিউরিং; Image source: pocket book

১লা সেপ্টেম্বর জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করে। তারপর ৩রা সেপ্টেম্বর ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মানির বিরূদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। জার্মানরা নিজেদের মধ্যেকার যোগাযোগকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে গোপনীয় করে তুলতে শুধুমাত্র এনিগমা মেশিনের সেটিংস বদলে এবং দুটি অতিরিক্ত রোটর যুক্ত করেই ক্ষান্ত থাকেনি। জার্মান সামরিক বাহিনী বা অফিসার, যাদের কাছেই এনিগমা মেশিন আছে, তাদের কাছে ১ মাসের জন্যে একটি সেটিংস বুক থাকতো এবং সেই সেটিংস বুকের তালিকা অনুসারে প্রতিদিনই তারা তাদের এমিগমা মেশিনের সেটিংস পরিবর্তন করতো। অর্থাৎ,একটি নির্দিষ্ট সেটিংসের এনিগমা কোড শুধুমাত্র ২৪ ঘন্টাই বলবৎ থাকতো। ২৪ ঘন্টার মধ্যে সেই সেটিংস খুঁজে না বের করতে পারলে সারাদিনের সকল গবেষণা নিরর্থক হয়ে যেত এবং পরেরদিন থেকে আবার নতুন করে গবেষণা শুরু করতে হতো।

একপর্যায়ে সকল গবেষকদের নেতৃত্ব দেয়া অ্যালান টিউরিং ভাবলেন যে, এভাবে কাগজে-কলমে হিসাব-নিকাশ করে এত কম সময়ে এত জটিল কোড ভাঙা সম্ভব নয়। মেশিনের তৈরি কোড ভাঙার জন্যে দরকার স্বয়ংক্রিয় একটি মেশিন। টিউরিংয়ের এই ধারণাই পরবর্তীতে এক বিপ্লবে রূপ নিয়েছিলো। 

বোম্ব মেশিন: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণার সূচনা

পোলিশরা তাদের জার্মান-কোড সম্বলিত যেসব গবেষণা নিরাপত্তার খাতিরে ধ্বংস করে ফেলেছিলো, সেগুলো যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিলো, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যদিও পাঁচ রোটরবিশিষ্ট এবং পরিবর্তনশীল সেটিংস সম্বলিত এনিগমা মেশিনের কোড ব্রেকিংয়ে পোলিশদের সেই গবেষণা সরসরি কোনো কাজে লাগেনি। তবে এই গবেষণার উপর ভিত্তি করেই ব্লেচলি পার্কের গণিতবিদরা তাদের মূল গবেষণা চালান।

মূলত জার্মান কোড ভাঙার জন্য যন্ত্রের ব্যবহার পোলিশরাই প্রথম করে। হেনরিক জিগলস্কি নির্মিত সেই ‘ক্রিপ্টোলজিক বোম্ব’ মেশিনটি ছিলো তিন রোটরবিশিষ্ট এনিগমা মেশিনের কোড ভাঙার জন্যে। এই যন্ত্রের ওপর করা পোলিশদের গবেষণার সাহায্য নিয়েই অ্যালান টিউরিং ও তার সহকর্মীরা তাদের মেধা ও অক্লান্ত পরিশ্রম দিয়ে পাঁচ রোটরবিশিষ্ট এনিগমা মেশিনের কোড ভাংতে আরেকটি যন্ত্র তৈরি করলেন। এর নাম দেয়া হয়েছিলো পোলিশদের আবিষ্কৃত ক্রিপ্টোগ্রাফিক বোম্ব মেশিনের নামানুসারেই। তবে একে সংক্ষেপে ‘বোম্ব’ নামে ডাকা হতো।এই মেশিন তৈরিতে অ্যালান টিউরিং ও গর্ডন ওয়েলচম্যানের অসামান্য অবদানের জন্য একে ‘টিউরিং-ওয়েলচম্যান বোম্ব’ও ডাকা হয়।

টিউরিং ওয়েলচম্যান বোম্ব মেশিন; Image Source: nationalmuseum

বোম্ব মেশিনটি বিদ্যুতের সাহায্যে একটানা চলতেই থাকতো এবং এনিগমা মেশিনের সম্ভাব্য সকল সেটিংসের মধ্যে দিয়ে গিয়ে এনক্রিপ্টেড কোডের অর্থবোধক বিন্যাস খুঁজে বের করার চেষ্টা করতো। বলা বাহুল্য, এই যন্ত্র এত দ্রুত সম্ভাব্য সকল সেটিংসের মধ্য দিয়ে যেত, যা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব ছিল না।

আর এখানেই আসে স্বয়ংক্রিয়তা বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাপারটি। বর্তমানে প্রযুক্তিনির্ভর যুগের মানুষ হিসেবে আমরা জানি যে, গুগলের সার্চ ইঞ্জিনে কোনো একটি কী-ওয়ার্ড লিখে সার্চ করলেই মুহূর্তের মধ্যে ঐ কী-ওয়ার্ড সংশ্লিষ্ট সকল তথ্য আপনার সামনে এসে হাজির হয়ে যায়। বড় বড় কোম্পানিগুলোতে মানুষের কাজগুলো রোবটরা খুব দ্রুত ও সহজেই করে ফেলে। ভেবে দেখুন তো, আধুনিক যুগের প্রযুক্তিগুলোর সাথে সে যুগের টিউরিং, ওয়েলচম্যানদের উদ্ভাবিত এনালগ যন্ত্রটির কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছেন কি?

সর্বপ্রথম টিউরিংদের ডিজাইনকৃত বোম্ব মেশিনটিকে বাস্তব রূপ দেয় British Tabulating Company এবং ১৯৪০ সালের ১৮ই মার্চ মেশিনটিকে ব্লেচলি পার্কে পাঠানো হয়। প্রথম তৈরি বোম্ব মেশিনটির নাম ছিলো Victory।পরবর্তীতে আরো বেশি পরিমাণে কোড ভাঙার জন্য আরো বেশিসংখ্যক বোম্ব-এর প্রয়োজন পড়ে, যার সরবরাহ করে ব্রিটেনের এই কোম্পানিটি। অনেকের মতে, বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে দুশোরও বেশি বোম্ব মেশিন কোড ব্রেকিংয়ের কাজে নিয়োজিত ছিলো।

স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র ব্যবহারের পরেও কোড ব্রেকিংয়ের কাজে প্রচুর পরিশ্রম করতে হতো। জার্মানদের ট্রান্সমিশন সিস্টেম হ্যাক করে এনক্রিপ্টেড কোড নামিয়ে আনা, সেই কোড সকল বোম্ব মেশিনে ইনপুট করা, মেশিনগুলোকে সচল রাখা, এবং বোম্ব মেশিনের ডিক্রিপ্টেড মেসেজগুলো অতি গোপনীয়তার সাথে কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়ে পৌঁছানো-এ ধরনের আরো অনেক কাজের জন্যে প্রায় দশ হাজার লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো ব্লেচলি পার্কে। এর মধ্যে বেশিরভাগ কর্মীই ছিলেন নারী। তাদের এই অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই প্রতিনিয়ত জার্মানদের স্পর্শকাতর এবং গোপন সব পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে পারছিলো মিত্রবাহিনী। 

তবে জার্মানরাও ব্লেচলি পার্কের গবেষকদের কম বিপাকে ফেলেনি। যুদ্ধের উত্তেজনা যতই ঘনীভূত হচ্ছিলো, তারা আরো বাড়তি নিরাপত্তার লক্ষ্যে এনিগমা মেশিনের রোটরসংখ্যা বাড়ানো, ঘন ঘন সেটিংস বুক পরিবর্তন ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজেদের এনিগমা কোডকে আরো জটিল করে তুলছিলো। টিউরিং ও তার গবেষক দলও সফলতার সাথেই সেসব বাঁধা অতিক্রম করে আসছিলেন।     

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি চ্যালেঞ্জ ছিলো জার্মান নৌ-বাহিনীর কোড ভাঙা। জার্মান সেনাবাহিনী এবং বিমানবাহিনী ব্যবহৃত এনিগমা মেশিন ছিলো পাঁচটি রোটরবিশিষ্ট। তবে নৌ-বাহিনী আট রোটরবিশিষ্ট এনিগমা মেশিন ব্যবহার করতো যার নাম ছিলো Enigma M3। Enigma M3’র কোড ভাংতে পারেননি ব্লেচলির গবেষকরা। উপরন্তু, জার্মান নৌ-বাহিনীর মেশিনগুলোতে আরো একটি বাড়তি রোটর যুক্ত করা হলে (যাকে Enigma M4 ডাকা হতো) নৌবাহিনীর কোডগুলো হয়ে যায় আরো দুর্ভেদ্য।

কিন্তু একইসাথে নৌবাহিনীর কোড ভাঙা হয়ে পড়েছিলো অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আটলান্টিক মহাসাগর দিয়ে আমেরিকা থেকে ব্রিটেনগামী রসদবাহী জাহাজ বারবারই জার্মানির হামলার মুখে পড়ছিলো। তাই জার্মান নৌ-বাহিনীর পরিকল্পনা সম্পর্কে জানা জরুরি হয়ে পড়েছিলো।

তবে এমন বাঁধাও দমাতে পারেনি ব্লেচলির যোদ্ধাদের। তারা সাধারণ এনিগমা মেশিনের কোড ভাংতে যে বোম্ব মেশিন উদ্ভাবন করেছিলেন, সেটি ছিলো ৩৬টি এনিগমা মেশিনের সমান। এরপর তারা Enigma M4 মেশিনের কোড ভাংতে আরেকটি বোম্ব মেশিন তৈরি করেন, যেটি ছিলো ২৪টি এনিগমা মেশিনের সমান। বোঝাই যাচ্ছে, এই বোম্ব সাধারণ বোম্ব মেশিনের চেয়ে খানিকটা ধীরে কাজ করতো। তবে অবশেষে এই মেশিন দিয়েই বহু কাঙ্খিত জার্মান নৌ-বাহিনীর কোড ভাঙা সম্ভব হয়েছিলো।

অনেকেই মনে করেন, শুধুমাত্র ব্রিটিশরাই যুদ্ধের সময় একচেটিয়াভাবে বোম্ব মেশিন ব্যবহার করেছিলো।মূ লত ব্রিটিশদের পাশাপাশি আমেরিকানরাও কোড-ব্রেকিংয়ের কাজে অংশ নিয়েছিলো, কারণ ব্রিটিশদের একার পক্ষে এতগুলো বোম্ব মেশিন তৈরি ও লোকবল ব্যবহারের জন্যে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ছিলো না। ১৯৪৩ সালে প্রথম আমেরিকানরা তাদের বোম্ব মেশিন তৈরি করে এবং ধীরে ধীরে কোড ব্রেকিংয়ের কাজে সম্পূর্ণরূপে জড়িয়ে পড়লে ব্রিটিশদের কাজও অনেকটা সহজ হয়ে যায়।

কলোসাস: বিশ্বের প্রথম ডিজিটাল ইলেক্ট্রনিক কম্পিউটার

শত ধরনের গোপনীয়তা ও সাবধানতা অবলম্বনের পরও প্রতিটা পদক্ষেপেই হোচট খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়তে হয়েছে জার্মানদের। তারা জানতই না যে প্রতি মুহুর্তেই তাদের গোপন বার্তা ডিক্রিপ্ট করা হচ্ছিলো, যদিও তারা কোনো ধরনের কমতি রাখেনি। এনিগমা ছাড়াও গোপন যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরো শক্তিশালী যন্ত্রের আশ্রয় নিয়েছিলো তারা। তেমনই একটি রোটরভিত্তিক যন্ত্র ছিলো Lorenz SZ-40, (সংক্ষেপে Lorenz) যাতে ১২টি রোটর সংযুক্ত ছিলো। এই যন্ত্রটি ব্যবহার করতেন স্বয়ং হিটলার, জার্মান হাই কমান্ড পর্যায়ে যোগাযোগের উদ্দেশ্যে। তবে এর কোডও ভাঙা সম্ভব হয়েছিলো।

Lorenz SZ-40; Image Source: cryptomeuseum.com

১৯৪৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনিয়ার টমি ফ্লাওয়ার গণিতবিদ ম্যাক্স নিউম্যানের একটি গাণিতিক সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে ভ্যাকুয়াম টিউব-নির্ভর ‘কলোসাস’ নামক একটি যন্ত্র তৈরি করেছিলেন, যেটি ‘লরেঞ্জ সাইফার কোড’ ভাংতে ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের প্রথম ডিজিটাল প্রোগ্রামেবল কম্পিউটার হিসেবে আমরা আমেরিকানদের তৈরি ENIAC এর নাম জানি, প্রকৃতপক্ষে সেটি ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে উদ্ভাবিত এই কলোসাস। ১৯৪৪ সালের ১৮ই জানুয়ারি যন্ত্রটি ব্লেচলি পার্কে নিয়ে আসা হয় এবং ৫ই ফেব্রুয়ারি এটি প্রথমবারের মতো লরেঞ্জ সাইফার কোড ভাংতে পারে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত মোট ১০টি কলোসাস নির্মিত হয়েছিল। প্রথম নির্মিত কলোসাসের নাম ছিলো ‘কলোসাস-১’ বা ‘মার্ক-১’, যাতে প্রায় ১৬০০টি ভ্যকুয়াম টিউব ব্যবহার করা হয়। দ্বিতীয়টি ছিলো ‘মার্ক-২’ যাতে ২৫০০টির মতো ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহৃত হয়েছিলো। কলোসাস সেকেন্ডে ৫০০০ এর মতো ক্যারেক্টার পড়তে সক্ষম ছিলো। আর কলোসাস মার্ক-২ এর জন্যে এই সংখ্যা ছিলো ২৫০০০!

তবে বর্তমান প্রোগ্রামেবল কম্পিউটারের সাথে কলোসাসের মূল পার্থক্য হচ্ছে, কলোসাসের ইন্টারনাল ডিভাইসে কোনো প্রোগ্রাম জমা রাখা যেত যেত না, বাইরে থেকে প্লাগ এবং সুইচের সংযোগ দ্বারা একে প্রোগ্রামেবল করে তোলা হতো।

প্রথমদিকে নির্মিত কলোসাস; Image Source: imgur.com

মহাযজ্ঞের অন্তিম পরণতি

২রা সেপ্টেম্বর, ১৯৪৫। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি ও ধ্বংসযজ্ঞ সাধনের পর অবসান ঘটে মানবেতিহাসের একটি কালো অধ্যায়- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। যুদ্ধের ময়দানের মতো রক্তক্ষয়ী না হলেও ব্লেচলি পার্কের সকল কর্মী ও গবেষকরা দালান ও কয়েকটি কুড়েঘরে যে আরেকটি রোমাঞ্চকর যুদ্ধ লড়েছিলেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।তবে বিশ্বযুদ্ধে অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখা এই মহান অধ্যায়টির সমাপ্তি ঘটেছিলো অত্যন্ত করুণভাবে।

মিত্রপক্ষ চাইতো না যে তারা এনিগমা কোড ভেঙেছিলেন- এ ব্যপারটি জার্মানি জানুক। তাই যুদ্ধের পরও মিশনটিকে গোপন রাখতে ব্রিটিশ সরকার ব্লেচলি পার্কের গবেষণা ও কোড ব্রেকিং সংক্রান্ত সকল নিদর্শন ধ্বংস করে দেয়। হাজার হাজার নথিপত্র পুড়িয়ে ফেলা হয়, সকল বোম্ব মেশিন ও কলোসাস ধ্বংস করে ফেলা হয়। ব্লেচলি পার্কের গবেষণা যে যুদ্ধ জেতার প্রচেষ্টার চেয়ে অনেক বেশি কিছু ছিলো, গণিত এবং বিজ্ঞানের এক মহান জয়গাঁথা ছিলো, সেটা কেউ টেরই পায় না। মেধাবী প্রকৌশলী ও গণিতবিদদের পরিশ্রমের ফসল গবেষণাগুলো মাটিচাপা পড়ে যায়।

করুণ পরিণতি ঘটে ব্লেচলির মহানায়ক অ্যালান টিউরিংয়েরও। তার আবিষ্কৃত বিশ্বের প্রথম প্রোগ্রামেবল কম্পিউটারের জন্য তিনি বিশ্বের কাছ থেকে জীবিতকালে একটি করতালিও পাননি, বরং পেয়েছেন অবিচার ও শাস্তি।

যুদ্ধের পর থেকে কেমব্রিজে তাকে সবাই সোভিয়েত স্পাই হিসেবে সন্দেহ করতো। টিউরিং ছিলেন সমকামী, এবং তৎকালীন ব্রিটেনে সমকামীতা ছিলো অপরাধস্বরূপ। টিউরিংকে দোষী সাব্যস্ত করা হলো। আদালতে তিনি তার অপরাধের কথা স্বীকার করলে তাকে দুই বছরের কারাদন্ড ভোগ অথবা সমকামীমূলক আচরণ কমাতে হরমোনাল থেরাপী গ্রহণ করতে বলা হয়। তিনি দ্বিতীয়টাই বেছে নেন। এতে করে তার শরীরে নানা  বৈরী পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে থাকে এবং তিনি মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে ১৯৫৪ সালে সায়ানাইড মিশ্রিত আপেল খেয়ে তিনি আত্নহত্যা করেন। টিউরিংয়ের মৃত্যুর ৬২ বছর পর জনমত ও আবেদনের ভিত্তিতে ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ২০১৩ সালে তাকে সমকামীতার অপরাধ থেকে মুক্তি দেন।

তবে অবদান ও ইতিহাসকে কাগজের মতো পুড়িয়ে ফেলা যায় না, কিংবা মেশিনের মতো ভেঙে গুঁড়োও করা যায় না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রায় ৫০ বছর পর সেই লুকনো ইতিহাস ধীরে ধীরে সবার সামনে আসতে থাকে। পৃথিবীর মানুষ সেই অজানা রোমাঞ্চকর অধ্যায়ের সাথে প্রথমবার পরিচিত হয়।

১৯৯৪ সালে জন হারপার নামক একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার একটি টিম গঠন করেন এবং ‘ফিনিক্স’ নামক একটি প্রজেক্ট হাতে নেন। এই প্রজেক্টের কাজ ছিলো পুনরায় বোম্ব মেশিনকে বাস্তব রূপ দেয়া। ধ্বংসপ্রাপ্ত বোম্ব মেশিনের বেঁচে যাওয়া বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে তিনি পুনরায় টিউরিংদের উদ্ভাবিত মেশিনটিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। ২০০৬ সালে তাদের সেই উদ্দেশ্য সফল হয়।

পুনঃনির্মিত বোম্ব মেশিন; Image Source: lemonde.fr

তাহলে কলোসাসের ভাগ্যে কী জুটেছিলো? আসলে বিশ্বযুদ্ধের পরপরই সব কলোসাস ধ্বংস করে ফেলা হয়নি, দুটো কলোসাস রেখে দেয়া হয়েছিলো পরবর্তীতে কোনো সম্ভাব্য কাজে ব্যবহারের জন্যে। তবে সেই দুটোকেও পরে ধ্বংস করে ফেলা হয়। সৌভাগ্যক্রমে কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ার কলোসাসের কিছু যান্ত্রিক অংশ ও ছবি নিজেদের কাছে রেখে দেন। সেগুলোর সাহায্যে এবং কলোসাসের উদ্ভাবক টমি ফ্লাওয়ারের পরামর্শের ওপর ভিত্তি করে ১৯৯৩ সালে ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনিয়ার ও কম্পিউটার প্রোগ্রামার টনি সেইল পুনরায় কলোসাস নির্মাণের কাজে হাত দেন। ২০০৭ সালে কলোসাসও সফলভাবে পুনঃনির্মাণ করা হয়।

পুনঃনির্মিত কলোসাস কম্পিউটারের সামনে টনি সেইল; Image Source: alamy.com

ব্লেচলি পার্ক এখন ইতিহাস ও প্রযুক্তিপ্রেমীদের জন্যে দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। ২০০৭ সালে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব কম্পিউটিং’ এবং এখানেই অনেক না বলা ইতিহাস এবং প্রযুক্তির এক বিপ্লবের সাক্ষী হয়ে দাঁঁড়িয়ে আছে বোম্ব মেশিন ও কলোসাস।

অব্যক্ত এই অসাধারণ সংগ্রামের গল্পটি প্রকাশ হবার পর থেকে এটি নিয়ে তৈরি হয়েছে অনেক সিনেমা, টিভি সিরিজ ও প্রামাণ্যচিত্র। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো ‘ব্রেকিং দ্য কোড (১৯৯৬)’, ‘দ্য সিক্রেট ওয়ার  (১৯৭৭-৭৮)’, দ্য টিউরিং এনিগমা (২০১১)’, ‘দ্য ব্লেচলি সার্কেল (২০১২-১৪)’ এবং ‘এনিগমা (২০০১)’। এদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য ইমিটেশন গেম’। তবে একইসাথে ইতিহাস গোপন ও বিকৃত করার অভিযোগে সিনেমাটিকে তীব্র সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে।

সংকট থেকে যে একসময় বিপ্লব জন্ম নেয়, তার এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর আছে বলে আমার মনে হয় না। তবে ইতিহাসের নিষ্ঠুর প্রকৃতির কারণে আমরা মাঝেমধ্যে সংকট থেকে জন্ম নেয়া এ ধরনের বিপ্লবকে যথাযথ মূল্য দিতে পারি না। টেবিলে রাখা ডেস্কটপ কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি যে, এর পেছনে বিজ্ঞান ও গণিতের সৌন্দর্যমন্ডিত এতগুলো লুকনো অধ্যায়েরও খুব বড় অবদান রয়েছে?

১ম পর্ব: এনিগমা কোড ও এক লুকনো ইতিহাসের সন্ধানে (পর্ব-১)

This is a bengali article discussing about the beginning & working procedure of Enigma machine.

Reference

1. The Code Book by Simon Singh

2. www.cryptomuseum.com

3. www.etymonline.com

 Feature Image: Wikimedia Commons

Related Articles

Exit mobile version