১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাইয়ের কথা বলছি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অস্ত্রের ঝনঝনানি এবং কামানের গোলার প্রচণ্ড বিস্ফোরণে কাঁপছে পুরো পৃথিবী। প্রায় কয়েক বছর ধরে চলমান এই যুদ্ধের হাত থেকে রেহাই পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সেনারা। কিন্তু বিধিবাম! যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ নেই। বিমানফেরত হাজার হাজার নিহত যোদ্ধার কফিনের সামনে দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুমানের কপাল দুশ্চিন্তায় ভাঁজ হয়ে যায়। মিত্রশক্তি এবং অক্ষশক্তি- দু’পক্ষের কেউই শান্তিচুক্তির জন্য এগিয়ে আসছে না। শান্তির ছায়াতলে এই যুদ্ধ থামানো অসম্ভব। কিন্তু এই যুদ্ধ থামাতেই হবে। তাহলে উপায় কী?
বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ এবং সামরিক কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি আলোচনায় বসেন তিনি। বিজ্ঞানীরা জানান, “একটি উপায় অবশ্য আছে। শান্তির কথা বাদ দিয়ে অন্য পথে অগ্রসর হতে হবে। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলাই বুদ্ধিমানের কাজ”। ট্রুমান বিজ্ঞানীদের প্রস্তাবে সায় দেন। বিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরে গবেষণার মাধ্যমে একটি পারমাণবিক বোমা তৈরি করেছিলেন। রাষ্ট্রপতির অনুমতি পাওয়া মাত্র তারা সেটি তার সমীপে পেশ করেন। ট্রুমান এই বোমা সম্পর্কে জানতেন। ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টের ‘ম্যানহাটন প্রজেক্ট‘-এর গবেষণায় সৃষ্টি এই নতুন বোমা। তিনি এটির পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণের অনুমতি প্রদান করেন। সেনা কর্মকর্তারা দিনক্ষণ আর স্থান ঠিক করেন। হোয়াইট হাউসে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এই মিশনের নাম দেয়া হয় ‘ট্রিনিটি’।
কড়া নিরাপত্তায় ‘গ্যাজেট’ নামক পারমাণবিক বোমাটি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোর আলামোগোরডো পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। বিজ্ঞানীগণ বেশ কয়েকবার সতর্কতার সাথে বোমাটি পরীক্ষা করে শেষ পর্যন্ত সবুজ সংকেত প্রেরণ করেন। সংকেত পাওয়ামাত্র নিরাপদ দূরত্ব থেকে পৃথিবীর প্রথম পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ করা হয়। মুহূর্তের মধ্যে যেন পৃথিবী কেঁপে উঠলো। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন মার্কিন সেনা কর্মকর্তা টি এফ ফ্যারেল। তিনি তার সুদীর্ঘ সামরিক জীবনে এর আগে কখনো এমন কিছু দেখেননি। সেদিনের বিস্ফোরণে পুরো মাঠ জুড়ে প্রায় ৩০০ মিটার দীর্ঘ একটি খাতের সৃষ্টি হয়। নিউ মেক্সিকোর সেই অন্ধকার খাতের দিকে তাকিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফ্যারেল বুঝতে পারেন, পৃথিবীর বুকে এক নতুন অভিশাপের আগমন ঘটেছে। সেই অভিশাপের হাত ধরে শুরু হয় এক নতুন যুগ, যার নাম ‘পারমাণবিক যুগ’।
পারমাণবিক বোমা কী?
পারমাণবিক বোমা কিংবা ইংরেজি ‘Atom Bomb‘ শব্দটির সাথে আমরা সবাই মোটামুটিভাবে পরিচিত। একে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার কিছু নেই। এই শব্দটি পড়ামাত্রই পাঠকদের মনে হিরোশিমা এবং নাগাসাকির সেই ভয়াবহ বিস্ফোরণের কথা জেগে ওঠে। আসলে পারমাণবিক অস্ত্রের সাথে সাধারণ মানুষের পরিচয়ের শুরুটা এই দুই নগরীর মাধ্যমেই। Encyclopedia Britannica-এর মতে, পারমাণবিক বোমা হচ্ছে একটি বহুমাত্রায় ধ্বংসাত্মক অস্ত্র, যা প্লুটোনিয়াম অথবা ইউরেনিয়াম জাতীয় ভারি পরমাণুর নিউক্লিয়াসের বিভাজন অথবা বিদারণের মাধ্যমে নির্গত শক্তিকে ব্যবহার করে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের দুঃখ এবং একবিংশ শতাব্দীর পৃথিবীতে স্নায়ুযুদ্ধের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত এই পারমাণবিক বোমার জনক হিসেবে অভিহিত করা হয় বিজ্ঞানী রবার্ট ওপেনহাইমারকে।
তবে এই বোমা আবিষ্কারে ওপেনহাইমারের একার অবদান নেই। কয়েক দশক ধরে শত শত বিজ্ঞানীর নিরলস পরিশ্রমের ফলে নির্মিত এই পারমাণবিক অস্ত্রের পেছনে রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। বর্তমান যুগে প্রায় ৯টি দেশের অধিকারে মোট ১৬ হাজার ৩০০টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে আক্রমণের পর পৃথিবীতে আর কখনও পারমাণবিক বোমার ব্যবহার করা হয়নি।
যেখান থেকে শুরু
প্রখ্যাত লেখক এইচ জি ওয়েলস তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য ওয়ার্ল্ড সেট ফ্রি‘-তে ইউরেনিয়াম দ্বারা নির্মিত এক ধরনের বিধ্বংসী হাতবোমার কথা কল্পনা করেন। অতি শক্তিশালী সেই হাতবোমা একবার নিক্ষেপিত হলে তা অনির্দিষ্টকালের জন্য বিস্ফোরিত হতে থাকবে। ১৯১৪ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসের মাধ্যমে আমরা ইউরেনিয়াম নির্মিত বোমার সাথে পরিচিত হই। কিন্তু সেটি ছিল একটি উপন্যাসমাত্র। আর সেই হাতবোমার অস্তিত্ব শুধু বইয়ের পাতার ভেতর আবদ্ধ ছিল। কিন্তু এইচ জি ওয়েলসের কল্পনা বাস্তবতা থেকে খুব বেশি দূরে ছিল না। মাত্র আড়াই দশক পরেই বিজ্ঞানীরা সেই হাতবোমাকে বাস্তবে রূপ দিয়ে তৈরি করেন শক্তিশালী পারমাণবিক বোমা।
১৯৩৮ সালে জার্মানির বার্লিনের একটি গবেষণাগারে এক যুগান্তকারী আবিষ্কারের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিধ্বংসী বোমা তৈরি করার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। সেখানে বিজ্ঞানী অটো হান, লিস মিটনার, ফ্রিৎজ স্ট্রাসমান কর্তৃক ‘Nuclear fission’ বা নিউক্লীয় বিদারণ আবিষ্কৃত হয়। নিউক্লীয় বিদারণ দ্বারা একটি তেজস্ক্রিয় ভারি পরমাণুর নিউক্লিয়াস বিদীর্ণ হয়ে দুটি হালকা পরমাণুতে রূপান্তরিত হওয়াকে বোঝায়। এই ঘটনার ফলে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে প্রচুর পরিমাণে শক্তি উৎপাদিত হয়। আর এই শক্তিকে ব্যবহার করে তৈরি করা যেতে পারে এই নতুন অস্ত্র।
যদিও পূর্বে বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী পরমাণুর অন্তর্নিহিত শক্তি আহরণ সম্পর্কিত বিভিন্ন তত্ত্ব প্রদান করেছিলেন, কিন্তু তাদের কেউই জার্মান বিজ্ঞানীদের মতো সফল হতে পারেননি। ওদিকে জার্মানদের এই আবিষ্কারের তথ্য দীর্ঘ আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের কানে গেল। জার্মানরা পারমাণবিক বোমা তৈরি করবে, আর আমেরিকানরা বসে থাকবে! তা অকল্পনীয়। তাই আমেরিকানরাও কাজে নেমে পড়লো। ১৯৩৯ সালে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণাগারে তারা তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়াম ব্যবহার করে নিউক্লীয় বিদারণ ঘটান। এই পরীক্ষায় ইউরেনিয়ামের দুর্লভ ইউরেনিয়াম-২৩৫ আইসোটোপ ব্যবহার করা হয়েছিলো।
এই ঘটনার কিছুদিন পরেই জার্মান চ্যান্সেলর হিটলার পোল্যান্ড আক্রমণ করেন। এর জের ধরে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। হিটলারের কুখ্যাত ইহুদি হত্যাযজ্ঞের ফলে বহু নামিদামি বিজ্ঞানী ইউরোপ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে পাড়ি জমান। দিন দিন যুদ্ধের তীব্রতা বাড়তে থাকে। যুদ্ধে জয়লাভের উদ্দেশ্যে দু’পক্ষই বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করতে থাকে। কিন্তু কেউই সফল হতে পারছিলো না। ওদিকে দু’পক্ষের বিজ্ঞানীরাই শঙ্কিত ছিলেন। কারণ, বাতাসে গুঞ্জন উঠেছিলো যে, জার্মান বিজ্ঞানীগণ নিউক্লীয় বিদারণকে কাজে লাগিয়ে পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই খবরে চিন্তিত হয়ে পড়েন বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন। তিনি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন রুজেভেল্টকে আসন্ন বিপদ সম্পর্কে অবগত করে পত্র প্রেরণ করেন। সেই ঐতিহাসিক পত্রে তিনি লেখেন,
“সামান্য একটি পারমাণবিক বোমা যদি একটি নৌকায় করে কোনো বন্দরের নিকটে বিস্ফোরিত করা হয়, এর দ্বারা সেই বন্দরসহ এর আশেপাশের বেশ কয়েকটি শহর নিমেষেই ধ্বংস হয়ে যাবে।”
রাষ্ট্রপতি রুজভেল্ট আইনস্টাইনের কথা তেমন আমলে নেননি। পরবর্তীতে ১৯৪১ সালে জাপান কর্তৃক পার্ল হারবার আক্রমণের ফলে টনক নড়ে যুক্তরাষ্ট্রের। এবার রুজভেল্ট নড়েচড়ে বসেন। তিনি পারমাণবিক বোমা গবেষণায় যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করেন। পুরো প্রকল্পের কোড নেম দেয়া হয় ‘ম্যানহাটন প্রজেক্ট’। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যও এই গবেষণায় যোগ দেয়। বোমা তৈরির উপযোগী ইউরেনিয়ামের খনির সন্ধানে কাজে লেগে পড়ে সবাই।
দ্য ম্যানহাটন প্রজেক্ট
যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রকল্পের নাম ‘দ্য ম্যানহাটন প্রজেক্ট‘। প্রায় দেড় লাখ কর্মীর সমন্বয়ে গঠিত এই দলের নেতৃত্বে থাকেন সমসাময়িক বিশিষ্ট বিজ্ঞানীগণ। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন ছিলেন রবার্ট ওপেনহাইমার, লিও সাইলার্ড, হ্যান্স বেথ, ক্লাউড ফুকস, রিচার্ড ফাইনম্যান প্রমুখ। তবে সবচেয়ে অবাক করা তথ্য হচ্ছে, যদিও আলবার্ট আইনস্টাইনের প্রচেষ্টায় ম্যানহাটন প্রজেক্টের কাজ শুরু হয়েছিলো, কিন্তু তিনি নিজে এই প্রকল্পের সাথে জড়িত ছিলেন না।
১৯৪২ সালের ২৮ ডিসেম্বর এই প্রকল্পের অধীনে বোমা নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এই প্রকল্পে বিজ্ঞানী ওপেনহাইমারের অবদার সবচেয়ে বেশি ছিল। তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার জগতে অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী ওপেনহাইমারের অধীনে নিউ মেক্সিকোর প্রত্যন্ত অঞ্চলে নির্মিত হতে থাকে বিংশ শতাব্দীর নতুন ত্রাস। প্রায় তিন বছর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে সফলতার মুখ দেখেন তারা। ১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাই তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ট্রুমানের নিকট সুসংবাদ প্রেরণ করেন ওপেনহাইমার। তার এই অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে ‘পারমাণবিক বোমার জনক’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
অপরদিকে জার্মান বিজ্ঞানীরাও এই বোমা নির্মাণের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত তারা ওপেনহাইমারের নিকট হার মানেন। ট্রুমানের অনুমতি লাভের পর ‘ট্রিনিটি’ কোড নাম ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা নিউ মেক্সিকোতে সর্বপ্রথম সফল পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। বিস্ফোরণের পর মুহূর্তের মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার ফুট উঁচু এক অতিকায় মাশরুমাকৃতির ধোঁয়া পুরো নিউ মেক্সিকোর আকাশ ঢেকে ফেললো। এই দৃশ্য দেখে আনন্দে লাফিয়ে উঠলেন ওপেনহাইমার। তিনি হিন্দু ধর্মগ্রন্থ গীতা থেকে একটি লাইন আপন মনে আবৃত্তি করেন,
“এখন আমি মৃত্যুতে পরিণত হলাম, যা পৃথিবীকে ধ্বংস করে ফেলতে সক্ষম।”
সফল পরীক্ষার পর ট্রুমান সন্তুষ্ট হলেন। তিনি জরুরি বৈঠকে বসলেন সেনা কর্মকর্তাদের সাথে। এবার তাদের নিকট একটি পারমাণবিক বোমা রয়েছে, যা জার্মান কিংবা জাপানীদের কাছে নেই। এবার সময় এসেছে পৃথিবীর বুকে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার। এর মাধ্যমে শুরু হতে যাচ্ছে এক ধ্বংসাত্মক পারমাণবিক যুগ।
মোটা মানুষ এবং ছোট বালকের যাত্রা
যুক্তরাষ্ট্র যখন পারমাণবিক বোমা আবিষ্কার করতে সফল হলো, ততদিনে জার্মানরা অনেকটাই পরাজয়ের দিকে ঢলে পড়েছিলো। কিন্তু যুদ্ধবাজ জাপানীদের সাথে তখনও যুদ্ধ চলছিলো। ট্রুমান ঐতিহাসিক পোস্টডাম ঘোষণার মাধ্যমে জাপানিদের সতর্কবার্তা প্রেরণ করলেন, “সময় থাকতে আত্মসমর্পণ করে ফেলার আহ্বান করছি।” কিন্তু জাপানীরা আত্মসমর্পণ করলো না। তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। ট্রুম্যান জাপানীদের দর্পে অগ্নিশর্মা হয়ে গেলেন। এদের উচিত শিক্ষা দিতে হবে। তিনি জাপানের উপর পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের নির্দেশ প্রদান করেন।
ম্যানহাটন প্রকল্পে নির্মিত বোমা ‘দ্য লিটল বয়‘ এর মাধ্যমে যুদ্ধক্ষেত্রে অভিষেক হয় এই নতুন অস্ত্রের। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট বি-২৯ বোমারু বিমান ‘ইনোলা গে’- এর মাধ্যমে জাপানের গুরুত্বপূর্ণ নগরী হিরোশিমায় নিক্ষেপ করা হয় প্রায় পাঁচ টন ভারি এই বোমা। ‘দ্য লিটল বয়’ হিরোশিমার বুক বিদীর্ণ করে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলো। প্রায় ১৩ কিলোটন বলের সেই বিস্ফোরণে ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারালো। হিরোশিমার পরিবেশে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়লো। এর ফলে আরও ১০ হাজার মানুষ মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়লো।
এবার বুঝি জাপানিরা লেজ গুটিয়ে পালাবে! কিন্তু ট্রুম্যানকে অবাক করে দিলো তারা। এবারও আত্মসমর্পণ করলো না। ট্রুম্যান পুনরায় জাপানে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের আদেশ দিলেন। এবার গন্তব্যস্থল ছিল কোকুরা নগরী। কিন্তু কোকুরায় বোমা নিক্ষেপ করা সম্ভব হচ্ছিলো না। তাই ৯ আগস্ট ‘ফ্যাট ম্যান’ নামক দ্বিতীয় বোমাটি নিক্ষেপ করা হয় নাগাসাকি শহরে। হতভাগা নাগাসাকির বুকে নরকের অবতার হলো। প্রায় ৪০ হাজার মানুষের প্রাণহানি হলো। আগস্টের ১৪ তারিখ সম্রাট হিরোহিতো জাপানের পক্ষে আত্মসমর্পণ করেন। মাত্র দুটি পারমাণবিক বোমার ভয়াবহতায় সমাপ্তি ঘটলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের।
মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে সোভিয়েত-যুক্তরাষ্ট্র
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঝামেলা মিটে যেতে না যেতেই বিশ্ব পরাশক্তি রাষ্ট্রগুলো মাঝে নতুন করে সমস্যা দেখা দিলো। কী ভয়ানক ব্যাপার! আবার যুদ্ধ লেগে যাবে নাকি? যুদ্ধ অবশ্যই শুরু হতে যাচ্ছে। তবে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, এই যুদ্ধে নেই কোনো অস্ত্রের ঝনঝনানি। অস্ত্রবিহীন এই যুদ্ধের নাম হচ্ছে ‘Cold War‘ বা স্নায়ুযুদ্ধ। তখন পুরো পৃথিবীতে যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র দেশ ছিল, যাদের দখলে পারমাণবিক বোমা ছিল। এক্ষেত্রে সোভিয়েতরা পিছিয়ে পড়েছিলো। কিন্তু তারা হাল ছেড়ে দেয়নি। প্রশিক্ষিত গুপ্তচরের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য চুরি করে তারা পারমাণবিক যুগের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।
এমনকি পূর্ব ইউরোপ অঞ্চলে তারা ইউরেনিয়ামের খনির সন্ধান লাভ করে। খুব দ্রুত সোভিয়েত পারমাণবিক কেন্দ্রের কাজ এগিয়ে যেতে থাকে। শেষপর্যন্ত ১৯৪৯ সালের ২৯ আগস্ট সফলভাবে পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ করতে সক্ষম হয় তারা। বিখ্যাত আন্তর্জাতিক পত্রিকাগুলোতে বেশ ফলাও করে এই সংবাদ প্রকাশ করা হলো। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রও কম যায় না। পরের বছর তারা আরও শক্তিশালী পারমাণবিক বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটায়। এর মাধ্যমে পৃথিবীর দুই পরাশক্তি প্রত্যক্ষভাবে স্নায়ুযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।
পরবর্তী দশকে যুক্তরাষ্ট্র-সোভিয়েত ছাড়াও চীন, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স নতুনভাবে পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ শুরু করে। বিধ্বংসী পারমাণবিক অস্ত্র এবার ক্ষমতা প্রদর্শনের অলংকার হিসেবে আবির্ভূত হয়। দিন দিন বিশ্ব নেতাদের মাঝে দূরত্ব বাড়তে থাকে।
পারমাণবিক অস্ত্রধারীর দলে নতুন সদস্য
১৯৫৪ সালের কথা। ততদিনে সোভিয়েত ইউনিয়নের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যও পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ শুরু করেছে। ফলে বিশ্বনেতাদের মাঝে নতুন করে দ্বন্দ্ব দেখা দিতে থাকে। শান্তির বদলে পৃথিবী জুড়ে নতুন করে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। তৎকালীন ভারতের রাষ্ট্রপতি জওহরলাল নেহেরু এই কুৎসিত স্নায়ুযুদ্ধের তীব্র নিন্দা করেন। তিনি সর্বপ্রথম পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেন। ১৯৫৮ সালে তৎকালীন জাতিসংঘ মহাসচিব দ্যাগ হ্যামারশোল্ডের নিকট প্রায় ১০ হাজার বিজ্ঞানীর স্বাক্ষরকৃত ‘পারমাণবিক বোমা বিরোধী’ স্মারকলিপি পেশ করা হয়।
কিন্তু এই আন্দোলন চলাকালীনই ১৯৬০ সালে ফ্রান্স এবং ১৯৬৪ সালে চীন পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাতার তালিকায় নাম লেখায়। ১৯৬৮ সালে পারমাণবিক অস্ত্রধারী সকল রাষ্ট্রনেতা একত্র হন এবং Nuclear Non-Proliferation Treaty (NPT) চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর মাধ্যমে তারা পারমাণবিক বোমা ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি এবং নতুন কোনো রাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ নিষিদ্ধকরণের মাধ্যমে সমঝোতায় আসেন। পরবর্তীতে এটি বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানদের দ্বারা স্বাক্ষরিত হয়। তবে বেশ কিছু দেশ এটি স্বাক্ষরে অসম্মতি জানায়। এদের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, ইসরাইল এবং দক্ষিণ সুদান অন্যতম।
ওদিকে পরবর্তীতে ভারতে পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র নির্মিত হয়। ১৯৭৪ সালে তারা প্রথমবারের মতো পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়, যদিও তারা কোনো পারমাণবিক অস্ত্র তখনও তৈরি করেনি। ভারত বরাবরই দাবি করে এসেছে, তারা পারমাণবিক শক্তিকে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবে। কিন্তু এই শান্তির পতাকার নিচে ভারত জানান দিয়ে দিলো, তারাও প্রয়োজনে পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে সক্ষম।
১৯৯৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর দৃশ্যপটে হাজির হয় জাতিসংঘ। সে বছর জাতিসংঘ অধিবেশনে সবধরনের পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার এবং উৎপাদন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে CTBT (Comprehensive Test Ban Treaty) নামক একটি চুক্তি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সর্বপ্রথম সেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। কিন্তু এর দু’বছর পরে ভারত প্রথমবারের মতো পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদন শুরু করে। হিরোশিমার ‘লিটল বয়’-এর তুলনায় প্রায় ছয় গুণ বিধ্বংসী এই বোমা নির্মাণের কারণে বিশ্বনেতাদের মাঝে নতুন করে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। ভারতের দেখানো পথে হেঁটে পাকিস্তান সরকারও পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়। যুক্তরাষ্ট্র তাৎক্ষণিকভাবে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে দুই দেশের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছেদ করে। কিন্তু পরবর্তীতে আফগানিস্তানে তালেবান বিরোধী যুদ্ধে দুই দেশের সমর্থন অর্জনের উদ্দেশ্যে নতুন করে সম্পর্ক গড়ে তুলে।
NPT চুক্তিতে স্বাক্ষর না করা অন্য দুই রাষ্ট্র হচ্ছে ইসরাইল এবং দক্ষিণ সুদান। এই দুই রাষ্ট্রের মধ্যে একমাত্র ইসরাইলের পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনের উপযোগী অর্থ, প্রযুক্তি এবং খনিজ সরবরাহ আছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু ইসরাইল সরাসরি কখনও পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের ঘোষণা দেয়নি।
ইরান
পারমাণবিক অস্ত্র চুক্তি স্বাক্ষর করা দেশগুলো মাঝে ইরান এবং উত্তর কোরিয়া এই চুক্তি ভঙ্গ করেছে বলে আশঙ্কা করেন বিশ্বনেতারা। যদিও আয়াতুল্লাহ খোমেনি বারবার এই সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এই ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত নয়। ১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরানে অবস্থিত পারমাণবিক গবেষণাকেন্দ্রে পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদন হলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ক্ষুণ্ণ হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে। মূলত ইরান সরকার কর্তৃক পারমাণবিক কেন্দ্র সম্পর্কিত তথ্যের ব্যাপারে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বনের ফলে এই সন্দেহের সৃষ্টি হয়। ২০০৩ সালে IAEA (Internation Atomin Energy Agency)-এর জরিপে ইরানের নাটাঞ্জ ইউরেনিয়াম কেন্দ্রে পারমাণবিক বোমা তৈরির উপযোগী সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সন্ধান পাওয়া যায়। এর দ্বারা আভাস পাওয়া যায়, ইরান শীঘ্রই পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাতাদের দলে নাম লেখাতে চলেছে।
২০০৯ সালে ইরান সরকার তাদের দ্বিতীয় পারমাণবিক কেন্দ্র নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে IAEA-এর নিকট বার্তা প্রেরণ করে। এমনকি ইরানের রাষ্ট্রপতি আহমেদিনেজাদ IAEA-এর সাথে সম্পর্ক বাতিলের হুমকি দেন। এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র এবং তার বন্ধু রাষ্ট্রগুলো ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। জাতিসংঘ কর্তৃক ইরান থেকে পেট্রোলিয়াম তেল ক্রয়ের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়। পরবর্তীতে ইরানের সাথে বিশ্বনেতৃবৃন্দ এবং IAEA এর সদস্যরা কয়েকবার বৈঠকে বসেন। কিন্তু বেশ কয়েকবার চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও এখন পর্যন্ত ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র ইস্যুতে কোনো মধ্যস্থতার লক্ষণ দেখা যায়নি। গত বছর জানুয়ারিতে ইরান মাঝারি আকারের পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায়, তবে তা ব্যর্থ হয়। তাই বর্তমান মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে ইরানের উপর নজরদারি শুরু করার নির্দেশ দেন।
উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক খেলনা
উত্তর কোরিয়া প্রাথমিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্র নিরোধ চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও ১৯৯৮ সালে তারা বেশ দাপটের সাথে জাপান ভূখণ্ডের উপর দিয়ে জাপান সাগরের উদ্দেশ্যে একটি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। হিরোশিমা-নাগাসাকির ঘরপোড়া জাপানিরা সিঁদুরে কোরিয়ান মেঘ দেখে যারপরনাই ভীত হয়ে উঠলো। এর মাধ্যমে উত্তর কোরিয়া জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং এর সীমান্তবর্তী সকল দেশকে আগাম সতর্কবাণীর জানান দিলো। তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ ডাব্লিউ বুশ ২০০২ সালে ইরান, উত্তর কোরিয়া এবং ইরাককে ‘শয়তানের অক্ষ’ বলে কটাক্ষ করেন। কিন্তু উত্তর কোরিয়া এই অপমান গায়ে মাখলো না। উল্টো সে বছর আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্র নিরোধ চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের ঘোষণা প্রদান করে।
২০০৬ সালে উত্তর কোরিয়া উন্মুক্তভাবে পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদন এবং পরীক্ষা শুরু করে। পারমাণবিক অস্ত্রকে নিজেদের খেলনায় পরিণত করে তারা। উত্তর কোরিয়ার বর্তমান সরকারপ্রধান কিম জং উন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এই ইস্যুতে বেশ কয়েকবার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন এবং পারমাণবিক হামলার হুমকি দেন। ২০১৭ সালে উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্র ভূখণ্ডে আঘাত করার সক্ষমতাসম্পন্ন দুটি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালায়। এমনকি গত বছর তারা বেশ কয়েকবার যুক্তরাষ্ট্রে হামলা চালানোর হুমকিও প্রদান করে।
কিছু মজার তথ্য
- পারমাণবিক হামলায় বেঁচে যাওয়া জাপানি নাগরিক শিগেই তানাগা ১৯৫১ সালে বোস্টন ম্যারাথনে পদক লাভ করেন।
- হিরোসিমা হামলায় সেবার অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়েছিলো একটি বনসাই গাছ। পরবর্তীতে তা যুক্তরাষ্ট্রের একটি জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য স্থানান্তরিত করা হয়।
- সুতোমো ইয়ামাগুচি একমাত্র মানুষ, যিনি দুটো পারমাণবিক হামলাতেই ঘটনাস্থলে ছিলেন এবং অলৌকিকভাবে বেঁচে যান।
- একসময় যুক্তরাষ্ট্রে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ পরীক্ষার দৃশ্য দেখতে হাজার হাজার পর্যটকের সমাগম হতো।
- স্নায়ুযুদ্ধের উত্তেজনায় একবার যুক্তরাষ্ট্র সরকার চাঁদে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা এই হাস্যকর সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ায়।
- ১৯৫৮ সালে জর্জিয়া সমুদ্রসীমায় এক দুর্ঘটনায় সম্পূর্ণ কার্যক্ষম একটি পারমাণবিক বোমা হারিয়ে যায়।
- পারমাণবিক বোমার জনক ওপেনহাইমার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় তার এক শিক্ষককে বিষাক্ত আপেল দ্বারা হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন।
- যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতিদের মধ্যে বারাক ওবামা একমাত্র রাষ্ট্রপতি ছিলেন, যিনি হিরোশিমা ভ্রমণ করেন।
- হিরোশিমা হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের ১২ জন নাগরিক মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এই তথ্য ১৯৭০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সরকার গোপন করে রাখে।
- ১৯৫০ সালে লাস ভেগাসে ‘মিস অ্যাটম বম্ব‘ নামে এক সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
- ১৯৯১ সালের জরিপ অনুযায়ী ৬৩% আমেরিকান মনে করেন, হিরোশিমা আক্রমণের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল।
- সোভিয়েত কর্তৃক নির্মিত ‘জার বোম্বা’ নামক পারমাণবিক বোমাটি পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণে লিটল বয় এবং ফ্যাট ম্যানের তুলনায় প্রায় ১,৪০০ গুণ বেশি শক্তিতে বিস্ফোরিত হয়।
- পারমাণবিক বোমার নিক্ষেপস্থলে প্রায় ৩,০০,০০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার উদ্রেক হয়।
- হিরোশিমা এবং নাগাসাকি বর্তমানে বসবাসের জন্য নিরাপদ। কারণ লিটল বয় এবং ফ্যাট ম্যান মাটিতে পতনের পূর্বেই ভাসমান অবস্থায় বিস্ফোরিত হয়েছিলো। তাই ধীরে ধীরে এর তেজস্ক্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে।
পারমাণবিক বোমার মতো একটি ভয়াবহ অস্ত্র যখন ক্ষমতা প্রদর্শনের অলংকার হিসেবে বিবেচিত হয়, তখন বিশ্বশান্তি হুমকির মুখে পড়ে যায়। আর কয়েকবার পৃথিবীর বুকে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটলে হয়তো পুরো মানবসভ্যতা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে আমাদের এই সুন্দর পৃথিবী। তাই খুব দ্রুত এই সমস্যা নিরসনে বিশ্ব নেতাদের সমঝোতায় আসতে হবে।
ফিচার ইমেজ: iStock