বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে আলোচিত শব্দ ‘ক্যাসিনো’। এই শব্দের সাথে কম বেশি অনেকের পরিচয় থাকলেও দেশের মাটিতে ক্যাসিনোর অস্তিত্ব নিয়ে কারো তেমন ধারণা ছিল না বললেই চলে। তাই ঢাকায় যখন একের পর এক ক্যাসিনোর খবর প্রকাশিত হচ্ছে আমাদের মধ্যে ক্যাসিনো নিয়ে আগ্রহের মাত্রা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আসলে ক্যাসিনো বলতে কী বোঝায়?
ক্যাসিনো শব্দের উৎপত্তি মূলত ল্যাটিন ও ইতালিয়ান শব্দ থেকে। ল্যাটিন শব্দ ‘ক্যাসা (Casa)’ অর্থ ‘কটেজ (Cottage)’, যার বাংলা প্রতিশব্দ কুটির বা কুঁড়েঘর। তবে আমাদের দেশে কটেজ বলতে ছুটি কাটানোর জন্য কোনো বাগান বাড়িকে বোঝায়। ইতালিয়ান ভাষাতেও ল্যাটিনের মতো ‘ক্যাসা’ শব্দ রয়েছে যার অর্থ ‘হাউজ’ বা বাড়ি।
অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝিতে ‘ক্যাসা’ শব্দ থেকে ‘ক্যাসিনো শব্দের উদ্ভব হয়। তবে ক্যাসিনো শব্দের অর্থ সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়েছে। পূর্বে ক্যাসিনো শব্দ দ্বারা কোনো হলরুম বা থিয়েটারকে বোঝানো হতো যেখানে নাচ ও গান হতো। কিন্তু ঊনিশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে এসে ক্যাসিনো শব্দের অর্থ পরিবর্তিত হয়ে যায়। তখন থেকে এই শব্দ দ্বারা বিভিন্ন ধরনের জুয়া খেলার কোনো স্থানকে বোঝায়। এরপর সময়ের সাথে পৃথিবী জুড়ে ক্যাসিনোর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ক্যাসিনো এমন এক জায়গায় যেখানে প্রতিরাতে শত শত কোটি টাকার ফূর্তিবাজি হয়। কেউ যায় রাতারাতি বড়লোক হওয়ার লোভে। আর কেউ যায় বিপুল অর্থ দিয়ে ফূর্তি কিনতে।
জুয়ার ইতিহাস
জুয়া খেলার হাজার বছরের ইতিহাস রয়েছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, ইতিহাসের প্রায় প্রতিটি যুগেই মানুষের সাথে জুয়ার সম্পর্ক ছিল। এবং সেই ধারাবাহিকতা এখনো বর্তমান। জুয়া ঠিক কত বছর আগে আবিষ্কৃত হয়েছিল সে সম্পর্কে তেমন জানা যায় না। তবে জুয়ার উৎপত্তি যে চীন থেকে হয়েছে সে বিষয়ে ঐতিহাসিকরা একমত।
চীনে খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ অব্দের সময়কার একধরনের টালি বা খপরার সন্ধান মিলেছে যার মাধ্যমে জুয়া খেলা হতো বলে ধারণা করা হয়। এছাড়া খ্রিস্টপূর্ব ২০০ অব্দের দিকে চীনে ‘হোয়াইট পিজিয়ন টিকেট’ নামে একধরনের জুয়ার প্রচলন ছিল। তবে এই খেলার জন্য জুয়াড়িদের প্রাদেশিক প্রধানের কাছে থেকে অনুমতি নিতে হতো। এবং প্রাদেশিক প্রধানকে লভ্যাংশের একটি অংশ প্রদান করতে হতো। এই অর্থ রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যয় করা হতো। এছাড়া যারা জুয়ায় জয়লাভ করতেন তারা সামাজিক উন্নয়নের জন্য অর্থ ব্যয় করতেন। যেমন- হার্ভার্ড ও ইয়েল ইউনিভার্সিটি শুরুর দিকে লটারির অর্থ থেকে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বলে শোনা যায়।
তবে জুয়ার ইতিহাসের সাথে শুধু চীনের নাম জড়িয়ে রয়েছে তেমন নয়। প্রাচীন মিসরে খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দের একটি জুয়া খেলার ডাইস বা পাশা (ছক্কা) আবিষ্কৃত হয়েছে। এছাড়া গ্রিক ও রোমান সাহিত্য জুয়া খেলার কথা উল্লেখ রয়েছে। প্রাচীনকালে মানুষ বিভিন্ন ধরনের পশুর লড়াইয়ে বাজি ধরতো। পশুর লড়াইয়ের জন্য বিশেষভাবে পশুপালন করার রীতি ছিল। হৃষ্টপুষ্ট পশু বাজারে বেশ চড়া দামে বিক্রি হতো। পরবর্তীতে এসব পশুর মাধ্যমে জুয়ার আয়োজন করা হতো।
বিশ্বজুড়ে জুয়া খেলার অন্যতম বড় এক মাধ্যম তাস। এই তাসও আবিষ্কার করেছে চীনারা। তবে তাসের প্রচলন জুয়ার আবিষ্কারের অনেক পরে হয়েছে। ধারণা করা হয়, নবম শতকের দিকে প্রথম তাস আবিষ্কৃত হয়। তবে চীনে তাসের মাধ্যমে কী ধরনের জুয়া খেলা হতো সে সম্পর্কে খু্ব বেশি জানা যায়নি। তবে তখন থেকেই এগুলোর উপর মানুষের প্রতিকৃতি অঙ্কন করা হতো। যার ফলে আমরা বর্তমান সময়ে তাসের মধ্যে রাজা ও রানীর ছবি সম্বলিত বিশেষ কার্ড দেখতে পাই।
ক্যাসিনোর ইতিহাস
প্রাচীনকাল থেকে জুয়া খেলার জনপ্রিয়তা ছিল। এবং সময়ের সাথে মানুষ যত বেশি একত্রিত হওয়া শুরু করে জুয়ার প্রচলন ততই বাড়তে থাকে। কিন্তু পূর্বে জুয়া খেলার জন্য স্বীকৃত কোনো স্থান ছিল না যেখানে পেশাদার জুয়াড়িরা একত্রিত হয়ে খেলতে পারতেন। সেই অভাব পূরণ করে ইতালির ভেনিস শহর। সেখানকার নগর কর্তৃপক্ষ ১৬৩৮ সালে বিশ্বের প্রথম ক্যাসিনো চালু করে যার নাম ‘ক্যাসিনো ডি ভেনেজিয়া’। তবে এই ক্যাসিনো শুধু উৎসবের সময় চালু করা হতো। এবং পেশাদার জুয়াড়িরা কোনো ছলচাতুরী না করে বৈধভাবে সেখানে জুয়া খেলতে পারতেন। সময়ের পরিক্রমায় ক্যাসিনো বিশ্বের অনেক শহরে ছড়িয়ে পড়ে। তবে ‘ক্যাসিনো ডি ভেনেজিয়া’ ভেনিসে তার উপস্থিতি এখনো জানান দিচ্ছে।
অষ্টাদশ শতকের শেষের দিক এবং ঊনবিংশ শতকের শুরুর দিকে ইউরোপের মূল অঞ্চলে ক্যাসিনোর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। তখন থেকে প্রাসাদসম দালানের মধ্যে অভিজাত শ্রেণীর জন্য জুয়া খেলার ব্যবস্থা করা হয়। এর মধ্যে জার্মানির উইজবাডেন ও বাডেন-বাডেন এবং মোনাকোর মন্টে-কার্লোতে জাঁকজমকপূর্ণ ক্যাসিনো তৈরি করা শুরু হয়। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে ক্যাসিনোর একপ্রকার বিপ্লব ঘটে। যার ফলে লাস ভেগাস আর ক্যাসিনো সমার্থক হয়ে গেছে।
ইউরোপে প্রায় প্রতিটি দেশেই ক্যাসিনো রয়েছে। তবে সেখানে সব ক্যাসিনোকে একটি নিয়মের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। লন্ডনের প্রতিটি ক্যাসিনোকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হয়। এছাড়া ফ্রান্সেও বৈধভাবে ক্যাসিনোর প্রচলন রয়েছে। বর্তমানে ইউরোপে বিখ্যাত ক্যাসিনোগুলোর প্রায় সবই মোনাকোতে অবস্থিত। মোনাকোর আয়ের অন্যতম প্রধান এই উৎস ক্যাসিনো। এছাড়া ফ্রান্স, পর্তুগাল ও গ্রিসও ক্যাসিনোর জন্য বিখ্যাত।
একবিংশ শতাব্দিতে প্রতিটি ক্যাসিনোতে জুয়ার ক্ষেত্রে একটি পক্ষ হলো ক্যাসিনোর মালিক পক্ষ বা হাউজ। কোনো জুয়াড়ি হাউজের বিপক্ষে বাজি ধরে। তবে হাউজ সবসময় নিশ্চিত হয়ে নেয় যে, তারা জুয়াড়িকে বাজি জেতার অর্থ প্রদান করতে পারবে কি না। তবে অধিকাংশ হাউজই বিপুল অর্থ লগ্নি করে থাকে। তাই সেখানে সবসময় জুয়াড়িদের চেয়ে অর্থের সরবরাহ অনেক বেশি থাকে। ক্যাসিনোতে জুয়া ছাড়াও আরো অনেক আয়ের পথ রয়েছে।
লাস ভেগাসের ক্যাসিনোর ইতিহাস
বর্তমানের আলোর ঝলকানিতে চোখ ঝলসানো লাস ভেগাস একসময় ছিল বিস্তীর্ণ এক তৃণভূমি। আর তৃণভূমির কারণেই মেক্সিকানরা এই অঞ্চলের নাম রেখেছিল ‘লাস ভেগাস‘। স্প্যানিশ এই শব্দদ্বয়ের অর্থ দাঁড়ায় ‘তৃণভূমি’। অষ্টাদশ শতকেও লাস ভেগাসের মধ্যে দিয়ে লস অ্যাঞ্জেলেসে ব্যবসা বাণিজ্য করতেন করতেন মেক্সিকানরা। দীর্ঘপথ অতিক্রম করার পর তারা লাস ভেগাসে বিশ্রাম নিতেন। যদিও তখনো সেখানে জুয়ার তেমন কোনো অবকাঠামো ছিল না।
১৯০৫ সালের দিকে লাস ভেগাস হয়ে লস অ্যাঞ্জেলেস ও সল্ট লেক সিটির আশেপাশে রেলপথ স্থাপনের কাজ শুরু হয়। এই কাজের জন্য লাস ভেগাস ও তার আশেপাশে বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের আগমন ঘটে। সারাদিনের কাজ শেষে ক্লান্তি দূর করার জন্য শ্রমিকদের আনন্দ ফূর্তির প্রয়োজন ছিল। তাদের সেই প্রয়োজন থেকেই লাস ভেগাসে জুয়া, মদ ও পতিতাবৃত্তির রমরমার ব্যবসা শুরু হয়। কিন্তু সেখানকার স্থানীয় সরকার এই সকল কর্মকাণ্ডকে অবৈধ ঘোষণা করে বন্ধ করার চেষ্টা চালায়। ১৯১০ সাল থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত লাস ভেগাসে জুয়া বন্ধ ছিল। কিন্তু নিষিদ্ধ ঘোষণার আগে জুয়ার টেবিল শহরের ভবনগুলোর বেজমেন্ট থেকে শুরু করে রেস্টুরেন্টের রান্নাঘর পর্যন্ত ছেয়ে গিয়েছিল। যার ফলে লাস ভেগাসের স্থানীয় সরকার জুয়াকে বৈধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।
লাস ভেগাসের প্রথম ক্যাসিনো ছিল গোল্ডেন গেট। এরপর ১৯৪১ সালে ‘এল রাঞ্চো ভেগাস’ নামের আধুনিক এক রিসোর্ট চালু করা হয়। এই রিসোর্টে ক্যাসিনোর পাশাপাশি নাচগানের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে এর দ্রুত জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। একই বছর ‘লাস ভেগাস স্ট্রিপ’ নামে নতুন আরেকটি ক্যাসিনো চালু হয়। এই ক্যাসিনোতে দুটি ব্লাকজ্যাক টেবিল, একটি ক্র্যাপস টেবিল এবং একটি ৭০ স্লট যুক্ত রুলেট মেশিন ছিল।
লাস ভেগাসে ক্যাসিনোর ব্যবসা পুরোদমে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। এই সময় যুক্তরাষ্ট্রের বড়বড় গ্যাংস্টাররা লাস ভেগাসের দিকে নজর দেওয়া শুরু করে। এদের মধ্যে একজন ছিলেন বাগজি সিগাল। ১৯৪৬ সালে তিনি ‘দ্য ফ্লামিঙ্গো‘ নামে অত্যাধুনিক এক রিসোর্ট চালু করেন। তার রিসোর্টে আরো অনেক গ্যাংস্টার লগ্নি করেছিলেন। কিন্তু ১৯৪৭ সালে সিগালকে হত্যা করা হয়। কিন্তু তার দেখানো পথ ধরে অন্যান্য গ্যাংস্টাররা লাস ভেগাসে ক্যাসিনোর ব্যবসায় নামেন। এবং একসময় লাস ভেগাসের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় এসব গ্যাংস্টারদের হাতে।
পঞ্চাশের দশকে পর থেকে গ্যাংস্টারদের পাশাপাশি অনেক ব্যবসায়ীও ক্যাসিনোতে অর্থ বিনিয়োগ করা শুরু করেন। ফলে এই সময় থেকে ক্যাসিনোর আকার ও ধরন দুটোই পাল্টে যেতে থাকে। বর্তমানে লাস ভেগাসে অসংখ্য ক্যাসিনো রয়েছে। তবে এর মধ্যে এমজিএম গ্র্যান্ড, বেলাজিও এবং ট্রেজার আইল্যান্ড বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে নেভাদা অঙ্গরাজ্যের মোট করের ৪০ শতাংশ আসে ক্যাসিনো থেকে। সেখানে ছোট বড় প্রায় ৩০০০ ক্যাসিনো রয়েছে। যেখানে প্রতি বছর ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাজি ধরা হয়।
ক্যাসিনোর খেলাগুলোর উৎপত্তি কোথায়?
ক্যাসিনোতে বিভিন্ন ধরনের জুয়া খেলা হয়। এর মধ্যে ব্ল্যাকজ্যাক অন্যতম। এই খেলার জনপ্রিয়তা প্রায় বিশ্বের সকল ক্যাসিনোতেই রয়েছে। তবে আমেরিকার ক্যাসিনো গুলোতে এই খেলার প্রচলন সর্বাধিক। কিন্তু এই খেলার উৎপত্তি সম্পর্কে খুব বেশি জানা যায় না। তবে অনেকে ধারণা করেন যে ব্ল্যাকজ্যাকের উৎপত্তি ঘটেছে ফ্রান্স থেকে। ১৭০০ সালের দিকে ফ্রান্সে Vignt-et-Un নামে একধরনের জুয়া খেলার প্রচলন ছিল। সেখান থেকেই ব্ল্যাকজ্যাকের উৎপত্তি।
আবার অনেক গবেষকের মতে, ব্ল্যাকজ্যাক এসেছে স্পেন থেকে। স্প্যানিশরা ওয়ান অ্যান্ড থার্টি নামে একধরনের তাসের খেলা ছিল। তিন তাসের এই খেলা থেকেই ব্ল্যাকজ্যাক এসেছে বলে অনেকে বলে থাকেন। অন্যদিকে রোমান সাম্রাজ্যে জনপ্রিয় জুয়া খেলার মধ্যে গ্ল্যাডিয়েটরদের যুদ্ধে বাজি ধরা এবং নাম্বার সম্বলিত কাঠের ব্লক দিয়ে একধরনের জুয়ার প্রচলন ছিল। প্রথমে জুয়াড়িদের তিনটি কাঠের ব্লক দেওয়া হতো। তবে তারা সেগুলো দেখতে পারতেন না। তাদেরকে তখন বাজি ধরতে হতো যে তার কাছে কাঠের ব্লকের নাম্বারের কম্বিনেশন সর্বোচ্চ কি না তার উপর। এসব প্রাচীন খেলা থেকে এখনো অনেক জুয়ার প্রচলন ক্যাসিনোতে রয়েছে। তবে সত্যিকার অর্থে খেলাগুলোর উৎপত্তি কোথা থেকে ঘটেছে সে বিষয়ে জোরালো কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।
তবে দেশ ভেদে ক্যাসিনোতে ভিন্ন ভিন্ন জুয়া খেলা হয়। এশিয়ার ক্যাসিনোগুলোতে রুলেট হুইল ছাড়া তাসের খেলার মধ্যে রয়েছে সিক-বো, ফান-তান এবং পাই-গো। ফ্রান্সে বোউল, পর্তুগালে বাঙ্কা এবং ব্রিটেনে কালুকি খেলার প্রচলন রয়েছে। বর্তমানে অধিকাংশ ক্যাসিনোতে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে তাসের বিভিন্ন খেলা ক্যাসিনো থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে।
স্পিন অব লাক
ক্যাসিনোতে জুয়া খেলার জনপ্রিয় এক সরঞ্জাম হলো রুলেট হুইল। এই হুইলের মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি জুয়া খেলা হয়। কিন্তু এর আবিষ্কার ঘটেছে ফরাসি বিজ্ঞানী প্যাসকেলের এক ব্যর্থ প্রচেষ্টা থেকে। প্যাসকেল এমন এক যন্ত্র আবিষ্কার করতে চেয়েছিলেন যেটি কোনো প্রকার শক্তি প্রয়োগ করা ছাড়াই স্থায়ীভাবে ঘুরতে থাকবে। তার এই চিন্তাধারা একদিকে পদার্থ বিজ্ঞানের মতবাদের বিপক্ষে ছিল এবং একই সাথে অসম্ভবও ছিল। ১৬৬৫ সালে প্যাসকেল মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে তিনি তার সেই যন্ত্র তৈরি করতে পারেননি। কিন্তু তার এই ভাবনা থেকেই পরবর্তীতে রুলেট হুইল তৈরি হয়।
১৮৪২ সালে মোনাকোর রাজা তৃতীয় চার্লসের আদেশক্রমে রুলেট হুইলে শূন্য যোগ করা হয়। এবং নতুন আরো সংখ্যা যোগ করা হয়। এর ফলে জুয়াড়িদের হাউজ জেতার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। যার নেশায় বুঁদ হয়ে জুয়াড়ি আরো বেশি অর্থ খরচ করতে শুরু করে। মোনাকো সেই সময় অর্থনৈতিকভাবে কঠিন সময় পার করছিল। কিন্তু চার্লসের নতুন এই সিদ্ধান্ত মোনাকোর ভাগ্য পরিবর্তন করে দেয়। রাজা তৃতীয় চার্লসের সম্পদ দ্রুত ফুলেফেঁপে ওঠে।
হাউজ জেতার নেশায় নিঃস্ব হতে থাকে একের পর এক জুয়াড়ি। তবে এর মধ্যে সফলতার গল্পও আছে। তবে সেই সংখ্যা হাতেগোনা। তবে যারা বড়লোক হবার আশা নিয়ে ক্যাসিনোতে যান তারা নিঃস্ব হওয়া ছাড়া আর কিছুই অর্জন করতে পারেন না। আর যারা ফূর্তির জন্য যান তারাও দিনশেষে হতাশা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। কারণ জুয়া মানুষকে কখনোই বিত্তশালী করতে পারে না। এবং কাড়ি কাড়ি অর্থ খরচ করলেই সুখ পাওয়া যায় না।
ক্যাসিনোর ভবিষ্যত
প্রযুক্তির উন্নতি মানুষকে দিন দিন আরো বেশি ঘরমুখো করেছে। সেই সাথে মানুষকে অনেক বেশি অলস করেছে। এর প্রভাব জুয়া ও ক্যাসিনোতেও পড়েছে। জুয়াড়িদের অনেকেই এখন আর ক্যাসিনোতে যেতে ইচ্ছুক নন। তারা ঘরে বসে ফোন বা ল্যাপটপ দিয়ে অনলাইনে জুয়া খেলা শুরু করেছেন। অনলাইনে জুয়া খেলার রকমফের অনেক। এছাড়া যেকোনো মুহূর্তে খেলার সুযোগ থাকার কারণে অনেকে অনলাইন বেটিং সাইটগুলোর দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।
সামনের দিনগুলোতে ক্যাসিনোর ভবিষ্যত খুব সুবিধাজনক নয়। বলা হচ্ছে, ভবিষ্যতের জুয়াকে নিয়ন্ত্রণ করবে ক্রিপ্টোকারেন্সি তথা বিটকয়েন। ব্লকচেইন সিস্টেমের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে জুয়া খেলার সুযোগ তৈরি হয়েছে। সামনে আরো বিস্তৃত হবে। ব্লকচেইনের বড় সুবিধা হলো এখানে নিজের পরিচয় গোপন করা খেলা সম্ভব। তবে বাস্তবের ক্যাসিনো গুলোতে আরো যেসব সুযোগ সুবিধা রয়েছে সেগুলো কখনোই অনলাইনে পাওয়া সম্ভব না। তাই আগামীতে ক্যাসিনোর সংখ্যা কমে গেলেও একেবারেই শেষ হয়ে যাবে। বর্তমানের ক্যাসিনো মালিকেরা চাইলেও নিজেদের বেটিং সাইট তৈরি করতে পারবেন।
তবে ইউরোপ আমেরিকায় ক্যাসিনো কিংবা জুয়া বৈধ হলেও ক্যাসিনোর সুবিধার চেয়ে অসুবিধা অনেক বেশি। প্রতিটি ক্যাসিনো মানুষকে নিঃস্ব করে যাচ্ছে। যার ফলে অপরাধীর সংখ্যা বাড়ছে। একইসাথে যারা ক্যাসিনোতে অর্থ আয় করেন তার বড় একটা অংশ পাচার হয়ে যায়। একইসাথে ক্যাসিনো মাদক ও পতিতাবৃত্তি তথা অপরাধের সূতিকাগার। তাই ক্যাসিনো ও জুয়া দুটোরই অবসান ঘটা প্রয়োজন। কিন্তু পূর্বে যেটা বন্ধ হয়নি, ভবিষ্যতেও সেটা হবে না। কারণ মানুষের নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ। সেই সাথে অর্থের লোভ তো রয়েছেই।
ব্লকচেইন প্রযুক্তি সম্পর্কে আরও জানতে পড়ুন এই বইটি