ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সূর্য কখনো অস্ত যায় না।
পৃথিবীজুড়ে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আগে এমনই এক বাক্য প্রচলিত ছিল। স্কুল-কলেজের ইতিহাসের বইগুলোও মোটামুটি এই বাক্যের সাথে তাল মিলিয়ে চলে। কারণ, একসময় সমগ্র বিশ্বের দেশগুলোর এক-চতুর্থাংশই ছিল এই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে। পৃথিবীতে বিদ্যমান রাজপরিবারগুলোর প্রসঙ্গ উঠলে অবধারিতভাবেই উঠে আসবে ব্রিটিশ রাজপরিবারের নাম। নজরকাড়া জৌলুশ আর আভিজাত্য ব্রিটিশ রাজপরিবারকে বানিয়েছে অনন্য। তাদের আয়-উপার্জন নিয়ে মানুষের মাঝে জন্ম নেয় নানা গল্প-কাহিনির। মজার ব্যাপার হলো, পূর্ণকালীন দায়িত্বে থাকা ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যরা কোনো উপায়ে অর্থ আয় করতে পারেন না। উপার্জন করতে হলে ত্যাগ করতে হবে তাদের রাজপরিবারের পদবী। তাহলে কীভাবে বিলাসবহুল জীবনযাপনের ব্যয় বহন করেন ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যরা? কী তাদের আয়ের উৎস? কিংবা রাজপরিবারের সদস্যদের মাঝে কীভাবে বন্টিত হয় এই সম্পত্তি? এসব নিয়েই আজকের আলোচনা।
একটুখানি ইতিহাস
ব্রিটিশ সাম্রাজ্য হচ্ছে যুক্তরাজ্যের অধীন বা যুক্তরাজ্য কর্তৃক প্রশাসিত এলাকার সমষ্টি। স্বশাসিত উপনিবেশ, উপনিবেশ, অধিরাজ্য, ম্যান্ডেট এবং এ ধরনের অন্যান্য এলাকাকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশ হিসেবে ধরা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে থাকা ভূখণ্ডগুলো স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেতে শুরু করে। ফলে ষোড়শ শতকের শেষদিক থেকে গড়ে ওঠা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যেরও পতন ঘটে একসময়।
ব্রিটিশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্যসমূহের মাঝে ‘সাংবিধানিক রাজতন্ত্র’ বা ‘Constitutional Monarchy‘ অন্যতম। সাংবিধানিক রাজতন্ত্র হলো একপ্রকার সরকার ব্যবস্থা, যেখানে রাজ্যের প্রধান হিসেবে একজন রাজা বা রানী সিংহাসনে আসীন থাকলেও দেশের সংবিধান অনুসারে তারা দেশের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন না। বরং
রাজপরিবারের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের উপর বেশ কিছু দায়িত্ব অর্পিত থাকে।
বর্তমান বিশ্বের বেশিরভাগ রাজতন্ত্রই পরিচালিত হয় রাষ্ট্রীয় সংবিধান অনুযায়ী। এই সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের কারণে রাজপরিবারের পূর্বের ক্ষমতা বহাল না থাকলেও যুক্তরাজ্যের স্বর্ণযুগের মূর্ত প্রতীক হিসেবে এখনও তা টিকিয়ে রাখা হয়েছে। সাংবিধানিক রাজতন্ত্র-নীতির সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য রাজপরিবার সুবিশাল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ক্ষমতা ধীরে ধীরে নির্বাচিত সরকার এবং সরকারি বিভাগের উপর বণ্টন করে দিতে শুরু করে।
ব্রিটিশ রাজপরিবারের ব্যয়
রাজপরিবারের দেশ-বিদেশ ভ্রমণের জন্য রয়েছে প্রাইভেট জেট ভয়েজার, প্রাইভেট প্লেন এবং রয়্যাল ট্রেনের ব্যবস্থা। এছাড়াও নিত্যদিনের যাতায়াতের জন্য আছে বেন্টলি স্টেট লিমুজিন, রোলস রয়েস সিলভার রেইথ টু এলডব্লিউবি, রোলস রয়েস ফ্যান্টম, অডি আরএসসিক্স, রেঞ্জরোভার হাইব্রিড এলডব্লিউবি এবং ল্যান্ড রোভার ডিফেন্ডারের মতো বিলাসবহুল গাড়ি।
রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথকে সচরাচর যে হ্যান্ডব্যাগটি বহন করতে দেখা যেত, সেটি ইংল্যান্ডের নামকরা ব্র্যান্ড লাউনার লন্ডনের তৈরি, এবং রানি সব সময় এই ব্র্যান্ডেরই হ্যান্ডব্যাগ ব্যবহার করতেন। কোম্পানির মতে, রানীর জীবদ্দশায় ব্র্যান্ডটি দু’শটিরও বেশি পার্স আলাদাভাবে তৈরি করেছিল শুধুমাত্র রানীর জন্য। সাধারণ মানুষের জন্য নির্মিত একেকটি হ্যান্ডব্যাগের মূল্যই প্রায় ৩,০০০-৩,৫০০ ডলারের কাছাকাছি। এছাড়াও, রাজপরিবারের সকল সদস্যদের জন্যে একাধিক ব্যক্তিগত বাবুর্চি বা রাঁধুনিও রয়েছে। ব্লুমবার্গের মতে, ২০২১ সালে রাজপরিবারের খরচকৃত অর্থের পরিমাণই ছিল প্রায় ৯৭ মিলিয়ন পাউন্ড। এমনকি, শুধু বাকিংহাম প্যালেসের রাজসদস্যদের দেখাশোনা এবং যাবতীয় কাজকর্মে সাহায্য করার জন্য ৫০০ জনের বেশি কর্মচারীর প্রয়োজন হয়, যাদের পেছনে খরচকৃত অর্থের পরিমাণ প্রায় ২৪.১ লক্ষ পাউন্ড। রাজপরিবারের সদস্যরা যে রাজকীয় পোশাক পরিধান করেন, তা জনসাধারণের চেয়ে আলাদা। সেগুলোর দাম হয় কয়েক লক্ষ ডলার পর্যন্ত।
ব্রিটিশ রাজপরিবারের আয়
পূর্বে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য পরিচালনার জন্যে জনগণ রাজপরিবারকে যে পরিমাণ অর্থ খাজনা বা কর হিসেবে প্রদান করত, তা রাজপরিবার পরিচালনার পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজেও ব্যবহৃত হত। তবে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র নীতির কারণে, বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অন্তর্গত দেশগুলো থেকে প্রাপ্ত কর সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমা হয়। ওই দেশগুলো পরিচালনার সকল দায়িত্ব থাকে দেশের সরকার অথবা ফার্স্ট মিনিস্টারের হাতে। বাকিংহাম প্যালেস, কেনসিংটন প্যালেস, বালমোরাল ক্যাসল এবং সেইন্ট জেমস প্যালেসের মতো প্রায় তেইশটি দুর্গ ব্রিটিশ রাজপরিবারের বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর মধ্যে প্রয়াত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রিয় বালমোরাল ক্যাসল এবং স্যান্ড্রিংহাম এস্টেট সম্পদের মূল্য যথাক্রমে ১৪০ মিলিয়ন পাউন্ড ও ৬৫ মিলিয়ন পাউন্ড।
ইংল্যান্ড থেকে শুরু করে স্কটল্যান্ড, এবং ওয়েলস জুড়েও ব্রিটিশ রাজপরিবারের অনেক সম্পত্তি ছড়িয়ে আছে, যেগুলোকে একত্রে করে ক্রাউন এস্টেট বলা হয়।
রাজপরিবারের সকল জায়গা-সম্পত্তি দেখভালের জন্য বছরে খরচ হয় প্রায় ৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের কাছাকাছি। এছাড়াও ডাচি অভ ল্যানক্যাস্টার এবং ডাচি অভ কর্নঅয়েল মিলিয়ে লাখ লাখ হেক্টর জমি, বংশপরম্পরায় প্রাপ্ত ৬ বিলিয়ন পাউন্ড সমমূল্যের জহরত এবং আর্ট ক্রাফটও রয়েছে ব্রিটিশ রাজপরিবারের অধীনে। ব্রিটিশ রাজপরিবারের আয়ের সিংহভাগ উঠে আসে সার্বভৌম অনুদান বা সোভেরিং গ্রান্ট থেকে। ব্রিটিশ সরকার রাজপরিবারের রক্ষণাবেক্ষণ, এবং রাজপরিবারের সাথে সম্পর্কিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন প্রদান বাবদ প্রতিবছর যে পরিমাণ অর্থ প্রদান করে, তা-ই হলো সোভেরিং গ্রান্ট।
২০১১ সালে প্রণীত সোভেরিং গ্রান্ট নীতিমালা অনুসারে, সোভেরিং গ্রান্টের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে। সোভেরিং গ্রান্ট হিসেবে রাজপরিবারের জন্য অর্থ প্রদান করা হয় ক্রাউন এস্টেট এবং পাবলিক ফান্ডেড আয়ের একটি নির্ধারিত অংশ থেকে। আর এই অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয় রয়্যাল ট্রাস্ট। সর্বমোট ১ লক্ষ ১৬ হাজার হেক্টর জমি এই ক্রাউন এস্টেটের অন্তর্ভুক্ত। এসব জমিতে কৃষিকাজের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসায়ী স্থাপনার কার্যক্রমও চালানো হয়, যার মালিকানা সরকার এবং রাজপরিবার; উভয়ের কাছেই বিভক্ত। এই সম্পদগুলো জনগণ এবং রাষ্ট্রের নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয় বলে একে একত্রে ‘দ্য সোভেরিং পাবলিক এস্টেট’ও বলা হয়। এই পাবলিক এস্টেটের মোট সম্পদের পরিমাণ ১৭.৯৭ বিলিয়ন পাউন্ড।
ক্রাউন এস্টেট থেকে আয়কৃত সভারিন গ্রান্টের অর্থ প্রথমে সরকারি কোষাগারে এসে জমা হয়। এরপর সকল নিয়ম অনুসরণ করে রাজপরিবারের পাওনা তাদের নিজস্ব কোষাগারে স্থানান্তর করে দেওয়া হয়। স্ট্যাটিস্টার তথ্যসূত্রে, ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে ব্রিটিশ রাজপরিবারের জন্য বরাদ্দকৃত সভারিন গ্রান্টের পরিমাণ ছিল ১৫ শতাংশ। কিন্তু বাকিংহাম প্যালেসের রিসার্ভিসিং বা পুনঃপরিষেবার জন্য রয়েল ট্রাস্টিরা পরামর্শ দেন, ২০২৬-২৭ অর্থবছর পর্যন্ত তা ১০ শতাংশ পর্যন্ত বর্ধিতকরণের। পরামর্শ অনুযায়ী তা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যার প্রেক্ষিতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে সভারিন গ্রান্টের মোট আয়ের ২৫ শতাংশ রাজপরিবারকে বুঝিয়ে দেন ওই দেশের সরকার। কোনো একটি নির্দিষ্ট অর্থবছরের ক্ষেত্রে সভারিন গ্রান্টের জন্য কী পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ থাকবে, তা নির্ধারণ করা হয় ওই বছর থেকে আরও দুই বছর পূর্বে, ক্রাউন এস্টেট থেকে আয়কৃত অর্থের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে ক্রাউন এস্টেট মোট ৩১২.৭ মিলিয়ন পাউন্ড রাজস্ব আয় করেছে। কিন্তু একই অর্থবছরে রাজপরিবারের জন্য বাকিংহাম প্যালেস রিসার্ভিসিংয়ের জন্য বরাদ্দকৃত ৩৪.৫ মিলিয়ন পাউন্ডসহ নির্ধারিত সোভেরিং গ্রান্টের পরিমাণ ছিল ৮৬.৩ মিলিয়ন পাউন্ড, শতকরা হিসেবে যা ২৫ শতাংশের চাইতেও বেশি। কারণ এই পরিমাণটা ক্রাউন এস্টেটের দুই অর্থবছর পূর্বের আয়ের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। অর্থাৎ, ‘সোভেরিং গ্রান্ট নীতি ২০১১’ অনুসারে, ক্রাউন এস্টেট থেকে আয়কৃত অর্থের পরিমাণ যদি কোনো বছর আশানুরূপ না-ও হয়, তখনও পূর্ব নির্ধারিত অর্থ শতাংশের উপর নির্ভর করে রাজপরিবারের জন্য সোভেরিং গ্রান্ট বরাদ্দ থাকে।
ব্রিটিশ রাজপরিবারের আয়ের আরেকটি উৎস হলো, প্রিভি পার্স (Privy Purse), যা ক্রাউনের সরকারি এবং বেসরকারি; দু’ধরনের খরচই বহন করে। প্রিভি পার্স মূলত রাজপরিবারের ডাচি থেকে প্রাপ্ত অর্থকে নির্দেশ করে। আর ডাচি বলতে বোঝায় ডিউকের জমিদারি এবং সেই জমিদারি থেকে প্রাপ্ত কর এবং অন্যান্য আয় ক্রাউনের কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া। বর্তমানে ব্রিটিশ রাজপরিবার ‘দ্য ডাচি অভ ল্যানক্যাস্টার‘ এবং ‘দ্য ডাচি অভ কর্নওয়েল‘ নামে দুটি ডাচির সাথে সম্পৃক্ত। ডাচি অভ ল্যানক্যাস্টার মূলত ক্রাউনের অধীনস্থ। অন্যভাবে বলা যায়, এটি রাজা বা রানীর ব্যক্তিগত আয়।
অপরদিকে, ক্রাউনের পরবর্তী উত্তরাধিকারের হাতে থাকে ডাচি অভ কর্নওয়েলের নিয়ন্ত্রণ। ডাচি অভ ল্যানক্যাস্টারের অধীনে ইংল্যান্ড-ওয়েলস মিলিয়ে মোট ১৮,৪৮১ হেক্টর জমি রয়েছে, যা বিগত ৭০০ বছর ধরে ক্রাউনের ব্যক্তিগত সম্পদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ব্যবসায়িক, কৃষি, এবং আবাসিক জমি নিয়ে এর মোট সম্পদের পরিমাণ ৬৫২ মিলিয়ন পাউন্ড। ডাচি অভ কর্নওয়েলের অধীনে রয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৩১ হাজার একর জমি, যার মধ্যে ব্যবসা সংক্রান্ত জমির অর্থমূল্য প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।
২০২১-২২ অর্থবছরে ল্যানক্যাস্টার এবং কর্নওয়েল, এই দুটি ডাচি এস্টেট থেকে ব্রিটিশ রাজপরিবারের আয়কৃত অর্থের পরিমাণ ছিল ৪৫ মিলিয়ন পাউন্ড, যেখানে ডাচি অব ল্যানক্যাস্টার থেকে উঠেছিল ২৮.৬৯ মিলিয়ন পাউন্ড, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ১.১ মিলিয়ন পাউন্ড বেশি। এছাড়া কেন্দ্রীয় লন্ডনে অবস্থিত ক্রাউনের কমার্শিয়াল প্রপার্টিগুলো এই প্রিভি পার্স বা প্রাইভেট ইনকামের অন্তর্গত। রাজপরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন খরচ উঠে আসে এই প্রিভি পার্স বা ডাচি থেকেই।
২০২০ সালে ডাচি অব কর্নওয়েলের আয়কৃত অর্থ থেকে তৎকালীন প্রিন্স চার্লস তার বড় ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম এবং তার পরিবারকে ৬ মিলিয়ন ডলার দিয়েছিলেন। সভারিন গ্র্যান্ট এবং প্রিভি পার্স ছাড়াও রাজকীয় সংগ্রহে আছে রানীর একান্ত মালিকানাধীন চিত্রকর্ম, স্ট্যাম্প কালেকশন, গ্রেগোরিয়ান পেপার্স, মিলিটারি ম্যাপ এবং তরবারির মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক উপাদান। এর মধ্যে কিং পঞ্চম জর্জের স্ট্যাম্প কালেকশনের অর্থ মূল্যই ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড। এছাড়াও ভিক্টোরিয়ান সুইট, স্যাফায়ার ব্রোচ, ম্যারিস ব্রোচ, রাশিয়ান ব্রোচ ইম্প্রেরিয়াল স্টেট ক্রাউনসহ আরও বেশ কিছু রাজকীয় জুয়েলারি এবং এই রাজপরিবারের পূর্বপুরুষদের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসও বেশ মূল্যবান। এসব থেকেও ব্রিটিশ রাজপরিবার আয় করে থাকে।
রাজকীয় সংগ্রহশালা দেখভালের জন্য ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রয়্যাল কালেকশন ট্রাস্ট, যারা রাজকীয় বাসভবন এবং বিভিন্ন গ্যালারিতে এসব রয়েল কালেকশনের প্রদর্শনীর আয়োজন করেন, এবং এ থেকেও ব্রিটিশ রাজ পরিবার আয় করে থাকে। ২০২১-২২ অর্থবছরে রয়্যাল কালেকশন প্রদর্শনী থেকে আয়কৃত মোট অর্থের পরিমাণ ছিল ২৪.০৪ মিলিয়ন পাউন্ড। এছাড়াও প্রয়াত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ঘোড়দৌড়ের প্রতি বিশেষভাবে দুর্বল থাকায় তার সংগ্রহে একশোরও অধিক ঘোড়া ছিল। এই ঘোড়াগুলোকে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করিয়ে তিনি ৯ মিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি আয় করেছিলেন।
রাজসিংহাসনে বসার আগে ক্রাউনের উত্তরাধিকার হিসেবে তৎকালীন প্রিন্স চার্লস ফিলিপ আর্থার ছিলেন ডাচি অভ কর্নওয়েলের ডিউক। তবে ক্রাউনের দায়িত্ব পাওয়ার পর পরবর্তী উত্তরাধিকার হিসেবে তার বড় ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম আর্থার ফিলিপ লুইস ডাচি অব কর্নওয়েলের ডিউক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন, যিনি এর পূর্বে ডিউক অব ক্যামব্রিজ হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।
প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ পর্যটক যুক্তরাজ্যে ভিড় জমান শুধুমাত্র রাজপরিবারের হাজার বছর পুরনো ঐতিহাসিক স্থাপনা, চিত্রকর্ম, এবং মূল্যবান রত্নভাণ্ডার এবং রাজকীয় সকল সংগ্রহ দেখতে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় ৩.৩ মিলিয়ন পর্যটক ব্রিটেনের রাজপরিবারের বিভিন্ন বাসভবন এবং দর্শনীয় স্থান ঘুরতে এসেছিলেন, যেখান থেকে যুক্তরাজ্য সরকার ৭১.৫ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি আয় করেছিল। ৬৭ বিলিয়ন পাউন্ডের বেশি অর্থমূল্য নিয়ে ব্রিটিশ রাজপরিবারকে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে মূল্যবান ব্র্যান্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর মারা যান রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ (এলিজাবেথ আলেক্সান্দ্রা মেরি)। জীবিত থাকা অবস্থায় তিনিই ছিলেন হেড অব দ্য স্টেটের দায়িত্বে। তার পর হেড অব দ্য স্টেট হিসেবে নিযুক্ত হন তার বড় ছেলে কিং চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ। ফলে তিনি রাজপরিবারের প্রধান ব্যক্তি হিসেবে নিযুক্ত হবার পাশাপাশি ক্ষমতা পেয়েছেন সেখানকার সামরিক বাহিনী, বিচারবিভাগ ও সিভিল সার্ভিসেরও। একইসাথে আবার তিনি ইংল্যান্ডের সকল চার্চের সুপ্রিম গভর্নর। ইংল্যান্ডসহ কমনওয়েলথের আরও চৌদ্দটি দেশের হেড অব দ্য স্টেট হিসেবেও তাকে সম্মান করা হয়। যদিও ক্রাউন বা রাজমুকুটের সাথে দেশগুলো প্রত্যক্ষ কোনো যোগসাজশ নেই।