মিখিয়েল ডি রুইটার (পর্ব-১৪): দিগন্তে আবার কালো মেঘ

[১৩ তম পর্ব পড়ুন]

শেষ হয়েছে দ্বিতীয় অ্যাংলো-ডাচ যুদ্ধ।

ডি রুইটার ভাবছেন এবার নিশ্চিন্তে পরিবারের সাথে অবসর জীবন কাটাবেন। সামাজিক আর পারিবারিক কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তিনি। তার ছেলে এঙ্গেল ডি রুইটার নৌবাহিনীতে আগেই নাম লিখিয়েছিল। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই তাকে একটি জাহাজের ক্যাপ্টেন করা হয়। জাহাজ নিয়ে কাজের প্রয়োজনে ইংল্যান্ড গেলে সেখানে দ্বিতীয় চার্লস যুদ্ধে ডি রুইটারের সমরকুশলতার প্রশংসা করে এঙ্গেলকে যথেষ্ট সম্মান দিলেন।

এঙ্গেল ডি রুইটার; Image Source: Wikimedia Commons

ডেনমার্ক আর সুইডেনের রাজাও যুদ্ধে বীরত্বের জন্য ডি রুইটারকে সম্মান ও পুরষ্কার ও পাঠান। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছিল সব এখন শান্ত, ইংল্যান্ড আর নেদারল্যান্ডস যে যার মতো বাণিজ্য করছে। কোনো মনোমালিন্য নেই। কিন্তু চতুর্দশ লুইয়ের কথা ভুলে গিয়েছিলেন তারা।

ট্রিপল অ্যালায়েন্স

স্প্যানিশ নেদারল্যান্ডসের প্রতি লুইয়ের নজর বহুদিনের। তার মতলব খুব গোপন কিছু নয়। দ্বিতীয় অ্যাংলো-ডাচ যুদ্ধে নেদারল্যান্ডসকে অনেকটা নামেমাত্র সমর্থন দিয়ে গেছিলেন লুই। লড়াই শেষে দেখা গেল- ব্রিটিশ আর ডাচ দুই পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত। বিশেষ করে ইংল্যান্ড অর্থনৈতিক আর সামরিক দিক থেকে অনেকটা কাহিল হয়ে পড়েছে। এর পেছনে নিজের ভোগবিলাসে চার্লসের লাগামহীন খরচও অনেকটা দায়ী।

চার্লস যেকোনো কারণেই হোক নেদারল্যান্ডসকে তার জন্মশত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেন। ব্রিটিশ বণিকদের একাংশও ডাচদের সাথে আরেকবার শক্তি পরীক্ষার পক্ষপাতী ছিল। দ্বিতীয় অ্যাংলো-ডাচ যুদ্ধের পর চার্লসের উপলব্ধি ছিল যে- এককভাবে ডাচদের হারানো ইংল্যান্ডের পক্ষে সম্ভব নয়, জোটের দরকার। তার অনেক উপদেষ্টাই যুদ্ধ চলাকালে ফিসফিস করে বলছিলেন ফ্রান্সের দিকে বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত করতে। তবে যুদ্ধ সমাপ্তির পর লর্ড আরলিংটনের পরামর্শে চার্লস ডাচদের সাথে মৈত্রীর দিকে ঝুঁকে পড়লেন। এদিকে মেডওয়ের পর ব্রিটিশ জনগণের মধ্যে ডাচবিরোধী মনোভাব চাঙ্গা হয়ে উঠলেও সময়ের পরিক্রমায় তারা নেদারল্যান্ডসের সাথে মৈত্রীর পক্ষ নেয়।

১৬৬৭ সালে নিজ সাম্রাজ্য বর্ধিত করার মানসে লুই হামলা করে নেদারল্যান্ডসের সীমান্তবর্তী লিল এবং ডুয়াই শহর ছিনিয়ে নেন। ফলে নেদারল্যান্ডসের পাশাপাশি সুইডেনেরও ভাবান্তর উপস্থিত হয়। ফরাসি সাম্রাজ্য বিস্তারের সীমানা কতদূর গিয়ে ঠেকে তা ভেবে সুইডিশরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ল। কাজেই নেদারল্যান্ডস আর ইংল্যান্ড যখন ফ্রান্স বিরোধী জোট গঠন করছে তখন নিজেদের নিরাপদ রাখতে এই আলোচনাতে যুক্ত হলো সুইডেনও।

ট্রিপল অ্যালায়েন্স; Image Source: globalindices.iupui.edu

ফলশ্রুতিতে ১৬৬৮ সালের ১৩ জানুয়ারি ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস আর সুইডেন গঠন করল ট্রিপল অ্যালায়েন্স (Triple Alliance)। জোটসদস্যরা একে অপরকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য সহযোগিতা করতে একমত হলেন। লুই ভ্রু কুচকালেন, এ তো মহা মুশকিল! স্প্যানিশ নেদারল্যান্ডস, আর তার পথ ধরে সেভেন ইউনাইটেড প্রভিন্সেসকে হাত করতে গেলে তো ট্রিপল অ্যালায়েন্স ঝামেলা করবে।

ট্রিটি অফ ডোভার

চার্লস ট্রিপল অ্যালায়েন্সে নাম লিখিয়েছিলেন একটি কারণেই, লুইকে দেখানো যে ইংল্যান্ডের সাহায্য তার জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ। তার ধারণা ছিল এতে করে লুই নিজে থেকেই চার্লসের সাথে জোট গড়তে আগ্রহী হবেন। এই চিন্তা মিথ্যে ছিল না। লুই চার্লসের সাথে যোগাযোগ করেন।

চার্লস জানতেন ফ্রান্সের সাথে সামরিক জোট ব্রিটিশ জনগণ কোনভাবেই মেনে নেবে না। তবে তার হিসেব ছিল ফরাসি-ব্রিটিশ জোট খুব সহজে অল্প সময়ের মধ্যে ডাচদের হারিয়ে দিতে পারবে। ফলে ইংল্যান্ডের মানুষ কিছু বুঝে ওঠার আগেই লড়াই শেষ হয়ে যাবে। তিনি চিন্তামুক্ত ছিলেন যে দুই পরাশক্তির বিরুদ্ধে ডাচদের আঙুল চোষা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না। পরাজিত ডাচদের সম্পদ ও বাণিজ্য ছিনিয়ে নিয়ে তিনি তার প্রায় খালি কোষাগার পুনরায় ভর্তি করে ফেলবেন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দেখে তখন নাগরিকেরাও তার পেছনেই জড়ো হবে।

১৬৭০ সালের ১লা জুন ইংল্যান্ডের ডোভারে লুই ও চার্লস সঙ্গোপনে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এখানে প্রস্তাব ছিল চার্লস নিজেকে ক্যাথলিক ঘোষণা করবেন, যদিও দুই পক্ষই জানত তা কোনোদিন হবার নয়। অন্যান্য শর্তের মধ্যে ছিল ইংল্যান্ড ফরাসিদের নৌবহর দিয়ে ডাচদের বিরুদ্ধে সহায়তা করবে, বিনিময়ে লুই চার্লসকে দেবেন লড়াইয়ের খরচ।

ডোভারের গোপন চুক্তিতে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে এক হয়েছিল চিরশত্রু ফ্রান্স আর ইংল্যান্ড; Image Source: bbc.co.uk

১৬৭২ সালের বসন্তে যুদ্ধ ঘোষণার দিনক্ষণ ঠিক হয়। সেই বছরের ডিসেম্বর প্রকাশ্যে ডোভার চুক্তি অনুমোদন করে ইংল্যান্ড। তবে প্রকাশ্য চুক্তিতে গোপন ধারাগুলি অন্তর্ভুক্ত ছিলনা, কেবল ফরাসী ব্রিটিশ একটি মৈত্রীচুক্তি হিসেবেই এটি প্রচারিত হয়।      

নৌবাহিনী সাজাতে ১৬৭০ সালের অক্টোবরেই চার্লস পার্লামেন্টের কাছে আট লাখ পাউন্ড চান। কিন্তু মিলল কেবল তিন লাখ। ফরাসি অর্থ সহায়তাও যথেষ্ট ছিল না। ফলে চার্লস রাষ্ট্রীয় ঋণ পরিশোধের সব কিস্তি অনির্দিষ্টকাল স্থগিত করে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করেন। তার পরিকল্পনা সফল করতে গেলে ছয় মাসের মধ্যে ডাচদের পরাস্ত করতে হবে, ফলে তিনি নৌবাহিনী পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করলেন। 

সংঘর্ষের সূচনা

১৬৭০ সালের শেষদিকে ষোড়শ লুইয়ের সেনারা ডানকার্ক এসে পৌঁছে। নেদারল্যান্ডস সেখান থেকে অল্প সময়ের ব্যাপার। এস্টেট জেনারেলদের থেকে ফ্রান্সের কাছে হঠাৎ এত সৈন্য সমাবেশের কারণ জানতে চাইলে সন্তোষজনক কোনো জবাব মিলল না। ফলে ১৬৭১ সালের ২রা জানুয়ারি নেদারল্যান্ডসের সাত প্রদেশেই ফরাসি পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়।

ডি উইট তখনও আশা করছিলেন পরিস্থিতি হয়তো যুদ্ধের দিকে যাবে না। তবে সাবধানের মার নেই ভেবে ডেকে পাঠানো হলো ডি রুইটারকে। হেল্ভেটস্লুইসের বন্দরে নৌবহর সাজানো শুরু হলো। এই সময় ডেনমার্কের রাজা রিয়ার অ্যাডমিরাল অ্যাডেলারকে (Adelaar) পাঠিয়ে দিলেন ডি রুইটারের সাথে থেকে কলাকৌশল পর্যবেক্ষণ করার জন্য।  

হেল্ভেটস্লুইসের বন্দরে প্রস্তুত হচ্ছিল ডাচ নৌবহর; Image Source: artuk.org

এই বছর এক ঘটনা পুঁজি করে পরে চার্লস যুদ্ধের ডাক দেন। রাজকীয় জাহাজ মার্লিন ডাচ উপকূল ধরে যাচ্ছিল। ভ্যান ঘেন্ট টহল দিচ্ছিলেন সেখানে। সদ্যসমাপ্ত যুদ্ধের চুক্তিমতে মার্লিন তোপ দেগে সৌজন্য প্রকাশ করল, ঘেন্টও একইভাবে জবাব দিলেন। এরপর মার্লিন  দাবি করল ডাচ জাহাজ যেন পতাকা নামিয়ে নেয়। এহেন অদ্ভুত দাবি ঘেন্ট যে মেনে নিলেন না তা বলাই বাহুল্য। কারণ মার্লিন ছিল ডাচ জলসীমায়, সুতরাং নিয়মানুযায়ী ঘেন্টের পতাকা নামানোর কথা নয়।

কিন্তু চার্লসের কানে খবর গেলে তিনি একে ইংল্যান্ডের অপমান বলে চিহ্নিত করেন। খোলা সাগরে ইংল্যান্ডের শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিতে তিনি ডাচদের আল্টিমেটাম দিলেন। এই নিয়ে শুরু হলো এস্টেট জেনারেলদের সাথে চার্লসের বচসা। ইংল্যান্ড থেকে রাজদূত হয়ে ছুটে এলেন ডাউনিং, দাবি ডাচদের দুঃখপ্রকাশ ও ভ্যান ঘেন্টের উপযুক্ত শাস্তি।

এস্টেট জেনারেলরা তর্কবিতর্কের পর একটি ছাড় দিতে রাজি হলেন- ডাচ জলসীমা পার হবার সময় ইংল্যান্ডের কেবল একটি যুদ্ধজাহাজের জন্য ডাচ পতাকা নামানো হবে। কিন্তু ডাচরা এই প্রস্তাব দিতে অনেক দেরি করে ফেলেছে বলে ডাউনিং অসম্মত হন।

এদিকে চার্লস চুপিচুপি দ্বিতীয় অ্যাংলো- ডাচ যুদ্ধের সেই বিখ্যাত/কুখ্যাত ক্যাপ্টেন হোমসকে পাঠিয়েছেন স্মিরনা (বর্তমান তুরস্কের ইজমির) থেকে ফিরে আসতে থাকা ডাচ বাণিজ্যবহর কব্জা করতে। এই বহর থেকে যে প্রভূত অর্থসম্পদ লাভ করা যাবে তা চার্লসের রণকৌশল কার্যকর করতে সহায়তা করবে। হোমস পুরোপুরি সফল হলেন না। ১৬৭২ সালের ২৩ মার্চ ইংলিশ চ্যানেলে ওয়াইট দ্বীপের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি চারটি জাহাজ ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হন, কিন্তু বাকিগুলো তাকে ফাঁকি দিয়ে কেটে পড়ে।

ওয়াইট দ্বীপের সামনে ডাচ বাণিজ্য জাহাজে হামলা করেন স্যার রবার্ট হোমস; Image Source: iwhistory.org.uk

যুদ্ধ ঘোষণা ছাড়া চার্লসের এই কাজ ছিল তৎকালীন এবং বর্তমান আন্তর্জাতিক রীতিনীতির পরিপন্থী। ডি উইট বুঝতে পারলেন যুদ্ধ এড়ানোর আর কোনো পথ খোলা নেই। চার্লস মার্লিনের তুচ্ছ ইস্যুকে কেন্দ্র করে হোমসের কাজের ঠিক ছয় দিন পর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে নতুন করে যুদ্ধ ঘোষণা করেন, এপ্রিলের ৬ তারিখ চতুর্দশ লুই তার সঙ্গী হন। তৃতীয় অ্যাংলো-ডাচ যুদ্ধ নামে সমধিক পরিচিত হলেও এখানে দুটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। অ্যাংলো-ডাচ আর ফ্রাঙ্কো-ডাচ যুদ্ধ।       

ডাচ প্রতিরক্ষা

প্রিন্স অফ অরেঞ্জ তৃতীয় উইলিয়ামের জনপ্রিয়তা আর অরেঞ্জিস্টদের ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠার কারণে ডি উইট অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। ফলে যুদ্ধ আরম্ভ হবার আগে তিনি বাধ্য হন উইলিয়ামকে ডাচ সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন-জেনারেল নিযুক্ত করতে। ট্রিটি অফ উট্রেখট মোতাবেক কিন্তু প্রিন্স অফ অরেঞ্জেরই বংশানুক্রমিক অধিকার ছিল। যদিও অলিভার ক্রমওয়েলের সঙ্গে করা সমঝোতার ছুতো দেখিয়ে ডি উইট তাকে পদবঞ্চিত করে রেখেছিলেন।

এদিকে ১৬৭২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ডি রুইটারের নেতৃত্বে ৭৫টি রণতরীও ডাচরা প্রস্তুত করেছে। এতে ছিল ৪,৫০০ কামান, আর ২০,০০০ লোক। সমস্যা হলো ডি উইট ভাবেননি ইংল্যান্ড আর ফ্রান্স দু’পক্ষের মোকাবেলা একসাথে করতে হবে। ফলে যথেষ্ট জাহাজ তিনি বহরে যুক্ত করেননি। যখন ইংল্যান্ড আর ফ্রান্স দু’পক্ষই যুদ্ধ ঘোষণা করে বসল, তখন তাড়াহুড়ো করে আরো ৪৫টি জাহাজ, এবং অতিরিক্ত ১০,০০০ লোকের ফরমাশ দেয়া হয়।

প্রথম ও দ্বিতীয় অ্যাংলো-ডাচ যুদ্ধের পথ ধরে এই সংঘাত তৃতীয় অ্যাংলো-ডাচ যুদ্ধ নামে পরিচিত হলেও এখানে ছিল তিনটি পক্ষ। একদিকে নেদারল্যান্ডস একা, অন্যদিকে চিরকালের শত্রু ফ্রান্স আর ইংল্যান্ড একাট্টা। চার্লসের লক্ষ্য ডাচ বাণিজ্যের কবর রচনা করে তিনি ইংল্যান্ডের ধনভান্ডার পূর্ণ করবেন, আর লুই সেভেন প্রভিন্সেস থেকে শুরু করে স্প্যানিশ নেদাল্যান্ডস উদরস্থ করতে আগ্রহী।

তৃতীয় অ্যাংলো-ডাচ যুদ্ধের পক্ষসমূহ © NormanEinstein

ডাচদের জন্য এবারের লড়াই অস্তিত্ব রক্ষার, কারণ হেরে গেলে বিসর্জন দিতে হবে নিজেদের স্বাধীনতা। আগের দুই যুদ্ধের মতো এবার শুধু নৌযুদ্ধ নয়, স্থলেও বড় আকারে লড়াই করতে হবে, যার জন্য ডাচ সেনাবাহিনী একদমই প্রস্তুত নয়। ডি উইট সবসময় ডাচ নৌবহরকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন, স্থলবাহিনী প্রিন্স অফ অরেঞ্জের প্রতি অনুগত বলে অনেকটা ইচ্ছা করেই দুর্বল করে রেখেছেন। এর বাইরেও আলাদা করে ফ্রান্স বা ইংল্যান্ডের মোকাবেলা করা ডাচ ফ্লিটের পক্ষে সম্ভব হলেও যৌথ নৌবহর তাদের থেকে বহুগুনে শক্তিশালী। আশার কথা, ডাচদের আছেন একজন ডি রুইটার।

এস্টেট জেনারেলরা ডি রুইটারকে আদেশ দিলেন রক্ষণাত্মক লড়াইয়ের। শত্রুর গতিবিধির উপর নজর রেখে সুবিধামতো আক্রমণ করতে হবে। তবে যৌথ নৌবহর দেখলে পিছিয়ে আসার কথা বলে দেয়া হয়। আগেরবারের মতোই কর্নেলিস ডি উইট ডি রুইটারের সঙ্গী হন। ২৭ এপ্রিল সাগরে বের হলেও প্রতিকূল বাতাস তাদের বাধা দেয়। অবশেষে মে মাসের ৯ তারিখে তিনি টেক্সেল থেকে যাত্রা করেন।

ডি উইটের প্রথম পরিকল্পনা ছিল ফরাসিদের জলসীমায় ঢুকে তাদের বহর ছিন্নভিন্ন করে দেয়া। কিন্তু সময়মতো ডাচ নৌবাহিনীকে প্রস্তুত করতে না পারায় এই পরিকল্পনা ভেস্তে গেল। এরপর ডি রুইটারের উপর আদেশ হলো টেমসের কাছে গিয়ে ব্রিটিশদের সন্ধান করা, এবং তাদের কোনো জাহাজ দেখলে ধ্বংস করে দেয়া। এর উদ্দেশ্য ছিল ব্রেশট থেকে ফরাসিদের বহর এসে যোগ দেয়ার আগেই রয়্যাল নেভির যতটা সম্ভব ক্ষতি করে দেয়া।

ডি রুইটার রওনা হলেন ইংলিশ চ্যানেলের দিকে; Image Source: militarymaps.rct.uk

ওদিকে ইংল্যান্ড আর ফ্রান্সের প্ল্যান ছিল ব্রিটিশ উপকূলের ১০০ মাইল পূর্বে উত্তর সাগরের ডগার ব্যাঙ্ক  (Dogger Bank) এলাকাতে যৌথভাবে পাহারা বসানোর। এখান দিয়েই নেদারল্যান্ডস ফেরত সমস্ত বাণিজ্য জাহাজকে যেতে হবে। ডাচরা যখন দেখবে তাদের সরবরাহ পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তখন নিশ্চয়ই তাদের নৌবাহিনী এগিয়ে আসবে। খোলা সাগরে এরপর ডাচদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়া যৌথ বহরের জন্য সময়ের ব্যাপার মাত্র। ফ্লিট ধ্বংস হয়ে গেলে ডাচরা একদমই অসহায় হয়ে পড়বে। তখন সেনাবাহিনী আক্রমণ করে দখল করে নেবে সেভেন প্রভিন্সেস। চার্লসের ইচ্ছা মোতাবেক লড়াই শেষ হয়ে যাবে খুব তাড়াতাড়ি।

কিছু চ্যালেঞ্জ কিন্তু এখানে ছিল। ফরাসিদের নৌবাহিনীতে তখন দ্রুতগতির ফ্রিগেট নেই। তাদের ছোট ছোট জাহাজগুলোও ঝঞ্ঝাবিক্ষুদ্ধ উত্তর সাগরের জন্য উপযুক্ত নয়। তবে ব্রিটিশরা যোগ দেয়ার ফলে তাদের শক্তি বেড়ে যায়। সম্মিলিত বহরের সংখ্যা দাঁড়াত ৯৮টি রণতরী, ৬,০০০ কামান আর ৩৪,০০০ মানুষে।

This is a Bengali language article about the intrepid Dutch Admiral, Michiel De Ruyter. The article describes the De Ruyter’s lie and achievements. Necessary references are mentioned below.

References

  1. Douglas, P. Michiel De Ruyter, Held van Nederland. New Netherland Institute.
  2. Grinnell-Milne, G.(1896). Life of Lieut.-Admiral de Ruyter. London: K. Paul, Trench, Trübner & Company.
  3. Curtler, W. T. (1967). Iron vs. gold : a study of the three Anglo-Dutch wars, 1652-1674. Master's Theses. Paper 262.
  4. Michiel Adriaanszoon De Ruyter. Encyclopedia Britannica

Feature Image © Charles Louis Mozin

Related Articles

Exit mobile version