২৭ মার্চ, ১৬৭৬; ক্রমশ খারাপ হয়ে আসা আবহাওয়ার মাঝেই মেসিনার বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে সম্মিলিত স্প্যানিশ আর ডাচ নৌবহর । তীরে চলছে সিসিলির ফরাসি সমর্থনপুষ্ট বিদ্রোহী আর স্প্যানিশ সরকারি বাহিনীর তুমুল লড়াই। প্রণালীতে বসে আছে জুকের নেতৃত্বাধীন ফরাসি জাহাজ। ফরাসি বন্দর তুঁলো থেকেও এগিয়ে আসছিল অতিরিক্ত রণতরী।
পেরেইরা চাচ্ছিলেন সাগরপথে বিদ্রোহীদের উপর আক্রমণ শানাতে। কিন্তু পরিস্থিতি দেখে ডি রুইটার বুঝতে পারলেন- এতে কাজের কাজ কিছুই হবে না, উল্টো বিপদে পড়বেন তারাই। অনেক কষ্টে স্প্যানিশ অ্যাডমিরালকে তিনি এই পরিকল্পনার নিষ্ফলতা বোঝাতে সক্ষম হন।
এদিকে সিসিলির বিদ্রোহীরা সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্রমাগত সাফল্য অর্জন করতে থাকলে নতুন করে ডি রুইটার, পেরেইরা আর তাদের অফিসারেরা বৈঠকে বসলেন। মেসিনার ব্যাপারে আপাতত কিছু না করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো। তবে তুঁলো থেকে এগিয়ে আসা বহরের উপর হামলা করা যায় কিনা সেই পরামর্শের জন্য সিসিলির স্প্যানিশ ভাইসরয়ের কাছে বার্তা প্রেরিত হয়।
এপ্রিলের ৬ তারিখে ভাইসরয় ফিরতি চিঠিতে তাদের সিসিলির পূর্ব উপকূলে সিরাকিউজের ১৮ মাইল পূর্বে অগাস্টা (Agosta/Augusta) বরাবর যাবার অনুরোধ এলো। ততদিনে বাতাস হয়ে উঠেছে আরো বিক্ষুব্ধ। ঝড়ে ফুঁসে উঠেছে সাগর। সব বাধা ঠেলে ২০ এপ্রিল অগাস্টার উপসাগরে এসে ঢুকলেন ডি রুইটার। তাদের পিছু পিছু জুকেও চলে এসেছেন, লক্ষ্য ক্যাটানিয়া অঞ্চলের দিকে আক্রমণ।
অগাস্টার নৌযুদ্ধ
২১ এপ্রিল ডি রুইটার আর পেরেইরা জুকের উপর হামলার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করলেন। সেই লক্ষ্যে রাত নয়টার দিকে তাদের রণতরীগুলো পাল তুলে খোলা সাগরে বেরিয়ে এলো।
২২ এপ্রিল, ১৬৭৬; অন্য দিনগুলোর মতোই আরম্ভ হয়েছে আজকের সকাল। ঝড়ো বাতাসে সাগর এখনও কিছুটা অশান্ত। এর মধ্যেই মেঘের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে উজ্জ্বল সূর্যালোক। নিজের জাহাজের ডেকে অটল দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত ডি রুইটার। কে বলবে তিনি বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড!
ফরাসি সারিতে ত্রিশটি জাহাজ, তিনটি ফ্রিগেট, আর অন্তত সাতটি ফায়ারশিপ দেখা যাচ্ছে। সর্বাধিনায়ক অ্যাডমিরাল জুকে আছেন মধ্যভাগে, লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডি আল্মেরাস (d’ Almeras) ভ্যান আর ভাইস অ্যাডমিরাল গ্যাবারেট রিয়ার সামলাচ্ছেন। সব মিলিয়ে ফরাসিদের আছে ১০,৬৬৫ লোক, আর ২,১৭২টি কামান। ভাঙাচোরা ডাচ জাহাজের থেকে তাদের যুদ্ধজাহাজ বহুলাংশে এগিয়ে।
ডাচ-স্প্যানিশ নৌবহরের ভ্যানে অবস্থান নিয়েছেন ডি রুইটার, মধ্যভাগে সর্বাধিনায়ক পেরেইরা, আর রিয়ারে ডি হান। ডাচদের পুঁজি ১৭টি রণতরী, চারটি ফায়ারশিপ, আর দুটি সরবরাহ জাহাজ। ৮৫২টি কামান আর ৪,৫০০ লোকবল নিয়ে ডি রুইটার বহুগুণে পিছিয়ে শত্রুদের থেকে।
পেরেইরার কাছে যদিও ১০টি জাহাজ, তবে তার ৫টি ছাড়া বাকিগুলো লড়াইয়ের অনুপযুক্ত। কয়েকটি বিশালাকৃতির স্প্যানিশ গ্যালি থাকলেও সেগুলোর মূল কাজ ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ রণক্ষেত্র থেকে টেনে সরিয়ে নেয়া। তাছাড়া পেরেইরার মধ্যভাগ মূল সারি থেকে বেশ পিছিয়ে ছিল। কাজেই লড়াই আরম্ভ হলেও তাদের পক্ষে দ্রুত যোগদান করা সম্ভব হবে না।
বাতাস ধীরে ধীরে পড়ে যাচ্ছিল। দুপুরের দিকে শান্ত হয়ে গেল সাগর। বিকালে ডি রুইটার হামলে পড়লেন ডি আল্মেরাসের উপর। ডাচ পতাকাবাহী জাহাজ ডি আল্মেরাসের একদম পাশে গিয়ে হাজির হলো। কামানের গর্জনে প্রকম্পিত হলো চারদিক। লিওন জাহাজের কাউন্ট স্টাইরাম ডি রুইটারের অনুগামী হলেন।
ডি আল্মেরাসের উপর চলতে থাকল অবিরাম গোলাবর্ষণ। এদিকে স্প্যানিশ জাহাজের চলছিল বারুদের সংকট। ফলে দূরত্ব বজায় রেখে তারা তোপ দাগতে থাকে, যাতে গোলার উপকরণ ফুরিয়ে গেলে নিরাপদে কেটে পড়া যায়। ফলে জুকের বহরের পুরো আঘাত সামলাতে হচ্ছিল ডি রুইটারকেই। ফরাসিরা পাল্টা হামলা চালাচ্ছিল তুমুল বেগে। ফলে ডি হান রিয়ার থেকে সামনে যেতেই পারছিলেন না।
বেশ কয়েক ঘণ্টা যুদ্ধ চলার পর ডাচ কামানের অনবরত আঘাতে কয়েকটি ফরাসি রণতরী পিছিয়ে যায়। তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন স্বয়ং জুকে। ডাচ আর ফরাসি দুই পক্ষই জায়গা ধরে একে অপরের প্রতি চালাতে থাকে গোলাগুলি।
ডি রুইটার পুরো সময়েই ডেকে দাঁড়িয়ে, আশপাশ দিয়ে ছুটে যাওয়া মৃত্যুবাণ উপেক্ষা করে সমস্ত দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। জুকের জাহাজ তার আক্রমণে কাবু হয়ে পড়লে ডি রুইটার উদ্যোগ নেন সরাসরি ফরাসি পতাকাবাহী জাহাজের উপর লাফিয়ে পড়বার। কিন্তু ফরাসি সহায়তাকারী জাহাজ এসে পৌঁছলে তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বাধ্য হলেন।
হঠাৎ একটি গোলা এসে লাগল ডি রুইটারের ডান পায়ে, হাড় ভেঙে উড়িয়ে নিয়ে গেল পায়ের কিছু অংশ। গোলার ধাক্কায় কয়েক ফুট দূরে ছিটকে পড়লেন ডি রুইটার। ডেকে বাড়ি লেগে তার মাথা কেটে রক্ত ঝরতে থাকে। অফিসাররা অ্যাডমিরালকে বয়ে নিয়ে যান কেবিনে। ডাক পড়ে শল্যচিকিৎসকের, তিনি দ্রুত রক্তপাত নিয়ন্ত্রণে এনে ব্যান্ডেজ বেঁধে দেন।
ডি রুইটারের জাহাজের ক্যাপ্টেন ছিলেন ক্যালেনবার্ঘ। তিনি কমান্ডারের আহত হওয়া সাধারণ নাবিকদের থেকে গোপন রেখে দায়িত্ব হাতে তুলে নেন। জুকে এদিকে ডাচ ভ্যান ঘিরে ফেলতে চাইলে ডি হান রিয়ার থেকে এগিয়ে আসেন। শয্যাশায়ী ডি রুইটারও ক্যালেনবার্ঘকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছিলেন। ফলে জুকের পরিকল্পনা কার্যকর হলো না।
ইতোমধ্যে ফরাসিদের সাথে ডাচদের মরণপণ সংগ্রামে উৎসাহিত হয়ে উঠল স্প্যানিশরা। ডি রুইটার পেরেইরাকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানালে বড় আকারের স্প্যানিশ রণতরীগুলো রণক্ষেত্রের দিকে রওনা দেয়। দূরবীন দিয়ে সবই দেখছিলেন জুকে। নিজের বহরের দিকে তাকিয়ে তিনি দেখতে পেলেন ডাচদের স্বল্প সংখ্যক কামানই ফরাসিদের নাভিশ্বাস উঠিয়ে দিয়েছে। প্রায় প্রত্যেকটি জাহাজই ক্ষতিগ্রস্ত।
সন্ধ্যা সাতটার দিকে ডাচ আর ফরাসি দুই বাহিনীই পিছিয়ে যায়। তবে ডি হান কয়েকটি জাহাজ নিয়ে জুকেকে আরো এক ঘণ্টা ধাওয়া করেন। পরদিন আর লড়াই না করে জুকে যাত্রা অব্যহত রাখেন ইতালির দক্ষিণ পশ্চিমে ক্যালাব্রিয়া অঞ্চলের দিকে। মেরামত না করে লড়াই করার সক্ষমতা তার নেই, একথা উপলব্ধি করেই তিনি সরাসরি সংঘর্ষ এড়িয়ে যান। ডি আল্মেরাসসহ তার দুজন ক্যাপ্টেন মারা গেছেন, কয়েকশ লোক হতাহত। জুকে লুইকে জানালেন- গ্রীষ্মের আগে কোনো অভিযান চালানো তার পক্ষে অসম্ভব।
ডি রুইটার সিরাকিউজের দিকে পাড়ি জমালেন। সেখানেই তার চিকিৎসা চলবে। তাদের হতাহতের সংখ্যা ফরাসিদের তুলনায় নগণ্য। তবে তাদের রণতরীগুলোও বেশ খারাপভাবে আঘাতপ্রাপ্ত, এবং ফরাসিদের উপর মরণকামড় দিতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন।
ওপারের ডাক
সিরাকিউজে ডাচ চিকিৎসকেরা ডি রুইটারের সেরে ওঠা নিয়ে আশাবাদী। প্রথম রাত ঝামেলাবিহীন কেটে গেলে তাদের আশার পালে আরো জোরে হাওয়া লাগল। কিন্তু তখনও অ্যান্টিবায়োটিকের যুগ আসেনি, কাজেই ক্ষতে সংক্রমণ রোধ অথবা চিকিৎসার কোনো সুযোগ ছিল না।
ডি রুইটারের ক্ষতস্থানে বাসা বেধেছিল জীবাণু। ফলে দ্বিতীয় রাত থেকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করতে থাকলেন তিনি। চতুর্থ অথবা পঞ্চম দিনে প্রবল জ্বরে কাবু হয়ে পড়লেন কিংবদন্তী ডাচ অ্যাডমিরাল। এর মধ্যেও দেশের কাজে লাগতে পারছেন না বলে আক্ষেপ করতে থাকেন তিনি।
চিকিৎসকদের কপালে তখন দুশ্চিন্তার ভাঁজ। অ্যাডমিরালের পরিস্থিতি তো ক্রমাগত খারাপের দিকে যাচ্ছে। ২৮ এপ্রিল ডি রুইটারের শরীরের তাপমাত্রা বাড়াবাড়ি রকমের বেড়ে যায়। তিনি বিদায় সন্নিকটে বুঝে প্রার্থনা করতে থাকেন।
২৯ এপ্রিল, ১৬৭৬; দুপুর থেকে জ্বর কমে গেল। কিন্তু এতদিন ভুগে ডি রুইটারের জীবনীশক্তি তখন শূন্যের কোঠায়। চিকিৎসকেরা জবাব দিয়ে দিয়েছেন। ফলে প্রাণপ্রিয় বেস্তেভারে’র পাশে জড়ো হয়েছেন তার অফিসারেরা। উৎকণ্ঠিত ডাচ নাবিকদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়েছে শোকের আবহ।
রাত নয়টা থেকে দশটার মধ্যে কোনো একসময়। জন্মভূমি থেকে বহুদূরে দেশের প্রতি কর্তব্য পালনের তাগিদে জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়ে দেয়া ডাচ অ্যাডমিরাল তার শেষবেলাতে এসে পৌঁছেছেন। স্ত্রী-সন্তানের সাথে আর সময় কাটানো তার হয়ে উঠল না, তবে কোনো একদিন তিনি আবারও তাদের দেখা পাবার কামনা করলেন। সাতদিন ক্ষতস্থানের প্রচন্ড যন্ত্রণা সয়েছেন তিনি, আর সম্ভব নয়। ৬৯ বছর বয়সে এবার চিরঘুমে তলিয়ে গেলেন ডাচ নৌ কিংবদন্তী, লেফটেন্যান্ট অ্যাডমিরাল মিখিয়েল ডি রুইটার।
ডি রুইটারের হৃদপিন্ড আর ফুসফুস সিরাকিউজের উপসাগরের এক ছোট্ট দ্বীপে কবর দেয়া হলো, যেখানে প্রতিদিন সমুদ্রের ঢেউ ছুঁয়ে দিয়ে যাবে দুঃসাহসী অ্যাডমিরালকে। এরপর তার সংরক্ষিত মৃতদেহ নিয়ে আমস্টারডামের পথ ধরল ডাচ জাহাজ। সাগরে তখন ফরাসি জাহাজ ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা ফাঁকা তোপ দেগে সম্মান জানাল সাহসী শত্রুকে। ফরাসি বন্দর পাশ কাটানোর সময় লুইয়ের আদেশে গর্জে উঠল কামান, শেষ বিদায় দিল তাদের প্রবল প্রতিপক্ষকে।
আমস্টারডামে পৌঁছলে রাষ্ট্রীয়ভাবে আয়োজিত হলো ডি রুইটারের শেষকৃত্য। বহু বছরের মধ্যে এই প্রথম আর শেষবার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াল রিপাবলিকান আর অরেঞ্জিস্টরা, শামিল হলো শবযাত্রায়। ডি রুইটারের পরিবার ইতোমধ্যে তার জন্য নিউয়ে কার্ক (The Nieuwe Kerk/The New Church) গির্জায় কবরের ব্যবস্থা করেছে। সেখানে ডি রুইটারের ছেলের অর্থায়নে তৈরি হলো সমাধি সৌধ। এর ডিজাইন করেন ডাচ ভাস্কর রম্বাট ভারহর্স্ট (Rombout Verhulst)।
ফ্রাঙ্কো-ডাচ যুদ্ধের সমাপ্তি
ডি রুইটারের পর নেদারল্যান্ডসের নৌবাহিনীর হাল ধরেন ট্রম্প। তবে স্থলে মিত্র সুইডেনকে নিয়ে জয়জয়কার বজায় রাখে ফরাসিরা। ডাচ ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করতে না পারলেও স্প্যানিশ নেদারল্যান্ডস আর রাইন নদী ধরে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখেন লুই। কিন্তু এতে রাজকোষে প্রচণ্ড চাপ পড়ছিল।
ওদিকে লুইয়ের রাজ্যবিস্তারের ক্রমবর্ধমান খায়েশে উদ্বিগ্ন ইংল্যান্ড হুমকি দেয় যে তারা ডাচ-স্প্যানিশ জোটের পক্ষাবলম্বন করবে। লুই ক্ষান্ত দেন, তবে যুদ্ধক্ষেত্রের সাফল্যের জোরে সুবিধাজনক অবস্থান ধরে রেখে আলোচনার টেবিলে বসেন তিনি। আগস্ট ১৬৭৮ থেকে অক্টোবর ১৬৭৯ সাল পর্যন্ত আলাদা আলাদাভাবে নেদারল্যান্ডস, স্পেন আর হলি রোমান এম্পায়ারের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেন তিনি, যা ইতিহাসে পরিচিত নিমওয়েগেনের শান্তিচুক্তি (The Treaties of Peace of Nijmegen) হিসেবে।
১৬৭৬ সাল থেকেই আসলে বিচ্ছিন্নভাবে আলাপ চলছিল। তবে নেদারল্যান্ডসের সাথে পাকা চুক্তি হয় ১৬৭৮ সালের ১০ আগস্ট। এতে ডাচদের উপর থেকে অতিরিক্ত সমুদ্রশুল্ক উঠিয়ে নেয়ার পাশাপাশি আরও বেশ কিছু সুবিধা দেয়া হয়।
তবে স্পেনের ভাগ্য ছিল খারাপ। ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৬৭৮ সালের চুক্তির মাধ্যমে ফ্ল্যান্ডার্সের অনেক এলাকা লুইয়ের কাছে বিসর্জন দিতে বাধ্য হয় স্পেন। বিনিময়ে স্প্যানিশ নেদারল্যান্ডসের বেশ কিছু অঞ্চল তাদের ফিরিয়ে দিয়ে একে ফরাসি-স্প্যানিশ সীমান্তরেখা বলে স্বীকার করে নেন লুই।
হলি রোমান এম্পেরর লিওপোল্ডের সাথে কথাবার্তা দীর্ঘায়িত হয়। শেষ অবধি ১৬৭৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তিনিও অঞ্চল বিনিময়ের ফরাসি শর্তাবলী মেনে নেন। এর বাইরে একই বছর ফরাসিবিরোধী জোটের সমর্থক ডেনমার্কের সাথে ফন্টেনব্ল্যা আর ব্র্যান্ডেনবার্গের সাথে সেইন্ট জার্মান-অ-লায়্যে চুক্তি হয়।
শেষকথা
নেদারল্যান্ডসের মতো নৌ-প্রধান দেশে বহু বিখ্যাত অ্যাডমিরালের জন্ম হয়েছে। তবে ডি রুইটার ডাচদের চোখে বরাবরই আলাদা। তার মূর্তি নির্মিত হয়েছে জন্মস্থান ভ্লিসিঞ্জেনে। নেদারল্যান্ডসের বহু রাস্তাঘাটের নামও তার নামে। এমনকি নিউ ইয়র্কের একটি শহর আর গ্রাম আছে তার নামে।
ডি রুইটারের হাত ধরেই ১৬৬৫ সালে সূচীত হয় নেদারল্যান্ডসের মেরিন সেনাদলের। তার নামে বিভিন্ন সময় অন্তত ছয়টি ডাচ যুদ্ধজাহাজের নামকরণ করা হয়েছে, সাতটি রণতরীর নাম হয়েছে তার পতাকাবাহী জাহাজ সেভেন প্রভিন্সেসে’র নামানুসারে। ১৯০৭ সালে ডাচ বণিকদের জন্য ডি রুইটার মেডাল চালু হয়। ১৯৫৪ সালে তার নামে স্ট্যাম্পও ইস্যু করে নেদারল্যান্ডস।
তবে ডি রুইটারকে নিয়ে বিতর্কও আছে। খোদ নেদারল্যান্ডসেই অনেকে বলে থাকেন- ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে অভিযানের সময় ডি রুইটার ডাচ দাস ব্যবসায়ীদের পক্ষে কাজ করেছেন। ফলে তার বিরুদ্ধে দাস ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগও উঠেছে। তবে ঐতিহাসিকভাবে এর কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ মেলেনি। বিতর্ক সত্ত্বেও আজও নেদারল্যান্ডসের সাধারণ জনগণের হৃদয়ে আসন করে আছেন মিখিয়েল ডি রুইটার। তার সমাধির বুকে খচিত আছে,
Intaminatis Fulget Honoribus (এখানে শুয়ে আছেন সেই ব্যক্তি, যিনি তার নিষ্কলুষতার গৌরবে সমুজ্জ্বল)