Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

হ্যানা গাদ্দাফী হত্যা রহস্য

সেপ্টেম্বর, ২০১১। ছয় মাসের রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের পর বিদ্রোহীদের আক্রমণ এবং ন্যাটোর বিমান হামলার মুখে তখন সবেমাত্র পতন ঘটেছে দীর্ঘ চার দশক ধরে দোর্দণ্ড প্রতাপে লিবিয়া শাসন করে আসা লৌহমানব মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফীর। রাজধানী ত্রিপলী ছেড়ে তিনি চলে গেছেন আত্মগোপনে। আর সে সুযোগে বিদ্রোহীরা তার বাসভবন বাব আল-আজিজিয়া কম্পাউণ্ড তন্ন তন্ন করে তল্লাশী করছে লুকিয়ে রাখা অস্ত্রশস্ত্র, ধন-সম্পদ আর গোপন নথিপত্রের সন্ধানে।

সে সময় বিদ্রোহীদের একটি গ্রুপ হঠাৎ করেই গাদ্দাফীর পারিবারিক কিছু ছবির অ্যালবাম এবং ভিডিও ক্যাসেটের সন্ধান পেয়ে যায়। এগুলোর মধ্যে একটি ভিডিও ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সেখানে গাদ্দাফীকে দেখা যাচ্ছিল তার ছেলেমেয়েদের সাথে অবসর সময় কাটাতে। ভিডিওতে গাদ্দাফীর দুই ছেলের সাথে আরেকটি ছোট মেয়েকে দেখা যায়, যাকে গাদ্দাফী ‘হ্যানা’ নামে সম্বোধন করেন এবং তাকে তার বাবার কাছে, অর্থাৎ গাদ্দাফীর নিজের কাছে আসার আহ্বান জানান।

ভিডিওটি হয়তো গাদ্দাফীর কম্পাউন্ড থেকে সংগৃহীত আর দশটি ভিডিওর মতোই গুরুত্বহীন হতে পারত, যদি হ্যানা নামটি না শোনা যেত। কারণ ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছিল ১৯৮৯ সালে, অথচ লিবিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এবং গাদ্দাফীর দাবি অনুযায়ী তার দত্তক নেওয়া শিশুকন্যা হ্যানা গাদ্দাফী নিহত হয়েছিল ১৯৮৬ সালে, মার্কিন বিমান হামলায়। তবে কি পশ্চিমা গণমাধ্যমের দাবিই সঠিক? হ্যানা গাদ্দাফী আসলে মারা যায়নি? বিশ্ববাসীর সহানুভূতি আদায়ের জন্য গাদ্দাফী মিথ্যা বলেছিলেন? হ্যানা গাদ্দাফীর মৃত্যু রহস্য উদঘাটন নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।

১৯৮৬ সালের ১৫ই এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলী এবং গুরুত্বপূর্ণ বন্দর নগরী বেনগাজী আক্রমণ করে। আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযানটিকে লিবিয়ার সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযান দাবি করা হলেও বাস্তবে  ঐ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল গাদ্দাফীকে হত্যা করা। অপারেশন এল ডোরাডো ক্যানিয়ন নামের ঐ অভিযান সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি আমাদের এই সিরিজের পূর্ববর্তী পর্বে

হ্যানা গাদ্দাফী; Source: Daily Telegraph

সেদিন মার্কিন বিমানবাহিনীর ৯টি এফ-১১১এফ আর্ডভার্ক যুদ্ধবিমান উড়ে গিয়েছিল লিবিয়ান হোয়াইট হাউজ খ্যাত গাদ্দাফীর বাসভবন বাব আল-আজিজিয়া কম্পাউন্ড লক্ষ্য করে। তাদের নিক্ষিপ্ত ২,০০০ পাউন্ড ওজনের ১৩টি বোমার আঘাতে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল গাদ্দাফীর দোতলা বাড়িটির একাংশ। শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে যাওয়ার ফলে গাদ্দাফী নিজে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন, কিন্তু আহত হয়েছিল তার তিন পুত্র, হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল তার স্ত্রী এবং আট সন্তান-সন্ততির সবাইকে। আর হাসপাতালে নেওয়ার পরপরই মৃত্যুবরণ করেছিল তার ১৫ মাস বয়সী পালিত কন্যা হ্যানা গাদ্দাফী। অন্তত লিবিয়ার পক্ষ থেকে সেরকমই দাবি করা হয়েছিল।

মার্কিন বিমান হামলায় হ্যানা গাদ্দাফীর নিহত হওয়ার সংবাদটিকে অবশ্য অনেকেই শুরু থেকেই সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখেন। কারণ ঐ হামলার আগে হ্যানা গাদ্দাফী নামটি কখনো গণমাধ্যমে উঠে আসেনি। ফলে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেন, আসলেই কি হ্যানা নামে গাদ্দাফীর কোনো পালিত কন্যা ছিল, নাকি বিমান হামলায় নিহত অন্য কোনো শিশুকে গাদ্দাফী নিজের পালিত কন্যা বলে প্রচার করেছিলেন বিশ্ববাসীর সহানুভূতি আদায়ের জন্য?

হ্যানা গাদ্দাফী; Source: Daily Telegraph

লিবিয়ান সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, ফিলিস্তিনি শিশুকন্যাটিকে গাদ্দাফী মাত্র কয়েক মাস আগেই দত্তক নিয়েছিলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একজন মার্কিন সাংবাদিককে কাফনে জড়ানো একটি কন্যাশিশুর মরদেহও দেখিয়েছিল। কিন্তু তারপরেও সন্দেহ রয়েই যায়। অনেকে এরকমও দাবি করেন, হয়তো গাদ্দাফী আগেই হ্যানাকে দত্তক নিয়েছিলেন, কিন্তু বিমান হামলায় হ্যানা নিহত হয়নি। অন্য কোনো নিহত শিশুকে গাদ্দাফী হ্যানা বলে প্রচার করেছিলেন।

এ ধরনের সন্দেহ এবং প্রচারের পেছনে প্রধানত দুটি কারণ কাজ করেছিল। প্রথমত, একটি দেশের প্রেসিডেন্টের শিশুকন্যাকে হত্যা করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর ছিল। ফলে মার্কিন নীতির সমর্থক গণমাধ্যমগুলো ঐ সংবাদের সত্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করে। দ্বিতীয়ত, হামলার পূর্বেই ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইতালিতে নিযুক্ত লিবিয়ান রাষ্ট্রদূত আব্দুর রহমান শালগমের মাধ্যমে গাদ্দাফীকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, আমেরিকা লিবিয়াতে আক্রমণ করতে যাচ্ছে। এই সতর্কবার্তার পরেও গাদ্দাফী কেন তার বাসভবনে ছিলেন, সেটিও অনেকের মনে প্রশ্নের সৃষ্টি করে।

১৯৯৬ সালে ত্রিপলীতে গাদ্দাফীর সাথে হ্যানা; Source: AP

তবে কিছু কিছু পত্রিকা প্রাথমিকভাবে সন্দেহ প্রকাশ করলেও পরবর্তীতে এটা মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় যে, মার্কিন হামলায় আসলেই গাদ্দাফীর কন্যা হ্যানা গাদ্দাফী নিহত হয়েছিল। ফলে ১৯৯৯ সালে যখন চীনের শিনহুয়া সংবাদ মাধ্যমে নেলসন ম্যান্ডেলার সাথে গাদ্দাফীর স্ত্রীর সাক্ষাৎকালে তার দুই কন্যা আয়েশা এবং হ্যানার উপস্থিত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়, এমনকি হ্যানার একটি ছবিও প্রকাশ করা হয়, তখন কিংবা তার পরবর্তী আরো এক যুগ পর্যন্তও কেউ সেটাকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু হ্যানা গাদ্দাফী নামটি নতুন করে আলোচনায় উঠে আসে ২০১১ সালে, যখন আরব বসন্তের ধারাবাহিকতায় লিবিয়া গৃহযুদ্ধে নিমজ্জিত হয়।

২০১১ সালের আগস্টের ৬ তারিখে জার্মান পত্রিকা ডাই ওয়েল্ট প্রথম হ্যানার অস্তিত্ব নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তারা সুইজারল্যান্ড কর্তৃক গাদ্দাফী পরিবারের ২৩ সদস্যের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা সম্পর্কিত একটি ডকুমেন্টের বরাত দিয়ে দাবি করে, ঐ ২৩ জনের মধ্যে একটি নাম আছে ‘হ্যানা গাদ্দাফী’। পত্রিকাটির দাবি অনুযায়ী এই হ্যানা গাদ্দাফীর জন্ম ১৯৮৫ সালের ১১ই নভেম্বর। অর্থাৎ ১৯৮৬ সালের হামলার সময় তার বয়স ছিল প্রায় ৬ মাস, কথিত নিহত হ্যানার বয়সের কাছাকাছি। সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার তালিকায় নাম থাকার কারণে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, হ্যানা কি তবে এখনও বেঁচে আছে?

১৯৯৯ সালে বাম থেকে আয়েশা গাদ্দাফী, ম্যান্ডেলা, হ্যানা গাদ্দাফী, ম্যান্ডেলার স্ত্রী, গাদ্দাফীর স্ত্রী সাফিয়া; Source: AP

ডাই ওয়েল্টের প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর নতুন করে হ্যানা গাদ্দাফীর ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরু করে সাংবাদিকরা। এবং মাত্র এক সপ্তাহ পরেই আগস্টের ১২ তারিখে ব্রিটেনের দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকা ব্রিটেনে অবস্থিত লিবিয়ান দূতাবাস থেকে একটি নথি উদ্ধার করে, যেখানে দেখা যায়, স্টিফেন হপসন নামে একজন ব্রিটিশ দন্ত চিকিৎসককে লিবিয়ান দূতাবাসের উদ্যোগে ২০০৮ সালে লিবিয়াতে পাঠানো হয়েছিল হ্যানা গাদ্দাফী নামে এক তরুণীর চিকিৎসা করানোর জন্য। স্টিফেন হ্যানা গাদ্দাফী নামে একজনের চিকিৎসা করার কথা স্বীকার করেন, কিন্তু রোগীর তথ্যের গোপনীয়তার দোহাই দিয়ে তার বিস্তারিত পরিচয় প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানান।

তবে হ্যানা গাদ্দাফীর অস্তিত্ব সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসে গাদ্দাফীর পতনের পরপর, আগস্টের ২৬ তারিখে, আইরিশ টাইমস পত্রিকায় সাংবাদিক ম্যারি ফিটজেরাল্ডের প্রতিবেদনে। ২৩ আগস্ট বাব আল-আজিজিয়ার পতনের পর ২৫ আগস্ট বিদ্রোহীদের সাথে ম্যারিও সেখানে প্রবেশ করেন। সেখানে গাদ্দাফীর পরিত্যক্ত বাসভবনের একটি অংশে প্রায় অপ্রত্যাশিতভাবে তারা সন্ধান পেয়ে যান হ্যানা গাদ্দাফীর কক্ষের এবং তার জিনিসপত্রের।

বাব আল-আজিজিয়ায় হ্যানা গাদ্দাফীর রুম; Source: Daily Mail

হ্যানার কক্ষে বিভিন্ন মেয়েলী জিনিসপত্রের সাথে ছিল গাদ্দাফীর লেখা ‘দ্য গ্রিন বুক’ এর কয়েকটি কপি, কিছু মেডিক্যালের বই এবং ত্রিপলী মেডিক্যাল কলেজের একটি সার্টিফিকেট, যেখানে আরবিতে নাম লেখা ছিল ‘হ্যানা মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফী।’ রুমে হ্যানার পাসপোর্ট সাইজের ছবি ছাড়াও তার ভাইবোনদের সাথে গ্রুপ ছবিও ছিল। এছাড়াও ছিল ব্রিটিশ কাউন্সিলের একটি সার্টিফিকেট, যেখানে দেখা যায় ২০০৭ সালে হ্যানা একটি ইংরেজি কোর্স করেছিলেন, যেখানে তিনি ‘এ’ গ্রেড অর্জন করেছিলেন।

এর আগেও ম্যারি অনেক লিবিয়ানের কাছ থেকে শুনেছিলেন যে, হ্যানা আসলে মারা যায়নি, বরং সে প্রথমে লন্ডনে এবং পরবর্তীতে লিবিয়াতে বেড়ে উঠেছে। ইন্টারনেটের এক ফোরামে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক লিবিয়ান ছাত্র এরকমও দাবি করেছিল যে, হ্যানা গাদ্দাফী ত্রিপলী মেডিক্যাল কলেজে তার সহপাঠী ছিল। কিন্তু এতদিন যা ছিল গুজব, সেদিন ম্যারি তার প্রমাণ পেলেন। একইসাথে প্রমাণিত হলো জার্মান পত্রিকার দাবিও, যারা বলেছিল হ্যানা একজন ডাক্তার এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী কর্মকর্তা।

আইরিশ টাইমসের ঐ প্রতিবেদনের পর অন্যান্য গণমাধ্যমেও বিভিন্ন সাক্ষাৎকার এবং তথ্য-প্রমাণ উঠে আসতে থাকে। সিএনএনের একটি প্রতিবেদনে এক লিবিয়ান ডাক্তারের সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়, যিনি দাবি করেন তিনি হ্যানার সাথে হাসপাতালে একসাথে চাকরি করতেন। সিএনএনের ক্যামেরায় উঠে আসে হাসপাতালে হ্যানার অফিসের দৃশ্য, যা ছিল অন্য ডাক্তারদের চেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত। তার অফিসে তিনটি টেলিফোন ছিল, যার মধ্যে একটি ছিল সরাসরি স্বয়ং গাদ্দাফীর অফিসের সাথে সংযুক্ত।

কিন্তু হ্যানা যদি বেঁচেই থাকেন, তাহলে কি গাদ্দাফী তার মৃত্যু সম্পর্কে মিথ্যা দাবি করেছিলেন? এবং সেই মিথ্যা দাবি সফলভাবে এত বছর ধরে গোপন করে রাখতে পেরেছিলেন? হতে পারে, কিন্তু বিকল্প একটি ব্যাখ্যাই সম্ভবত অধিকতর গ্রহণযোগ্য। টেলিগ্রাফের প্রশ্নের উত্তরে হ্যানার ব্রিটিশ দন্ত চিকিৎসক স্টিফেন হপসন সেই ব্যাখ্যারই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, হতে পারে এই হ্যানা আসলে মৃত হ্যানা না, হতে পারে এ ভিন্ন ব্যক্তি।

গার্ডিয়ানের কাছে একই রকম ব্যাখ্যা দেন ব্রিটিশ কাউন্সিলের লিবিয়া শাখার মুখপাত্রও। তিনি জানান, হ্যানা গাদ্দাফী নামে গাদ্দাফী পরিবারের এক তরুণী ব্রিটিশ কাউন্সিলে কোর্স করেছে ঠিকই, কিন্তু তাদেরকে জানানো হয়েছিল এই হ্যানা ভিন্ন এক হ্যানা।  লিবিয়ান সরকারের এক মুখপাত্র বিষয়টি আরো পরিষ্কার করে ব্যাখ্যা করেন। তার ভাষায়, আসল হ্যানার মৃত্যুর পর গাদ্দাফী আরেকটি কন্যা শিশু দত্তক নিয়েছিলেন, এবং পূর্বের হ্যানার স্মরণার্থে এর নামও রাখা হয়েছিল হ্যানা।

লিবিয়ান সংস্কৃতিতে এ ধরনের ঘটনা অবশ্য বিরল না। এখানে পরিবারের মধ্যে একই নাম ঘুরে ফিরে বারবার আসে। একটি বৃহত্তর পরিবারে একই নামের একাধিক ব্যবহার দেখা যায়। মৃত সন্তানের নাম দ্বিতীয়বার রাখার নজিরও লিবিয়াতে আছে। তাছাড়া সাইফ আল-ইসলাম, মুতাসিম এবং আয়েশা ছাড়া গাদ্দাফীর অন্যান্য সন্তানদেরও যেখানে গণমাধ্যমে তেমন উপস্থিতি নেই, সেখানে পালিত কন্যার সংবাদ সাধারণ মানুষের কাছে গোপন থাকাটা খুব বেশি অস্বাভাবিক না।

পরিবার এবং অন্যান্যদের সাথে হ্যানা; Source: alchetron.com

তবে এই হ্যানা গাদ্দাফী যে আসলেই দ্বিতীয় হ্যানা গাদ্দাফী হতে পারে, সে ব্যাপারে সবচেয়ে জোরালো যুক্তি পাওয়া যায় টেলিগ্রাফের একটি প্রতিবেদনে। মোহাম্মদ আলি নামে যে ক্যামেরাম্যান গাদ্দাফীর কম্পাউন্ড থেকে উদ্ধারকৃত হ্যানা গাদ্দাফীর ভিডিও চিত্রটি ধারণ করেছিলেন, টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে তার সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। মোহাম্মদ আলি বলেন, শুধু হ্যানা না, গাদ্দাফী কাছাকাছি সময় আরো অন্তত তিনটি শিশুকে দত্তক নিয়েছিলেন, কিন্তু তাদের কারো কথাও বাইরের মানুষ জানত না।

মোহাম্মদ আলির ভাষায়, নিরাপত্তাজনিত কারণে গাদ্দাফী তার ছেলে-মেয়েদেরকে বাইরে যেতে দিতেন না, বরং তাদের খেলার সাথী হিসেবে তিনি অন্য শিশুদেরকে দত্তক নিয়ে আসতেন। সব শিশুর অবশ্য শেষপর্যন্ত গাদ্দাফী পরিবারের সাথে থাকার সৌভাগ্য হয়নি, কিন্তু হ্যানা রয়ে গিয়েছিলেন শেষপর্যন্ত। তার মতে, হ্যানা হয়তো এখন গাদ্দাফীর স্ত্রী সাফিয়া এবং পুত্র মোহাম্মদ, হানিবাল ও কন্যা আয়েশার সাথে আলজেরিয়াতে অবস্থান করছেন।

শিশুকালে হ্যানার সাথে গাদ্দাফী; Source: Daily Telegraph

কিন্তু এই হ্যানা কি দ্বিতীয় হ্যানা, নাকি নিহত না হওয়া প্রথম হ্যানা, সেটা টেলিগ্রাফ নিশ্চিতভাবে উল্লেখ করেনি। হতে পারে বিভিন্ন পত্রিকা যেরকম দাবি করছে, এই হ্যানা আসল হ্যানাই, যে আসলে মার্কিন হামলায় নিহত হয়নি। তবে ২০১১ সালে গাদ্দাফীর অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত মন্ত্রীরাও তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। গাদ্দাফীর পতনের পর বিদ্রোহীদের হাতে অনেকে গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। গাদ্দাফী যদি আসলেই হ্যানার মৃত্যু নিয়ে মিথ্যাচার করতেন, তাহলে তার সাক্ষ্য-প্রমাণ হয়তো এতদিনে গণমাধ্যমে চলে আসত। সেটা যেহেতু হয়নি, তাই সম্ভবত এটাই সত্য যে, আসল হ্যানার মৃত্যুর পর গাদ্দাফী দ্বিতীয় হ্যানাকে দত্তক নিয়েছিলেন।

ফিচার ইমেজ- RT

Related Articles