Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

নিনেভা: প্রাচীন অ্যাসিরীয় সভ্যতার রাজধানী

প্রাচীন মেসোপটেমীয় সভ্যতায় মাথা উঁচু করে শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখা এক শহরের নাম নিনেভা। প্রাচীনত্বের মাপকাঠিতেও এটি ঠাঁই নিয়েছে প্রাচীন বিশ্বের গৌরবময় ইতিহাসে। প্রাচীন এই শহর ছিল আপার মেসোপটেমিয়ার টাইগ্রিস নদীর তীরে, যা আজকের দিনের ইরাকের দক্ষিণে মসুল শহরের কাছাকাছি। অ্যাসিরীয় সভ্যতায় বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু নিনেভা পরিচিত ছিল নিনুয়া নামেও। প্রাচুর্যে ভরপুর এবং সমৃদ্ধশালী এ শহরটি আয়তনেও ছিল বেশ বড়। কয়েকটি দশক ধরে বিশ্বের বৃহত্তম শহরের খ্যাতি নিজ ঝুলিতে পুরে রেখেছিল নিনেভা।

প্রাচীন নিনেভা শহর; Image Source: Alamy Stock Photo.

খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০০ অব্দের দিকে গোড়াপত্তন ঘটে নিনেভা শহরের। সময় গড়িয়ে যাবার সাথে সাথে প্রভূত উন্নতিসাধন করতে থাকে শহরটি। খ্রিষ্টপূর্ব আনুমানিক ৩০০০ অব্দের দিকে দেবী ইশতারের উপাসনার স্থান হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব পায় নিনেভা। শহরের নামের উৎপত্তি কোন শব্দ থেকে, তা নিয়ে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।

কিউনিফর্ম নিনা (𒀏) দিয়ে বোঝায় বাড়ির মধ্যে থাকা একটি মাছ। তাই, নিনেভা দিয়ে মূলত দুটি জিনিসকে ইঙ্গিত করা যেতে পারে। হয় এটি ‘মাছের স্থান’ বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে, বা টাইগ্রিসের সাথে যুক্ত কোনো দেবীকে নির্দেশ করতে পারে। আর এর প্রচলন ঘটিয়েছিল সম্ভবত হুরিয়ান আদিবাসীরা। ধারণা করা হয়, ‘নিন’ বা ‘নিনা’ উপসর্গের সাথে অন্য শব্দ যুক্ত করেই এই নিনেভা শব্দটি এসেছে। ‘নিন’ বা ‘নিনা’ ব্যবহার করা হতো প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার বিভিন্ন দেবদেবীর নামের পূর্বে। যেমন- ‘নিনহুরসাগ’, ‘নিনুর্তা’ ইত্যাদি। তাই, নিনেভা শব্দের কাছাকাছি অর্থ হতে পারে ‘দেবীর ঘর’ বা ‘দেবী ইশতারের ঘর‘।

দেবী ইশতার; Image Source: Alamy Stock Photo.

সম্রাট প্রথম শামশি আদাদের রাজত্বকালে নিনেভা সরাসরি অ্যাসিরীয় শাসনের অধীনে চলে আসে। নিনেভা সম্পূর্ণরূপে বিকশিত হয়েছিল নব্য-অ্যাসিরীয় যুগে, সম্রাট সেনাহেরিবের (খ্রিষ্টপূর্ব ৭০৫ অব্দ – খ্রিষ্টপূর্ব ৬৮১ অব্দ) শাসনামলে। অ্যাসিরীয় সম্রাটদের মধ্যে তাকে অন্যতম জনপ্রিয় শাসনকর্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অভ্যন্তরীণ গুরুত্বের জন্য তিনি নিনেভাকে নব্য-অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্যের রাজধানীর হিসেবে ঘোষণা করেন।

বাইবেলে (বুক অভ জোনাহ) নিনেভাকে অভিহিত করা হয়েছে পাপে পূর্ণ কলুষিত এক শহর হিসেবে। কুরআন ও বাইবেল অনুসারে, এ শহরের নবী ছিলেন হযরত ইউনুস (আ), বাইবেলে যাকে ‘জোনাহ‘ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ইহুদীদের ইতিহাসে সিনাহেরিবের নাম বেশ ভালোভাবেই চর্চিত, কারণ তিনি খ্রিস্টপূর্ব ৬৮৯ অব্দে ব্যাবিলন নগরী ধ্বংস করে দেন। ইহুদী ও ইসলামি ইতিহাস অনুযায়ী, হযরত ইউনুস (আ) নিনেভা শহরের বাসিন্দাদের কাছে ধর্মপ্রচার করতে আসলে, তাদের কেউ তেমন আগ্রহ দেখায়নি। এরপর তিনি নিকটস্থ নদী পার হয়ে এই এলাকা ছেড়ে চলে যান। নিনেভা শহরের ধ্বংসাবশেষে নির্মাণ করা হয়েছিল হযরত ইউনুস (আ) এর মসজিদ, যার বর্তমান নাম ‘আল-নবি ইউনুস মসজিদ’। বিশ্বাস করা হয়, এখানেই (মসুল) কবর দেয়া হয়েছিল হযরত ইউনুস (আ) কে।

নব্যপ্রস্তরযুগে এই অঞ্চলে প্রথম বসতি স্থাপন করা হলেও, খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০০ অব্দের দিকে এখানে ‘হাট্টি’ সম্প্রদায় বাস করত বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। এই সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের রাজধানী ‘হাট্টুসা’ নির্মাণ করার পাশাপাশি নিনেভা শহররেও উত্থান ঘটায়। আদ্যিকালে এই শহরের কী নাম ছিল, তা এখনো অজানা। শুরুতে ফল্ট লাইন ধরে নির্মিত হওয়ায় শহরকে বেশ কয়েকবার ভূমিকম্পের ধাক্কা সামলাতে হয়। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে নিনেভা।টাইগ্রিসের সাথে সহাবস্থানে থাকায় উরুক সাম্রাজ্য বিস্তারের সময় নিনেভা পরিণত হয়েছিল এক গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্রে। খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের দিকে কিশ সভ্যতা নিনেভাতে বিকশিত হয়েছিল। এই সময়ে নিনেভার প্রধান মন্দিরটি ইশতার মন্দির নামে পরিচিতি পায়। দোর্দণ্ড প্রতাপশালী অ্যাসিরীয় সম্রাট নেবুচাদনেজারের রাজধানী ছিল নিনেভা শহরে।

শিল্পীর তুলিতে নিনেভা; Image Source: Classic Image/ Alamy Stock Photo.

আক্কাদিয়ানরা তাদের প্রথম শাসক সার্গন দ্য গ্রেটের (খ্রিষ্টপূর্ব ২৩৩৪- খ্রিষ্টপূর্ব ২২৭৯ অব্দ) রাজত্বকালে এই অঞ্চল দখল করে নেয়। দিগ্বিজয়ী সার্গনের অধীনে সমস্ত মেসোপটেমিয়া ছাড়াও আনাতোলিয়ান অঞ্চল পর্যন্ত বশ্যতা স্বীকার করে। খ্রিষ্টপূর্ব ২২৬০ অব্দের দিকে নিনেভাতে সংঘটিত হয়েছিল ভয়ংকর এক ভূমিকম্প, যার ফলে ধ্বংস হয়ে যায় দেবী ইশতারের প্রথম মন্দির। সার্গন দ্য গ্রেট দ্বারা নির্মিত এই মন্দির পুনর্গঠনে হাত লাগিয়েছিলেন আক্কাদীয় সম্রাট মানিশতুসু (খ্রিষ্টপূর্ব ২২৭০- খ্রিষ্টপূর্ব ২২৫৫ অব্দ), যিনি শহরের আয়তন বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আক্কাদীয় যুগে ইশতার হয়ে ওঠেন নিনেভা শহরের প্রধান দেবী, যাকে ঘিরে আয়োজন করা হতো বিভিন্ন পূজা-পার্বণের। খ্রিষ্টপূর্ব ২০৮৩ অব্দে আক্কাদীয় সাম্রাজ্যের পতন ঘটলে এই অঞ্চলে নিজেদের স্বায়ত্তশাসন পুনরুদ্ধার করে হাট্টিরা। তারা নিনেভাতে নিজেদের আধিপত্য বজায় রেখেছিল অ্যাসিরীয় এবং অ্যামোরাইটদের নিকট পরাজিত হবার আগ পর্যন্ত।

সার্গন দ্য গ্রেট; Image Source: Neutron Boar/DeviantArt.

অ্যামোরাইটরা নিনেভার দখল নিয়ে মন্দিরসহ অন্যান্য নির্মাণ প্রকল্পে তাদের লিপিবদ্ধ শিলালিপির ছাপ রেখে যায়, যা পরবর্তী নতুন এক সাম্রাজ্যে ভেঙে ফেলা হয়। অ্যাসিরীয় সম্রাট প্রথম শামাশি আদাদ অ্যামোরাইটদের এই অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করার পর আশুর হয়ে যায় অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী। তখন নিনেভা ক্রমে ক্রমে বিকশিত হয় একটি বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে। শামশি আদাদের মৃত্যুর পর, ব্যাবিলনের রাজা হাম্মুরাবির (খ্রিষ্টপূর্ব ১৭৯২ অব্দ – খ্রিষ্টপূর্ব ১৭৫০ অব্দ) নেতৃত্বে অ্যামোরাইটরা অঞ্চলটি জয় করে নিতে সক্ষম হয়।

হাম্মুরাবির মৃত্যুর পর, ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় তার সাজানো-গোছানো সাম্রাজ্য। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে (খ্রিষ্টপূর্ব ১৭২৬ অব্দ – খ্রিষ্টপূর্ব ১৬৯১ অব্দ) আদাসির নেতৃত্বে অ্যাসিরীয়রা দখল করে নেয় নিনেভা। মহান অ্যাসিরীয় সম্রাট আদাদ নিরারি (খ্রিষ্টপূর্ব ১৩০৭ অব্দ – খ্রিষ্টপূর্ব ১২৭৫ অব্দ) মধ্য অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্যের সীমানা প্রতিষ্ঠার আগপর্যন্ত নিনেভা পরিপূর্ণ সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত ছিল। কালহু শহরের নির্মাতা সম্রাট প্রথম শালমানেসার (খ্রিষ্টপূর্ব ১২৭৪ অব্দ – খ্রিষ্টপূর্ব ১২৪৫ অব্দ) শহর সংস্কারের পাশাপাশি নিনেভাতে একটি সুন্দর প্রাসাদ এবং মন্দির তৈরি করেছিলেন। ওই অঞ্চলে দেওয়াল সম্বলিত বসতি ঘরের ঘরের উদ্ভাবন তিনি ঘটিয়েছিলেন বলেও ধারণা করা হয়।

প্রাচীন নিনেভা শহর; Image Source: Classic Image/ Alamy Stock Photo.

নিনেভা তার গৌরবময় অধ্যায়ের স্বর্ণ শিখরে পৌঁছে নব্য-অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্যে, সম্রাট সিনাহেরিবের আমলে। সিনাহেরিব ছিলেন সম্রাট দ্বিতীয় সার্গনের (খ্রিষ্টপূর্ব ৭১৭ অব্দ – খ্রিষ্টপূর্ব ৭০৬ অব্দ) পুত্র। নিজ শাসনামলেই সার্গন নির্মাণ করেছিলেন দুর-শারুকিন (সার্গনের দুর্গ) নামে প্রাসাদোপম এক অট্টালিকা। দুর-শারুকিন ছিল একটি প্রাচীন শহর, বর্তমানে যা খোরসাবাদ নামে পরিচিত। সম্রাট দ্বিতীয় সার্গনের আমলে এটি ছিল অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী। সর্বপ্রথম রাজধানী হিসেবে ঠিক করা হয় নিমরুদ শহরকে, তারপর রাজধানী হয় দুর শারুকিন, এরপর নিনেভা শহর। সিনাহেরিব তার বাবার সদ্য সমাপ্ত ‘দুর-শারুকিন’ পরিত্যাগ করে নিজ শাসনব্যবস্থায় মনোযোগ দেন। সেজন্য শুরুতেই তিনি তারা রাজ্যের রাজধানী নিনেভাতে স্থানান্তরিত করে ফেলেন। যা কিছু সম্ভব, তা দুর-শারুকিন থেকে নিনেভাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

সম্রাট সিনাহেরিব; Image Source: Alamy Stock Photo.

তার আমলে এই শহর ব্যাপক উন্নতি লাভ করে। পনেরটি মজবুত ফটকসহ পুরো শহরের তিনি দুর্ভেদ্য প্রাচীর দিয়ে সুরক্ষা বেষ্টনীতে আবদ্ধ করেছিলেন। এছাড়াও পাবলিক পার্ক, বাগান, খান খনন, সেচ ব্যবস্থা, এবং একটি চিড়িয়াখানা তৈরি করেন তিনি। শহরের কাঠামোকে ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয় সেসময়। চারদিকে নিনেভার খ্যাতির সুবাতাস ছড়িয়ে যায়। তার প্রাসাদে মোট কক্ষের সংখ্যা ছিল আশি এবং একে তিনি ‘প্রতিদ্বন্দ্বীহীন প্রাসাদ’ বলে ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য, এই একই শব্দবন্ধ তার পিতা দ্বিতীয় সার্গন দুর-শারুকিনের বর্ণনাতেও ব্যবহার করেন। আধুনিক পণ্ডিতদের মতে, ব্যাবিলনের বিখ্যাত ঝুলন্ত উদ্যানের অবস্থান ছিল নিনেভা শহরে, যা নির্মিত হয় সিনাহেরিবের শাসনামলে। পরে এর কৃতিত্ব বাগিয়ে নেয় ব্যাবিলন।

ব্যবিলনের বিখ্যাত ঝুলন্ত উদ্যান; Image Source: Andrei Pervuk.

সিনাহেরিবের প্রয়াণ ঘটলে তার ছেলে এসারহাডন (খ্রিষ্টপূর্ব ৬৮১ অব্দ – খ্রিষ্টপূর্ব ৬৬৯ অব্দ) সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হবার পর পিতার অসমাপ্ত নির্মাণ প্রকল্পগুলোর কাজ হাতে নেন। মিশর অভিযানে এসারহাডন মারা গেলে তার মা জাকুতু নতুন রাজা হিসেবে তার ছেলে আশুরবানিপালের উত্তরাধিকারকে বৈধতা দেন। সম্রাট আশুরবানিপালের শাসনামলে (খ্রিষ্টপূর্ব ৬৬৮ অব্দ – খ্রিষ্টপূর্ব ৬২৭ অব্দ) নিনেভাতে সম্পূর্ণ নতুন এক প্রাসাদ নির্মিত হয়েছিল এবং তিনি মেসোপটেমিয়ার ইতিহাস ও উপকথায় বর্ণিত সমস্ত কাহিনি সংগ্রহ ও তালিকাভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেন। সাহিত্যানুরাগী সম্রাট আশুরবানিপালকে বিবেচনা করা হয় অ্যাসিরীয় সভ্যতার সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে।

সিংহ শিকার করছেন সম্রাট আশুরবানিপাল; Image Source: PRISMA ARCHIVO/Alamy Stock Photo.

প্রাচীন পৃথিবীর বিখ্যাত কতক জিনিসের মাঝে সম্রাট আশুরবানিপালের প্রাচীন রাজকীয় গ্রন্থাগার অন্যতম। জৌলুশপূর্ণ শহর নিনেভার প্রাসাদে নির্মিত এই গ্রন্থাগারের নির্মাণকাল সঠিকভাবে জানা যায় না। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন পুঁথিশালা না হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে এখানেই প্রথম শ্রেণীবিভাগ অনুসারে বই সাজানো শুরু হয়। বিদ্যার প্রতি বিশেষ অনুরাগ ছিল আশুরবানিপালের। তিনি প্রাচীন সুমেরীয় এবং আক্কাদীয় ভাষায় লিখতে পারতেন। রাজত্বকালের পুরোটা জুড়েই গ্রন্থাগারে সাহিত্যকর্মের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি করে গেছেন, সমৃদ্ধ করেছেন নিজস্ব সংগ্রহশালা।

আশুরবানিপালের রাজকীয় গ্রন্থাগার; Image Source: Classic Image/Alamy Stock Photo.

তখনকার যুগে লেখার জন্য কোনো কাগজ-কলমের ব্যবস্থা ছিল না। তাই বিভিন্ন জিনিস লিখে রাখা হতো চারকোণা বিশিষ্ট মাটির ফলক বা ট্যাবলেটে। পৃথিবীর প্রাচীনতম মহাকাব্য গিলগামেশ, ব্যবিলনীয় সৃষ্টিতত্ত্ব, সুমেরীয় মহাপ্লাবনের কাহিনিগুলো উদ্ধার করা হয়েছে এই ট্যাবলেট থেকেই। তার গ্রন্থাগারে চিকিৎসাবিজ্ঞান, ব্যাকরণ, উপকথা, ইতিহাস, জ্যোতির্বিদ্যা এবং ধর্মীয় গ্রন্থের উপর বিভিন্ন রকমের নথি সংগ্রহ করা ছিল। রাজকীয় প্রাসাদের দক্ষিণ-পশ্চিম এবং উত্তর অংশের দ্বিতীয় তলায় এই পুঁথিশালার অস্তিত্ব ছিল বলে প্রমাণ মেলে। গ্রন্থাগার দেখভালের জন্য আলাদা লোকও নিয়োগ দেওয়া হতো। আজকের যুগে গ্রন্থাগারে বইয়ের যে সুবিন্যস্ত তালিকা ও সূচি পাওয়া যায়, এর উদ্ভাবক মূলত আশুরবানিপাল।

নিনেভার ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রাপ্ত মাটির ট্যাবলেট; Image Source: Lanmas/Alamy Stock Photo.

খ্রিষ্টপূর্ব ৬৩০ অব্দের দিকে আশুরবানিপালের প্রয়াণের পর শুরু হয় সাম্রাজ্য দখলের পায়তারা। তার পুত্রগণ সিংহাসনের লোভে লিপ্ত হন সংঘর্ষে। আয়তনে বেশ বৃহৎ হওয়ায় পুরো অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্যের ভারসাম্য টিকিয়ে রাখাও হয়ে পড়ে দুষ্কর। কিছু অঞ্চল অ্যাসিরীয় শাসনের শিকল থেকে নিজেদের মুক্ত করতে চাচ্ছিল। এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে তাদের কাছেও এসে যায় সুবর্ণ সুযোগ। খ্রিষ্টপূর্ব ৬২৫ অব্দের দিকে বেশ জোরেশোরে শুরু হয়েছিল পারসিক, ব্যাবিলনীয়, মেডিস এবং সিথিয়ানদের সামরিক আগ্রাসন। নব্য-অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্যও আভ্যন্তরীণ দুর্বলতায় ভেতর থেকে ক্রমে ক্রমে ভেঙে পড়ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ৬১২ অব্দের দিকে শত্রুরা নিনেভা শহরকে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়ে নিজেদের মধ্যে অঞ্চলটি ভাগ করে নেয়।

শিল্পীর তুলিতে নিনেভার পতন; Image Source: Wikimedia Commons.

পরবর্তীতে শহরটিকে আর কখনোই রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়নি। একজন খ্রিস্টান বিশপ এখানে আস্তানা গেড়ে গির্জা নির্মাণ করেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। খ্রিস্টপূর্ব ৬১২ অব্দে পরিত্যক্ত হবার আগপর্যন্ত অন্তত ৫০ বছর ধরে এটি ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শহর। ধীরে ধীরে এলাকাটি জনশূন্য হয়ে এর ধ্বংসাবশেষ মাটির নিচে চিরতরে সমাহিত হয়

This is a Bangla article about ancient Nineveh city.

References:

Nineveh: The History and Legacy of the Ancient Assyrian Capital, Charles River,
Create Space Independent Publishing Platform (January 19, 2016).

The Assyrians: The History of the Most Prominent Empire of the Ancient Near East, Charles River, Create Space Independent Publishing Platform (September 18, 2014)

Related Articles