ইংল্যাণ্ডের রাজধানী লণ্ডনের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বিশাল বাজারের ঠিক উত্তরদিকে যে বিশাল কলোনী গড়ে উঠেছে, ঠিক তার দক্ষিণের বড় বাড়িটায় বাস করতেন রিচার্ড হেডেলসন নামক এক ভদ্রলোক। পেশায় একজন গ্রন্থাগার হেডেলসন প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রাতঃভ্রমণে বের হন। নিজের পোষা কুকুরের সাথে বেশ কিছুক্ষণ পার্কে হাঁটাহাঁটি করেন। টেমস নদীর তীরে বুক ভরে শ্বাস নেন। তারপর বাড়ি ফিরে অভ্যাসমতো নিজের ডাকবাক্সে জমে থাকা চিঠিগুলো বাছাই করেন এবং স্ত্রীর সাথে নাস্তা করেন। কাজে বের হওয়ার পূর্বে কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে একটি সুন্দর দিনের শুভ সূচনা করেন।
একদম সাধারণ জীবনযাপন করা শান্তিপ্রিয় হেডেলসনকে তার প্রতিবেশীরাও বেশ পছন্দ করে। কলোনিতে কেউ বিপদে পড়লে সবার আগে ছুটে যেতেন হেডেলসন। এমন নির্ঝঞ্ঝাট মানুষের কোনো শত্রু থাকতে পারে একথা কেউ স্বপ্নেও বিশ্বাস করবে না। কিন্তু একদিন এক অপ্রত্যাশিত ঘটনায় এক অজানা শত্রুর থাবায় হেডেলসনের সাজানো জীবন ভেঙে তছনছ হয়ে গেলো। সেদিন প্রতিদিনের অভ্যাসমতো হেডেলসন খাবার টেবিলে বসে জমে থাকা চিঠিগুলো বাছাই করছিলেন। ঠিক তখন তিনি এক অদ্ভুত খাম হাতে পেলেন। বেশ হালকা অনুভূত হওয়ায় তিনি খামটি খুলে পরীক্ষা করতে চাইলেন। কিন্তু তাতেই বিপদ ঘটলো। ছেঁড়া খামের খোলা মুখ থেকে ঝরে পড়লো একরাশ সাদা পাউডার। সেটি পুরো খাবার টেবিলে ছড়িয়ে পড়লো। কোনো দুষ্টু কিশোরের তামাশা ভেবে সেদিন হেডেলসন ব্যাপারটি হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি জানতেন না, সে খামের পাউডারে লুকিয়ে ছিল প্রাণঘাতী অ্যানথ্রাক্স জীবাণু।
অপারেশন চেরি ব্লোজম এট নাইট
আমরা অনেকেই চিঠির খামে অ্যানথ্রাক্স ছড়ানোর গল্প শুনেছি। যুদ্ধকালীন সময়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে অনেক পক্ষ বিভিন্ন জীবাণুকে পাউডার আকারে খামের ভেতর সিলগালা করে এক অভিনব উপারে শত্রুদের ঘায়েল করতো। এধরনের ঘৃণ্য অস্ত্রকে বিজ্ঞানের ভাষায় Biological Weapon বা ‘জৈব অস্ত্র’ বলা হয়ে থাকে। উপরের গল্পটি কাল্পনিক হলেও যুদ্ধের ইতিহাসে এমন অনেক ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যায়, যেখানে জৈব অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিলো। এমনকি বাদ যায়নি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুদ্ধবাজ জাপানিরা বিষাক্ত জীবাণুর সাহায্যে ঘায়েল করতে চেয়েছিল মিত্রশক্তিকে। তাদের এই পুরো পরিকল্পনার নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন চেরি ব্লোজম এট নাইট’।
১৯৪৫ সালে যুদ্ধ যখন একদম শেষের দিকে, তখন জাপানিরা মরিয়া হয়ে এই পরিকল্পনা হাতে নেয়। জৈব অস্ত্র তৈরির ঘৃণ্য দায়িত্ব দেয়া হয় জাপান সেনাবাহিনীর ইউনিট ৭৩১-কে। বিশ্বযুদ্ধ শুরুর সময়ে জাপানিরা যুক্তরাষ্ট্রকে পার্ল হারবারের দুঃস্বপ্ন উপহার দিয়েছিলো। এবারও তারা সিদ্ধান্ত নিলো যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে আঘাত হানতে হবে। তাদের এবারের লক্ষ্যস্থল ছিল যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া অঞ্চল।
একদিকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা ম্যানহ্যাটন প্রজেক্টের মাধ্যমে পারমাণবিক বোমার আঘাতে শত্রু ঘায়েলের পরিকল্পনা করছিলো, ঠিক তখন প্রশান্ত মহাসাগর বিধৌত জাপানে চলছিলো জীবাণু অস্ত্র তৈরির মহড়া। কিন্তু সময়ের দৌড়ে জাপানীরা যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের নিকট পরাজিত হয়েছিলো। তাই এই বহুল আলোচিত অপারেশন চেরি ব্লোজম কখনোই সংঘটিত হয়নি। কিন্তু ইতিহাসবিদগণ ধারণা করেন, যদি জাপানিরা এই অপারেশনটি সম্পন্ন করতে পারতো, তাহলে হয়তো পুরো পৃথিবীর ইতিহাস বদলে যেত। এমনকি আজ যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জাপানী সাম্রাজ্যবাদের ঝাণ্ডাও উড়তে পারতো!
পূর্বকথা
যেদিন জাপানিরা সর্বপ্রথম পার্ল হারবার আক্রমণ করেছিলো, ঠিক সেদিন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দেয়ার পরিকল্পনা শুরু হয়েছিলো। আর তাদের পুরো পরিকল্পনার কেন্দ্রে ছিল জৈব অস্ত্র। এমনকি কিছু জীবাণু দ্বারা তৈরিকৃত বিভিন্ন অস্ত্র তারা ব্যবহার করার প্রস্তুতিও নিয়েছিলো। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে অনিবার্য কারণবশত সেগুলো আর প্রয়োগ করা হয়নি। ১৯৪২ সালে বাতান যুদ্ধের কথাই ধরা যাক। সেবার প্রায় ২০০ পাউণ্ড মাছির সাহায্যে জাপান আক্রমণকারী মার্কিন সেনাদের উপর প্লেগের মহামারী ছড়িয়ে দিতে প্রস্তুত ছিল জাপানিরা। কিন্তু এর পূর্বেই জাপানীদের নিকট মার্কিন সেনারা আত্মসমর্পণ করলে তার আর প্রয়োজন হয়নি।
কিন্তু এর দু’বছর পরেই এর সুযোগ পেয়ে যায় তারা। সাইপান যুদ্ধে সেবার জাপানীরা মার্কিনীদের সাথে পেরে উঠছিলো না। তাই সম্রাটের আদেশে যুদ্ধক্ষেত্রে প্লেগবাহী মাছি নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু যাত্রাপথে মার্কিন ডুবোজাহাজের আক্রমণে সেই জাহাজ ডুবে গেলে এবারও জাপানীরা ক্ষান্ত হয়। এই ঘটনার পর জাপানীরা মরিয়া হয়ে যায়। তাই তারা আইও জিমার যুদ্ধে প্রথমেই জৈব অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। সম্রাটের সম্মতি পেলে জাপান সেনাবাহিনীর উপর এই অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ আসে। জাপানী পাইলট শইচি মাতসুমতোর মতে, দুটি গ্লাইডারের সাহায্যে শত্রুর ব্যারাকের উপর প্লেগ জীবাণু ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এবারও জাপানীরা ব্যর্থ হলো। এক অজ্ঞাত কারণে, সে গ্লাইডারগুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। দুটি গ্লাইডার কখনোই তার গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারেনি!
যদি পাঠকরা মনে করেন, জাপানীরা কখনোই জৈব অস্ত্র প্রয়োগ করতে পারেনি, তাহলে কিন্তু ভুল হবে। চীন-জাপানের মধ্যবর্তী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জাপানীরা চীনা সৈনিকদের মাঝে বসন্ত, কলেরা, প্লেগ, অ্যানথ্রাক্সসহ বিভিন্ন ভয়ংকর জীবাণু ছড়িয়ে দিয়েছিলো। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, জাপানীরা জৈব অস্ত্র প্রয়োগে এত উৎসাহী কেন ছিল? এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে এক গবেষণাগারের চার দেয়ালের মাঝে। সেই গবেষণাগারের নাম ‘ইউনিট ৭৩১’।
কসাইখানা ৭৩১
ইউনিট ৭৩১ এর নাম মনে আসলেই বিশ্বযুদ্ধ ফেরত শত আহত সৈনিকের চোখে ভেসে উঠে কসাইখানার দৃশ্য। অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি এবং মেধাবী বিজ্ঞানীর সমন্বয়ে এক অভিশপ্ত গবেষণাগারের নাম ইউনিট ৭৩১। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মানবতাবিরোধী কর্মসূচির মধ্যে এই গবেষণাগারের গণহত্যামূলক পরীক্ষাগুলো প্রথমদিকে স্থান পাবে। জাপানিদের নিকট এই গবেষণাগার যেন পাশবিকতার আঁতুড় ঘর।
এখানে বিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে বিভিন্ন অস্ত্র তৈরি করে সৈনিকদের হাতে তুলে দিতো। এসব অস্ত্রের অধিকাংশই যুদ্ধ আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো বহু আগেই। প্রাথমিকভাবে সাধারণ গবেষণাগার হিসেবে যাত্রা শুরু করে এই ইউনিটটি। কিন্তু যুদ্ধবাজ জাপানীরা প্রতিনিয়ত তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তো। এই যুদ্ধে জয়লাভ করতে হলে দরকার অভিনব কিছু। তাই সম্রাটের আদেশে গবেষণাগারগুলোতে শুরু হয় অস্ত্র আবিষ্কারের যজ্ঞ। ইতিহাসবিদগণ আশঙ্কা করেন, যদি জাপানীরা ইউনিট ৭৩১ এর জৈব অস্ত্রগুলো যুদ্ধের শুরুতে ব্যবহার করতো, তাহলে হয়তো ১৯৪৫ সালের আগে পৃথিবীর সবাই রোগে ভুগে মৃত্যুবরণ করতো।
বিভিন্ন অস্ত্র তৈরির পর তারা যুদ্ধবন্দিদের ‘গিনিপিগ’ হিসেবে ব্যবহার করতো। একেকজন বন্দী সৈনিকের প্রাণকে জীবন্ত ‘ইনকিউবেটর’-এ পরিণত করে পাশবিকতার এক ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলো এই গবেষণাগার। তাই স্বাভাবিকভাবে যখন অপারেশন চেরি ব্লোজম এট নাইটের প্রস্তাবনা পাশ হলো, তখন পুরো অস্ত্র তৈরির দায়ভার এসে পড়লো এই কসাইখানার বিজ্ঞানীদের কাঁধে। তৎকালীন জাপানের হারবিন শহরের পিংফাং জেলায় অবস্থিত ছিল এই গোপন গবেষণাগারটি। ১৯৯৫ সালে নিউইয়র্ক টাইমসে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নিজেকে এই ইউনিটের একজন প্রাক্তন কর্মী হিসেবে পরিচয় প্রদান করে। বহুল আলোচিত সেই সাক্ষাৎকারে সে জানায়,
“আমি তার (একজন বন্দী) বুক থেকে পাকস্থলী পর্যন্ত কেটে উন্মুক্ত করলাম। তার চেহারায় আমি স্পষ্ট বেদনার ছাপ দেখতে পাচ্ছিলাম। তার মুখ দিয়ে জান্তব গোঙানি বেরিয়ে আসছিলো। এটা এতটাই ভয়ংকর ছিল যে এখনও আমার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। অবশ্য কিছুক্ষণ পর সে থেমে গেলো। সবচেয়ে বাজে ব্যাপার হচ্ছে, এই কাজটি আমাদের জীবনভর করতে হয়েছে। তবে সেদিনের কথা বেশি মনে পড়ছে কারণ সেটি আমার প্রথমদিন ছিল।”
এভাবেই তারা বন্দীদের উপর নানা পরীক্ষা চালিয়ে যেত। শরীরে প্লেগ ঢুকিয়ে দিয়ে জীবন্ত অপরাধীকেও তারা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতো।
অপারেশনের নীল নকশা
এর পূর্বে জৈব অস্ত্র প্রয়োগে বারবার ব্যর্থ হবার পরেও ইউনিট ৭৩১-এর তদানীন্তন প্রধান শিরো ইশি কোনো পর্যালোচনা ব্যতিরেকেই অপারেশন চেরি ব্লোজম এট নাইটের চূড়ান্ত পরিকল্পনা তৈরি করেন। এই অপারেশনের মূল লক্ষ্য ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের উপর দীর্ঘমেয়াদি বিরূপ প্রভাব ফেলা। শিরো ইশি চেয়েছিলেন, তার জৈব অস্ত্রের সাহায্যে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে পঙ্গু করে দেবে, যা থেকে মুক্তি লাভ করতে আরো শত বছর লেগে যাবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যখন জার্মানরা পরাজয়ের মুখ দেখছিলো, তখন শিরো ইশি ব্যস্ত ছিলেন ইউনিট ৭৩১-এর গবেষণাগারে।
এই পুরো অপারেশনের জন্য তিনি বেশ কয়েকটি ডুবোজাহাজ এবং দ্রুতগামী যুদ্ধ বিমান বরাদ্দ করেছিলেন। তবে সবচেয়ে অবাক করা তথ্য ছিল, এই অপারেশনে অংশ নেয়া সব সৈনিকের জাপানে ফিরে আসা নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। কারণ, তারা নিজেরাও এই প্লেগ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। আশ্চর্যজনকভাবে জাপান সাম্রাজ্যের বৃহত্তর স্বার্থে সৈনিকরা তা করতে সম্মতি জানায়। জাপান থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের জলপথে পাড়ি দিবে পাঁচটি আই-৪০০ ডুবোজাহাজ এবং প্রতিটি ডুবোজাহাজের বিশেষ কুঠুরিতে তিনটি ‘আইচি এম-৬এ’ সংরক্ষিত থাকবে। জাপানিরা বিমানের পাখাকে বিশেষভাবে সজ্জিত করে তা সাবমেরিনের ভেতর সংরক্ষণ করতে পারতো।
পরীক্ষামূলক অপারেশন
অপারেশনের পূর্বে শিরো ইশি একটি অমানবিক পরীক্ষা করে বসলেন। তিনি জাপানের স্থানীয় জনগণের উপর প্লেগ দ্বারা আক্রান্ত ৫০০ গ্রাম ওজনের ইঁদুর এবং ৩,০০০ মাছি ছেড়ে দেন। সেদিন যেন জাপানিদের উপর বিধাতার অমোঘ অভিশাপ নেমে এসেছিলো। এক প্রত্যক্ষদর্শী সেদিন সম্পর্কে জানান,
“আমার বয়স তখন মাত্র ১৫। আমার সবকিছু পরিষ্কার মনে আছে। আকাশে অনেকগুলো জাপানি বিমান উড়ে গেলো। সেগুলো থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিলো। কয়দিন পরে দেখলাম গ্রামের প্রতিটি স্থানে মরা ইঁদুর পড়ে আছে। গ্রামবাসী অনেকেই জ্বরে ভুগছিলো। শরীরে বেশ বড় বড় ঘা দেখা দিচ্ছিলো এবং অনেকেই ব্যথায় চিৎকার করছিলো। প্রতিদিনই মানুষ মারা যেত। প্রতিদিন কান্নার স্বরে মুখরিত থাকতো গ্রাম। আমার পিতা, মাতাসহ পরিবারের আটজন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। বিধাতার অশেষ কৃপায় আমি সেদিনের সাক্ষী হয়ে এখনও বেঁচে আছি।”
তোশিমি মিজুবুচি তখন ইউনিট ৭৩১ এর প্রশিক্ষক ছিলেন। তার কাছে পুরো অপারেশনের নীল নকশা হস্তান্তর করা হয়েছিলো। অপারেশনের জন্য নতুন সদস্যদের প্রায় ২০ জনকে বাছাই করা হয়েছিলো। ডুবোজাহাজে করে তাদের ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলের সন্নিকটে পৌঁছে দেয়া হবে। সেখান থেকে বিমানে করে তারা ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়েগো উপকূল থেকে আক্রমণ শুরু করবে। শিরো ইশি সেপ্টেম্বরের ২২ তারিখ চূড়ান্ত আক্রমণের দিন ধার্য করেন। ইশিও ওবাতা নামক এই অফিসারকে এই অপারেশনের অধিনায়ক করা হয়। তাকে সেদিনের কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অসম্মতি জানান। তার ভাষ্যমতে, “এটা এমন কোনো স্মৃতি নয়, যা পুনরায় মনে করতে পছন্দ করবে কেউ।” সেই অপারেশনের আরেক যোদ্ধা ছিলেন তোদাও ইশিমারো। বর্তমানে ৭৩ বছর বয়সী এই প্রাক্তন সৈনিক ওবাতার মতো বললেন, “আমি ইউনিট ৭৩১-এর কোনো স্মৃতি মনে করতে চাইছি না। যুদ্ধ শেষ হয়েছে ৫০ বছরেরও বেশি সময় হলো। কী দরকার খামাখা সেদিনের কথা মনে করার?”
সকল প্রস্তুতি নেয়া শেষ হলেও, এই অপারেশন আর শুরু হয়নি। কারণ, এর পূর্বেই যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়। অনেকেই এই ঘটনাকে আশীর্বাদ হিসেবে দেখছেন। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে একবার প্লেগ ছড়িয়ে পড়লে সেটা হয়তো পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তো, যার ফল ভোগ করতে হতো বর্তমান প্রজন্মকে। এভাবে যুদ্ধকালীন সময়ে পরাশক্তি রাষ্ট্রগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে জয়লাভের অন্ধ নেশায় মত্ত ছিল, যার জন্য তার নিজেদের মানবতাবোধকেও বিসর্জন দিয়েছিলো।
ফিচার ইমেজ: Pinterest