ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপগুলোর মাঝে সবচেয়ে বড় দ্বীপ হলো সিসিলি। এই সিসিলিরই এক ঐতিহাসিক শহরের নাম সিরাকিউস। গ্রীক ইতিহাস, ঐতিহ্য, অ্যাম্ফিথিয়েটার যেমন এ শহরের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি বিখ্যাত গ্রীক গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ, পদার্থবিজ্ঞানী, উদ্ভাবক ও প্রকৌশলী আর্কিমিডিসের জন্মস্থল হিসেবেও শহরটি সমধিক পরিচিত।
আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগেকার কথা। খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে সিরাকিউস শাসন করছিলেন এক স্বৈরশাসক, নাম তার ডায়োনাইসিয়াস। তার বাবার নামও একই থাকায় লোকে তাকে দ্বিতীয় ডায়োনাইসিয়াস নামে চিনতো।
এই শাসকের রাজসভার এক সভাসদের নাম ছিলো ডেমোক্লিস। ডেমোক্লিস ছিলো বেশ চাটুকার টাইপের মানুষ। সবসময় তেল দিয়ে রাজার মন জয়ে সচেষ্ট থাকতো সে। একদিনের কথা, সেদিনও অন্যান্য দিনের মতো রাজার মনোরঞ্জনে ব্যস্ত ছিলো ডেমোক্লিস। রাজার প্রশংসা করতে করতে একপর্যায়ে সে বলে বসে যে, এমন ক্ষমতা, ঐশ্বর্য, প্রাচুর্যের মাঝে বাস করতে পেরে রাজা আসলেই অনেক সৌভাগ্যবান।
ডেমোক্লিস যে কোন ধরনের মানুষ রাজা তা সবসময়ই বুঝতেন, কিছু বলতেন না। কিন্তু সেদিন যেন আর সহ্য হলো না তার। তবে বিগড়ে যাওয়া মেজাজকে ডেমোক্লিসের সামনে প্রকাশ করলেন না তিনি। হাসিমুখে বরঞ্চ অদ্ভুত এক প্রস্তাব দিয়ে বসলেন তিনি, বললেন- “আসো, আমরা তাহলে আমাদের জায়গা অদল-বদল করি। তুমি একবার সিংহাসনে বসে ক্ষমতার প্রকৃত স্বাদটা উপভোগ করো!”
বোকা ডেমোক্লিস কিছু না বুঝে সাথে সাথেই রাজার এ প্রস্তাবটি সানন্দে লুফে নিলো। বিপুল ঐশ্বর্য-পরিবেষ্টিত সিংহাসনে গিয়ে অবশেষে বসলো সভাসদ ডেমোক্লিস। তবে ডায়োনাইসিয়াস আরেকটি কাজ করলেন। সিংহাসনের ঠিক উপরে তিনি ঘোড়ার লেজের একটিমাত্র চুল দিয়ে ঝুলিয়ে দিলেন একটি ধারালো তলোয়ার, যার তীক্ষ্মাগ্রটি সরাসরি সিংহাসনের দিকেই মুখ করে ছিলো।
সামান্য কিছু সময় সেখানে বসেই প্রাণভয়ে দরদর করে ঘামতে শুরু করলো ডেমোক্লিস। হাতজোড় করে রাজার কাছে মাফ চাইলো সে, মুক্তি পেতে চাইলো সিংহাসনে প্রাণপাখিটাকে হাতে ধরে রাখার মতো ভয়াবহ অনুভূতির কবল থেকে। শেষ পর্যন্ত রাজা তাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন। আর ডেমোক্লিসও বুঝেছিলো যে- ‘বিশাল ঐশ্বর্য ও ক্ষমতা একইসাথে অনেক বিপদও টেনে আনে’!
আজকে লেখার শিরোনামে ‘ডেমোক্লিস’ নামে এক ব্যক্তির কথা ছিলো দেখেই তার ইতিহাসটা প্রথমে পাঠকদের জানিয়ে নিলাম। কিন্তু ব্যক্তি ডেমোক্লিসের সাথে অপারেশন ডেমোক্লিসের কী সম্পর্ক তা নাহয় পুরো লেখাটা পড়ার পরই খোঁজার চেষ্টা করলেন!
দুনিয়ার অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত নিয়ে ঘাটাঘাটি করে অথচ ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের নাম শোনে নি, এমন মানুষ সম্ভবত পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তাদের সম্পর্কে ঘাটাঘাটি করতে গেলে ভয়াবহ এবং অবশ্যই মারাত্মক কৌশলী সব অভিযানের খবরই পায় সবাই। আমাদের আজকের আলোচ্য ‘অপারেশন ডেমোক্লিস’ও ছিলো মোসাদের তেমনি আরেকটি ‘গোপন অভিযান’।
গত শতাব্দীর ষাটের দশকের শুরুর দিককার কথা। মিশরের পক্ষ হয়ে তখন কাজ করছিলো বেশ কয়েকজন জার্মান বিজ্ঞানী। একসময় হিটলারের নাৎসি জার্মানিতে রকেট বানানোর প্রজেক্টে কাজ করা সেসব জার্মান বিজ্ঞানী মিশরেও সেই একই কাজ করছিলেন ফ্যাক্টরি ৩৩৩ নামক এক মিলিটারি সাইটে। সেই ফ্যাক্টরিতে কাজ করা অটো জক্লিক নামক এক অস্ট্রিয়ান বিজ্ঞানীর দেয়া তথ্যমতে, তারা তেজষ্ক্রিয় বর্জ্য পদার্থবাহী রকেট তৈরি নিয়ে কাজ করছিলেন। আর এই প্রজেক্টের সাথে জড়িত জার্মান বিজ্ঞানীদের নাম-নিশানা দুনিয়া থেকে চিরতরে মুছে দিতে ১৯৬২ সালে গোপন যে অভিযানে নেমেছিলো মোসাদ, ইতিহাসে সেটিই ‘অপারেশন ডেমোক্লিস’ নামে পরিচিত।
মিশরের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট গামাল আব্দেল নাসের হুসেইন তখন ক্ষমতায় আসীন। দেশটির সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে রকেট কেনা জরুরি হয়ে পড়েছিলো। কিন্তু স্নায়ু যুদ্ধের নীতির সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে যায় বলে সোভিয়েত ইউনিয়ন কিংবা পাশ্চাত্য দেশগুলো থেকে রকেট কেনা সম্ভব হচ্ছিলো না দেশটির পক্ষে।
সামরিক প্রযুক্তিতে পার্শ্ববর্তী শত্রু ইসরায়েলের সমকক্ষ হতে তাই দেশে তৈরি রকেটের উপর নির্ভর করা ছাড়া অন্য কোনো অপশন ছিলো না মিশরের হাতে। কিন্তু তৎকালে মধ্যপ্রাচ্যে রকেট সম্পর্কে জানাশোনা লোক এবং একই সাথে দরকারি কাঁচামাল ছিলো বেশ দুষ্প্রাপ্য। এজন্য দক্ষ ব্যক্তি ও দরকারি কাঁচামালের জন্য মিশর নজর দেয় ইউরোপীয় দেশগুলোর দিকে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কাছে অস্ত্র বিক্রি তখন আইনত নিষিদ্ধ ছিলো। তবুও হাসান সাইদ কামিল নামক এক মিশরীয়-সুইস অস্ত্র সরবরাহকারীর সহায়তায় পশ্চিম জার্মানি ও সুইজারল্যান্ড থেকে জনবল ও কাঁচামাল যোগাড় করতে সক্ষম হয় মিশর। গোপন সেই প্রজেক্টে যোগ দেয়া জার্মান বিজ্ঞানীদের অনেকেই এককালে নাৎসি জার্মানির অধীনে ভি-২ রকেট নির্মাণে কাজ করেছিলো।
দরকারি জনবল আর কাঁচামাল সংগ্রহের পর আর বসে থাকে নি মিশর সরকার। গোপনে গোপনে চলতে থাকে তাদের রকেট তৈরির কাজকারবার। অবশেষে ১৯৬২ সালের জুলাই মাসে যখন তারা পরীক্ষামূলকভাবে একটি রকেট সফলতার সাথে উৎক্ষেপণে সক্ষম হয়, তখনই নড়েচড়ে বসে গোটা বিশ্ব। পরবর্তীতে রাজধানী কায়রোর সড়কে নতুন ধরনের দুটো রকেট নিয়ে করা তাদের সামরিক মহড়া চমকে দেয় বিশ্ব মোড়লদের।
মিশরের এ রকেট বানানোর পেছনে বড় অবদান ছিলো জার্মান বিজ্ঞানীদের। ফলস্বরুপ পশ্চিম জার্মানির সাথে ইসরায়েলের সম্পর্ক নিম্নমুখী হতে শুরু করে। ওদিকে সেই প্রজেক্টেরই এক অস্ট্রিয়ান বিজ্ঞানী ইসরায়েল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয় অত্যন্ত গোপন কিছু তথ্য। তিনি জানান যে, রকেটগুলোতে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ব্যবহারের চিন্তা আছে মিশরের। পাশাপাশি নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড নিয়েও কাজ করে যাচ্ছে তারা। এমন খবর শুনে যেন ইসরায়েলের কর্তাব্যক্তিদের রাতের ঘুম হারাম হবার দশা হয়।
আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে আরো ভয়াবহ খবর আসে মোসাদের কাছে। জার্মান বিজ্ঞানী ওলফগ্যাং পাইলজের লেখা একটি ডকুমেন্ট কোনোভাবে সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিলো তারা। সেটা পড়ে জানা যায় যে, মিশর নয়শ’র মতো রকেট বানাচ্ছে। সেসব রকেটে ব্যবহারের জন্য কেমিক্যাল, বায়োলজিক্যাল ও গ্যাসে পূর্ণ ওয়ারহেড নির্মাণের হালকা আভাসও পাওয়া গিয়েছিলো। ইসরায়েলের জনগণের সমর্থন লাভের জন্য মোসাদের তৎকালীন প্রধান ইজার হারেল তাই অনেক রঙচঙ মাখিয়ে গল্প শোনালেন তাদের, জানালেন ইসরায়েলকে ধ্বংস করার জন্য জার্মান বিজ্ঞানীরা এখন মিশরে ভয়াবহ সব অস্ত্র নির্মাণ করছে। কৌশল কাজে দিলো দিলো, জনতার সমর্থন পুরোপুরি চলে গেলো মোসাদের পক্ষে।
এরপরই মাঠে নেমে গেলো মোসাদের সদস্যরা, লক্ষ্য জার্মান বিজ্ঞানীদের একে একে শেষ করে মিশরের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির স্বপ্নকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দেয়া। এজন্য তারা অপহরণ ও পার্সেল বোমকে বেছে নিলো। এটি বিশেষভাবে বানানো এক ধরনের বোম যা ডাক বিভাগের মাধ্যমে কারো কাছে পাঠানো হয় এবং প্রাপক যখন পার্সেলটি খোলে, তখনই বোমটি বিষ্ফোরিত হয়। লেটার বোম, মেইল বোম, প্যাকেজ বোম, নোট বোম, মেসেজ বোম, গিফট বোম, প্রেজেন্ট বোম, ডেলিভারি বোম, সারপ্রাইজ বোম, পোস্টাল বোম, পোস্ট বোম ইত্যাদি নানা নামে এটি পরিচিত।
মোসাদের সদস্যরা সেসব বিজ্ঞানীদের পরিবারের সদস্যদের কাছে যেত। হুমকি দিয়ে জানাতো যে, সেই বিজ্ঞানীরা যেন শীঘ্রই ইউরোপে ফিরে যায়, নাহলে…। ভবিষ্যৎ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী য়ীতঝাক শামিরের নেতৃত্বে ছোট একটি দল পাঠিয়েছিলো মোসাদ। তবে জনবল বৃদ্ধির তাগিদে ইসরায়েলি সিকিউরিটি এজেন্সি ‘শিন বেত’-এর সদস্যরাও এতে অংশ নিয়েছিলো। সাবেক নাৎসি গোয়েন্দা অটো স্কোরজেনি মোসাদের সাথে স্বদেশীদের বিরুদ্ধে সেই গোপন অভিযানগুলোতে অংশ নেয়।
গোপন সেসব অভিযানে জার্মান বিজ্ঞানীদের বিরুদ্ধে মোসাদের অভিযানের কিছু উদাহরণ তুলে দিচ্ছি এখন।
- ১৯৬২ সালের ২৭ নভেম্বর রকেট বিজ্ঞানী ওলফগ্যাং পাইলজের অফিসে একটি পার্সেল বোম পাঠানো হয়েছিলো, যার বিষ্ফোরণে আহত হয় তার সহকারী।
- হেলিওপোলিস রকেট ফ্যাক্টরিতে পাঠানো পার্সেল বোমের বিষ্ফোরণে মারা যায় পাঁচজন মিশরীয় কর্মী।
- মিশরে ইলেকট্রনিক্স নিয়ে কাজ করছিলেন পশ্চিম জার্মানির এক প্রফেসর। দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির শহর লোরাখে তার উপর গুলি চালায় মোসাদের এক এজেন্ট। কিন্তু গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে গাড়িতে করে পালিয়ে যায় সেই এজেন্ট।
- মিশরে মিলিটারি হার্ডওয়্যার সরবরাহের জন্য কাজ করছিলো মিউনিখভিত্তিক এক প্রতিষ্ঠান, যার প্রধান ছিলেন ৪৯ বছর বয়সী হেইঞ্জ ক্রুগ। ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি হঠাৎ করেই একেবারে হাওয়া হয়ে যান। আমেরিকান সাংবাদিক ড্যান রাভিভ এবং ইসরায়েলি সাংবাদিক ইয়োসি মেলম্যানের মতে অটো স্কোরজেনি খুন করেছিলো ক্রুগকে।
- হ্যান্স ক্লেইনওয়েখটার নামক আরেক রকেট বিজ্ঞানীকে ১৯৬৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে টার্গেট করেছিলো মোসাদ, যিনি এককালে ভি-২ প্রজেক্টে কাজ করেছিলেন। কিন্তু মিশনের সময় অস্ত্রে গন্ডগোল দেখা দেয়ায় বেঁচে যান হ্যান্স।
ফ্যাক্টরি ৩৩৩-এ কাজ করতেন পশ্চিম জার্মানির এক ইলেকট্রিক গাইডেন্স এক্সপার্ট, নাম তার পল-জেন্স গোয়ের্ক। পলের মেয়ে হেইডি গোয়ের্ককে হুমকি দিয়েছিলো মোসাদের দুই এজেন্ট জোসেফ বেন-গাল এবং অটো জক্লিক। তারা জানায় যে, পল যদি শীঘ্রই জার্মানি ফিরে না যায়, তাহলে তার পরিবারের কপালে শনি আছে। কিন্তু শনি আসলে লেখা ছিলো দুই এজেন্টের কপালেই। হেইডিকে জোর করা এবং বিদেশী রাষ্ট্রে অবৈধ অপারেশন চালানোর অভিযোগে তাদের দুজনকে সুইজারল্যান্ডে গ্রেফতার করা হয়।
এরপর সুইজারল্যান্ডের গোয়েন্দারা তদন্ত শুরু করলে থলের বেড়াল বেরিয়ে আসে। জানা যায় যে, ক্রুগের অপহরণ ও হ্যান্সের হত্যাচেষ্টার সাথে জড়িত ছিলো এই দুজনই। এভাবে হঠাৎ করে নিজেদের গোপন অভিযানের কথা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ক্ষুণ্ণ হয় ইসরায়েলের ভাবমূর্তি, তবে তারা প্রকাশ্য দিবালোকে এ সংক্রান্ত সকল অভিযোগ করেছিলো!
জার্মানির সাথে সম্পর্ক খারাপ হবে বিধায় মোসাদকে থামার নির্দেশ দেন ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন-গুরিয়ন। মোসাদের তৎকালীন প্রধান ইজার হারেলকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। তার উত্তরসূরি মেইর আমিত ঘোষণা দেন যে, হারেল আসলে মিশরের রকেট প্রোগ্রাম নিয়ে একটু বেশিই কল্পনা করে ফেলাতেই এমন গন্ডগোলটা বেধেছিলো! ওদিকে হারেল পদত্যাগ করায় চাকরিতে ইস্তফা দেন য়ীতঝাক শামিরসহ আরো কয়েকজন। এর তিন মাস পর পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী নিজেও।
ক্রমাগত মৃত্যুভয় আর কূটনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করে অবশেষে ১৯৬৩ সালের শেষ নাগাদ বিজ্ঞানীরা সবাই নিজ নিজ দেশে ফিরে যান। ১৯৬৭ সালের দিকে এসে মিশরের রকেট প্রজেক্ট একপ্রকার স্থবিরই হয়ে যায়। পরবর্তীতে রকেটের জন্য মিশর সোভিয়েত ইউনিয়নেরই দ্বারস্থ হয়েছিলো। দেশটি থেকে তারা তখন স্কাড-বি রকেট কিনেছিলো।
তথ্যসূত্র
১) en.wikipedia.org/wiki/Operation_Damocles
২) en.wikipedia.org/wiki/Otto_Skorzeny
৩) en.wikipedia.org/wiki/Letter_bomb
৪) newsweek.com/killing-killers-69081
৫) en.wikipedia.org/wiki/V-2_rocket