
পিংপং ডিপ্লোম্যাসি কথাটি শুনতে খানিকটা হালকা গোছেরই মনে হতে পারে, কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পাঠে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় এটি। সামান্য পিংপং বা টেবিল টেনিস খেলাকে কেন্দ্র করে যেভাবে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দুটি রাষ্ট্র, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার দীর্ঘ ২০ বছরের বিবাদ মিটে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা আজও বিশ্ববাসীকে বিস্মিত করে তোলে।
পিংপং ডিপ্লোম্যাসি কী?
১৯৭১ সালে চীনের চেয়ারম্যান মাও সে তুঙয়ের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে চীন সফর করে যুক্তরাষ্ট্র পিংপং দল। পরের বছর ফিরতি আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র যায় চীনা পিংপং দল। এর মাধ্যমে অবসান ঘটে ২০ বছর ধরে চলা যুক্তরাষ্ট্র-চীন কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের, এবং নতুন করে দুই রাষ্ট্রের মাঝে বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়। পিংপং খেলাকে কেন্দ্র করে দুই রাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়েছিল বলে একে ‘পিংপং ডিপ্লোম্যাসি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।

পিংপং ডিপ্লোম্যাসির প্রভাব
- ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল চীনের উপর ২০ বছর ধরে থাকা ভ্রমণ ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় যুক্তরাষ্ট্র।
- ১৯৭১ সালের অক্টোবরে ভোটের মাধ্যমে জাতিসংঘে বৈধ পদ লাভ করে চীন। পাশাপাশি তারা খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই অন্যান্য দেশগুলোর সাথেও কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে সক্ষম হয়।
- ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের চীন সফর সমাপ্ত হয় ‘সাংহাই কম্যুনিক’ এর মাধ্যমে। এটি হলো একটি দালিলিক চুক্তিতে স্বাক্ষর, যেখানে ভবিষ্যৎ যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের ব্যাপারে দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছিল। এই চুক্তিতে সংশ্লিষ্ট দুই দেশের সার্বভৌমত্ব ও আভ্যন্তরীণ বিষয়াদির প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা, জনগণের মধ্যে যোগাযোগের পথ সুগম এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে সর্বোচ্চ লাভজনক পন্থা বেছে নেয়ার ব্যাপারে উল্লেখ ছিল।
- ১৯৭৩ সালের মে মাসে উভয় দেশের রাজধানীতে ‘লিয়াজোঁ অফিস’ স্থাপনের মাধ্যমে পারস্পরিক রাজনৈতিক আলোচনার পথ সুগম করা হয়।
- ১৯৭৯ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে পিপলস রিপাবলিক অব চায়নাকে স্বীকৃতি দেয়।
- সর্বোপরি, চীনের সমর্থন সোভিয়েত ইউনিয়নের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে হেলে পড়ায় সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র হওয়ার দৌড়ে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনেও যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক একটি বিরাট ভূমিকা রেখেছিল।
প্রেক্ষাপট
ঘটনার সূত্রপাত সেই ১৯৪৯ সালে, যখন মাও সে তুঙ চীনে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটালেন। পুঁজিবাদে গণতন্ত্রের ধারক ও বাহক যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না, তা তো বলাই বাহুল্য। এর সাথে যোগ হয়েছিল স্নায়ুযুদ্ধকে কেন্দ্র করে ছড়ানো বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা, চীনের উপর যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আর কূটনৈতিক নীরবতা। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক একদম তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীন কোরিয়া যুদ্ধের ময়দানে পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছিল বটে, কিন্তু তাদের মধ্যকার সম্পর্কের এতটাই অবনতি ঘটেছিল যে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিনিধি চীনের মাটিতে পা রাখেনি।
তবে সময়ের সাথে সাথে সম্পর্কের এই দূরত্ব ঘুচে যেতে থাকে। ১৯৭১ সাল নাগাদ বিশ্ব রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তন আসে। ততদিনে চীনের সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্পর্কে চিড় ধরেছে। সীমান্তে বেশ কয়েকটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ফলস্বরূপ দুই সমাজতান্ত্রিক দেশ ক্রমশই একে অপরের শত্রুতে পরিণত হচ্ছে। এমন এক অবস্থায় চীনের চেয়ারম্যান মাও ভাবতে শুরু করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নতুন করে সম্পর্ক স্থাপন করলে বোধহয় রাশিয়ানদেরকে উচিত শিক্ষা দেয়া যাবে।

অপরদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের মনেও অভিন্ন চিন্তা খেলা করছিল। তিনিও তার প্রশাসনে চীনের সাথে সম্পর্ক জোড়া লাগানোকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়নকে এক হাত নিতে চীনের সাথে জোট গঠনের মতো ভালো উপায় যে আর কিছুই হতে পারে না! ১৯৬৭ সালে তো তিনি একবার লিখেছিলেনও, “আমাদের পক্ষে চিরদিন চীনকে রাষ্ট্র-পরিবারের বাইরে রাখা একেবারেই সম্ভব নয়।”
ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন দুই তরফ থেকেই কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন করে শুরুর তাগিদ অনুভব করা যাচ্ছিল। দুই দেশের কূটনীতিকরা গোপনে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করতে শুরু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু চূড়ান্ত রকমের কোনো ‘মাইলফলক সৃষ্টিকারী’ ঘটনা ঘটছিল না, যার মাধ্যমে রাতারাতি সকল ধোঁয়াশা, সকল জটিলতা দূর হয়ে যাবে।
সমাধান যখন পিংপং
অবশেষে রীতিমতো অনাকাঙ্ক্ষিতভাবেই সেই ‘ব্রেক-থ্রু’র আগমন ঘটলো পিংপং খেলোয়াড়দের একটি সৌজন্য সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে। তখন জাপানের নাগোয়াতে ১৯৭১ বিশ্ব টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ চলছে। হঠাৎ একদিন চীনা জাতীয় দলকে বহনকারী শাটল বাসে উঠে বসেন ১৯ বছর বয়সী মার্কিন খেলোয়াড় গ্লেন কোয়ান। ঝাঁকড়া চুলের এই তরুণের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাতে থাকেন চীনের লাল জার্সিধারী খেলোয়াড়রা। তবে ব্যতিক্রম কেবল ঝুয়াং সে তুঙ। অন্যদের মতো ভড়কে না গিয়ে তিনি সহাস্যে এগিয়ে যান কোয়ানের দিকে। দোভাষীর মাধ্যমে তার সাথে কথাও বলেন, এবং উপহারস্বরূপ তাকে চীনের হুয়াংশান পর্বতমালার একটি সিল্ক-স্ক্রিন ছবিও দেন।
কোয়ান ছিলেন একজন আত্মস্বীকৃত ভবঘুরে। কিন্তু প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড় তাকে যে সম্মান দেখিয়েছিলেন, তা তিনি ভোলেননি। তাই পরবর্তী দিন তিনি আবারও ফিরে আসেন, আর ঝুয়াংকে একটি টি-শার্ট উপহার দেন। টি-শার্টের গায়ে অঙ্কিত ছিল শান্তির প্রতীক, পাশে বিটলসের ‘লেট ইট বি’ গানের কথা।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের দুই খেলোয়াড়ের মধ্যকার এই পারস্পরিক হৃদ্যতার ছবি ক্যামেরায় বন্দি করে ফেলেন আলোকচিত্রীরা। এবং আজকের দিনে আমরা যাকে বলি ভাইরাল হওয়া, কোয়ান ও ঝুয়াংয়ের ছবি ঠিক সেভাবেই ভাইরাল হয়ে যায়। প্রতিযোগিতার আর সবকিছুকে ছাপিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন দলের মধ্যকার এমন অভাবনীয় ভালো সম্পর্কই হয়ে ওঠে সকল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
চীন যখন এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এসেছিল, আগে থেকেই তাদের খেলোয়াড়দেরকে সাবধান করে দেয়া হয়েছিল যেন তারা কোনো মার্কিনীর সাথে কথা পর্যন্ত না বলেন। সেখানে ঝুয়াং কি না এক মার্কিনীর সাথে গলায় গলায় বন্ধুত্ব পাতিয়ে ফেলেছেন! স্বভাবতই দলীয় আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে শাস্তি হওয়ার কথা তার। কিন্তু তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন কে জানেন? স্বয়ং চেয়ারম্যান মাও!
মাও যখন কোয়ান ও ঝুয়াংয়ের মধ্যকার পুরস্কার আদান-প্রদানের ব্যাপারে জানতে পারলেন, সাথে সাথেই তিনি বুঝে গেলেন যে, এটি খুবই আশাব্যঞ্জক একটি রাজনৈতিক সম্ভাবনা। তিনি বিবৃতি দিলেন, “ঝুয়াং সে তুঙ কেবল একজন ভালো টেবিল টেনিস খেলোয়াড়ই নন, তিনি দারুণ একজন কূটনীতিকও বটে।“
যুক্তরাষ্ট্র পিংপং দলের চীন সফর
এর কিছুদিন পর, প্রতিযোগিতা শেষে যুক্তরাষ্ট্র দল যখন নাগোয়া ত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছে, চেয়ারম্যান মাও তখন গোটা বিশ্বকে চমকে দিলেন তার একটি বিশেষ ঘোষণার মাধ্যমে। তিনি যুক্তরাষ্ট্র দলকে আমন্ত্রণ জানালেন চীন সফরের, এবং সেই সফরের যাবতীয় খরচ তিনি নিজেই বহন করবেন।
যারপরনাই বিস্মিত যুক্তরাষ্ট্র দল সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে নিজ দূতাবাসে যোগাযোগ করলো। সেখান থেকেও সবুজ সংকেত পাওয়া গেল। কারণ মাওয়ের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের কাছেও এটি ছিল একটি স্বর্ণালী সুযোগ, যা তিনি কিছুতেই হাতছাড়া করতে চাননি। পরবর্তীতে তিনি তার আত্মজীবনীতে অকপটে স্বীকার করেছিলেন, “আমি ঘুণাক্ষরেও চিন্তা করিনি একটি পিংপং দলের রূপে চীনের উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে।”
চীন সফরে যুক্তরাষ্ট্র টেবিল টেনিস দল
যুক্তরাষ্ট্র দলের ঐতিহাসিক চীন সফর শুরু হয় ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল, যখন ১৫ জন আমেরিকান টেবিল টেনিস খেলোয়াড়, টিম অফিসিয়াল ও খেলোয়াড়দের স্ত্রীরা হংকং-চীন সেতু অতিক্রম করেন। যুক্তরাষ্ট্র দলটি ছিল খুবই বিচিত্র। সেখানে একাধারে যেমন ছিলেন গ্লেন কোয়ানের মতো ভবঘুরে, তেমনি ছিলেন এক কলেজের অধ্যাপকও। আবার গায়ানার এক অভিবাসী কিংবা এক জোড়া হাই স্কুল পড়ুয়া কিশোরীও ছিল সেই দলে।
টেবিল টেনিস খেলায় এই খেলোয়াড়দের মধ্যে কেউই তেমন বিখ্যাত ছিলেন না। যুক্তরাষ্ট্র পুরুষ দল ঐ সময় অবস্থান করছিল র্যাংকিংয়ের ২৪ নম্বরে। ফলে কোনো খেলোয়াড়েরই আর্থিক অবস্থা তেমন একটা সুবিধাজনকও ছিল না। অথচ কিছুদিন পর সেই অখ্যাত খেলোয়াড়রাই পরিণত হন পৃথিবীর বুকে ঐ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিকে! একঝাঁক পশ্চিমা সাংবাদিক তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ অনুসরণ করছিলেন। আর কয়েকজন খেলোয়াড়কে তো মার্কিন সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিনগুলো তাদের নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে নিয়োগও দিয়েছিল।

দশদিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্র দল ঘুরে ঘুরে দেখে গুয়ানঝৌ, বেইজিং ও সাংহাইয়ের নয়নাভিরাম সব স্থান। চীনের মহাপ্রাচীর, সামার প্যালেস এবং বিপ্লবী থিমের অপেরা দেখা ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের খেলোয়াড়রা বেশ কিছু প্রদর্শনী পিংপং ম্যাচেও অংশ নেন, যেগুলোর স্লোগান ছিল- “Friendship First and Competition Second”।
স্পষ্টতই চীনের খেলোয়াড়রা এই স্লোগানটিকে হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছিলেন। তাই সিংহভাগ ম্যাচ তারা হেসেখেলে জিতে গেলেও কয়েকটি ম্যাচ যুক্তরাষ্ট্রের খেলোয়াড়দের ছেড়ে দিতেও ভোলেননি!
যুক্তরাষ্ট্র দলটির চীন সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্ব আসে যখন তারা বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে গিয়ে পৌঁছায়, আর সেখানে তারা তাদের সাথে পায় এক বিশেষ সঙ্গীকে। তিনি চীনের প্রধানমন্ত্রী ঝৌ এনলাই। মার্কিন খেলোয়াড়দেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান ঝৌ। তবে গুরুগম্ভীর এই সাক্ষাতে নতুন মাত্রা যোগ করেন গ্লেন কোয়ান।
হলুদ টুপি আর জিন্স পরে চীন ভ্রমণে আসার সুবাদে ইতিমধ্যেই কোয়ান স্থানীয় গণমাধ্যমে ঝড় তুলেছিলেন। এবার তিনি চীনা প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার একপর্যায়ে হাত শূন্যে তুলে জিজ্ঞেস করেন, আমেরিকান হিপি আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কী মতামত! শুরুতে প্রধানমন্ত্রী কিছুটা থতমত খেয়ে গেলেও, নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি বলেন, “তরুণেরা সবসময়ই সত্যের সন্ধান করে। এবং এই সন্ধান নানা সময়ে নানা রূপে আবির্ভূত হয়। আমাদের যখন বয়স কম ছিল, আমরাও এগুলো করেছি।”
যেদিন যুক্তরাষ্ট্র দল চীনা প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে, ঠিক সেদিনই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেন চীনের উপর থেকে ভ্রমণ ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার। এর কিছুদিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সরকার পারস্পরিক যোগাযোগ শুরু করে। জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার বেইজিংয়ে একটি গোপন সফরে যান।
পরবর্তী ঘটনাক্রম
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্কের এই ইতিবাচক রূপ পরের বছরও অব্যহত থাকে, যখন চীন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের টেবিল টেনিস দল পাঠায়। তবে সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটে ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে, যা পৃথিবীর ইতিহাসকে চিরতরে বদলে দেয়। রিচার্ড নিক্সন চীন ভ্রমণ করেন, এবং এর মাধ্যমে তিনি পরিণত হন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্টে, যিনি চীনা মেইনল্যান্ড সফর করেছেন। চীনে নিজের আট দিনের সফরকে প্রেসিডেন্ট নিক্সন আখ্যা দিয়েছিলেন, ‘the week that changed the world’ হিসেবে। এই সফরে তিনি চীনের প্রধানমন্ত্রী ঝৌ এনলাই ও চেয়ারম্যান মাওয়ের সাথে দেখা করেন, এবং চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সুসংহত করেন।
শেষ কথা
পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্ট নিক্সন তার আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন, চীনের নেতারা নাকি বারবারই তাকে মনে করিয়ে দিয়ে আনন্দ পাচ্ছিলেন যে, ২০ বছর ধরে কূটনৈতিকরা যেখানে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ককে স্বাভাবিক করতে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে সামান্য পিংপং বলের মাধ্যমে তা সক্ষম হয়েছে!
আসলেই তো, ভাবতেই অবাক লাগে যে সামান্য পিংপং খেলার সূত্র ধরেই জোড়া লেগেছিল বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দুটি রাষ্ট্রের সম্পর্ক। আর এই পিংপং খেলা নিয়ে সবচেয়ে উপযুক্ত উপমাটি দিয়েছেন মাও নিজেই। তিনি বলেছেন, “The little ball moves the Big Ball”।

তবে শেষ করার আগে একটি কথা না বললেই নয়। তা হলো, সবসময়ই যে ‘পিংপং ডিপ্লোম্যাসি’ কাজ করবে এমনটি না-ও হতে পারে। যেমন- চীনই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের স্বাভাবিকায়নে এই পদ্ধতির সফলতায় অনুপ্রাণিত হয়ে ইন্দোনেশিয়ার সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতেও একই পথ অবলম্বন করেছিল। কিন্তু তাদের সেই চেষ্টার ভরাডুবি ঘটেছিল, কেননা আমেরিকানদের মতো উদারমনা ছিল না ইন্দোনেশীয়রা!
চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/