১৮৪৮ সালের বিপ্লবে রক্ষনশীলদের বিপরীতে তিনটি ধারা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। লিবারেলরা দাবি জানাচ্ছিল সংবিধান, রাজতন্ত্রের ক্ষমতা হ্রাস এবং নাগরিক অধিকার বৃদ্ধির ব্যাপারে। সমাজতন্ত্রীদের চাওয়া ছিল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সুযোগ-সুবিধা, আর জাতীয়তাবাদীদের মূল লক্ষ্য জাতীয়তার ভিত্তিতে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা।
ইউরোপের সবদিকেই জাতীয়তাবাদী বিপ্লবীরা একে অপরের প্রতি সহমর্মিতা দেখাচ্ছিল। সুইজারল্যান্ডে ইতোমধ্যে লিবারেলরা প্রতিষ্ঠা করেছে একটি ফেডারেল রাষ্ট্র। তাদের দেখে জার্মান এবং ইতালীয় জাতীয়তাবাদীরাও একই কাজ করার কথা ভাবতে থাকে। এদের দেখে আবার উৎসাহিত হলো চেক বিপ্লবীরা। আবার ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের লিবারেল গোষ্ঠী পোলিশ, ইতালীয় এবং গ্রীক স্বাধীনতার দাবি সমর্থন করতে থাকে। এতে সবথেকে বেশি সমস্যায় পড়ল অস্ট্রিয়া। হলি রোমান এম্পায়ার নেই, কিন্তু হাবসবুর্গদের বিস্তীর্ণ সাম্রাজ্য তো আছে। এর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো শোরগোল শুরু করল, তারা আর অস্ট্রিয়ার অধীনে থাকতে রাজি না। হাঙ্গেরি, ইটালিয়ান লম্বার্ড আর ভেনেশিয়ান গোষ্ঠী সকলেই আলাদা হয়ে যাবার সংকেত দিতে লাগল।
নেপোলিয়ন তার সময় পোলিশদের পক্ষে টানতে তাদের হারানো দেশ ফিরিয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে তিনি গ্র্যান্ড ডাচি অফ ওয়ারশ গঠনও করেন। কিন্তু তার পরাজয়ের পর পোলিশদের সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায়। এখন চারদিকে এত পরিবর্তন নতুন করে পোলিশদের সাহস যোগাল ১৭৭২ সালের সীমানা বজায় রেখে পোল্যান্ডকে পুনরুজ্জীবিত করবার স্বপ্ন দেখতে।
জার্মানিতে কিন্তু জাতীয়তাবাদী চেতনার উত্থান বিচ্ছিন্নতা নয়, বরঞ্চ একটি অভিন্ন জার্মান পিতৃভূমির আওয়াজ তুলেছিল। প্রুশিয়ার রাজা চতুর্থ ফ্রেডেরিক উইলিয়াম একেই কাজে লাগাচ্ছিলেন। কিন্তু তার দৃষ্টিতে অখণ্ড জার্মানির চরিত্র ছিল অনেকটা হলি রোমান এম্পায়ার কালের জার্মান কনফেডারেশনের মতো, যেখানে অস্ট্রিয়ান হাবসবুর্গ রাজার সভাপতিত্বে নতুন করে জার্মান ইলেক্টরদের কমিটি গঠিত হবে। এই কমিটি অখন্ড জার্মান সাম্রাজ্য, বা জার্মান রাইখের রাজা বেছে নেবে।
নিজের এই স্বপ্ন ফ্রেডেরিক ১৮৪৮ সালের ১৪ এপ্রিল হ্যানোভারের লিবারেল দলের সদস্য এবং ফ্রাঙ্কফুর্টের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি’র এক ডেপুটি ক্রিস্টফ ডাহ্লম্যানের কাছে তুলে ধরেন। কাজেই বিপ্লব পরবর্তী প্রুশিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্নিম-সুখো যখন ফ্রেডেরিককে সরাসরি জার্মান সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করবার ইঙ্গিত দেন, রাজা কঠোর বিরোধিতা করেছিলেন।
জার্মান লিবারেলরাও আসলে দূরদর্শী চিন্তা করেনি। তারা চাইছিল একীভূত জার্মানি, লিখিত সংবিধান এবং প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থা। কিন্তু এগুলো বলা যতটা সহজ, কাজে পরিণত করা ঠিক ততটাই কঠিন। কীভাবে সবকিছু সুষ্ঠুভাবে করা যাবে সে বিষয়ে তাদের কোনো গোছানো পরিকল্পনা ছিল না। জার্মান রাষ্ট্রে অস্ট্রিয়া আর প্রুশিয়ার কী প্রভাব থাকবে, তা-ও ছিল অস্পষ্ট। অস্ট্রিয়া কিন্তু তখন পর্যন্ত নিজেকে জার্মান স্বার্থের রক্ষক হিসেবেই বিবেচনা করত। হলি রোমান এম্পায়ারের সময় জার্মানিতে অস্ট্রিয়ার যে ক্ষমতা ছিল, তা কিন্তু অস্ট্রিয়া এম্পায়ার ভেঙে গেলেও পুরোপুরি বিসর্জন দেয়নি। তীব্র তর্ক-বিতর্কের মধ্যে নতুন এক ইস্যু জার্মান রাষ্ট্রগুলোকে প্রুশিয়ার নেতৃত্বে খন্ডকালের জন্য হলেও একত্রিত করল। এই ইস্যুর নাম স্লেশউইগ-হোলস্টেইন।
স্লেশউইগ- হোলস্টেইন
জার্মানি আর ডেনমার্কের সীমান্তে স্লেশউইগ-হোলস্টেইন দুই ডাচি। স্লেশউইগ অবস্থিত হোলস্টেইনের উত্তরে, জাটল্যান্ড উপদ্বীপের অংশে। জাটল্যান্ড হলো উত্তর ইউরোপে ডেনমার্কের অঞ্চল। স্লেশউইগ আর হোলস্টেইনকে পৃথক করে রেখেছে এইডের নদী। তাদের সম্মিলিত রাজধানী কিয়েল।
স্লেশউইগ দ্বাদশ শতাব্দীতে প্রথম ডাচি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে ড্যানিশ রাজারাই স্লেশউইগের মূল ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন। ১৪৩৬-১৪৬০ সাল অবধি ডেনমার্ক স্লেশউইগ আর হোলস্টেইনকে এক করে শাসন করেছিল। কিন্তু ১৪৭৪ সাল থেকে তারা আলাদা আলাদা ডাচি হিসেবে স্বীকৃতি পায়। হোলস্টেইনের ব্যাপার ছিল একটু জটিল। এটি জার্মানির অভ্যন্তরে বিধায় হলি রোমান এম্পায়ারের অংশ, কিন্তু বিভিন্ন সময় ডেনমার্কই এখানে মূল প্রভু ছিল। ১৮১৫ সালের পর হোলস্টেইন জার্মান কনফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত হয়।
ভৌগোলিক নৈকট্যের কারণে শতাব্দীর পর শতাব্দীজুড়ে স্লেশউইগ আর হোলস্টেইনের মধ্যে ছিল শক্তিশালী রাজনৈতিক ও সামাজিক বন্ধন। এখানে শান্তিতে সহাবস্থান করত ড্যানিশ ও জার্মান ভাষাভাষী মানুষ। নিজেদেরকে তাদের অনেকেই একটি অভিন্ন রাজ্য হিসেবে দেখতে চাইত। এর পেছনে ছিল পঞ্চদশ শতাব্দীতে করা একটি আইনের অবদানও, যেখানে বলা ছিল স্লেশউইগ-হোলস্টেইনকে ভাগ করে আলাদা আলাদা রাষ্ট্রে ফেলা যাবে না। কিন্তু হোলস্টেইন জার্মান কনফেডারেশনের সদস্য হওয়ায় এতে ভজঘট লেগে যায়। আবার ডেনমার্ক সর্বদাই স্লেশউইগকে নিজের বলে দাবি করে গেলেও এই দুই ডাচির প্রচলিত আইন ছিল ড্যানিশ আইনের থেকে ভিন্ন। এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পরিলক্ষিত হয় সিংহাসনের উত্তরাধিকারের বিষয়ে। ডেনমার্কের আইনে রাজপরিবারের নারী সদস্যরাও সিংহাসনে বসতে পারেন, যা স্লেশউইগ-হোলস্টেইনের আইনে সম্ভব নয়।
এইডের নীতি
স্লেশউইগ-হোলস্টেইনের ব্যাপারে ডেনমার্কের পররাষ্ট্রনীতি পরিচিত ছিল এইডের নীতি বলে, যার কথাই হল এইডের নদী জার্মানি আর ডেনমার্কের সীমানার নির্ধারক, যা স্লেশউইগকে হোলস্টেইনকে থেকে আলাদা করে রেখেছে। এই নীতির মূল উদ্দেশ্যই ছিল স্লেশউইগকে হোলস্টেইন থেকে বিচ্ছিন্ন করে ডেনমার্কের অন্তর্ভুক্ত করা।
স্লেশউইগ-হোলস্টেইন নিয়ে জার্মানি ডেনমার্ক বিবাদ
জার্মান জাতীয়তাবাদীদের দাবি ছিল স্লেশউইগ-হোলস্টেইন একত্রে জার্মানির অংশ হবে, যাতে একমত ছিল অনেক রাজতন্ত্রপন্থীরাও। এই সময়, ১৮৪০ সালের আশেপাশে, হোলস্টেইনের প্রায় সকল লোকই ছিল জার্মান। আর স্লেশউইগের দক্ষিণাঞ্চল জার্মান, উত্তরাংশ ড্যানিশ, আর মাঝখানে মোটামুটি সমান সমান। কিন্তু ডাচির ড্যানিশ বাসিন্দাদের সূত্র ধরে ১৮৩৮ সাল থেকে ডেনমার্কের লিবারেলপন্থীরা দাবি করতে থাকে স্লেশউইগ তাদের নিজস্ব সম্পত্তি, এবং স্লেশউইগ-হোলস্টেইনের মধ্যবর্তী এইডের নদী জার্মানি এবং ডেনমার্কের সীমান্ত হওয়া উচিত। ফলে তারা দুটি ডাচিকে পৃথক করে ফেলতে চাইল।
উত্তরাধিকার আইন নিয়েও ডেনমার্কের সাথে দুই ডাচির মতপার্থক্য চরমে উঠল ১৮৪০ সালের শুরুতে। ডেনমার্কের ক্রাউন প্রিন্স সপ্তম ফ্রেডেরিক সন্তান নিতে অক্ষম বলে প্রতীয়মান হয়। ফলে তার মৃত্যুর পর কোনো নারী ক্ষমতা নিলে স্লেশউইগ-হোলস্টেইনের আইনে তা স্বীকৃত হয় না। ফলে সম্ভাবনা দেখা দিল যে তারা, বিশেষ করে স্লেশউইগ ডেনমার্কের থাবা থেকে বেরিয়ে যেতে পারে।
১৮৪৬ সালে ফ্রেডেরিকের বাবা, তৎকালীন ড্যানিশ রাজা অষ্টম ক্রিশ্চিয়ান ডেনমার্কের উত্তরাধিকার আইন স্লেশউইগের জন্য প্রয়োগ করবার ঘোষণা দেন, ফলে ফ্রেডেরিকের কোন সন্তান না হলে তার মৃত্যুর পর যদি কোন নারী ডেনমার্কের মুকুট পরিধান করেন, তাহলে দুই ডাচি তাকে মেনে নিতে বাধ্য থাকবে। নিজেদের আইনে নগ্ন হস্তক্ষেপের চেষ্টা বিশেষ করে ডাচির জার্মান সম্প্রদায়কে ক্ষিপ্ত করে তোলে। জার্মানিতেও বয়ে যায় সমালোচনার ঢেউ। স্লেশউইগ-হোলস্টেইনের জার্মান জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় জার্মান রাষ্ট্রগুলোর কাছে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবার দাবি ওঠে দলমত নির্বিশেষে সবার কাছ থেকে। প্রুশিয়াকে এই ব্যাপারে নেতৃত্ব নিতে অনুরোধ করা হলো।
এদিকে ১৮৪৮ সালের ২০ জানুয়ারি সপ্তম ফ্রেডেরিক ড্যানিশ সিংহাসনে অভিষিক্ত হন। নতুন রাজা একটি ড্যানিশ সংবিধান অবিলম্বে প্রণয়ন করার কথা জানান। ড্যানিশ রাজার ক্ষমতা তখন পর্যন্ত ছিল একচ্ছত্র, মন্ত্রীসভা এখানে খুব বেশি কিছু করার ছিল না। কিন্তু পরিস্থিতি খুব দ্রুত পরিবর্তন হতে আরম্ভ করল।
ফ্রেডেরিকের অভিষেকের পর ১১ মার্চ কোপেনহেগেনের এক সভায় ড্যানিশ লিবারেল এবং জাতীয়তাবাদীরা মিলিত হয়। নিজেদের মধ্যে আদর্শগত পার্থক্য থাকলেও দেশের স্বার্থে সবাই ছিল একাট্টা। দুই দলই এইডের নীতিকে স্লেশউইগ-হোলস্টেইনের জন্য অলঙ্ঘনীয় বলে মেনে নিতে জোর আওয়াজ তোলে। ওদিকে কিয়েলের কাছে রেন্সবোর্গ শহরের সম্মেলন থেকে স্লেশউইগ-হোলস্টেইনের জাতীয়তাবাদীরা তাদের জন্য একটি আলাদা সংবিধান এবং স্লেশউইগকে হোলস্টেইনের পাশাপাশি জার্মান কনফেডারেশেনের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে একটি দাবিনামা তৈরি করে। এই দাবিনামা সপ্তম ফ্রেডেরিকের কাছে দাখিল করতে প্রতিনিধিদল কোপেনহেগেন রওনা হলো।
কিন্তু স্লেশউইগ-হোলস্টেইনের জাতীয়তাবাদীদের কার্যক্রমের খবর ড্যানিশরা আগেই পেয়ে যায়। ফলে প্রতিনিধিদল কোপেনহেগেন পৌঁছানোর আগেই ২০ মার্চ লিবারেল ও জাতীয়তাবাদীরা আরেকটি সম্মেলন সমস্ত দাবি প্রত্যাখ্যানে রাজাকে চাপ দেবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তাদের পক্ষ থেকে দাবি তোলা হলো স্লেশউইগ এবং ডেনমার্কের জন্য অভিন্ন সংবিধান, এবং হোলস্টেইনকে স্লেশউইগ থেকে আলাদা করে জার্মানির হাতে ছেড়ে দেয়া। ২১ মার্চ এই দাবি ফ্রেডেরিকের সামনে পেশ হলে তার বুঝতে বাকি রইল না যে দাবি মেনে না নিলে তাকে গৃহযুদ্ধের সম্মুখিন হতে হবে। তিনি লিবারেল-জাতীয়তাবাদী জোটের কাছে নতি স্বীকার করলেন।
পরদিন নতুন সরকার গঠিত হলো, যাদের প্রধান কাজ ২০ মার্চের ঘোষণাপত্র কার্যকর করা। মূলত এর মধ্য দিয়েই ডেনমার্কে নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্রের পতন ঘটেছিল। নতুন সরকার সশস্ত্র সংঘাতের সম্ভাবনা চিন্তা করে যুদ্ধ মন্ত্রনালয় এবং নৌ মন্ত্রণালয় গঠন করে, যাদের মূল কাজ ছিল ড্যানিশ স্থল আর নৌ বাহিনীকে সংগঠিত করা।
স্লেশউইগ-হোলস্টেইনের ঘটনাপ্রবাহ
২৩ মার্চ রাত্রিবেলা সপ্তম ফ্রেডেরিকের জারিকৃত ফরমানে কিয়েলে একটি প্রাদেশিক সরকার গঠিত হয়। তাদের দায়িত্ব ছিল স্লেশউইগকে হোলস্টেইন থেকে আলাদা করে ডেনমার্কের অন্তর্ভুক্ত করবার ব্যবস্থা পাকা করা। ২৪ তারিখ মূলত জার্মান ভাষাভাষী স্লেশউইগ-হোলস্টেইনের জাতীয়তাবাদীপন্থিরা একটি অভূতপূর্ব কাজ করে বসে। তারা রেন্সবোর্গ দুর্গে হামলা করে দখল করে নেয়। দুই ডাচির ঠিক মাঝখানে বলে এই দুর্গ কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখান থেকে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র আর অর্থকড়ি বিদ্রোহীদের হস্তগত হয়।
বিদ্রোহীরা নিজেদের আলাদা সরকার গঠন করে, যাদের জার্মান অধ্যুষিত হোলস্টেইন এবং দক্ষিণ স্লেশউইগ বিনা প্রশ্নে স্বীকৃতি দেয়। উত্তর স্লেশউইগের তরুণ জনগোষ্ঠীও এই সরকারের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করে। ডাচির নিজস্ব সেনাদলের অনেক সদস্যই বিদ্রোহীদের সাথে যোগ দেয়। তবে কোনো কোনো অফিসার ডেনমার্কের পক্ষে চলে যান। দেখা যায় একই পরিবারের দুই সদস্য দুই দলে যোগ দিচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ, স্লেশউইগের ফার্স্ট ড্রাগুন রেজিমেন্টের (অশ্বারোহী এলিট ফোর্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ভন হোলস্টেনের কথা বলা যায়। তিনি রেজিমেন্টের একাংশ নিয়ে ড্যানিশদের পক্ষাবলম্বন করেন। বিপরীতে তার ছেলে বাকি রেজিমেন্ট নিয়ে রেন্সবোর্গ দুর্গের পথ ধরলেন। এরকম উদাহরণ আরো অনেক ছিল।
খুব দ্রুত বিদ্রোহীরা পেশাদার এবং স্বেচ্ছাসেবী সমন্বয়ে একটি সেনাদল তৈরি করে ফেলে। এদিকে এই অশান্ত পরিস্থিতিতে বার্লিনে আর্নিম-সুখো ফ্রেডেরিককে প্ররোচিত করছিলেন অহংকারী ড্যানিশদের মোক্ষম জবাব দিতে। ডেনমার্কের রাজার ফরমান আগুনে ঘি ঢালল মাত্র। পুরো জার্মানি গর্জে উঠল। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি প্রুশিয়ার অধীনে জার্মান রাষ্ট্রগুলোর একটি কনফেডারেশন বাহিনী গড়ে তুলতে একমত হলো। ড্যানিশ যুদ্ধমন্ত্রী শিয়ানিং (Tscherning) ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীকে জড়ো করতে শুরু করেছেন। একরোখা শিয়ানিং লড়াইয়ের মাধ্যমেই স্লেশউইগের বিষয়ে ফয়সালা করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। তার বিরুদ্ধে চতুর্থ ফ্রেডেরিক উইলিয়াম জার্মান ঝান্ডা তুলে ধরলেন। কয়েক দশক শান্তির পর আবার ইউরোপে বেজে উঠল যুদ্ধের দামামা।