১
দিল্লির জটিল এক রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে ১৪৫১ সালের ১৯ এপ্রিল দিল্লি সালতানাতের সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন সুলতান বাহালুল খান লোদি। তিনি যে সময় মসনদে বসেন, সে সময় দিল্লি সালতানাতের পুরনো সেই গৌরব আর আভিজাত্যের খুব বেশি কিছু আর অবশিষ্ট ছিলো না।
দিল্লি সালতানাত তখন বিভিন্ন ছোট ছোট অংশে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিলো। জৌনপুরকে কেন্দ্র করে তুঘলক সুলতান নাসরুদ্দীন মুহাম্মদ তুঘলকের সময়েই খাজা জাহান মালিকের নেতৃত্বে ১৩৯৪ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে শর্কি রাজ্য। শর্কি রাজ্যটি পরবর্তীতে ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠছিলো। বাহালুল লোদির শাসনামলের শর্কি রাজ্যের ক্ষমতায় ছিলেন সুলতান মাহমুদ বিন সুলতান ইব্রাহীম শর্কি। বাহালুল লোদি তার শাসনামলের বেশিরভাগ সময়ই এই রাজ্যটির বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যয় করেছিলেন।
এছাড়া বাহালুল লোদির শাসনামলে মালবের স্বাধীন সুলতান ছিলেন সুলতান মাহমদুল খিলজি। গুজরাটের মসনদে ছিলেন কুতুব উদ দিন নামের আরেকজন সুলতান। সেসময় কাশ্মীরের মসনদে ছিলেন সুলতান জয়নুল আবেদিন আর দাক্ষিণাত্যের মসনদে ছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন আহমেদ।
অর্থাৎ, দিল্লি সালতানাতের বেশির ভাগ ভূখন্ডই তখন বেদখল তো হয়েই ছিলো, সেই সাথে পুরো হিন্দুস্তান অসংখ্য স্বাধীন সুলতানদের হাতে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিলো।
ক্ষমতার মসনদে বসে সুলতান বাহালুল লোদি দিল্লি সালতানাতের সেই হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলেন। কিন্তু প্রকৃত অর্থে হিন্দুস্তানে তার বিশ্বস্ত লোক খুব কমই ছিলো। এদিকে ১৪৫৩ সালের দিকে তিনি যখন জৈনপুরের সুলতান মাহমুদ দ্বারা আক্রান্ত হলেন, তখন তিনি হাত বাড়িয়ে দিলেন তারই স্বজাতি আফগানদের দিকে।
তিনি তার স্বজাতি আফগানদের হিন্দুস্তানে এসে তার পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করলে রোহ-এর আফগানরা তার ডাকে সাড়া দেয়। বাহালুল লোদি আফগানদের সহায়তায় সুলতান মাহমুদকে পরাজিত করে দিল্লি সালতানাতের সার্বভৌমত্ব সেই যাত্রায় রক্ষা করতে সক্ষম হন।
তবে, জৈনপুরের শাসকের বিরুদ্ধে যে আফগানরা তাকে সহায়তা করে, তারা বাহালুল লোদির অনুরোধ উপেক্ষা করেই আফগানিস্তান চলে যান। রোহ-এর এসব আফগানদের প্রতি কৃতজ্ঞতাবশত বাহালুল লোদি পরবর্তীতে তার সাম্রাজ্যে একটি সাধারন নির্দেশনা জারি করলেন।
‘ভবিষ্যতে রোহ থেকে যে আফগান-ই আমার কাছে চাকরীর আশায় হিন্দুস্তান আসুক, তাকে যেন আমার কাছে উপস্থিত করা হয়। তাদের প্রত্যেককেই তাদের যোগ্যতার চেয়েও বেশি পরিমাণ জায়গীর প্রদান করা হবে। যদি কেউ আত্মীয়তা বা ঘনিষ্ঠতাবশত সরাসরি আমার কাছে চাকরী নেয়ার পরিবর্তে আপনাদের (আমিরদের নিকট) কাছে চাকরী নেয়ার আগ্রহ দেখায়, তবে তাদের যেন সরাসরি আপনাদের অধীনে নিয়ে নেয়া হয় এবং তাদের ইচ্ছানুযায়ী জায়গীর প্রদান করা হয়। যদি আমি কখনো শুনতে পাই, কোনো রোহবাসী আফগান এ দেশে এসে জীবন নির্বাহ না করতে পেরে বা চাকরী না পেয়ে ফিরে গেছে, তাহলে সে যেই আমিরই হোক না কেন, তার সমস্ত জায়গীরই কেড়ে নেয়া হবে।’
উপকারীর উপকারের প্রতিদান দেওয়ার বেলায় সুলতান বাহালুল লোদি এতটাই উদারমনা ছিলেন!
২
সুলতান বাহালুল লোদির এই চূড়ান্ত রকমের বদান্যতার ফলে আফগানিস্তান থেকে হিন্দুস্তানের দিকে আফগানদের একটা তীব্র মানব স্রোত বয়ে গেলো। এই প্রবল মানব স্রোতের সাথেই নিজের পুত্র হাসান খান সুরিকে নিয়ে হিন্দুস্তানে এসেছিলেন একজন রোহবাসী। নাম ইব্রাহীম খান সুরি।
পেশায় ইব্রাহীম খান সুরি ছিলেন একজন অশ্বব্যবসায়ী। বসবাস করতেন আফগানিস্তানের শরগিরিতে। জায়গাটিকে মুলতানী ভাষায় রোহরী নামেও ডাকা হয়। শরগিরিতে ব্যবসায় সুবিধা করতে না পেরে অনেকটা বাধ্য হয়েই ইব্রাহীম খান সুরি হিন্দুস্তানে পাড়ি জমিয়েছিলেন।
হিন্দুস্তানে এসে পিতা-পুত্র চাকরী নিলেন দাউদ সাহু খইল গোষ্ঠীর মহব্বত খান সুরির অধীনে। মহব্বত খান সুরির নিকট থেকে পাঞ্জাবের বজওয়ারা পরগণায় জায়গীর পেয়ে সেখানেই স্থায়ী হলেন পিতা-পুত্র।
১৪৮৬ সাল। এই সালেই বিহারের সাসারামে ইব্রাহীম খান সুরির পুত্র হাসান খান সুরির ঘর আলো করে একটি পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করে। যদিও নবজাতকটির জন্মস্থান নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা আছে। ঐতিহাসিকরা এই শিশুটির জন্মস্থান, এমনকি জন্মসাল নিয়েও কিছুটা দ্বিধাবিভক্ত। অনেকের মতে, তার জন্মস্থান হিসার ফিরোজায়, আবার কারো মতে নারনৌলে। যা-ই হোক, জন্মসাল আর জন্মস্থানে কী-ই বা আসে যায়! কর্মই হচ্ছে আসল। এই শিশুটিকে পরবর্তীতে তার জন্মসাল কিংবা জন্মস্থানের জন্য বিশ্ববাসী আজীবন মনে রাখবে না, মনে রাখবে শুধুমাত্র তার কর্মের জন্য!
জন্মের পর নবজাতক শিশুটির নাম রাখা হলো ফরিদ খান। পুরো নাম ফরিদ খান সুরি।
ফরিদ খানের জন্মের কিছুদিন পর ইব্রাহীম খান সুরি আর হাসান খান সুরি মহব্বত খানের চাকরি ছেড়ে দিলেন। ইব্রাহীম খান সুরি চলে গেলেন হিসার ফিরোজায়। তিনি সেখানে চল্লিশজন অশ্বারোহী যোদ্ধা অধীনায়ক হিসেবে জামাল খান সারঙ্গখানীর অধীনে চাকরি নিলেন। আর তার নিজের অধীনের ঘোড়া আর যোদ্ধাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর জন্য তাকে নারনৌলের কয়েকটি গ্রাম জায়গীর হিসেবে দেয়া হলো।
অন্যদিকে হাসান খান সুরি গেলেন বাহলুল লোদির পরামর্শদাতা ও ঘনিষ্ঠ আমির খান-ই-আজম মসনদ-ই-আলী উমর খান সরওয়ানী কলকাপুরের কাছে। শিরহিন্দ, ভটনুর, শাহাবাদসহ আরো বেশ কিছু পরগণার জায়গীরদার ছিলেন তিনি। এসব অঞ্চল থেকে কয়েকটি গ্রামের জায়গীরদার হিসেবে হাসান খানকে নিয়োগ দিলেন তিনি।
কিছুদিন পরেই হাসান খান সুরি তার পিতা ইব্রাহীম খান সুরির মৃত্যু সংবাদ পান। তিনি নারনৌলে ছুটে গেলেন। সেখানে গিয়েই আবার জামাল খান সারঙ্গখানীর অধীনে চাকরী পেয়ে গেলেন।
৩
প্রায় ৩৮ বছর দিল্লি সালতানাতের সুলতান হিসেবে শাসনকাজ পরিচালনার পর ১৪৮৮ সালে সুলতান বাহলুল লোদি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি পাঞ্জাব, জৈনপুর, দোয়াব, ঔধ, বিহার, তিরহুত, শতদ্রু, বুন্দেলখন্ডসহ হিন্দুস্তানের বিস্তীর্ণ এক ভূখন্ড শাসন করেছিলেন।
বাহালুল লোদি মৃত্যুবরণ করলে তাঁর সাম্রাজ্য তাঁর পুত্র আর আত্মীয়দের মাঝে ভাগ হয়ে যায়। জৈনপুরের দায়িত্ব পান বারবাক খান, আলম খান আলাউদ্দীনকে দেয়া হয় মানিকপুর ও কারা, বাহরাইচের দায়িত্ব পান সুলতান বারবাক খানের ভাগ্নে শাহজাদা মুহাম্মদ ফারমুলি (কালাপাহাড়), আজম হুমায়ুনে লখনৌ ও কালপীর দায়িত্ব পান, বাদাউনের দায়িত্ব পান খান জাহান। সুলতানের পুত্র নিজাম খান দায়িত্ব পান শুধুমাত্র দিল্লি ও আশেপাশের কয়েকটি জেলার। অর্থাৎ, মৃত্যুর পর দিল্লি সালতানাত সুলতান বাহালুল লোদির পুত্র আর আত্মীয়রা নিজেদের মাঝে কেটেকুটে ভাগবাটোয়ারা করে নেন!
এদিকে, সুলতান বাহলুল লোদির মৃত্যুর পর ১৪৮৯ সালের ১৭ জুলাই দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন তাঁর পুত্র নিজাম খান। মসনদে বসে তিনি ‘সিকান্দার লোদি’ উপাধি ধারণ করেন।
সিংহাসনে বসেই সিকান্দার লোদি বারবাক খানের উপর হামলা চালিয়ে জৈনপুর দখল করে নেন। তিনি জৈনপুরের দায়িত্ব অর্পণ করেন জামাল খান সারঙ্গখানী উপর। জৈনপুরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য জামাল খানকে অশ্বারোহী যোদ্ধাদের সংখ্যাবৃদ্ধির নির্দেশ দেন তিনি। আর এই নির্দেশের সাথে সাথেই ভাগ্য খুলে গেলো হাসান খান সুরির।
জামাল খান সারঙ্গখানী তাকে জৈনপুরে পাঁচশত অশ্বারোহীর মনসবদার হিসেবে নিয়োগ দিলেন। সাথে দিলেন সাসারাম, হাজীপুর আর তাণ্ড নামের তিনটি জায়গীর।
কয়েক বছর পরের ঘটনা। ফরিদ খান সুরি টগবগে তরুণ তখন। এসময় কোনো একটি বিষয় নিয়ে হাসান খান সুরি আর ফরিদ খান সুরির মাঝে একবার কথা কাটাকাটি হয়েছিলো। আট পুত্র সন্তানের পিতা হাসান খান তাই জায়গীরে দায়িত্ব ভাগাভাগির সময় ফরিদ খানকে প্রায় অগ্রাহ্যই করলেন। পিতার প্রতি অভিমানে ফরিদ খান নিজের বাড়ি ছাড়লেন।
জৈনপুরে গিয়ে আশ্রয় নিলেন নিজের পিতারই নিয়োগদাতা জামাল খান সারঙ্গখানীর কাছে। জৈনপুরে গিয়ে তিনি পড়াশোনার প্রতি বেশ ঝুঁকে গেলেন। প্রচন্ড মেধাবী ছিলেন এই ফরিদ খান। ফলে খুব সহজেই আরবি, ফারসি, সাহিত্য আর ইতিহাসে গভীর পান্ডিত্য অর্জন করলেন তিনি।
৪
১৫১৭ সালে সুলতান সিকান্দার লোদি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর দিল্লি সালতানাতের সিংহাসন নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়। ফলে হিন্দুস্তানের ভাগ্যাকাশে আবারও রাজনৈতিক অস্থিরতা জমাট বাঁধতে থাকে। আর এই রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝে নিজেকে দিল্লি সালতানাতের মসনদের দখল নিতে সক্ষম হন সিকান্দার লোদির পুত্র ইব্রাহীম লোদি।
জটিল এ রাজনৈতিক সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে হাসান খান সুরি আর ফরিদ খান সুরি নিজেদের মধ্যকার ঝামেলা মিটিয়ে ফেলাই ভালো মনে করলেন। ১৫১৮ সালে ফরিদ খান সাসারামে ফিরে পিতার অধীনস্ত পরগণাগুলোর দায়িত্ব বুঝে নিলেন।
এসময় আব্বাস সারওয়ানীর তথ্যানুসারে ফরিদ খানের বয়স ছিলো ৪১ (১৪৭৭-১৫১৮) বছর। আর Kalika Ranjan Qanungo এর বর্ণনানুযায়ী এসময় ফরিদ খানের বয়স ছিলো ৩২ বছর।
নিজের জায়গীরের দায়িত্ব বুঝে নিয়ে প্রথমেই ফরিদ খান তার পরগণার গ্রাম প্রধান, হিসাবরক্ষক, চাষী আর সৈন্যদের নিয়ে একটি বিশাল সমাবেশ আয়োজন করলেন। ফরিদ খান সুরি ছোটবেলা থেকেই যে নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে বড় হচ্ছিলেন, তা স্পষ্ট বোঝা যায় এই সমাবেশে তার বক্তৃতা দেখে। তিনি এই সমাবেশে বললেন,
‘তোমাদের সকলের নিয়োগ ও বহিষ্কারের পুরো দায়িত্ব আমার পিতা আমার উপর অর্পণ করেছেন। আর এ অঞ্চলকে সমৃদ্ধ করে তোলার জন্য আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এতে তোমাদের যেমন স্বার্থ আছে, তেমনি আমারও স্বার্থ আছে। আমার স্বার্থ হচ্ছে, আমি এভাবেই নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে নাম ও খ্যাতি অর্জন করতে পারবো।
আজ থেকে আমি তোমাদেরকে যার যেভাবে খুশি, ফসল কিংবা নগদ অর্থে, খাজনা মেটানোর সুযোগ দিলাম। যেভাবে খাজনা দিলে তোমাদের সুবিধা হয়, লাভ হয়, সেভাবেই তোমরা খাজনা দিবে।‘
ফরিদ খান সুরি শুধুমাত্র ঘোষণা কিংবা বিবৃতির মাধ্যমে মুখের কথা দিয়েই কাজ শেষ করে ফেললেন না। সঠিক এবং ন্যায্যভাবে যেন কর আদায় করা যায়, সেজন্য তিনি জমির সুষ্ঠু মাপঝোকের ব্যবস্থা করলেন। পূর্বে রাজস্ব আদায়কারীসহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তারা সুযোগ পেলেই কৃষকদের উপর অত্যাচার করতো। এ কারণে তিনি রাজস্ব আদায়কারীসহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তার বেতন ভাতা নির্দিষ্ট করে দেয়া হলো।
এরপর তিনি নজর দিলেন যেসব গ্রামপ্রধান দীর্ঘদিন রাজস্ব আদায় না করে টালবাহানা করছিলো, তাদের দিকে। তিনি সাধারণ কৃষকসহ অন্যান্য শ্রেনীপেশার মানুষদের নিয়ে একটি ছোটখাট বাহিনী প্রস্তুত করে অভিযানে বের হয়ে গেলেন। তার অভিযানের ফলে এসব অবাধ্য প্রধানেরা নির্দিষ্ট পরিমাণ কর আদায়ে বাধ্য হলো।
এরপর তিনি নজর দিলেন তার পরগণার বিদ্রোহী জমিদারদের দিকে। এসব স্থানীয় শাসকরা একে তো পরগণার জায়গীরদারের আদেশ-নিষেধ মানছিলোই না, তার উপর চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই করে পরগণাকে অস্থিতিশীল করে তুলছিলো। ফরিদ খান তার সেই ছোট বাহিনী নিয়েই একে একে তাদের উপর আক্রমন চালিয়ে তাদের দমন করলেন।
ফরিদ খানের এসব কাজের ফলে তার অধীনের পরগণাগুলো খুব দ্রুতই উন্নতির মুখ দেখতে শুরু করলো। ফরিদ খানের নাম আর যোগ্যতার কথা সমগ্র বিহারে ছড়িয়ে পড়লো।
এদিকে ফরিদের সৎ মায়ের প্ররোচনায় আবারও পিতা-পুত্রের সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। ফরিদের সৎ মা চাচ্ছিলেন তার পুত্র সুলাইমান আর আহমেদকে যেন ফরিদের অধীনস্ত পরগণা দুটির দায়িত্ব দেয়া হয়। বিমাতার ষড়যন্ত্রের কারণে ১৫১৮ সালে ফরিদকে আবারও পিতৃগৃহ ছাড়তে হয়। এবার হতাশ ফরিদ খান সুরির উদ্দেশ্য লোদি সালতানাতের রাজধানী আগ্রা।
৫
ফরিদ খান যখন আগ্রার উদ্দেশ্যে পিতৃগৃহ ত্যাগ করেন, তখন জামাল খান সারঙ্গখানীর পুত্র দৌলত খান সারঙ্গখানী আগ্রাতে ছিলেন। দিল্লির মসনদে তখন লোদি সালতানাতের সুলতান ইব্রাহীম লোদি। দৌলত খান সারঙ্গখানী ইব্রাহীম লোদির খুব ঘনিষ্ঠ একজন আমির ছিলেন। ১২ হাজার অশ্বারোহীর মনসবদার ছিলেন তিনি।
ফরিদ খান আগ্রায় গিয়ে এই দৌলত খান সারঙ্গখানীর অধীনের চাকরী নিলেন। খুব দ্রুতই নিজের দক্ষতা দেখিয়ে দৌলত খানের প্রিয় পাত্র হয়ে উঠলেন তিনি।
ফরিদ খান আগ্রায় আশ্রয় গ্রহণের কিছুদিন পরেই তার পিতা হাসান খান সুরি মৃত্যুবরণ করলেন। দৌলত খানের সহায়তায় হাসান খানের পরগণাগুলো ফরিদ খান উত্তরাধীকারী সূত্রে অর্জন করতে সক্ষম হলেন।
১৫২২ সালে ফরিদ খান সুরি বিহারের শাসক বিহার খান লোহানির অধীনে চাকরী নিলেন। বিহার খান লোহানি খুব দ্রুতই ফরিদের দক্ষতা আর আনুগত্যে মুদ্ধ হয়ে যান।
এ সময় একটি মজার ঘটনা ঘটে যায়। বিহার খান লোহানির সাথে শিকারে বের হয়ে ফরিদ খালি হাতেই একটি বাঘ হত্যা করে ফেলেন। বিহার খান লোহানি তার এ সাহসিকতায় বিস্মিত হন। তিনি ফরিদকে ‘শের খান’ উপাধী দিলেন। ফরিদ খান সুরি হয়ে গেলেন শের খান সুরি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এরপর থেকে ফরিদ খান সুরি তার পৈত্রিক নামের চেয়ে এই ‘শের খান’ নামেই সবার নিকট বেশি পরিচিত হয়ে উঠতে থাকেন। পরবর্তীতে ইতিহাসের পাতায় তিনি এই নামের নিজের জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন।
৬
১৫২৬ সালের ২১ এপ্রিল।
এই দিনে পানিপথের প্রান্তরে ইব্রাহীম লোদি জহির উদ-দিন মুহাম্মদ বাবরের হাতে পরাজিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। খুব সহজেই বোঝা যাচ্ছিলো, হিন্দুস্তানের ভাগ্যাকাশে উদয় হতে যাচ্ছে আরেকটি দুর্দান্ত প্রতাপশালী সাম্রাজ্যের।
এদিকে, পানিপথের প্রান্তরে ইব্রাহীম লোদির মৃত্যুর পর বিহার খান লোহানি বিহারকে কেন্দ্র করে নিজের স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন। তিনি ‘সুলতান মুহাম্মদ শাহ’ উপাধি নিয়ে বিহারের মসনদে বসলেন।
স্বাধীন সুলতান হয়ে তিনি শের খানের কদর করতে ভুললেন না। শের খানের বহুমুখী প্রতিভায় মুদ্ধ হয়ে সুলতান মুহাম্মদ শাহ তার শিশুপুত্র জালাল খান লোহানির শিক্ষার দায়িত্ব শের খানের হাতে দিয়ে দেন। একইসাথে তিনি শেরখানকে বিহারের রাজপ্রতিনিধির মর্যাদা দেন। শের খানের এই দ্রুত উত্থানে বিহারের অন্যান্য আফগান অভিজাতরা ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠছিলো। শেষপর্যন্ত তাদেরই ষড়যন্ত্রে মুহাম্মদ শাহ শের খানকে বিহার থেকে বিতাড়িত করলেন। অন্যদিকে তার সৎ ভাইরা তার থেকে তার পরগণাগুলো ছিনিয়ে নিলে তিনি পুরোপুরি পথের ভিখিরি হয়ে গেলেন।
বিহার থেকে বিতাড়িত হয়ে শের খান হিন্দুস্তানের নতুন উদীয়মান শক্তি মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবরের অন্যতম জেনারেল জুনায়েদ বারলাসের নিকট গিয়ে চাকরি নেন। ১৫২৭ সালের এপ্রিল থেকে ১৫২৮ সালের জুন মাসের মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত তিনি মুঘল সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন।
এদিকে, ১৫২৮ সালের শেষের দিকে বিহারের লোহানি বংশের শাসক সুলতান মুহাম্মদ শাহ মৃত্যুবরণ করলেন। পিতার মৃত্যুর পর জালাল উদ্দিন লোহানি বিহারের মসনদে আরোহণ করলেন। কিন্তু বয়সে তরুণ হওয়ায় এই মসনদ বরং তার জন্য আশঙ্কাজনক হিসেবেই পরিণত হলো। হিন্দুস্তানে তখন মুঘলরা মাত্র ঘাটি গাঁড়তে শুরু করেছে। চারদিক থেকে মুঘলদের বিজয় সংবাদ আসতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় বয়সে তরুণ কারও জন্য সিংহাসন আরোহণের ঘটনা আশঙ্কাজনক ঘটনাই বটে!
তবে, পুত্র জালাল উদ্দিন লোহানির এ বিপদের দিনে হাল ছাড়লেন না তার মা দুদু বিবি। তিনি বিহারের রাজপ্রতিভূর দায়িত্বগ্রহণ করলেন। নিজের জায়গীর থেকে ডেকে আনা হলো জালাল উদ্দিনের শিক্ষক শের খানকে। দুদু বিবি শের খানের হাতে বিহারের শাসনক্ষমতা অর্পণ করলেন।
এদিকে শের খানকে বিহারের দায়িত্ব বুঝে নিতে দেখে জালাল উদ্দিনের আত্মীয়রা বিহারকে নিজেদের বলে দাবি করতে থাকেন। তরুণ সুলতান জালাল উদ্দিন লোহানি ভড়কে গিয়ে বঙ্গের সুলতান নুসরত শাহের নিকট সাহায্য চেয়ে বসেন। বিহারের জনগণ বুঝতে পারে এবার বিপদ আসন্ন।
তারা ইব্রাহীম লোদির ভাই মাহমুদ লোদিকে বিহারের দায়িত্ব বুঝে নিতে আমন্ত্রণ জানায়। মাহমুদ লোদি তখন হিন্দুস্তান থেকে মুঘলদের বিতাড়িত করে লোদি সাম্রাজ্যের মসনদ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছিলেন। তিনি সানন্দে বিহারবাসীর এই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে বিহারের মসনদে আরোহণ করলেন।
এদিকে আফগানদের মুঘল বিরোধী প্রতিরোধ দেখে বাবর বুঝে গেছেন, হিন্দুস্তানের মাটিতে আফগান আধিপত্য খর্ব না করলে শিশু মুঘল সাম্রাজ্যের পতন আসন্ন। আর তাই হিন্দুস্তানের আফগান শক্তিকে পুরোপুরি ধ্বংস না করা পর্যন্ত সম্রাট বাবর যেন কোনোকিছুতেই ঠিক স্বস্তি পাচ্ছিলেন না।
৭
১৫২৮ সালের আফগানদের বিরুদ্ধে বাবরের অভিযান পরিচালনা করার সময় শের খান ছিলেন বিহারের জালাল উদ্দিন লোহানির রাজপ্রতিনিধি। কিন্তু এসময় ইব্রাহীম লোদির ভাই মাহমুদ লোদির মাধ্যমে জালাল উদ্দিন লোহানি ক্ষমতাচ্যুত হলে বিহারে আফগানদের প্রভাব আরো বেড়ে গেলো।
আফগানদের চূড়ান্তভাবে ধ্বংস করার জন্য রাজকীয় মুঘল সেনাবাহিনী জৈনপুরের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করলো। মুঘল সেনাবাহিনীর এগিয়ে আসার সংবাদ পেয়ে মাহমুদ লোদি শেখ বায়েজিদ আর বাবনের নেতৃত্বে একটি বাহিনী সিরওয়ার দখল করতে পাঠিয়ে দেন। যুদ্ধের অরাজকতার মাঝে এই সুযোগে বিহারের শের খান বেনারস দখল করে নেন।
এদিকে প্রয়াগ থেকে মুঘল সেনাবাহিনী দ্রুত চুনার, বেনারস আর গাজীপুর (এই ‘গাজীপুর’ ঢাকার পাশ্ববর্তী ‘গাজীপুর’ জেলা নয়। আলোচ্য ‘গাজীপুর’ বর্তমান ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি জেলা) অতিক্রম করে। এসময় গাজীপুরের আফগান আমির শাহ মুহাম্মদ মারুফ বাবরের প্রতি নিজের আনুগত্য স্বীকার করেন। প্রায় একইসাথে আরো বেশ কিছু আফগান আমির বাবরের আনুগত্য স্বীকার করলে মাহমুদ লোদির জয় সম্পর্কে তার অনেক আমিরই সন্দিহান হয়ে পড়েন। এদিকে এসময় বিহারের বৈধ উত্তরাধিকারী জালালউদ্দিন লোহানিসহ শের খান বাবরের আনুগত্য স্বীকার করে নেন।
আর অন্যদিকে ১৫২৯ সালের মাঝামাঝির দিকে ঘাঘরার যুদ্ধে বাবর আফগানদের মেরুদন্ড আজীবনের জন্য ভেঙ্গে দিতে সক্ষম হন। তারা আর কখনোই মুঘল সাম্রাজ্যের সামনে কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
৮
শের খান ১৫২৮ সালের শুরু থেকেই বাবরের দরবারের সাথে অবস্থান করছিলেন। তিনি মুঘলদের খুব কাছ থেকে দেখেছেন। মুঘল সেনাবাহিনীর সামরিক কৌশল, রীতিনীতি, মুঘল আমিরদের মানসিকতা, তাদের শাসন পদ্ধতি, এমনকি চালচলন তিনি খুব মনযোগের সাথে লক্ষ্য করতেন।
এ সময় আফগানদের ঘরোয়া বৈঠকে তিনি প্রায়ই বলতেন, ভাগ্য সহায় হলে তিনি হিন্দুস্তান থেকে মুঘলদের বিতাড়িত করতে সক্ষম হবেন।
অবশ্য এই কথাটি বেশ অতিরঞ্জিতই মনে হয়। কারণ মুঘল দরবারে অবস্থান করে মুঘলদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলার সাহস কারোই থাকার কথা না। কিন্তু তিনি মনে মনে যে কিছু একটা পরিকল্পনা করছিলেন সেটা স্পষ্টভাবেই অনুমান করা যায় অন্য একদিনের ঘটনা দেখে।
সম্রাট বাবর তার আমিরদের নিয়ে একবার এক ভোজ অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে সেখানে শের খানও আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। সে অনুষ্ঠানে এমন একটি মুঘলাই খাবার পরিবেশন করা হয়, যা একেবারেই শক্ত ছিলো। শের খান খাবারটি খাওয়ার নিয়ম জানতেন না। তবে তিনি কোনো কিছুর ভ্রুক্ষেপ না করে তার ছুরিটি খাপ থেকে বের করে টুকরো টুকরো করে খাবারটি কেটে খেয়ে ফেললেন। বিষয়টি সম্রাট বাবরের নজর এড়ালো না। তিনি খুব মনোযোগ দিয়ে শের খানের কার্যকলাপ দেখছিলেন।
বাবরের পাশেই তখন বসে ছিলেন জুনায়েদ বারলাসের বড় ভাই ও মুঘল দরবারে বাবরের প্রধান উজির নিজাম উদ্দিন আলী খলিফা। তিনি নিজাম উদ্দিন খলিফাকে নিচু স্বরে বললেন,
‘শের খানের প্রতি নজর রেখো। সে খুব চতুর মানুষ। তার কার্যকলাপে রাজকীয় ভাবভঙ্গী আছে। আমি অনেক আফগান অভিজাতকে দেখেছি। তাদের কেউ শের খানের মতো আমার মনে প্রভাব ফেলতে পারেনি। আমার মন বলছে, ওকে এখনই আমার গ্রেফতার করা উচিত। বড় হওয়ার সমস্ত গুণ আর প্রতিভা তার মাঝে উপস্থিত।’
বাবর শের খানকে ঠিকই চিনতে পেরেছিলেন। শের খানের সম্পর্কে করা তার মন্তব্যের প্রতিটি অক্ষর পরবর্তীতে সত্য হয়েছিলো।
বাবরের কথা শুনে সেদিন বাবরের উজির নিজাম উদ্দিন আলী খলিফা বললেন,
‘শের খানকে সন্দেহ করার মতো কোনো কারণ নেই। আপনাকে অসুবিধায় ফেলার মতো প্রয়োজনীয় শক্তি তার নেই। এ অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করলে আপনি আপনার প্রতি অনুগত আফগানদের বিশ্বাস হারাবেন।’
এ কথা শুনে বাবর আর কিছু বললেন না।
শের খানকে নিয়ে যে বাবর আর তার উজির নিজাম উদ্দিন আলী খলিফা কিছু বলছিলেন, তা শের খানের দৃষ্টি এড়ালো না। শের খান বুঝতে পারলেন মুঘল রাজদরবারে তার দিন শেষ। সামনে তার বিপদ আসন্ন। বাবর তার ভেতরের উচ্চাকাঙ্ক্ষা দেখে ফেলেছেন। ভোজ অনুষ্ঠান সমাপ্ত হওয়ার পরেই শের খান মুঘল দরবার থেকে দ্রুত পালিয়ে গেলেন।
শের খানের পলায়নের সংবাদ পেয়ে বাবর নিজাম উদ্দিন আলী খলিফাকে বললেন,
‘আপনি বাঁধা না দিলে আমি তখনই তাকে গ্রেফতার করতাম। সে কিছু একটা করার পরিকল্পনা করছে। তার পরিকল্পনা শুধুমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।’
মুঘল দরবারে শের খান অবস্থানকালে আসলেই এই ঘটনাটি ঘটেছিলো কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে। তবে এই শের খান যে বাঘের মতোই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কিছু একটার জন্য অপেক্ষা করছিলো, তা তার পরবর্তী কার্যকলাপ দেখে স্পষ্টই বোঝা গিয়েছিলো।
তথ্যসূত্র
১। তারিখ-ই-শের শাহ; মূল: আব্বাস সারওয়ানী, অনুবাদ গ্রন্থের নাম: শের শাহ, অনুবাদক: সাদিয়া আফরোজ, সমতট প্রকাশনী, প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারী ২০১৫
২। ভারত উপমহাদেশের ইতিহাস (মধ্যযুগ: মোগল পর্ব), এ কে এম শাহনাওয়াজ, প্রতীক প্রকাশনা সংস্থা, ৩য় সংস্করণ (২০১৫), প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০০২
৩। মোগল সাম্রাজ্যের সোনালী অধ্যায়, সাহাদত হোসেন খান, আফসার ব্রাদার্স, ২য় মুদ্রণ (২০১৫), প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০১৩
এই সিরিজের আগের পর্বসমূহ
১। প্রাক-মুঘল যুগে হিন্দুস্তানের রাজনৈতিক অবস্থা || ২। তরাইনের যুদ্ধ: হিন্দুস্তানের ইতিহাস পাল্টে দেওয়া দুই যুদ্ধ || ৩। দিল্লী সালতানাতের ইতিকথা: দাস শাসনামল || ৪। রাজিয়া সুলতানা: ভারতবর্ষের প্রথম নারী শাসক || ৫। দিল্লি সালতানাতের ইতিকথা: খিলজী শাসনামল || ৬। দিল্লি সালতানাতের ইতিকথা: তুঘলক শাসনামল || ৭। দিল্লি সালতানাতের ইতিকথা: তৈমুরের হিন্দুস্তান আক্রমণ ও সৈয়দ রাজবংশের শাসন || ৮। দিল্লী সালতানাতের ইতিকথা: লোদী সাম্রাজ্য || ৯। রাজকীয় মুঘল সেনাবাহিনীর গঠন এবং গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস || ১০। রাজকীয় মুঘল সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত কিছু অস্ত্রশস্ত্র || ১১। জহির উদ-দিন মুহাম্মদ বাবুর: ‘একজন’ বাঘের উত্থান || ১২। বাদশাহ বাবরের কাবুলের দিনগুলো || ১৩। বাদশাহ বাবর: হিন্দুস্তানের পথে || ১৪। বাদশাহ বাবরের হিন্দুস্তান অভিযান: চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি || ১৫। মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান: হিন্দুস্তানে বাবরের চূড়ান্ত লড়াই || ১৬। খানুয়ার যুদ্ধ: মুঘল বনাম রাজপুত সংঘাত || ১৭। ঘাঘরার যুদ্ধ: মুঘল বনাম আফগান লড়াই || ১৮। কেমন ছিল সম্রাট বাবরের হিন্দুস্তানের দিনগুলো? || ১৯। মুঘল সম্রাট বাবরের মৃত্যু: মুঘল সাম্রাজ্য এবং হিন্দুস্তানের উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের অকাল পতন || ২০। সিংহাসনের ষড়যন্ত্র পেরিয়ে মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের অভিষেক || ২১। মুঘল সাম্রাজ্যের নতুন দিগন্ত: সম্রাট হুমায়ুনের ঘটনাবহুল শাসনামল || ২২। দিল্লি সালতানাত থেকে মুজাফফরি সালতানাত: প্রাক-মুঘল শাসনামলে গুজরাটের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস || ২৩। মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের গুজরাট অভিযানের প্রেক্ষাপট || ২৪। সম্রাট হুমায়ুনের গুজরাট অভিযান: সুলতান বাহাদুর শাহের পলায়ন || ২৫। সম্রাট হুমায়ুনের গুজরাট অভিযান ও গুজরাটের পতন || ২৬। গুজরাট থেকে মুঘলদের পলায়ন: মুঘল সাম্রাজ্যের চরম লজ্জাজনক একটি পরিণতি
ফিচার ইমেজ: zhiken.deviantart.com