Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সাচিকো: পারমাণবিক বোমা হামলা থেকে বেঁচে গিয়েছিল যে মেয়েটি (পর্ব – ১৮)

দ্য ওয়ার্ল্ড হাউজ

১৯৬৩-১৯৬৮

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কেটে গেছে আঠারোটি বছর। এই বছরগুলোতে জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে মৈত্রী সম্পর্ক যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনই বৃদ্ধি পেয়েছে বাণিজ্যিক সম্পর্কও। পর্যটকদের জন্য চালু হওয়া নতুন হোটেলগুলোর সামনে পার্ক করা থাকতো বিভিন্ন জাপানী গাড়ি। আমেরিকান পর্যটকদের নিয়ে নাগাসাকি পোতাশ্রয়ে ভিড়তো নানা প্রমোদ তরী। রাতের বেলা পাহাড়ের পাশে জোনাকির আলোর মতোই জ্বলতো বৈদ্যুতিক বাতি, টেলিভিশন স্ক্রিনে ভেসে আসতো সারা বিশ্বের খবর।

প্রশান্ত মহাসাগরের ওপারের একটি খবর সাচিকোকে চমকে দিলো। খবরটির ঘটনাস্থল ছিলো বার্মিংহাম, আলাবামা, যেটাকে কি না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বর্ণবাদগ্রস্ত শহর হিসেবে বিবেচনা করা হতো।

১৯৬৩ সালের মে মাসের কথা। মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এবং অন্যান্য মানবাধিকার কর্মীদের ডাকে আফ্রিকান-আমেরিকানরা এক অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেয়, যার লক্ষ্য ছিলো বার্মিংহামের বৈষম্যমূলক বর্ণবাদী আইনের পরিবর্তন করা। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে জেলে যেতে হয় অগণিত মানবাধিকার কর্মীকে। প্রতিবাদ চালিয়ে নিতে জড়ো হয় প্রায় তিন হাজারের মতো আফ্রিকান-আমেরিকান শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী। তাদের অধিকাংশই এসেছিল দরিদ্র পরিবার থেকে। বাচ্চাদের কারো কারো বয়স তো ছিল মাত্র আট বছর! এই বাচ্চাদের উপরই পুলিশ তাদের প্রশিক্ষিত কুকুরদের লেলিয়ে দিয়েছিল, যারা বাচ্চাদের পোশাক কামড়ে ছিড়ে নিয়েছিল। শক্তিশালী জলকামান নিক্ষেপের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের একেবারে ধরাশায়ী করে ফেলে তারা। অহিংস প্রতিবাদের মন্ত্রে দীক্ষিত এই আন্দোলনকারীরা কোনো পাল্টা আক্রমণই করেনি। তবুও তাদেরকে পুরে দেয়া হলো জেলে।

Image Source: Sachiko – A Nagasaki Bomb Survivors Story

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে বর্ণবৈষম্যের এমন ভয়াবহ চিত্র দেখে আঁতকে উঠলো সাচিকো। তার কাছে আফ্রিকান-আমেরিকানদের স্বাধিকার আদায়ের এই লড়াইটা স্বাধীনতা যুদ্ধের চেয়ে কোনো অংশে কম মনে হচ্ছিলো না।

সাচিকোর মনে হচ্ছিলো, প্রতিবাদকারী এই তরুণ-তরুণীদের সাথে কোথায় যেন তার একটি যোগসূত্র আছে। যুদ্ধের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা তার আছে। তাকেও ভয় আর পূর্বসংস্কার নিয়ে বাঁচতে হয়েছে। তাকেও দারিদ্র্যের মাঝে বাঁচতে হয়েছে, ক্ষুধার তীব্র যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে, কষ্ট পেতে হয়েছে দরকারের চেয়ে ছোট আকারের জুতা পরে।

স্কুলে বন্ধুবান্ধবদের কাছে কটুক্তির শিকার হওয়ার কথাগুলোও ভুলে যায়নি সে; যারা তার টিফিন চুরি করে খেত, যারা তাকে নোংরা, বেকুব, অলসসহ আরো নানা রকম গালি দিত- সবই মনে রেখেছিল সে।

১২ বছর বয়সী সাচিকো; Image Source: Sachiko – A Nagasaki Bomb Survivors Story

মনের গহীনে কোথায় যেন সাচিকো নিজের সাথে এই আফ্রিকান-আমেরিকান আন্দোলনকারীদের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছিল। কর্পূর গাছগুলোর মতোই বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল তারা, মুখ খুলেছিল নিজেদের স্বাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে। এই ছেলেমেয়েগুলোকে দেখে সহানুভূতি জন্ম নিলো তার মনে, যুদ্ধ ও শান্তি সম্পর্কে ধারণাগুলো হলো আরো স্বচ্ছ। বর্ণবাদ ও দারিদ্র‍্য দূরীকরণ ব্যতীত প্রকৃত বৈশ্বিক শান্তি অর্জন কোনোকালেই সম্ভব না।

অফিসে কাজ করতে করতেও সাচিকো রেডিও শুনতে থাকতো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেই আন্দোলনের খুটিনাটি খবরাখবর সে নিয়মিতই অনুসরণ করতো, সেই সাথে খবর রাখতো তাদের নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র সম্পর্কেও। সেই গ্রীষ্মেই, ১৯৬৩ সালের ২৩ আগস্ট, প্রায় ২,৫০,০০০ মার্কিন নাগরিক জড়ো হয়ে কর্মসংস্থান ও স্বাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করে ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে। মানবাধিকার আদায়ের জন্য ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশ্যে সংঘটিত এ যাত্রার মতো এত বড় আন্দোলন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে আগে কখনো দেখা যায়নি।

Image Source: Sachiko – A Nagasaki Bomb Survivors Story

লিঙ্কন মেমোরিয়ালের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র দিলেন তার সেই জগদ্বিখ্যাত বক্তব্য, “আই হ্যাভ অ্যা ড্রিম…“, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি আন্দোলিত করেছিল গোটা বিশ্ববাসীকেই।

তার বক্তব্যে কিং এমন এক স্বপ্নের পৃথিবীর কথা জানান, যেখানে প্রতিটি মার্কিন নাগরিক কোনো বৈষম্য ব্যতিরেকেই স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারবে। কিংয়ের কথাগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলো সাচিকো, সেগুলো গেঁথে নিলো তার মনে।

এবার সাচিকো কিংয়ের জীবনী ও কাজকর্ম সম্পর্কে পড়াশোনা শুরু করলো। তিনি লিখেছিলেন,

অহিংসার কেন্দ্রেই অবস্থান করে ভালোবাসার মূলনীতি।

অন্ধকার দিয়ে কখনো অন্ধকার দূর করা সম্ভব নয়। কেবলমাত্র আলো দিয়েই সেটা সম্ভব। ঘৃণা দিয়ে কখনো ঘৃণার মূলোৎপাটন সম্ভব নয়। কেবলমাত্র ভালোবাসার জোরেই সেটা সম্ভব।

কিংয়ের কথাগুলো সাচিকোকে তার বাবার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিলো, তবে সবচেয়ে বেশি মনে করিয়ে দিচ্ছিলো গান্ধীজির কথাই। সাচিকোর কাছে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র হয়ে উঠেছিলেন মহাত্মা গান্ধীর জীবন্ত প্রতিমূর্তি।

Image Source: Scroll.in

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকের সমঅধিকারের জন্য কাজ করে যাচ্ছিলেন কিং, সেই সাথে কথা বলছিলেন বিশ্ব মানবতার শান্তি ও স্বাধীনতার সপক্ষেও। বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতায় ব্যথিত ও শঙ্কিত এ নেতা ১৯৬৭ সালে এক বক্তব্যের মাধ্যমে তার দৃষ্টিতে বৈশ্বিক শান্তির স্বরুপ তুলে ধরেন। ‘দ্য ওয়ার্ল্ড হাউজ’ নামে বিখ্যাত সেই বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন,

The large house in which we live demands that we transform this worldwide neighborhood into a world-wide brotherhood. Together we must learn to live as brothers or together we will be forced to perish as fools. (এই যে বিশাল বড় বাড়িতে আমরা আছি, এখানে আমাদের মাঝে থাকা বিশ্ব-প্রতিবেশিত্বের সম্পর্ককে বিশ্ব-ভ্রাতৃত্বের সম্পর্কে রুপ দিতে হবে। আমাদেরকে অবশ্যই ভ্রাতৃত্ববোধের সম্পর্ক নিয়ে বেঁচে থাকা শিখতে হবে, নতুবা নির্বোধের মতো আমরা সবাই-ই ধ্বংস হয়ে যাবো)।

… … … …

১৯৬৮ সালের ৯ আগস্ট, গ্রীষ্মের উত্তাপে ঘুরঘুরে পোকাগুলো আবারও তাদের ডাকে চারিদিক সরব করে তুলেছিল। সাচিকো আর মা মিলে দাদীমার গামলাটা বরফ দিয়ে ভর্তি করলো। দু’হাত জড়ো করে প্রার্থনার উদ্দেশ্যে মাথা নত করলো সাচিকো। তার চিরতরে হারিয়ে ফেলা পছন্দের মানুষদের তালিকায় আরেকটি নতুন নাম যুক্ত হয়েছিল। সেই বছরেরই ৪ঠা এপ্রিল আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়েছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র।

Image Source: Politics

সকাল ১১টা বেজে ২ মিনিট।

বিমান হামলার সাইরেন বেজে উঠলো।

একটি ঘণ্টা বেজে বারবার একটি কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছিলো, “কখনো না। আর কখনো না।

কিংয়ের কথাগুলো সাচিকোর মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো, “প্রয়োজনের সময় আমরা যখন নীরব ভূমিকা পালন করি, প্রকৃতপক্ষে তখনই আমাদের জীবনের শেষ ঘণ্টাটা বাজতে শুরু করে দেয়।

এই যে সাচিকো এত অভিজ্ঞতা অর্জন করলো, এতকিছু পড়লো, যুদ্ধ ও শান্তি সম্পর্কে এতকিছু শিখলো, আজ যদি আকি, ইচিরো, তোশি আর মিসা বেঁচে থাকতো, তবে সে তাদের কী বলতো?

এগুলোর কোনটা আসলে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ? এর কোনো জবাব খুঁজে পায়নি সাচিকো নিজেও।

এই সিরিজের পূর্ববর্তী পর্বসমূহ

১) পর্ব – ১  ||  ২) পর্ব – ২  ||  ৩) পর্ব – ৩  ||  ৪) পর্ব – ৪  ||  ৫) পর্ব – ৫  ||  ৬) পর্ব – ৬  ||  ৭) পর্ব ৭ ||  ৮) পর্ব ৮  ||  ৯) পর্ব ৯  ||  পর্ব ১০  ||  পর্ব ১১  ||  পর্ব ১২  ||  পর্ব ১৩  ||  পর্ব ১৪ ||  পর্ব ১৫  ||  পর্ব ১৬  ||  পর্ব ১৭

This article is in Bangla language. It describes the story of Sachiko, a hibakusha from nagasaki. Necessary references have been hyperlinked inside.

Reference Book

1. Sachiko - A Nagasaki Bomb Survivors Story by Caren Stelson

Feature Image: Sachiko - A Nagasaki Bomb Survivors Story by Caren Stelson

Related Articles