হলিউডের ‘লোন সার্ভাইভর (২০১৩)’ সিনেমাটি হয়তো অনেকে দেখেছেন। সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমায় দেখানো হয়েছে, তালিবান সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরাস্ত হওয়া সিল কমান্ডোর সর্বশেষ সেনাকে বাঁচিয়েছেন স্থানীয় একজন পশতুন মুসলমান। হলিউডের সমকালীন যুদ্ধের সিনেমাগুলোতে বিশেষত সিল কমান্ডো বা সন্ত্রাসবাদ বিরোধী ঘটনা নিয়ে তৈরি সিনেমাগুলোতে হরহামেশাই মুসলমানদের মূল ভিলেন হিসেবে দেখানো হয়। এ নিয়ে অনেক তর্কবিতর্কও আছে। কিন্তু আফগানিস্তানে তালিবানের বিরুদ্ধে মার্কিন বাহিনী পরিচালিত ‘অপারেশন রেড উইংস’-এ যখন সিল টিমের কমান্ডোরা নিদারুণ পর্যুদস্ত হয় এবং একজন বাদে বাকি সবাই যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হয় তখন সেই একজনকে বাঁচানোর জন্য পুরো একটি গ্রাম নিজেদের বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছিল।
মোহাম্মদ গুলাব খান নামক একজন মুসলমান আহত মার্কিন সেনাকে নিজের ঘরে এনে আশ্রয় ও সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলেন। মানবতার এরকম দৃষ্টান্ত বিরল হলেও এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছিল যেখানে শত্রুপক্ষেরই কেউ শেষ পর্যন্ত ত্রাতা হিসেবে উদয় হয়েছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনীর অত্যাচার পৃথিবীজুড়ে কুখ্যাত হয়ে আছে। ইহুদিদের প্রতি তীব্র ঘৃণা তখন যেন জার্মানির রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু এই ঘৃণার আস্তাকুঁড়েও ফুটেছিল ভালোবাসা ও মানবতার ফুল। ভ্লাদিস্লোয়া স্পিলম্যানের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি হলোকাস্ট থেকে বেঁচে যাওয়ার ঘটনাটি এমনই একটি মানবতার গল্প। হতভাগ্য ইহুদিদের কাছে ত্রাতা হয়ে উঠেছিলেন একজন নাৎসি সেনা কর্মকর্তা।
স্পিলম্যান: দ্য পিয়ানিস্ট
ভ্লাদিস্লোয়া স্পিলম্যান (Władysław Szpilman) ছিলেন ইহুদী পিয়ানোবাদক। পোল্যান্ডের ওয়ারশ-এ বসবাস করা এই শিল্পী নাৎসি হলোকাস্টের বর্বরতা থেকে আশ্চর্যজনকভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন। তার শিল্পীসত্তাই তখন তার বাঁচার অবলম্বন হয়ে উঠেছিল।
১৯১১ সালে পোল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন স্পিলম্যান। মায়ের কাছেই প্রথম পিয়ানো শেখেন। ১৯২৬ সাল থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত তিনি ওয়ারশ-এর এক সংগীত স্কুলে শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৩৫ সালে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন এবং ওয়ারশ-এর পোলিশ স্টেট রেডিওতে পেশাদার পিয়ানোবাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ক্লাসিক্যাল আর জ্যাজ বাজাতেন তিনি।
১৯৩৯ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করে। পোলিশ রেডিও স্টেশনে বোমা ফেলে জার্মান বিমানবাহিনী। পোল্যান্ডের রাস্তাঘাট জার্মান সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। পোলিশ স্টেট রেডিও জোরপূর্বক বন্ধ করে দেওয়া হয়। জার্মানরা যখন ওয়ারশতে বোমা ফেলছিল তখন রেডিওতে লাইভ অনুষ্ঠানে ফ্রেডেরিক চপিনের একটি সুর বাজাচ্ছিলেন স্পিলম্যান।
জার্মানরা ওয়ারশে বসবাসকারী ইহুদিদের গেটো-তে (Ghetto) স্থানান্তর করা শুরু করে। গেটো হচ্ছে কোনো শহরের এমন একটি স্থান যেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় দারিদ্র্যের সাথে সংগ্রাম করে বাকি সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বসবাস করে। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে গেটো বলতে সেসব স্থানকে বোঝানো হতো যেসব স্থানে ইহুদিদের আলাদা করে রাখা হতো। এ ধরনের গেটোতে ইহুদিরা মানবেতর জীবনযাপন করত।
একে তো স্থান সংকুলান হতো না তার উপর ছিল খাবার-পানীয়ের সংকট। জার্মানদের দয়ায় বেঁচে থাকতে হতো তাদের। ইচ্ছে হলে জার্মান সেনারা যেকোনো ইহুদিকে ধরে নিয়ে গিয়ে টার্গেট প্র্যাকটিস করলেও কারো কিছু বলার ছিল না। গেটোগুলোতে বেঁচে থাকতে পারাটাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
ভ্লাদিস্লোয়া স্পিলম্যান ও তার পরিবারের লোকজনের আর সব ইহুদি পরিবারের মতোই ওয়ারশ গেটোতে স্থান হয়। ওয়ারশ’র গেটো ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বানানো সবচেয়ে বড় গেটো। প্রায় চার লক্ষ ইহুদিকে আবদ্ধ করা হয় ওয়ারশ গেটোতে। দিনে নিয়ম করে অল্প পরিমাণ খাবার দেওয়া হতো, তার বিনিময়ে গাধার মতো খাঁটিয়ে নেয়া হতো ইহুদিদের। কিন্তু এই অমানুষিক পরিশ্রম করার সুযোগটাও অনেকে পেত না কারণ কাজ করার জন্য ওয়ার্ক পারমিট পাওয়াটাও ছিল অনেক বড় ঝক্কির কাজ। শ্রমিক হিসেবে কাজ করলে বেঁচে থাকার একটা সুযোগ ছিল। মাঝেমধ্যেই গেটো থেকে ইহুদিদের ধরে নিয়ে যাওয়া হতো কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে।
গেটোতে থাকার সময় স্পিলম্যান কাজ পেয়েছিলেন এক রেস্তোরাঁয়। পিয়ানো বাজানোর কাজ। রেস্তোরাঁয় বসে বসে আগত অতিথিদের উদ্দেশে পিয়ানোতে সুরের মূর্ছনা তুলতেন তিনি।
১৯৪২ সালের গ্রীষ্মকাল। হঠাৎ করেই গেটো থেকে ইহুদিদের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প ও ডেথ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। প্রথম কয়েকদিন স্পিলম্যানের পরিবার নিরাপদে থাকতে পারলেও একসময় তাদেরকেও একদিন তুলে দেওয়া হয় ট্রেবলিংকা’র ট্রেনে। ট্রেবলিংকা হচ্ছে পোল্যান্ডের একটি এক্সটার্মিনেশন ক্যাম্প। স্বভাবতই এখানে যাওয়ার মানে হচ্ছে যমালয়ের দিকে পা বাড়ানো।
বলে রাখা ভালো, গেটোগুলো পাহারা দেওয়ার জন্য জার্মান কর্তৃপক্ষ ইহুদিদের নিয়ে একটি পুলিশ বাহিনী তৈরি করেছিল। স্পিলম্যান যখন তার পরিবারের সাথে ট্রেবলিংকার ট্রেনে উঠছিলেন, তখন স্টেশনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা জনৈক ইহুদি পুলিশ তাকে চিনতে পেরে ট্রেনে উঠতে বাঁধা দেয়। ফলে পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান স্পিলম্যান। অবশ্য এর ফলে তার নিজের প্রাণ বেঁচে যায়।
এদিকে ধীরে ধীরে গেটোর ইহুদিরা সংঘবদ্ধ হতে থাকে জার্মান অত্যাচারের বিরুদ্ধে। ইহুদিদের একটি বিদ্রোহী সংগঠন গড়ে উঠে গেটোর ভেতরে। এই সংগঠনটি বাইরে থেকে গোপনে গেটোতে বিভিন্ন অস্ত্র আনতে শুরু করে। আর এই কাজে স্পিলম্যানও তাদের সাহায্য করেন। ১৯৪৩ সালের ১৯ এপ্রিল থেকে ১৬ মে পর্যন্ত চলমান এই বিদ্রোহটি ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদিদের সবচেয়ে বড় একক প্রতিরোধ।
১৯৪৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি গেটো থেকে পালিয়ে যান স্পিলম্যান। বেঁচে থাকার নতুন লড়াই শুরু হয় তার। রাস্তাঘাটে বেরোনো দায়, যেকোনো সময় জার্মান সেনাদের হাতে ধরা পড়তে পারেন। আবার অনেক জার্মান নাগরিকও তখন ইহুদিদের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য মনোভাব পোষণ করছিল। কিন্তু তারপরও কিছু জার্মান স্পিলম্যানকে আশ্রয় দেয়। এরা অনেকেই ছিলেন স্পিলম্যানের পূর্বপরিচিত, কেউ বন্ধু-বান্ধব, আবার কেউ প্রাক্তন সহকর্মী। কিন্তু বন্ধুভাবাপন্ন জার্মান পরিবারগুলোর আশ্রয়ে তিনি বেশি দিন থাকতে পারেননি পাছে তার জন্য তাদের কোনো ক্ষতি হয় এই ভয়ে।
১৯৪৪ সাল। ওয়ারশের ২২৩ অ্যালেজা নেপোদলেগশ (223 Aleja Niepoldleglosci; independence avenue)-এর একটি পরিত্যক্ত ভবনে আত্মগোপন করেন স্পিলম্যান। ভবনের চিলেকোঠায় কোনোরকম মাথা গুঁজে থাকতেন তিনি। পরে এই ভবনেই তাকে খুঁজে পায় জার্মান নাৎসি সেনা কর্মকর্তা ভিম হোযেনফেদ।
স্পিলম্যান তার বই ‘দ্য পিয়ানিস্ট: দ্য একস্ট্রাঅর্ডিনারি ট্রু স্টোরি অব ওয়ান ম্যান’স সার্ভাইবাল ইন ওয়ারশ’-এ হোযেনফেদের সাথে প্রথম সাক্ষাতের বর্ণনা দিয়েছেন।
আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল। আমি জড়সড় হয়ে বসে ঐ অফিসারের দিকে নিষ্প্রভ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম।
নাৎসি অফিসার হোযেনফেদ তখন স্পিলম্যানকে তার পেশা জিজ্ঞেস করেন। উত্তরে স্পিলম্যান নিজেকে একজন পিয়ানোবাদক হিসেবে পরিচয় দিলে হোযেনফেদ তখন স্পিলম্যানকে নিয়ে খাবারঘরে আসেন। সেই ঘরে একটি পিয়ানো ছিল। হোযেনফেদ তখন স্পিলম্যানকে কিছু বাজিয়ে শোনানোর জন্য আদেশ করেন।
শেষ কবে হাত খুলে পিয়ানো বাজিয়েছেন মনে নেই স্পিলম্যানের। অনেকদিনের না কাটা নখের ময়লা হয়ে যাওয়া আঙুলগুলো শক্ত হয়ে গেছে। স্পিলম্যানের হাত কাঁপতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পর নিজেকে সামলে নিয়ে পিয়ানোতে চপিনসের ‘ব্যালে ইন জি মাইনর’-এর সুর তুলেন স্পিলম্যান। ভ্লাদিস্লোয়া স্পিলম্যান সেই সময় পোল্যান্ডের অন্যতম পিয়ানোবাদক ছিলেন। তার অনেক ভক্তও ছিল দেশজুড়ে। এতবছর পর পিয়ানো বাজালেও তার সুর শুনে ঠিকই মুগ্ধ হলেন জার্মান কর্মকর্তা।
নিরবতা ভাঙেন হোযেনফেদ। “আপনার এখানে থাকা একদম উচিত হবে না। আপনাকে আমি এখান থেকে বের করে শহরের বাইরে একটা গ্রামে নিয়ে যাব। সেখানে আপনি নিরাপদ থাকবেন।”
স্পিলম্যানকে উদ্দেশ্য করে বলেন হোযেনফেদ। “আমার পক্ষে এখান থেকে যাওয়া সম্ভব নয়।” জবাব দিলেন স্পিলম্যান। তার ইহুদি পরিচয় জানার পরও হোযেনফেদ স্পিলম্যানকে প্রেপ্তার বা মারার চেষ্টা করেননি।
-আপনি কোথায় থাকেন?
-চিলেকোঠায়।
-চলুন, জায়গাটা দেখাবেন আমাকে।
স্পিলম্যানের লুকানোর জায়গা দেখে নিয়ে হোযেনফেদ সেখান থেকে আপাতত চলে যান। পরে সময়ে সময়ে তিনি তার জন্য পাউরুটি, চাটনি এসব নিয়ে আসতেন। ওয়ারশ ছেড়ে যাওয়ার আগে তিনি শীত থেকে বাঁচার জন্য স্পিলম্যানকে তার নিজের সামরিক ওভারকোটটি পর্যন্ত দিয়ে যান।
১৯৪৫ সালে রেড আর্মি জার্মানিতে পদার্পণ করে, জার্মানরা পরাজিত হয়। স্পিলম্যান বেঁচে যান যুদ্ধে কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো তার জীবনের ত্রাতা হয়ে আসা সেই নাৎসি অফিসারের নাম তিনি ১৯৫০ সালের আগ পর্যন্ত জানতে পারেননি।
ভিম হোযেনফেদ পরে তার দলসহ সোভিয়েত বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। তাকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ২৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। জনশ্রুতি অনুযায়ী যুদ্ধের সময় হোযেনফেদ আরো কয়েকজন ইহুদিকেও বাঁচিয়েছিলেন। বিচার চলাকালীন সময় তিনি তার স্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে স্পিলম্যানসহ সেসব ইহুদিদের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন তাকে সাহায্য করার জন্য।
১৯৫০ সালে পোলিশ পুলিশের সাহায্য নিয়ে স্পিলম্যান হোযেনফেদকে বাঁচাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। তিনি ১৯৫২ সালের ২৩ অগাস্ট একটি সোভিয়েত কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় মারা যান।
হোযেনফেদ
হোযেনফেদ ১৮৯৫ সালের ০২ মে তৎকালীন জার্মানির প্রুসিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য তিনি আয়রন ক্রস সেকেন্ড ক্লাস পদক লাভ করেন। তিনি হিটলারের সমর্থক ছিলেন এবং থার্ড রাইখে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু একসময় তার এই ভ্রান্তি দূর হয়। তার ডায়েরি ও স্ত্রীর কাছে দেওয়া চিঠি পড়ে বোঝা যায় একসময় তিনি হিটলার ও নাৎসিবাদের উপর বিশ্বাস হারান।
হিটলার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অপ্রাপ্তবয়স্ক বালক-বালিকা থেকে শুরু করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভেটেরান, সবাইকে জোর করে রণক্ষেত্রে পাঠান। হোযেনফেদকেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বাধ্যতামূলকভাবে অংশগ্রহণ করতে হয়। ১৯৩৯ সালের অগাস্ট মাসে তিনি জার্মান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। পরে তাকে পোল্যান্ডে পাঠানো হয় কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প পরিচালনার জন্য।
পোল্যান্ডে নাৎসি বাহিনীর অত্যাচার দেখে তিনি যেমন অবাক হন, তেমনই বিতৃষ্ণও হয়ে পড়েন। স্ত্রীকে লেখা একটি চিঠিতে তিনি বলেন,
আমরা কেমন কাপুরুষ… এর জন্য আমরা তো শাস্তি পাবই, পরবর্তীতে আমাদের সন্তানদের কপালেও তা জুটবে। ইহুদিদের গণহত্যা করে আমরা আসলে যুদ্ধটা হেরে গিয়েছি… আমরা দয়া বা সমাবেদনার একটুও যোগ্য নই।
আরেকটি চিঠিতে তিনি জার্মান এবং জার্মান সেনাবাহিনীর অংশ হওয়ায় নিজের প্রতি লজ্জা প্রকাশ করেন।
১৯৪০ সালের জুলাই মাসে তাকে ওয়ারশে স্থানান্তর করা হয়। ব্যাটালিয়ন স্পোর্টস অফিসার হিসেবে তিনি খেলার মাঠে ইহুদিদের কাজের সুযোগ করে দিয়ে অনেকের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। ১৯৪২ সালে লিয়ন ওয়ার্ম নামের এক ইহুদি ট্রেবলিংকা কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পগামী ট্রেন থেকে পালিয়ে যায়। পরে সে ওয়ারশে ফিরে এসে হোযেনফেদের দয়ায় প্রাণ বাঁচায়। হোযেনফেদ তাকে একটি নকল পরিচয়পত্র দিয়ে কাজের সুযোগ করে দেন। ওয়ার্ম এবং আরো অনেকের সাক্ষ্য অনুযায়ী হোযেনফেদ প্রায় ৬০ জন ইহুদি ও অ-ইহুদির প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন।
যুদ্ধের পর
যুদ্ধ শেষ হলে স্পিলম্যান পুনরায় পিয়ানোবাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৪৫ সাল থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত স্পিলম্যান পোলিশ রেডিওর সংগীত বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালে ‘পোলিশ রেডিও স্টেশন ওয়ান’-এর নাম পাল্টিয়ে ভ্লাদিস্লোয়া স্পিলম্যানের নামে নামকরণ করা হয়।
চলচ্চিত্র
যুদ্ধে তার বেঁচে থাকার গল্প নিয়ে স্পিলম্যান ১৯৪৬ সালে ‘দ্য ডেথ অভ আ সিটি’ নামে একটি বই লিখেন। রাজনৈতিক কারণে এই বইটিতে হোযেনফেদের জাতীয়তা অস্ট্রিয়ান হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ১৯৯৮ সালে স্পিলম্যানের ছেলে আঁদ্রেজ বইটির বর্ধিত সংস্করণ বের করেন যার ইংরেজি অনুবাদ ‘দ্য পিয়ানিস্ট’ নামে প্রকাশিত হয়। এই বইটির উপর ভিত্তি করে, স্পিলম্যানকে নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরি করেন রোমান পোলানস্কি।
২০০২ সালে বানানো ‘দ্য পিয়ানিস্ট’ সিনেমায় স্পিলম্যানের ভূমিকায় অভিনয় করেন অ্যাড্রিয়েন ব্রডি। রোমান পোলানস্কি নিজেই কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প থেকে পালিয়ে বেঁচেছিলেন। তাই নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছেন তিনি এটি বানাতে। সিনেমাটি অনেকগুলো পুরষ্কারের পাশাপাশি তিনটি বিভাগে অস্কার জিতে নেয়।