একই বৃন্তে দুটি কুসুম: উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্বের গোড়ার কথা

   “অহরহ তব আহ্বান প্রচারিত, শুনি তব উদার বাণী-

    হিন্দু বৌদ্ধ শিখ জৈন পারসিক মুসলমান খ্রিস্টানী”

আজ থেকে ঠিক ৭১ বছর আগে অভিন্ন ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি পৃথক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছিল। যুগ যুগ ধরে একসাথে বসবাস করা হিন্দু ও মুসলিম দুটি জাতির হঠাৎ কী এমন দরকার পড়েছিল আলাদা হবার? অনেকেই এর জন্য ব্রিটিশদের Divide and Rule নীতিকে দায়ী করে থাকেন, কিন্তু এই বিভক্তির সকল কাঁচামাল কি আগে থেকেই এই উপমহাদেশে মজুদ ছিল না? ব্রিটিশ শাসনের আওতা থেকে বেরোনোর প্রায় ছয় যুগ পেরিয়ে যাবার পরেও গোটা উপমহাদেশে এখনও সংঘাত, অশান্তি ও অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজমান। হোক খেলার মাঠ, হোক ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত কিংবা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত, হিন্দু ও মুসলিম দুটি জাতির মধ্যে ঘৃণার সম্পর্ক প্রায় সর্বত্র প্রকট। এমনকি নিজ ভূমিতে বাস করা মোট ভারতবাসীর প্রায় ১৫% মুসলিমেরও এই ঘৃণা থেকে নিস্তার নেই। কিন্তু এই ঘৃণা বা এই বিভক্তির উদ্ভব কীভাবে হলো, তার শেকড় অনুসন্ধানের সামান্য প্রয়াস এই লেখা।

মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম; source: twitter.com

‘পাকিস্তান’ রাষ্ট্র সৃষ্টির প্রধান মতাদর্শগত উৎস ছিল জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্ব। উপমহাদেশে মুসলিম আত্মজাগরণ ও মুসলিম পরিচিতির সূচনা হয় প্রখ্যাত মুসলিম আধুনিকবাদী ও সংস্কারক স্যার সৈয়দ আহমদ খানের হাতে। অনেক পাকিস্তানির মতে, দ্বিজাতি তত্ত্বের মূল নির্মাতা তিনিই। পরবর্তীতে আল্লামা ইকবাল এর দার্শনিক ব্যাখ্যা দেন ও কায়েদ-এ-আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ একে রাজনৈতিক বাস্তবতা দান করেন। ‘মুসলিমরা একটি পৃথক জাতি’- এই বিতর্কিত তত্ত্বই পাকিস্তান সৃষ্টির কারণ। কিন্তু তা-ই যদি হয়, তাহলে কি করে সেই মুসলিম জাতিরই একটি অংশ (বাংলাদেশ) সেই ‘জাতি’কে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করে, ভয়ানক অভিজ্ঞতা আর অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্য দিয়ে আলাদা হয়ে গেল?

ভারতভূমিতে ইসলামের যাত্রা বিস্ময়কর। প্রথমে আক্রমণ থেকে সহাবস্থান, তারপর একরকম আত্তীকরণে এসে শেষ হয় এর নকশা। ভারতের ঐক্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, তা শেষমেষ ভারতকেই বাতিল করে এক পৃথক জাতিগত পরিচয় খোঁজে এবং পরিণতিতে পোকায় খাওয়া পাকিস্তানে এসে ঠেকে। যে ভারত মধ্যপ্রাচ্যের চাইতেও বেশি মুসলিমের আধার ছিল, সেই ভারত কি করে এই মহান ধর্মের ধ্বজাধারী না হয়ে বিভক্তির পথে এগোল, সেটিও ভেবে দেখার বিষয়। দেড় হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসলাম ও ইসলামীয় সংস্কৃতি ভারতীয় উপমহাদেশের বহুস্তরীয় সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছিল, মুসলিম জনসাধারণ ভারতের সাধারণ বাসিন্দা হয়েই প্রজন্মান্তরে বসবাস করছিল। তাহলে কী করে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলতে পারলেন, “মুসলিমরা একটি পৃথক জাতি”? তার চেয়ে গুরুতর প্রশ্ন- নেহেরু, পাটেল থেকে শুরু করে কংগ্রেস নেতাদের একটি পুরো প্রজন্ম কেন এই ধারণাটি গ্রহণ করে নিলেন? তবে কি ইসলাম বরাবরই এ দেশে আক্রমণকারীর ধর্ম হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে?

জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্ব ছিল দেশভাগের অন্যতম বড় কারণ; source: twitter.com

খ্রিস্টধর্ম ও জরথ্রুষ্ট্রবাদের মতো ইসলামও ভারতে এসেছে বাইরে থেকে। এর উৎপত্তি অন্যত্র এবং ভারতে এর আগমন আক্রমণকারীর তলোয়ারের সাথে। কিন্তু ভারত হলো সংস্কৃতির এক বিশাল সাগর, এখানে একের পর এক পলিমাটির আস্তরণ এসে পড়ে এবং মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। এখানে কোনটি মৌলিক ভিত্তির স্তর, তা নির্ণয় করা মুশকিল। বিশিষ্ট হিন্দুত্ববাদী ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার সাবেক সম্পাদক গিরিলাল জৈন বলেন, “আধুনিক মন ইসলামকে কোনোভাবেই অনুধাবন করতে পারে না, কারণ ইসলাম হলো একটি সামগ্রিক তত্ত্ব। ইসলামীয় সমাজ ইসলাম ধর্মে প্রোত্থিত, উল্টোটা নয়।”

ভারতবর্ষে মুসলিমদের আগমন হয় তিনটি আলাদা পর্যায়ে, যা প্রায় আট শতাব্দী ধরে চলতে থাকে। প্রথম পর্যায়ে আরবরা আসে সপ্তম ও অষ্টম শতাব্দীতে। মুহাম্মদ বিন কাসিম রাজা দাহিরকে পরাজিত করে সিন্ধু ও মুলতান দখল করে নেন। ‘এনসাইক্লোপিডিয়া অন জিন্নাহ’ বইতে লেখক প্রকাশ কে সিং ভারতবর্ষে মুহাম্মদ বিন কাসিমের পা রাখাকে পাকিস্তান সৃষ্টির প্রথম ধাপ বলে উল্লেখ করেছেন। দশম ও একাদশ শতাব্দীতে আসে আফগান ও ফার্সিরা। এরপর দ্বাদশ থেকে ষোড়শ শতাব্দীতে আসে তুর্কি ও মুঘলরা। প্রথম পর্যায়ের আক্রমণের পর খুব কম আরবই এ দেশে থেকে যায়। দ্বিতীয় পর্যায়েও তা-ই, খুব কম ফার্সিই এ দেশে রয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তুর্কি বা আফগানদের ক্ষেত্রে তা ঘটলো না, বরং তারা হিন্দুস্তানকেই তাদের বাসভূমি করে তুললো। মুঘলরাও ক্রমশ ভারতবর্ষের মানুষ ও সংস্কৃতির সাথে মিশে গিয়ে পুরোদস্তুর ভারতীয় হয়ে উঠলো।

পারস্য প্রভাবিত তুর্কিদের ভারতে আসাকে ইতিহাসবিদরা প্রায়ই ‘মুসলিম বিজয়’ বলে থাকেন। কিন্তু এটি এক অর্থে অতি সরলীকরণ। এর ফলে বেশ কিছু ধারণাগত ও শব্দগত ভুলের সৃষ্টি হয়। প্রশ্ন হলো, আমরা কি আক্রমণকে আক্রমণকারীর ধর্মবিশ্বাস দিয়ে চিহ্নিত করি, নাকি সে যেখান থেকে এসেছে সেই দেশ দিয়ে চিহ্নিত করি? কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারকে আমরা নিশ্চয় আমেরিকায় ‘খ্রিস্টান বিজয়’ বলে অভিহিত করি না, কিংবা ১৪৯২ এর পরবর্তী সময়টাকে নিশ্চয়ই ‘আমেরিকার খ্রিস্টযুগ’ নামে কেউ উল্লেখ করি না। স্পেন যদিও মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বিজয়কে দ্বিধাহীনভাবে খ্রিস্টধর্ম দিয়েই বর্ণনা করেছিল, তবু সে দেশের সভ্যতাকে ধ্বংস করাটাকে ‘স্প্যানিশ বিজয়’ নাম দিয়েই বিবৃত করা হয়, ধর্ম দিয়ে নয়। আর সবচেয়ে বড় কথা, ব্রিটেনের ভারত জয়কে কেন ‘ব্রিটিশ যুগ’ বলা হয়, কেন ‘খ্রিস্টান যুগ’ বলা হয় না? এরকম ভুল ধারণার জন্যই আমাদের ভাষায় ভুল এসে যায়, আর এই বিরক্তিকর প্রশ্নটা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে যে ইসলামের ক্ষেত্রেই কেন এর ব্যতিক্রম হলো? ইসলামের বিজয়ের ধারণা কী করেই বা ঐতিহাসিকদের মধ্যে গেঁথে বসলো, সেই প্রশ্নও রয়ে যায়। এই একবিংশ শতাব্দীতেও সেই ধারণা দিব্যি টিকে রয়েছে। শুধু এই ত্রুটিপূর্ণ ধারণার কারণেই উপমহাদেশের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো জিন্নাহর ভারতের মধ্যে একটি পৃথক জাতির দাবি তোলা এবং একটি পৃথক ভৌগোলিক সত্ত্বা দাবি করা।

ক্ষতি হয়েছে অনেক; source: kashmiruzma.net

মধ্যযুগের ভারতের ইতিহাস লিখেছিলেন যে ফার্সি লেখকরা, তারা ইসলামকে তাদের পৃষ্ঠপোষক নবাবের সাথে এক করে দেখতেন। তাই নবাবের গুণগান করতে গিয়ে তারা এরকম ত্রুটিপূর্ণ কথা বলেছিলেন যে, “ভারতের ইতিহাস শুরু হলো ঠিক সেই সময়, যখন মুসলিমরা দিল্লি (কিংবা আগ্রা, মালওয়া) শহরের আশেপাশে রাজত্ব শুরু করে।” এই মনোভাবটি শুরু হয় তুর্কি শাসনের সময় থেকেই। যদিও আশ্চর্যভাবে যে সময় দিল্লীর সুলতানরা তাদের রাজত্বের গোড়াপত্তন করেন, সেই সময় ইসলামের জন্মভূমি মঙ্গোলদের আক্রমণে ছারখার হয়ে যায়। মঙ্গোলদের বিপুল শক্তি আর হিংস্রতা বহু ফার্সি সংস্কারে দীক্ষিত তুর্কিকে নিজেদের জন্মভূমি ছাড়তে বাধ্য করে। ইরান ও মধ্য এশিয়া থেকে তাদের অনেকে হিন্দুস্তানে আসে শরণার্থী হয়ে। এখানে তারা আশ্রয় পায়, নতুন সুলতানের দরবারে চাকরিও পায়। এভাবে দিল্লিতে যে মুসলিম সম্প্রদায় গড়ে ওঠে, তাদের মধ্যে একটি রক্ষণশীল মানসিকতা তৈরি হয়। আশ্রয়দাতা ভারতবর্ষ তাদের নিরাপদ আবাস ও অবশিষ্ট ইসলামী সভ্যতার কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে। এর পর থেকেই এই খানদানী  প্রশাসক, যোদ্ধা এবং বিদ্বানরা ভারতে মুসলিমদের উপস্থিতিকে ইসলামের আধিপত্য ও ইসলামের সাথে এক করে দেখে। কিন্তু এর বিপরীতে স্থানীয় হিন্দুদের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল, সেটিও জানতে হবে। হিন্দুরা তাদের আশ্রয় দিয়েছে, কিন্তু নিজেদেরকে সম্পূর্ণ দেয়নি। তাদের ভেতরে যে জাতীয়তাবাদ সুপ্ত ছিল, তা সে ভারতীয়ত্বই হোক আর হিন্দুত্বই হোক, ক্রমশ তা নিজেদের উপস্থিতি স্পষ্ট করতে লাগলো।

মোটামুটি এই সময় আল বিরুনী ভারতবর্ষে আসেন এবং সবকিছু দেখে শুনে খেদ প্রকাশ করেন। তার ভাষ্যমতে,

“হিন্দুরা মনে করে তাদের দেশ ছাড়া আর কোনো দেশ নেই, তাদের মতো কোনো রাষ্ট্র নেই, তাদের রাজার মতো রাজ্য নেই, তাদের মতো ধর্ম নেই, তাদের মতো বিজ্ঞান নেই। তারা উদ্ধত, অসার আত্মশ্লাঘাপূর্ণ, আত্মগর্বী এবং অবিচলিত। যা তারা জানে, তা জানানোর বিষয়ে তারা কৃপণ স্বভাব, নিজেদের দেশেরও অন্য জাতের কাছ থেকে সে জ্ঞান আড়াল করতে তারা অত্যন্ত যত্নশীল, বিদেশীদের থেকে তো আরও বেশি।”

সুতরাং আশ্চর্য নয় যে, আক্রমণকারী ও আক্রান্ত, মুসলিম ও হিন্দুর ব্যবধান এভাবে আমাদের সামাজিক চেতনা ও সমাজব্যবস্থার মধ্যে ছড়িয়ে যেতে লাগলো।

অষ্টম থেকে চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত এই বিদেশীদের পরিচয় দেয়া হতো ভাষা কিংবা জাতি দিয়ে, ধর্ম দিয়ে নয়, যেমন- তুর্কি, খোরাসানী, ইরানী কিংবা আরব। এরও পরে আসে ‘ম্লেচ্ছ’ শব্দটি। এর অর্থ বহিরাগত বা অপরিচিত (শব্দটিতে বর্জন এর যে অর্থ রয়েছে, তা অনেক পরে সংযোজিত)। সে সময়ের হিন্দুরা তাদের ধর্মবিশ্বাস বা ঐতিহ্যকে তখনও এত বিশেষ বলে ভাবতো না যে তার প্রেক্ষিতে শুধু ধর্মের ভিত্তিতে তকমা দিয়ে চিহ্নিত করা সঙ্গত মনে করবে। যেসব গোষ্ঠী ভারতে আক্রমণ করতো বা আশ্রয় খুঁজতে আসতো, মুসলিমদের তেমনই এক বহিরাগত দল বলে গ্রহণ করেছিল হিন্দুরা। হিন্দুরা মুসলিমদের আক্রমণকে ‘ইসলামী আক্রমণ’ বা ‘মুসলিম আক্রমণ’ বলে মনে করতো না। তাহলে কি ভারতবর্ষের ইতিহাস চর্চার ধরনটিই এই পার্থক্যমূলক মনোভাবের জন্য দায়ী? অর্থাৎ, তৎকালীন সামাজিক প্রেক্ষাপট যা-ই থাক, সময়ের সাথে সাথে ঐতিহাসিকদের বিবিধ হস্তক্ষেপের কারণেই ধীরে ধীরে উপমহাদেশের এই দুটি প্রধান ধর্মের মধ্যে ঘৃণার সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে থাকতে পারে। অথবা এমনও হতে পারে যে, হিন্দুস্তানের একটি অংশ প্রচ্ছন্নভাবে যে জাতীয়তাবাদ ধারণ করতো, তা একসময় প্রকট হয়ে ওঠে; আর প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত হতে থাকে ‘ম্লেচ্ছ’ বিরোধী এক মনোভাব।

এতই কি সহজ? source: loadtv.biz

সহস্র বছরের পুরোনো ইতিহাস নির্ণয় যতটা কঠিন, সহস্র বছরব্যাপী মানুষের পরিবর্তিত মনস্তত্ত্ব অনুধাবন করা তার চেয়ে শতগুণ কঠিন। কিন্তু একটা বিষয় বোঝা খুবই সহজ- যতভাবেই এই উপমহাদেশে হিন্দু ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিভাজন আসুক না কেন, জাত-ধর্ম নির্বিশেষে ক্ষতি বরাবর এই উপমহাদেশের সাধারণ মানুষেরই হয়েছে। দাঙ্গা, রক্তপাত, ভিটেমাটি হারিয়ে উদ্বাস্তু হওয়া, স্বজন হারানো, এসবই ভারতবর্ষ বিভাজনের ফলাফল। ২০০৬ সালে নিজের প্রকাশিত বই ‘Identity and Violence’ নিয়ে আলোচনার সময় নিউইয়র্ক পোস্ট-এ দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে অমর্ত্য সেন বলেন,

“কোনো একক পরিচয়ের ভিত্তিতে করা যেকোনো শ্রেণীবিভাগ একটি নির্দিষ্ট উপায়ে মানুষের মেরুকরণ করে। কিন্তু আমরা যদি মাথায় রাখি যে ধর্ম ছাড়াও আমাদের ভাষা, পেশা, ব্যবসা, রাজনীতি, শ্রেণী ও দারিদ্র ছাড়াও আরও বিভিন্ন বিষয়ের সাথে জড়িত বিভিন্ন রকম পরিচয় রয়েছে, তাহলে একজনের মেরুকরণ আরও বৃহত্তর চিত্র দ্বারা প্রতিহত করা সম্ভব।”

তিনি আরও বলেন,

“আমার মনে পড়ে ১৯৪০ এর হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময়, আমি যখন শিশু, তখন আমি বাংলায় (সেন তখন ঢাকায় ছিলেন) ছিলাম। দাঙ্গার শিকার যারা হতো, তারা প্রায়ই একটা অভিন্ন শ্রেণী পরিচয় বহন করতো। যারা মারা পড়তো, তারা হয় মুসলিম গরীব, নয়তো হিন্দু গরীব হতো। তারা আরও একটা ধর্মহীন সাংস্কৃতিক পরিচয় বহন করতো- সেটি হলো বাংলা ভাষা। আর তাই এটি মোটেও আশ্চর্যজনক নয় যে ভাষা ও সংস্কৃতি বাংলাদেশে বেশি জরুরি হয়ে পড়লো।”

যেমনটা আমরা জানি, পাকিস্তানের থেকে আমাদের আলাদা হওয়ার কারণ ধর্মভিত্তিক ছিল না, বরং ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল।

নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিকের ভাষ্যমতে একে অপরকে বোঝাই হতে পারে শান্তির পথে প্রথম পদক্ষেপ। আর সেটিই আমাদের একমাত্র আরাধ্য হওয়া উচিত। কারণ এক থা সত্য যে উপমহাদেশের এই মহীরূহে “মোরা একই বৃন্তে দু’টি কুসুম হিন্দু-মুসলমান”

পারস্পরিক বোধগম্যতাই সবচেয়ে বড় সমাধান; source: thenews.com.pk

তথ্যসূত্র-

জিন্না ভারত দেশভাগ স্বাধীনতা- যশোবন্ত সিংহ; প্রকাশকাল- ২০০৯ (পৃষ্ঠা ৭-১০)

Featured Image: ur.kanigas.com

Related Articles

Exit mobile version