
অর্থ উপার্জনের জন্য মানুষ ক্ষমতা, প্রভাব, নিষ্ঠুরতা ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আসছে যুগ যুগ ধরেই। কিন্তু অবৈধ পথে অর্থ আয় ও পাচার করার কাজটি কোনো কোনো মানুষ এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে তাদের অর্থের পরিমাণ ছাড়িয়ে গেছে মানুষের ধারণারও সীমানা। বিশেষ করে মাফিয়া সিন্ডিকেট তৈরি করে, মাদক ব্যবসা করে আর অতি অবশ্যই রাষ্ট্রক্ষমতাকে ব্যবহার করে ইতিহাসের বেশ ক’জন মানুষ অকল্পনীয় পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছে ইতিহাসে। আর এদের মধ্যে গুটি কয়েক জন বাদে বাকিরা অপরাধী হিসেবে শাস্তি পাওয়া তো অনেক পরের ব্যাপার, মোটামুটি আইনের ধরা ছোঁয়ার বাইরেই কাটিয়েছে সারা জীবন। ইতিহাসের এমন ক’জন কুখ্যাত অবৈধ অর্থের মালিকের কথা তুলে ধরা হল আজ।
সেমিওন ইউদকোভিচ মোগিলেভিচ

সেমিওন ইউদকোভিচ মোগিলেভিচ (জন্ম ১৯৪৬)
ইউক্রেনে জন্ম নেয়া মোগিলেভিচ কে ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো অভিহিত করত পৃথিবীর তাবৎ রাশিয়ান মাফিয়া সিন্ডিকেটের ‘সর্দারদের সর্দার’ হিসেবে। প্রখর বুদ্ধিমত্তার কারণে তাকে ‘দ্য ব্রেইনি ডন’ নামেও ডাকা হত। ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার অভিযোগে ২০০৮ সালে মোগিলেভিচকে মস্কোতে গ্রেফতার করা হয়। আবার এক বছরের কম সময়ের মধ্যে ছাড়া পাওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলে সে। রাশিয়ার সরকারি বক্তব্যে বলা হয়, মোগিলেভিচের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো ‘খুব একটা গুরুতর’ ছিল না! এফবিআই এর মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকার শীর্ষ দশের মধ্যে চার নাম্বারে আছে মোগিলেভিচের নাম।
এফবিআই এর ঘোষণা অনুযায়ী ‘পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মবস্টার’ হিসেবে কুখ্যাতি পাওয়া মোগিলেভিচ অবৈধ অর্থ আয় করেছিল ১০০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি। অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান, নারী পাচার, পতিতা ব্যবসা ও মুক্তিপণ আদায়ের মাধ্যমে ভয়ঙ্কর এক অপরাধ সাম্রাজ্য গড়ে তোলা মোগিলেভিচ মস্কোতে স্বাধীন ভাবেই বসবাস করে চলেছে এবং তার বিরুদ্ধে কোনো ধরণের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয় নি।
মেয়ার ল্যানস্কি

মেয়ার ল্যানস্কি (জন্ম: ১৯০২, মৃত্যু: ১৯৮৩)
মেয়ার ল্যানস্কিকে বলা হয় আধুনিক উপায়ে মানি লন্ডারিং বা অর্থ পাচারের জনক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘ন্যাশনাল ক্রাইম সিন্ডিকেট’ গড়ে তোলার অন্যতম কারিগর ছিল ল্যানস্কি। সারা পৃথিবী জুড়ে জুয়ার সাম্রাজ্য গড়ে তোলার কাজ করেছিল সে। লাস ভেগাস, কিউবা, বাহামা ও লন্ডনের ক্যাসিনোর মালিক ছিল ল্যানস্কি। ইতালিয়ান মাফিয়াদের মধ্যে তার প্রভাব ছিল এবং এদের নিয়ন্ত্রণাধীন আন্ডারওয়ার্ল্ড শক্তিশালী করার পেছনে তার ভূমিকা ছিল। যদিও সে এমন সংশ্লিষ্টতাকে সবসময়ই অস্বীকার করত।
৫০ বছর ধরে মাফিয়া গোষ্ঠীর কার্যকলাপের নেতৃত্ব দিয়ে গেলেও ল্যানস্কির বিরুদ্ধে ‘অবৈধ জুয়া’ খেলা ছাড়া আর কোনও অভিযোগ প্রমাণ করা যায় নি।। বিখ্যাত গডফাদার, পার্ট টু সিনেমায় মাফিয়া ডন হাইমেন রথ এর চরিত্রটি তৈরি করা হয়েছিল মেয়ার ল্যানস্কির আদলে। আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে ‘সফল’ গ্যাংস্টারদের একজন বলা হয় তাকে। ল্যানস্কির অবৈধ অর্থের পরিমাণ ছিল প্রায় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। জীবদ্দশায় এর জন্য কোনো রকম শাস্তিভোগ করতে হয় নি তার।
আলফোনসে গ্যাব্রিয়েল আল কাপোনে

আলফোনসে গ্যাব্রিয়েল আল কাপোনে (জন্ম: ১৮৯৯, মৃত্যু: ১৯৪৭)
গ্যাংস্টার ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয়তা অর্জনকারীদের একজন হল আল কাপোনে। ১৯২০ এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘শিকাগো আউটফিট’ নামক গ্যাং এর প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ও এর বস ছিল কাপোনে।
বিশ বছর বয়সে কাপোনে শিকাগোর মাফিয়া বস জনি টরিওর বডিগার্ড হয়। তার আস্থাভাজন হয়ে ওঠার পর টরিও অবসর নিলে কাপোনে হয় গ্যাং এর প্রধান। অবৈধ ব্যবসা চালানোর জন্য নিষ্ঠুর সব কাজ করলেও শহরের মেয়র ও পুলিশকে হাত করে নির্বিঘ্নে অপরাধের মাত্রা বাড়িয়ে চলছিল আল কাপোনে। সমাজসেবায় প্রচুর টাকা পয়সা খরচ করে রবিন হুড হিসেবে পরিচিত হয়েছিল সে। কিন্তু শিকাগোতে গ্যাং গুলোর এক ভয়ঙ্কর সংঘর্ষে সাত জন নিহত হওয়ার পর সারা দেশে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয় এবং সংবাদপত্রে আল কাপোনেকে ‘এক নাম্বার গণশত্রু’ ঘোষণা করা হয়। চোরাচালান, জুয়া, পতিতালয় চালানোর মত অনেক অবৈধ ব্যবসা করলেও আল কাপোনের জেল হয়েছিল ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার অপরাধে। শাস্তি হিসেবে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয় তাকে। সাত বছর মাফিয়া বস হিসেবে থাকা কাপোনের অবৈধ অর্থ ছিল ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি, জেলের ভেতরেও ছিল সাত বছর। আলকাতরাজ কারাগারে থাকা অবস্থাতেই কাপোনে মৃত্যুবরণ করে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে।
সানি অ্যাবাশা

সানি অ্যাবাশা (জন্ম: ১৯৪৩, মৃত্যু: ১৯৯৮)
সানি অ্যাবাশা ছিল নাইজেরিয়ার একজন সামরিক অফিসার, সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সে নাইজেরিয়ার রাষ্ট্রপতি হয় ১৯৯৩ সালে। উপদেষ্টা গোয়ার্জোর সহায়তায় বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় অর্থ পাচার করেছিল অ্যাবাশা। ভুয়া সরকারি আর্থিক লেনদেনের কার্যক্রমের আড়ালে নিজের বাড়িতেই অর্থ জমা করত সে। এরপর তার ছেলে সেগুলো ভুয়া ব্যাঙ্ক একাউন্টের মাধ্যমে পাচার করত। এভাবে পাঁচ বছরের শাসনামলে সানি অ্যাবাশা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার পাচার করে ফেলে!
১৯৯৮ সালে ৫৪ বছর বয়সে মারা যায় অ্যাবাশা। মৃত্যুর পরপরই তড়িঘড়ি করে তাকে কবর দিয়ে দেয়া হয়। শোনা যায় বিষ খাইয়ে মারা হয়েছিল তাকে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এর তালিকায় শীর্ষ দুর্নীতিবাজ নেতাদের মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে আছে সানি অ্যাবাশা। অবৈধ অর্থ আয়ের জন্য রাষ্ট্রের কোনো শাস্তি ভোগ করতে হয় নি তাকে।
মবুতু সেসে সেকো

মবুতু সেসে সেকো (জন্ম: ১৯৩০, মৃত্যু: ১৯৯৭)
মবুতু সেসে সেকো ১৯৬৫ থেকে ১৯৯৭ এই ৩২ বছর ধরে কঙ্গো রিপাবলিক এর প্রেসিডেন্ট ছিল। তার শাসনামলটা এমন ধরণের ছিল, গোটা দেশে ন্যায্য বেতনে কাজ করত কেবল স্পেশাল প্রেসিডেনশিয়াল ডিভিশন এর লোকেরা যারা প্রেসিডেন্ট এর শারীরিক নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত ছিল। সরকারি অফিসগুলোতে কর্মচারীদের বেতন দেয়া হত না ঠিক মত, কাজও হত না তেমন কোন। সারা দেশের মানুষ যখন খেয়ে না খেয়ে রাস্তায় মরে পড়ে থাকত এমন অবস্থায় ছিল, তখন প্রেসিডেন্ট মবুতু চড়ে বেড়াত বিলাসবহুল মার্সিডিজ বেঞ্জের বহর নিয়ে। সরকারি কোষাগারের অর্থ পাচার হত মবুতুর অ্যাকাউন্টে, সাথে তার পরিবার আর প্রভাবশালী সামরিক অফিসার ও রাজনৈতিক নেতাদের অ্যাকাউন্টে।
অর্থ পাচার করে মবুতু অর্জন করেছিল ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থ! ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এর বিশ্বের দুর্নীতিবাজ নেতাদের তালিকায় তিন নাম্বারে আছে মবুতু। ফ্রান্স থেকে একটি কনকর্ড বিমান নিয়মিত ভাড়া নিয়ে সে এবং তার পরিবার ভ্রমণ ও শপিং করে বেড়াত। প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৬৬ বছর বয়সে মারা যাবার আগে তারও কোনো বিচার হয় নি।
দাউদ ইব্রাহীম

দাউদ ইব্রাহীম (জন্ম ১৯৫৫)
বিশ্বের শীর্ষ মবস্টারদের তালিকা ভারতীয় উপমহাদেশ এর নাম অন্তর্ভুক্ত করা ব্যক্তিটি হল দাউদ ইব্রাহীম। ভারতে জন্ম নেয়া দাউদ ১৯৯৩ সাল থেকে পলাতক আছে। মুম্বাই এই ডি-কোম্পানি নামক সংগঠিত অপরাধচক্র ও সিন্ডিকেট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভারত, পাকিস্তান ও আরব আমিরাতে অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তোলে সে। ডি-কোম্পানির ৫,০০০ এর বেশি সদস্য আছে বলে জানা যায়। মুম্বাই এর ১৯৯৩ সালে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনাগুলোর পিছনে আরেক কুখ্যাত সন্ত্রাসী টাইগার মেমনের সাথে দাউদ ইব্রাহীমের সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগ রয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, ওসামা বিন লাদেনের সাথে দাউদ ইব্রাহীমের যোগাযোগ ছিল। এই অভিযোগে তাকে যুক্তরাষ্ট্র ‘গ্লোবাল টেরোরিস্ট’ হিসেবে ঘোষণা দেয় এবং ২০০৩ সালে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা তার সম্পদ ক্রোক করার জন্য জাতিসংঘের নিকট প্রস্তাব দেয়। ইন্টারপোল, মার্কিন ও রাশিয়ান গোয়েন্দা সংস্থার মতে ২০০৮ সালে মুম্বাই এর বোমা হামলা সহ আরও কয়েকটি বড় বড় হামলার পেছনে দাউদ ইব্রাহীমের হাত ছিল। ২০১০ সালে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র সাথে ইব্রাহীমের যোগাযোগ আছে বলে অভিযোগ করে যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তানের করাচির কোথাও সে লুকিয়ে আছে বলে অভিযোগ থাকলেও তা অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। যুক্তরাষ্ট্রের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকার তিন নাম্বারে থাকা দাউদ ইব্রাহীমের অবৈধ অর্থের পরিমাণ ৩০০ থেকে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার বলে জানা যায়।
ফার্ডিন্যান্ড ইমানুয়েল এড্রালিন মার্কোস

ফার্ডিন্যান্ড ইমানুয়েল এড্রালিন মার্কোস (জন্ম: ১৯১৭, মৃত্যু: ১৯৮৯)
ফার্ডিন্যান্ড মার্কোস ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ছিল ১৯৬৫ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত মার্শাল ল জারি করে ফিলিপাইনে একনায়কতন্ত্র চালায় মার্কোস। দুর্নীতি ও নিষ্ঠুরতার জন্য ইতিহাসে কুখ্যাত হয়ে আছে এই স্বৈরশাসক।
১৯৭০ সালে মার্কোস তার একনায়কতন্ত্র শুরু করার আগে ফিলিপাইনের ঋণ ছিল ২৩০ কোটি মার্কিন ডলার। আর ১৯৮৫ সালে তার শাসনামলের শেষে এই ঋণ বাড়িয়ে সে সেটাকে পরিণত করে ২৬২০ কোটি মার্কিন ডলারে!
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ নেতাদের তালিকায় দুই নাম্বারে আছে মার্কোস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড সহ আরও কয়েকটি দেশে সে নিজ অ্যাকাউন্টে পাচার করে রাষ্ট্রীয় অর্থ। তার শাসনামল শেষে তার স্ত্রী ইমেল্ডার ক্লোসেটে ২৫০০ জোড়া জুতা পাওয়া যায়! দ্য গার্ডিয়ান এর মতে, ১৯৬৫ থেকে ১৯৮৬ এই ২১ বছরে মার্কোস ১০০০ কোটি মার্কিন ডলার পাচার করেছিল অথচ তার বার্ষিক বেতন ছিল ১৩,৫০০ মার্কিন ডলার! ১৯৮৬ সালে বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে উৎখাত হবার পর তার বিচারের উদ্যোগ নেয়া হলেও ১৯৮৯ সালে হুয়াওয়ের হনুলুলুতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় মার্কোস।
মুহাম্মদ সুহার্তো

মুহাম্মদ সুহার্তো (জন্ম: ১৯২১, মৃত্যু: ২০০৮)
মুহাম্মদ সুহার্তো ছিল ইন্দোনেশিয়ার দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট। প্রথম প্রেসিডেন্ট সুকর্নকে উৎখাতের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সুহার্তো ৩১ বছর একটানা ক্ষমতায় ছিল এবং তার শাসনামল ছিল একইসাথে প্রসংশিত ও বিতর্কিত।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শিল্পায়ন, স্বাস্থ্যখাত, শিক্ষা ও জীবনযাত্রার মানের উন্নতি ঘটানোর জন্য সুহার্তোকে ইন্দোনেশিয়াতেই ‘ন্যাশনাল হিরো’ আখ্যা দেওয়ার চিন্তা করা হলেও তা ঘোষিত হয় নি। কেননা এই একনায়ক ক্ষমতা ছাড়ার পরপরই টাইম ম্যাগাজিনের একটি প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে ১৫০০ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের সম্পদ অবৈধ ভাবে আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়। সেই প্রতিবেদনে আরও অভিযোগ করা হয়, সুহার্তো প্রেসিডেন্ট থাকা কালীন অন্তত ৭,৫০০ কোটি মার্কিন ডলার তার পরিবারের মাধ্যমে পাচার করেছে। ১,৫০০ থেকে ৩,৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের অবৈধ আয়ের অভিযোগ নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এর বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ নেতাদের তালিকার ১ নাম্বারে আছে সুহার্তো। ২০০৮ সালে ৮৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণের আগে তার বিরুদ্ধে কোনো বিচারিক তদন্ত করা হয় নি।
পাবলো এমিলিও এসকোবার গাভিরিয়া

পাবলো এমিলিও এসকোবার গাভিরিয়া (জন্ম: ১৯৪৯, মৃত্যু: ১৯৯৩)
‘দ্য কিং অব কোকেইন’ খ্যাত পাবলো এসকোবার ছিল একজন কলম্বিয়ান মাদক ব্যবসায়ী। ব্যবসার শীর্ষ সময়ে এই ড্রাগলর্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাচার হওয়া কোকেইনের ৮০ শতাংশ সরবরাহ করেছে একাই। এবং সেই সময় তার আয় ছিল বছরে ২১৯০ কোটি মার্কিন ডলার! পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বকালের সবচেয়ে ধনী অপরাধী ছিল এসকোবার।
চোরাচালানের সিগারেট, ভুয়া লটারি বিক্রি আর গাড়ি চুরি দিয়ে অপরাধ জীবন শুরু হয় এসকোবারের। ১৯৭০ এর শেষে কোকেইন ব্যবসা শুরু করার আগে চোরাচালান ও মানুষ অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের কাজ করত সে। ম্যাডেলিন কার্টেল নামে মাদক পাচার নেটওয়ার্ক তৈরি করা এসকোবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাদক চোরাচালানের জন্য প্রথম বারের মত বিশেষ রুট প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৮০ সালের দিকে কলম্বিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি মাসে কোকেইন পাচার করা হত ৭০ থেকে ৮০ টন! ম্যাডেলিন কার্টেলের সাথে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অন্যান্য কার্টেলের সংঘর্ষে নিহত হয়েছে অনেক অনেক নিরীহ মানুষ, নিহত হয়েছে পুলিশ, বিচারক ও রাজনীতিবিদ।
এসকোবার কলম্বিয়ায় অনেক হাসপাতাল, স্কুল, চার্চ প্রতিষ্ঠা করে তার এই ভয়াবহ অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কলম্বিয়াকে সে পরিণত করেছিল পৃথিবীর মানুষ হত্যার রাজধানীতে। ১৯৯২ সালে কলম্বিয়ান সরকারের সাথে চুক্তি করে এসকোবার নিজের তৈরি করা বিলাসবহুল কারাগারে কয়েক মাস ছিল। পরবর্তীতে সেখান থেকে তাকে অন্য কারাগারে সরিয়ে নেয়া হবে এমন খবর শুনতে পেয়ে পালিয়ে যায় এবং ফেরারি জীবন শুরু করে। ১৯৯৩ সালে তার ৪৪তম জন্মদিনের ঠিক ১ দিন পরেই কলম্বিয়ান ন্যাশনাল পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়ার আগে এসকোবারের সম্পদের মূল্য ছিল ৩,০০০ কোটি মার্কিন ডলার যা ২০১৬ সালের হিসেব অনুযায়ী অন্তত ৫,৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ! খুন আর মাদক ব্যবসার জন্য পাবলো এসকোবারের কোনোরূপ বিচার তার জীবদ্দশায় করা যায় নি।
তথ্য ও ছবিসূত্র:
http://news.bbc.co.uk/2/hi/business/3567745.stm https://en.wikipedia.org/wiki/Meyer_Lansky https://en.wikipedia.org/wiki/Sani_Abacha https://en.wikipedia.org/wiki/Dawood_Ibrahim https://en.wikipedia.org/wiki/Al_Capone https://en.wikipedia.org/wiki/Mobutu_Sese_Seko https://en.wikipedia.org/wiki/Ferdinand_Marcos https://en.wikipedia.org/wiki/Pablo_Escobar https://en.wikipedia.org/wiki/Suharto