১৯৬৮ সালের মে মাসে মার্কিন নৌবাহিনীর এক পারমাণবিক শক্তিচালিত অ্যাটাক সাবমেরিনকে একটি গোপন অভিযানে প্রেরণ করা হয়। সাবমেরিনটির নাম ছিল ‘ইউএসএস স্করপিয়ন’ (USS Scorpion), এবং একে প্রেরণ করা হয়েছিল সোভিয়েত নৌবাহিনীর ওপর গোপনে নজরদারি করার জন্য। সাত দিন পর এর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নরফোক বন্দরে ফিরে আসার কথা ছিল, এবং সেদিন সাবমেরিনটির ক্রুদের আত্মীয়স্বজন নরফোক বন্দরের সাবমেরিন ডকে অপেক্ষা করছিল। কিন্তু সেটি আর ফিরে আসেনি।
মার্কিন নৌবাহিনী বুঝতে পারে, সাবমেরিনটি কোনো বিপদের সম্মুখীন হয়েছে। পরবর্তীতে তদন্তের ফলে জানা যায়, ‘ইউএসএস স্করপিয়ন’ এক রহস্যময় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে এবং এর সকল ক্রুর মৃত্যু ঘটেছে। কিন্তু এই রহস্যময় দুর্ঘটনা কীভাবে ঘটেছিল এবং এ জন্য অন্য কোনো রাষ্ট্র দায়ী ছিল কিনা– এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আজ পর্যন্ত মার্কিন জনসাধারণের কাছে অজানাই রয়ে গেছে।
ইউএসএস স্করপিয়ন ছিল মার্কিন ‘স্কিপজ্যাক শ্রেণি’র পারমাণবিক শক্তিচালিত একটি অ্যাটাক সাবমেরিন। ১৯৫৮ সালের আগস্টে মার্কিন কোম্পানি ‘জেনারেল ডাইনামিক্সে’র অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘জেনারেল ডাইনামিক্স ইলেক্ট্রিক বোট’ কানেক্টিকাট অঙ্গরাজ্যের গ্রোটন শহরে সাবমেরিনটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে, এবং ১৯৬০ সালের জুলাইয়ে একে আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন নৌবাহিনীতে সংযুক্ত করা হয়। অন্যান্য স্কিপজ্যাক শ্রেণির সাবমেরিনের মতো স্করপিয়নও ছিল বর্তমান সাবমেরিনগুলোর তুলনায় আকৃতিতে ছোট। এর ওজন ছিল ৩,০৭৫ টন, দৈর্ঘ্য ছিল ২৫১ ফুট ৮ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ছিল ৩১ ফুট ৭ ইঞ্চি। এতে মোট ৯৯ জন ক্রু ছিল, যাদের মধ্যে ১২ জন ছিল অফিসার এবং ৮৭ জন ছিল সাধারণ নাবিক।
সাবমেরিনটিতে ছিল ‘ওয়েস্টিংহাউজ এস৫ডব্লিউ’ পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর, এবং এর সাহায্যেই সাবমেরিনটি চলত। পানিতে ভাসমান অবস্থায় এটি ১৫ নট (knot) বেগে এবং ডুবন্ত অবস্থায় ৩৩ নট বেগে ছুটতে পারত। এর প্রধান অস্ত্র ছিল ২টি ‘মার্ক–৪৫’ সাবমেরিন–বিধ্বংসী পারমাণবিক টর্পেডো। এ ধরনের টর্পেডোতে ১১ কিলোটন ক্ষমতাবিশিষ্ট ১টি ‘ডব্লিউ৩৪’ পারমাণবিক ওয়ারহেড থাকত, এবং টর্পেডোগুলোর পাল্লা ছিল সর্বোচ্চ ৪০ নট বেগে ৮ থেকে ১৩ কি.মি. পর্যন্ত।
১৯৬৮ সালে নাগাদ স্করপিয়নের বয়স ছিল মাত্র ৮ বছর, সুতরাং আধুনিক মাপকাঠি অনুযায়ী, সাবমেরিনটি ছিল তুলনামূলকভাবে নতুন। কিন্তু এর ক্রুরা বারবার অভিযোগ জানাচ্ছিল যে, এটি পুরনো হয়ে গেছে এবং এতে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ১৯৯৮ সালে ‘ইউনাইটেড স্টেটস ন্যাভাল ইনস্টিটিউট প্রোসিডিংস’–এ প্রকাশিত একটি সম্পাদকীয়তে উল্লেখিত তথ্যানুযায়ী, স্করপিয়নকে যখন শেষবারের মতো মোতায়েন করা হয়, তখন এর ১০৯টি ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ (অর্থাৎ মেরামত ও তত্ত্বাবধানজনিত কাজ) অপূর্ণ ছিল। সাবমেরিনের হাইড্রলিক্সে নানা সমস্যা ছিল, ইমার্জেন্সি ব্লো সিস্টেম কাজ করত না, এবং ইমার্জেন্সি সীওয়াটার শাটঅফ ভালভগুলোকে তখনও বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়নি।
সর্বশেষ টহলের সময় সাবমেরিনের কনিং টাওয়ার থেকে প্রায় ১,৫০০ গ্যালন তেল সমুদ্রে নির্গত হয়। এটি হারিয়ে যাওয়ার দুই মাস আগে এর ক্যাপ্টেন কমোডর ফ্রান্সিস স্ল্যাটারি সাবমেরিনটির হাল (hull) মেরামত করার জন্য জরুরি আবেদন জানান। ভালভগুলোর সমস্যার কারণে এটি ৩০০ ফুটের বেশি গভীরে যেতে পারছিল না, এবং এ নিয়েও কমোডর স্ল্যাটারি উদ্বিগ্ন ছিলেন। ক্রুদের অনেকে ব্যঙ্গাত্মকভাবে একে ‘ইউএসএস স্ক্র্যাপআয়রন’ (USS Scrapiron) ডাকতে শুরু করেছিল। উল্লেখ্য, ‘Scrapiron’ শব্দটির অর্থ বাতিল লোহা!
১৯৬৮ সালের ২০ মে মার্কিন নৌবাহিনীর আটলান্টিক সাবমেরিন বহরের কমান্ডার ইউএসএস স্করপিয়নকে নির্দেশ দেন, পর্তুগালের অন্তর্গত আজোরেস দ্বীপপুঞ্জের নিকটে অবস্থানরত সোভিয়েত নৌবহরের ওপর নজর রাখতে হবে। উক্ত সোভিয়েত নৌবহরটিতে ছিল ১টি ‘ইকো–২ শ্রেণি’র পারমাণবিক শক্তিচালিত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র–সজ্জিত সাবমেরিন, ১টি সাবমেরিন রেস্কিউ ভেসেল, ২টি হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভে শিপ, ১টি ডেস্ট্রয়ার এবং ১টি অয়লার। ধারণা করা হয়, সোভিয়েত নৌবহরটি ন্যাটো জোটের যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিনগুলোর ওপর নজরদারি করছিল। নির্দেশ মোতাবেক স্করপিয়ন সোভিয়েত নৌবহরের ওপর পাল্টা নজরদারি করতে শুরু করে।
২১ মে স্করপিয়ন বেতারের মাধ্যমে সদর দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তাদের অবস্থান জানায়। তারা আরো জানায় যে, আনুমানিক ২৭ মের মধ্যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের নরফোকে ফিরে যেতে পারবে। প্রতিবেদনে কোনো রকম অস্বাভাবিকতার উল্লেখ ছিল না। কিন্তু ২৮ মে নাগাদ সাবমেরিনটি যখন ফিরল না এবং কোনো প্রকার যোগাযোগও করল না, তখন মার্কিন নৌ কর্মকর্তারা বুঝতে পারেন, কিছু একটা গুরুতর গণ্ডগোল হয়েছে। মার্কিনিরা স্করপিয়নকে খুঁঁজতে শুরু করল, এবং ৩১ মে নাগাদ ৫৫টি মার্কিন জাহাজ ও সাবমেরিন এবং ৩৬টি টহল বিমান ইউএসএস স্করপিয়নকে খুঁজছিল। এ সময় তারা নরফোক থেকে প্রায় ১০০ মাইল দূরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ডুবে যাওয়া একটি জার্মান সাবমেরিন খুঁজে পায়!
৫ জুন মার্কিন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে জানায় যে, ইউএসএস স্করপিয়ন সমুদ্রে হারিয়ে গেছে। এর প্রায় পাঁচ মাস পর ৩০ অক্টোবর মার্কিন নৌবাহিনী ঘোষণা করে যে, তারা স্করপিয়নের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছে। আজোরেস দ্বীপপুঞ্জ থেকে প্রায় ৪০০ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণ–পশ্চিমে সমুদ্রের ৯,৮০০ ফুটেরও বেশি গভীরে স্করপিয়নের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। মার্কিন নৌবাহিনীর সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণা জাহাজ ‘মিজার’ থেকে প্রেরিত সাবমারসিবল একে খুঁজে পায়।
বলা বাহুল্য, সাবমেরিনটির সঙ্গে এর ৯৯ জন ক্রুরও সলিলসমাধি ঘটেছিল। স্বাভাবিকভাবেই মার্কিন নৌবাহিনী সাবমেরিনটি ধ্বংস হওয়ার কারণ খুঁজে বের করার উদ্দেশ্যে তদন্ত পরিচালনা করে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা স্করপিয়নের ধ্বংসের প্রকৃত কারণ নিয়ে একমত হতে পারেননি। এ জন্য আজ পর্যন্ত ইউএসএস স্করপিয়ন ধ্বংসের কারণ অজ্ঞাত রয়েছে। স্বভাবতই এগুলো নিয়ে বিস্তর আলোচনা–সমালোচনা হয়েছে, এবং এ বিষয়ে বিভিন্ন তত্ত্ব প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু মার্কিন সরকার এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য প্রদান করেনি।
মার্কিন নৌবাহিনী কর্তৃক গঠিত কারিগরি উপদেষ্টা দলের সদস্যদের মতে, স্করপিয়ন একটি ‘হট–রান’ (hot-run) টর্পেডোর শিকার হয়েছিল। তাদের ধারণা, স্করপিয়নের কোনো একটি টর্পেডো দুর্ঘটনাবশত টিউবে থাকা অবস্থাতেই সক্রিয় হয়ে যায় এবং বিস্ফোরিত হয়ে সাবমেরিনকে ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু এই তত্ত্বকে সত্য হিসেবে প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ তাদের কাছে ছিল না।
আরেকটি তত্ত্ব অনুযায়ী, স্করপিয়নের পুরনো ট্র্যাশ ডিসপোজাল ইউনিট (টিডিইউ) কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে সমুদ্রের পানি এর মধ্য দিয়ে সাবমেরিনের ভেতরে ঢুকে পড়ে, এবং এই পানি সাবমেরিনের ৬৯ টন ওজনবিশিষ্ট ব্যাটারির ওপরে পড়ায় সেটি বিস্ফোরিত হয়ে সাবমেরিনটি ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু এই তত্ত্বকেও সত্য হিসেবে প্রমাণ করার মতো যথেষ্ট প্রমাণ নেই।
অপর এক তত্ত্বানুসারে, স্করপিয়নের ব্যাটারিগুলোতে চার্জ দেয়ার সময় বা চার্জ দেয়ার পরপরই ব্যাটারির ভেতরে জমা হওয়া হাইড্রোজেন বিস্ফোরিত হয়, এবং এর ফলে ব্যাটারি বিস্ফোরিত হয়ে সাবমেরিনটি ধ্বংস হয়ে যায়। যথারীতি, এই তত্ত্বটির ক্ষেত্রেও একে সত্য হিসেবে প্রমাণ করার মতো যথেষ্ট প্রমাণ নেই।
সর্বশেষ তত্ত্ব অবশ্য বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। এই তত্ত্বটি উপস্থাপিত হয়েছে মার্কিন সামরিক বিষয়াবলি সংক্রান্ত সাংবাদিক এড অফলি কর্তৃক রচিত ‘Scorpion Down: Sunk by the Soviets, Buried by the Pentagon: The Untold Story of the USS Scorpion’ বইয়ে, এবং মার্কিন নৌবাহিনীর প্রাক্তন সদস্য ও পরমাণু প্রকৌশলী কেনেথ সিউয়েল এবং প্রখ্যাত মার্কিন লেখক জেরোম প্রাইসলার কর্তৃক যৌথভাবে রচিত ‘All Hands Down: The True Story of the Soviet Attack on the USS Scorpion’ বইয়ে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, ইউএসএস স্করপিয়ন কোনো দুর্ঘটনার কারণে ধ্বংস হয়নি, বরং সোভিয়েতরা একে টর্পেডো নিক্ষেপ করে ডুবিয়ে দিয়েছিল।
তাদের বক্তব্য অনুসারে, ১৯৬৮ সালে মার্কিন–সোভিয়েত স্নায়ুযুদ্ধ তীব্র রূপ ধারণ করে, এবং এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে মূলত সমুদ্রের তলদেশে। ১৯৬৮ সালে চারটি সাবমেরিন রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যায়– ইসরায়েলি সাবমেরিন ‘আইএনএস ডাকার’ (১৯৬৮ সালের ২৫ জানুয়ারি), ফরাসি সাবমেরিন ‘মিনেখভ’ (১৯৬৮ সালের ২৭ জানুয়ারি), সোভিয়েত সাবমেরিন ‘কে–১২৯’ (১৯৬৮ সালের ৮ মার্চ) এবং মার্কিন সাবমেরিন ইউএসএস স্করপিয়ন (১৯৬৮ সালের ২২ মে)। একই বছরে এতগুলো সাবমেরিন নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নিতান্তই কাকতালীয় হতে পারে না, এমনটিই অফলি, সিউয়েল এবং প্রাইসলারের মত।
এজন্য তারা নিজ উদ্যোগে এই ঘটনার তদন্ত করেছেন, এবং নিজস্ব একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। তাদের মতে, ১৯৬৮ সালের ৮ মার্চ স্নায়ুযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিনিরা দুর্ঘটনাক্রমে কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে সোভিয়েত সাবমেরিন কে–১২৯ ডুবিয়ে দেয়। সোভিয়েতরা এর প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ খুঁজছিল। ১৯৬৮ সালের ২০ মে ইউএসএস স্করপিয়নকে আজোরেস দ্বীপপুঞ্জের কাছে একটি সোভিয়েত নৌবহরের ওপর নজরদারি করতে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু যখন স্করপিয়ন তাদের সদর দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করছিল, তখন সোভিয়েত জাহাজগুলোর কোনো একটিতে থাকা কেজিবি কমিউনিকেশন্স টিম এই বার্তা ইন্টারসেপ্ট করে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৬৮ সালের ২৩ জানুয়ারি উত্তর কোরীয় সৈন্যরা উত্তর কোরিয়ার নিকট মার্কিন গোয়েন্দা জাহাজ ‘ইউএসএস পুয়েবলো’কে আটক করে এবং সেটি থেকে ‘ওরেস্টেস কেডব্লিউ–৭’ ক্রিপ্টো বক্স ও ম্যানুয়াল জব্দ করে। উত্তর কোরিয়রা এগুলোকে কেজিবির কাছে হস্তান্তর করে। তদুপরি, মার্কিন নৌবাহিনীর চিফ ওয়ারেন্ট অফিসার ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ জন ওয়াকার (যিনি ছিলেন একজন কেজিবি এজেন্ট) মার্কিন নৌবাহিনীর যোগাযোগে ব্যবহৃত সমস্ত সংকেত ও তার অর্থ কেজিবিকে সরবরাহ করেছিলেন। এর ফলে সোভিয়েতরা সহজেই ২২ মে তারিখে স্করপিয়ন থেকে প্রেরিত বার্তার পাঠোদ্ধার করতে সক্ষম হয়, এবং এর মধ্য দিয়ে সেটির অবস্থান জেনে যায়। এরপর সোভিয়েতরা সেটিকে টর্পেডো নিক্ষেপ করে ডুবিয়ে দেয়। এটি ছিল মার্কিন নৌবাহিনী কর্তৃক কে–১২৯ ডুবিয়ে দেয়ার প্রতিশোধ!
শুধু তাই নয়, অফলি, সিউয়েল ও প্রাইসলারের প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী, স্করপিয়নের ২৭ মে নরফোকে পৌঁছানোর কথা ছিল, সুতরাং স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ২৭ মের আগে সেটির ধ্বংস হয়ে যাওয়ার খবর মার্কিন নৌবাহিনীর জানার কথা নয়। কিন্তু ২৭ মের আগেই মার্কিন নৌবাহিনী স্করপিয়নকে খুঁজে বের করার জন্য তল্লাশি শুরু করেছিল, যদিও তাদের আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদনে তারা এই তথ্য চেপে যায়। অর্থাৎ, মার্কিন কর্মকর্তারা প্রথম থেকেই স্করপিয়নের পরিণতির কথা জানতেন।
এই তত্ত্ব অনুযায়ী, মার্কিন নৌ কর্মকর্তারা জানতেন যে, স্করপিয়ন ধ্বংসের জন্য সোভিয়েতরা দায়ী। কিন্তু এই তথ্য প্রকাশ করে কিংবা এর পাল্টা প্রতিশোধ নিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করার মতো ইচ্ছে তাদের ছিল না। ফলে মার্কিন ও সোভিয়েত নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা কে–১২৯ ও স্করপিয়নের ধ্বংসের প্রকৃত কারণ ধামাচাপা দেয়ার জন্য পরস্পরের সঙ্গে একমত হন। এজন্য সাবমেরিন দুটি ধ্বংসের জন্য দুর্ঘটনাকে দায়ী করা হয়, এবং এই উদ্দেশ্যে নানা ধরনের তত্ত্ব উপস্থাপন করা হয়। এ প্রসঙ্গে একজন মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা মন্তব্য করেছিলেন, “৯৯ জনের জন্য মানবসভ্যতাকে ধ্বংস করা সম্ভব ছিল না।”
১৯৯৩ সালে এড অফলি একজন প্রাক্তন সোভিয়েত অ্যাডমিরালের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। সেই অ্যাডমিরালের মতে, ১৯৬৮ সালে মার্কিন ও সোভিয়েত সরকার পরস্পরের সম্মতিক্রমে এই ঘটনা দুটি ধামাচাপা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু কে–১২৯ এর নিহত ক্রুদের পরিবার–পরিজনকে তাদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে জানানো হয়েছে। অবশ্য মার্কিন সরকার এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো তথ্যই প্রকাশ করেনি। এজন্য ইউএসএস স্করপিয়নের ধ্বংসের কারণ এখনো রহস্যময় রয়ে গিয়েছে। এই প্রসঙ্গে এড অফলির মন্তব্য, “ইউএসএস স্করপিয়নকে সোভিয়েতরা ডুবিয়ে দিয়েছে, কিন্তু একে কবর দিয়েছে পেন্টাগন (মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়)।”