Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ভিক্টর লুস্টিগ: দু’বার আইফেল টাওয়ার বিক্রি করে দিয়েছিল যে প্রতারক

১৯৩৬ সালের ২৭ এপ্রিলের কথা, বিমানের টিকেট তখন একশো ডলারে পাওয়া যেত। সান ফ্র্যান্সিস্কো বে’র উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া বিমানের জানালার পাশের সিটটিতে বসে বসে সাদা মেঘের ভেলা দেখছিলেন তিনি। ক্লান্ত দুটো চোখ কী যেন খুঁজে বেড়াচ্ছে আকাশের দিগন্তরেখায়, কালো চুল পরিপাটিভাবে ব্যাকব্রাশ করা, হাত আর পা লোহার শেকলে বাঁধা। ধূসর মেঘের পর্দার সরে গেলে চোখে পড়ল আলকাট্রাজ দ্বীপ। আকাশ থেকেই আসন্ন ভয়ঙ্কর কারাজীবনের প্রথম ঝলক দেখতে পেল লোকটা। তবে কি এভাবেই শেষ হতে যাচ্ছে তার এত বছরের সফল প্রতারণার জীবন?

বলা হচ্ছিল ‘কাউন্ট’ ভিক্টর লুস্টিগের কথা। সে সময় সে ৪৬ বছরে পা দেয়ার পাশাপাশি ছিনিয়ে নিয়েছে আমেরিকার সবচেয়ে বিপজ্জনক কনম্যান বা প্রতারকের খেতাব। ভোজবাজির মতো হাত সাফাই বিদ্যা আর দ্রুত ধনী হওয়ার স্কিম দিয়ে ভিক্টর কাঁপিয়ে দিয়েছে জ্যাজ যুগের আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল। প্যারিসে গিয়ে দুঃসাহসিক আত্মবিশ্বাসের সাথে দু’বার আইফেল টাওয়ার বিক্রি করে দিয়ে তার নামই হয়ে গেছে ‘দ্য ম্যান হু সোল্ড আইফেল টাওয়ার টোয়াইস’ বা ‘দু’বার আইফেল টাওয়ার বিক্রি করে দেয়া মানুষটি’। জাল টাকা নিয়ে রীতিমতো অপারেশন চালিয়ে এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছিল ভিক্টর, যে তাতে আমেরিকার অর্থনীতির ভিত নড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। চলুন তবে জেনে আসা যাক ভিক্টর লুস্টিগের প্রতারণার গল্প।

মান্যগণ্য সব ব্যক্তিদের সাথে ছিল তার ওঠাবসা; Source: hyip.com

সচরাচর প্রতারক বলতে যেমন ধুরন্ধর কোনো ব্যক্তির চেহারা চোখে ভেসে ওঠে, লুস্টিগ ছিল তাদের চেয়ে একেবারেই আলাদা। ম্যাটিনি শোর নায়কদের মতো পোশাক পরতো সে, সম্মোহিত হয়ে যাওয়ার মতো আকর্ষণীয় চেহারা ছিল তার, অনর্গল কথা বলতে পারত পাঁচটি ভাষায়- সব মিলিয়ে কল্পনার রাজপুত্তুরের সাথে মিলে যাবে তার বর্ণনা। ‘মিল্কওয়েক জার্নাল’ তো তাকে ‘গল্পের বইয়ের চরিত্র’ বলে অভিহিত করেছে। সিক্রেট সার্ভিসের এক এজেন্টের মতে, “লুস্টিগ ছিল সিগারেটের ধোঁয়ার মতো ভ্রম সৃষ্টিকারী আর কিশোরীর স্বপ্নের রাজকুমার”। নিউ ইয়র্ক টাইমস বলে, “মেয়েদের হাতে চুমো খাওয়ার মতো বোগাস কাউন্ট সে ছিল না-তার চাতুর্যের জুড়ি মেলা ভার। বাইরে থেকে দেখলে সবসময় তাকে মার্জিত ভদ্রলোকই মনে হতো।”

‘কাউন্ট’ নামক এই ভুয়া পদবীটি ছিল মানুষকে ধোঁকা দেয়ার ও তাদের বিশ্বাসভাজন হওয়ার একটি ছলনা মাত্র। ৪৭টি নাম ও ডজনখানি নকল পাসপোর্ট ব্যবহার করতো সে। নিজেকে ঘিরে রহস্যের এমন ঘনীভূত জাল রচনা করেছিল লুস্টিগ, যে সেই জাল ভেদ করে তার আসল পরিচয় খুঁজে বের করা একপ্রকার দুরূহ ব্যাপার। আলকাট্রাজ কারাগারের রেকর্ড অনুযায়ী, কারা কর্তৃপক্ষ তাকে ‘রবার্ট ভি. মিলার’ বলে ডাকতো। এটিও ছিল তার একটি ছদ্মনাম। লুস্টিগ সবসময় নিজের অতীত বর্ণনা করতে গিয়ে আভিজাত্যের বুলি ঝাড়ত আর ইউরোপের যে দুর্গে সে বড় হয়েছে, তার গল্প শোনাত। তবে তার সম্পর্কে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে মাটির কাছাকাছি তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেছে, আকাশে নয়।

জেলখানায় সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে লুস্টিগ জানায়, ১৮৯০ সালের ৪ জানুয়ারি অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরিয়ান শহর হোস্টিনিতে তার জন্ম হয়। অপরাধকর্ম চালিয়ে যাওয়ার সময় সবাইকে বলে বেড়াত তার বাবা শহরের মেয়র, কিন্তু আদতে তা সত্য নয়। জেলখানার তথ্যমতে, লুস্টিগের বাবা-মা ছিল শহরের অন্যতম দরিদ্র এক চাষী পরিবারের অন্তর্ভুক্ত, তাদের বাড়িটি ছিল পাথরের তৈরি। ছোটবেলায় পেট ভরে খাওয়ার জন্য তাকে চুরি করতে হতো, এ কথা স্বীকার করে লুস্টিগ। তবে তার ভাষ্যমতে, সে কেবল লোভী আর অসৎ ব্যক্তিদের কাছ থেকেই চুরি করতো। ১৯০০ সালের শুরুর দিকে লুস্টিগ ভিক্ষাবৃত্তি থেকে শুরু করে পকেট মারা, সিঁধেল চুরি করা, রাস্তায় দাঁড়িয়ে মারামারি করা সহ হেন কোনো কাজ নেই যা সে করেনি। ‘ট্রু ডিটেকটিভ মিস্ট্রি’ ম্যাগাজিনে বলা হয়, ‘পামিং বা কার্ড সরিয়ে ফেলা, ডেক থেকে কার্ড উধাও করে দেয়া কিংবা কার্ড ভাগ করার সময় জালিয়াতি করা-কার্ড বিষয়ক এমন কোনো কুটকৌশল নেই যা লুস্টিগ জানে না’। কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যে পা রাখতে রাখতে নিজস্ব একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করে সে- ‘যা-ই করো না কেন, কথা বলা থামিও না’

লুস্টিগ; Source: si-cdn.com

আটলান্টিক সমুদ্রের উপরে ভেসে বেড়ানো বিশালাকৃতির জাহাজগুলোর প্রথম শ্রেণীর যাত্রীরা ছিল তার প্রধান লক্ষ্য। তাছাড়া নব্য ধনীদের কুপোকাত করা খুব সহজ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসে লুস্টিগ। ১৯২০ এর দশকে সেখানে ‘রোরিং টুয়েন্টিস’ খুব জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে পরিণত হয়, টাকা ঘুরতে থাকে মানুষের হাতে হাতে। ততদিনে আমেরিকার প্রায় ৪০টি শহরের গোয়েন্দাদের কাছে সে পরিচিতি লাভ করেছে ‘দ্য স্কারড’ নামে। বাম থুঁতনির ঠিক নিচে আড়াই ইঞ্চি গভীর একটি ক্ষতচিহ্ন এই নামের জন্য দায়ী, আর ক্ষতচিহ্নের জন্য দায়ী প্যারিসের এক প্রেমিকার প্রাক্তন প্রেমিক। তবুও মিষ্টভাষী হিসেবে পরিচিত লুস্টিগ কখনো বন্দুক বা পিস্তল সাথে রাখেনি। পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি লম্বা আর ১৪০ পাউন্ড ওজনের এই ব্যক্তি শুধুমাত্র তার কথা আর শারীরিক বৈশিষ্ট্য দিয়েই সবাইকে কুপোকাত করে ফেলতে পারত।

লুস্টিগের সবচেয়ে সফল কেলেঙ্কারি ছিল ‘রুমানিয়ান মানি বক্স’। সিডার কাঠের ছোট্ট একটি বাক্সের ভেতরে জটিল ফরম্যাটে সাজানো রোলার আর পিতলের ডায়ালে তৈরি ছিল বাক্সটি। লুস্টিগ গুজব রটায়- অদ্ভুতদর্শন এই যন্ত্রটি রেডিয়ামের সাহায্যে ব্যাংকনোট নকল করতে পারে! ব্যস, মিলিয়নার হতে এরপর আর বেশিদিন লাগেনি লুস্টিগের। কিন্তু একবার যে মানুষকে ঠকিয়ে মজা পেতে শুরু করে, তার কাছে এই ব্যাপারগুলো নেশার মতো হয়ে যায়। এরপর একে একে ঘোড়দৌড়ের নকল স্কিম, রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ, টেন্ডার জালিয়াতিসহ কী করেনি সে, সেটিই বড় একটি প্রশ্ন!

এরপর এলো ১৯২৫ সাল, কূটকর্মের অভিজ্ঞদের মতে এই সময়টি ছিল লুস্টিগের জন্য ‘দ্য বিগ স্টোর’। সেই বছরের বসন্তে প্যারিসে চলে আসে ভিক্টর লুস্টিগ। নিজেকে ফরাসি সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে দাবী করে ঝা চকচকে ‘হোটেল দে ক্রিলন’ এ ওঠে সে। সে সময় মোটামুটি সবাই জানত, আইফেল টাওয়ারের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বহন করা সরকারের জন্য মারাত্মক বোঝা হয়ে উঠেছে। এই সুযোগ দারুণভাবে কাজ লাগায় লুস্টিগ। হোটেলে বসে সে চিঠি লেখে ফ্রান্সের ধাতব শিল্পের হর্তাকর্তা কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে।

ছদ্মবেশী ভিক্টর লুস্টিগ; Source: youtube.com

“প্রকৌশলজনিত ত্রুটি, ব্যয়বহুল মেরামত প্রক্রিয়া আর রাজনৈতিক কিছু সমস্যার কারণে আইফেল টাওয়ার নামিয়ে ফেলা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ছে,” ধাতব শিল্পকারখানার নেতাদের সাথে অনুষ্ঠিত এক মিটিংয়ে এ কথা জানায় লুস্টিগ। তার কথামতো টোপ গিলে ফেলে নেতারা, আইফেল টাওয়ারের নিলাম শুরু হয়। সবচেয়ে বেশি দাম যে হাঁকবে, তার কপালে জুটবে আইফেল টাওয়ার- এমনটাই ছিল তার ঘোষণা। ঠিক একইভাবে দু’বার নিলাম হেঁকে আইফেল টাওয়ার বিক্রির চেষ্টা করে লুস্টিগ। মিলিয়নিয়ার ভিক্টর লুস্টিগ তখন টাকার চেয়ে বরং মানুষকে বোকা বানিয়ে বেশি মজা পেত। এক ধনাঢ্য ব্যক্তির কাছে মাত্র ১৬ হাজার ডলারের বিনিময়ে আইফেল টাওয়ার বিক্রি করে দেয়ার রেকর্ডও আছে তার!

ভবিষ্যৎ প্রতারকদের জন্য সে দশটি আদেশ দিয়ে গেছে-

১. মনোযোগী শ্রোতা হও।

২. তোমাকে দেখে যেন বোঝা না যায় যে তুমি বিরক্ত হচ্ছ।

৩. অন্যদের রাজনৈতিক মত প্রকাশের সুযোগ দাও, তাদের কথার সাথে তাল মেলাও।

৪. ধর্ম নিয়ে কার কী মতামত শুনে নাও, সে অনুযায়ী তাদের সাথে সহমত পোষণ কর।

৫. শারীরিক সম্পর্কের ইঙ্গিত দিতে পার, কিন্তু কখনো সে সম্পর্কে জড়াবে না।

৬. অসুস্থতার কথা কখনো বলবে না, তাহলে মানুষ বিশেষ মনোযোগ দিয়ে দেখা শুরু করবে।

৭. কারো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে না খুঁচিয়ে বরং সে নিজ থেকে কতটুকু বলে তা দেখার জন্য অপেক্ষা কর এবং সেরকম বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি কর।

৮. গর্ব করবে না, আকার-ইঙ্গিতে নিজের গুরুত্ব সবার কাছে তুলে ধরবে।

৯. অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় কারো সামনে যাবে না এবং

১০. মাতাল হওয়া একদম নিষেধ।

রুমানিয়ান মানি বক্স; Source: hyip.com

অন্য আর দশজনের চেয়ে আলাদা হওয়া সত্ত্বেও অন্য সবার মতোই লোভের ফাঁদে ধরা পড়ে লুস্টিগ। ১৯২৮ সালের ১১ ডিসেম্বর, থমাস কার্নস নামের এক ব্যবসায়ী ম্যাসাচুসেটসে নিজের বাড়িতে দাওয়াত দেন লুস্টিগকে। আস্তে আস্তে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে ড্রয়ার থেকে ১৫ হাজার ডলার চুরি করে সে। এমন ধুরন্ধর প্রতারকের কাছ থেকে এমন নগ্ন চুরি আশা করা যায় না, সাথে সাথেই ধরা পড়ে যায় সে। কার্নস ফোন করে পুলিশের কাছে। টেক্সাসের শেরিফের কাছে জাদুর টাকার বাক্স বিক্রি করেছিল লুস্টিগ, সেখান থেকেই নজরে পড়ে যায় সিক্রেট সার্ভিসগুলোর। তাদেরই এক এজেন্ট পিটার এ রুবানো প্রতিজ্ঞা নেয়, লুস্টিগকে জেলের ভাত খাইয়েই ছাড়বে। তখনকার কুখ্যাত গ্যাংগুলোর কাছে রুবানো ছিল এক ত্রাসের নাম। বেশ কয়েক বছর সাধনার পর ১৯৩০ সালে লুস্টিগের নাগাল পায় সে।

লুস্টিগ তখন উইলিয়াম ওয়াটস নামের এক জোচ্চোরের সাথে দল গড়ে তোলে। তাদের দলটি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে ব্যাংকের কর্মকর্তাদেরও জালনোটের জালে ফাঁসিয়ে ফেলেছিল তারা। ১০০ ডলার নকল করার কাজে হাতে দেয় তারা। এত দ্রুত সে জালনোট ছড়িয়ে পড়ে যে বিশ্ববাজারে ডলারের দাম কমে যাওয়ার আশঙ্কা করে অর্থনীতিবিদেরা। কাজেই এবার আদা-জল খেয়ে লাগে রুবানো। কিন্তু বাক্সপেটরা ভর্তি ছদ্মবেশ নিয়ে ঘোরা লুস্টিগকে ধরা কি এতই সহজ? মুহূর্তের মধ্যে সে ইহুদি আইনজীবী কিংবা যাজক কিংবা কুলি কিংবা দিনমজুরের বেশ ধারণ করে। হোটেল থেকে হোটেলে ছদ্ম পরিচয়ে ঘুরতে থাকা লুস্টিগের সময় ফুরিয়ে আসতে থাকে।

১৯৩৫ সালের ১০ মে নিউ ইয়র্ক শহরের এক রাস্তায় খতম হয় তার জারিজুরি। পেছন থেকে একটি কণ্ঠস্বর আদেশ দেয়, “হাত ওপরে তোল”। ঘুরে দাঁড়াতে গিয়ে দেখে চারপাশ থেকে তাকে ঘিরে রেখেছে রুবানো আর তার দলের এজেন্টরা। তবে গোয়েন্দা সংস্থার এই জয় খুব বেশিদিন টেকেনি। শ্রমিক দিবসের আগের দিন, অর্থাৎ ১৯৩৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর ম্যানহাটনের ফেডারেল ডিটেনশন সেন্টার, যেখান থেকে পালানো অসম্ভব বলেই সবাই জানে, থেকে পালিয়ে যায় লুস্টিগ। বিছানার চাদরকে দড়ির মতো পেঁচিয়ে, জানালার গ্রিল কেটে সেখান থেকে চাদরটা ফেলে দিয়ে, শহুরে টারজানের মতো জানালা বেয়ে পালিয়ে যায় সে। যখনই জেলখানার কোনো কর্মকর্তা তাকে দেখে ফেলে, সাথে সাথে সে পকেট থেকে একটি কাপড় বের করে জানালা মোছার ভঙ্গি করে বুঝিয়ে দেয় সে একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী। আলতো করে মাথা নেড়ে তাদের প্রতি সম্ভাষণ জানিয়ে নিজের কাজে মন দেয় সে। এরপর সুযোগ বুঝে পালিয়ে যায় সেখান থেকে।

হয়তো এটিই তার আসল চেহারা; Source: vice.com

১৯৩৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর, শনিবারের রাত পর্যন্ত আইনের চোখকে ধুলো দিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছিল লুস্টিগ। পিটসবার্গে পৌঁছে একটি ট্যাক্সি নিয়ে ছুটে চলেছিল শহরের উত্তরপ্রান্তে। আড়াল থেকে তাকে অনুসরণ করতে থাকা এফবিআই এজেন্ট জি কে ফায়ারস্টোন স্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অপরপ্রান্ত থেকে সাড়া দেয় এজেন্ট ফ্রেড গ্রুবার। দুজন দুটো গাড়ি নিয়ে ছুটে যায় লুস্টিগকে ধরতে। প্রায় নয় ব্লক ঘুরে অবশেষে মুখোমুখি হয় গাড়ি দুটি। পথ আটকে দাঁড়ায় লুস্টিগের। দরজা খুলে গাড়ি থেকে বের হয়ে ঘোষণা করে ভিক্টর লুস্টিগ,

“ঠিক আছে বাছারা, এই যে আমি।”

১৯৩৫ সালের নভেম্বর মাসে নিউ ইয়র্ক আদালতে হাজির করা হয় কাউন্ট ভিক্টর লুস্টিগকে। তার সম্পর্কে এক গোয়েন্দা মন্তব্য করে, “কাউন্ট, তোমার মতো ধূর্ত প্রতারক আমি জীবনেও দেখিনি”

আলকাট্রাজ দ্বীপে পা রাখা মাত্র রেজর, ব্লেড কিংবা ধারালো কোনোকিছুর খোঁজে তার সারা শরীরে তল্লাশি চালায় পুলিশ। নগ্ন অবস্থায় কারাগারে প্রবেশ করানো হয় তাকে। খুন, ধর্ষণ, অপহরণ ছাড়া মোটামুটি আর সব ক্যাটাগরিতে মামলা ছিল তার নামে। তার প্রকৃত পরিচয় জানা না গেলেও, জেলে তার নতুন নাম হয় ‘৩০০’, কয়েদী হিসেবে এটিই ছিল তার সংখ্যাগত পরিচয়। ২০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করার কথা থাকলেও ১৯৪৬ সালের ডিসেম্বরের ১ তারিখ পর্যন্ত ১,১৯২টি মেডিকেল সমস্যা দেখিয়ে প্রায় ৫০৭টি প্রেসক্রিপশন আদায় করে সে! প্রহরীরা সবাই জানত সে নাটক করছে, এত অসুখ পালিয়ে যাওয়ার ফন্দি ছাড়া আর কিছুই নয়। তার সেল থেকে ছেঁড়া বিছানার চাদরও উদ্ধার করেছে প্রহরীরা।

ছদ্মবেশী কনম্যান; Source: youtube.com

পরবর্তীতে এতগুলো প্রেসক্রিপশন উপেক্ষা করতে না পেরে মিসৌরির স্প্রিংফিল্ডে একটি সুরক্ষিত মেডিকেল সুবিধা সম্বলিত কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয় লুস্টিগকে। সেখানে গিয়ে চিকিৎসকরা আবিষ্কার করেন এবার কোনো নাটক করছিল না সে। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত লুস্টিগ অল্প কিছুদিনের মধ্যেই, ১৯৪৭ সালের ১১ মার্চ রাত ৮.৩০টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। লুস্টিগের পরিবার ১৯৪৯ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় দু’বছর এই মৃত্যুর কথা লুকিয়ে রাখে। তার মৃত্যুর সার্টিফিকেটে পেশার জায়গায় লেখা ছিল- ‘শিক্ষানবিশ সেলসম্যান’।

ফিচার ইমেজ: amazonaws.com

Related Articles