Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জলদস্যুদের অদ্ভুত সব অজানা কথা

জলদস্যু, বেশিরক্ষেত্রে সিনেমাতেই তাদের সাথে আমাদের পরিচয়। জলদস্যুদের কাজকর্ম থেকে শুরু করে অনেক কিছুই ঢের অদ্ভুত ও ব্যতিক্রম। আজকের লেখায় তাদের সেই ব্যতিক্রমধর্মী বিষয়গুলো নিয়েই কথা হবে।

কানের দুলের অদ্ভুত উদ্দেশ্য

বিষয়টি খুব অদ্ভুত শোনালেও জলদস্যুরা মনে করতো যে, তারা যে কানের দুল ব্যবহার করে তা তাদের শ্রবণশক্তিকে রক্ষা করে। শ্রবণশক্তির প্রতি এতটা গুরুত্ব দেয়া তাদের জন্য অবশ্যই যথার্থ ছিলো। কারণ তারা প্রতিনিয়তই বিশাল কামান দিয়ে আক্রমণ করতো, যেগুলো বিকট শব্দের সৃষ্টি করতো।  মোমের যেই চাকতিটি তাদের কান থেকে ঝুলতো, তা গোলাগুলির সময় তাদের কান রক্ষার জন্য ব্যবহার করা হতো। এই বিষয়টি নিয়ে তারা বেশ সতর্কতা অবলম্বন করতো।

চোখে তালির ব্যবহার

আপনার কী মনে হয় যে প্রতিটি জলদস্যুরই একটি করে চোখ ছিলো না? হারানো চোখ ঢাকার জন্য কিন্তু সেই তালিটি ব্যবহার করা হতো না। সেটি মূলত ব্যবহার করা হতো রাতের দৃষ্টি প্রখর করার জন্য। এই বিষয়টি তাদের কাজের তদারকির জন্য প্রয়োজনীয় ছিলো। আক্রমণের সময় তাদের ডকের দিকে বা তার নিচে দৌড়ে যেতে হতো। এই তালিটির সাহায্যে তারা উজ্জ্বল আলো এবং এর নিচের অন্ধকারে পরিষ্কারভাবে দেখতে পেতো।

এই বিষয়টি তাদের কাজের তদারকির জন্য প্রয়োজনীয় ছিলো; Image Source: How It Works Magazine

কানের দুলের পেছনের রহস্য

জলদস্যুরা যে কেন বড় মাপের কানের দুলগুলো পরে তা ইতিমধ্যেই বলা হয়েছে। তবে এই কানের দুল পরার পেছনে রয়েছে আরও একটি রহস্য। ভারী ধাতু দিয়ে বানানো এই কানের দুলগুলো পরে থাকা কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়। তারা সেই কানের দুলগুলো পরতো এই জন্য যে, যদি কোনো কারণে তারা মরে যায় তবে যে-ই তাদের মৃতদেহ পাক না কেন, সেই কানের দুল বিক্রি করে তাদের সমাধি দেয়ার খরচ বহন করতে পারে।

কিছু কিছু জলদস্যুদের কানের দুলে তাদের উৎসের বন্দরের নাম খোদাই করা থাকতো। তারা এই আশায় নামটি লিখে রাখতো যেন খুঁজে পাওয়ার পর তাদের মৃতদেহ তাদের ঘরে পৌঁছে দেয়া যায়। এছাড়াও তাদের এই কানের দুল নিয়ে অনেক ধরনের কুসংস্কারও প্রচলিত ছিলো। জলদস্যুরা বিশ্বাস করতো যে, এর ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের মাথা ঘোরার সমস্যাটি সমাধান হবে। তারা এটাও মনে করতো যে, এজন্য তাদের দৃষ্টিশক্তি উন্নত হবে এবং তারা ডুবে যাওয়া থেকে বেঁচে যাবে।

তাদের এই কানের দুল নিয়ে অনেক ধরনের কুসংস্কারও প্রচলিত ছিলো; Image Source: Ancient Pages

সমকামিতা

বহু শতাব্দী পূর্বেই মানুষ সমকামী সম্বন্ধীয় বিষয়টি শনাক্ত করতে পারে। তবে ১৭ শতাব্দীতে জলদস্যুরা সমকামী বিয়ের বিষয়টি মেনে নেয়। দুজন পুরুষের মাঝে এই সম্পর্ককে বলা হতো ম্যাটেলিটজ। এই অবস্থায় জলদস্যু দম্পতি তাদের সম্পদ ও লুণ্ঠিত বা ডাকাতি করা মালামাল ভাগাভাগি করে নিতো। মোট কথা, একজন আইনগতভাবে আরেকজনের উত্তরাধিকারী হতো। মনে করা হয় যে, ডকে শুধুমাত্র পুরুষ মানুষ থাকার কারণেই এই সমকামী বিয়ের প্রথা বা চর্চা হতো তাদের মধ্যে। তবে অনেকের মতে, কারও কারও মধ্যে ভালোলাগার সম্পর্ক গড়ে ওঠা থেকেই এই চর্চা শুরু হয়।

প্রকৃত আতঙ্ক ছিলো লাল পতাকা, কালোটি নয়

আপনি যদি কালো রঙের পতাকা দেখে থাকেন, তাহলে সেটা তেমন কোনো বিষয় নয়। তবে লাল রঙের পতাকা দেখে থাকলে বুঝতে হবে যে, এর সাথে জড়িত আছে গুরুতর বিপদ! জলদস্যুদের জাহাজে লাল রঙের পতাকা আর কিছুই না, বরং নিজের মধ্যেই একটি মৃত্যুর কারণ ছিলো। এর অর্থ ছিলো যে, জাহাজে থাকা কোনো মানুষের প্রতি তাদের কোনো রকম দয়ামায়া নেই এবং তাদের সবাইকে জলদস্যুরা তৎক্ষণাৎ মেরে ফেলবে। যদিও ‘জলি রজার’ আখ্যাটির মূল বা উদ্দেশ্য হারিয়ে গিয়েছে, তবে এটি মনে করা হয় যে, জলদস্যুদের জাহাজে লাল পতাকার সাথে এর সম্পর্ক রয়েছে। এই আখ্যাটি জলদস্যুদের সেসব জাহাজের জন্য ব্যবহার করা হতো যেগুলো আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত ছিলো।

লাল রঙের পতাকা দেখে থাকলে বুঝতে হবে যে, এর সাথে জড়িত আছে গুরুতর বিপদ; Image Source: warstore flags of the world

জলদস্যুরা খুব নিয়মনিষ্ঠা মেনে চলতো

জলদস্যুদেরও নিয়ম-কানুন ছিলো। সেটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ, কাজের ভাগাভাগি বা ডাকাতির মালামাল ভাগাভাগি করে নেয়াই হোক না কেন। তাদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া অনেক ভালো ছিলো। আর এ কারণেই তাদের খুব ভালো ঐক্যও ছিলো। শুধু তা-ই নয়, তাদের মধ্যে ছিলো গণতান্ত্রিক নির্বাচন, ডকের ঝুট ঝামেলা বা দ্বন্দ্ব মেটানোর জন্য ব্যবস্থাপনা। এছাড়াও যারা নিয়মের অমান্য করতো তাদেরকে কঠোর শাস্তিও দেয়া হতো। এসব বিবেচনা করলে মনে হয় যেন তারা সাধারণ মানুষের চাইতে বহু গুণে সভ্য ছিলো।

জলদস্যুরা ব্যবহারিকভাবে ও কার্যতই আইনের চর্চা করত। জাহাজের সদস্যরা তাদের ক্ষত বা জখমের প্রখরতার উপর ভিত্তি করে ক্ষতিপূরণ পেতো। উপরন্তু, যেসব জলদস্যু আক্রমণের কারণে বিকলাঙ্গ হয়ে গিয়েছিলো, তাদেরকে একেবারে হেলায় ফেলে রাখা হতো না। তাদেরকে যুদ্ধ সেনাপতি, সাহসী ও অভিজ্ঞ সদস্য হিসেবে বিবেচনা করা হতো।

রোগ প্রতিরোধের জন্য গোপন পানীয়

ব্রিটিশ নাবিকেরা রামের সাথে পানি মিশিয়ে একধরনের পানীয় তৈরি করতো যার নাম ছিলো গ্রগ। জলদস্যুরাও একধরনের গ্রগ তৈরি করতো। এই পানীয়টি তাদেরকে লবণ পানি শোষণ করা থেকে বিরত রাখতো। এছাড়াও এটি বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহার করা হতো। জলদস্যুরা এই গ্রগে ভিন্নতা আনার জন্য রামের সাথে চিনি ও লেবুর রস ব্যবহার করতো। এই লেবুর রস যোগ করার কারণে তা স্কার্ভি রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করতো। তাদের মতে, এই শক্তিশালী পানীয়টির সামান্য পরিমাণই ৫ গ্লাস মদের সমপরিমাণ শক্তিশালী ছিলো।

জলদস্যুরাও একধরনের গ্রগ তৈরি করতো; Image Source: Manitoba Liquor Mart

ভয়াবহ জলদস্যুর ভয়ঙ্কর দাড়ি

কালো দাড়ির জনপ্রিয় এডওয়ার্ড টিচ এক ভয়ংকর জলদস্যু হিসেবে পরিচিত। একটি জাহাজ আক্রমণ করার আগে সে তার দাড়িতে গাঁজা বা শণ বুনে তাতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলো। তার দাড়ি থেকে যে ধোঁয়া বের হচ্ছিলো তাতে তাকে খুব ভুতুড়ে দেখাচ্ছিলো। এতে করে তার শত্রুদের কাছে তাকে বেশ ভয়ংকর বলে মনে হচ্ছিলো। এই বিষয়টি কি আপনার কাছে খুব অস্বাভাবিক নাকি খুবই সাহসী মনে হচ্ছে?

স্বাস্থ্যবীমা

এখন পর্যন্ত জলদস্যুদের সম্পর্কে যা যা জানলেন তাতে নিশ্চয়ই ধারণা পেয়ে গিয়েছেন যে তারা আমাদের কারও কারও চাইতে বেশ আধুনিক ছিলো। হাজার বছর আগে যখন কেউ স্বাস্থ্যবীমা সম্পর্কে কিছু জানতও না, তখন জলদস্যুরা এই বীমাটি ব্যবহার করা শুরু করেছিলো। মজার বিষয় হলো, যখন স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে খুব বেশি অগ্রগতি ছিলো না, ওষুধপত্র এবং চিকিৎসার তেমন সহজলভ্যতাও ছিলো না, তখন থেকেই তারা এই বিষয়টি নিশ্চিত করতো যে, তাদের যেকোনো আহত সদস্য যেন অবশ্যই সর্বোচ্চ সুযোগসুবিধা পায়।

Feature Image Source: Ancient Origins

Related Articles