Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সাপ্তাহিক ছুটি শুরু হলো কবে থেকে?

কিছুদিন আগেই চীনের মাইক্রোসফট বেশ বড় রকমের একটি আলোড়ন তোলে কর্মীদের সপ্তাহে তিনদিন ছুটি দেওয়ার মাধ্যমে। অবশ্য, ঘটনাটি একটু নড়েচড়ে বসার মতোই। যেখানে প্রতিদিন আপনি খাটা-খাটুনি করে সপ্তাহে দীর্ঘ ছয়দিন কাজ করে মাত্র একটা দিন ছুটি কাটাচ্ছেন, সেখানে এমন খবরের দিকে চোখ যাওয়াটাই স্বাভাবিক। কর্মীদেরকে যত বেশি কাজ করানো যায়, ততটাই লাভ- এ কথাটিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মাইক্রোসফট এও জানিয়েছে যে, তিনদিন সাপ্তাহিক ছুটি ঘোষণায় তাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের উৎপাদনশীলতা শতকরা ৩০ ভাগ বেড়ে গিয়েছে

কিন্তু, এই যে সাপ্তাহিক একদিন বা তিনদিন ছুটি- সেটা কে তৈরি করে দিয়েছিল? কখন শুরু হয়েছিল এই নিয়ম? জানতে হলে আজ সারাদিনে কাজের পাশাপাশি সাপ্তাহিক ছুটির জন্য অপেক্ষা করার সময় এই লেখাটিও পড়ে নিন!

সাপ্তাহিক ছুটির শুরু হয়েছিলো ব্রিটেনে; Image Source:decathlonvision2030.com

সাপ্তাহিক ছুটি কোথায় কেমন?

মাইক্রোসফট কি প্রথম এমন বেশিদিন সাপ্তাহিক ছুটি দেওয়ার কাজটি করলো? না, পৃথিবীর অনেক দেশেই এমন নিয়ম মেনে চলা হয়। অনেক দেশেই আপনি চারদিনের সাপ্তাহিক ছুটিও খুঁজে পাবেন। তবে সেক্ষেত্রে দেশগুলো নিজেদের প্রতিদিনের কাজের সময়কে ১০ ঘণ্টা করে বাড়িয়ে নিয়েছে। এই তালিকায় আছে উটাহ, যুক্তরাষ্ট্রের কে-২ পাবলিক স্কুল, গ্যাম্বিয়া বেসামরিক সেবা, যুক্তরাজ্য (২০১৮-২০১৯) ইত্যাদি দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলো।

নানাভাবে তারা মানুষের কাজ এবং অবসরের ভারসাম্য খুঁজে নিয়েছে। এছাড়া, অনেক দেশে আছে দু’দিনের ছুটিও। সত্যি বলতে, বেশিরভাগ দেশেই দু’দিনের ছুটি পালন করা হয়। তবে কিছু দেশে রয়েছে সপ্তাহে একদিনের ছুটির ব্যবস্থা। অনেকসময়, দেশের সাপ্তাহিক ছুটি দু’দিন থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠান নিজেদের কর্মীদের সম্মতিক্রমেই এই ছুটিকে কমিয়ে নেয়। 

৪,০০০ বছর আগে ব্যাবিলনবাসীরা সপ্তাহের হিসাব নির্ধারণ করেন; Image Source:upload.wikimedia.org

বর্তমানে এবং ১৯ শতক জুড়ে কতদিন সাপ্তাহিক ছুটি হওয়া উচিত, সেটা নিয়ে বিতর্ক চলেছে। এখন বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান এবং মানুষ চারদিনের সাপ্তাহিক ছুটির কথা ভাবতে চাইছেন। এটি আদৌ বাস্তবায়ন করা সম্ভব কিনা। সে প্রসঙ্গে কথা বলার আগে এটা জেনে নেওয়া উচিত যে, এর আগে আদৌ এই সাপ্তাহিক ছুটি নিয়ে কথা হয়েছে কিনা। সেক্ষেত্রে সাপ্তাহিক ছুটি সবসময় কেমন ছিল? মজার ব্যাপার হলো, বর্তমানে সবাই যেখানে তিনদিন বা চারদিনের ছুটির জন্য কথা বলছেন, সেখানে ১৯ শতকে সরকার ও রাষ্ট্র ভাবছিলেন দু’দিনের ছুটি আদৌ দেওয়া যায়, কিনা তা নিয়ে। এছাড়া সেসময় অনেকে অর্ধেক দিন কাজ করে বাকি অর্ধেক দিন না করার কথাও ভাবছিলেন।

৩৬৫ দিনে বছর হয় এবং ২৪ ঘণ্টায় দিন- এই তথ্যগুলো আরো আগেই চলে এসেছিলো মানুষের কাছে। তবে সাতদিনে এক সপ্তাহ ধরে নেওয়ার প্রথাটি শুরু হয় ব্যাবিলন থেকে। আজ থেকে আরো ৪,০০০ বছর আগে ব্যাবিলনবাসীরা এই নিয়ম শুরু করেন এবং সেটা মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপেও বেশ ভালোভাবে কার্যকরী হয়। তবে এটি ছিলো শুধু সপ্তাহের হিসাব। সাপ্তাহিক ছুটির ব্যাপারটি আসে আরেকটু পরে। শিল্প বিপ্লব এবং কর্মীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ধীরে ধীরে সাপ্তাহিক ছুটির প্রক্রিয়া চালু হয়।

সেইন্ট মানডে

কারখানার আরো অনেকেই সোমবারে ছুটি নেওয়া শুরু করল; Image Source: amazon.com

১৯ শতকে ব্রিটেনে এক সুন্দর সকালে একজন মানুষের কাজ করতে যেতে মন চাইল না। ভালো ভালো ভাবনা আর আয়েশি কাজের মাধ্যমে দিন কাটাল সে। এরপর থেকেই কারখানার আরো অনেকেই সোমবারে ছুটি নেওয়া শুরু করল। দিনটির নাম হয়ে গেলো ‘সেইন্ট মানডে’। এর সাথে কোন সাধু-সন্ন্যাসী ঘরানার বা ধর্মীয় কাজ যুক্ত ছিল না। তবে এ নামেই এই ছুটির দিনটি পরিচিত ছিল তখন সবার কাছে। না, এমনিতে এদিন ছুটি নিতে হবে, এমন কোনো ব্যাপার ছিলো না।

তবে নিজ থেকেই কর্মীরা ছুটিটা নেওয়া শুরু করায় মালিকপক্ষের কিছুটা লোকসান হয়ে গেলো। এ সমস্যা কাটাতেই মালিকপক্ষ এরপর থেকে প্রতি সপ্তাহের শনিবার অর্ধেক দিন ছুটি দেওয়ার ঘোষণা দেয়। সাপ্তাহিক ছুটির দিকে এটিই ছিলো সবার প্রথম পদক্ষেপ।

৪৮ ঘণ্টার ছুটি

রবিবার খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য ধর্মীয় দিন ছিল বটে। তবে বাকিদের জন্য তা ছিলো না। তাই এ দিনে ছুটি নেওয়ার ব্যাপারে অনেকেই সম্মত ছিলেন না। অনেকের কাছেই শুক্রবার, আবার অনেকের কাছে শনিবার ছিল ধর্মীয় দিন। বিশেষ করে, ইহুদিদের দাবি ছিল শনিবার ছুটি পাওয়ার। তাদের এই দাবি প্রথম মানা হয় আমেরিকায়। ১৯০৮ সালে ইহুদিদের বিশ্রামের দিন নির্ধারণ করা হয়। ইংল্যান্ডের একটি কারখানাও সাপ্তাহিক দু’দিন ছুটি কার্যকর করে সকল ধর্মের কথা মাথায় রেখে। ফলে, সপ্তাহে পাঁচদিন কাজের দিন এবং দু’দিন ছুটির দিন হওয়ার প্রথা চালু হয়।

১৯০৮ সালে ইহুদিদের বিশ্রামের দিন নির্ধারণ করা হয়; Image Source:ichef.bbci.co.uk

হেনরি ফোর্ড ব্যাপারটিকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যান। তিনি কারখানার কর্মীদের ১৯২৬ সালেই শনি ও রবিবার ছুটি দেওয়া শুরু করেন। এছাড়া তিনি সপ্তাহকে ৪০ ঘণ্টা কাজের সময় হিসেবেও নির্ধারণ করেন। ফলে কর্মীরা এসময় নিজেদের আয়কে আরো নানাভাবে, উৎপাদনশীল উপায়ে ব্যবহার করার সুযোগ পান। ১৯৩২ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পাঁচদিনের কর্মদিবস ঘোষণা করে। ‘গ্রেট ডিপ্রেশন’কে সামাল দিতেই এ সিদ্ধান্ত নেয় দেশটি। একই সময়ে ঠিক একই ব্যাপারগুলো ঘটছিলো অতলান্তিকের অন্যপাশেও।

ব্রিটিশ ঘরানার সাপ্তাহিক ছুটি

১৯৩৩ সাল। বুটস কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান জন বুট সেবার লক্ষ করলেন যে, নির্দিষ্ট সময়ের পর তার কারখানার কর্মীরা খুব একটা কাজ করে এগোতে পারে না। তাই এ অবস্থাকে আরেকটু উন্নত করার জন্য এবং কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে তিনি কিছু একটা করার কথা ভাবেন। একই বছরে নটিংহামে আরেকটি কোম্পানি চালু হয়। যেটার মালিকপক্ষ কর্মীদের সময় নয়, বরং উৎপাদনশীলতাকে বাড়াতে চেয়েছিল।

তাই সব সমস্যার সমাধান হিসেবে তারা কর্মীদের শনি ও রবিবার ছুটির ব্যবস্থা করেন। এক্ষেত্রে কর্মীদের বেতন বা সুবিধাও না কমানোর সিদ্ধান্ত নেন তারা। এতে করে কর্মীরা নতুন উদ্যমে কাজ করার পাশাপাশি এটাও নিশ্চিত করতে পারছিল যে, কারখানায় দরকারের চাইতে বেশি পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে না। 

পরবর্তী সময়ে দু’দিন সাপ্তাহিক ছুটি নিশ্চিত করার আর অনেক ইতিবাচক ফলাফল প্রকাশ পায়। ফলে বুটস কর্পোরেশনে পাকাপাকিভাবে দু’দিনের ছুটি বলবৎ করা হয়।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন কি আরো বাড়ানো যায় না?

দু’দিনের ছুটি তো হলো। কিন্তু এখন সবাই ভাবছেন চারদিনের ছুটির ব্যাপারে। যতদিন কর্মদিবস, তার চেয়ে বেশি ছুটি। এতে করে একজন মানুষ আরো ভালোভাবে কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন বলে মনে করছেন তারা। আর প্রযুক্তির কারণে দূর থেকেও কাজ করা সম্ভব হওয়ায় ব্যাপারটিকে খুব বেশি সম্ভব বলে মনে করছেন সবাই।

চারদিনের সাপ্তাহিক ছুটি নিয়ে চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা; Image Source:cdn-images-1.medium.com

নিউজিল্যান্ডের একটি কোম্পানিতে সম্প্রতি গবেষণার মতো করে কর্মীদের চারদিন ছুটি দেওয়া হয়। কর্মীরা জানান যে, স্বাভাবিকের চাইতে তাদের কাজের প্রতি মনযোগ এবং ব্যক্তিগত জীবনের সাথে কর্মজীবনের ভারসাম্য রক্ষা করা এক্ষেত্রে আরো সহজ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানেও সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কর্মদিবসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে এই দুটো ক্ষেত্রে কর্মীরা চারদিন কাজ করলেও পাঁচদিনের বেতনই পাচ্ছেন।

তবে, সবগুলো ঘটনাই পরীক্ষার মতো করে চালানো হচ্ছে। তাও পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে। কখনো এই চারদিনের সাপ্তাহিক ছুটি সম্ভব হবে বলে এত তাড়াতাড়িই আশা করা যায় না। তাই যদি এটি সম্ভব হয়ও, সেক্ষেত্রে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে আপনাকে।

This article is written on the 'History of weekend' and new thoughts on increasing the number of weekly day off.

All sources have been hyperlinked inside the article.

Featured Image: img.jakpost.net

Related Articles