মানবজাতির ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ জাহাজডুবির ঘটনা কোনটি? এই প্রশ্নের উত্তরে অধিকাংশ মানুষের মনে ভেসে উঠবে ‘টাইটানিক’ জাহাজের নাম। ১৯১২ সালে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে একটি দুর্ঘটনার ফলে যাত্রীবাহী জাহাজ ‘আরএমএস টাইটানিক’ ডুবে যায়, এবং এর ফলে জাহাজটির ১,৪৯০-১,৬৩৫ জন যাত্রীর সলিলসমাধি ঘটে। এটি ছিল মানব ইতিহাসের ‘শান্তিকালীন সময়ে’ সংঘটিত সবচেয়ে ভয়াবহ জাহাজডুবির ঘটনা। কিন্তু এটি ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ জাহাজডুবির ঘটনা নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছিল মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ, এবং এই যুদ্ধের সময়ই ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ জাহাজডুবির ঘটনা ঘটে।
৩০ জানুয়ারি, ১৯৪৫। ইউরোপের ভূখণ্ডে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পূর্ব রণাঙ্গনে যুদ্ধের চাকা সম্পূর্ণরূপে ঘুরে গেছে। পোল্যান্ড ও প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের যে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জার্মান সৈন্যরা দখল করে নিয়েছিল, সেখান থেকে তারা ক্রমশ পশ্চাৎপসরণে বাধ্য হচ্ছে। সোভিয়েত সৈন্যরা একের পর এক অঞ্চল মুক্ত করতে করতে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য জার্মানির রাজধানী বার্লিন। জার্মানরা একটি বিষয়ে নিশ্চিত ছিল, বিগত সাড়ে তিন বছরে তারা সোভিয়েত জনসাধারণের ওপর যে বর্বরতা চালিয়েছে, এরপর সোভিয়েত সৈন্যরা জার্মানদের প্রতি কোনোরকম অনুকম্পা প্রদর্শন করবে না।
এই পরিস্থিতিতে জার্মানি–অধিকৃত সোভিয়েত ও পোলিশ অঞ্চলগুলো থেকে জার্মান সামরিক কর্মকর্তা–কর্মচারী ও বেসামরিক জনসাধারণকে অপসারণের জন্য জার্মান সশস্ত্রবাহিনী একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এর নাম ছিল ‘অপারেশন হ্যানিবাল’, এবং বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সমরনায়ক কার্থেজীয় জেনারেল হ্যানিবাল বার্কার নামানুসারে এই অভিযানের নামকরণ করা হয়। এই পরিকল্পনানুযায়ী জার্মানরা জাহাজযোগে বাল্টিক সাগরের মধ্য দিয়ে জার্মান–অধিকৃত সোভিয়েত ও পোলিশ অঞ্চলগুলো থেকে তাদের লোকজনকে জার্মানিতে সরিয়ে নিতে আরম্ভ করে। ১৯৪৫ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে প্রায় ১,০০০ জার্মান জাহাজে করে ১০ লক্ষাধিক জার্মান নাগরিককে এই অঞ্চল থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। আর এই কাজে তারা যে জাহাজগুলো ব্যবহার করে, তাদের মধ্যে অন্যতম একটি জাহাজ ছিল ‘ভিলহেলম গুস্টলফ’।
‘ভিলহেলম গুস্টলফ’ ছিল জার্মান নৌবাহিনীর একটি সশস্ত্র পরিবহন জাহাজ। ১৯৩৬ থেকে ১৯৩৮ সালের মধ্যে নির্মিত এই জাহাজটির ওজন ছিল ২৫,৪৮৪ টন। এর নামকরণ করা হয়েছিল জার্মান নাৎসি দলের সুইস শাখার প্রতিষ্ঠাতা ভিলহেলম গুস্টলফের নামে, যিনি ১৯৩৬ সালে একজন ক্রোয়েশীয় ইহুদি ছাত্রের হাতে খুন হন। এটি প্রথমে একটি ‘হাসপাতাল জাহাজ’ (hospital ship) ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে একে সামরিক পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা শুরু হয়। ‘অপারেশন হ্যানিবাল’ আরম্ভ হলে জাহাজটিকে জার্মান–অধিকৃত সোভিয়েত ও পোলিশ অঞ্চলগুলো থেকে জার্মান নাগরিকদের অপসারণের কাজে নিযুক্ত করা হয়।
১৯৪৫ সালের ৩০ জানুয়ারি ছিল ‘ভিলহেলম গুস্টলফ’–এর সর্বশেষ যাত্রার দিন। এদিন জাহাজের আনুষ্ঠানিক নথিপত্র অনুযায়ী এতে ৬,০৫০ জন যাত্রী অবস্থান করছিল। কিন্তু সেখানে প্রচুর সংখ্যক বেসামরিক জার্মানও আরোহণ করে, যাদের নাম জাহাজটির নথিপত্রে লিপিবদ্ধ করার সময় জাহাজ কর্তৃপক্ষ পায়নি, কারণ তারা একেবারে শেষ মুহূর্তে জাহাজে ওঠে। হেইঞ্জ স্কোনের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, সেদিন জাহাজের ক্রু ও যাত্রী মিলিয়ে ভিলহেলম গুস্টলফের মোট আরোহীর সংখ্যা ছিল ১০,৫৮২ জন। স্কোন ছিলেন একজন জার্মান আর্কাইভ বিশেষজ্ঞ এবং ভিলহেলম গুস্টলফের সলিলসমাধির পর বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের একজন।
ভিলহেলম গুস্টলফের আরোহীদের মধ্যে ছিল ১৭৩ জন ক্রু (যারা ছিল জার্মান নৌবাহিনীর অক্সিলিয়ারি সদস্য), ২টি ইউ-বোট ডিভিশনের ৯১৮ জন কর্মকর্তা, এনসিও ও নাবিক, ৩৭৩ জন নারী অক্সিলিয়ারি নৌবাহিনী সদস্য, ১৬২ জন আহত সৈন্য এবং ৮.৯৫৬ জন বেসামরিক নাগরিক। এদের মধ্যে ছিল জার্মান গুপ্ত পুলিশ সংস্থা ‘গেস্টাপো’র সদস্য, জার্মান সামরিক–বেসামরিক প্রকৌশল সংস্থা ‘অর্গানাইজেশন টডট’–এর সদস্য এবং সপরিবারে একদল নাৎসি দলীয় কর্মকর্তা। বর্তমান এস্তোনিয়া, লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ড ও পূর্ব প্রাশিয়া থেকে এই যাত্রীরা এসেছিল।
১৯৪৫ সালের ৩০ জানুয়ারি দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে জাহাজটি তদানীন্তন জার্মান–অধিকৃত ডানজিগ (বর্তমান পোল্যান্ডের গদানস্ক) সমুদ্রবন্দর ত্যাগ করে। জাহাজটির সঙ্গে ছিল অপর একটি যাত্রীবাহী জাহাজ ‘হানসা’ এবং দুটি টর্পেডো বোট। কিন্তু যাত্রাপথে ‘হানসা’ ও একটি টর্পেডো বোটে যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দেয়, এবং এর ফলে তারা বন্দরে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। কেবল ‘লোয়ে’ নামক একটি টর্পেডো বোট ভিলহেলম গুস্টলফের সঙ্গে ছিল, এবং এর দায়িত্ব ছিল জাহাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, ভিলহেলম গুস্টলফে ৪ জন ক্যাপ্টেন উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে ফ্রিডরিখ পিটারসেন ছিলেন জাহাজটির প্রকৃত ক্যাপ্টেন, কিন্তু জাহাজটিতে আরো ৩ জন ক্যাপ্টেন উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে দুজন ছিলেন দুটি বাণিজ্যিক জাহাজের ক্যাপ্টেন এবং একজন ছিলেন জাহাজটিতে উপস্থিত ইউ–বোট নাবিকদের ক্যাপ্টেন লেফটেন্যান্ট কমান্ডার ভিলহেলম জাহন। লেফটেন্যান্ট কমান্ডার জাহন পরামর্শ দিয়েছিলেন, জাহাজটির উচিত উপকূলের কাছাকাছি অগভীর পানি দিয়ে চলা এবং জাহাজের সমস্ত বাতি বন্ধ রাখা। একজন অভিজ্ঞ ইউ-বোট ক্যাপ্টেন হিসেবে তিনি ভালো করেই জানতেন, বাল্টিক সাগরের তলদেশ দিয়ে সোভিয়েত সাবমেরিনগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে, এবং এজন্য গভীর সমুদ্র দিয়ে যাতায়াত করা ভিলহেলম গুস্টলফের জন্য বিপজ্জনক।
কিন্তু ভিলহেলম গুস্টলফের ক্যাপ্টেন পিটারসেন তার পরামর্শ উপেক্ষা করেন এবং গভীর সমুদ্রের মাইনমুক্ত অংশ দিয়ে জাহাজ চালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, কারণ তিনি উপকূলের নিকটবর্তী সমুদ্রের পানিতে সোভিয়েতদের পুঁতে রাখা মাইনগুলোকে তার জাহাজের নিরাপত্তার জন্য অধিকতর গুরুতর হুমকি হিসেবে বিবেচনা করতেন। শুধু তা-ই নয়, একটি বেতারবার্তার মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন যে, জার্মান মাইন অপসারণকারী জাহাজের একটি কনভয় তার জাহাজের দিকে আসছে। এই জাহাজগুলোর সঙ্গে সংঘাত এড়ানোর জন্য তিনি জাহাজের লাল ও সবুজ বাতিগুলো জ্বালিয়ে রাখার নির্দেশ দেন, এবং এর ফলে রাতের অন্ধকারে জাহাজটিকে খুঁজে বের করা সহজ হয়ে পড়ে। এই বেতারবার্তা সত্যিই কোনো জার্মান কনভয়ের কাছ থেকে এসেছিল, নাকি এটি সোভিয়েতদের কোনো চাল ছিল, সেটি এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।
প্রকৃত ঘটনা যা-ই হোক, সন্ধ্যা ৭টার দিকে সোভিয়েত নৌবাহিনীর সাবমেরিন ‘এস–১৩’ ভিলহেলম গুস্টলফকে দেখে ফেলে। এটি ছিল একটি ‘স্তালিনেৎস’–শ্রেণির সাবমেরিন, এবং এর অধিনায়ক ছিলেন ক্যাপ্টেন আলেক্সান্দর মারিনেস্কো। এস–১৩ প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে ভিলহেলম গুস্টলফকে অনুসরণ করে। প্রচণ্ড শীতে ভিলহেলম গুস্টলফের নিরাপত্তার জন্য নিযুক্ত টর্পেডো বোট ‘লোয়ে’র সাবমেরিন সেন্সর জমে গিয়েছিল, ফলে তারা এস–১৩ এর উপস্থিতি শনাক্ত করতে পারেনি। একইভাবে তীব্র শীতের কারণে ভিলহেলম গুস্টলফে অবস্থিত বিমান–বিধ্বংসী কামানগুলোও জমে অকেজো হয়ে গিয়েছিল, ফলে জাহাজটি কার্যত নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে।
প্রায় দুই ঘণ্টা যাবৎ জার্মান জাহাজটিকে অনুসরণের পর রাত ৯টার দিকে ক্যাপ্টেন মারিনেস্কো তার নাবিকদের জাহাজটির উদ্দেশ্যে ৪টি টর্পেডো নিক্ষেপের আদেশ দেন। এই টর্পেডোগুলোর নাম ছিল ‘মাতৃভূমির জন্য’, ‘লেনিনগ্রাদের জন্য’, ‘সোভিয়েত জনগণের জন্য’ এবং ‘স্তালিনের জন্য’। প্রথম তিনটি টর্পেডো সফলভাবে জাহাজে আঘাত করে, কিন্তু চতুর্থটি টর্পেডো টিউবে আটকে যায়। সোভিয়েত টর্পেডোর আঘাতে ভিলহেলম গুস্টলফের সম্মুখভাগ ও ইঞ্জিনরুম বিস্ফোরিত হয়, এবং এর ৪০ মিনিটের মধ্যেই জাহাজটি ডুবে যায়।
ভিলহেলম গুস্টলফের অধিকাংশ লাইফবোটই জমে গিয়েছিল, ফলে জাহাজটির নাবিকরা মাত্র ৯টি লাইফবোট পানিতে নামাতে সক্ষম হয়। তদুপরি, জাহাজের প্রতিটি আরোহীর লাইফজ্যাকেট পরিধান করা বাধ্যতামূলক ছিল, কিন্তু জাহাজের ভিতরে ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক যাত্রীর অবস্থানের কারণে সৃষ্ট আর্দ্র পরিবেশে অনেক যাত্রীই লাইফজ্যাকেট খুলে ফেলেছিল। ফলে জাহাজডুবির পর যাত্রীদের পরিণাম হয় মারাত্মক। শত শত যাত্রী টর্পেডোর আঘাতে নিহত হয়, এবং আরো শত শত যাত্রী বাল্টিক সাগরের তীব্র ঠাণ্ডা পানিতে ডুবে মারা যায়।
জার্মান উদ্ধারকারী জাহাজগুলো ভিলহেলম গুস্টলফের মোট ১,২৫২ জন যাত্রীকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়, যাদের মধ্যে পরবর্তীতে ১৩ জনের মৃত্যু ঘটে। সব মিলিয়ে এস–১৩ সাবমেরিনটির আক্রমণের ফলে জার্মান জাহাজটির প্রায় ৯,৩৪৩ জন যাত্রীর প্রাণহানি ঘটে। এদের মধ্যে প্রায় ৫,০০০ জনের বয়স ছিল ১৮ বছরের নিচে! এটি ছিল মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ জাহাজডুবির ঘটনা। ইতিহাসের আর কোনো জাহাজডুবির ঘটনায় এত বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটেনি। নৌযুদ্ধের ইতিহাসেও এটি সবচেয়ে বিপর্যয়কর জাহাজডুবির ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রক্তাক্ত ঘটনাচক্রের আবর্তে এই ভয়াবহ ঘটনাটি বিশেষ পরিচিতি লাভ করেনি, যেমনটি লাভ করে ‘টাইটানিক’-এর সলিলসমাধি।
ভিলহেলম গুস্টলফে উপস্থিত চারজন ক্যাপ্টেনই ঘটনাচক্রে প্রাণে বেঁচে যান। তাদের মধ্যে ইউ–বোট ক্যাপ্টেন ভিলহেলম জাহনকে সামরিক আদালতের সম্মুখীন হতে হয় এবং জাহাজডুবি ঠেকানোর ক্ষেত্রে তার ব্যর্থতার জন্য জবাবদিহি করতে হয়। কিন্তু তার বিচারকার্য শেষ হওয়ার আগেই জার্মানিতে নাৎসি সরকারের পতন ঘটে, এবং এর ফলে তাকে কোনো শাস্তি পেতে হয়নি। পশ্চিমা প্রচারমাধ্যমে ভিলহেলম গুস্টলফের সলিলসমাধির ঘটনাকে ‘হিটলারের টাইটানিক’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
অন্যদিকে, এত বড় একটি সাফল্য অর্জনের জন্য ‘এস–১৩’ সাবমেরিনের ক্যাপ্টেন মারিনেস্কোর বিরাট পুরস্কার লাভের কথা ছিল। কিন্তু মারিনেস্কোর অতীত কার্যকলাপ এক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। ভিলহেলম গুস্টলফকে ডুবিয়ে দেয়ার আগে মারিনেস্কো মদ্যপানের অভিযোগে কোর্ট মার্শালের সম্মুখীন হয়েছিলেন। এজন্য সোভিয়েত সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে, যুদ্ধক্ষেত্রে মারিনেস্কোর কৃতিত্ব যেমনই হোক না কেন, তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বোচ্চ সামরিক পদক ‘হিরো অফ দ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন’ লাভের উপযুক্ত নন। অবশ্য ভিলহেলম গুস্টলফকে ডুবিয়ে দেয়ার কৃতিত্বের জন্য সোভিয়েত সরকার মারিনেস্কোকে অপেক্ষাকৃত কম সম্মানসূচক ‘অর্ডার অফ দ্য রেড ব্যানার’ প্রদান করে।
পরবর্তীতে ১৯৪৫ সালের অক্টোবরে তার পদমর্যাদা হ্রাস করে লেফটেন্যান্টে নামিয়ে আনা হয়, এবং সোভিয়েত নৌবাহিনী থেকে অসম্মানজনকভাবে বহিষ্কার করা হয়। ১৫ বছর পর ১৯৬০ সালে সোভিয়েত সরকার মারিনেস্কোর শাস্তি প্রত্যাহার করে নেয় এবং পুনরায় তাকে সোভিয়েত নৌবাহিনীতে ক্যাপ্টেন হিসেবে নিয়োগ দেয়। অবশ্য এর তিন বছরের মধ্যেই মারিনেস্কো ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৯০ সালে সোভিয়েত রাষ্ট্রপতি মিখাইল গর্বাচেভ মারিনেস্কোকে মরণোত্তর ‘হিরো অফ দ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন’ পদকে ভূষিত করেন।
জার্মান উগ্র জাতীয়তাবাদীরা ভিলহেলম গুস্টলফের সলিলসমাধির ঘটনায় বিপুল সংখ্যক বেসামরিক জার্মান নাগরিকের মৃত্যুর কারণে একে একটি ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। কিন্তু ভিলহেলম গুস্টলফ জার্মান নৌবাহিনীর একটি সশস্ত্র জাহাজ ছিল। একে জার্মানরা ‘হাসপাতাল জাহাজ’ হিসেবে চিহ্নিত করেনি, এবং এতে এক হাজারেরও বেশি সংখ্যক জার্মান সামরিক বাহিনীর সদস্য উপস্থিত ছিল। এজন্য আন্তর্জাতিক আইনানুযায়ী, যুদ্ধ চলাকালে জাহাজটি ছিল ন্যায়সঙ্গতভাবেই একটি আক্রমণযোগ্য লক্ষ্যবস্তু। বস্তুত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানরা নিজেরাও প্রতিপক্ষের এরকম বিপুল সংখ্যক জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছে। এজন্য জার্মান সাহিত্যিক গুন্টার গ্রাসের ভাষায় বলা যায়, ‘হিটলারের টাইটানিক’ খ্যাত “ভিলহেলম গুস্টলফের ট্র্যাজেডি কোনো যুদ্ধাপরাধ ছিল না। এটি ভয়াবহ ছিল, কিন্তু এটি ছিল যুদ্ধের ফল, যুদ্ধের ভয়াবহ ফল।”