খালেদ মোশাররফ: মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা যোদ্ধাদের ‘গার্ডিয়ান এঞ্জেল’

“কোনো স্বাধীন দেশ জীবিত গেরিলা চায় না; চায় রক্তস্নাত শহীদ।”

দুই নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল খালেদ মোশাররফ তার গেরিলাদেরকে প্রশিক্ষণের সময় ঠিক এই কথাটাই বলতেন। খালেদের এই কথা বুকে নিয়ে মেলাঘর ক্যাম্প থেকে শত শত তরুণ ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় অপারেশন চালাতে আসতো। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে রাজধানী ঢাকায় পাকিস্তানী সেনাদের তৎপরতা ছিল অনেক বেশি। সবকিছু স্বাভাবিক চলছে দেখানোর জন্য এক বিশাল তোড়জোড়। জায়গায় জায়গায় সেনা টহল, চেকপোস্ট। এর মধ্যেও ঢাকা শহরে একদল বিচ্ছুকে তিনি অস্ত্র দিয়ে পাঠিয়ে দিতেন। তাদের কাজ ছিল খুব ছোট ছোট অপারেশন করা। মিলিটারি ট্রাকে বোমা ফেলা, সামরিক ভারি গাড়ি যাবে এমন রাস্তায় মাইন পুঁতে রাখা। তাদের উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানি বাহিনীকে মানসিক শান্তি না দেওয়া, ক্রমান্বয়ে চাপের মধ্যে রাখা। খালেদ মোশাররফ এ ধরনের ছোট ছোট হামলার নাম দিয়েছিলেন ‘সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার’। তবে পাকিস্তান আর্মির জন্য এ ধরনের ছোটখাট গেরিলা হামলা খুবই চাপের হলেও একদিকে ঢাকার সাধারণ বাঙালীদেরকে দারুণ স্বস্তি দিত। পাকিস্তান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধের খবর ঢাকার মানুষের কাছে খুব ভালোভাবে পৌঁছাত না। স্বাধীন বাংলা বেতার ছাড়া দেশের অন্যসব পত্রপত্রিকা আর রেডিও সামরিক সরকারের হয়ে কথা বলার কাজ করত। এর মধ্যে এসব হামলা মানুষকে মুক্তিবাহিনীর জানান দিত।

প্রশিক্ষণের পরে মুক্তিযোদ্ধাদের শপথবাক্য পাঠ করাচ্ছেন খালেদ মোশাররফ; Image source: রবীন সেনগুপ্ত

১৯৭১ সালের মার্চ মাস, পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে এক বিশাল ঝড় উঠেছে। ঠিক তখনই খালেদ মোশাররফ পশ্চিম জার্মানি থেকে উচ্চতর সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরলেন। বিদেশ থেকে আসার আগেই তাকে কুমিল্লা সেনানিবাসে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপ-অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

মার্চ মাসের শুরু থেকেই সেনাবাহিনীর বাঙালী ইউনিটের উপর ছিলো কড়া নজরদারী। মার্চের মাঝামাঝি থেকেই শক্তিশালী বেঙ্গল রেজিমেন্টগুলোকে ছোট ছোট দলে ভাগ করে ফেলা শুরু হয়। সবাই মিলে যাতে বৃহত্তর কোনো বিদ্রোহ না করতে পারে সেজন্যই করা হয়েছিল এটি। খালেদ মোশাররফ কুমিল্লা এসে দেখলেন সেনানিবাসে তার আসার আগেই দুই কোম্পানি বেঙ্গল রেজিমেন্টকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বেঙ্গল রেজিমেন্টের চারদিকে পরিখা খনন করে পাঞ্জাবি কমান্ডো আর গোলন্দাজরা অবস্থান নিয়ে আছে। এই ঘটনায় বাঙালীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দানা বেঁধেছে।

দায়িত্ব নেওয়ার পরেই তাকে বলা হয় সিলেটের শমসেরনগরে নকশালপন্থীরা তৎপরতা শুরু করেছে। চতুর্থ বেঙ্গলের এক কোম্পানি সৈন্য নিয়ে তাকে জরুরি ভিত্তিতে সেখানে যেতে বলা হয়। তাকে বলা হয় সেখানে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের দুটি কোম্পানিও আছে। এই বিশাল ফোর্সকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তাকে দ্রুত শমসেরনগর যাওয়া দরকার। বেরিয়ে যাওয়ার আগে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র আর গোলাবারুদ নিয়ে নিলেন। কুমিল্লা সেনানিবাসের সিনিয়র বাঙালী অফিসারদের নির্দেশ দিলেন কোনো অঘটন ঘটলে যুদ্ধ করে সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে এসে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা যেন করা হয়।

পথে অনেক বাঁধা ডিঙিয়ে শমসেরনগরের দিকে যাত্রা শুরু করলেন। অচেনা রাস্তা, তাই শ্রীমঙ্গলে গাড়ি দাঁড় করিয়ে লোকজনকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন দুটো রাস্তা আছে। শ্রীমঙ্গলের মধ্য দিয়েই একটি পাহাড়ি কাঁচা রাস্তা আছে, যেদিকে সময় কম লাগবে, অন্যটি পাকা রাস্তা, যেটি মৌলভীবাজার হয়ে যেতে হয়। হেডকোয়ার্টার থেকে তাকে মৌলভীবাজার শহর হয়ে যেতেই বলা হয়েছিল। কিন্তু খালেদ মোশাররফ বেছে নিলেন পাহাড়ি কাঁচা রাস্তা। অনেক কষ্টে শমসেরনগর পৌঁছে দেখেন নকশালের সেখানে কোনো অস্তিত্ব নেই। তাকে যে ইপিআর বাহিনীর কথা বলা হয়েছিল, তাদেরও খোঁজ নেই। উল্টো আরো জানতে পারেন মৌলভীবাজারের মেইন রোডের পাশেই এক কোম্পানি পাকিস্তানি লুকিয়ে ছিল তার দলকে অতর্কিত আক্রমণ করবে বলে। ২৫ মার্চের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের খবর জানার পর তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিবেন বলে মনস্থির করেন। খুব দ্রুত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শাফায়াত জামিলের সাথে যোগাযোগ করেন।

অন্যদিকে খালেদ মোশাররফের সাথে যোগাযোগ করে শাফায়াত জামিল পাঞ্জাবি অফিসারদের গ্রেফতার করে। খালেদ মোশাররফ মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই অন্যতম প্রধান একজন সমন্বয়কের ভূমিকায় কাজ শুরু করেন। বিভিন্ন অঞ্চলে বাঙালী সেনা কর্মকর্তা আর তাদের অধীনে থাকা সেনাদের একত্র করতে শুরু করেন। মেজর শফিউল্লাহ দ্বিতীয় বেঙ্গল নিয়ে ঢাকার দিকে রওনা দেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু খালেদ মোশাররফের পরামর্শে তিনিও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৌঁছান।  

মুক্তিযুদ্ধে দুই নম্বর সেক্টরের হেডকোয়ার্টারটি করা হয় মেলাঘরে। বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ভারতের একটু ভেতরে পাহাড়ের উপর জংগলে ঢাকা স্থান। এরই মধ্যে প্রশিক্ষণ নিতে থাকে গেরিলা আর সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা। সীমান্ত এলাকা ধরে পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে যুদ্ধ চলতে থাকে। পাশাপাশি দেশের ভেতর পাকিস্তানী বাহিনীকে অচল করে দেয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সব ব্রিজ আর সেতু বিকল করে দেওয়ার চিন্তা করছিলেন খালেদ মোশাররফ।

দুই নম্বর সেক্টরের যোদ্ধাদের সাথে খালেদ; Image source: মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র

কিন্তু খালেদের মাথায় এই চিন্তাও ছিলো- এই দেশ একদিন স্বাধীন হবেই। স্বাধীন দেশকে দ্রুত নিজের পায়ে দাঁড় করাতে দরকার শক্তিশালী যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাই ব্রিজ কিংবা সেতুকে সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত করে কীভাবে বিকল করা যায় সেই পরিকল্পনা মাথায় রেখে আক্রমণ সাজাতে হবে।

এই কাজের জন্য ঢাকায় গেরিলা যোদ্ধা শাফি ইমাম রুমীর বাবা শরীফ ইমামের শরণাপন্ন হলেন তিনি। শরীফ ইমাম পেশায় ইঞ্জিনিয়ার  ছিলেন। ‘রোডস এন্ড হাইওয়েজ’ বিভাগের ডিজাইন শাখাতেও তার পরিচিত লোক ছিল, সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ ফাইল নিয়ে সেগুলো বিশ্লেষণ করে ৩৫০০ ব্রিজ আর কালভার্টের তালিকা, নকশা বানানো হয়।

নদীপ্রধান বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাদের যোগাযোগকে বিঘ্নিত করতে এই  তালিকা ধরেই একের পর এক অপারেশন চালানো হয়। নদীতেও শান্তি ছিলো না পাক বাহিনীর। বাংলাদেশের ভরা বর্ষা মৌসুমের কথা চিন্তা করে পাকিস্তানি বাহিনী নারায়ণগঞ্জের ‘পাক বে’ নামক একটি কোম্পানিকে ৩০০ ফাইবার গ্লাস স্পিডবোট তৈরির নির্দেশ দেয়, ৩০০ শক্তিশালী ইঞ্জিন নিয়ে আসা হয়। খালেদ মোশাররফ বুঝতে পেরেছিলেন, ফাইবার গ্লাসের স্পিডবোট তৈরি হয়ে গেলে জলসীমা মুক্তিবাহিনীর একক আধিপত্য কমে আসবে। জলপথে টহলদারি বাড়বে, মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ধরা অনেক সহজ হয়ে যাবে। তাই যে করেই হোক এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে হবে।

মেঘনা পাড়ি দিচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধারা; Image source: রবীন সেনগুপ্ত

খালেদ মোশাররফের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ হিসেবে ছিলেন এটিএম হায়দার। পাকিস্তানের এস এস জি কমান্ডোদের একজন। খালেদ মোশাররফের বিচ্ছুবাহিনী আর ক্র্যাক প্ল্যাটুনের পেছনের আরেক উদ্যোক্তা ছিলেন এই হায়দার। পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় ছিলো বিশ্বমিডিয়ার নজর। তাই পাক বাহিনীর কাজ ছিলো ঢাকাকে যেকোনো মূল্যে সচল রাখা। কিন্তু দুরন্ত এসব বিচ্ছু আর ক্র্যাক প্লাটুনের খপ্পরে পড়ে পাকিস্তানি বাহিনীর নাস্তানাবুদ অবস্থা। অপারেশন করে কে কোথায় পালিয়ে যায় হদিস উদ্ধার করা যায় না। এসব গেরিলা অপারেশনে যুক্ত হতে শুরু করে ঢাকার স্মার্ট আর মেধাবী ছেলেরা।

ক্র্যাক প্লাটুনের গেরিলারা; Image source: Shumon Ahmed/ Bangladesh Old Photo Archive

ধানমন্ডি আর গুলশানে বাবার গাড়ি কিংবা বাইক হাকিয়ে বেড়ানো ছেলেরা, খেলার মাঠের সবচেয়ে চৌকস ছেলেরা ভিড়তে থাকে মেলাঘরের ক্যাম্পে। ঢাকা থেকে সবচেয়ে কাছে এই গেরিলা ট্রেনিং ক্যাম্প। কিন্তু ইন্ডিয়ান সেনারা এত বিপুলসংখ্যক ছেলেকে বাছাই না করেই প্রশিক্ষণ দিতে রাজী ছিলো না। কোনোক্রমে যাতে নকশালপন্থীদের সাথে যাদের যোগাযোগ আছে তাদের হাতে অস্ত্র না যায় সেই ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছিল ইন্ডিয়ান সেনা আর গোয়েন্দারা। তাদের অনেকেই দুই নম্বর সেক্টরকে ‘রেড সেক্টর’ বলে আখ্যায়িত করে। সব ঝুঁকি নিজের মাথায় নিয়ে উদ্যমী তরুণদের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে যুদ্ধে নামেন এই সমরনায়ক। তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো এই যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। ঢাকা পতন সহজ না-ও হতে পারে। তাই এই যুদ্ধে দেশের যত তরুণ যোগ দেবে ততই সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া সহজ হবে। ঢাকার তার গেরিলা দলের সবাই ছিল অত্যন্ত তরুণ। গেরিলা যোদ্ধা রুমী মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে, বদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির ছাত্র, জুয়েল ডাকসাইটে ক্রিকেট খেলোয়াড়। দেশের যুদ্ধে এদের মতোই শত সহস্র গেরিলা হাতে স্টেনগান-এক্সপ্লোসিভ, মাথায় শত্রু বধের বুদ্ধি আর মনে দেশের জন্য ভালোবাসা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

ঢাকার প্রাণকেন্দ্র শাহবাগ; সেখানে বিশ্বব্যাংকের অতিথি এসেছে, পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি দেখে অর্থ সহায়তা দেবে। তাদেরকে বোঝাতে হবে এই দেশে যুদ্ধ চলছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়, ঋণ দিলে সেই টাকায় যুদ্ধকে প্রলম্বিত করবে পাকিস্তানীরা। যেই কথা সেই কাজ; হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ভেদ করে হামলা। তা-ও একবার নয়, দুবার!

ঢাকার আশেপাশের পাওয়ার হাউজে হামলা করে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিতে হবে, গেরিলা অ্যাটাক। পেট্রোল পাম্প, সেনানিবাসে ঈদের জমায়েতে, আর্মি চেকপোস্টে, পাকিস্তানের টেলিভিশন সম্প্রচার হয় যেখান থেকে সেই ডিআইটি ভবনে, পাকিস্তান আর্মির নাকের ডগায় ব্যাংক লুট করে দুই নম্বর সেক্টরের হেডকোয়ার্টারে প্রেরণ, এমনই সব রক্তশীতল করে দেওয়া অপারেশন শুরু করে ঢাকার গেরিলারা।

খুব দ্রুত এসে আতঙ্ক তৈরি করে ‘হিট এন্ড রান’ পদ্ধতিতে গেরিলা অপারেশন করে সদস্যরা যে যার যার মতো করে আলাদা হয়ে যেত। এই পদ্ধতি অনুসরণ করেই পাকিস্তানিদের নাস্তানাবুদ চলতে থাকে। কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনীর চর আর রাজাকারদের কড়া নজরদারী ছিলো এই গেরিলাদের উপর। তাদের অনেকের বাসার ঠিকানা খুঁজে খুঁজে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে পৌঁছে দেয় রাজাকার আর গোয়েন্দারা। বাড়িতে গেরিলা না পেলে আত্মীয়স্বজনদের ধরে এনে অমানুষিক অত্যাচার চলতো।

দুই নম্বর সেক্টরের হাসপাতালে ওসমানীর সাথে খালেদ মোশাররফ; Image source: সালমা খালেদ

এতকিছুর মধ্যেও খালেদ মোশাররফ ছিলেন হিমালয়ের মতোই অটুট, ঢাকার ছেলেরা যে রোমান্টিক গেরিলা যুদ্ধের স্বপ্ন দেখত, সত্যিকার যুদ্ধে এর চেয়ে হাজারগুণ সাহসী গেরিলা যোদ্ধাদের ‘গার্ডিয়ান এঞ্জেল’ ছিলেন তিনি। মেলাঘরে যতজন মানুষের থাকার ব্যবস্থা ছিল তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মানুষ ট্রেনিং নিতে আসতো। খালেদ মোশাররফ সরাসরি বলেছিলেন,

“ঢাকায় গেরিলা তৎপরতা অব্যাহত রাখার জন্য আমার প্রচুর ছেলে দরকার, অথচ আওয়ামী লিগের ক্লিয়ারেন্স, ইউথ ক্যাম্পের সার্টিফিকেট বা ভারত সরকারের অনুমোদন পেরিয়ে যে কয়টা ছেলে আমাকে দেওয়া হয়, তা যথেষ্ট নয়।”

তাই খালেদের দলের সাথে একবার যোগাযোগ করতে পারলে সব বাঁধা পেরিয়ে খালেদ মোশাররফ তাদের গেরিলা ট্রেনিং দিয়ে দিবেন এমন আশা নিয়েও আগরতলা আর মেলাঘরের দিকে যাত্রা করেছিল অনেক তরুণ।

মুক্তিযোদ্ধাদেরকে নিয়ে আক্রমণের পরিকল্পনা সাজাচ্ছিলেন খালেদ মোশাররফ; Image source: Marilyn Silverstone

২৩ অক্টোবর যুদ্ধরত অবস্থায় খালেদ মোশাররফের কপালে পাকিস্তানি বাহিনীর শেলের একটা স্প্লিন্টার আঘাত করে। তাকে শুরুতে আগরতলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে লখনৌতে সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। খালেদ মোশারফ গুরুতর আহত হওয়ায় দুই নম্বর সেক্টরের দায়িত্ব এটিএম হায়দার আর কে ফোর্সের দায়িত্ব দেওয়া হয় মেজর আবদুস সালেক চৌধুরীকে।

খালেদের আহত হওয়ার খবরে মেলাঘরের ক্যাম্পের সবাই ভেঙে পড়ে। নিয়ম ভেঙে ক্যাম্প এলাকা ছেড়ে আগরতলার দিকে ছুটে যায় অনেকেই খালেদের খবর নেবে বলে। নেতা আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসবে তো? পরম আকুতি নিয়ে সবাই খালেদের জন্য অপেক্ষা করে।

কারণ খালেদ তো শুধু সেক্টর কমান্ডার কিংবা কে ফোর্সের প্রধান নয়, খালেদ মোশাররফ দুই নম্বর সেক্টরের অভিভাবক, দেশের জন্য যুদ্ধ করা মানুষগুলোর জন্য বটগাছের ছায়া।

খালেদ ফিরে এসেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশে, স্বাধীন দেশের সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতার জন্য ‘বীর উত্তম’ খেতাব দেওয়া হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীতে শুরু হওয়া অস্থিরতায় সেই বছরের ৭ নভেম্বর সৈনিকদের হাতে নিহত হয়েছিলেন খালেদ মোশাররফ। ১৫ আগস্টের পর সেনানিবাস আর বঙ্গভবনে চলা ঘটনার আছে অনেক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, আছে অনেক তত্ত্ব। মুক্তিযুদ্ধের দুর্ধর্ষ সেনানায়ক খালেদ মোশাররফের রক্তে সদ্য স্বাধীন শিশু বাংলাদেশের মাটি রক্তাক্ত হলো, পথচলার শুরুতেই বাংলাদেশ হারালো তার এক সোনালী সন্তান।

মুক্তিযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টর এবং কে ফোর্স” বইটি পড়ুন এবং জানুন খালেদ মোশাররফকে

This article is about Khaled Mosharraf, Bir Uttom. Khaled served as a Sector Commander in liberation war of Bangladesh and widely considered as a war hero in Bangladesh. 

References:

১. মুক্তিযুদ্ধে দুই নম্বর সেক্টর ও কে ফোর্স; খালেদ মোশাররফ (প্রথমা প্রকাশন)

২. একাত্তরের দিনগুলি; জাহানারা ইমাম (সন্ধানী প্রকাশনী)

৩. 'Khaled's War' নামক তথ্যচিত্র 

Featured Image: Marilyn Silverstone

 

Related Articles

Exit mobile version