আমাদের জীবনের বেশ দীর্ঘসময় কাটে লেখাপড়ায়। দীর্ঘদিনের লেখাপড়া শেষে আমরা প্রবেশ করি কর্মক্ষেত্রে, এবং জীবনের বাকি বেশ খানিকটা অংশ আমরা কর্মজীবনে কাটিয়ে ফেলি। দিনের অধিকাংশ সময় আমরা আমাদের অফিসে কাটাই থাকি। এই সময় আমরা যদি নিজেদের না গুছিয়ে কাজ করতে পারি, তবে আমরা বেশ পিছিয়ে যাই। কাজের প্রতি আগ্রহ কমে যায়। কর্মজীবন এবং ব্যক্তিগত জীবনে সামঞ্জস্য রাখাও কঠিন হয়ে পড়ে। এই লেখায় জানতে পারবেন কর্মক্ষেত্রে গুছিয়ে কাজ করার ১০টি কার্যকরী উপায় সম্পর্কেই।
কাজকে গুরুত্বের ক্রম অনুযায়ী সাজিয়ে নিন
অফিসে আপনাকে পুরোটা সময় নানাবিধ কাজ করতে হতে পারে। মনে রাখবেন, সব কাজই কিন্তু সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই অফিসে কাজ শুরুর পূর্বেই কাজের একটি ‘টু-ডু লিস্ট’ তৈরি করে নিন। লিস্টটি কাজগুলোর গুরুত্বের ক্রমানুযায়ী সাজান। সেই অনুযায়ী কাজগুলো করুন, এবং প্রতিটি কাজের পাশে একটি টিক মার্ক দেবেন, প্রতিটি কাজ একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে শেষ করবেন। এতে কাজ করার আগ্রহ বাড়ার পাশাপাশি আপানার কর্মদক্ষতাও বৃদ্ধি পাবে।
মাল্টিটাস্কিং থেকে নিজেকে বিরত রাখুন
কয়েকটি কাজ কখনোই একসাথে শুরু করবেন না। এতে আপনার কাজের প্রতি ফোকাস কমে যাবে। তাড়াহুড়ো সৃষ্টি হবে। কাজ গুছিয়ে করা সম্ভব তো হবেই না, বরং অগোছালোভাবে শেষ করাও অসম্ভব হয়ে যাবে।
মোবাইল থেকে দূরে থাকুন
কাজের সময় কখনই মোবাইল ফোন বেশিক্ষণ ব্যবহার করবেন না। মোবাইল ফোনে গেম খেলা কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা থেকে এ সময় নিজেকে বিরত রাখুন। দরকারে মোবাইল সাইলেন্ট করে ড্রয়ারে রেখে দিন।
রুটিন তৈরি করুন
আপনার প্রাত্যহিক কাজের একটি রুটিন তৈরি করে নিন। একটি নির্দিষ্ট রুটিন অনুসরণ করে আপনি আপনার অফিসের কাজের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনকেও অনেকটাই গুছিয়ে আনতে পারবেন।
কাজের ফাঁকে বিরতি নিন
কাজ শুরুর ৪৫ মিনিট অন্তর অন্তর ৫-১০ মিনিটের বিরতি নিন। এক গবেষণায় জানা যায়, আমাদের মস্তিস্ক যখন কোনো কাজ একটানা করে, ৪৫ মিনিট পর তার কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। তাই মস্তিস্ককে কাজের ফাঁকে ছোট বিরতি দিন, এতে আপনি আরও সুন্দরভাবে কাজ করতে পারবেন।
নিজের আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করুন
যেকোনো কাজ গুছিয়ে সম্পন্ন করতে যে বিষয়টি আপনার মধ্যে থাকতে হবে তা হচ্ছে আত্মবিশ্বাস। আপনার নিজেকে বোঝাতে হবে যে আপনি এই কাজটি অবশ্যই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন। নিজের মধ্যে ইতিবাচক অনুভূতি তৈরি করতে হবে, অর্থাৎ নিজের উপর ভরসা করতে হবে।
ক্যালেন্ডার ও প্ল্যানার ব্যবহার
ক্যালেন্ডার কিংবা প্ল্যানারে পূর্বেই আপনি কোনদিন কোন কাজ করবেন, কখন করবেন তা আপডেট করে রাখুন। এজন্য গুগল ক্যালেন্ডার অথবা আপনার ডেক্সটপে থাকা ক্যালেন্ডারও ব্যবহার করতে পারেন।
নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্বাচন করুন
আপনি যদি বেশ বড় কোনো একটি প্রজেক্টে কাজ করেন, তবে কর্মদক্ষতার দিকে খুব বেশি ফোকাস না দিয়ে বরং প্রতিদিন আপনি ঐ প্রজেক্টের জন্য ঠিক কী কী কাজ করবেন তা একটু সময় নিয়ে ভেবে-চিন্তে ঠিক করে ফেলুন। এতে আপনার কাজগুলো গুছিয়ে করাও সহজ হবে।
অবাঞ্ছিত জিনিস সরিয়ে ফেলুন
আপনার কাজের জায়গা সবসময় পরিছন্ন রাখুন। ডেস্কে কিংবা আশেপাশে থাকা ময়লা কাগজ বা কোনো অবাঞ্ছিত বস্তু ডেস্কের পাশে থাকা ডাস্টবিনে ফেলে দিন। ডেস্কে ধুলো-ময়লা জমতে দেবেন না। সবসময় পরিষ্কার রাখুন।
ডেস্কের জিনিসপত্র সাজিয়ে গুছিয়ে রাখুন
ডেস্কে থাকা ফাইল, কলম, নোটপ্যাড, ল্যাপটপ, কলমদানিসহ অন্যান্য দরকারি জিনিসপত্র কখনোই এলোমেলো রাখবেন না। আপনার ডেস্কের জিনিসগুলো সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখুন। একটি ছোট গাছ রাখুন ডেস্কের কোনো এক কোণে, এছাড়াও একটি আয়না ও পানির বোতল রাখতে পারেন।
কর্মক্ষেত্রে যদি গুছিয়ে কাজ করতে পারেন, তবে সঠিক সময়ে এবং সুষ্ঠুভাবে যেকোনো কাজই সম্পাদন করতে পারবেন। আশা করি, এই টিপসগুলো আপনার অবশ্যই কাজে আসবে।