Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অ্যাম্বিভার্ট: বিজয়ী ব্যক্তিত্ব

নিজেকে জানার আগ্রহ আমাদের ভেতর যতটা, ঠিক অপরকে জানা বা বোঝার কৌতুহলও কিন্তু কম নয়। এজন্যই হয়ত লালন সাঁই বলে গেছেন

একবার নিজেরে চিনতে পারলে যাবে রে অচেনারে চেনা

একজন মানুষ আরেকজন থেকে আসলে ব্যতিক্রম তার চিন্তা-চেতনায়। চিন্তা-চেতনার মানসিক ও শারীরিক বহিঃপ্রকাশই হছে ব্যক্তিত্ব। এরপরেই আসে ব্যক্তিত্বের নানান রকম বিশ্লেষণ। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, চাকরিক্ষেত্র- সবখানেই আমাদের কম-বেশি এ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়,

“এক্সট্রোভার্ট নাকি ইন্ট্রোভার্ট?”

অনেকে খুব সহজেই একটা উত্তরও দিয়ে দিতে পারেন।

এ দু’ধরনের ব্যক্তিত্বের সাথে মোটামুটি আমরা সবাই কম-বেশি পরিচিত এবং এদের খুব সহজেই আমরা সংজ্ঞায়িত করতে পারি। কিন্তু একটা শ্রেণী আছে যারা আসলে নিজেদের ভেতর এ দু’ধরনেরই বৈশিষ্ট্য একসাথে ধারণ করেন। আর যখনই এ ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হন, তখনই তারা বেশ চিন্তায় পড়ে যান।

আসলেই কি একজন মানুষ একইসাথে দু’ধরনের ব্যক্তিত্ব বহন করতে পারে? হ্যাঁ, পারে এবং তাদেরই অ্যাম্বিভার্ট শ্রেণীতে ফেলা হয়। চোখ মেলে তাকালে আমাদের আশেপাশেই খুঁজে পাওয়া যাবে তাদের অস্তিত্ব।

এক্সট্রোভার্ট এবং ইন্ট্রোভার্ট এর সংমিশ্রণে একজন অ্যাম্বিভার্ট

মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এবং ইমেরিটাস অ্যান্ড হিউম্যান সাইকোলোজি গবেষণাগারের পরিচালক ব্যারি স্মিথের মতে, “অ্যাম্বিভার্ট মোট জনসংখ্যার ৬৮ শতাংশ বলা যায়। শেম রির্সাচ ইনস্টিটিউট এবং ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি সাউথইস্টের পরিচালক বের্নার্ডো জে কারদুসি বলেন, “অ্যাম্বিভার্ট রাস্তার মাঝখানের ধরনের হয়

এরা নিজেদের অস্তিত্ব দুই জগতেই খুঁজে পায় এবং সমন্বয় করে চলে

অর্থাৎ একজন অ্যাম্বিভার্ট হলেন এক্সট্রোভার্ট এবং ইন্ট্রোভার্টের সংমিশ্রণ। কখনো এদেরকে দেখা যায় একজন এক্সট্রোভার্টের মতো অনর্গল কথা বলে যেতে, আবার পরক্ষণেই দেখা যাবে ইন্ট্রোভার্টের মতো নিজেকে গুটিয়ে রাখছেন।

ব্যক্তিত্ব পরিমাপক স্কেল

একজন অ্যাম্বিভার্টের কিছু গতা আছে যা তাকে অনন্য করে তোলে অন্যদের থেকে।

ভারসাম্য

একজন অ্যাম্বিভার্টের সবচেয়ে অনন্য যে বৈশিষ্ট্য তা হলো ভারসাম্য। অর্থাৎ অ্যাম্বিভার্ট অন্তর্মুখী এবং বহির্মুখী বৈশিষ্ট্যগুলোর ভারসাম্য নিজের ভেতর ধারণ করে চলেন। এক্সট্রোভার্ট এবং ইন্ট্রোভার্ট এই দুই ব্যক্তিত্বের ভেতর এক অদ্ভুত সামঞ্জস্য গড়ে তোলেন নিজের ভেতর।

চরিত্রের নমনীয়তা

একজন অ্যাম্বিভার্ট নমনীয় চরিত্রের অধিকারী হয়ে থাকেন। এ ধরনের মানুষেরা সহজেই যেকোনো মানুষের সাথে মিশে যেতে পারে, অনেকটা পানির মতো (লিকুইড পারসোনালিটি)। এ ধরনের মানুষেরা নিজেরা কী চান সে ব্যাপারে বেশ দৃঢ় থাকেন। নিজের কার্য সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় পথ তারা নিজের মতো করেই তৈরি করে নেন।

মানসিকভাবে স্থিতিশীল

একজন অ্যাম্বিভার্ট আবেগজনিত যেকোনো ব্যাপারে অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল। আবেগের বশীভূত হয়ে হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়া এ ধরনের মানুষদের ভেতর থাকে না। বেশ ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি বুঝে তারা সিদ্ধান্ত নেন। যেকোনো পরিস্থিতিতে তারা নিজেদের প্রতিক্রিয়া আয়ত্ত্বে রাখেন। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তারা ধৈর্য্যের সাহায্য নেন। পারতপক্ষে অন্যের সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটা বিশ্লেষণ করে তারপরই নিজের মতামত দেন।

একজন ভালো শ্রোতা

একজন অ্যাম্বিভার্ট অবশ্যই একজন ভালো শ্রোতা। তিনি সবসময় অন্যের কথা শুনবেন এবং ভালো-খারাপ দু’টো দিকই আলোচনা করবেন, তারপর নিজের বক্তব্য তুলে ধরবেন। নিজের গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখার জন্য তিনি সবসময় অপরের মতামতকে গুরুত্ব দিবেন।

We have two ears and one mouth so that we can listen twice as much as we speak.

তারা আসলে এ ধরনের মানসিকতা পোষণ করেন নিজেদের ভেতর।

যেকোনো ব্যাপারে স্বজ্ঞাত

একজন অ্যাম্বিভার্টের এই গুণটি তাকে তার কর্মক্ষেত্রে, পারিবারিক জীবনে অথবা বন্ধুমহলে লাইম লাইটে আনে। আমেরিকান লেখক ও সাংবাদিক ড্যানিয়েল কে পিঙ্ক তার লেখায় এমনটাই বলেন যে,

তারা জানেন কখন কথা বলতে হবে এবং কখন নিজেকে চুপ রাখতে হবে, কখন কারো ডাকে সাড়া দিতে হবে অথবা কখন কারো ডাক উপেক্ষা করতে হবে, কখন সামনে এগিয়ে যেতে হবে অথবা কখন নিজেকে সরিয়ে নিতে হবে

ড্যানিয়েল এইচ.পিঙ্ক (জন্ম 1964) বিশ্বের নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়ী, চিন্তাবিদ এবং লেখকদের একজন

প্রভাবিত করার ক্ষমতা

একজন অ্যাম্বিভার্ট আসলে যা করেন, তা হলো অন্যের সিদ্ধান্তের উপর প্রভাব বিস্তার। শুধু তা-ই নয়, দেখা যায় অনেকের মতানৈক্যের ভেতর তিনি একটা পারস্পরিক সমঝোতা তৈরী করেন, যার ফলে মোটামুটি এক্সট্রোভার্ট হোক অথবা ইণ্ট্রোভার্ট, সকলের কাছেই এ ধরনের ব্যক্তিত্বের গ্রহণযোগ্যতা থাকে। যেকোনো জায়গায় অধিনায়কত্বে ভাল সাড়া পান তিনি।

বিভিন্ন গ্রুপের সমন্বয়ে এবং ঐক্য গড়ে তোলার জন্য অ্যাম্বিভার্ট ভাল

বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীনও হতে হয় অ্যাম্বিভার্টদের।

১. দীর্ঘ সময়ের জন্য মনোযোগের কেন্দ্রস্থল হয়ে থাকতে অস্বস্তি বোধ করেন

তারা তাদের কাজের স্বীকৃতি চান। কিন্তু খুব দীর্ঘসময়ের জন্য মনোযোগের কেন্দ্রস্থল হয়ে থাকতে অস্বস্তি বোধ করেন। বেশিরভাগ সময়েই দেখা যায় তারা নিজ উদ্যোগে কাজ করেন এবং কাজে সফলতাও নিয়ে আসেন। কিন্তু যখন প্রশংসা দীর্ঘ রূপ নেয়, তখন তারা অস্বস্তিবোধ করতে শুরু করেন। তারা তাদের কাজের স্বীকৃতি ঠিকই চান, কিন্তু তাই বলে খ্যাতির বিড়ম্বনা পছন্দ করেন না। এজন্য ইচ্ছা থাকলেও তাদের অনেক সোশ্যাল ইভেন্টে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায় না।

কিছু কিছু সময় অ্যাম্বিভার্ট দ্বন্দ্বে ভোগেন

২. পরিবেশ তৈরিতে বেশ সময় নষ্ট করেন

তারা কর্মস্থলে নতুন সহকর্মীদের সাথে পরিচিত হতে চান, কিন্তু প্রথমে নিজের পরিবেশে তৈরি করতে গিয়ে বেশ সময় নষ্ট করে ফেলেন। আসলে তারা পরিস্থিতি নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসতে বেশ সময়  নিয়ে ফেলেন। একজন এক্সট্রোভার্ট যত সহজে পরিবেশ জমিয়ে ফেলেন, আড্ডায় অ্যাম্বিভার্ট ঠিক ততটাই সাবধান থাকেন অযাচিত পরিচিতির ব্যাপারে। এক্ষেত্রে আশেপাশে মানুষদের কাছ থেকে মাঝেমাঝেই কটুক্তি শুনতে হয় তাদের।

৩. অনেকেই তাদেরকে কপট বলে ধারণা করেন

পরিস্থিতি অনুযায়ী বুঝে-শুনে কথা বলার কারণে অনেকেই তাদেরকে কপট বলেও মনে করেন। দরকার ছাড়া এদের কথা বেশ কম বলতে দেখা যায়। সোশ্যাল গ্যাদারিংও এড়িয়ে চলেন তারা। নিজের কাজ নিয়ে বেশ ব্যস্ত থাকার কারণে এদের বন্ধুর সংখ্যাও অপেক্ষাকৃত কম থাকে।

চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও এই সমস্যাগুলোকে সমাধান করে সামনের দিকে এগিয়ে যায় এই ব্যক্তিত্বের অধিকারী মানুষেরা।

সাধারণত অ্যাম্বিভার্ট ব্যক্তিত্বের মানুষদের আইন বিষয়ক পরামর্শক, বিজনেস, থেরাপিস্ট, অ্যাডভাইজর, লেখক পেশায় যাওয়ার প্রবণতা থাকে। আর এসব পেশাতে তারা সুনাম ও সফলতা দু’য়েরই দেখা পান তাদের নেতৃত্ব এবং ধৈর্যের গুণে।

শুধু তা-ই নয়, মানুষের ব্যাপারে বিশ্লেষণেও এরা বেশ দক্ষ। পরিচিতির একটা দীর্ঘ সময় ধরে এরা পর্যবেক্ষণ করেন। মোটামুটি একজন মানুষের মানসিকতা বুঝে তারপর তাদের সাথে সখ্য গড়েন। মানুষের ব্যক্তিগত ব্যাপারগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের কারণে এদের শুভাকাঙ্খীর সংখ্যা অনেক থাকে। জীবনের ভালো লাগা, চাহিদাগুলোকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সাজানোর কারণে অপ্রয়োজনীয় জটিলতাগুলোকে বলতে গেলে তারা বেশ দূরেই রাখেন।

আগে হোক পরে হোক অ্যাম্বিভার্ট সদা আকর্ষণীয়

কর্মক্ষেত্রে বা পারিবারিক জীবনে নিজের স্বার্থকে অক্ষুণ্ণ রেখেও সকলের মন জয় করে নেন অ্যাম্বিভার্টরা। এজন্যই অ্যাম্বিভার্ট ব্যক্তিত্বের আরেক নাম-

‘বিজয়ী ব্যক্তিত্ব’।

তথ্যসূত্র

১)today.com/health/winning-personality-advantages-being-ambivert-t70236

২) talentegg.ca/incubator/2016/05/20/5-common-problems-ambivert-faced-starting-career

৩) en.wikipedia.org/wiki/Daniel_H._Pink

৪) buzzfeed.com/lukebailey/ambiverts-for-the-silver?utm_term=.hu9aWXrbV#.aex0e38OR

৫) voolas.com/problems-only-ambiverts-will-identify/

৬) medium.com/the-mission/who-are-ambiverts-and-why-are-they-more-influential-and-successful-than-extroverts-72f22d3268cb

Related Articles