মানুষ বুদ্ধিমান প্রাণী বলে তার একটি সহজাত প্রবণতা হলো, তার আশেপাশে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনার ব্যাখ্যা দাঁড় করানো। এ কাজটি আমরা কখনো সচেতনভাবে করে থাকি, কখনো আবার কাজটি অবচেতন মনেই করা হয়ে যায়। যেমন, একজন সৎ ব্যক্তি যখন ভালো কাজ করেন, তখন আমরা সেটি নিয়ে আর আলাদাভাবে চিন্তা করি না। বরং আমাদের অবচেতন মন এই কাজটিকে একটি উদাহরণ হিসেবে নেয় (ব্যাখ্যা করে) এবং ওই সৎ ব্যক্তিকে ‘প্রকৃতপক্ষেই সৎ’ বলে আমাদের ধারণাকে আরো পাকাপোক্ত করে। কিন্তু তিনি যদি হঠাৎ কোনো একদিন অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করে বসেন? যদি শোনা যায়, তিনি কোনো কাজ করতে গিয়ে কোনোভাবে অসদুপায় অবলম্বন করেছেন, তাহলে? সেক্ষেত্রে আমরা সচেতনভাবেই তার এ কাজটি নিয়ে চিন্তা করি, তার ব্যক্তিত্বের সাথে এ কাজটির সম্পর্ক খুঁজে বের করার চেষ্টা করি এবং অন্যান্য কিছু বিষয়কেও বিবেচনায় নিয়ে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাই।
আমাদের এরূপ প্রচেষ্টা, অর্থাৎ অন্যের আচরণ বা কোনো ঘটনাকে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে আমাদের যে প্রবণতা, সেটিকে মনোবিজ্ঞানীরা বোঝার এবং বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করে থাকেন। অর্থাৎ, আমরা নিজের বা অন্যের সাথে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা কিংবা কারো আচরণকে ব্যখ্যা করার চেষ্টা করি, আর আমরা কীভাবে সে কাজটি করি, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মনোবিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন বিভিন তত্ত্ব। এসব তত্ত্বকে সম্মিলিতভাবে ‘অ্যাট্রিবিউশন থিওরি’ বলা হয়। আজ আমরা ‘অ্যাট্রিবিউশন থিওরি’ সম্পর্কে জানবো।
এখানে কিছু বিষয় মনে রাখা উচিত; এই লেখার বিভিন্ন অংশে পারিভাষিক শব্দ ব্যবহার করা হবে। যেমন ‘অ্যাট্রিবিউশন থিওরি’র চলনসই কোনো বাংলা অনুবাদ নেই, তাই এখানে ‘অ্যাট্রিবিউশন থিওরি’ই ব্যবহার করা হবে। তবে বিভিন্ন পারিভাষিক শব্দ ব্যবহারের সময় সেটির অর্থ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হবে।
বিভিন্ন অ্যাট্রিবিউশন থিওরি
মানুষ কীভাবে ও কেন বিশেষ আচরণ করে, কিংবা কীভাবে কোনো ঘটনাকে বা অন্যের আচরণকে ব্যাখ্যা করে- তা বিশ্লেষণ করার জন্য মনোবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন থিওরি বা তত্ত্ব প্রদান করেছেন। সেগুলোর মধ্যে চারটি তত্ত্ব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
আমাদের সামনে যখন কোনো ঘটনা ঘটে, কিংবা কোনো ব্যক্তি কোনো বিশেষ আচরণ করেন, তখন আমরা নানা ধরনের সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি। আমরা ভাবতে পারি, কাজটি ‘স্বাভাবিক’ বা ‘অস্বাভাবিক’, কিংবা কাজটি ‘ভালো’ বা ‘মন্দ’। এ ধরনের মূল্যায়ন শুধুমাত্র অপর ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই নয়, আমরা নিজেদের ক্ষেত্রেও এমন মূল্যায়ন করতে পারি। আমাদের এ মূল্যায়ন করাটা কীভাবে হয়ে উঠে, তা নিয়েই ‘অ্যাট্রিবিউশন থিওরি’গুলো আলোচনা করে; তবে একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে।
কমন সেন্স থিওরি
ফ্রিটজ হেইডার নামক একজন অস্ট্রিয়ান মনোবিজ্ঞানী এই তত্ত্ব প্রদান করেন। তার তত্ত্বানুসারে, আমরা একজন মানুষের কোনো নির্দিষ্ট কাজ বা আচরণের মনস্তাত্ত্বিক কারণ হিসেবে দুটি বিষয়কে দায়ী করে থাকি- (১) তার নিজস্ব স্বভাব বা বৈশিষ্ট্য (সাইকোলজির ভাষায় Dispositional Cause), ও (২) বাহ্যিক বা পারিপার্শ্বিক কারণ (Situational Cause)
একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি সহজে বোঝা যাবে। ধরুন, আপনার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু আপনার সাথে হঠাৎ রূঢ় আচরণ করলো। আপনি স্বাভাবিকভাবে ভাবতে পারেন, এটি ‘খারাপ’ আচরণ কিংবা ‘অস্বাভাবিক’ আচরণ। কিন্তু এতটুকু ভেবেই আপনি ক্ষান্ত দেবেন না, আপনি এর কারণ নিয়েও চিন্তা করবেন। আরো স্পষ্টভাবে বললে, আপনি আপনার বন্ধুর মনস্তত্ত্ব নিয়ে ভেবে তাকে বিচার করার চেষ্টা করবেন। এর ফলাফল দুটি হতে পারে, অর্থাৎ আপনি দুটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেন- (১) আপনার বন্ধুর মধ্যে এমন কোনো বৈশিষ্ট্য আছে, যার কারণে সে এমন আচরণ করলো (Dispositional Attribution), (২) হয়তো তার মধ্যে এমন কোনো বৈশিষ্ট্য নেই, যে কারণে সে এমন করতে পারে। নিশ্চয়ই এর পেছনে বাহ্যিক বা অন্য কোনো কারণ আছে (Situational Attribution)।
হেইডার এর মতে, বেশিরভাগ মানুষ সাধারণত প্রথম ব্যাপারটিকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
করেসপন্ডেন্ট ইনফারেন্স থিওরি
এডওয়ার্ড জোনস এবং কিথ ডেভিস নামক দুজন মনোবিজ্ঞানী এ তত্ত্বের অবতারণা করেন। Correspond শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘সংশ্লিষ্ট বা সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া’ এবং Inference শব্দের অর্থ ‘অনুমান করা বা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো’। এ তত্ত্বে (Correspondent Inference Theory) সামাজিক রীতিনীতির সঙ্গে মানুষের নির্দিষ্ট কোনো আচরণের তুলনা এবং সে অনুসারে ওই আচরণের কারণ বিশ্লেষণ করে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর কথা বলা হয়েছে।
সমাজে বসবাসকারী বেশিরভাগ মানুষই সামাজিক। অর্থাৎ, তারা সামাজিক অলিখিত নিয়ম-কানুন বা রীতিনীতি মেনে চলেন। আরেকটু সহজ ভাষায় বলতে গেলে, সমাজ তাদের কাছে যেরকম আচরণ আশা করে, তারা মোটামুটি সেরকম আচরণই করে থাকেন।
ধরা যাক, রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে একজন ব্যক্তিকে আপনি সময় জিজ্ঞেস করলেন। তিনি যদি ঘড়ি দেখে আপনাকে সময় বলে দেন, তাহলে তার আচরণটি সামাজিকভাবে কাঙ্ক্ষিত। অর্থাৎ, সমাজ তার কাছে এমনটাই আশা করে। এক্ষেত্রে আপনি তাকে বা তার আচরণটিকে নিয়ে আলাদাভাবে কিছু ভাববেন না। কিন্তু তার হাতে ঘড়ি থাকা সত্ত্বেও তিনি যদি আপনাকে সময় না বলেই হেঁটে চলে যান, তাহলে আপনি তাকে এবং তার এই আচরণটি নিয়ে চিন্তা করবেন; কেননা, সামাজিকভাবে এটি কাঙ্ক্ষিত আচরণ নয়। এক্ষেত্রে, খুব সম্ভবত আপনি বাহ্যিক সম্ভাবনাগুলো বিবেচনা না করে ধরে নেবেন, এটি ওই ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য। অর্থাৎ, এর জন্য বাহ্যিক কোনো কারণ দায়ী নয়, বরং সেই ব্যক্তিই দায়ী। এমনও হতে পারে, লোকটি বধির, অর্থাৎ কানে শোনেন না, অথবা অন্য কোনো কারণও থাকতে পারে। কিন্তু এ ধরনের পরিস্থিতিতে মানুষ অপর কোনো ব্যক্তির শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যকে বিবেচনা করার প্রবণতাই বেশি দেখায়। এভাবে সামাজিকতার সাথে মানুষের একে অপরকে মূল্যায়ন করার যে প্রক্রিয়া, তার সম্পর্ক দেখানো যায়।
আরেকটি উদাহরণ দেওয়া যায় এ তত্ত্বের বিষয়ে। ধরুন, আপনি কোনো এলাকায় বেড়াতে গেলেন। কিন্তু সেখানে একটি সংরক্ষিত এলাকা রয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু আপনার খুব ইচ্ছা করছে সেখানে প্রবেশ করে কয়েকটি ছবি তুলে নিতে। কিন্তু অনেক অনুনয়-বিনয় করার পরও সেখানকার পাহারাদার আপনাকে প্রবেশ করতে দিলেন না, তাহলে তার সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী হবে?
খেয়াল করুন, কেউ বিনীতভাবে অনুরোধ করলে তা রক্ষা করা একপ্রকারের সামাজিকতা। অর্থাৎ, পাহারাদার এই সামাজিকতা ভঙ্গ করেছেন। ফলে তার সম্পর্কে আপনার মনে নেতিবাচক ধারণা হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা তেমন একটা হবে না। কেননা, সেই পাহারাদার নিজের কর্তব্য রক্ষা করতে গিয়েই এ কাজ বা আচরণটি করেছেন, তার অভ্যন্তরীণ কোনো বৈশিষ্ট্যের কারণে করেননি। অর্থাৎ তিনি এমন একটি সামাজিক ভূমিকা পালন করছেন, যেখানে এ আচরণ, অর্থাৎ কাউকে প্রবেশ করতে না দেওয়াটাই স্বাভাবিক এবং এটাও সামাজিকতার বাইরে নয়। অর্থাৎ তার এ আচরণটি সামাজিকভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত নয়। একটু চিন্তা করলেই তা বোঝা যায়, এবং আপনি ঠিক তা-ই চিন্তা করেন।
ত্রিমাত্রিক মডেল
মনোবিজ্ঞানী বার্নার্ড ভিনার মনে করেন, মানুষ অন্য কোনো ব্যক্তির নির্দিষ্ট আচরণের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে মূলত তিনটি বিষয় মাথায় রাখে-
আচরণের কেন্দ্রবিন্দু– ভিনার মনে করেন, আমরা প্রাথমিকভাবেই অনুধাবন করে নিই যে, কারো কোনো আচরণ বাহ্যিক কোনোকিছুর প্রভাবে ঘটলো, নাকি তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের কারণেই ঘটলো।
স্থায়ীত্ব– এরপর আমরা বিবেচনা করি, যে আচরণটি করা হলো, তার স্থায়িত্ব কেমন। অর্থাৎ, সে ব্যক্তি ভবিষ্যতেও একই ধরনের আচরণ করতে পারেন কি না।
নিয়ন্ত্রণ– আচরণটির উপর সে ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে কি না, থাকলেও কতটুকু, অর্থাৎ, তিনি চাইলেই সে কাজটি বা আচরণটি অন্যভাবে করতে পারতেন কি না, তা-ও আমরা বিবেচনা করি।
সর্বোপরি, ভিনার মনে করেন, উপরিউক্ত তিনটি নিয়ামক বিবেচনা করে আমরা একজন ব্যক্তির আচরণ সম্পর্কে মূল্যায়ন করি। এ মূল্যায়ন আমাদের আবেগ-অনুভূতিতে প্রভাব ফেলে এবং ভবিষ্যতে সেই ব্যক্তির সাথে আমাদের আচরণ বা লেনদেন কেমন হবে, তা নির্ধারণ করে দেয়।
কোভ্যারিয়েশন মডেল
মনোবিজ্ঞানী হ্যারল্ড কেলি এই মডেলের আবিষ্কারক। Covariation শব্দের আভিধানিক বাংলা অর্থ না থাকলেও, এর অর্থ সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে বলা যায়, ‘কোনো একটা কিছু’র পরিবর্তনের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে বা তাল মিলিয়ে ‘অন্য আরেকটা কিছু’র পরিবর্তন। কোভ্যারিয়েশন মডেলে তিনটি পৃথক বিষয় বা তথ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, যেগুলোর সাথে কোনো ব্যক্তির আচরণ মিলিয়ে আমরা সেই আচরণের কারণ নির্ধারণ করার চেষ্টা করি।
সংখ্যাগরিষ্ঠের সাথে সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য: এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে একজন ব্যক্তির একটি নির্দিষ্ট আচরণকে একই পরিস্থিতিতে আরো কিছু সংখ্যক মানুষের আচরণের সাথে মিলিয়ে দেখা হয়। অর্থাৎ, বিবেচনা করা হয়, অন্যান্য মানুষেরাও এই ধরনের পরিস্থিতিতে একই আচরণ করতো কি না। উত্তর ‘হ্যাঁ’ হলে, আমরা ধরে নিই, এই আচরণ পারিপার্শ্বিকতা দ্বারা প্রভাবিত এবং এটি সেই ব্যক্তির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নয়। আর, উত্তর ‘না’ হলে আমরা স্বাভাবিকভাবেই ভেবে নিই যে, এ আচরণের কারণ ওই ব্যক্তির মধ্যেই অন্তর্নিহিত রয়েছে।
উদাহরণ- কোনো সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে গিয়ে যদি জনাব এক্স মুগ্ধ হন এবং অন্যান্য বেশিরভাগ মানুষও মুগ্ধ হয়ে থাকেন, তবে বলা যায়, সেই সমুদ্র সৈকতটি আসলে সুন্দর। অর্থাৎ জনাব এক্সের মুগ্ধ হওয়ার কারণ হলো, ‘সুন্দর সমুদ্র সৈকত’। আর যদি শুধুমাত্র জনাব এক্স একাই মুগ্ধ হন, অন্যরা খুব একটা না হন, তাহলে বলা যায়, জনাব এক্স সহজেই মুগ্ধ হয়ে যান। অর্থাৎ, কারণটা অভ্যন্তরীণ এবং এটি জনাব এক্সের বৈশিষ্ট্য।
আচরণে সাধারণতা-অসাধারণতা: এক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয়, একজন ব্যক্তি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতেই নির্দিষ্ট আচরণ করেন, নাকি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই আচরণটি করেন। প্রথম শর্তটি সত্য হলে তার এ আচরণটি পারিপার্শ্বিকতা দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর দ্বিতীয় শর্তটি সত্য হলে বলা যাবে, আচরণটি তার জন্য সাধারণ, অর্থাৎ, এর কারণটি অভ্যন্তরীণ।
উদাহরণ- জনাব এক্স যদি শুধুমাত্র উল্লিখিত সমুদ্র সৈকত দেখেই মুগ্ধ হন, তাহলে সেটি সুন্দর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অর্থাৎ, কারণটি পারিপার্শ্বিক। আর যদি তিনি যেকোনো সমুদ্র সৈকত বা পাহাড় বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে থাকেন, তাহলে সম্ভাবনা বেশি যে, এটি তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য।
আচরণের দৃঢ়তা ও সামঞ্জস্য- একই ব্যক্তি একই ধরনের পরিস্থিতিতে বারবার কী ধরনের আচরণ করবেন বা করেন- তা বিবেচনায় নেওয়া হয়। যদি একই পরিস্থিতিতে বারবার তিনি একই ধরনের আচরণ করে থাকেন, তাহলে এর কারণ সম্ভবত তার নিজের মধ্যেই অন্তর্নিহিত। কেননা, একই ধরনের পরিস্থিতি সাধারণত একেক সময়ে মানুষের উপর একেক ধরনের প্রভাব ফেলে থাকে, যদি না সেই পরিস্থিতির উপর তার একটি নির্দিষ্ট মানসিকতা কাজ করে থাকে।
উদাহরণ – জনাব এক্স সেই সৈকতে কয়েকবার বেড়াতে গিয়ে একইরকম আনন্দ অনুভব করেন, তাহলে খুব সম্ভবত তিনি ব্যক্তিগতভাবে সেই স্থান পছন্দ করেন; সেটি প্রকৃতপক্ষে সুন্দর হোক বা না হোক। অবশ্য এ ব্যাপারটি খুব জটিল, ফলে এই অনুমানটি সঠিক না-ও হতে পারে।
আমাদের মূল্যায়নে যেসব ভুল থাকতে পারে
আমরা নিজেদেরকে ভালো করে জানলেও অন্যের মনের খবর হয়তো পুরোপুরি রাখতে পারি না। তাই অন্যের আচরণ মূল্যায়ন করতে গিয়ে আমাদের প্রায়ই কিছু ভুল হয়। এ ভুলগুলো কয়েক ধরনের হতে পারে।
১. ফান্ডামেন্টাল অ্যাট্রিবিউশন এরর (Fundamental Attribution Error) – এ ভুলটি বেশিরভাগ মানুষই করে থাকেন। যখন কারো আচরণ দেখে তার সম্পর্কে মূল্যায়ন করা হয়, তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাহ্যিক প্রভাবকগুলোকে একদমই গণনার বাইরে রাখা হয়। শুধুমাত্র ওই ব্যক্তির নিজস্ব গুণ বা দোষকেই গণনা করা হয় কার্যকারণ হিসেবে।
২. সেলফ-সার্ভিং বায়াস (Self-Serving Bias) – এটি একধরনের পক্ষপাতদুষ্টতা। যখন আপনি কোনোকিছুতে সফল হবেন, তখন এর পেছনে কারণ হিসেবে নিজের অভ্যন্তরীণ গুণ, যেমন- মেধা, পরিশ্রম বা অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের কথা ভাববেন। কিন্তু ব্যর্থ হলে সেটির জন্য বাহ্যিক নিয়ামক বা পারিপার্শ্বিকতাকে দায়ী করবেন।
৩. কর্তা-পর্যবেক্ষক বায়াস (Actor-Observer Bias) – সেলফ সার্ভিং বায়াসের ক্ষেত্রে আপনি যা করেন, আপনার কোনো প্রতিপক্ষ বা অন্য কোনো ব্যক্তির কাজ বা আচরণকে মূল্যায়ন করার সময় আপনি ঠিক তার বিপরীত কাজটি করে থাকেন। এখানে কর্তা হচ্ছেন অপর ব্যক্তিটি, আর পর্যবেক্ষক হলেন আপনি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমনটি হয় কর্তা সম্পর্কে পর্যবেক্ষকের পর্যাপ্ত ধারণা ও জ্ঞান না থাকায়।