Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

শিশুকে বুকের দুধ পান করান মা-শিশু দুজনের জন্যই

শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধ সর্বোত্তম। মায়ের বুকের দুধ শিশুর জন্মের পর প্রথম ছয় মাসের সকল ভিটামিন ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। শুধু তা-ই নয়, বুকের দুধ প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় পরিপূর্ণ, যা শিশুকে সকল প্রকার রোগ থেকে রক্ষা করে। বুকের দুধ পান করার ফলে শিশুর ঘ্রাণ ও স্বাদ গ্রহণ শক্তি বৃদ্ধি পায়, কারণ মায়ের খাবারের বিভিন্নতার কারণে বুকের দুধের স্বাদ পরিবর্তন ঘটে। শিশুকে মায়ের দুধ পান করানোর ফলে বাচ্চার সাথে মায়ের নিবিড় সম্পর্ক স্থাপিত হয়। বুকের দুধ পান করানো কেবল শিশুর জন্য দরকারি নয়, বরং মায়ের জন্যও সমান প্রয়োজনীয়।

মা ও শিশু উভয়ের জন্য শিশুকে বুকের দুধ পান করানো উপকারী; source: mmclc.org

শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান করানোর উপকারিতা

বুকের দুধ পান করানো শিশুর জন্য দীর্ঘমেয়াদী সুফল বহন করে। মায়ের বুকের দুধে সঠিক পরিমাণ পুষ্টিমান বিদ্যমান থাকায় তা বাচ্চার জন্য সহজে হজমযোগ্য। আসুন জানা যাক, শিশুকে বুকের দুধ পান করানোর উপকারিতা সম্পর্কে।

শিশুর সঠিক বৃদ্ধি

বুকের দুধে সঠিক মাত্রায় প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন ও কার্বোহাইড্রেট শিশুর সঠিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। এছাড়া মায়ের বুকের দুধে উপস্থিত লিউকোসাইট, অ্যান্টিবডি, এনজাইম এবং হরমোন শিশুর আদর্শ খাদ্য। বুকের দুধের প্রোটিন সহজে হজম হয় এবং শিশুর শরীরে ইনফেকশন প্রোটেকশন হিসেবে কাজ করে। শিশুর দেহের হাড়ের সুগঠনের জন্য মায়ের বুকের দুধে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও আয়রন থাকে। বুকের দুধের স্বাস্থ্যকর ফ্যাট শিশুর ব্রেইন, রেটিনা এবং নার্ভ সিস্টেমের উন্নয়ন করে।

মায়ের বুকের দুধে শিশুর জন্য দরকারি সব পুষ্টিমান বিদ্যমান; source: contentful.com

শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

কমপক্ষে চার মাস বুকের দুধ খাওয়ানো শিশুদের মধ্যে খাবারের এলার্জি, এ্যাজমা এবং হাঁপানি সমস্যা  কম। লো ফ্যাট এবং হাই প্রোটিন শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং টিস্যুতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি মূলত শিশুর শরীরে জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সংক্রমণের পথে বাধা সৃষ্টি করে। মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে শিশুকে দেওয়া টিকার উপকারিতা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

শক্তিশালী হাড়

গবেষণা দেখিয়েছে, যে মায়েরা তাদের শিশুকে বুকের দুধ পান করান তাদের পোস্টমেনোপজাল অস্টিওপোরোসিস (Postmenopausal Osteoporosis) এর ঝুঁকি কম থাকে। যখন একজন মা তার শিশুকে বুকের দুধ পান করান, তখন তার শরীর আরও কার্যকরভাবে ক্যালসিয়াম শোষণ করে। আর মায়ের দুধ যে শিশুর দেহের হাড় মজবুত ও হাড়ের সুস্থ গঠনে সাহায্য করে, সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

শিশুর হাড় গঠনে মায়ের বুকের দুধ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়; source: momcuddle.com

শিশুর বুদ্ধি বিকাশ

জানা যায় যে, বুকের দুধ পান করা শিশুদের মেধা ও বুদ্ধির বিকাশ বাইরের খাবার খাওয়ানো শিশুদের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হয়। মায়ের দুধের ডিএইচএ (DHA) উপাদান শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ আরও উন্নত করে।

এসআইডিএস (SIDS) ঝুঁকি কমায়

ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে শিশুর অকাল মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব। শিশুর অকাল মৃত্যুকে বলে ‘Sudden Infant Death Syndrome’, যাকে সংক্ষেপে SIDS বলা হয়। মূলত এক বছরের ভেতর হুট করে শিশুর মৃত্যুকে এসআইডিএস বলা হয় এবং এভাবে শিশুর মৃত্যু হলে ময়নাতদন্তে মৃত্যুর কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।

শিশুর বুদ্ধি বিকাশে বুকের দুধের বিকল্প নেই; source: koalakin.com

২০০৯ সালের জার্নাল অফ পেডিয়াট্রিকসে প্রকাশিত একটি গবেষণায় জানা গেছে, শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর ফলে এসআইডিএসে শিশু মৃত্যুর হাড় ৫০% পর্যন্ত কমানো সম্ভব এবং এর জন্য কমপক্ষে শিশুকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ পান করাতে হবে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়

শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে শিশুর ক্যান্সারের ঝুঁকি কমার পাশাপাশি মায়ের ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমে। শিশুকে বুকের দুধ পান করানোর ফলে মায়ের স্তন ক্যান্সার ও ওভারিয়ান ক্যান্সারের মতো রোগগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব। ২০১৫ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, ১২ মাসের বেশি সময় ধরে শিশুকে বুকের দুধ পান করানোর ফলে ২৬-৩৭ শতাংশ স্তন ও ওভারিয়ান ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

ভালো দৃষ্টিশক্তি নিশ্চিত করে

শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান করালে পরবর্তীতে চোখের সমস্যার দরুন সারাজীবন ধরে চশমা বয়ে বেড়ানোর সম্ভাবনা কমে যায়। বুকের দুধের ফ্যাটি অ্যাসিড ডিএইচএ মূল ভূমিকা পালন করে শিশুর দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার পেছনে। ডিএইচএ চোখের প্রতিরক্ষার উপাদানগুলোর মধ্যে অন্যতম। এছাড়া মায়ের বুকের দুধ শিশুর চোখের ইনফেকশন প্রতিরোধের প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক।

মায়ের বুকের দুধ শিশুর দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে; source: squarespace.com

অ্যালার্জি থেকে রক্ষা করে

ফর্মুলা বা গরুর দুধ পান করা শিশুদের তুলনায় বুকের দুধ পান করা শিশুরা অ্যালার্জিজনিত সমস্যায় কম ভোগে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, রোগ প্রতিরোধক উপাদান, যেমন- Secretory IgA (যা কিনা একমাত্র মায়ের দুধেই পাওয়া যায়) শিশুর শরীরে অ্যালার্জি প্রতিরোধের লেয়ার সৃষ্টি করে এবং খাদ্য গ্রহণের ফলে অ্যালার্জি হওয়ার প্রবণতা রোধ করে।

সঠিক ওজন লাভ

মায়ের বুকের দুধ শিশুর জীবন যাপনের জন্য সঠিক ওজন প্রাপ্তিতে সাহায্য করে এবং শৈশবে স্থুলতা প্রতিরোধ করতে অবদান রাখে। গবেষণায় জানা যায় যে, ফর্মুলা পান করে বড় হওয়া বাচ্চাদের চেয়ে মায়ের বুকের দুধ পান করা বাচ্চাদের শৈশবে স্থূলতায় ভোগার সম্ভাবনা ১৫-৩০ শতাংশ কম। এখানেই শেষ নয়, পরবর্তীতে ওজন সংক্রান্ত সমস্যায় ভোগার সম্ভাবনাও কম থাকে মায়ের বুকের দুধ পান করা বাচ্চাদের। এর অন্যতম কারণ হলো মায়ের বুকের দুধ পান করা বাচ্চাদের শরীরে উপকারী অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া বিদ্যমান থাকে, যার ফলে ফ্যাট স্টোরেজ এর ক্ষেত্রে এই ভালো ব্যাকটেরিয়া ব্যাপক ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে।

শিশুর সঠিক ওজন নিশ্চিত করতে বুকের দুধ খেতে দিন; source: whallc.com

মায়ের ওজন কমায়

যেসব মায়েরা সন্তানকে বুকের দুধ পান করান না তাদের তুলনায় বুকের দুধ পান করানো মায়েরা ওজনজনিত সমস্যায় কম ভোগেন। বুকের দুধ পান করানোর তিন থেকে ছয় মাসে স্তন্যদানকারী মায়েদের শরীরের ফ্যাট পুড়তে শুরু করে এবং দেখা যায়, বাচ্চা জন্মদানজনিত কারণে অতিরিক্ত ওজন তখন থেকে কমতে শুরু করে।

তবে এটাও সত্যি, আপনার খাদ্য তালিকা এবং ব্যায়াম ওজন কমা বা বাড়ার জন্য অনেকটাই দায়ী।

মা ও শিশুর মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন

বুকের দুধ পান করানোর মধ্য দিয়ে মা ও শিশুর মধ্যে সম্পর্ক আরও সুন্দর আর নিবিড় হয়। শিশু যতই কান্নাকাটি করুক, মা কোলে তুলে নিলে সে একদম চুপ হয়ে যায়। এটি মূলত শুরু হয় মা শিশুকে যখন বুকের দুধ পান করানো শুরু করেন তখন থেকে। এছাড়াও শিশুকে বুকের দুধ পান করানো মায়েরা তুলনামূলক কম হতাশায় ভোগেন। কারণ বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করানোর মধ্য দিয়ে মায়ের মধ্যে অনেক ইতিবাচক হরমোনের সৃষ্টি হয়।

মা ও শিশুর নিবিড় সম্পর্ক; source: contentful.com

মানসিক প্রশান্তি

যদি একজন মাকে তার সারা জীবনে ঘটে যাওয়া অজস্র ঘটনার মধ্যে সুন্দরতম ঘটনাগুলোর কথা বলতে বলেন, তিনি নিশ্চয়ই সেখানে তার সন্তানকে স্তন্যদানের কথা বলবেন। মায়ের কাছে সবচেয়ে মানসিক প্রশান্তি হলো শিশুকে নিজের বুকের দুধ পান করানো। স্তন্যপান মা ও শিশুর জন্য অনন্য এক মানসিক অভিজ্ঞতা। সন্তান লালন-পালনের ধাপগুলোর মধ্যে এটি একমাত্র আচরণ, যা কেবল একজন মা-ই করতে পারেন, আর এই অনুভূতিই একটি শক্তিশালী শারীরিক ও মানসিক সংযোগ সৃষ্টি করে মা আর সন্তানের মধ্যে।

ফিচার ইমেজ- medicaldaily.com

Related Articles