![](https://assets.roar.media/Bangla/2018/01/30641310_l.jpg?w=1200)
“হতাশায় কাটছে দিন, দুলছে জীবন দোদুল্যমান।
আশা ফুরিয়েছে, তাই আজ আমি ভাবনাহীন।”
আশার দীপশিখা নিভু নিভু হতে শুরু করলে মানুষের মনে জন্ম নেয় হতাশা। বলা যেতে পারে, আশার সমাধিস্থলেই হতাশার জন্ম। তিন বর্ণের এই শব্দ আকারে খুব ছোট হলেও তার প্রভাব বিস্তর। এই হতাশা কারো জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে নতুন পথচলার দিশা দেখায় ও উৎসাহ যোগায়, তবে তার উদাহরণ নেহায়েতই কম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হতাশা মানুষকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেয়, যেখানে থাকে শুধু দীর্ঘশ্বাস ও গ্লানি। আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই হতাশার পদচারণা রয়েছে। হতাশা থেকে নিজেকে মুক্ত করার কিছু উপায় সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক আজ।
কার্যত কোনো নির্দিষ্ট কাজের আশানুরূপ ফলাফল না পেলে হতাশার সৃষ্টি হয়। ব্যক্তিভেদে হতাশার কারণ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। কিছু সাধারণ কারণ সম্পর্কে আলোকপাত করা যাক এখানে।
- পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে না পারা।
- ভালবাসার সম্পর্কে সফল না হওয়া।
- ব্যবসায় আশানুরূপ লাভ না করতে পারা।
- চাকরীতে পদোন্নতি বা পারিশ্রমিক না পাওয়া।
- পরিবারে সকলের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে না পারা।
- একাকীত্ব।
- অকস্মাৎ কোনো বিপদে জীবনের খেই হারিয়ে ফেলা।
- ভুল/ঠিকের পার্থক্যহেতু সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকা।
হোক না অল্প সময়ের জন্য, কোনো কারণবশত যখন আপনি হতাশায় নিমজ্জিত রয়েছেন সেই সময়ে অদৃশ্য এক ভার আপনার কাঁধে অনুভব করবেন। প্রতিনিয়ত আপনাকে হীনম্মন্যতায় ভোগাতে থাকবে এবং আপনি নিজের অজান্তেই ধীরে ধীরে সবকিছুতে হেরে যেতে থাকবেন। আপনার মনকে নেতিবাচক চিন্তা গ্রাস করতে থাকবে। নিজের সম্পর্কে আপনার ধারণাগুলো তখন অনেকটা এরকম হবে-
- আমি হয়ত ভালো না।
- আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।
- আমার সাথে সবসময় এমনটা হয়ে থাকে।
আপনি যদি একবার এই হতাশার কূপের মধ্যে পড়ে যান, তবে আপনি শুধু তলিয়েই যেতে থাকবেন অতলে। বাস্তব ঘটনা উপলব্ধির জায়গায় ক্রমশ পর্দা নামতে থাকবে।
হতাশার মুহূর্তে করণীয়
আকাঙ্ক্ষার সাথে প্রাপ্তির ফারাকটা বিস্তর হলে, হতাশা এসে টুপ করে জেকে বসে। সবসময় যে সবক্ষেত্রে সফলতা আসবে না- এটাই স্বাভাবিক, পুনরায় নতুন উদ্যমে চেষ্টা করতে হবে। আর তাই হতাশার ঐ মুহূর্তগুলোতে এই কাজগুলো আপনার একান্ত করণীয়।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2018/01/il_fullxfull_96491063-701x544.jpg)
Source: ledysimanjuntak.wordpress.com
- প্রথম কাজটিই হবে নিজেকে শান্ত করা। এই সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর উপরই নির্ভর করছে যে আপনি কি হতাশার কাছে আত্মসমর্পণ করবেন নাকি ভবিষ্যতে সাফল্য অর্জনের জন্য নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করবেন। ঘটে যাওয়া ঘটনা কিছু সময়ের জন্য ভুলে যান, অন্য কাজে নিজেকে নিয়োজিত করুন। একটা লম্বা ঘুম দিতে পারেন অথবা বাথরুমে গিয়ে শাওয়ারটা ছেড়ে দিয়ে কিছুক্ষণ নিজের আপাদমস্তক ভিজিয়ে নিন। দেখবেন কিছুটা ভালো বোধ করছেন।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2018/01/17vzbduvh99gnjpg-701x394.jpg)
Source: gizmodo.com
- এতে মন যদি শান্ত না হয় তবে বেশ কিছুটা সময়ের জন্য গান, সিনেমা অথবা বইয়ের রাজ্যে হারিয়ে যান। মনের দুর্ভাবনাগুলোকে সরিয়ে দিয়ে আপনাকে নতুন করে ভাবার প্রেরণা যোগাবে।
- ভেবে দেখুন তো একবার, আপনি শেষ যখন হতাশায় ভুগেছিলেন সেই সময় এবং তার আগের সময়ের শারীরিক প্রতিক্রিয়া কি এক ছিল? যে মুহূর্তে আপনি হতাশাজনক কিছু শুনে থাকেন, আপনার মনের সাথে সাথে শরীরের উপরও তার প্রভাব পড়ে। তাই কিছুটা সময় দিন নিজেকে, মন শান্ত হওয়ার সাথে সাথে আপনার শারীরিক প্রতিক্রিয়াও স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2018/01/f49cb2136336f9f187f682e7d4169d30-701x701.jpg)
Source: pinterest.com
- সবসময় আপনার হতাশার কারণ যে যৌক্তিক বা সঠিক তা কিন্তু নয়। এমনও হতে পারে, হতাশ হওয়ার মতো কিছুই হয়নি, হয়ত নিতান্ত কোনো ভুল বোঝাবুঝি অথবা আপনার প্রত্যাশা ও অবস্থার ব্যাখ্যার মাঝে ফারাক থাকার কারণে এমনটা হয়েছে। এমতাবস্থায় আপনার বোধগম্যতার জায়গাটাকে সুনিশ্চিত করুন, হয়ত আপনার সামনে অপেক্ষা করছে সুবর্ণ সুযোগ।
- বিষয় বা ঘটনাটিকে ঠিক মেনে নিতে পারছেন না, হতেই পারে এমন। এমন সময় যদি আমরা একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করি তাহলে কেমন হয়? চিন্তাগুলো এমন হতে পারে-
- সবকিছুই কোনো না কোনো কারণে হয়ে থাকে।
- সবকিছুরই একটা ভালো দিক থাকে, হয়ত এর মাঝে ভালো কিছু লুকিয়ে রয়েছে।
- এর থেকে আরো খারাপ কিছুও তো হতে পারত।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2018/01/934-Martin-Luther-King-Jr-Quote-We-must-accept-finite-disappointment-701x394.jpg)
Source: quotefancy.com
- আপনার জীবনে হতাশার স্থায়িত্ব ক্ষণিকের, তাই এই হতাশার দ্বারা খুব বেশী সময়ের জন্য প্রভাবিত হয়ে পড়বেন না।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2018/01/81485f1edaf2c5e7503af05a20f1838f-stress-qoutes-work-stress-quotes-701x1013.jpg)
Source: pinterest.com
- মানুষ হিসেবে আমরা কেউই পরিপূর্ণ নই। তাই আমাদের কাজেও সবসময় সফলতা আসবে না- এটা নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করুন। আপনি হয়ত দু’পা এগিয়ে গিয়ে এক পা পিছিয়ে পড়তেই পারেন। ব্যর্থতা থেকে কিছুটা অভিজ্ঞতা অর্জন করার চেষ্টা করতে হবে এবং ভবিষ্যৎ পদক্ষেপে তা কাজে লাগাতে হবে।
হতাশা থেকে মুক্তির কিছু উপায়
জীবনে হয়ত কোনো কারণে ব্যর্থতা এসেছে, হতাশার চাদরে আপনার দেহ-মন আবৃত হয়ে রয়েছে। চিরকাল কি এভাবেই হতাশ বদনে দিন পার করে দিতে চাইবেন? অবশ্যই না, তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক কিছু সহজ সমাধান, যা আপনাকে হতাশার নাগপাশ থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করবে।
ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্পর্কে নিজের অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করুন
![](https://assets.roar.media/Bangla/2018/01/120483-740xNone-701x524.jpg)
Source: sacrocuorsliema.com
প্রথমে বোঝার চেষ্টা করুন এই অকৃতকার্যতা সম্পর্কে সত্যিকার অর্থে আপনি কি অনুভব করছেন। নিজেকে এই তিনটি প্রশ্ন করে ফেলুন-
- আসলে কী ঘটেছিল?
- কী ঘটা উচিত ছিল?
- আমি এই বিষয়টা নিয়ে কেন হতাশ হয়ে পড়েছি?
এই প্রশ্নগুলো আপনার চেষ্টা ও ফলাফলের মাঝের ব্যবধানকে বুঝতে সহায়তা করবে। হতাশার সময়টাতে আপনার প্রতিক্রিয়া কী ছিল তা মনে করার চেষ্টা করুন। আবারো নিজেকে প্রশ্ন করুন-
- যে মুহূর্তে আমি ব্যর্থ হয়েছিলাম, তখন ঠিক কী ভেবেছিলাম?
- আমি কি নিজেকে দায়ী করেছিলাম নাকি অন্য কোনো ব্যক্তি বা ঘটনাকে দায়ী করেছিলাম?
- আমি কি কোনো অজুহাত খোঁজার চেষ্টা করেছিলাম?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়ার পর যদি দেখেন যে আপনি সেই মুহূর্তে কোনো বাহানা দিয়েছিলেন বা কোনো অভিযোগ করেছিলেন বা এর দায়ভার আপনি নিতে চাননি, তাহলে বুঝতে হবে আপনি ব্যর্থতার মূল কারণটিকে অবহেলা করছেন। তাই প্রথমে নিজের মনকে প্রশ্ন করুন এবং সঠিক কারণ উদঘাটন হেতু পুনরায় নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করুন।
নিজের প্রত্যাশা সম্পর্কে জানুন
![](https://assets.roar.media/Bangla/2018/01/EmilysQuotes.Com-unknown-disappointment-people-blame-sad-mistakes-701x462.jpg)
Source: emilysquotes.com
শুরুতে আপনি কী প্রত্যাশা করেছিলেন, ঠিক কতটা প্রত্যাশা করেছিলেন এবং আপনার প্রত্যাশা কি বাস্তবিক না অলীক ছিল সেটাও ভেবে দেখার বিষয়।
ধরে নেয়া যাক, আপনি একজন ছাত্র। সারা বছর পড়াশোনা করলেন না, পরীক্ষার আগের রাতে কিছুটা সময় অনুশীলন করে প্রত্যাশা করতে থাকলেন আপনি ভালো ফলাফল অর্জন করবেন। ফলাফল বের হওয়ার পর দেখলেন, আপনি আপনার প্রত্যাশা অনুযায়ী অর্জন করতে পারেন নি। এক্ষেত্রে আপনার হতাশ হওয়াটা কতটা যুক্তিসঙ্গত বা আদৌ কি হতাশ হওয়া উচিত?
তাই নিজের প্রচেষ্টা অনুযায়ী প্রত্যাশা করতে শিখুন এবং নিজেকে করে ফেলুন সহজ তিনটি প্রশ্ন-
- এই বিষয়টা নিয়ে আমার প্রত্যাশা কী?
- নিজেকে নিয়ে আমার প্রত্যাশা কী?
- এই কাজের সাথে জড়িত অপরপক্ষকে নিয়ে আমার প্রত্যাশা কী?
যে ঘটনাটা আপনার জীবনে ঘটে গেছে, তা থেকে শিক্ষা নেয়ার চেষ্টা করুন
![](https://assets.roar.media/Bangla/2018/01/a-method-for-overcoming-disappointment-mind-map-701x689.jpg)
Source: blog.iqmatrix.com
আপনার জীবনে হতাশাজনক যা-ই ঘটে থাকুক না কেন, তা থেকে কিছু শিক্ষা নেয়ার চেষ্টা করুন যা আপনাকে ভবিষ্যতে কখনো না কখনো সাহায্য করবে। নতুন করে ভাবতে ও পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে সহয়তা করবে। নিজেকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করুন-
- ঘটে যাওয়া এই হতাশাব্যঞ্জক ঘটনা থেকে আমি কী শিক্ষা নিতে পারি যা আমাকে ভবিষ্যতে সাহায্য করবে?
- আমি কি সঠিকভাবে চেষ্টা করেছিলাম?
- কীভাবে আপনি পরবর্তী লক্ষ্য নির্ধারণ করবেন?
- পরবর্তীতে লক্ষ্য নির্ধারণ বা কোনো কিছু নিয়ে আশাবাদী হওয়ার পূর্বে আমার কী কী বিষয় মাথায় রাখা উচিত?
নিজের দক্ষতা এবং আত্মোন্নয়নের জায়গাটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন
![](https://assets.roar.media/Bangla/2018/01/0275116-701x501.jpg)
Source: mortylefkoe.com
অনেক ক্ষেত্রে আমাদের কাজের ক্ষেত্র, ব্যক্তি বা বিষয় আমরা সঠিকভাবে নির্বাচন করতে পারি না। নিজেদের দক্ষতা ও আত্মোন্নয়নের জায়গা সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই। নিম্নোক্ত এই প্রশ্নগুলো করে নিজের কর্মক্ষমতা সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা তৈরি করার চেষ্টা করতে হবে-
- আমি কোন বিষয়ে পারদর্শী?
- যে কাজটা আমি করতে যাচ্ছি, সে বিষয়ে কি আমার যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে?
- নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আমি অন্যদের কাছ থেকে কী কী সাহায্য পেতে পারি?
জীবনের যাঁতাকলে পড়ে আমাদের জীবনে প্রায়শই হতাশা পেয়ে বসে। আমরা হাসতে ভুলে যাই, স্বাভাবিক চিন্তা করার শক্তি লোপ পেয়ে যায় এবং অনেকক্ষেত্রে মানুষ এতটাই ভেঙে পড়ে যে সকলের কথা ভুলে গিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। আমাদের জীবনকাল খুব অল্প সময়ের, তাই হতাশাকে দূরে ঠেলে দিয়ে আশার প্রদীপটাকে জ্বেলে রাখার চেষ্টা সর্বদা করা উচিত। সব হতাশার মধ্যে থেকে আমরা ভালো কিছু শেখার চেষ্টা করি, একটু ইতিবাচকভাবে চিন্তা করি। আশা করি অনেক বুদ্ধিমত্তার সাথে নিজেকে ঠিক সামলে নিতে পারবেন।
ফিচার ইমেজ: familydoctor.org