Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ক্যানন বনাম নিকন: নতুনদের জন্য স্বল্প বাজেটের ডিএসএলআরগুলো

ফিল্ম ক্যামেরার স্বর্ণযুগে বাজারে অনেকগুলো ব্র্যান্ডের আধিপত্য থাকলেও ডিজিটাল ক্যামেরার যুগে অধিকাংশ ক্যামেরাপ্রেমীই ক্যানন অথবা নিকনের প্রতি বিশ্বস্ত। বাজারে নানা ব্র্যান্ড থাকলেও শিক্ষানবিশ ফটোগ্রাফার বলুন কিংবা পেশাদার; প্রায় অধিকাংশই এই দুটি ব্র্যান্ডের মধ্যে আটকে যায়। আর বিতর্কের শুরুটা এখান থেকেই শুরু! ক্যানন, নাকি নিকন?

ক্যানন বনাম নিকন; Image Source: netdna-ssl.com

পেপসি বনাম কোক, উইন্ডোজ বনাম ম্যাক, অ্যান্ড্রয়েড বনাম আইএসও এর মতো ক্যানন বনাম নিকনের লড়াইটা বহু পুরনো। তবে ব্যবহারযোগ্যতার দিক দিয়ে একটির চাইতে অন্যটি এগিয়ে থাকলেও সামগ্রিকভাবে দুটি ব্র্যান্ডেরই বহু বছর ধরে মানসম্মত ক্যামেরা তৈরির অভিজ্ঞতা রয়েছে। দুটি ব্র্যান্ডই মাল্টি-মিলিয়ন ডলারের অপটিকাল ইন্ডাস্ট্রিকে ব্যবহার করে উৎকর্ষ পেশাদারী ক্যামেরা থেকে শুরু করে সাধারণ ভোক্তাদের ব্যবহারযোগ্য ক্যামেরা তৈরি করে যাচ্ছে কয়েক যুগ ধরে। তাই কোনটি কার চাইতে বেশি প্রাধান্য পাওয়ার যোগ্য, সেদিকে না গিয়ে, দুটো ক্যামেরা ব্র্যান্ডের উপযোগিতা, কার্যক্ষমতা এবং ব্যবহারযোগ্যতা নিয়ে জানবো। বাজেট এবং আগ্রহের উপর ভিত্তি করে, কোন ব্র্যান্ডের কোন ক্যামেরাটি নতুনদের জন্য উপযোগী হতে পারে, সে ব্যাপারেও আলোচনা করবো।

ক্যানন বনাম নিকন

যেকোনো দুটো পণ্যের মাঝে পার্থক্য করার সময় সেগুলোর কার্যক্ষমতাকে সবচাইতে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে ক্যানন এবং নিকন, উভয়ের সার্বিক অবস্থান বেশ শক্তিশালী। চাইলেই একটির চাইতে অন্যটিকে প্রাধান্য দেওয়ার তেমন একটা সুযোগ নেই। তবে হ্যাঁ, অটো-ফোকাস, নয়েজ-হ্যান্ডেলিং, সেন্সর, মেগাপিক্সেল, ফটো পার আওয়ার, এলসিডি, ফ্ল্যাশ, ভিডিও কোয়ালিটির মতো প্রধান প্রধান ফ্যাক্টরগুলো বিবেচনাযোগ্য।

অটো-ফোকাস

অন্যান্য ব্র্যান্ড থেকে ক্যানন এবং নিকনের চাহিদা বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ, ব্র্যান্ড দুটোর ক্যামেরাগুলোর সাথে বেশ পুরনো লেন্সের সামঞ্জস্য বজায় রাখার সক্ষমতা। ক্যাননের EOS সিরিজটি প্রবর্তিত হয় ১৯৮৭ সালে। অপরদিকে, নিকনের F-Mount সিরিজটি ১৯৫৯ সালে। আপনি যেকোনো EOS EF অথবা এফ-মাউন্ট সিরিজের লেন্স আপনার ক্যামেরাতে ব্যবহার করতে পারবেন, সেটি যত পুরনোই হোক।

তবে তাদের মধ্যে অন্যতম পার্থক্য তৈরি হয় অটো-ফোকাসের ক্ষেত্রে। ক্যাননের বেলায় ইওএস ইফ সিরিজের সবগুলো লেন্সেই অটো-ফোকাস রয়েছে। কিন্তু, নিকনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র AF-S’ই অটো-ফোকাসের সুবিধা দিয়ে থাকে।

ক্যাননের EOS EF সিরিজের লেন্সে অটো-ফোকাস বাটন; Image Source: journotech.co.uk

নিকন তাদের এন্ট্রি-লেভেলের ক্যামেরাগুলোকে সস্তা এবং হালকা করার লক্ষ্যে ক্যামেরা-বডি থেকে অটো-ফোকাস মোটর বাতিলের ঘোষণা দেয়। যদি কেউ নিকনের D40, D40X, D60, D3000, D3100, D5000 এবং D5100 মডেলের ক্যামেরাগুলো অটো-ফোকাস সহ ব্যবহার করতে চায়, তাহলে অবশ্যই এএফ-এস সিরিজের লেন্সগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে সে সুবিধা গ্রহণ করতে হবে।

ক্রপ-ফ্যাক্টর

আপনি যদি ক্যামেরার ক্রপ-ফ্যাক্টরের ব্যাপারে অবগত হয়ে থাকেন, তাহলে জানতে আগ্রহী হবেন যে, ক্যাননের এন্ট্রি-লেভেলের ডিএসএলআরগুলোর সেন্সর অন্যান্য ব্র্যান্ডের ক্যামেরা থেকে একটু বেশিই ছোট। যেখানে নিকনের এন্ট্রি-লেভেলের ক্যামেরাগুলোতে ক্রপ-ফ্যাক্টর ১.৫, ক্যাননের ক্ষেত্রে তা ১.৬। অর্থাৎ, আপনি যদি আপনার ৫০মি.মি প্রাইম লেন্সটি কোন ক্রপ-ফ্রেমে ব্যবহার করতে চান, তাহলে ৭৫মি.মি এর জায়গায় ৮০মি.মি পাবেন, যা অবশ্য তেমন একটা পার্থক্য সৃষ্টি করে না।

ক্যাননের ১.৬ ক্রপ-ফ্রেম(প্রথম) বনাম ফুল-ফ্রেম(দ্বিতীয়); pinterest.nz

এলসিডি

ফটোগ্রাফারদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফটোগ্রাফের কালার, হোয়াইট ব্যালেন্স, লাইভ ভিউ/মুভি মুডে দৃশ্যাবলী দেখা সহ নানান গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য এলসিডির যথার্থতার উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু  নিকনের D600, D800, D800E এবং D4 মডেলের জনপ্রিয় ফুল-ফ্রেম ক্যামেরাগুলোর এলসিডিতে অতিরিক্ত হলদেটে ভাবের কারণে অধিকাংশ প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারই অসন্তুষ্ট। এছাড়াও নিকনের অটো-ব্রাইটনেস নিয়ন্ত্রণ ক্যাননের অটো-ব্রাইটনেসের চেয়ে খারাপ। পাশাপাশি ক্যাননের এলসিডির উপরের অংশে ব্যবহৃত প্ল্যাস্টিক/গ্লাসের অ্যান্টি-রিফ্লেক্টেড আবরণ আউটডোরের অতি-সূর্যরশ্মির সময়ও এলসিডির মাধ্যমে লাইভ ভিউ/মুভি মুডে দৃশ্যাবলী দেখতে সাহায্য করে। কিন্তু নিকনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আশেপাশের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়।

ভিডিও কোয়ালিটি

আকারে ছোট, হালকা এবং সহজে ব্যবহার যায় বিধায় বর্তমানে ভিডিওগ্রাফির জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডিএসএলআরের ব্যবহার করা হয়; অর্থাৎ, প্রধান প্রধান ফ্যাক্টরগুলোর মধ্যে দুটো ব্র্যান্ডের ক্যামেরাগুলোর ভিডিও কোয়ালিটিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ভিডিওগ্রাফির জন্য ক্যানন সবসময়ই ব্যবহারকারীদের প্রশংসা কুড়িয়ে এসেছে। তাদের ক্যামেরাগুলোতে ব্যবহৃত হাইব্রিড অটো-ফোকাস সিস্টেম রেকর্ডিংয়ের সময় অবজেক্টকে ক্রমাগত স্বয়ংক্রিয়ভাবে রি-ফোকাসিংয়ের কাজে বেশ দক্ষ। এছাড়াও শুধুমাত্র ভিডিওগ্রাফির দিকে ফোকাস রেখে তৈরী লেন্সও বাজারে পাওয়া যায়। এন্ট্রি লেভেল থেকে শুরু করে প্রায় সবধরনের ক্যামেরাতে ভিডিও রেকর্ডিং প্রযুক্তি বেশ উন্নত বিধায়, ক্যানন এক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে।

অন্যদিকে, ২০১২/১৩ এর দিকেও নিকনের অধিকাংশ ডিজিটাল এসএলআর ক্যামেরাগুলোতে ভিডিও রেকর্ডিংয়ের সময় অটো-ফোকাসিংয়ের সুবিধা না থাকলেও পরবর্তীতে তৈরী প্রায় অধিকাংশ ক্যামেরাতে রেকর্ডিং চলাকালে অটো-ফোকাসিংয়ের সুবিধা রয়েছে। এমনকি নিকনের কিছু কিছু ক্যামেরায় ভিডিওগ্রাফিতে ফ্রেম রেট ৬০ fps ব্যবহার করা হয়, যেখানে প্রায় একই দামের ক্যাননের ক্যামেরাগুলোতে ফ্রেম রেট ৩০ fps

অন্যান্য

ক্যাননের অটো হোয়াইট ব্যালেন্স নিয়ে অধিকাংশ ব্যবহারকারীর অসন্তুষ্টি রয়েছে, কিন্তু অল্প খরচে বেশ কার্যক্ষম লেন্সের জন্য ক্যানন প্রসিদ্ধ। তাদের এল-সিরিজের লেন্সগুলো দামে বেশি হলেও, এতে আল্ট্র্যাসনিক মোটরের ব্যবহারের অটো-ফোকাসিংকে আরো বেশি দ্রুতগতি সম্পন্ন এবং নিখুঁত করে তুলেছে। অপরদিকে, নিকন ক্যামেরাগুলো নয়েজ-হ্যান্ডেলিংয়ে বেশ প্রশংসার দাবি রাখলেও, তাদের ম্যানু সিস্টেমের ডিজাইন বেশ জটিল এবং দুর্বল। 

স্বল্প বাজেটের মধ্যে সেরা ডিএসএলআর

নতুন ক্যামেরা কেনার সময় সবচাইতে বেশি জিজ্ঞেস করা প্রশ্নটি হচ্ছে, “নিকন, নাকি ক্যানন? বাজেটের মধ্যে কোন ব্র্যান্ডের কোন ডিএসএলআরটি ভালো হবে?” দুটো ক্যামেরা ব্র্যান্ডই যেহেতু নানান দিক থেকে তাদের নিজ নিজ অবস্থান ধরে রাখছে, সেহেতু কম বাজেট হোক, আর বেশি; দুটো ব্র্যান্ডই অনেকগুলো ডিএসএলআর অফার করে।

আপনার বাজেট যদি হয় ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজারের মধ্যে, তাহলে ক্যাননের EOS 1300D, EOS 600D, EOS 650D, Kiss i7/700D সহ নিকনের D3300 এবং D3400 এর মতো জনপ্রিয় ডিএসএলআরগুলো বেশ সহজেই কিনতে পারবেন।

Nikon D3300; Image Source: thephoblographer.com

বর্তমানে সবচাইতে বেশি প্রচলিত ক্যামেরাগুলোর মধ্যে EOS 1300D, EOS 600D, EOS 650D, Kiss i7/700D অন্যতম। এদের দামও প্রায় একই। চারটি ক্যামেরাই ১৮ মেগাপিক্সেল অফার করে। তবে এদের ফ্রেম রেট ক্রমানুসারে সর্বোচ্চ  ৩fps, ৩.৭fps, ৫fps ও ৫fps এবং 1300D ছাড়া অন্য তিনটি ওয়ারলেস ফ্ল্যাশ ব্যবহারের সুবিধা দিয়ে থাকে। EOS 650D এবং 700D দুটো ডিএসএলআরই নয়টি অটো-ফোকাস পয়েন্ট, টাচ-কন্ট্রোলিং সহ প্রায় একই ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকলেও, 700D তে রয়েছে ভ্যারি-অ্যাঙ্গেল এলসিডি; যে কারণে খুব সহজেই প্রয়োজনমতো এলসিডির অবস্থান পরিবর্তন করা যায়।

অন্যদিকে ক্যাননের 650D এবং 700D এর সাথে পাল্লা দিয়ে নিকনের D3300 এবং D3400ও বেশ জনপ্রিয়। দুটো ডিএসএলআরই ২৪.২ মেগাপিক্সেলের অফার করে, পাশাপাশি রয়েছে এগারোটি অটো-ফোকাস পয়েন্ট। এরা প্রায় একই ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকলেও D3400তে বিল্ট-ইন সেন্সর ক্লিনার রয়েছে এবং এতে ব্যবহৃত হয়েছে নিকনের ব্লু-টুথ প্রযুক্তি ‘স্নাপব্রিজ’, যার সাহায্যে খুব সহজেই এই ক্যামেরাতে তোলা ছবিগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্মার্টফোনে হস্তান্তর করা যায়।

ক্যানন 700D তে ভ্যারি-অ্যাঙ্গেল এলসিডি; Image Source: digitalvizion.co.vu

বাজেটের পরিমাণ চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজারের মধ্যে হলেই ক্যাননের EOS 750D, EOS 200Dএবং নিকনের D5300 এবং D5600এর মতো জনপ্রিয় ক্যামেরাগুলোর দিকে হাত বাড়াতে পারেন। চারটি ক্যামেরাই ২৪.২ মেগাপিক্সেল, ৫fps ফ্রেম রেট অফার করে। এরপরেও এদের মধ্যে বেশ বড় রকমের পার্থক্য রয়েছে।

ক্যানন EOS 750D এবং EOS 200D দামের পার্থক্য তেমন একটা না থাকলেও; ISO, ফোকাস-পয়েন্ট, ওজনের দিক দিয়ে EOS 200D এগিয়ে। 750D এর নেটিভ আই-এসও’র রেঞ্জ যেখানে ১০০ থেকে ১২৮০০, অটো-ফোকাস পয়েন্ট নয়টি এবং ওজন ৫৫৫ গ্রাম, সেখানে 200D এর আইএসও ১০০ থেকে ২৫৬০০, ১৯টি অটো-ফোকাস পয়েন্ট এবং ওজন ৪৫৩ গ্রাম। এছাড়াও 200D তে বিল্ট-ইন ব্লু-টুথ, টাইম-ল্যাপস রেকর্ডিং সিস্টেম রয়েছে। এমনকি এর ফ্ল্যাশ কভারেজ, ব্যাটারি সক্ষমতা, কালার ডেপথ, লো-লাইট আইএসও 750D থেকে বেশি।

ফোকাস পয়েন্ট; Image Source: digital-photography-school.com

অন্যদিকে নিকনের D5600 মডেলটি প্রায় একই রকমের ফিচার অফার করে থাকলেও লো-লাইট ফটোগ্রাফিতে ক্যানন 200D মডেলটির থেকে চেয়ে এগিয়ে। এর ব্যাটারির সক্ষমতাও বেশি। ৩৯ অটো-ফোকাসিং পয়েন্ট থাকার কারণে ফটো-সাবজেক্টের নির্ধারিত অংশে আরো যথাযথভাবে ফোকাস করা যায়। এছাড়া নিকনের D5600 মডেলটির ইমেজ সেন্সরের আকার ক্যানন 200D থেকে প্রায় এগারো শতাংশ বড়; যার দরুন কালার ডেপথ, ডাইনামিক রেঞ্জ, লো-লাইট সেন্সিটিভিটি ক্যাননের মডেলটির চাইতে বেশি; অর্থাৎ, ইমেজ কোয়ালিটির দিক দিয়ে নিকনের এই মডেলটি এগিয়ে। অপরদিকে ক্যানন 200D এর ডুয়াল পিক্সেল অটো-ফোকাস সিস্টেমের কারণে ভিডিওগ্রাফির জন্য বেশ ভালো।

উপরোক্ত মডেলগুলো ছাড়াও পর্যাপ্ত বাজেটের মধ্যে দুটি ব্র্যান্ডেরই আরো অনেকগুলো মডেল রয়েছে। তবে প্রথমাবস্থায় যেকোনো একটি দিয়ে শুরু করলেই হলো। পরবর্তীতে নিজের পছন্দ, ফটোগ্রাফির নির্দিষ্ট কোনো অংশে আগ্রহের উপর ভিত্তি করে উপযুক্ত ক্যামেরাটি বেছে নিতে পারবেন। 

ফিচার ছবি: ohyasmintravels.com

Related Articles