Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার কি আমাদের নিয়ন্ত্রণ করা উচিৎ?

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে চা চুমুক দিতে দিতে আমরা সাধারণত যে কাজটি করি তা হলো সোশ্যাল মিডিয়াতে চোখ বুলানো। হোক সেটা ফেসবুক, টুইটার কিংবা ইন্সটাগ্রাম। আগে যেখানে সকালে নিয়মিত খবরের কাগজ পড়া হতো, সেখানে এখন চোখ বুলানো হয় ফেসবুক কিংবা ইন্সটাগ্রাম টাইমলাইনে। শুধু সকালবেলাই যে সোশ্যাল মিডিয়াতে চোখ বুলানো হয় তা কিন্তু না। দুপুর, বিকাল, সন্ধ্যা, রাত- যখনই সময় হয় সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের একবার ঢুঁ মেরে আসতেই হবে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি কেন আমাদের এত আকর্ষণ তা কি কখনও ভেবে দেখেছেন? সোশ্যাল মিডিয়া কি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নাকি বিনোদনের উদ্দেশ্যে সময় কাটানোর জায়গা? আসুন আজ এই বিষয়েই কিছু তথ্য জানার চেষ্টা করি।

সোশ্যাল মিডিয়া আমরা কেন ব্যবহার করি? image source: Social Media Marketing Agency Greensboro

সোশ্যাল মিডিয়া আমরা ‘কেন’ ব্যবহার করি তা জানার চেয়ে যেটি জানা বেশি জরুরি তা হলো, সোশ্যাল মিডিয়া আমরা ‘কীভাবে’ ব্যবহার করি। আপনি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারেন নিজের ব্যবসার প্রসারে প্রচারণার জন্য অথবা কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য কিংবা বন্ধু-বান্ধবের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার জন্য। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে এগুলো সোশ্যাল মিডিয়ার ভালো দিকই বলা যায়। এর ঠিক বিপরীত হতে পারে যদি আপনি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন কেবল নিউজ ফিড দেখে সময় কাটানোর জন্য। এটা মোটেও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ভালো দিক বলা যায় না। সোশ্যাল মিডিয়া তৈরি করা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ আরও সুদৃঢ় করার জন্য। কিন্তু আপনি যদি ঘন্টার পর ঘন্টা কেবল একা একা বসেই সময় কাটিয়ে দেন, তাহলে সেটা আপনার জন্যই ক্ষতিকর।

সোশ্যাল মিডিয়া আমরা কীভাবে ব্যবহার করি? image source: Community Tool Box – The University of Kansas

এখন কথা বলা দরকার সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা প্রতিদিন কী ধরনের পোস্ট করি তা নিয়ে। ব্যক্তিগত পোস্টের কথা ধরলে আমরা কোথায় ঘুরতে যাচ্ছি, কোথায় খেতে যাচ্ছি, নতুন কোন পোশাক কিনছি, আমাদের সাথে প্রতিদিন মজার কী সব ঘটনা ঘটছে তার সবই সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। সেই সাথে আমাদের পছন্দের বিষয়গুলো, যেমন- কোনো গান, কবিতা, ছবি এগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়ে থাকি। কখনও কি ভেবে দেখেছি যে, এসব পোস্ট দেয়ার বিনিময়ে আমরা নিজেরা কী পাচ্ছি? বা এসব পোস্ট যারা দেখছে তাদের মনে আমাদের ব্যাপারে কী ধারণা তৈরি হচ্ছে? আমেরিকার উইসকন্সিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ক্যাটালিন এল. টোমা এবং কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জেফারি টি. কক এই বিষয়ে একটি গবেষণা করেন। গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে তারা বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা চাই নিজেদেরকে সবার সামনে ভালোভাবে উপস্থাপন করতে। নিজের জীবনের সুন্দর এবং মজার দিকগুলো সবার সামনে আমরা তুলে ধরি। কারণ নিজেকে ভালো একটি অবস্থানে দেখতে সবাই ভালোবাসে। এখানে বেশিরভাগ সময় আমরা আমাদের দুঃখ-কষ্টের গল্পগুলো লুকিয়ে রাখি। কারণ আমরা নিজেদের খারাপ সময়গুলো সবার সামনে তুলে ধরতে চাই না। তাই আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় যা যা পোস্ট করছেন তা দেখে আরেকজনের মনে এই ধারণা তৈরি করছে যে, আপনার জীবনমান তাদের থেকে ভালো। তাদের মতে, আমরা এসব পোস্ট দিয়ে অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আমরা অন্যদের দেখাতে চাই আমরা প্রতিদিন কী কী করি।

একসাথে খেতে বসে কাজে ব্যস্ত থাকা উচিৎ না; image source: The Indian Express

অনেক ক্ষেত্রে কেউ কেউ অস্বাভাবিক মাত্রায় সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে থাকেন। আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে সোশ্যাল মিডিয়াতে পড়ে থাকেন এবং তা একসময় নেশার পর্যায়ে চলে যায়, তাহলে আপনি স্বাভাবিকভাবে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন। কারো সাথে সামনা সামনি কথা বলা আর সারাক্ষণ মেসেজের মাধ্যমে কথা বলা কিন্তু এক না। অনেক সময় দেখা যায়, খেতে বসে সামনের জনের সাথে কথা না বলে আমরা মোবাইল ফোনে বুদ হয়ে আছি। আমাদের অভিভাবক সমাজে তাদের সন্তানদের নিয়ে যে মন্তব্যটি সবচেয়ে বেশি শোনা যায় তা মোবাইল ফোনে বেশি সময় কাটানো নিয়ে। টেলিভিশন, কম্পিউটার কিংবা মোবাইল ফোন– সবক্ষেত্রেই স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা নিয়ে আমাদের অভিভাবক সমাজ বরাবরই চিন্তিত। এর পেছনে অবশ্যই কারণ আছে। যেখানে আপনার প্রাত্যহিক জীবন এবং পরিবারের প্রতি সময় বেশি দেয়া দরকার, তা না করে আপনি সেই সময় ব্যয় করছেন স্ক্রিনের সামনে পড়ে থেকে। এটা আপনাকে পরিবার এবং সমাজ সবদিক থেকেই বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে। বড়দের অতিরিক্ত পরিমাণে স্মার্টফোন ব্যবহারের প্রভাব পড়ছে কিন্তু ছোটদের উপরও। যে বয়সে তাদের খেলতে মাঠে যাওয়ার কথা, সেই বয়সে তারা ঘরে বসে মোবাইল ফোন নিয়ে পড়ে থাকছে। মনোবিজ্ঞানী শেরি টারকেল এই বিষয়ে একটি কথা বলেছেন, “স্মার্টফোন আমাদের সবাইকে একসাথে আলাদা করে ফেলছে।”

অল্প বয়সী শিশুদের প্রযুক্তি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা উচিৎ; image source: beBee, The Collaborative Platform For Professionals

জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক কিন্তু এই সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে বেশ চিন্তিত। মার্ক জাকারবার্গ ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মূলত সবার সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য। কিন্তু বর্তমান সমাজে এর ঠিক বিপরীত প্রভাবটাই পড়ছে। মানুষজন একে অপর থেকে আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। ফেসবুকের গবেষণা পরিচালক ডেভিড গিনেসবার্গ এবং গবেষণা বিজ্ঞানী মোইরা বুর্কের তত্ত্বাবধায়নে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে একটি পরীক্ষা চালানো হয়। পরীক্ষাটি ছিলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের ব্যক্তি মানসিকতার উপর কীরকম প্রভাব ফেলে তা জানার জন্য।

পরীক্ষাটির জন্য শিক্ষার্থীদের তিন দিন তিনটি ভিন্ন ভিন্ন কাজ করতে দেয়া হয়। প্রথম দিন তাদের বলা হয় ফেসবুকে নিউজ ফিড কেবল স্ক্রল করে যেতে। সাধারণ লাইক, কমেন্ট এসব করে যেতে। এগুলো করতে হবে একটানা ১০ মিনিট। ১০ মিনিট পর দেখা যায়, কোনো কাজ করার জন্য তারা খুব একটা ভালো মানসিক অবস্থায় ছিলো না। অর্থাৎ তারা অন্য কাজ করার প্রতি কিছুটা অনীহা দেখাচ্ছিলো।

দ্বিতীয় দিনে তাদের বলা হয় কাছের কোনো বন্ধুর সাথে ১০ মিনিট ফেসবুকে চ্যাট করতে। ১০ মিনিট পরে তাদের মানসিকভাবে বেশ উৎফুল্ল দেখা যায়। তারা অন্য যেকোনো কাজ তখন বেশ আগ্রহের সাথে করতে পারছিলো। অর্থাৎ প্রথম দিনে তারা যেখানে একা একা সময় কাটিয়ে বিরক্ত ছিলো, সেখানে দ্বিতীয় দিনে এসে কারো সাথে যোগাযোগ করতে পেরে তারা বেশ ভালো মেজাজে ছিলো।

এবার আসি তৃতীয় দিনে। এ দিন তাদের বলা হলো, ফেসবুকে কোনো একটি পোস্ট দিতে। সেই পোস্টের মাধ্যমে তারা অন্যদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে লাগলো এবং সেই অনুযায়ী লাইক-কমেন্ট আসতে লাগলো। এতে তাদের মন দ্বিতীয় দিনের চেয়েও বেশি উৎফুল্ল হতে দেখা যায়। তারা অন্য কাজে আরও বেশি আগ্রহ প্রদর্শন করে। এর কারণ ছিলো, তৃতীয় দিনে তারা একাধিক মানুষের সাথে যোগাযোগ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলো, যেখানে দ্বিতীয় দিন তারা যোগাযোগ করেছিলো কেবল একজনের সাথে।

বাস্তবিক জীবনে আমাদের যোগাযোগ বৃদ্ধি করা জরুরি; image source: Guideposts

অর্থাৎ যত বেশি আমরা মানুষজনের সাথে কথা বলে সময় কাটাবো, ততোই আমাদের সময়টা ভালো কাটবে। সোশ্যাল মিডিয়ার আবির্ভাব হয়েছে মূলত এজন্যই। মানুষজনের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করার জন্য। কিন্তু তা না করে আমরা কেবল সময় কাটানোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় পড়ে থাকি। অর্থাৎ আমাদের বন্ধুরা এবং পরিবারের সাথে যে সময়টা কাটানো উচিৎ, তা আমরা করছি না। এজন্য সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারে আমাদের একটি লাগাম টানা দরকার।

সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জন্য একটি যোগাযোগ মাধ্যম তৈরি করে দিলেও, এর সঠিক ব্যবহার করা আমাদের দায়িত্ব; image source: Guideposts

অতিরিক্ত পর্যায়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আকৃষ্ট হয়ে থাকার ফলে আমরা বন্ধুশূন্যতায় ভুগতে পারি। অনলাইনে আমাদের হাজার বন্ধু থাকা সত্ত্বেও সামনা সামনি কথা বলার জন্য যদি কাওকে না পাওয়া যায়, তবে সেই বন্ধুত্বের কোনো মূল্য নেই। এর ফল হিসেবে হীনম্মন্যতায় ভোগা, একাকীত্বের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করার মতো ঘটনা ঘটা খুবই স্বাভাবিক। তাই আমাদের উচিৎ সোশ্যাল মিডিয়ার বাইরের যে জগতটি আছে, তার সাথে আরও বেশি যোগাযোগ সৃষ্টি করা।

This article is in Bangla language. It discusses about the impact of social media in our life. Necessary resources have been hyperlinked.

Feature image: MayeCreate Design

Related Articles