Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অনেক দম্পতির চেহারায় অস্বাভাবিক মিল থাকে কেন?

অনেক আমেরিকানের মধ্যেই ডিএনএ টেস্টের প্রতি এক দুর্নিবার আকর্ষণ রয়েছে। তাই প্রতি বছর ঘরে বসেই লক্ষ লক্ষ আমেরিকান তাদের নিজেদের ডিএনএ টেস্ট করে থাকে। অলিভিয়া ব্রানারও তেমনই একজন, যিনি ২০১৬ সালে ঘরে বসে ডিএনএ টেস্ট করেছিলেন।

তবে অলিভিয়ার এ কাজে আগ্রহী হওয়ার নেপথ্য কারণ নিছকই কৌতূহল ছিল না। তিনি কিছু একটা নিশ্চিত হতে চাইছিলেন। কী সেটি? তা হলো, তৎকালীন প্রেমিক গ্রেগের সাথে তার কোনো জন্মগত সম্পর্ক রয়েছে কি না। নইলে চুলের রঙ থেকে শুরু করে দেহের গড়ন, মৌখিক অভিব্যক্তি, সব কিছুতেই দুজনের এত মিল থাকবে কেন!

এখানে আরো একটি বিষয় জানিয়ে রাখা প্রয়োজন, অলিভিয়া তার বাবা-মায়ের দত্তক সন্তান ছিলেন। তাই তার মনের কোণে অন্য আরেকটি মেঘও উঁকি দিয়েছিল: এমন যদি হয় যে গ্রেগ আর তার প্রকৃত বাবা-মা অভিন্ন? বিষয়টি অলিভিয়ার মনে দিনের পর দিন কাঁটার মতো বিঁধে ছিল। আর যখন তখন খচখচ করত। তাই না পেরে একদিন তিনি ডিএনএ টেস্টটি করেই ফেলেন।

অনেক দম্পতির চেহারাতেই অদ্ভূত মিল থাকে; Image Source: Getty Images

তবে না, শেষ পর্যন্ত অলিভিয়ার আশঙ্কা সত্যি হয়নি, বরং একেবারেই অমূলক প্রমাণিত হয়েছিল। তার আর গ্রেগের মধ্যে কোনো জন্মগত সম্পর্কই ছিল না। আর তাই আজ তারা নিশ্চিন্ত মনে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে আবদ্ধ হতে পেরেছে। এখনও অবশ্য কাছের বন্ধুরা তাদেরকে “ভাই-বোন” বলে ডাকে। তবে সেটিকে তারা কৌতুক হিসেবেই নেয়।

দুজনকে একই রকম দেখায় এমন দম্পতি কিন্তু শুধু গ্রেগ ও অলিভিয়াই নয়। বিশ্বব্যাপী এমন অসংখ্য দম্পতি রয়েছে। এমনকি হয়তো আপনাদের আশেপাশে খুঁজলেও এমন এক-দুটি দম্পতি পাওয়া যাবে, যাদের দেখলেই সবাই মজা করে বলে ওঠে, “সত্যি করে বলো তো, তোমরা কি আসলেই স্বামী-স্ত্রী নাকি যমজ ভাই-বোন!”

এর কারণ কী? স্বামী-স্ত্রী কিংবা প্রেমিক-প্রেমিকা, তাদের মধ্যে এত সাদৃশ্য কেন থাকবে? বিষয়টি কি স্বাভাবিক?

অনেকেই এখন জেনে অবাক হবেন, বিষয়টি অদ্ভূত হলেও, অস্বাভাবিক একদমই নয়। বরং এর পেছনে বেশ কিছু যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে, যেগুলো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিতও বটে!

দীর্ঘদিন একসাথে থাকার সুবাদে স্বামী-স্ত্রীর চেহারায় নানা মিল তৈরি হয়; Image Source: Instagram

একই রকম দেখতে দম্পতিদের নিয়ে বিজ্ঞানীদের কৌতূহল নতুন কিছু নয়। এর সূচনা গত শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকেই। এবং ১৯৮৭ সালে ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ের উপর একটি গবেষণাও চালিয়েছিলেন। সে গবেষণার মাধ্যমে তারা যে ফল পেয়েছিলেন, তা হলো: বছরের পর বছর একসাথে থাকার সুবাদে একজন নারী ও একজন পুরুষ নিজেদের ভিতর বিভিন্ন ধরনের আবেগ ভাগাভাগি করে নেয়, যার ফলে তাদের মুখের দাগ থেকে শুরু করে অভিব্যক্তি, সব কিছুতেই পারস্পরিক সাদৃশ্য প্রতীয়মান হয়।

এ গবেষণায় আমেরিকান সামাজিক মনোবিদ রবার্ট জানজঙ্ক বিভিন্ন দম্পতির বিয়ের দিনের ছবি এবং ২৫ বছর একসাথে কাটানোর পরের ছবি তুলনা করে দেখান, বিয়ের দিন স্বামী ও স্ত্রীর মুখে যদি কোনো মিল না-ও থাকে, ২৫ বছর পর আশ্চর্যজনকভাবে তাদের মুখে বিভিন্ন মিল ধরা পড়ে। এ গবেষণার মাধ্যমে তিনি আরো চমকপ্রদ একটি তথ্য বের করেছিলেন: একটি দম্পতির মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক যত বেশি মধুর ও সুখের হয়, তাদের মধ্যকার সাদৃশ্যের সম্ভাবনাও তত বেশি বেড়ে যায়।

স্বামী ও স্ত্রীর দেখতে অনেকটাই একই রকম হয়ে যাওয়ার পেছনে আরেকটি কারণ হলো তাদের নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেয়া। একসাথে জীবন কাটাতে গিয়ে একটি দম্পতি একাধারে যেমন অজস্র সুখের মুহূর্তের সম্মুখীন হয়, তেমনই একসাথে তাদেরকে প্রচুর বেদনাবিভুর সময়েরও মোকাবেলা করতে হয়। এভাবে পারস্পরিক সান্নিধ্যে তারা যেসব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায়, তা তাদের শরীরী ভাষা ও মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে। ওই যে কথায় আছে না, মানুষের জীবন ইতিহাস লেখা থাকে তার মুখে। এজন্যই হয়তো একই রকম জীবন কাটানো দুজন মানুষের মুখে একই ধরনের ইতিহাস রচিত হয়, আর তাই তাদের মুখাবয়ব ক্রমশ অভিন্ন হয়ে ওঠে।

অভিন্ন জীবনাচরণ সাদৃশ্যপূর্ণ চেহারা সৃষ্টির কারণ; Image Source: Getty Images

আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো মানুষের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রার ধরন, যেমন- খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চা প্রভৃতির প্রতিফলন ঘটে। ২০১৬ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, সাধারণত কোনো বিবাহিত দম্পতির জীবনযাত্রা একই রকম হওয়ার ফলে, তাদের ইমিউন সিস্টেমও একই রকম হয়ে যায়, যা প্রভাব ফেলে তাদের সমগ্র শরীরে।

এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, শুরুতে একই রকম জীবনযাত্রার ফলে স্বামী-স্ত্রীর ইমিউন সিস্টেমও অভিন্ন হয়ে যায়, আর পরবর্তীতে অভিন্ন ইমিউন সিস্টেমের কারণেই তারা একই রকম জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখতে বাধ্য হয়।

সুখী দাম্পত্য জীবন স্বামী-স্ত্রীর চেহারায় ছাপ ফেলে; Image Source: Getty Images

২০১৫ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, একে অন্যকে অনুকরণের প্রচেষ্টা স্বামী-স্ত্রীর জীবনযাত্রা একই রকম হয়ে ওঠায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যেমন: কোনো দম্পতি হয়তো ইতিপূর্বে খুব একটা স্বাস্থ্য সচেতন ছিল না। কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো একজন যদি হঠাৎ করে সকালবেলা হাঁটার অভ্যাস করে, তাহলে তার দেখাদেখি তার সঙ্গীরও সকালবেলা হাঁটতে বেরোনোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। একইভাবে কোনো ধূমপায়ী দম্পতির মধ্যে একজন যদি ধূমপান ছেড়ে দেয়, তবে অন্যজনেরও ধূমপান ছাড়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়।

তো পাঠক, এখন তো জানলেন দুজন মানুষ একসাথে বহুদিন থাকার ফলে কীভাবে তাদের চেহারা সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। কিন্তু যেসব প্রেমিক-প্রেমিকার চেহারা শুরু থেকেই এক রকম, তাদের বিষয়টিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন? সেটি কি আদৌ ব্যাখ্যা করা সম্ভব? হ্যাঁ, সম্ভব।

এ বিষয়টিকে খুব সুন্দর করে ব্যাখ্যা করেছেন ইন্ডিয়ানাপোলিসের সামাজিক মনোবিদ জাস্টিন লেহমিলার। তিনি কিনসে ইনস্টিটিউটের একজন গবেষণা, এবং Tell Me What You Want নামক একটি বইয়ের রচয়িতা। তার মতে, মানুষ প্রাকৃতিকভাবেই সেই সব মানুষের প্রতি বেশি আকর্ষণ অনুভব করে, যাদের সাথে তাদের নিজেদের মিল রয়েছে। যদিও এ বিষয়টি ঘটে থাকে মানুষের অবচেতন মনেই।

লেহমিলার বলেন, “যে বিষয়গুলোর সাথে আমরা পরিচিত, সেগুলোর প্রতিই আমরা বেশি আগ্রহ অনুভব করি। চেহারার ক্ষেত্রে এ বিষয়টি আরো বেশি ঘটে। আপনি জানেন আপনি দেখতে কেমন। তাই অনেকটা একই রকম দেখতে আরেকজন ব্যক্তিকে যখন আপনি দেখতে পাবেন, স্বাভাবিকভাবেই আপনার তাকে পছন্দ হবে।”

মানুষ তার জীবনসঙ্গী হিসেবে নিজের মুখের আদলের কাউকে চায়; Image Source: Shutterstock

২০১৩ সালের একটি গবেষণা লেহমিলারের এ দাবির স্বপক্ষেই কথা বলছে। সেখানে একটি বিশেষ পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদেরকে তাদের প্রেমিক বা প্রেমিকার ছবি দেখানো হয়েছিল, তবে ডিজিটালি সেসব ছবিতে অন্য কোনো ব্যক্তির বিভিন্ন মৌখিক বৈশিষ্ট্য সংযোজন করে। এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রায় সকল অংশগ্রহণকারীই সেসব ছবি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেছিল, যেগুলোতে তাদের ভালোবাসার মানুষটির মুখের আদল তাদের নিজেদের মতো করে তোলা হয়েছিল। নিজের মুখের সাথে মিল থাকা ব্যক্তিকে পছন্দ করা ও তার সাথে সম্পর্কে জড়ানোর এ বিষয়টিকে বলা হয়ে থাকে অ্যাসর্টেটিভ মেটিং

এরও আগে আরেকটি গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করা হয়েছিল যে, অংশগ্রহণকারীরা সেসব ছবির সংমিশ্রণকে বেশি পছন্দ করে, যেগুলোতে তারা তাদের বিপরীত লিঙ্গের বাবা বা মায়ের চেহারার ছাপ খুঁজে পায়। অর্থাৎ কোনো পুরুষ অংশগ্রহণকারী এমন কোনো নারীকে বেশি পছন্দ করে, যার মাঝে সে তার মায়ের ছাপ খুঁজে পায়। এবং কোনো নারী অংশগ্রহণকারীর ক্ষেত্রেও বিষয়টি সেরকমই।

এর কারণও কিন্তু খুব সহজেই ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। ছোটবেলা থেকে একটি শিশুর কাছে নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয় তার বাবা-মা। তাই যখন সে তার প্রেমিক-প্রেমিকা বা জীবনসঙ্গী খুঁজে নিতে চায়, তখন সে এমন কাউকেই বেশি প্রাধান্য দেয়, যার সাথে তার বাবা বা মায়ের চেহারার মিল রয়েছে। এবং বাবা-মায়ের চেহারার সাথে যেহেতু সন্তানেরও চেহারার কিছু মিল থাকে, তাই সেরকম সঙ্গী পছন্দ করতে গিয়ে প্রেমিক-প্রেমিকার চেহারায়ও মিল বেরিয়ে আসে।

চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কেঃ roar.media/contribute/

This article is in Bengali language. It explains why many couples look alike. Necessary references have been hyperlinked inside.

Featured Image © Cosmopolitan

Related Articles