Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সমালোচনা: ভালো না খারাপ ?

অন্যের সমালোচনা করেন না, এমন মানু্ষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু নিজের সমালোচনা? করেছেন কখনো? অন্যের কাছে শুনেছেন নিশ্চয়ই। আপনি যতই ভালো হোন, যতই ক্ষমতাবান হোন- কেউ না কেউ আপনার কাজের সমালোচনা করবেই। হয়তো এই মুহূর্তেই শহরের অন্য প্রান্তে আপনার সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে কোনো চায়ের আসর। কে জানে!

আমরা অনেকেই নিজের সমালোচনা সহজভাবে নিতে পারি না। কেউ সমালোচনা করলে এক পলকে প্রিয় বন্ধুর তালিকা থেকে নাম কেটে তাকে শত্রুর খাতায় ফেলে দিই। অথচ ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারলে এই সমালোচনাই আমাদের এগিয়ে দিতে পারে বহুদূর।

ভালো-মন্দ দুটোই শুনুন; Image Source: gstatic.com

সমালোচনার উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবুন

সমালোচনা শুনে আগেই মন খারাপ করে ঝগড়াঝাঁটি, মান-অভিমানের পালায় লেগে পড়বেন না যেন! প্রথম কাজ হলো, সমালোচনা কেন হচ্ছে, সেটা নিয়ে ভাবুন। যে ব্যক্তি সমালোচনা করছেন, তার উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবুন। এটা কি কোনো ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে করা হচ্ছে, নাকি সত্যিই আপনার কাজে কোনো ত্রুটি আছে, তা বুঝে নিন। অনেকসময়ই আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী কোনো বন্ধু আমাদের ভালোর জন্যই ভুলগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চায়। যদি কেউ আপনার ভুল ধরিয়ে দিতে চায়, তাহলে বুঝতে হবে, সে আপনার ভালো চায় বলেই এটা করছে। জীবনে বহুবার আমরা প্রশংসা করতে হয় বলে প্রশংসা করি, কিন্তু খুব কম মানুষের কাজ আমরা মন দিয়ে দেখি, কাজটা ভালো হলো, নাকি খারাপ- এসব নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করি। এক্ষেত্রে ভুল বোঝাবুঝির মতো পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, সেদিকেও লক্ষ রাখুন।

সমালোচনা আর সমালোচনাকারী – দুটো দুই ব্যাপার 

নিজের সমালোচনা শুনে সমালোচনাকারীকে শত্রুর তালিকায় ঢুকিয়ে দেওয়াটা কোনো কাজের কথা নয়। কেউ আপনার সমালোচনা করছে, এর অর্থ সবসময় নেতিবাচক না-ও হতে পারে। চারপাশে শুধুই মিষ্টি মিষ্টি কথা বলা বন্ধুর চেয়ে দুয়েকজন সমালোচনা করার মতো বন্ধু থাকা ভালো। এমনকি সে যদি আপনার বন্ধু না-ও হয়, তবুও সে কিন্তু আপনার উপকারই করছে। সমালোচক ব্যক্তির ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে এইটুকু মনে রাখুন, আপনার সমালোচনা করার জন্য তাকে আপনার কাজটাকে ভালোমতো বুঝতে হয়েছে।

এই লেখাটির কথাই ধরুন। লেখাটি আপনার ভালো লাগতে পারে, আবার না-ও লাগতে পারে। কিন্তু সেটা বোঝার জন্য আপনাকে পুরোটা পড়তে হবে। “খুব ভালো লেখা”– এটা আপনি না পড়েও বলতে পারবেন। কিন্তু “অমুক জায়গাটা ভালো লাগেনি”, “আপনার অমুক কথাটার সাথে আমি একমত না”– এটুকু বলার জন্য আপনাকে পুরো লেখাটা পড়তে হবে, বুঝতে হবে। অন্তত বোঝার চেষ্টা করতে হবে। লেখক হিসেবে কিন্তু নেতিবাচক ফিডব্যাকগুলোকে মাথায় রেখেই আমাকে পরের ব্লগটা হাতে নিতে হবে। আপনিও চেষ্টা করুন সমালোচনা মাথায় রেখে নিজের কাজে উন্নতি করতে।

গঠনমূলক সমালোচনা মন দিয়ে শুনুন

সমালোচনা গঠনমূলক হলে তা মন দিয়ে শোনা উচিত। আপনার কাজের খুঁটিনাটি ভালো-মন্দ আপনি এর মধ্য দিয়েই জানতে পারবেন। সমালোচনা হবার অর্থ হলো, আপনার কাজ রোজ নতুন নতুন মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। প্রত্যেক মানুষের আলাদা মন্তব্য, আলাদা মতামত থাকবে। আর সবারই অধিকার আছে নিজের মতামত প্রকাশ করার। এরই অংশ হিসেবে সমালোচনা কুড়ানোও একটা বড় ব্যাপার।

গঠনমূলক সমালোচনা অনেক নতুন কাজে উৎসাহ দেয়; Image Source: Frank Sonneberg Online

যদি আপনি প্রতিনিয়ত শুধু প্রশংসাই পেতে থাকেন, এর অর্থ হলো রোজ একই মানুষ অথবা একই বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ আপনার কাজ নিয়ে আলোচনা করছে। আপনার পরিচিত বৃত্তের বাইরেও একটা বৃত্ত আছে, চেনা পৃথিবীর বাইরেও একটা জগত আছে। সেই আলাদা মানুষগুলো কী ভাবছে, আপনার প্রতি কিংবা আপনার কাজের প্রতি তাদের কী মতামত, সেটা জানার জন্য আপনাকে সমালোচনার মুখোমুখি হতেই হবে।

আপনার কাজের কোন কোন পয়েন্ট নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, নোট করুন। দরকার পড়লে পাল্টা প্রশ্ন করে জেনে নিন

আগেই বলেছি, সমালোচনা শুনে রেগে যাবেন না কিংবা মন খারাপ করবেন না। সমালোচনাকারীর সাথে সময় করে বসুন, ঠিক কী ব্যাপারে তার আপত্তি, আপনার কিংবা আপনার কাজের ঠিক কোন জায়গা নিয়ে তার অভিযোগ, তা ভালোভাবে জেনে নিন। কারণ নিজের কাজকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য আপনাকে ঠিক সেই জায়গাগুলো ধরেই কাজ করতে হবে। নিজেকে একবার সেই সমালোচকের জায়গায় বসিয়ে দেখুন। বোঝার চেষ্টা করুন, সমস্যাটা ঠিক কোথায়। আমাদের জীবনের বেশিরভাগ সমস্যার সমাধান খুব সহজ। কিন্তু সমস্যাটা খুঁজে বের করতেই বাঁধে বিপত্তি।

সমালোচনার আছে বেশকিছু ইতিবাচক দিক

সমালোচনা আপনার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিতে পারে। কোনো বিষয়কে আপনি যেভাবে দেখেন, অন্য কেউ সেভাবে নাই দেখতে পারে। সমালোচনার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন, সেই একই বিষয় নিয়ে অন্যরা কী ভাবছে। যেমন, আজকাল বিভিন্ন জনপ্রিয় পুরনো গান নিজের মতো করে গাওয়াটা একটা ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউটিউবে সার্চ করলে অসংখ্য এমন ‘কভারকৃত’ গান পাওয়া যাবে। এ প্রজন্মের অনেকেরই আসল গানের চেয়ে ‘কভারকৃত’ গানগুলোই বেশি পছন্দ।

তবে, রক্ষণশীল কারো কারো জন্য আবার এটা একধরনের বিকৃতি। আপনাকে যদি গাইতে হয়, তবে এই দু’পক্ষের পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপার মাথায় রেখেই গাইতে হবে। অঙ্কের মতো দুয়ে দুয়ে চার মেলাবার কাজটা এখানে হবে না। কারো ভালো লাগবে, কারো লাগবে না। যাদের ভালো লাগবে না, তারাও কিন্তু আপনার শ্রোতা- এ ব্যাপারটা এক্ষেত্রে মাথায় রাখা ভালো।

উইনস্টন চার্চিলের ভাষ্য অনুযায়ী, “আপনার শত্রু আছে? ভালো। এর মানে আপনি জীবনের কোনো একটা সময় কিছু একটার জন্য দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন।”

সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবে নিতে শিখুন; Image Source: Breakthrough Corporate Training

সমালোচনা শুনলেই নাকমুখ কুঁচকে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা বন্ধ করুন। দুয়েকটা বিষয় বাদ দিলে বেশিরভাগ সময়ই সমালোচনা আপনার ভালোর জন্য করা হয়। তাই সমালোচনা ভালোর জন্য করা হোক, কিংবা শুধুমাত্র আপনাকে ছোট করার জন্যই করা হোক সমালোচনাকে ঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে সবাইকে দেখিয়ে দেবার কাজটা নির্ভর করে আপনার উপর। দেরি না করে আজই টুকে নিতে শুরু করুন, কে কবে কখন কোথায় কী কী সমালোচনা করেছিল। আর বাকি রইল নিজেকে সেভাবে শুধরে নেওয়াটা? তা তো শুধু একটু সময়, আরেকটু ধৈর্য আর চিমটিখানেক সহনশীলতার ব্যাপার।

This is a Benglai article. This is about the benefits of being criticised and not taking this negatively. This tells us how we can channel all the criticism for our own development.

Featured Image: Compliance Kristy

Related Articles