Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সুস্থ মন, সুন্দর জীবন

কয়েকদিন যাবত জ্বর-সর্দি বা পেটে ব্যথায় ভুগলে আমরা একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হই, কিন্তু খুব বিষণ্ণ বা দুশ্চিন্তায় কাটানো দিনগুলোতে কখনো কি কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছিলেন? উত্তরটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আসবে, “না”।

মানসিক অসুস্থতায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিন; Image Source: maxpixel.net 

আমরা শারীরিক সুস্থতা নিয়ে যতটা সচেতন, মানসিক সুস্থতা নিয়ে ঠিক ততটাই অসচেতন। স্থূলভাবে এর দুটো কারণ হতে পারে। মানসিক অসুস্থতার ক্ষেত্রেও যে চিকিৎসা আবশ্যক- সেই বিষয়ে অজ্ঞতা এবং সামাজিক প্রতিবন্ধকতা।

আজকের এই লেখাটি সাজানো হয়েছে মানসিক সুস্বাস্থ্য বিষয়ক আলোচনা নিয়ে।   

মানসিক স্বাস্থ্য

শারীরিক স্বাস্থ্যের মতো মানসিক স্বাস্থ্যও স্বাস্থ্যের একটি অংশ এবং অবিচ্ছেদ্যও বটে। শারীরিক স্বাস্থ্য বলতে যেমন আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুস্থতাকে বোঝায়, ঠিক তেমনি আমাদের আবেগ-অনুভূতির সঠিক বহিঃপ্রকাশ এবং আচরণের স্বাভাবিকতাকে মানসিক স্বাস্থ্য বলে। মানসিক স্বাস্থ্য বজায় থাকলে আমরা সঠিকভাবে চিন্তা করতে এবং ইতিবাচকভাবে যেকোনো কাজ সম্পন্ন করতে ও সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানাতে পারি। মানসিক স্বাস্থ্য স্বাভাবিক থাকলে পারিপার্শ্বিক বিষয় যেমন ভয়, দুশ্চিন্তা, রাগ, উদ্বেগ আমাদের চিন্তা-চেতনা বা সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না।

মানসিক সুস্থতা

ব্যক্তির চিন্তা ও অনুভূতির সামঞ্জস্যকে মানসিক সুস্থতা বলে। আপনি কতটা স্বাভাবিক ও সাবলীলভাবে জীবনের চড়াই-উৎরাইয়ের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন, তা নির্ভর করে আপনার মানসিক সুস্বাস্থ্যের উপর।

মানসিক অসুস্থতা

মানসিক অসুস্থতা আপনাকে নিঃসঙ্গ করে তুলবে ; Image Source: pxhere.com

যখন আমাদের স্বাভাবিক আচার-আচরণ, চিন্তা-ভাবনা, অনুভূতি, কাজ করার মানসিক শক্তিতে বিঘ্ন ঘটে, সেই অবস্থাকে বলা হয় মানসিক অসুস্থতা। মানসিক অসুস্থতার ফলে বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগ থেকে শুরু করে আত্মঘাতী হয়ে ওঠার মতো বিপজ্জনক পরিস্থিতিও অনেক সময় তৈরি হয়।

মানসিক সুস্থতার লক্ষণ

মানসিক সুস্থতার লক্ষণগুলো সম্পর্কে প্রয়োজন সচেতনতা; Image Source: maxpixel.net

মানসিক সুস্থতা মানে এই নয় যে, একজন ব্যক্তির মাঝে নেতিবাচকতা থাকবে না। তবে মানসিকভাবে সুস্থ থাকলে আপনি খুব সহজেই আপনার মনের নেতিবাচকতা, রাগ, ক্ষোভকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। জীবনের পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে পারবেন। মানসিক সুস্থতার লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আত্মবিশ্বাস, বেঁচে থাকা ও কাজের মধ্যে একটা তাৎপর্য খুঁজে পাওয়া, সুন্দর ও স্বাভাবিক সম্পর্ক, প্রাত্যহিক জীবনের নানা প্রতিকূলতার সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া, পরিবর্তনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া ইত্যাদি।

আমাদের করণীয়

মানসিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য আমরা কিছু কিছু কাজ খুব সহজেই করতে পারি। যেমন-

শারীরিক কসরত

Image Source: maxpixel.net

শারীরিক কসরত কেবল শারীরিক স্বাস্থ্য নয়, বরং মানসিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যখন আপনার শরীর ঝরঝরে থাকবে, তখন মস্তিষ্কে কিছু রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটবে, যার ফলে মনে একধরনের প্রশান্তি বিরাজ করবে এবং মন উৎফুল্ল থাকবে। এর মাধ্যমে ব্যক্তির দৃঢ় সংকল্পতা বৃদ্ধি পাবে এবং লক্ষ্য অর্জনে মন বদ্ধপরিকর হয়ে উঠবে। সর্বোপরি আত্মবিশ্বাসের ভিত মজবুত হয়ে উঠবে।

শারীরিক কসরতের মানে এই নয় যে দিনের অনেকটা সময় আপনাকে শারীরিক ব্যায়াম করতে হবে বা জিমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করে শরীরের ঘাম ঝরাতে হবে।

আপনি যে কাজ বা ব্যায়ামগুলো করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে থাকেন, সেগুলোই করুন। রোজ নির্দিষ্ট সময়ে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন; সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো বা নৃত্য পরিবেশনায় পারদর্শী হয়ে থাকলে প্রত্যহ তা অনুশীলন করতে পারেন। আপনি চাইলে কানে হেডফোন গুঁজে পছন্দের কোনো গান শুনতে শুনতে কয়েক রাউন্ড দৌড় দিতে পারেন।

মানুষের সাথে মিশতে শিখুন

কথায় আছে ‘নানা মুনির নানা মত’। প্রত্যেকটি মানুষের চিন্তা-ধারা, আচরণ, প্রতিক্রিয়া, কার্য সম্পাদনের পরিকল্পনা ও কৌশল সর্বোপরি জীবন-ধারণের ধারা আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। মানুষের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করুন।

পরিবারের সবাই একসাথে খেতে পারেন; Image Source: maxpixel.net

সেটা কিন্তু পরিবার থেকেই শুরু হতে পারে। যেমন পরিবারের অনেককেই প্রয়োজনে দিনের বেলা বাইরে থাকতে হয়, তাই রাতে একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে সকলে মিলে রাতের খাবার একসাথে খেলেন এবং সবার সাথে সবার কথাও হলো। অবসরে বাচ্চাদের বা পরিবারের অন্য সদস্যদের সময় দিন।

বন্ধুদের সাথে দেখা করুন; Image Source: maxpixel.net

অনেকদিন বন্ধুর সাথে দেখা হয় না। কোনো এক ছুটির দিনে খানিকটা সময় বের করে বন্ধুর সাথে না হয় একদিন দেখা করতে গেলেন। পুরনো সুন্দর স্মৃতিগুলো আপনার মনকে সুন্দর অনুভূতির অনুরণনে সতেজ করে তুলবে।

কর্মব্যস্ততায় প্রতিটি দিনের সিংহভাগ সময় যাদের সাথে বা পাশে বসে কাজ করতে হয়, একদিন কাজের ফাঁকে বা ছুটির দিনে সবাই মিলে দুপুরের খাবার খেতে খেতে না হয় কাজের বাইরের দুনিয়াটা নিয়েও একটু কথা বললেন। এই ছোট ছোট পদক্ষেপগুলো আপনার অস্তিত্ব ও একজন মানুষ হিসেবে ভালোভাবে বেঁচে থাকার ইতিবাচক অনুভূতিকে জাগ্রত করবে।  

সাক্ষাতের মাধ্যমে সম্পর্কগুলোকে সতেজ করে তুলুন; Image Source: maxpixel.net

আধুনিকতার যুগে মুঠোফোনের বার্তালাপে বা সামাজিক মাধ্যমে বার্তা আদান-প্রদানের মাধ্যমেই শুধু আমাদের সম্পর্কগুলোকে জিইয়ে না রেখে বরং সামনাসামনি সাক্ষাতের মাধ্যমে সম্পর্কগুলোকে সতেজ করে তুলি। এতে সম্পর্ক ও মানসিক সুস্বাস্থ্য উভয়ই বজায় থাকবে।

উদার হতে শিখি

মাসের বেতন পেয়ে যখন কেনাকাটা করতে যাবেন, হয়তো খেয়াল করবেন, নিজের জন্য না কিনে বরং পরিবারের সদস্যদের জন্য তাদের পছন্দের জিনিসগুলো কিনতেই আপনি বেশি আনন্দবোধ করছেন। উদারতা এবং অন্যের জন্য কিছু করতে পারার মধ্যে আপনি যে আনন্দ পাবেন, আপনার মনে যে পবিত্র অনুভূতি জাগ্রত হবে তা এককথায় ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। শরীরের জন্য যেমন ভিটামিন প্রয়োজন, এই সুন্দর অনুভূতিগুলোও আপনার মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য ভিটামিন। অন্যকে সাহায্য বা পাশে দাঁড়ানোর জন্য আপনার খুব ছোট একটি কাজ বা ক্ষেত্রবিশেষে বড় কোনো পদক্ষেপই যথেষ্ট।

কেউ আপনার একটা উপকার করলে তাকে হাসিমুখে একবার ধন্যবাদ বলুন। এতে তার যেমন ভালো লাগবে, দেখবেন আপনারও ভালো লাগছে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশেও ইতিবাচকতা রয়েছে।

মানসিকভাবেও আমরা সমর্থন যোগাতে পারি; Image Source: maxpixel.net

আমাদের মাঝে এমন অনেক আপনজন বা বন্ধু-বান্ধব রয়েছে যাদের মানসিক বা আর্থিক সাহায্যের খুব প্রয়োজন। আপনার দেওয়া একটু সমর্থন তাদের মুখে যে হাসি ফোটাবে, তা নিঃসন্দেহে আপনার মনকে শান্ত করবে। দিতে পারার আনন্দ সীমাহীন।

হতে পারে, আপনার পরিচিত কেউ সদ্য পড়াশোনার পাট চুকিয়ে হন্যে হয়ে চাকরি খুঁজে বেড়াচ্ছে। আপনার পক্ষে যদি সম্ভবপর হয়, তাহলে তাকে সাহায্য করলে আপনার নিজের প্রতিই সম্মানবোধ বেড়ে যাবে। এতে করে আপনার মন ভালো হয়ে যাবে, আর মন ভালো থাকলে মনের স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবনার কী আছে!

নিজের সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা

নিজেকে জানতে হবে; Image Source: maxpixel.net

আমাদের প্রত্যাশা এবং প্রচেষ্টার মধ্যে যখন বিস্তর ফারাক হয়ে যায়, তখন না পাওয়ার অনুভূতিতে মনে কষ্ট তৈরি হয়। এর থেকে পরিত্রাণের সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে, নিজেকে নিজে জানা। আপনি যদি আপনার সক্ষমতা, অনুভূতি, চিন্তা-চেতনা সর্বোপরি শারীরিক শক্তিমত্তা সম্পর্কে অবগত থাকেন, তাহলে আপনি সেই অনুযায়ীই প্রত্যাশা করবেন।

আপনি কেবল সেটুকুই প্রত্যাশা করবেন, যা আপনি অর্জন করতে পারবেন। এতে আপনার মধ্যে ইতিবাচক চিন্তা এবং আত্মবিশ্বাস বহুগুণে বেড়ে যাবে। আকাশ-কুসুম প্রত্যাশার অপূর্ণতা আপনার মনকে কখনোই উদ্বিগ্নতা বা বিষণ্ণতার দিকে ঠেলে দেবে না।

নতুন কিছু শেখার প্রয়াস

নতুন কিছু শেখার মধ্যে আনন্দ রয়েছে; Image Source: maxpixel.net

‘নতুন’ শব্দটির সাথেই যেন একধরনের আনন্দ জড়িয়ে থাকে। আপনার যে বিষয়ে ভালো লাগে বা যা কিছু শিখতে চান, শত ব্যস্ততার মাঝেও খানিকটা সময় বের করে যদি তা শেখার ব্যাপারে নিয়মিত অনুশীলন করতে থাকেন, তবে তাতে আনন্দ পাবেন। আর আনন্দ মানেই মন ভালো থাকা, মনের স্বাস্থ্য অটুট থাকা তথা মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকা।

This article is in Bangla. It is about the importance of a healthy mind for a healthy lifestyle.

References have been hyperlinked inside the article.

Featured Image: Thrive Global

Related Articles