সাফল্যের যাত্রায় লক্ষ্য রাখুন অটুট

সংবাদপত্রে, ম্যাগাজিনে কিংবা অনলাইন মিডিয়ায় রোজ কত প্রতিবেদন চোখে পড়ে, ভাবুন তো? সংখ্যাটা মোটেও কম কিছু নয় তাই না? এসব প্রতিবেদনের মাঝে আবার আলাদা আলাদা কত ভাগ! বিনোদন থেকে নিয়ে রান্নাঘরের কাজ, শিক্ষা কিংবা ইতিহাসের কোনো অচিন কল্পপুরির সন্ধান। জীবনযাত্রার অনেক বিষয়ে আলোচনা করা তেমনই একটি ভাগ হচ্ছে ‘লাইফস্টাইল’।

আপনার জীবন যাপনের ধরন নিয়ে এই ভাগে আলোচনা চলে খুব। থাকে বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধানের আলাপও। বাইরের দেশে কিন্তু মানুষের লাইফস্টাইলের যেকোনো অংশ নিয়েই গবেষণা হয়ে থাকে অহরহ। সেসব বিষয়ে প্রতিবেদনেরও কমতি নেই।

জীবনযাত্রার যেকোনো বিষয় গুরুত্ব রাখে বটে; Source: happy LifeStyle inc

বঙ্গদেশে এসব চর্চার তেমন বালাই নেই, একথা ঠিক। এসব প্রতিবেদন কেবল পড়ার জন্যই, কিংবা চোখে পড়লেও এড়িয়ে যাওয়ার জন্য। কখনো ভেবেছেন, যদি একই ধরনের সমস্যায় আপনি পড়ে থাকেন এবং এমন কোনো প্রতিবেদনে উল্লেখ করা যেকোনো কৌশল আপনার সমস্যা সমাধানে কাজে লেগে যায়, তবে?

জীবনযাত্রায় বহুমুখী ঝুটঝামেলা লেগেই তো থাকে, তা কাজের ক্ষেত্রেই হোক কিংবা একান্তই ব্যক্তি জীবনে হোক। আর সবসময়ই সেগুলোকে ‘জীবনেরই অংশ’ হিসেবে হালকা করে দেখাটা মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু এমনটা করতে গিয়ে আপনার জীবনে সন্তোষ কম আর হতাশার ভাগ বেড়ে যাচ্ছে কিনা, সে খেয়াল অন্তত রাখুন। যদি ঠিকঠাক মেপে বুঝতে পারেন, হতাশা জমা হয়েছে ঢের, তবে বরং কিছু ক্ষেত্রে জীবনধারা পাল্টান। যে বিষয়ক অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন অনবরত, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু কৌশল পালন করুন। লাইফস্টাইল সংক্রান্ত অনেক প্রতিবেদন আপনাদের কাছে তেমন সব বার্তা নিয়েই আসে। আর জীবনের খুঁটিনাটি বিষয়ে বাতলানো সেসব কৌশল মোটেও হেলাফেলা করার নয়।

এই প্রতিবেদনে এমন কিছু পন্থা নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে যা একজন ব্যক্তির লক্ষ্যভেদের যাত্রায় কার্যকর প্রভাব রাখতে পারে। কোনো কাজে যখন সাফল্য অধরা থাকছে কিংবা খুব কম মাত্রায়ই সাফল্য আসছে, তখন ধরে নেওয়া যেতে পারে যে কার্য সম্পাদনে কোনো না কোনো ত্রুটি থেকে যাচ্ছে। সেই ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করা গেলে তো বেশ ভালো, কিন্তু যদি তা করা সম্ভব নাও হয় কাজ করার ধাঁচ খানিক পাল্টে নিলে তো ক্ষতি নেই। 

আপনার কাজে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে কি? Source: Rojak Daily

আপনার লক্ষ্য যা, সেটাকে নিজের ইচ্ছা পূরণের বিষয় হিসেবে মনে গেঁথে নিন। বিষয়টা যাতে ‘হওয়া উচিত’ পর্যায়ে না থাকে, এটা আপনি অবশ্যই ‘করতে চান’ বলে ভাবুন। লক্ষ্যটা পূরণ হলে আপনার কী কী লাভ হচ্ছে, অর্থাৎ দৃশ্যমান সকল লাভের হিসাব মাথায় কষে নিন। লক্ষ্যভেদ হওয়াটা ঠিক কতখানি জরুরী সেটা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করুন। কাজকে স্রেফ দায়িত্ব মনে করছেন, তাও কিনা পীড়াদায়ক, এমনটা হলে কাজ সম্পন্ন করার তাড়া আপনি কম অনুভব করবেন। সেটাই স্বাভাবিক। কেননা মানুষ স্বভাবতই নিরানন্দ যেকোনো ব্যাপার এড়িয়ে চলতে চায়।

আপনার লক্ষ্যের প্রতি নিজেকে নিয়মিত অনুপ্রাণিত করার কাজটাও আপনারই বেশি। লক্ষ্য বিষয়ক যাবতীয় ইতিবাচক ব্যাপার খুঁজে বের করুন আর সেগুলো নিয়ে বেশি করে ভাবুন। ব্যর্থতার ভাবনা আপনার জন্য নয়। এটুকো বিশ্বাস করতে অসুবিধা কোথায়?

এ যুগে মানুষ যেকোনো কিছুই লিখে রাখার অভ্যাস থেকে অনেকটাই দূরত্বে বাস করে। চারদিকে দেখুন, ডায়রি লেখার অভ্যাস কমে এসেছে মানুষের, বাজারের ফর্দটাও মেসেজেই চালাচালি হয়ে যায়। তা-ই সই, কিন্তু লেখা অন্তত হোক! আপনার যেকোনো কাজেও এই লিখে রাখার অভ্যাস দারুণ উপকারি হতে পারে। কাজটা কী? কেন করতে চলেছেন, কীভাবে করবেন, ফলাফল কী হতে পারে ইত্যাদি খুঁটিনাটি সকল তথ্য লিপিবদ্ধ করুন একটা জায়গায়। রচনা লিখতে যাবেন না অবশ্যই। নির্দিষ্ট বিষয়গুলোতে জোর দিন, লক্ষ্যকে সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করুন, মনে রাখার মতো শব্দের ব্যবহার করুন।

কাজটা সম্পন্ন করতে পারার সম্ভাবনা কিংবা নিশ্চয়তা কতখানি, তা লিখুন। এমনটাও হতে পারে এই প্রকল্প নিয়ে কাজে নামার জন্য আপনার নিজের দক্ষতা বাড়ানোর প্রয়োজন আছে। হয়তো আপনার নতুন কিছু কৌশল বিশদে শিখতে হবে, আবার হতে পারে আপনার কাজের পরিবেশ অর্থাৎ ওয়ার্কস্টেশন নতুনভাবে সাজাতে হবে। প্রতিটা বিষয় লিখে রাখুন কাজে নামার আগেই। কাজটা শেষ করার কোনো নির্ধারিত সময়সীমা থাকলে সেটাও লিখুন আবশ্যিকভাবে। আর সেটা না থাকলেও আপনি নিজের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করতে পারেন, তাতে কাজের গতি বজায় থাকবে। 

লিখে রাখুন কাজের খুঁটিনাটি; Source: positivepsychologyprogram.com

এটা খুবই কার্যকরী উপায় যেকোনো কাজ সম্পন্ন করার জন্য। বড় কাজকে ভেঙ্গে ছোট ছোট ভাগে সাজিয়ে নিন। বিভাজন হবে আপনার সুবিধা অনুযায়ী, এবং কাজের ধারার চাহিদা অনুযায়ী। যেমন, আপনি হয়তো কোনো পণ্য বানাচ্ছেন, তো অবশ্যই আগে সেটার কাঁচামাল কিনতে হবে। তারও আগে প্রয়োজন কাঁচামালের জন্য তালিকা করা, বাজেট নির্দিষ্ট করা। একেকটা কাজ একেকদিনের জন্য নির্ধারিত করুন, আর চেষ্টা করুন দিনের সেই নির্দিষ্ট কাজটা করে ফেলতে। তাতে গোটা কাজটা শেষ করা অনেক সহজ হয়ে আসবে। তাতে গোটা কাজটা শেষ করা অনেকটাই সহজ হয়ে আসবে।

ছোট ছোট ভাগে সাজিয়ে নিন পুরোটা কাজ; Source: Entrepreneur

দায় নিন নিজের করণীয় কাজের। দায়সারা ভাব পরিহার করাটাই মুখ্য ব্যাপার। আপনি কাজ করে যাচ্ছেন, হলে ভালো কিন্তু না হলেও ক্ষতি নেই, এই চিন্তা রাখা যাবে না। আপনাকে ঠিকঠাক পরামর্শ দিতে পারে, বোঝাতে পারে তেমন কোনো আস্থাবান মানুষ থেকে থাকলে তার সাথে আলাপ করতে পারেন আপনার লক্ষ্য নিয়ে। অন্য কেউ যেন আপনার লক্ষ্যভেদের খবরাখবর রাখতে পারে আপনার কাছ থেকেই, সেটুকু নিশ্চিত করতে পারেন। সেই ব্যক্তি কাজ নিয়ে প্রশ্ন করলে আপনি কাজের সার্বিক অবস্থা ঠিকঠাক ব্যাখ্যা করতে পারবেন, অগ্রগতি কিংবা আপনার দিক থেকে হওয়া ত্রুটিগুলো জানাতে পারবেন, সেই অবস্থা তৈরি করতে হবে। এমনটা করার ফলে আপনার দায়িত্ববোধ আরো প্রবল হতে পারে। যখন কেবলই নিজের কাছে জবাবদিহিতা করছেন, হতেই পারে তাতে ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছেন খানিকটা।

ছোট কোনো ব্যর্থতা পুরো কাজটাকে যেন বিগড়ে না দেয়; Source: Partners in Leadership

প্রতিদিনের কাজটুকু তো অবশ্যই পূর্ণ করার চেষ্টা করছেন, কিন্তু তা হচ্ছে কি? হতেও তো পারে যে কোনো একদিনের কাজ সম্পন্ন করা গেলো না। তবে কি পরবর্তীতে সেটাকে এড়িয়ে যাবেন? গোঁজামিল দিয়ে কাজ শেষ করার কথা ভাববেন? বুঝতেই পারছেন, সেটা কখনোই উচিত নয়। আজ ব্যর্থ হয়েছেন, কাল একই কাজ আবার নিয়ে বসুন। কিংবা কাজটাকেই ভিন্ন রূপে আবার সাজিয়ে নিন সম্ভব হলে, পাল্টে নিন সেটা করার ধরণ।

কোনো ধাপেই ফাঁকফোকর রেখে পেরিয়ে যাবেন না। ছোটখাটো ফাঁকিও আপনার লক্ষ্য পূরণে বিঘ্ন ঘটাবে। আর নিজের কর্মোদ্যম সর্বদা অটুট রাখবেন। নিজের কাজে খুশি হয়ে নিজেকেই বাহবা দেওয়া যায়। যদি আত্মসমালোচনা করা যায় তবে ভালো কাজের জন্য নিজেকে প্রসংশিত কেন করা যাবে না? লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারলে আপনি কতোটা আনন্দিত হবেন, আপনার জীবনে এর কতোখানি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, নিজেকে মনে করাতে থাকুন প্রায়ই। 

This is a Bangla article about how to accomplish a goal. Sources are hyperlinked in the article.

Featured Image: iso.500px.com

Related Articles

Exit mobile version