ক্লান্তির সময়ে এক কাপ কফির জুড়ি মেলা ভার। অনেক সময় দেখা যায় বাসায় কফি কিনে অথবা উপহার পেয়ে ফেলে রাখা হয়েছে, মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এতগুলো কফি নষ্ট হয়ে গেল ভেবে আপনার খারাপ লাগছে, অথচ মেয়াদোত্তীর্ণ কফি পানীয় হিসেবে ব্যবহার পারছেন না। পানীয় ছাড়াও কফির যে ব্যবহারগুলো আছে সেগুলো জানলে আগামীবার আপনার কফিগুলো চমৎকার কাজে দেবে।
আঁকিবুঁকি
কফি দিয়েও যে চিত্রকর্ম করা যায়, আকিয়েদের জন্য সেটা বেশ খুশির সংবাদ। বাসায় রঙ নেই, চিন্তা কেন? কফি হালকা অথবা গাঢ়, নিজের ইচ্ছেমতো ছোপে রাঙিয়ে তুলতে পারেন আপনার সৃজনশীলতাকে। রঙে থাকা রাসায়নিক উপাদানের কারণে অনেকে বাচ্চাদের হাতে রঙ দিতে ভয় পান, এক্ষেত্রে কফি হতে পারে বিশ্বস্ত সমাধান। কাপড় রঙ করার কাজেও কফি ব্যবহার করা যায়। সাদা সুতা বা উলকে কফি দিয়ে রাঙিয়ে বুনতে পারেন নিজের ইচ্ছামতো কিছু।
কম্পোস্ট সার
আজকাল শখের বাগানে অনেকেই রাসায়নিক সার না ব্যবিহার করে সবজির খোসা দিয়ে ঘরেই কম্পোস্ট সার তৈরি করেন। এর মাঝে মিশিয়ে দিতে পারেন কফি। কফিতে থাকা নাইট্রোজেন আপনার গাছগুলোকে সাহায্য করবে যাতে তারা সূর্যের আলোকে শক্তিতে রূপান্তর করতে পারে। এছাড়া এতে থাকে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, লৌহ, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্রোমিয়াম।
কফি দিয়ে তৈরি কম্পোস্ট অন্যান্য কম্পোস্টের তুলনায় বেশি সমৃদ্ধ হয় বলে গবেষণায় দেখা যায়। একটি পরীক্ষায় একই সবজির খোসা দিয়ে তৈরি কম্পোস্টের উপাদানকে চার ভাগ করে যথাক্রমে ০ শতাংশ, ১০ শতাংশ, ২০ শতাংশ ও ৪০ শতাংশ ব্যবহৃত কফির দানা ব্যবহার করা হয়। কম্পোস্ট তৈরি হওয়ার পর দেখা যায়, ৪০ শতাংশ কফি ব্যবহার করা সারটির ব্যবহারে ফসল সবচেয়ে ভালো হয়েছে। কম্পোস্টে ঘাস, পাতা, বাকল, সংবাদপত্রের টুকরা, ভেষজ পাতা, ডিমের খোসা, রুটি, ফল ও শাকসবজির খোসা ব্যবহার করা ভালো। মাংস, মাছের অংশ, দুগ্ধজাত দ্রব্য, পোকাধরা গাছ, তেল ও চর্বি অবশ্যই পরিহার্য।
কফির গন্ধ আপনার গাছের চারা থেকে কিছু ক্ষতিকর পোকামাকড়কেও দূরে রাখবে। শুধু মাটিতে ছড়িয়ে দিয়েও সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
স্ক্রাবার হিসেবে
বাজার থেকে কিনে আনা স্ক্রাবার তো আর চোখের সামনে বানায় না, ফলে আপনি জানতেও পারছেন না এত দাম দিয়ে কিনে গায়ে কী দিচ্ছেন। বরং কফি, নারকেল তেল অথবা অলিভ অয়েল আর তার সাথে একটু চিনি মিশিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন স্ক্রাবার। সপ্তাহে একবার নিশ্চিন্তে এই জাদু আপনি সারা গায়ে ব্যবহার করতে পারেন গোসলের সময়। কফিতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্যাফেইন ত্বকের জন্য উপকারী। মৃত কোষ তাড়ানোর পাশাপাশি এটা আপনাকে দেবে কফির হালকা সুবাস। সব ধরনের ত্বকে এটা নিশ্চিন্তে ব্যবহারযোগ্য।
এয়ার ফ্রেশনার
কফির গন্ধ খুব ভালোবাসেন? কফি দিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন এয়ার ফ্রেশনার। পুরোনো মোজায় কফির দানা ঢেলে রাবার ব্যান্ড দিয়ে আটকে দিন। ঘরের যেকোনো কোনায় রাখলে সারা ঘর জুড়ে থাকবে আপনার প্রিয় কফির সুবাস। একইভাবে এটাকে গাড়িতে, জুতায় ব্যবহার করা যায়। রান্না করার পর হাতের দুর্গন্ধ এড়াতে অল্প কিছু কফি দিয়ে হাত ধুয়ে নিলে গন্ধ চলে যাবে।
কফি দিয়ে সুগন্ধি মোমবাতিও তৈরি করা যায়। এতে করে যতক্ষণ মোম জ্বলবে, ততক্ষণ সুবাস ছড়াবে। ফ্রিজের গন্ধ যদি পছন্দ না হয়, তবে ছোট একটা বাটিতে কফির গুঁড়ো রাখে দিন ফ্রিজের এক কোনায়। বেসিনে যদি দুর্গন্ধ হয়, তবে গরম পানিতে কফি গুলিয়ে ঢেলে দিন। দুর্গন্ধের হাত থেকে তাৎক্ষণিক মুক্তি মিলবে!
রান্নার কাজে
মাংস ম্যারিনেট বা নরম করার ক্ষমতা আছে কফির, কারণ এটা কিছুটা অম্লীয়। দানাদার কফি, যেটা কফি বানানোর পর থেকে যায়, সেটাকে ঠান্ডা করে মাংস রান্নার দু’ঘন্টা আগে মাংসের গায়ে ঘষলে মাংস নরম হয়ে যায়, রান্নায় ব্যতিক্রমী স্বাদও আসে। মিল্কশেক বা স্মুদির কথা বাদই দিলাম, চকোলেট কেকের গোলায় একটু কফি যোগ করলে সেটাও বেশ সুন্দর, সুস্বাদু গন্ধ আনে।
মাথার ত্বক ও চুলে
বাজার থেকে কেনা রাসায়নিক শ্যাম্পু পরিবর্তনের জন্য কখনো কফির দানা স্ক্রাবার হিসেবে মাথায় ব্যবহার করা যায়। এতে করে মৃত কোষ দূর হবে, চুলে ভ্যাপসা গন্ধ থাকলে সেটাও চলে যাবে। গবেষণায় দেখা যায়, কফিতে থাকা ক্যাফেইন আমাদের শরীরের রক্ত চলাচল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। শুধু পানীয় হিসেবেই নয়, বরং এর বাহ্যিক ব্যবহারও বেশ কাজের। চুল রাঙাতে যে পণ্যের ব্যবহার করা হয়, তাতে শত শত রাসায়নিক উপাদান থাকে। এদের কোনো কোনোটি ক্যান্সার পর্যন্ত বয়ে আনতে পারে। কফি যদিও কৃত্রিম রঙের মতো কার্যকর নয়, তবু চুলের রঙকে সে আরো গাঢ় করে তুলতে পারে। মেয়াদোত্তীর্ণ কফি হতে পারে এতদিন চলে আসা বিষাক্ত রঙের প্রাকৃতিক বিকল্প।
মাশরুম চাষে
মাশরুম চাষ সহজ নয়। এর জন্য প্রয়োজন হয় নির্দিষ্ট পরিবেশ, মাটি ও সার। তারা সাধারণ মাটিতে জন্মায় না। বিশেষভাবে সেই মাটি তৈরি করে নিতে হয়। মাশরুম চাষ শখের বশে শুরু করতে যাচ্ছেন এমন মানুষদের জন্য কফি বেশ সহজ সমাধান। ব্যবহৃত কফির দানা দিয়ে এ ধরনের মাটি তৈরি করা যায়, কারণ মাশরুমের বেড়ে ওঠার জন্য যে পুষ্টি দরকার কফিতে তা পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে। তাছাড়া কফি জ্বাল দেওয়ার সময় দানাগুলো ফুটন্ত পানিতে জীবাণুমুক্তও হয়ে যায়।
আশেপাশের কফির দোকানে চাইলে তাদের ব্যবহৃত কফি পাওয়া যেতে পারে। সেরকম কফির আড়াই কেজি কাগজে বা শুকনা জায়গায় ছড়িয়ে অল্প পানি ছিটিয়ে ভিজিয়ে নিন। আধা কেজি মাশরুমের স্পোর ও মাটি মিলিয়ে দিন এতে। যে ব্যাগে মাশরুম জন্মাবেন, সেখানে পরিমাণ মতো মিশ্রণ দিয়ে ভর্তি করুন। ব্যাগ হলে ৫ মি.মি. করে ছিদ্র করে দিন। খোলা পাত্রে করলে উপরে সেলোফেন দিয়ে আটকে ছিদ্র করতে হবে। মাঝে মাঝে প্রয়োজনে পানি দিতে হবে। এর তিন-চার সপ্তাহ পর মাশরুম দেখা দিলে তা চাষ করার উপযুক্ত বলে ধরা হবে।
পোষা প্রাণীর গায়ের পোকা তাড়াতে
বাড়িতে পোষা প্রাণী থাকলে প্রায়ই দেখা যায় তাদের গায়ে ছোট কালো পোকা। এই পোকা তাড়ানোর অনেক ওষুধ বাজারে পাওয়া গেলেও সেগুলো যেমন বিষাক্ত, তেমনি তাদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ক্ষতিকর। পোষা প্রাণীর পোকা ছাড়ানো একইসাথে ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সৌভাগ্যবশত, এই পোকাগুলো কফির ঘ্রাণ পছন্দ করে না। প্রাণীর গায়ের পশম শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে তাতে কফির দানা ঘষে পরে ভালো মতো ধুয়ে শুকিয়ে ফেলতে হবে। কফি রাসায়নিক ওষুধের মতো কার্যকরী কখনোই হবে না। কিন্তু এটা ব্যবহার করে পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায় প্রাকৃতিকভাবে। বিড়াল, কুকুর কফি খেয়ে ফেললে সেটা তাদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই পোষা প্রাণীর জন্য কফি ব্যবহারে পশু চিকিৎসকের মতামত নেওয়া এবং সতর্ক থাকা উচিৎ।
কফির ভিন্নধর্মী ব্যবহারগুলো যে শুধু আপনাকে অপচয়ের হাত থেকে বাঁচাবে তা-ই নয়, বরং আপনাকে সুবাসিত উপকারে ঋণী করে রাখবে আপনাকে!
.ফিচার ইমেজ: Popular everything