![](https://assets.roar.media/assets/PvDfkHnleRrryrl4_pexels-photo-2283803.jpeg?w=1200)
জীবনের খুব ছোট থেকে বড়, সাধারণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ, ব্যক্তিগত থেকে ব্যবসায়িক, পারিবারিক থেকে সামাজিক- যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা-ভাবনা করে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয়। একটি সঠিক সিদ্ধান্ত জীবনের জন্য যেমন কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসে, ঠিক তেমনি একটি ভুল সিদ্ধান্ত ডেকে আনে ঘোর বিপর্যয়।
![;Image Source: https://www.pexels.com/](https://assets.roar.media/assets/WrP0rkAwWph4N4rP_pexels-alphatradezone-5831701.jpg)
সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মানসিক স্থিতি এবং একটি সুষ্ঠু পরিবেশ খুবই জরুরি। একবার ভেবে দেখুন তো, জীবনে কখনো উদ্বিগ্ন অবস্থায় হুটহাট করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিনা? যদি নিয়ে থাকেন, তাহলে সিদ্ধান্তটি কতটা সঠিক ছিল, বা সেসময় কতটা যুক্তিযুক্তভাবে চিন্তা করে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছিলেন?
উদ্বিগ্নতা সরাসরি আমাদের মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে, যার প্রতিফলন ঘটে আমাদের আচরণে। গবেষণালব্ধ তথ্যের মাধ্যমে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যাক। দ্য ইউনিভার্সিটি অভ পিটসবার্গ ইনস্টিটিউশনাল অ্যানিমেল কেয়ার অ্যান্ড ইউজ কমিটি অনুমোদিত গবেষণাগারে প্রাণীর যত্ন ও ব্যবহার বিষয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অভ হেলথ’স গাইডের নীতিমালা মেনে ইঁদুরের উপর একটি গবেষণা চালানো হয়েছিল।
কিছু ইঁদুর নিয়ে তাদেরকে দুটি দলে ভাগ করা হয়। একটি দলের ইঁদুরের উপর কোনো ওষুধ প্রয়োগ করা হয় না এবং অপর দলের ইঁদুরের উপর খুবই কম মাত্রায় উদ্বিগ্নতা সৃষ্টির ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। ইঁদুরগুলোর আচরণ ও গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, ওষুধ প্রয়োগকৃত ইঁদুরগুলোর মধ্যে চাঞ্চল্য অপেক্ষাকৃত বেশি ছিল এবং উভয় দলের ইঁদুর সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমর্থ হলেও ওষুধ প্রয়োগকৃত ইঁদুর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু ভুল করে।
মানুষের ক্ষেত্রে উদ্বিগ্নতা সৃষ্টির কারণ বা প্রভাবক হতে পারে দুশ্চিন্তা, ভয়, অর্থনৈতিক অভাব, বিভিন্ন সামাজিক কারণ, শারীরিক অসুস্থতা, সম্পর্কের জটিলতা, জীবনে ঘটে যাওয়া কোনো দুর্ঘটনা, অবহেলা, বিদ্বেষ ইত্যাদি।
![Image source:https://www.pexels.com/](https://assets.roar.media/assets/xtbcLH89TKGwNx4l_pexels-anna-shvets-4226123.jpg)
চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে উদ্বিগ্নতার প্রভাবকে ব্যাখ্যা করলে সহজ ভাষায় বলতে হয়, যখন আমরা কোনো বিষয়ে উদ্বিগ্ন থাকি, তখন আমাদের মস্তিষ্কের লিম্বিক সিস্টেমে বেশকিছু উদ্দীপনা কাজ করে, যার ফলে মস্তিষ্কের সম্মুখভাগে অবস্থিত ‘চিন্তা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী’ অংশ-প্রিফন্টাল কর্টেক্সের ‘মনোনিবেশ প্রক্রিয়া’ ব্যহত হয়। এর ফলে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুভূতি স্থবির হয়ে যায়।
উপর্যুক্ত কারণেই উদ্বিগ্ন অবস্থায় আমরা সবসময় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি। কথায় আছে, সাতপাঁচ ভেবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে উদ্বিগ্নতাকে এড়ানোর কিছু কৌশল দেখে নেওয়া যাক।
![Image Source: https://www.pexels.com/](https://assets.roar.media/assets/k9J1Tvw5yX2UMHql_pexels-mateusz-dach-914929.jpg)
উৎফুল্ল থাকুন
উৎফুল্লতা মানুষের মস্তিষ্কের প্রি-ফন্টাল কর্টেক্সকে সর্বদা দৃঢ় রাখে। অপরদিকে উদ্বিগ্নতা এ অংশকে পুরোপুরি বিকল করে দেয়। তাই যথাসাধ্য প্রফুল্ল থাকার চেষ্টা করুন, যা আপনাকে জীবনের সঠিক সিদ্ধান্তগুলো নিতে সহায়তা করবে।
![Image Source: https://www.pexels.com/](https://assets.roar.media/assets/M40UJv2qZEkHNlUm_pexels-kelvin-valerio-810775.jpg)
লম্বা করে শ্বাস নিন
নিজের মনের দ্বন্দ্বের কারণে অনেক সময় উদ্বিগ্নতা জন্ম নেয়। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে স্বাভাবিক করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার একটি ভালো কৌশল হচ্ছে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে লম্বা লম্বা শ্বাস নেওয়া। এরকম করলে আপনার বেশ ভালো অনুভব হবে এবং মাথাটা কিছু হালকা মনে হবে। ব্যস, এবার একটু শান্ত হয়ে চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলুন।
![Image Source: https://www.pexels.com/](https://assets.roar.media/assets/08RdrCGl6k8DfRu8_pexels-pixabay-355952.jpg)
বিষণ্ণতার কারণ অনুসন্ধান
অতীতের কোনো ঘটনা, কর্মস্থলের সমস্যা, কারো সাথে মতবিরোধ, ব্যক্তিগত জীবনের হতাশা, পরিবারের সদস্যদের সাথে গন্ডগোল, দীর্ঘ ট্র্যাফিক জ্যামের ঝক্কি– এমন নানা বিষয় আপনার দৈনন্দিন জীবনে উদ্বিগ্নতার কারণ হয়ে উঠতে পারে। নির্দিষ্ট কারণটি খুঁজে বের করে তা সমাধান করার চেষ্টা করুন। এতে আপনার আচরণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
![Image Source: https://www.pexels.com/](https://assets.roar.media/assets/az2A8D1vOxBHUgdN_pexels-taryn-elliott-4099354.jpg)
কিছুটা সময় নিন
আমরা জীবনে যেভাবে সবকিছু প্রত্যাশা করি, সবসময় তা হয় না। তাই এ পরিস্থিতিগুলোতে একটু সময় নিন। যদিও এটা খুব সহজ নয়, তবুও নিজেকে একটু সময় দিন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার জন্য। আমরা এক্ষেত্রে যতটা ধৈর্যশীল হব, পরিস্থিতি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা তত বাড়বে।
চিন্তা, অনুভূতি এবং আচরণ
এই তিনটি বিষয় একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আপনি যদি এই তিনটির মধ্যে যেকোনো একটি, অর্থাৎ চিন্তা, অনুভূতি বা আচরণে ইতিবাচক এবং প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠেন, তাহলে উদ্বিগ্নতাকে উপেক্ষা করে বাকিগুলোও এমনিতেই পরিবর্তিত হয়ে যাবে।
![Image Source: https://www.pexels.com/](https://assets.roar.media/assets/QzV3S4AMypJKkgnU_pexels-pixabay-207924.jpg)
নিজের প্রত্যাশা সম্পর্কে ভাবুন
সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আপনি ‘কী চান না’, তা নিয়ে দৃষ্টিপাত না করে বরং ভাবুন- আপনি ‘কী চান’। কারণ যখন আপনি প্রথমটি নিয়ে ভাববেন, তা থেকে উদ্বিগ্নতা সৃষ্টি হবে। এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কেবল নেতিবাচক সম্ভাবনাগুলোকেই কল্পনায় চলে আসবে।
![Image Source: https://www.pexels.com/](https://assets.roar.media/assets/VDHT8eGFgXSfGL5I_pexels-cottonbro-3832033.jpg)
বিষয়ের প্রাধান্য নিশ্চিত করুন
ধরুন, দীর্ঘদিন যাবত আপনি চাকরি করছেন এবং সম্প্রতি আপনি একজন মা হয়েছেন। মা হওয়ার পর আপনি উদ্বিগ্নতায় ভুগছেন, সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না চাকরিতে ফিরে যাবেন নাকি চাকরি ছেড়ে দিয়ে সন্তানের পাশে পুরোটা সময় থাকবেন। এখানে সন্তান যেমন আপনার কাছে অমূল্য, চাকরিও তেমনি প্রয়োজনীয়। প্রত্যেকের পারিপার্শ্বিকতা, ব্যক্তিজীবন ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে, গৃহীত সিদ্ধান্তও ভিন্ন হবে। উদ্বিগ্ন না হয়ে সবকিছু বিবেচনা করে ঠাণ্ডা মাথায় একটু ভেবে দেখুন, এ মুহূর্তে আপনার কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কোনটি? উত্তরটা সহজেই পেয়ে যাবেন।
![Image Source: https://www.pexels.com/](https://assets.roar.media/assets/l07VUC94IRaXEhDv_pexels-pixabay-356043.jpg)
সম্ভাবনা যাচাই করুন
হয়তো বর্তমান চাকরিক্ষেত্রে আপনি ভীষণভাবে অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েছেন এবং অন্যত্র চাকরির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে মনস্থির করেছেন। এমতাবস্থায় আপনার উদ্বিগ্ন থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত উদ্বিগ্ন না হয়ে যদি স্থিরভাবে বিবেচনা করা হতো, তাহলে কিছু সম্ভাবনার জায়গা আপনি যাচাই করতে পারতেন; যেমন- নতুন কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ কেমন হবে, সেখানে কাজের সুযোগ কতটা থাকবে, কাজ শিখে নিজেকে আরো উন্নত করার সুযোগ রয়েছে কি না, এ পদের জন্য বর্তমান সম্মানির তুলনায় কতটা পাচ্ছেন। বিষয়গুলো যাচাই করতে পারলে মন থেকে অজানা ভয় দূর হয়ে যাবে, আর সিদ্ধান্ত নেওয়াটাও সহজ হয়ে উঠবে।
![Image Source: https://www.pexels.com/](https://assets.roar.media/assets/zMeqZEmvVtAsNakc_pexels-meru-bi-6588938.jpg)
চটজলদি হতে হবে
আমাদের জীবনে এমন অনেক সিদ্ধান্ত থাকে, যা হয়তো আমরা এক ঘণ্টা ভেবেই গ্রহণ করতে পারি। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন একই বিষয় নিয়ে ভাবতে থাকি। ফলে উদ্বিগ্নতার সৃষ্টি হয় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিলতা আসে। তাই অহেতুক সময় নষ্ট করে বারবার একই বিষয় নিয়ে না ভেবে কিছু কিছু সিদ্ধান্ত চটজলদি নেওয়া ভালো।
![Image Source: https://www.pexels.com/](https://assets.roar.media/assets/roNBlpmOiLTS50wo_pexels-sora-shimazaki-5668481.jpg)
সর্বোপরি, ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতি বিবেচনা করে ধাপে ধাপে বিষয়গুলোকে সাজিয়ে যদি একটু চিন্তা করা হয়, তাহলে উদ্বিগ্নতাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে খুব সহজেই সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব।