যদি আপনি এই সময়ে দাঁড়িয়ে ভয় পান, দুশ্চিন্তা করেন- তো সেটা স্বাভাবিক; এবং আপনি একা নন। ওয়াশিংটন পোস্ট-এবিসি নিউজের গবেষণায় দেখা গেছে, “মার্চ মাসের শেষের দিকে, করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী ১ মিলিয়নেরও বেশি লোককে আক্রান্ত করার আগেই ৭৭% আমেরিকান নারী এবং ৬১% পুরুষ মানসিক চাপ অনুভব করার কথা বলেছে।” আমেরিকানদের ৬৯% লোকেরাই নিজের বা তাদের পরিবারের সদস্যদের সংক্রামিত হওয়ার বিষয়ে চিন্তিত ছিল এবং বেশিরভাগই মনে করছিল যে, এর অর্থনৈতিক প্রভাব খুবই খারাপ হবে এবং সেটা হতে পারে ২০০৮ সালের মহামন্দার চেয়েও বেশি।
মনোবিজ্ঞানীরা দেখছেন, কীভাবে এই মহামারিটি রোগী এবং সাধারণ মানুষেরও ভয় বাড়িয়ে তুলছে। আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, এক-তৃতীয়াংশ আমেরিকান মনে করেন, করোনাভাইরাস সংকট তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে এবং মানসিক স্বাস্থ্য হটলাইনে কল ও মেসেজ নাটকীয়ভাবে বেড়ে গিয়েছে।
বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে দুশ্চিন্তা ছড়িয়ে যাচ্ছে এবং তার লক্ষণ হিসেবে বিভিন্ন শারীরিক ইস্যু দেখা যাচ্ছে। যেমন- হার্টরেট বেড়ে যাওয়া, ঘেমে যাওয়া, গ্যাস বা এসিডিটির সমস্যা হওয়া, পেশীতে টান লাগা, গলা শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। কিন্তু সমস্যা হলো- এই দুশ্চিন্তা যে তাদের অন্য সমস্যাগুলোকেও বাড়িয়ে তুলছে, সেটা মানুষ বুঝছে না। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট এবং ‘নিউ ইয়র্কের টুগেদার সিবিটি’র প্রতিষ্ঠাতা অ্যামেলিয়া আলদাও বলেছেন,
“মানুষ বুঝতেই পারছে না যে তাদের কাজে মন দেবার ক্ষমতা, স্মৃতিশক্তি, ঘুম এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলোতে এই দুশ্চিন্তা খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।”
এই দুশ্চিন্তার জন্য হচ্ছে এমন চারটি মূল সমস্যা, যেগুলো আমাদের ঘরোয়া জীবনে কীভাবে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে এবং তার সমাধানের জন্য আপনি কী পদক্ষেপ নিতে পারেন, চলুন জেনে নেওয়া যাক।
বিরক্তি ও ক্রোধ বেড়ে যাওয়া
আমরা এখন খুব তাড়াতাড়িই হতাশ হয়ে যাচ্ছি, রেগে যাচ্ছি। প্রচলিত ভাষায় ‘শর্ট টেম্পারড’ হয়ে যাচ্ছি। বাংলা ভাষায় একটি সুন্দর প্রবচন আছে। “একসাথে পাঁচটা বাসন-কোসন রাখলে আওয়াজ হবেই।” অর্থাৎ যখন আমরা একই বাসার মধ্যে বা দুটো ঘরের মধ্যে বেশ কিছু মানুষ আটকে আছি, তখন সে আমরা যতই এক পরিবারের মানুষই হই না কেন, কিছুটা মনোমালিন্য হতেই পারে এবং তা স্বাভাবিকও। কিন্তু সমীক্ষাগুলো দেখাচ্ছে, এই হালকা মনোমালিন্যকে অনেকটা বাড়িয়ে দিতে পারে আমাদের সাম্প্রতিক দুশ্চিন্তা! যার ফলে এমনকি গৃহ নির্যাতনের মতো ব্যাপারও ঘটে যেতে পারে।
দুর্ভাগ্যক্রমে, এমন একটি সময়ে যখন আমাদের আশেপাশের মানুষগুলোর ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভর করা দরকার, ভরসা করা দরকার, ঠিক তখনই আমরা অনেকেই সেই সম্পর্ক আরো খারাপ করে ফেলছি। আমাদের বাড়ির মানুষ, বাবা-মা, স্ত্রী, ভাই-বোন এমনকি ছোট বাচ্চাকাচ্চার সাথেও আমরা খারাপ ব্যবহার করে ফেলছি। এ ব্যাপারে আমরা এখনই যদি সচেতন না হই, এটা আরো অবনতির দিকে যাবে।
আপনার দুশ্চিন্তা যেন আপনার ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষতি করতে না পারে, সেটির প্রথম পদক্ষেপটি হলো, আমাদের এই দুশ্চিন্তা রাগে পরিণত হওয়ার আগেই সেই দুশ্চিন্তাটিকে চিহ্নিত করা এবং স্বীকার করা যে, “হ্যাঁ আমি চিন্তিত”। একবার নিজেকে বুঝতে পারলে, সে সময়ে দরকার হলে আপনি অন্যদের থেকে সাময়িকভাবে নিজেকে দূরে রাখতে রাখবেন এবং নিজেই নিজেকে শান্ত করতে পারবেন। বা আপনার আশেপাশের লোকজনের সাথে আপনার এই অনুভূতিগুলো আপনি ভাগ করে নিতে পারেন, তারাও আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
নিজেকে শান্ত করার জন্য ছোটখাট কিছু যোগব্যায়াম করতে পারেন। পদ্মাসনে বসে, আপনার বুক স্থির রেখে ও পেট উঁচু-নিচু করে, ধীরে ধীরে এবং গভীর শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করুন। শ্বাস নেবেন যত দ্রুত, ছাড়বেন তার দ্বিগুণ সময় নিয়ে। বা কোনো একটি নিরাপদ, সুন্দর জায়গা কল্পনা করুন, সেটা এমন হতে পারে যেখানে আপনি সম্প্রতি ঘুরতে গিয়েছিলেন। আপনার পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের ওপরে জোর দিন, কল্পনা করুন যে আপনি এখন সেখানে ঘুরছেন। এছাড়াও আপনি কোন একটি কার্ডিও ব্যায়ামও করতে পারেন। যেমন- সিঁড়ি দিয়ে বার বার ওঠা-নামা করতে পারেন। এভাবে আপনার অতিরিক্ত শক্তি ব্যয় হবে এবং যার ফলে দুশ্চিন্তা ও রাগ দুটোই কমে আসবে।
আপনি যদি নিজের দুশ্চিন্তাজনক চিন্তা-ভাবনা এবং আবেগ অন্যদের সাথে ভাগ করে নেন, তবে ভাববেন না যে মানুষ আপনাকে দুর্বল ভাবছে। আর যদি ভেবেও থাকে তো, মনে রাখবেন, একজন দুর্বল মানুষ অন্তত একজন অযথা রাগ করা মানুষের চেয়ে অনেক ভাল। নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির অধ্যাপক জোনাথন আব্রামোভিট বলেছেন,
“…এবং যে মানুষগুলো সবার কথা শোনে, সবার মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করে, একটা সময় তাদেরও অসহায়ত্ব আসে। তারাও যেন তাদের অনুভূতি এবং দুশ্চিন্তাগুলোকে প্রকাশ করতে পারে, সে চেষ্টাও করা উচিত। তাদেরও মনের কথাগুলো শোনা উচিত। প্রায়ই কিছু মানুষ, বিশেষত পুরুষেরা চায়, আমি একাই সব ঠিক করে ফেলব। তবে সত্যি বলতে এর বিশেষ প্রয়োজন হয় না।”
এরকম বৈশ্বিক কোনো মহামারিতে ব্যক্তি উদ্যোগে আমাদের সত্যিই তেমন কিছু করার থাকে না। আমরা যা করতে পারি, তা হলো একজন আরেকজনের পাশে থাকতে। আমরা আমাদের পরস্পরের কথাগুলো শুনতে পারি, হাতটা ধরতে পারি এবং একে অন্যকে অনুভব করতে পারি। ব্যস এটুকুই, এটুকুই সাক্ষী দেবে যে, মহাদুর্যোগেও মানুষ একসাথে ছিল।
অনিদ্রা
আমাদের মধ্যে বেশিরভাগই বুঝি যে, দুশ্চিন্তা আমাদের অনিদ্রা এবং অন্যান্য ঘুমের সমস্যার দিকে নিয়ে যায়। মানুষ কোনোকিছু নিয়ে বেশি ভাবলে তাদের অনেকগুলো ঘুমের সমস্যা শুরু হয়। যেমন, ঘুম ধরতে দেরি হওয়া, ঘুমের সময়ে মনের মধ্যে অপ্রাসঙ্গিক কোনো চিন্তা ঘুরতে থাকা, পুরোনো কোনো কথা মনে পরে মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়া এবং তারপর আবার ঘুমিয়ে পড়তে খুব কষ্ট হওয়া ইত্যাদি। এই লুপটা এতটাই বাজে যে এ দুশ্চিন্তার জন্য আমরা যত কম ঘুমাই, আমাদের দুশ্চিন্তা ততই আরও বেশি হয়ে উঠতে পারে।
লাহর্ন নামের ৩২ বছর বয়সী এক ব্যক্তি বলেন,
“আমার যখন রাত দুটা বা তিনটায় ঘুম ভেঙে যায়, তখন আমার মনের মধ্যে কোভিড-১৯ নিয়ে দুশ্চিন্তা ঘুরতে শুরু করে, তারপর ভয় কাজ করে, তারপর আবার এ নিয়ে চিন্তা শুরু হয়। এটি খুব হতাশাজনক।”
এর মধ্যে ভালো খবরটি হলো আমরা যদি আমাদের ঘুম ঠিকঠাক হওয়ার ব্যবস্থা করতে পারি, তাহলে এই দুশ্চিন্তাও এর সাথে সাথে কমে যাবে।
সিয়াটলের নিউরোলজিস্ট এবং স্লিপ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ব্র্যান্ডন পিটারস পরামর্শ দেন,
“ঘুমানোর জন্য প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে রাখা, চা-কফি বা অন্যান্য ক্যাফেইন জাতীয় খাবার কম খাওয়া, প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট করে ব্যায়াম করা এবং যদি সম্ভব হয় তো প্রতিদিন একটু করে হলেও সূর্যের আলো গায়ে লাগালে ঘুমটা বেশ ভালো হয়।”
অন্যান্য গবেষণাতেও দেখা যায় আমাদের বেডরুমটি ঠাণ্ডা, অন্ধকার ও চুপচাপ রাখলে ঘুম ভালো হয়। এছাড়াও ঘুমানোর আগে আগে যেকোনো ধরনের ডিজিটাল স্ক্রিন, যেমন- মোবাইল, ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ এগুলো ব্যবহার না করাই ভাল। আর শোবার আগে মনের মধ্যে ইতিবাচক কিছু নিয়ে চিন্তা করলেও ঘুমটা ভালো হয়। আর যেহেতু আমরা জানিই যে, করোনাভাইরাস ইতোমধ্যেই মহামারির রূপ নিয়েই নিয়েছে, তখন খুব বেশি ভয়ের খবরগুলো না দেখাই ভালো, বিশেষ করে ঘুমানোর আগে তো নয়ই।
বিছানায় যাওয়ার কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে থেকে কোনো রকম ডিভাইস ব্যবহার না করাই উচিত। এসময় হালকা ব্যায়াম করতে পারেন, গল্পের বই পড়ুন, গান শুনুন মৃদু আওয়াজে দিয়ে, বাড়ির মানুষের সাথে দাবা, লুডু বা এ জাতীয় কিছু খেলতে পারেন। আর ঘুমানোর ঘণ্টাখানেক আগে হালকা শর্করা জাতীয় কিছু, যেমন- বিস্কুট বা কেক খেলেও ঘুমাতে সুবিধা হয়।
কাজে মনোযোগের অভাব
মানুষ যে আদি মানব থেকে আজকের এই পর্যায়ে আসতে পেরেছে, তার প্রধান কারণই হলো মানুষ সবসময়ই তার দিকে আসা বিপদের দিকে তীক্ষ্ণ মনোযোগ দিতে পারে এভাবেই আমাদের পূর্বপুরুষরাও তাদের চারিদিকের পরিবেশের বিভিন্ন বিপদ থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। করোনাভাইরাস অবশ্যই আমাদের স্বাস্থ্য, জীবন-জীবিকা এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জন্য হুমকির কারণ। আমরা এই সম্পর্কিত খবরগুলো সবসময় পড়ছি, দেখছি, শুনছি এবং সে থেকে নিজেকে রক্ষা করার উপায়গুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে যাচ্ছি।
সমস্যাটি হলো, এরই মধ্যে আমাদের হয়তো বাসায় বসে অফিসের কাজও করতে হচ্ছে, অনেক শিক্ষার্থীর অনলাইন ক্লাস হচ্ছে, তাদের শিক্ষকদের ক্লাসটি নিতেও হচ্ছে এবং কারো কারো ভিডিও কনফারেন্সে অফিস মিটিং করতে হচ্ছে। বা এসব কিছু না থাকলেও বাসায় অন্তত বেশ কিছু দৈনন্দিন কাজ করতেই হচ্ছে। আমাদের মস্তিষ্কের কাজ করার একটা সীমাবদ্ধতা আছে। অধ্যাপক আব্রামোভিট বলেছেন,
“এখন আমাদের সমস্ত মনোযোগ কেবল এই করোনাভাইরাসই টেনে নিচ্ছে। তাই এখন আমাদের এই মুহূর্তে অন্য যেকোনো কিছু করার চেষ্টা করলে তার প্রতি আমাদের আরো গভীরভাবে মনোযোগ দিতে হবে।”
আমাদের সবার আগে যেটা করতে হবে, তা হলো প্রয়োজনীয় কাজের একটা তালিকা তৈরি। কোন কাজগুলো আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কোনগুলো অপেক্ষাকৃত কম, সে তালিকা বানাতে হবে। পরের দিন যে কাজগুলো করা দরকার, তা আগেরদিন সন্ধ্যায় একটি তালিকাভুক্ত করুন এবং গুরুত্ব ও জরুরির ভিত্তিতে এটিকে র্যাঙ্ক করুন। কাজের কোনটা জরুরি আর কোনটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা বের করা খুবই প্রয়োজন। জরুরি কাজের দিকে ফোকাস সবার আগে দিতে হবে। তারপরে নির্দিষ্ট সময় ঠিক করুন, কখন আপনি জরুরি কাজ করবেন এবং কখন গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেন।
প্রতি ৪৫ মিনিটে ১০ মিনিট করে কাজ থেকে বিরতি নিন। এসময় একটু হাঁটাহাঁটি করুন, হাতটা সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন, বাড়ির মানুষের সাথে একটু কথা বলুন; সোশ্যাল মিডিয়াতে শুধু ‘সোশ্যাল’ না হয়ে নিজের বাড়িতেও ‘সোশ্যাল’ হন। নিজের প্রতি একটু সদয় হোন, স্বীকার করে নিন যে এই চাপের সময়ে আমাদের কাজকর্মের জন্য কিছুটা আপোস করা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। আর আপনার খবর দেখার সময়টা কমিয়ে দিন, এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতে খবর দেখাসহ।
দিনে দুই থেকে তিনটি পূর্ব নির্ধারিত সময়ে খবর দেখা সীমাবদ্ধ করুন, এবং কোনোবারেই সেটা ১৫ মিনিটের বেশি না। আপনি যখন অন্য কোনও কাজ করার সময়ও “খবরে কী দেখাচ্ছে?” ভাবতে থাকেন, তখন নিজের সাথে একটা ছোটখাট লড়াই করুন। এই তাগিদকে কমপক্ষে ১৫ মিনিট হলেও পেছান। যে কাজ করছিলেন, সেটাতে কমপক্ষে আরো ১৫ মিনিট সময় দিয়ে তারপর খবর দেখতে যান। এভাবে আপনি লক্ষ্য করবেন, আপনি যত দেরিতে এই খবর দেখতে যেতে শুরু করবেন, আপনার সেটা দেখার ইচ্ছাও ধীরে ধীরে কমে যাবে। এই প্রক্রিয়াটিকে ‘সার্ফিং দ্য আর্জ’ বলা হয়।
বিস্মৃতি
আমাদের অনেকেরই এখন এই সমস্যা দেখা যাচ্ছে। কারো সাথে আমরা কী কথা বলেছি সেটা মনে থাকছে না বা কোনো অনলাইন ক্লাসে আদৌ কী শিখিয়েছে, সেটা মনে থাকছে না। অনেকের এমনও হচ্ছে- বাড়ির খুবই স্বাভাবিক কাজ যেমন রান্নাবান্না করতেও ভুলভাল হয়ে যাচ্ছে।
আমাদের মস্তিষ্কের যে কোষগুলো এই মনে রাখার বিষয়টি নিয়ে কাজ করে, তাদের বলে কার্যকরী স্মৃতি। ২০১৬ সালের একটি পর্যালোচনাতে দেখা গেছে, আমাদের দুশ্চিন্তা এরকম কোষগুলোকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করে। ‘আলেকসান্দ্রা’ পারপুরা নামের একজন জেরনোলজিস্ট বলেন, যে বিষয়গুলো আপনার মস্তিষ্ককে ঠাণ্ডা রাখবে, সেগুলো আপনার চিন্তা-ভাবনাকেও শিথিল করে তুলবে এবং তা স্মৃতিশক্তিতেও সহায়তা করবে। মস্তিষ্ক ঠাণ্ডা রাখতে যে বিষয়গুলো সহায়তা করে, তা হলো যোগব্যায়াম করা, কোনো সৃজনশীল কাজ; যেমন- ছবি আঁকা, গান গাওয়া, লেখালেখি করা, রান্না করা এগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকা এবং বাড়িতে যদি কোনো গাছ বা পোষা প্রাণী থাকে, তাদের সময় দেওয়া ইত্যাদি।
সুতরাং, আপনি যদি ক্রসওয়ার্ড ধাঁধা, সুডোকু, আর্টস এন্ড ক্রাফটস, ভিডিও গেমস বা গিটার-উকুলেলে বাজানোর অনুরাগী হন, আপনি যদি নতুন নতুন রান্নার এক্সপেরিমেন্ট করতে ভালবাসেন, বনসাই যদি হয় আপনার দক্ষতার জায়গা বা গল্পের বইয়েই যদি আপনি খুঁজে পান নতুন দিশার সন্ধান, তবে এখনই তাদের নামে আরেকটু বেশি সময় দিতে থাকুন, মস্তিষ্কও বিশ্রাম খুঁজে পাবে আর হয়তো আমরা একজন নতুন শিল্পীও পেয়ে যাব।
এই চারটি সমস্যা বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি আমাদের এই উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা পরস্পরকে শারীরিকভাবে আঘাত করা, নেশাদ্রব্য ব্যবহার বৃদ্ধি বা হতাশাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। যদি আপনার এই মনস্তাত্ত্বিক অসুবিধাগুলো আপনার জীবনকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে শুরু করে, বা আপনি যদি মনে করেন এর দ্বারা আপনি নিজের বা অন্যের ক্ষতি করে ফেলতে পারেন, তবে অনুগ্রহ করে কোনো মানসিক বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন।
সবাই বাড়িতে থাকুন, পরিবারের মানুষের পাশে থাকুন, সুস্থ থাকুন।