বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থাও উন্নত হয়েছে প্রতিনিয়ত। অনেক অদেখা, অজানা জায়গার খোঁজ পাওয়া গিয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে। মানুষ পৌঁছে গেছে চাঁদে, আগামী ৫০ বছরের মধ্যে মঙ্গল গ্রহে বসবাসের কথাও উঠেছে। মিলিটারি স্যাটেলাইট দিয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো চোখ রাখছে শত্রুর উপর। প্রযুক্তির এতো উৎকর্ষের পরেও এই পৃথিবীতেই অনেক সভ্যতা রয়ে গিয়েছে যাদের সাথে আমাদের আধুনিক সভ্যতার যোগাযোগ নেই বললেই চলে। এর আগে পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম এবং জনবিচ্ছিন্ন এলাকা নিয়ে বলেছিলাম, এবার চলুন জানা যাক পৃথিবীর কিছু বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠী সম্পর্কে, যাদের অনেকে বাইরের পৃথিবীর কথা জেনেছে মাত্র কয়েক দশক আগে, আবার অনেকে এখনো জানেই না কিছু।
সেন্টিনেলিজ, ভারত মহাসাগর
ভারত মহাসাগরে অবস্থিত আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপে এই জনগোষ্ঠীর বসবাস। সেন্টিনেলিজ নামটা আসলে গবেষকদের দেয়া, কারণ খুব সম্ভবত এরাই পৃথিবীর একমাত্র জনগোষ্ঠী যাদের সাথে আধুনিক পৃথিবীর কোনো যোগাযোগ নেই।। ফলে তারা তাদের কী নামে ডাকে সেটা জানা যায়নি। দ্বীপের নামানুসারে তাদের সেন্টিনেলিজ ডাকা হয়।
১৮৮০ সালে প্রথম ব্রিটিশরা আন্দামান এলাকা জরিপের সময় এই জনগোষ্ঠীর খোঁজ পায়। সেসময় ব্রিটিশদের নিয়ম ছিল কোনো আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে প্রথম দেখা হলে তাদের উপহার দিয়ে স্বপক্ষে নেয়ার চেষ্টা করা। সে অনুযায়ী ব্রিটিশরা একজনকে নিয়ে এসে নানারকম উপহার দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। দ্বীপের জঙ্গলের ভেতর প্রবেশের পর তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। কিছুদিন পর ব্রিটিশরা চারজন আদিবাসীকে সমুদ্রের তীরে খুঁজে পায়। চারজনের মধ্যে দুজন ছিল পূর্ণবয়স্ক, দুজন কম বয়সী। তাদের উদ্ধার করে আনার পরপরই পূর্ণবয়স্ক দুজন মারা যায়, ধারণা করা হয় কোনো অসুখে মারা গিয়েছিল তারা। কম বয়সী দুজনকে উপহার দিয়ে ফেরত পাঠানো হলে আগের মতোই হারিয়ে যায়। এরপর ব্রিটিশরা এই জনগোষ্ঠীর উপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
খুব সম্ভবত এই জনগোষ্ঠীর সাথে আধুনিক মানুষের সরাসরি যোগাযোগ এখানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। ১৯৬৭ সাল থেকে ভারত সরকার সেন্টিনেল দ্বীপের আদিবাসীদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করে, কিন্তু কখনোই সফল হতে পারেনি। প্রতিবারই নৌকায় করে দ্বীপের কাছাকাছি গেলে আদিবাসীরা তীর মারা শুরু করে। ২০০৬ সালে দুজন জেলে অবৈধভাবে দ্বীপের কাছে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে ভুল করে দ্বীপের কাছে চলে যায়। সেন্টিনেলিজরা দুজনকেই হত্যা করে এবং তীরের কাছে কবর দেয়। এরপর সেনাবাহিনী এবং পুলিশের কর্মকর্তারা সেই লাশ উদ্ধার করতে যেতেও অস্বীকৃতি জানায়।
ভারতীয় আদমশুমারি সংস্থা বিভিন্ন সময় দ্বীপের মোট জনসংখ্যা বের করার চেষ্টা করেছে কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা কখনোই জানা সম্ভব হয়নি। হেলিকপ্টার এবং দূর থেকে পর্যবেক্ষণে ২০০১ সালে ৩৯ জনকে চিহ্নিত করেছিল। প্রায় ৬০ বর্গকিলোমিটারের এই দ্বীপের এটিই যে প্রকৃত জনসংখ্যা না সেটা সহজেই বলা যায়। ২০০৪ সালের ভয়ংকর সুনামির কী প্রভাব পড়েছিল সেন্টিনেলিজদের উপর সেটা দেখার জন্য ভারতীয় নৌবাহিনী হেলিকপ্টার দিয়ে জরিপ করার চেষ্টা করেছিল। এ সময় তারা খাবার এবং সাহায্য দ্রব্যাদি তীরে ফেলে উপর থেকে। কিন্তু হেলিকপ্টার দ্বীপের উপরে যাবার কিছুক্ষণ পরেই জঙ্গল থেকে সেন্টিনেলিজরা হেলিকপ্টার বরাবর তীর মেরে আক্রমণ করলে হেলিকপ্টার সরে আসে। সুনামিতে যে দ্বীপবাসীরা একেবারেই হারিয়ে যায়নি তারই প্রমাণ দেয় এই আক্রমণ।
ভারত সরকার এবং ন্যাশনাল জিওগ্র্যাফির বিভিন্ন সময়ের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে সেন্টিনেলিজদের মধ্যে কৃষি ব্যবস্থা বলে কিছু নেই। এরা মূলত বন্য পশু শিকার, মাছ ধরে খাবার সংগ্রহ করে থাকে। এদের ঘরবাড়িগুলোর কোনো দেয়াল নেই, শুধু মাথার উপর ছাউনির মতো থাকে। আশেপাশে কুড়িয়ে পাওয়া ধাতব সামগ্রী দিয়ে অল্প কিছু জিনিস বানাতে পারলেও ধাতু দিয়ে বেশি কিছু বানাতে পারে না। তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো এরা আগুন জ্বালাতে পারে না, অন্তত বিশেষজ্ঞদের এটাই ধারণা।
বর্তমানে এই দ্বীপের সাথে যোগাযোগের এবং যাবার সকল প্রকার চেষ্টা আইনত দণ্ডনীয়। তবে সরকার এবং বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা সেন্টিনেলিজদের সাথে যোগাযোগ করার মাধ্যম খুঁজে পেতে এখনো উৎসাহী।
করোওয়াই, ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম পাপুয়া রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্বে বাস করা করোওয়াইদের ১৯৭৪ সালের আগে বাইরের পৃথিবী সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না! পাপুয়া নিউ গিনির সীমান্তের কাছে জঙ্গলে এদের বাস। তাদের বিশ্বাস ছিল তারা তাদের এলাকা ছেড়ে বের হলে সবাই মারা যাবে।
১৯৭৪ সালের মার্চ মাসে প্রথমবারের মতো বাইরের পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ হয় করোওয়াইদের। এইল্যানডেন নদীর ১২ মাইল পূর্বে একটি অভিযাত্রী দল ৩০ জন করোওয়াই-এর দেখা পান। তবে নতুন মানুষ দেখে আক্রমণ করে বসেনি তারা, ফলে তাদের সাথে যোগাযোগের একটা সূচনা ঘটে সেখানে।
পরবর্তীতে বিভিন্ন খ্রিস্টান মিশনারী দল করোওয়াইদের মাঝে গিয়ে থাকা শুরু করে এবং আধুনিক সভ্যতার সাথে পরিচিয় ঘটানোর চেষ্টা করে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা সফল হয়নি। ১৯৮০ সালের পর থেকে অনেক করোওয়াই তাদের জঙ্গল ছেড়ে আশেপাশের গ্রামে বাস করা শুরু করে। মূলত শিকার এবং হর্টিকালচারের মাধ্যমে এরা জীবিকা নির্বাহ করে। ১৯৯০ এর প্রথম থেকে করোওয়াইদের এলাকায় কিছু ট্যুরিস্ট যেতে শুরু করে। আধুনিক সভ্যতার সাথে পরিচয় ঘটলেও তারা সেই আগের মতোই রয়েছে। এখনো তীর-ধনুক দিয়ে শিকার করে, পাথরের তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করে এবং পোশাক পরে না বললেই চলে!
করোওয়াইদের ভাষাকে বলা হয় করোওয়াই ভাষা, এটি মূলত দক্ষিণ-পূর্ব পাপুয়ার ভাষাগোত্রের অন্তর্গত। ডাচ মিশনারীরা এই ভাষার একটি ব্যাকরণ এবং অভিধানও তৈরি করেছে।
গবেষকদের ধারণা করোওয়াইরা বর্তমানে তাদের মানুষখেকো স্বভাব থেকে বেরিয়ে এসেছে। তবে করোওয়াইদের অনেকেই দাবি করে তারা কিছু ধর্মীয় বিধানের জন্য এখনো মানুষখেকো রয়ে গিয়েছে। অনেক গোত্র বিদেশী এবং বাইরের লোকদের আক্রমণ না করলেও অনেকেই ধারণা করে যে জঙ্গলের ভেতরে আরো গোত্র থাকতে পারে যারা এখনো বাইরের লোকদের সাক্ষাৎ পায়নি।
গাছের উপরে ঘর বানানো করোওয়াইদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এদের ঘরগুলো গাছের বেশ উপরে বানানো হয়, এর ফলে তারা অন্যান্য গোত্রের সাথে যুদ্ধে অনেক সুবিধা পায়। উপরে বানানোর কারণে কেউ সহজে আগুন ধরিয়ে ক্ষতিও করতে পারে না। ঘন জঙ্গলে থাকার পরেও আলো-বাতাসের সমস্যা হয় না।
ম্যাস্কো-পিরো, আমাজন
বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীর কথা হবে আর আমাজন আসবে না তা কি আর হয়। খুব সম্ভবত আমাজনেই রয়েছে সবচেয়ে বেশি বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠী যাদের অনেকের কথা আমরা এখনো জানিই না। সেরকমই প্রায় অজানা এক গোষ্ঠী হচ্ছে ম্যাস্কো-পিরো।
১৮৯৪ সালে কার্লোস ফিৎজক্যারাল্ড মাস্কো-পিরোদের বিশাল একটা অংশকে হত্যা করে। এরপর ম্যাস্কো-পিরোরা আমাজনের একেবারে ভেতরে চলে যায় এবং দীর্ঘদিন তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে হেলিকপ্টার থেকে ২০ জন ম্যাস্কো-পিরোকে ভিডিও করা হয় অ্যাল্টো পুরুস জাতীয় পার্কের উপর থেকে। ২০১৩ সালে বিবিসির রিপোর্ট অনুযায়ী একদল ম্যাস্কো-পিরো তাদের জঙ্গলের পাশের লোকদের থেকে সাহায্যের জন্য এসেছিল। এ ঘটনার পর পেরু সরকার ম্যাস্কো-পিরোদের সাথে সাধারণ জনগণের যোগাযোগ বন্ধের নির্দেশ দেয়। দীর্ঘদিন সভ্যতার বাইরে থাকা এই জনগোষ্ঠী যেন সহজে রোগে আক্রান্ত না হয় তাই এই নির্দেশনা।
তবে সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনা ঘটে ২০১৪ সালের জুনে, ব্রাজিলে। ৭ জন ম্যাস্কো-পিরো এনভিরা নদীর তীর থেকে পাশের সিম্পাটিয়া গ্রামে আসে সাহায্যের জন্য। খুব সম্ভবত ড্রাগ চোরাচালানকারীদের আক্রমণের শিকার হচ্ছিল তারা, তাদের হাত থেকে রক্ষার জন্যই সাহায্য চাইতে এসেছিল। প্রত্যেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে দুর্বল রোগ প্রতিরোধ শক্তির জন্য, তবে চিকিৎসার মাধ্যমে সবাইকেই সুস্থ করে তোলা হয়।
ম্যাস্কো-পিরোরা সহজে বাইরের মানুষদের আক্রমণ করে না, তবে কয়েকবার সাধারণ মানুষ হত্যার অভিযোগও রয়েছে। এমনকি একটি গ্রাম আক্রমণ করে খাবার এবং বিভিন্ন সামগ্রী লুন্ঠনের অভিযোগ পর্যন্ত আছে তাদের বিরুদ্ধে। তবে সব মিলিয়ে মোটামুটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করে তারা। আধুনিক মানুষের সংস্পর্শে এলেও নিজেদের তারা এখনো সেই আগের মতোই রেখেছে। অন্যান্য বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীর মতো তীর-ধনুক এবং বর্শা তাদের প্রধান অস্ত্র, পোশাক আশাকের বালাইও নেই বললেই চলে।
ব্রাজিল এবং পেরু ম্যাস্কো-পিরোদের সাথে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে, তবে প্রধান বাধা হচ্ছে ভাষা। ম্যাস্কো-পিরোদের ভাষা পুরোপুরি জানে এমন কেউ নেই। ইয়েনে গোত্রের লোকেরা কিছুটা বুঝলেও পুরোটা বুঝে না। ফলে ভাষা সমস্যার কারণে এখনো ভালভাবে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি।
সুর্মা, দক্ষিণ সুদান/ইথিওপিয়া
দক্ষিণ সুদান এবং দক্ষিণ-পশ্চিম ইথিওপিয়ায় বাস করা সুর্মা জনগোষ্ঠীর মানুষদের চেনা যায় তাদের অদ্ভুত সব শারীরিক বৈশিষ্ট্যের জন্য। এসব বৈশিষ্ট্য তাদের জন্মগত নয়, বরং কৃত্রিমভাবে তারা শরীরের বিভিন্ন অংশ বিকৃত করে। সেই সাথে রয়েছে শরীরে বিভিন্ন রকমের রঙ দিয়ে আঁকা কারুকার্য।
সুরি, মুরসি এবং মীন- এই তিনটি গোত্র নিয়ে সুর্মা জনগোষ্ঠী। তিন গোত্রের সংস্কৃতিও মূলত একই রকম। বিচ্ছিন্ন এবং দুর্গম পাহাড়ে বাস করতেই বেশি পছন্দ করে এরা। আশপাশের গোত্রের সাথে লড়াইটাও অনেকটা ঐতিহ্যগত এদের জন্য। তবে অন্যান্য বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীর সাথে পার্থক্য হলো এরা আধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করে। সুদানের গৃহযুদ্ধের সুবাদে এই বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠীর হাতেও উঠে এসেছে একে-৪৭ এর মতো আধুনিক মারণাস্ত্র।
কৃষিকাজ করেই মূলত সুর্মারা জীবন ধারণ করে থাকে। টোবাকো, কফি, বিভিন্ন জাতের কপি চাষ করে থাকে। বিভিন্ন গোত্রের সাথে বিনিময় করে প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করে সুর্মারা। সিংহের চামড়া, জিরাফের লেজ, হাতির দাঁতের বিনিময়ে অস্ত্র সংগ্রহ করে আমহারা এবং শানগালাদের কাছ থেকে।
সুর্মারা বিচ্ছিন্ন হলেও আমাজন জঙ্গলের মতো একেবারে বিচ্ছিন্ন না। অন্যান্য জনপদ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাস করলেও এরা অন্যদের থেকে যথেষ্ট উন্নতই বলা যায়, আধুনিক অটোমেটিক অস্ত্রের ব্যবহার এর বড় প্রমাণ।
মেয়েরা বয়োঃসন্ধিতে পৌঁছলে তাদের নিচের পাটির সব দাঁত ফেলে দিয়ে নিচের ঠোঁট ছিদ্র করা হয়। এরপর সেখানে একটি প্লেট বসিয়ে দেয়া হয়। তাদের সংস্কৃতিতে যার প্লেট যত বড়, সে তত সুন্দর! প্লেটের উপর অনেক কারুকার্যও করা থাকে। তবে বর্তমানে অনেক সুর্মা মেয়েরা এই ঐতিহ্য আর পালন করে না।
আওয়া, ব্রাজিল
বিলীন হয়ে যাওয়ার হুমকিতে থাকা আওয়াদের বাস ব্রাজিলে আমাজনের পূর্বদিকে। ১৮০০ সালের দিকে ইউরোপিয়ানদের হাত থেকে বাঁচার জন্য এরা জঙ্গলে চলে যায় এবং এখনো সেখানেই বসবাস করে। ১৯০০ সালের পর থেকে ব্যাপকহারে গাছ কাটার ফলে এবং আওয়াদের উপর স্থানীয়দের নানারকম অত্যাচারের কারণে তাদের সংখ্যা কমতে কমতে এখন মাত্র ৩০০ তে এসে পৌঁছেছে। এদের মধ্যে ১০০ জন বাইরের পৃথিবীর সাথে কখনোই কোনো যোগাযোগ করেনি।
আওয়ারা বাইরের পৃথিবীর সাথে অল্প কিছু যোগাযোগ করলেও তারা তাদের ঐতিহ্য মতেই জীবনযাপন করে। তারা মূলত পশু শিকারী, তবে সব পশু শিকার করে না। তাদের নিষিদ্ধ পশুর তালিকা আছে, সেই সাথে আছে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পশু হত্যা না করার নিয়ম। তাদের শিকারের মূল অস্ত্র তীর-ধনুক আর বর্শা।
আওয়ারা বাইরের মানুষদের সরাসরি আক্রমণ না করলেও বাইরের মানুষের আক্রমণে তাদের নিজেদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। আমাজনে অবৈধ কাঠের ব্যবসায়ীদের অত্যাচার থেকে আওয়াদের বাঁচাতে ব্রাজিলিয়ান সরকার সেনাবাহিনী পর্যন্ত নামিয়েছিল ২০১৪ সালে। সরকার তাদের জন্য আলাদা জায়গা করে দিলেও অবৈধ কাঠ ব্যবসায়ীদের অত্যাচার থেকে কোনোভাবেই রক্ষা করতে পারছে না আওয়াদের। ফলে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই এখন লড়তে হচ্ছে আওয়াদের।