উপহার পেতে কে না ভালোবাসে! আর বর্তমান সময়ে উপহার দেওয়াতেও কার্পন্য বোধ করেন না কেউই। দেখা গেছে যে, শুধু যুক্তরাজ্যে প্রতি ঘরে কোনো উপলক্ষে প্রায় ৫০০ ডলার খরচ করা হয় শুধু উপহার কেনার পেছনেই। আর আমেরিকানদের বেলায় সেটি ৬৫০ ডলার। উপহার শুধু অন্য মানুষকে আনন্দিতই করে না, বরং দুইজনের সম্পর্কের উষ্ণতাও বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে উপহার বাছাই করাটা বেশ কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়ায় অনেকসময়। সে ক্ষেত্রে আপনি কীভাবে উপহার বাছাই করবেন, তা-ই নিয়ে আজকের এই আয়োজন।
দাম নিয়ে চিন্তা না করুন
গবেষণায় দেখা গেছে যে, বেশি খরচ করলেই যে আকর্ষণীয় উপহার দিতে পারবেন তা নয়। আরেকটি ব্যাপার হলো আপনি যখন কাউকে অনেক দামী উপহার দেবেন, তখন আপনি সেটির জন্য বেশি প্রশংসাও প্রত্যাশা করবেন। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রশংসা উপহারের মূল্যের উপর নির্ভর করে না। তাই সে ক্ষেত্রে আপনি কিছুটা আশাহতও হবেন। পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর জেফ গালাকের মতে ব্যাপারটি অনেকটা মনস্তাত্ত্বিক। আপনি আপনার দামের একটি সীমা নির্দিষ্ট করে রাখতে পারেন। কিন্তু উপহার কিনে ফেলার পর দামের চেয়ে কী উপহার দিলেন- সেটিই বরং মুুুখ্য হয়ে দাঁড়ায়।
উপহার দেওয়ার কারণকে গুরুত্ব দিন
উপহার দেওয়ার নানা কারণ থাকতে পারে। কিন্তু উপহার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আপনাকে উপহার দেওয়ার কারণকে দিতে হবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব। সাধারণত আমরা কারো জন্মদিন, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান, বিবাহবার্ষিকী কিংবা কোনো নতুন অবস্থানে পদার্পন করার জন্য উপহার দিয়ে থাকি। এখানে খেয়াল করলে দেখা যাবে যে প্রতিটি বিভাগের জন্য আলাদা আলাদা ধরনের উপহার সামগ্রী পেয়ে থাকবেন আপনি। কারো জন্মদিন উপলক্ষে দেওয়া উপহার আর বিবাহবার্ষিকীর জন্য দেওয়া উপহারে অবশ্যই আপনাকে পার্থক্য আনতে হবে।
বেশি সময়ের দিকে নজর দিন
আপনাকে কেউ যদি উপহারস্বরুপ একটি মুভি থিয়েটারে নিয়ে যায় অথবা তার বদলে এক মাসের জন্য নেটফ্লিক্সে মুভি বা সিরিজ দেখার ব্যবস্থা করে দেয়- তাহলে আপনি কোনটিতে খুশি হবেন? এ ক্ষেত্রে দুটির খরচই কিন্তু প্রায় সমান। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই দ্বিতীয় অপশনটি বাছাই করবে। কারণ মানুষ এমন কিছু উপহার পেতে পছন্দ করে যেটি কিনা অনেকদিন ব্যবহার করে যাতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়, যিনি উপহার দিচ্ছেন, তিনি ওই মূহুর্তের জন্য উপহার ব্যক্তির অভিব্যক্তি দেখতে চান। গিফটবক্স খোলার আগ মূহুর্তের হাসিই বলতে গেলে এক ধরনের প্রশংসা। কিন্তু বেশি সময় ধরে ব্যবহারযোগ্য কিছু দিলে আপনি হয়তো তৎক্ষনাৎ তার পুরো অভিব্যক্তি পাবেন না, যেটি পাবেন তড়িত কোনো সারপ্রাইজ গিফটে। তবে জেফ গালাকের মতে উপহার পাওয়া ব্যক্তি সবার আগে চিন্তা করে এটি ব্যবহারের সময়কাল নিয়ে- কতদিন তিনি তা ব্যবহার করতে পারবেন। তাই উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘লংটার্ম’ শব্দটির ওপর জোর দেওয়া আবশ্যক।
উপহার উপস্থাপন
উপহার উপস্থাপনে অনেকে জোর না দিলেও এই কাজটি আপনার অনুভূতি নিয়ে উপহার পাওয়া ব্যক্তিকে কিছুটা ধারণা দেবে। আজকাল সাধারণত র্যাপিং পেপার মুড়েই উপহার উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু আপনি চাইলেই ব্যাপারটিকে আরো সৃজনশীল ও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন। ছোট কিছু লিখে দেওয়া কিংবা সাথে কোনো উইশকার্ডও উপহার পাওয়া ব্যক্তিকে উদ্বেলিত করতে পারে। তাই উপহার উপস্থাপনের ব্যাপারটিকেও চিন্তায় রাখা উচিত।
অনন্যতার ব্যাপার পরিহার করুন
উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা বেশিরভাগ সময়ই চেষ্টা করি একেবারে আলাদা কিছু দেওয়ার জন্য। আমাদের ধারণা, আলাদা বা অনন্য কিছু পেলেই হয়তো অপর ব্যক্তিটি সর্বোচ্চ খুশি হবেন। অথচ বৈচিত্র্য আনতে গিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপহার পাওয়া ব্যক্তি খুশি হলেও, তা বাস্তব জীবনে খুব কম কাজেই লাগে তার।
গবেষণায় দেখা গেছে, আপনি যদি কারো ইউনিকনেসের উপর ভিত্তি করে উপহার দিতে যান, তাহলে সেই উপহারে তাদের পছন্দ কিংবা চাওয়া উপেক্ষিতই থেকে যায়। কেননা একজন মানুষের অনন্যতা ও পছন্দ- দুইটি সম্পূর্ণরুপে ভিন্ন প্রশ্ন।
আরেকটি ব্যাপার দেখা গেছে। একদল লোকের সবাইকে একই সময়ে আলাদা আলাদা উপহার দিতে গেলে তাদের নিজেদের মধ্যেই সেই উপহার নিয়ে তুলনা হয়। সে ক্ষেত্রে ইউনিকনেস পরিহার করে একই ধরনের উপহার দেওয়াই উত্তম কাজ।
নিজদের ভেতরের মিলকে প্রাধান্য দিন
অক্সফোর্ডের সাইকোলোজি বিভাগের প্রফেসর ডানের মতে, ভালো উপহারের দিতে পারার পেছনে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টরটি হলো- উপহার দেওয়া ও নেওয়া এই দুই ব্যক্তির মনের মিলের প্রাধান্য। নিজের পছন্দকে অগ্রাধিকার না দিয়ে দুইজনের আগ্রহের বিষয়কে সামনে নিয়ে এসেই উপহার কিনা উচিত আমাদের।
কারণ, মানুষ সাধারণত নিজেদের পছন্দের জিনিস কিনতে বেশি পটু। তাই আপনাকে এমন কিছু বাছাই করতে হবে, যেটি আপনার সাথে যাকে উপহার দেবেন- তারও পছন্দ। এতে করে সেই বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে আপনি সবচেয়ে ভালো উপহারটিই দিতে পারবেন আপনার প্রিয়জনকে।
জিজ্ঞেস করুন সে কি চায়
প্রফেসর ডানের মতে যদি আপনি নিজেদের মধ্যে কোনো বিষয়েই কোনো শক্ত মিল খুঁজে না পান, তাহলে আপনার উচিত তাকে জিজ্ঞেস করা যে, সে কি চায়। গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ না চাওয়া উপহার থেকে নিজের চাওয়া উপহার পেতে বেশি ভালোবাসে ও তাতে বেশি আনন্দিতও হয়।
তবে উপহারের ব্যাপারে অনেকের অভিমত এই যে, উপহার জিনিসটি সারপ্রাইজিং হওয়া উচিত। সে হিসেবে আপনি যদি জিজ্ঞেস করে উপহার দিতে চান, তবে বিস্মিত করার ব্যাপারটি আর থাকবে না। যদিও সারপ্রাইজের সাথে ভালো উপহারের ওরকম কোনো সম্পর্ক নেই- এমনটাও অনেক গবেষণা বলে থাকে। তাই আপনার অগ্রাধিকার যদি হয় ভালো উপহার দেওয়া, তাহলে সেখানে জিজ্ঞেস করেই উপহার দেওয়া উচিত।
বেশি চিন্তা করা বর্জন করুন
আর সবচেয়ে বড় কথা দিনশেষে বেশি চিন্তা করা বর্জন করুন। খারাপ উপহার খুব কমই হয়ে থাকে। একেবারেই অসামঞ্জস্য না হলে উপহার পাওয়া ব্যক্তি কমবেশি খুশি হবেনই।
প্রফেসর গালাক বলেন, তিনি প্রায় হাজারখানেক মানুষকে জিজ্ঞেস করেছেন তাদের উপহারের বিষয় নিয়ে; খুব কম মানুষের ক্ষেত্রেই এমন হয়েছে যে, তারা উপহারটি পছন্দ করেননি। অনেক সময় খারাপ উপহার পেলেও ব্যক্তি চিন্তা করবে যে, কেন আপনি এই উপহারটি বাছাই করেছেন। তখন আপনার উপহার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে শ্রম ও সময় দেওয়ার জন্যও আপনার তারিফ করবে তারা।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর নিকোলাস এপলির মতে, যখন কেউ হতবুদ্ধিকর কাজ করবে, তখন সবাই এর পেছনের কারণ জানতে চাইবে। খারাপ উপহারও ঠিক এইরকম। এ ক্ষেত্রে কেউ আপনার দেওয়া খারাপ উপহারের পেছনের কারন খুঁজতে গিয়েই আপনার প্রচেষ্টার কথা চিন্তা করেই খুশি থাকবে!
তাই দিনশেষে উপহার কী দেবেন, কখন দেবেন এতসব নিয়ে বেশি চিন্তা না করাই শ্রেয়।
চমৎকার, জানা-অজানা সব বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: https://roar.media/contribute/