Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

শীতের দিনেও হাসুক শিশু

শীতে নিজের ত্বকের যত্ন নিয়ে তো ভাবছেন, কিন্তু আপনার শিশুর ব্যাপারেও একই ভাবনা ভাবছেন তো? শীত এলেই আমরা নানারকম প্রসাধনী ব্যবহার শুরু করে দিই নিজেদের ত্বককে শীতের রুক্ষতা থেকে বাঁচাতে। লোশন, মাস্ক, অয়েল ট্রিটমেন্ট, গ্লিসারিন সহ আরো অনেক কিছুই আমরা ব্যবহার করি। তবে আপনার চেয়েও শীতকালে যার ত্বক বেশী নাজুক অবস্থায় পড়ে যায় সে হচ্ছে আপনার শিশু। হয়তো সে কিছু বলতে বা বোঝাতে পারবে না আপনাকে, তবে শিশুর ত্বক একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের চাইতে অনেক বেশী কোমল আর অরক্ষিত থাকে। শীত এলে তাই সেই প্রভাব প্রথমে পড়ে আপনার ছোট্ট সোনামণির উপরেই। ভাবছেন, শীতে প্রতিদিন লোশন তো মাখিয়েই দিই, তাহলে? কেবল লোশনের সাহায্যে আপনার শিশুকে শীতের শুষ্কতার হাত থেকে দূরে রাখতে পারবেন না আপনি। তার খাবার থেকে শুরু করে পোশাক, সূর্যের আলো- সবকিছুই থাকতে হবে পরিমিত। তাহলে আপনার শিশুটিও এই শীতে থাকবে সুস্থ আর হাসিখুশী।

প্রথমত, শীত এলেই আমাদের ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। আর এই শুষ্কতা ছাড়ে না শিশুর কোমল ত্বককেও। আপনি যদি চান নিজের শিশুর ত্বককে সবসময়ের মতন এই শীতেও কোমল আর মোলায়েম রাখতে, তাহলে বেশকিছু ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে আপনার।

অনেক ভারী পোশাক নয়

খেয়াল রাখুন শিশুকে যেত অতিরিক্ত কাপড় না পড়ানো হয়; Source: blog.nwf

শীতে শিশুকে ঠান্ডা থেকে বাঁচাতে অনেক বাবা-মা প্রচুর কাপড় ব্যবহার করেন। যেন অনেকগুলো পোশাক পরিয়ে দিলেই শিশুর সমস্ত ঠান্ডা, খারাপ লাগা- সব গায়েব হয়ে যাবে। বাস্তবে কিন্তু ব্যাপারটা একেবারেই তা না। সাধারণত, শীতে প্রাপ্তবয়স্কদের চাইতে এক পরত বেশী কাপড়ের প্রয়োজন হয় শিশুদের। এর বেশি না। আপনার শিশুকে পোশাক পরিয়ে দেওয়ার পর তার কাপড়ের নীচে হাত দিন। দেখুন শিশুর শরীর গরম আছে কিনা। অতিরিক্ত গরম বা ঘর্মাক্ত মনে হলে কাপড়ের পরিমাণ কমিয়ে দিন। মাঝেমধ্যে অতিরিক্ত কাপড়ের কারণে শিশুদের ত্বকে র‍্যাশ দেখা দেয়। তেমনটা হলে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।

হাত এবং মাথা ঢেকে রাখুন                       

সারা শরীরে কাপড় পরিয়ে দিলেও শিশুদের হাত এবং মাথা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাইরে থাকে। তাই আপনার শিশুকে কোলে নিয়ে বাইরে বের হওয়ার সময় তার মাথা আর হাত ভালো করে ঢেকে দিন। দরকার পড়লে তার চেহারার উপরে একটি পাতলা কাপড়ের আস্তরন দিয়ে রাখুন। এতে করে তার ঠান্ডার ভাব কমে যাবে।

গোসলে গরম পানি নয়

শিশুর গোসলের পানির দিকে খেয়াল রাখুন, যেন সেটা বেশী গরম না হয়ে যায়। Source: Pinterest

অনেক মা-বাবাই শিশুকে শীতকালে গরম পানি দিয়ে গোসল করিয়ে দেন। তবে খেয়াল রাখবেন, পানিটা যেন অনেক বেশি গরম না হয়ে যায়। গোসলের পানি আরামদায়ক হতে পারে, গরম নয়। গরম পানি ত্বকের ময়েশ্চারের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। তাই গরম পানিতে শিশুকে গোসল করানো থেকে বিরত থাকুন। শুধু তা-ই নয়, গোসলের সময়টাকেও সংক্ষিপ্ত করে ফেলুন। খুব ছোট শিশু হলে তাকে পাঁচ মিনিটের বেশি গোসল করাবেন না। নাহলে তার শরীরের ময়েশ্চার কমে গিয়ে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়বে।

ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন

শিশুকে গোসল করানোর পর তার শরীরকে ময়েশ্চারাইজ করুন। সেটা লোশন দিয়েই হোক কিংবা কোনো ভ্যাসলিন বা জেলী দিয়ে। বাজারে নানারকম ময়েশ্চারাইজার কিনতে পাওয়া যায়। গোসলের পর সেগুলোর ভেতরে উন্নত ও ভালো মানের ময়েশ্চারাইজারটি ব্যবহার করুন আপনার শিশুর শরীরে।

চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন

আপনার শিশুর যদি শীতে সাথে কোনো সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে তাকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। শীত এলেই অনেকের ত্বক লাল হয়ে যায়, অনেকের চামড়া শুকিয়ে কালো হয়ে যায়, কারো ত্বক অত্যন্ত শুষ্ক হয়ে পড়ে, চুলকানি দেখা দেয়- এরকম কোনো সমস্যা আপনার শিশুর হয়ে থাকলে তাকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।

এ তো গেল শীতকালে শিশুর ত্বকের যত্ন নিয়ে কথা। তবে কেবল এটুকুই নয়, শিশুর খাবারের দিকেও আপনাকে নজর রাখতে হবে শীতকালে। শীতকালে শিশু যেটাই মুখে দিতে যাবে, সেটাকেই বারবার পরিষ্কার করে ফেলুন। শীতে ধুলোবালি বেশি থাকায় খাবার ও জিনিসপাতি বেশী ময়লা হয়ে যায়। তাই শিশুকে কোনো খাবার দেওয়ার আগে সেটা যে জীবাণুমুক্ত তা নিশ্চিত করে নিন।

শীতকালে ঠান্ডা, সর্দির মতন নানারকম অসুখ লেগেই থাকে। এসব রোগের বিরুদ্ধে শরীরকে শক্তিশালী করে তুলতে ভিটামিন সি যুক্ত খাবারগুলো আপনার শিশুকে বেশী করে খাওয়ান। তাতে তার শরীর রোগ প্রতিরোধ করতে পারবে এবং সুস্থ হয়ে উঠবে।

খেয়াল রাখুন যেন শিশুর শরীরে অসুখ এসে বাঁধা না বাধে Source: Parents Magazine

খাবারের পাশাপাশি শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করান শীতকালেও। আপনার শিশুটি নিশ্চয়ই পানি না পান করতে পারলেই খুশী হবে। কিন্তু খুশীর চাইতে সুস্থতা বেশী দরকারি। তাই শিশুর শরীরকে সতেজ রাখতে তাকে প্রচুর পানি পান করান।

ত্বক এবং খাবারের পর এই শীতে আপনার শিশুর সুস্থতায় যে কাজটি আপনি করতে পারেন সেটা হলো নিজেকে পরিচ্ছন্ন ও সুস্থ রাখা। আপনার শিশু আপনার হাতেই খাবার খায়। তাই আপনার হাত যদি পরিষ্কার না থাকে তাহলে সে সহজেই রোগাক্রান্ত হতে পারে। আপনি কোনো কারণে অসুস্থ হলে সেই অসুখ (ফ্লু জাতীয়) ছড়িয়ে পড়তে পারে তার শরীরেও। বিশেষ করে আপনার শিশুটি যদি মায়ের দুধ পান করে নিয়মিত, তাহলে আপনার শারীরিক অসুস্থতা তাকেও প্রভাবিত করবে সহজেই। তাই শিশুকে খাওানোর আগে ভালো করে নিজের হাত পরিষ্কার করুন। বাইরে থেকে এসে ধুলোমাখা জামা নিয়ে শিশুকে কোলে তুলে নেবেন না। আর সর্বোপরি, নিজেকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করুন। কারণ আপনার সুস্থতাতেই শিশুর সুস্থতা!

এতকিছু করার পরেও যদি আপনার ছোট্ট সোনামণি অসুস্থ হয়ে পড়ে, যদি সর্দিতে আক্রান্ত হয়, তাহলে ঘরে বসেই কিছু ব্যবস্থা নিতে পারেন আপনি। শিশু একেবারে বাচ্চা হোক কিংবা খানিকটা বড়- নাক বন্ধ হয়ে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হলে শিশুকে নিয়ে বাথরুমে যান। সেখানে গরম পানি ছেড়ে দিয়ে পুরো জায়গায় গরম ভাব নিয়ে আসুন। দেখবেন আপনার শিশুর নিঃশ্বাস নিতে আর কষ্ট হচ্ছে না।

আর আপনার শিশু যদি হয় একেবারে ছোট, তাহলে তাকে কোলের উপরে নিয়ে উল্টো করে শুইয়ে দিন। এরপর তার পিঠের উপরে হালকা করে চাপ দিতে থাকুন। চাপ যেন মৃদু হয় সেটা মাথায় রাখতে হবে। দেখবেন, এভাবেও আপনার ছোট্ট বাচ্চাটা আর কষ্ট পাচ্ছে না।

আপনার শিশুটি যদি একেবারেই ছোট, অর্থাৎ সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু হয়, তাহলে মায়ের বুকের দুধই তার সব রোগের সবচাইতে বড় প্রতিষেধক। তাই তাকে নিয়মিত দুধ পান করান। শীতকালে শিশুর শরীরে রক্ত চলাচলে ঝামেলা হতে পারে। সেটা থেকে দূরে থাকতে মাঝে মাঝেই শিশুর শরীরে হালকা ম্যাসাজ করে দিন। এতে করে তার শরীরের রক্ত চলাচল ঠিকঠাক থাকবে। আর সেইসাথে সুস্থ থাকবে সে-ও!

শিশুর শরীরে ম্যাসাজ করে দিন  Source: Babycenter

শিশুর একটি প্রাণখোলা হাসিতে সুন্দর হয়ে ওঠে অনেক বিচ্ছিরি আর বাজে দিনও। অনেক কষ্টের ভেতরেও ফোকলা দাঁতের মিষ্টি হাসিতে মন ভালো হয়ে যায়। আর সেই হাসি যদি হয় নিজের নাড়ি ছেড়া ধন, নিজের সন্তানের, তাহলে তো তার কোনো তুলনাই নেই! তাই খুব যত্নে আগলে রাখুন আপনার শিশুর প্রতিটি হাসিমাখা মুহূর্ত এই শীতেও।

ফিচার ইমেজ- Today Indians

Related Articles