গরমের দিনে চুল রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। প্রচণ্ড রোদ আর গরমে স্ক্যাল্প ঘেমে অ্যালার্জি, চুল একেবারে নিষ্প্রাণ হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলো তো আছেই! তবে এই সমস্যাগুলোর যে কোনো সমাধান নেই তা কিন্তু না। দেখে নিন কাঠফাটা গরমের এই দিনেও চুলকে ঝলমলে ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখার কয়েকটি টিপস।
চুল নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন
ধূলাবালি ও দূষণের কারণে চুল ময়লা হয় এবং সেই সাথে গরমের কারণে স্ক্যাল্প ঘেমে যায়। এই ধূলাবালি ও ঘাম এক হয়ে পরবর্তীতে চুলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে। তাই প্রতিদিন বাইরে থেকে এসেই শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে চুল পরিষ্কার করতে ভুলবেন না। তবে অবশ্যই হালকা বা মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন।
চুলকে ঘাম থেকে রেহাই দিন, কন্ডিশনার ব্যবহার করুন
গরমের দিনে আবহাওয়ায় আর্দ্রতা থাকার কারণে চুলে রুক্ষতা আর শুষ্কতা দেখা দেয় এবং খুব সহজেই জট বেঁধে যায়। তাই গরমের দিনে চুলকে গভীর থেকে কন্ডিশন করা দরকার। শ্যাম্পু করার পর চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। প্রতিবার শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার দিতে না পারলেও সপ্তাহে অন্তত একদিন অবশ্যই চুলে কন্ডিশনার দিন।
যথেষ্ট পরিমাণ হাইড্রেটেড থাকুন
শুধু গরমের দিনেই না, শরীরে পরিমিত পরিমাণ পানির সুফলের কথা বলে শেষ করা যাবে না। আর গরমের দিনে এ চাহিদার কথা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না! কারণ গরমের দিনে ঘাম থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে আমাদের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বেরিয়ে যায়। এই পানির চাহিদা পূরণে যে শুধু পানিই পান করতে হবে তা কিন্তু নয়! পানি ছাড়াও আপনি পান করতে পারেন জুস, ক্লিয়ার স্যুপ এবং ফলমূল, যেমন- তরমুজ, লিচু, তালের শাঁস ইত্যাদি।
প্রাকৃতিক উপায়ে চুলের যত্ন নিন
গ্রীষ্মকালে আর্দ্রতা আর সূর্যের প্রখর তাপের জন্য চুল ঘেমে চুল পড়ার সমস্যা বেড়ে যায়। আর চুল পড়ার এই সমস্যার সমাধান কেমিক্যালযুক্ত পণ্য ব্যবহারের মাধ্যমে কখনোই পাওয়া সম্ভব না। তাই প্রাকৃতিক কয়েকটি হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করে চুলের যত্ন নিতে পারেন।
১। কলা, টক দই, মধু ও ডিমের হেয়ার মাস্ক
চুল পড়ার সমস্যা সমাধানে ডিম বেশ কার্যকরী। কারণ ডিম চুলের ফলিকল মজবুত করে চুল পড়া কমায়। কলাতে আছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পটাশিয়াম যা রুক্ষ চুলকে ময়েশ্চারাইজ করে। এছাড়া কন্ডিশনার হিসেবে টক দইয়ের কোনো তুলনা নেই। মধু চুলকে ময়েশ্চারাইজ করতে বেশ কার্যকর! এই ৩টি উপাদান একসাথে মিশিয়ে পেয়ে যাবেন একটি দারুণ হেয়ার মাস্ক। একটি বাটিতে ডিম ভেঙে ফেটে নিন। এরপর এতে ৪ টেবিল চামচ টক দই ও ২ চা চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এই মাস্কটি স্ক্যাল্পসহ সব চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
২। জবা ফুল, টক দই ও নারিকেল তেলের মাস্ক
গ্রীষ্মকালে চুলের ফলিকলগুলো কার্যকরী না থাকায় চুল পড়ার সমস্যাটি বেশ বেড়ে যায়। চুল পড়ার সমস্যাটি এড়াতে পারেন এই মাস্ক ব্যবহার করে। জবা ফুল মূলত চুলের গোড়া শক্ত করে। একটি বাটিতে জবা ফুলের কিছু পাঁপড়ি ভিজিয়ে কয়েক ঘণ্টা রেখে দিন। এরপর এর সাথে টক দই ও নারিকেল তেল মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। মাস্কটি লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন। এই মাস্কটি চুলের গোড়া শক্ত করা ছাড়াও চুলকে করবে নরম ও ঝলমলে।
৩। মেথি ও টক দইয়ের হেয়ার মাস্ক
সূর্যের প্রচণ্ড তাপে অসহ্য গরম মানেই তেল চিটচিটে চুল আর স্ক্যাল্পে আঠালো ভাব। আর এ কারণেই চুলে দেখা দেয় খুশকির সমস্যা। মেথি খুশকির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। পানিতে ২ টেবিল চামচ মেথি ভিজিয়ে সারা রাত রেখে দিন। সকালে এই ভেজানো মেথি বেটে এর সাথে টক দই যোগ করে পেস্ট তৈরি করে নিন। ২০ মিনিট রেখে চুল ধুয়ে ফেলুন।
নিয়মিত আগা কাটতে (ট্রিম করতে) ভুলবেন না
গরমের দিনে চুল রুক্ষ হয়ে যাওয়ায় খুব সহজেই এবং ঘন ঘন চুলের আগা ফেটে যায়। চুলের এই আগা ফাটা অবস্থায় আপনি যতই যত্ন নেন না কেন চুল কিন্তু দেখতে ভালো লাগবে না! তাই নিয়ম করে প্রতি ৩-৪ মাস বা ১২-১৬ সপ্তাহ অন্তর অন্তর চুলের আগা কাটুন। আর আগা কাটার পর অবশ্যই চুলে তেল দিন।
অয়েল ম্যাসাজটা বেশ দরকার
গরমের দিনে স্ক্যাল্পে জমা ধূলা-ময়লা থেকে রেহাই পেতে স্ক্যাল্পে নিয়মিত অয়েল ম্যাসাজ করুন। এতে স্ক্যাল্পে ব্লাড সার্কুলেশন ভালো হয় এবং চুলের আগাও মজবুত হয়। বিশেষ করে শ্যাম্পু করার আগে তেল হালকা গরম করে তাতে তুলা ভিজিয়ে প্রথমে স্ক্যাল্পে দিয়ে তারপর পুরো চুলে তেল লাগান। এতে করে বেশি ভালো ফলাফল পাবেন।
সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি চুলের জন্য ক্ষতিকর
সরাসরি সূর্যের তাপে চুল রুক্ষ হয়ে যায় এবং স্ক্যাল্পে ঘাম জমে অ্যালার্জি হতে পারে। তাই রোদে বের হওয়ার সময় ছাতা ব্যবহার করুন অথবা সুতি কাপড়ের পাতলা স্কার্ফ মাথায় দিতে পারেন। এছাড়াও মুখে সানস্ক্রিন ব্যবহার করার পর হাতে যতটুকু থাকে তা চুলে লাগিয়ে দিন। এতে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে আপনার চুল সুরক্ষিত থাকবে।
হেয়ার ড্রায়ার যথাসম্ভব কম ব্যবহার করুন
গরমের দিনে এমনিতেই চুলে বেশি তাপ লাগে। তাই হেয়ার ড্রায়ারের তাপ চুলে লাগলে চুল বেশি শুষ্ক আর নিষ্প্রাণ হয়ে যেতে পারে। যদিও তাড়াহুড়ার কারণে মাঝে মাঝেই দেখা যায় হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার না করে কোনো উপায় নেই। সেক্ষেত্রে বাইরে যাওয়ার বেশ খানিকটা আগেই গোসল করে নিন যেন খুব অল্প সময়ে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহারেই চুল শুকিয়ে যায়।
চুলের এক্সট্রা যত্ন নিতে ব্যবহার করতে পারেন ভিনেগার
শ্যাম্পু করার আগে চুলে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার দিয়ে কুসুম গরম পানিতে ধুয়ে নিন। এতে আপনার খুশকি চলে যাবে এবং চুল হবে ঝলমলে ও উজ্জ্বল।
টাইট হেয়ার স্টাইল থেকে বিরত থাকুন
গরমের দিনে এমনিই সহজে স্ক্যাল্প ঘেমে যায়। চুলও যদি খুব আঁটসাঁট করে বাঁধা থাকে তাহলে তো ঘামের পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে। তাই হালকা করে চুল বাঁধুন এবং চুল খোপা করার মতো বড় হলে হাত খোপা করে ক্লিপ দিয়ে আঁটকে রাখুন। এতে করে মাঝে মাঝে চুলটা একটু ছেড়ে রাখতে পারবেন এবং স্ক্যাল্পে ঘামও কম হবে।
মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করুন
যেহেতু আর্দ্রতার কারণে গ্রীষ্মকালে সহজেই চুল রুক্ষ হয়ে যায় এবং জট বেঁধে যায়, তাই চিকন দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ালে জট খুলতে খুব কষ্ট হয় আর এজন্য চুল ছিঁড়েও যায়। তাই ব্রাশ বা চিকন চিরুনি বাদ দিয়ে মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ান।
নিজের চুল কার না প্রিয়? কিন্তু শুধু প্রিয় হলেই তো আর হবে না, প্রিয় জিনিস সযত্নে আগলে রাখতে চাই সঠিক পরিচর্যা। তাই গ্রীষ্মকালে চুলের প্রতি সচেতন হতে অবলম্বন করতে পারেন এসব টিপস!