ঘুমের সমস্যা সমাধানে ১৫টি কার্যকর টিপস

আমাদের আশেপাশে একটু খুঁজলেই দেখা যাবে, এমন মানুষ খুব কমই আছে যারা রাতে একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারেন অথবা সকালে উঠেই যার মনে হয় রাতের ঘুমটা যথেষ্ট ছিল। কিন্তু তার মানে আবার এটাও নয় যে যারা রাতে খুব শান্তিতে ঘুমিয়ে পার করছেন তাদের সংখ্যাও কম। রাতে একটি পরিপূর্ণ ঘুমই পরদিন পুরোটা সময় শক্তি, মানসিক ভারসাম্য এবং শারীরিক প্রশান্তির যোগানদাতা। তাহলে চলুন, দেখে নেয়া যাক কীভাবে আমরাও ভিড়তে পারি শান্তিতে ঘুমোতে পারা মানুষগুলোর দলে।

১. নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান এবং ঘুম থেকে উঠুন

সময়মতো ঘুমাতে যান; ছবিসূত্রঃ 218tv.net

ঘুমাতে যাবার এবং ঘুম থেকে উঠার একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করুন। ছুটির দিনেও এই সময় মেনে চলুন। খুব বেশি হলে ১৫/২০ মিনিট এদিক সেদিক করতে পারেন। কিন্তু এর বেশি নয়। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য ৭-৮ ঘণ্টা এবং ১৮ বছরের কম বয়সী তরুণ বা তরুণীদের জন্য সাড়ে ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুম খুবই জরুরী।

২. লেগে থাকুন

কোনো অবস্থাতেই নির্দিষ্ট সময়ের এদিক সেদিক করবেন না। অভ্যাসটা শুরু করার পর হয়ত খুব ক্লান্তি আসবে, সকালে বিছানা ছাড়া কষ্টকর হবে অথবা সারা রাত নির্ঘুম কাটবে, তবুও নির্দিষ্ট সময়ে বিছানায় যান এবং নির্ধারিত সময়ে বিছানা ছাড়ুন

ছুটির দিনেও ঘুমের সময় থাকুক অপরিবর্তিত; ছবিসূত্রঃ wikihow.com

৩. শরীরের চাহিদা বুঝুন

বুঝতে চেষ্টা করুন ঠিক কোন সময়ে আপনার ঘুম আসছে। সেই সময়ের পরিবেশ লক্ষ্য করুন। হয়তো যখন চারপাশ নিশ্চুপ থাকে আপনি তখন ঘুমাতে পারেন, হয়তবা লাইট জ্বেলে রাখলে আপনার ঘুম হয় না কিংবা রুমের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে কমে নেমে আসলে আপনার চোখের পাতা ভারী হয়। এসব ছোট ছোট দিকে খেয়াল রাখুন। ঠিক এ পরিবেশটাই আপনি আপনার নির্ধারিত সময়ে সৃষ্টি করতে পারলে ঘুম আসতে বাধ্য।

রুমের পরিবেশ বদলে ফেলুন; ছবিসূত্রঃ wikihow.com

৪. ঘুমানোর আগে কিছু ধরাবাঁধা কাজ রাখুন

প্রত্যেকদিন ঘুমানোর আগে কিছু কাজ ঠিক করুন। সেটা হতে পারে পরদিনের জন্য গোছগাছ করা, হতে পারে হালকা গান শোনা অথবা যেকোনো হালকা কাজ। এই কাজগুলো যখন করবেন তখন আপনার মস্তিষ্ক তাতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে এবং ধীরে ধীরে কাজগুলো করার কিছুক্ষণ পরেই আপনার ঘুম আসবে।

৫. বিছানায় যান শুধুমাত্র ঘুমের সময়

অনেকেরই বিকেলে একটু শোবার অভ্যাস থাকে অথবা সন্ধ্যায় শুয়ে শুয়ে বই, ম্যাগাজিন এবং পত্রিকা ইত্যাদি পড়ার অভ্যাস থাকে। এগুলো পরিত্যাগ করুন। সামান্যতম বিশ্রামেও আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

৬. ক্যাফেইনকে ‘না’ বলুন

ক্যাফেইনকে ‘না’ বলুন; ছবিসূত্রঃ sofra.info

আপনার যদি খুব চা-কফি বা কোমল পানীয় পান করার অভ্যাস থাকে, তাহলে আপনার জন্য দুঃসংবাদ। এগুলোর সাথে আপনাকে আড়ি দিতে হবে। কারণ এসবে প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইন থাকে যা আপনাকে ঘুম থেকে বিরত রাখে। অন্তত আপনি যে সময়টি ঘুমের জন্য নির্ধারণ করেছেন, তার ৪-৫ ঘণ্টা আগপর্যন্ত এ জাতীয় কোনো পানীয় পান করবেন না।

৭. রুমে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আসতে দিন

দিনের আলো-বাতাস শরীরের চামড়ায় বিশেষ প্রভাব ফেলে। লক্ষ্য করে দেখবেন, যদি আপনি খুব ভোরে উঠে বাহিরে খোলা জায়গায় হেঁটে আসেন, তাহলে আপনার সারাটা দিন শরীর এবং মন বেশ চাঙ্গা থাকে। তাই রুমে খুব ভালো ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা রাখুন।

রুমে আলো বাতাস আসতে দিন; ছবিসূত্রঃ wikihow.com

৮. ব্যায়াম করুন

শরীর ফিট রাখতে ব্যায়ামের জুড়ি নেই। কিন্তু আপনি জানেন কি এই ব্যায়াম আপনাকে ঘুমের ব্যাপারেও বিশেষ সহায়তা করে? প্রতিদিন সকালে খালি পেটে আধ ঘণ্টা ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলুন। দেখবেন ম্যাজিকের মতো চোখে ঘুম আসতে শুরু করেছে!

ব্যায়ামে শরীরে ঘুমের চাহিদা বাড়ে; ছবিসূত্রঃ wondrlust.com

৯. রাতে হালকা খাবার খান

রাতে কখনোই একেবারে পেট ভরে খাওয়া উচিত নয়। বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন পেটের এক তৃতীয়াংশ রাতের জন্য যথেষ্ট। খুব বেশি খিদে পেলে একটা ফল এবং শোবার আগে এক গ্লাস গরম দুধ আপনাকে ঘুমাতে সাহায্য করবে।

রাতে হালকা খাবার; ছবিসূত্রঃ wikihow.com

১০. যেকোনো রকম যন্ত্র থেকে দূরে থাকুন

রাতে যখন ঘুমাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার অন্তত দু’ঘণ্টা আগে থেকেই সঅব ধরণের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস থেকে দূরে থাকুন। মোবাইলের স্ক্রিন, কম্পিউটারের স্ক্রিন অথবা টিভি স্ক্রিনের আলো আপনার চোখে ভিন্ন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে যার কারণে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে।

কোন যন্ত্রপাতি নয়; ছবিসূত্রঃ wikihow.com

১১. ধূমপান এবং মদ্যপানকে না বলুন

ধূমপান বা মদ্যপান কোনোটাই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। অতএব এ সুযোগে এগুলোকেও বাড়ির বাইরে বের করে দিন।

আর নয় ধূমপান; ছবিসূত্রঃ wikihow.com

১২. রুমের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কম রাখুন

একটু আশ্চর্য শুনালেও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে একটু ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় (১৩ – ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ঘুমানো তুলনামূলক বেশি সহজ।

১৩. ঘুমানোর আগে নিতে পারেন হট শাওয়ার

ঘুমানোর আগে উষ্ণ গরম পানিতে গোসল করলে রক্তের সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। এতে করে আপনার শরীরে ঘুমের ভাব চাঙ্গা হবে এবং আপনি পাবেন একটি প্রশান্তির ঘুম।

ঘুমানোর আগে গোসল সেরে নিন; ছবিসূত্রঃ wikihow.com

১৪. শোয়ার অভ্যাসে পরিবর্তন আনুন

আপনার যদি চিৎ হয়ে শোয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে অবশ্যই হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ুন। পেশিতে যত বেশি শিথিলতা আসবে ঘুম তত তাড়াতাড়ি আসবে। তাছাড়া ডানে কাত হয়ে শোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ডান কাতে ঘুমান, তারা তুলনামূলক কম দুঃস্বপ্ন দেখেন এবং তাদের শ্বাস-প্রশ্বাসও বাধাগ্রস্ত হয় না।

১৫. ঝেড়ে ফেলুন কিছু বাজে অভ্যাস

ঘুম আসতে বাধা সৃষ্টি করে এমন কিছু করবেন না; ছবিসূত্রঃ inforum.com

রাতে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখা, সিরিজ গল্পের বই পড়া, ভৌতিক কোনো গল্পের বই পড়া, কিছুক্ষণ পর পর  বিছানা ছেড়ে উঠে যাওয়া ইত্যাদি অভ্যাস বর্জন করুন। এর সবগুলোই আপনার ঘুম আসতে বাধা সৃষ্টি করে। বই পড়তে ইচ্ছে হলে হালকা আলোয় ছোটগল্পের বই পড়তে পারেন। এক্ষেত্রে গল্প তাড়াতাড়ি শেষ হবে এবং পরের ঘটনা জানার আগ্রহে আপনার ঘুম নষ্ট হবার সম্ভাবনাও কমে যাবে!

যে খাবারগুলো আপনার ঘুমের জন্য দরকারী

কী কী খেলে ঘুম আসে না সেই ব্যাপারে তো আমরা অহরহই পরামর্শ পাই। এবার আসুন দেখে নেই কী কী খেলে ভালো ঘুম হতে পারে।

  • ম্যাগনেশিয়াম যুক্ত খাবার, যেমন- জাম, আপেল, কলা, পালং শাক, সরষে, বীট, ব্রকলি, শালগম, বরবটি, বাদাম এবং লাল চাল ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমানে ম্যাগনেশিয়াম রয়েছে। আপনার দৈনিক খাবারের তালিকায় এগুলো আছে তো?
  • মেলানিন বাড়াতে সাহায্যকারী খাবার, যেমন- ফলের জুস ( বাড়িতে তৈরি), টমেটো এবং অ্যামন্ড ইত্যাদি খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন।
  • ভিটামিন বি৬, বি১২ যুক্ত খাবার, যেমন- মাছ, সবুজ শাক সবজি, পেঁপে, দুগ্ধ জাতীয় খাবার, ডিম, সয়া বা রাইস মিল্ক খান।

খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনুন; ছবিসূত্রঃ wikihow.com

  • তাজা ফল খান।

তাজা ফল খান; ছবিসূত্রঃ wikihow.com

  •  দৈনিক ৭/৮ গ্লাস পানির কোনো জুড়ি নেই।

পানির অপর নাম জীবন; ছবিসূত্রঃ wikihow.com

পরিশেষে দেখুন ফলাফল কী আসে। সারাদিনের ক্লান্তি এবং আগামীদিনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি পেতে রাতে পর্যাপ্ত ঘুম একান্তই প্রয়োজন। সাথে থাকতে হবে একনিষ্ঠ চেষ্টা এবং অধ্যবসায়। আশা করি মাসখানেকের মধ্যে খুব ভালো একটি পরিবর্তন আপনি নিজেই দেখতে পাবেন।

ফিচার ইমেজ- okdiario.com

Related Articles

Exit mobile version