সুস্থ থাকতে যত্ন নিন দেহ-মন-আত্মার

হঠাৎ করেই অস্থির লাগছে? এক কাজ করুন, বেশ বড় করে শ্বাস নিন, কিছু সময় শ্বাস ধরে রেখে আস্তে আস্তে ছাড়ুন। চোখটা হালকা বন্ধ করে এটা করুন কয়েকবার। কিছু সময় পর আস্তে আস্তে চোখ খুলুন। পার্থক্য নিজেই বুঝতে পারবেন।

এখন বলুন, আপনার কেমন লাগছে? শান্তি অনুভূত হচ্ছে? আগের চেয়ে কিছুটা কি ভাল লাগছে? যদি তা-ই হয়, তবে এর অর্থ হলো, আপনার শরীর-মন-আত্মা একই তালে চলছে, এবং একে অপরের সাথে যুক্ত। আর যুক্ত তিন অংশই আপনাকে দেবে শক্তি, আনন্দ, আর অস্থিরতা থেকে মুক্তি। কাজের স্পৃহা বাড়বে, শারীরিক এবং মানসিক অসুস্থতাও কমে যাবে।

মন-শরীর-আত্মা

মন-শরীর-আত্মা দিয়ে মূলত একজন জলজ্যান্ত মানুষকেই বোঝায়। মানুষের মানসিক, শারিরীক এবং আত্মিক যে ব্যাপারটা, সেটা একে অপরের পরিপূরক। আমরা জানব, এই তিনটি শব্দ দিয়ে কী বোঝানো হয়, এবং এই তিনের যোগ কীভাবে শক্তিশালী করতে হয়। 

মন: আমাদের চিন্তা-ভাবনা, বিশ্বাস, কাজের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া- এগুলো হলো মনের কাজ। মনকে আমরা দেখতে পাই না, কিন্তু আমাদের প্রতিটি কাজের সফলতা-ব্যর্থতা বা কষ্ট-আনন্দ অনুভব করে সে। কোনো কাজ করব কি না সেই সিদ্ধান্তও তার।

শরীর: আমাদের শরীর হলো বাহ্যিক সেই শক্তি বা আবরণ যার মাধ্যমে পঞ্চেন্দ্রিয় দিয়ে আমরা সমস্ত বিষয় উপভোগ করি; আনন্দ কিংবা বেদনা,  সাদা কিংবা কাল, ভালো বা মন্দ। শরীর সায় দিলে অনেক বড় কাজ সহজেই করা সম্ভব।

আত্মা: আত্মাকে বোঝার ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিশ্বাস অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও প্রকৃতি, ব্যায়াম, মেডিটেশন, ইয়োগা এই বিষয়গুলো আপনাকে ও আপনার আত্মাকে একীভূত করে।

Image sources: Pixabay

যেভাবে যত্ন নেবেন মন-শরীর-আত্মার 

আমাদের মন-শরীর-আত্মা একে অপরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। একটি ভালো থাকলে অপরটিও ভালো থাকবে। এজন্য যে অনেক খাটতে হবে তা কিন্তু না। ছোট ছোট কিছু যত্নই অনেক বড় প্রভাব ফেলবে। আবার ছোটখাট অযত্ন বেশ নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এই যত্ন কিন্তু আবার একবার, একদিনে করার না। গাছের যত্নে যেমন প্রতিদিন সার-পানি দেয়া লাগে, গোড়ায় নিড়ানি দিতে হয়, আমাদের নিজেদের জন্যও ঠিক একই পদ্ধতি। 

মনের যত্নে করণীয় 

১। নিজের গন্ডির বাইরে পা রাখার চেষ্টা করুন। কোনো অচেনা মানুষের সাথে কথা বলুন।
২। প্রতিদিন একই ধাঁচে কাজ করতে করতে বিরক্তি চলে আসতে পারে। একদিন কিছুটা ব্যাতিক্রম ঘটান নিজের রুটিনে।
৩। নিজের কথা ভাবুন। আজকে যদি কোনো কাজ করতে ইচ্ছা করে, তবে সেটা করে ফেলুন। 
৪। কেউ যদি আপনাকে কিছু বলে, অবশ্যই ভালো কিছু, তবে লিখে রাখুন, পরে সেটা পড়ুন। 
৫। আপনার সোশ্যাল মিডিয়া ফিডসহ নিজের জীবন থেকে নেতিবাচক মানুষ, মন থেকে নেতিবাচক বিষয় মুছে ফেলুন। 

Image source: Pixabay

নিজের শরীরের যত্ন নিন

১। খাবারের ব্যাপারে অবশ্যই যত্নবান হতে হবে। তিনবেলার খাবারে অবশ্যই পুষ্টিকর কিছু রাখুন। 
২। আশেপাশে সবুজ কিছু পেলে, যেমন- বাগান বা পার্কে বসে কিছু সময় কাটান। জোরে শ্বাস নিন। এতে ভালো থাকবে শরীর।
৩। বই বা কমিকস পড়ুন, মন খুলে হাসুন। দেখবেন আপনার সমস্ত শরীর-মনে একটা চনমনে ভাব আসবে। 
৪। প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে রোদে থাকুন, হাঁটুন, দৌড়ান, ব্যায়াম করুন। এর সাথে সাঁতারও কাটতে পারেন। 
৫। কোনো কাজে আগ্রহ না হলে বা একটু খারাপ লাগলে ২৫-৩০ মিনিটের একটা ছোট্ট ভাতঘুম দিন। দেখবেন অনেক বেশি তরতাজা লাগবে। 

আত্মার যত্ন নিন 

১। নিজেকেই নিজের বন্ধু বানান। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সাথে নিজেই কথা বলুন। 
২। ধর্মীচর্চা করুন। এতে নিজেকে, নিজের আত্মাকে খুঁজে পাবেন। 
৩। যদি আপনার পোষা প্রাণী থাকে, তার সাথে সময় কাটান। এতে যে প্রশান্তি পাবেন, তা অতুলনীয়। 
৪। মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন।  
৫। নিজের সাথে সময় কাটান; বই পড়ুন, একা একা ঘুরতে বের হয়ে পড়ুন, বা বাগান করুন। 

আমরা যে টিপসগুলো দিলাম, একটু খেয়াল করলেই দেখবেন যে সবগুলোই কাছাকাছি। আবার, খুব কঠিন কোনো টিপস কিন্তু এগুলো নয়। ছোট ছোট এই যত্নগুলো যেমন এই দেহ-মন-আত্মাকে জুড়ে দেবে, ঠিক সেভাবে অযত্ন এদের উপর বেশ নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। 

Language: Bangla
Topic: Take care of your mind, body, and soul
References: Hyperlinked inside

Related Articles

Exit mobile version