পড়াশোনা শেষ করার পর আমাদের বেশিরভাগেরই লক্ষ্য থাকে একটি ভালো চাকরিতে যোগ দেয়ার। একটি আদর্শ মজুরি সম্পন্ন চাকরি করতে পারলে জীবনে চলার পথ অনেকটা সহজ হয় বলেই আমরা মনে করি। কিন্তু এই চাকরি পাওয়া আর না পাওয়ার মাঝে একটি দেয়াল তোলা থাকে। দেয়ালটি হলো আমাদের যোগ্যতা এবং কর্মদক্ষতা। এই দেয়াল যারা টপকাতে পারে, তারা সেই চাকরি করার সুযোগ পায়। আরা যারা ব্যর্থ হয়, তারা পরেরবার নিজেদের ভুল শুধরে আবার চেষ্টা করে, অথবা তারা হয়তো নিজেদের যোগ্যতাকে অন্য খাতে ব্যয় করে সফলতা অর্জনের চেষ্টা করে।
কোনো চাকরিতে ঢোকার আগে আমাদের সবাইকেই একটি সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কিছু কাজ আছে, যেগুলো করলে আমাদের এই সাক্ষাৎকারে সফল হবার সম্ভাবনা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আপনার সাক্ষাৎকারের কয়েকদিন আগে থেকেই এর প্রস্তুতি নেয়া শুরু করা উচিত। কী এমন কাজ সেগুলো? আসুন জেনে নিই।
যে প্রতিষ্ঠানে সাক্ষাৎকার দিতে যাচ্ছেন, তাদের ব্যাপারে ভালোমতো জানা
আপনি যে প্রতিষ্ঠানেই সাক্ষাৎকার দিতে যান না কেন, আপনাকে অবশ্যই তাদের ব্যাপারে মোটামুটি ভালো জ্ঞান রাখতে হবে। তারা কোন ধরনের প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা বাজারে তাদের বর্তমান অবস্থা কী, তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রধান কে, তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রতিষ্ঠান আছে কি না অথবা তারা কী রকম প্রার্থী খোঁজ করছে চাকরি দেবার জন্য- এসব। আপনার এই জ্ঞান যদি সাক্ষাৎকারের সময় কাজে লাগাতে পারেন, তাহলে সেটা আপনার জন্যই ভালো হবে।
আপনার আবেদন করা পোস্টের ব্যাপারে ভালোমতো জানুন
এই কাজটি আপনার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যে পোস্টের জন্য আবেদন করেছেন, সেই পোস্টে থেকে আসলে কী কাজ করতে হয় বা চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান কী রকম কাজ আশা করে আপনার থেকে, তা ভালোমতো জেনে নিন। প্রয়োজনে অন্য প্রতিষ্ঠানে একই পোস্টে চাকরি করছেন, এমন কারো সাথে কথা বলুন। এটা আপনাকে অবশ্যই সাহায্য করবে।
সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী সদস্যদের ব্যাপারে খোঁজ করুন
আপনি যাদের সামনে বসে সাক্ষাৎকার দেবেন, তাদের ব্যাপারে কতটুকু জানেন? প্রতিষ্ঠানে তাদের পোস্ট বা ব্যক্তিত্বের ব্যাপারে কী জানেন?
কাজটি একটু কঠিন হলেও যদি তাদের নাম সংগ্রহ করা সম্ভব হয়, তাহলে তাদের ব্যাপারে ফেসবুক/ টুইটার/ লিঙ্কড ইন এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় খোঁজ করতে পারেন। তারা কেমন মানসিকতার মানুষ, এটা আগে থেকে জানা থাকলে হয়তো তাদের সামনে কথা বলার সময় আপনার কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতির মোকাবেলা করা লাগবে না।
প্রশ্ন তৈরি করে তা অনুশীলন করুন
সাক্ষাৎকারের আগে এটিই আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সাক্ষাৎকারের সময় সাধারণ যেসব প্রশ্ন করা হয়- আপনার নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন, আপনার দক্ষতার ব্যাপারে বলুন, আপনি এখানে কেন চাকরির আবেদন করেছেন ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর কীভাবে দেবেন, তা আগে থেকেই ঠিক করে রাখুন। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিন। প্রয়োজনে ইউটিউবে অনেক টিউটোরিয়াল পাবেন। সেগুলোও অনুসরণ করতে পারেন। এছাড়াও সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীদের কাছে আপনার যদি কোনো প্রশ্ন করার থাকে, যেমন- আপনার চাকরিতে কবে থেকে যোগদান করতে হবে বা এই পোস্টে কাজ করে আপনি প্রতিষ্ঠান থেকে কী কী সুবিধা পাবেন, এরকম কোনো প্রশ্ন থাকলে তা আগে থেকেই তৈরি করে রাখুন। অনেক প্রতিষ্ঠানেই সাক্ষাৎকারের শেষে চাকরিপ্রার্থীকে একটি প্রশ্ন করার সুযোগ দেয়া হয়। তাই এটিও মাথায় রাখুন।
যাতায়াত ব্যবস্থার দিকে খেয়াল রাখুন
ঢাকা শহরের যানজটের ব্যাপারে তো আমরা সবাই জানি। যানজটের শিকার হয়ে কোথাও সময়মতো পৌঁছতে দেরি হয়নি এমন কেউ সম্ভবত এই শহরে নেই। কিন্তু আপনি তো আর সাক্ষাৎকারের সময় গিয়ে বলতে পারবেন না যে, “স্যার, রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিলো। তাই আসতে দেরি হয়েছে।” এমনটা হলে আপনার চাকরি সেখানেই শেষ। তাই আগে থেকেই আপনার গন্তব্যে কীভাবে যেতে হয়, যেতে কীরকম সময় লাগে, তা চিহ্নিত করে রাখুন। প্রয়োজনে নিজে একবার গিয়ে দেখে আসুন, কীরকম সময় লাগে। এতে আপনার সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছতে সুবিধা হবে।
পোশাক-পরিচ্ছদের দিকে খেয়াল রাখুন
আপনার সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার আসছে। কিন্তু কী পরে যাবেন এই সাক্ষাৎকারে, সেটা আগে থেকেই ঠিক করে রাখুন। কারণ আপনার ড্রেস-আপের উপর সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীদের মন-মানসিকতার অনেক পরিবর্তন আসতে পারে।
পুরুষদের জন্য সাধারণত ফরমাল ড্রেস বেশি গ্রহণযোগ্য। এজন্য এক রঙের শার্ট ও সাথে কমপ্লিট স্যুট এবং সেই সাথে একই রঙের ম্যাচিং করা শু ও বেল্ট বাছাই করবেন। আপনার জুতোর রঙ কালো, কিন্তু বেল্ট পরলেন খয়েরি রঙের, সেক্ষেত্রে কিন্তু সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী আপনার ফ্যাশন সেন্সের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলতেই পারে! কিন্তু তাই বলে বন্ধুর বা বাবার ফরমাল ড্রেস ধার করে পরতে যাবেন না আবার! আপনার শরীরের মাপে আরেকজনের শরীরের মাপের ড্রেস ফিট না হবারই কথা। তাই নিজের জন্য আলাদা ফরমাল ড্রেস তৈরি করে রাখুন। আর মহিলাদের জন্য যথাসম্ভব কম জুয়েলারি এবং হালকা মেকআপ নেয়ার ব্যাপারেই বলা হয়।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রাখুন
আপনার সাক্ষাৎকারে যেসব কাগজপত্র দেখাতে হবে, তা আগের রাতের মধ্যেই ঠিক করে গুছিয়ে রাখুন। কোনো সার্টিফিকেট সত্যায়িত করা লাগলে, তা আগে থেকেই করে রাখুন। সময়মতো এগুলো হাতের কাছে না পেলে, আপনি নিজেই সমস্যায় পড়তে পারেন।
দরকার একটি সুন্দর ঘুম
অনেকেরই উত্তেজনার কারণে সাক্ষাৎকারের আগের রাতে তেমন ঘুম আসতে চায় না। কিন্তু ঘুম ঠিকমতো না হলে সকালবেলায় এর প্রভাব পড়তে পারে। আপনি হয়তো ঘুম থেকে উঠতে দেরি করে ফেললেন। এ কারণে হয়তো সময়মতো গাড়ি পেলেন না কিংবা রাস্তায় জ্যামের কারণে ঠিকমতো পৌঁছতে পারলেন না। এরকম অনেক সমস্যায় আপনি পড়তে পারেন। তাই আগের রাতে অবশ্যই ঠিকমতো ঘুমানোর চেষ্টা করবেন।
সকালের বা দুপুরের খাবার ঠিক রাখুন
অনেকেই সাক্ষাৎকারের আগে কোনো কিছু না খেয়েই চলে যান। এই কাজ ভুলেও করবেন না। কারণ আপনি যদি খালি পেটে থাকেন, তাহলে আপনি সাক্ষাৎকারে ঠিকমতো মনঃসংযোগ করতে পারবেন না। শেষ পর্যন্ত আপনার পরীক্ষাই খারাপ হতে পারে। তাই, সাক্ষাৎকার সকালে হোক বা দুপুরে হোক, অবশ্যই ভরা পেট নিয়েই সেখানে দিতে যাবেন।
যথাসম্ভব নিজেকে ক্ষতিকর পরিস্থিতি থেকে দূরে রাখুন
আপনি কখনোই চাইবেন না যে, আপনার নামে একটি খারাপ তথ্য যোগ হয়ে যাক। আর সেটা যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকারের আগে হয়, তাহলে তো অবশ্যই না! তাই নিজেকে সব ধরনের পরিস্থিতিতে সামলে রাখুন। নিজের কারণে যাতে অন্যেরও কোনো সমস্যা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
সর্বশেষ, নিজের উপর আর নিজের প্রস্তুতির উপর ভরসা রাখুন। নির্ধারিত সময়ের ১৫-২০ মিনিট আগে গন্তব্যে পৌঁছে যান। সাক্ষাৎকারে সবার সামনে নিজের একটি ভালো ব্যক্তিত্ব তুলে ধরুন। যথাসম্ভব আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিন। এটি আপনার সফলতার হার অনেকাংশে বাড়িয়ে দেবে।