“An idea can change the world!”
হ্যাঁ, শুধুমাত্র একটি আইডিয়াই বদলে দিতে পারে গোটা বিশ্বকে! আপনার একটি আইডিয়াই পাল্টে দিতে পারে আপনার জীবন, আপনার ভবিষ্যৎ। সকল সৃষ্টির মূলেই রয়েছে কোনো না কোনো আইডিয়া। আমরা সকলেই সেই আইডিয়াটির অপেক্ষায় রয়েছি যা বদলে দিবে এই বিশ্বকে! কিন্তু বলতে সহজ হলেও এমন একটি আইডিয়া বের করা কিন্তু খুব একটা সহজ নয়।
শুধু পৃথিবী বদলে দিতেই নয়, সব ক্ষেত্রেই নতুন নতুন আইডিয়া দরকার। আপনি নতুন কিছু করতে চান, চাই নতুন একটি আইডিয়া। নতুন কোনো ব্যবসা শুরু করতে চান, সেখানেও চাই নতুন কোনো আইডিয়া। কিংবা আপনি কোনো কিছু লিখতে চান, তবুও কিন্তু আপনার প্রয়োজন হবে একটি নতুন আইডিয়ার যা আপনার লেখাকে করবে সবার থেকে আলাদা!
এই যে এত আইডিয়া দরকার আমাদের তা আসবে কিভাবে বলুন তো? ঘন্টার পর ঘন্টা বসে বসে মাথা চুলকাচ্ছেন একটি নতুন আইডিয়ার আশায়, কিন্তু আইডিয়া নামক সোনার হরিণ আপনার হাতে ধরা দিচ্ছে না। কী করবেন এই অবস্থায়? হ্যাঁ, এমন করুণ অবস্থায় যাতে পড়তে না হয় সেজন্য বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখক আইজ্যাক আজিমভ আমাদের দিয়েছেন কিছু বুদ্ধি। সম্প্রতি তার ১৯৫৯ সালের একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় অনলাইনে। সেখানেই তিনি বাতলে দিয়েছেন নতুন নতুন আইডিয়া বের করার কয়েকটি উপায়। চলুন আজকে তাহলে জেনে নিই আইজ্যাক আজিমভের মতে নতুন নতুন আইডিয়া খুঁজে পাবার ৫টি উপায়।
১. আইডিয়ার জন্ম হয় একাকীত্বে
আইজ্যাক আজিমভের মতে, নতুন কোনো আইডিয়া খুঁজে পাওয়ার সর্বপ্রথম শর্ত হলো একাকীত্ব। আপনি তিন-চারজন বন্ধু মিলে আড্ডা দিচ্ছেন এমন পরিবেশে ভালো কোনো আইডিয়া খুঁজে পাবেন না। এর জন্য প্রয়োজন একাকীত্ব। একাকী বসে কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে থাকলে তবেই পেতে পারেন নতুন কোনো আইডিয়া। আমরা যখন কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করি তখন আমাদের মাথায় নানা রকম আইডিয়া আসতে পারে। তার কোনোটি হয়তো কাজের, তবে বেশির আইডিয়াই হয় হাস্যকর ও অকাজের! আজিমভ বলেছেন,
“…সৃষ্টি কোনো কোনো সময় লজ্জাজনকও হয়। প্রত্যেকটি ভালো আইডিয়ার পেছনে থাকে হাজারটা হাস্যকর আইডিয়া, যেগুলো আমরা প্রকাশ করি না।”
নতুন আইডিয়া খোঁজার সময় একাকী চিন্তা করলে কোন আইডিয়াটি কাজের এবং কোনটি কাজের নয় সেটি ভালোভাবে বিচার করে দেখার সুযোগ পাবেন। কিন্তু কোনো ব্যস্ততার মধ্যে থাকলে আপনি হয়তো সেই আইডিয়াটি ভালো নাকি খারাপ তা ভালোভাবে ভেবে দেখতে পারতেন না। তাই ভালো আইডিয়া খুঁজে বের করার প্রথম শর্ত হলো একাকীত্ব।
২. শেয়ার করুন আইডিয়া
একাকীত্বের মাধ্যমে আইডিয়ার জন্ম হলেও একটি আইডিয়া কতটুকু সঠিক ও কার্যকর তা জানার পরবর্তী ধাপ হলো তা কারো সাথে শেয়ার করা। একাকী চিন্তা ভাবনা করে যে আইডিয়াটি আপনি বের করলেন সেটি এবার শেয়ার করুন আপনার বন্ধুর সাথে। দেখুন আইডিয়াটি সম্পর্কে সে কী ধারণা পোষণ করে। এভাবে আইডিয়াটি শেয়ারের মাধ্যমে আপনি আপনার আইডিয়াটির গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাবেন। এছাড়া আইডিয়া শেয়ারের মাধ্যমে তাতে চমৎকার কোনো নতুন ধারণাও যোগ হতে পারে। এটি নিয়ে আজিমভ বলছেন,
“আইডিয়া শেয়ারের উদ্দেশ্য আসলে নতুন কোনো আইডিয়া বের করা নয়, বরং আপনার যে আইডিয়াটি রয়েছে নানা মতবাদের আলোকে সেটার বাস্তবতা যাচাই করা।”
সকলের মতামতের মাধ্যমেই আপনি বুঝতে পারবেন ঠিক কী করলে আপনার এই আইডিয়াটি আপনি কাজে লাগাতে পারবেন। কিংবা এই আইডিয়াটি আদৌ কার্যকর কিনা।
৩. আইডিয়া বিকাশ লাভ করে সঠিক মানুষের সহচর্যে
আইডিয়া শেয়ার করা তখনি কার্যকর হবে যখন তা আপনি সঠিক মানুষের সাথে শেয়ার করবেন। আজিমভ তার প্রবন্ধে এ ব্যাপারে বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। কার সাথে আপনি আপনার আইডিয়াটি শেয়ার করবেন সেটি আসলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
এক্ষেত্রে আজিমভের মতে, আপনার আইডিয়াটি শেয়ারের ক্ষেত্রে আপনি এমন কিছু মানুষ পাবেন যারা আপনার আইডিয়াটি বিষয় সম্পর্কে ভালোই জানে, কিন্তু একটু খামখেয়ালী স্বভাবের। আজিমভ এ ধরনের মানুষকে আপনার আইডিয়া শেয়ারের তালিকা থেকে বাদ দিতে উপদেশ দিয়েছেন। এছাড়াও, মনে করুন, আপনি আপনার বসের সাথে আপনার আইডিয়াটি শেয়ার করছেন। সেক্ষেত্রে আপনি পুরোপুরি মন খুলে তার সাথে কথা বলতে পারবেন না। আপনার উদ্ভট ও হাস্যকর আইডিয়াগুলো আপনি হয়তো তাকে বলতে পারবেন না। তাই এ ধরনের মানুষও বাদ দিতে হবে তালিকা থেকে। আইডিয়া শেয়ার করার ক্ষেত্রে বেছে নিতে হবে এমন মানুষ যে আইডিয়ার বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে জানে, যার সাথে আপনি মন খুলে কথা বলতে পারবেন এবং যে গুরুত্বের সাথে আপনার কথাগুলো শুনবে।
শুধু কার সাথে শেয়ার করবেন সেটাই এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নয়, কতজনের সাথে শেয়ার করবেন সেটাও কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আজিমভের মতে ৪-৫ জনের একটি দলই আইডিয়া শেয়ারের জন্য সর্বোত্তম।
৪. আইডিয়া খুঁজে পেতে চাই শান্ত পরিবেশ
নতুন আইডিয়া খুঁজে বের করার জন্য অন্যতম প্রধান শর্ত হলো শান্ত, নিরুদ্বেগ পরিবেশ। মনে কোনো দুশ্চিন্তা নিয়ে আপনি কখনোই ভালো কোনো আইডিয়া খুঁজে পাবেন না। আইডিয়া খুঁজে পেতে চাই একটি নিরাপদ, শান্ত, খোলামেলা পরিবেশ যেখানে আপনি নিশ্চিন্তে চিন্তা করতে পারবেন। এক্ষেত্রে রাতের খাবারের টেবিল কিংবা একাকী কোনো কফিশপও হতে পারে আপনার জন্য উপযুক্ত স্থান। আপনি যেখানে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তেমন জায়গাতেই আপনার মাথায় খেলা করবে নতুন নতুন আইডিয়া। আজিমভের মতে,
“আমি মনে করি, হাসিখুশি, মজার ও নিশ্চিন্ত পরিবেশই হলো নতুন আইডিয়ার প্রধান শর্ত। কারণ এ ধরনের পরিবেশ আপনাকে সৃষ্টিশীল কিছু করতে আগ্রহী করে।”
মূলকথা হলো, নিশ্চিত আরামদায়ক পরিবেশ আপনাকে নতুন কিছু সৃষ্টি করতে অনুপ্রাণিত করে। ফলে নতুন কোনো আইডিয়া খুঁজে পাওয়া সহজ হয় আপনার জন্য।
৫. আইডিয়া খুঁজতে গিয়ে আসল কাজ ভুলে যাবেন না
আপনি নতুন কিছু করতে চান, নতুন কোনো আইডিয়া খুঁজে বের করতে চান- ঠিক আছে। তবে আইডিয়া খুঁজতে গিয়ে আপনার প্রতিদিনের কাজকে ভুলে গেলে কিন্তু হবে না। নতুন আইডিয়ার খোঁজ যেন আপনার প্রধান কাজে পরিণত না হয়ে যায়। বরং অবসর সময়ে নতুন কিছু নিয়ে ভাববেন। যেমন- আমরা কাজের ফাঁকে গান গাই, গল্পের বই পড়ি, কিংবা কোনো খেলা খেলি তেমনি আপনি কাজের ফাঁকে নতুন আইডিয়া খোঁজার চেষ্টা করবেন। এছাড়া কখনো অর্থের বিনিময়ে আইডিয়ার খোঁজ করবেন না। আজিমভ বলেছেন,
“বিশ্বের সবচেয়ে চমৎকার আইডিয়াগুলো তাদের মাথা থেকেই এসেছে যাদেরকে এসব আইডিয়ার জন্য কোনো পারিশ্রমিক দেওয়া হয়নি।”
এ কথার মধ্যে দিয়ে আজিমভ এটাই বুঝাচ্ছেন যে, আইডিয়ার খোঁজ করাটা যেন কারো পেশায় পরিণত না হয়। বর্তমানে এমন অনেক ‘কনসালটেন্ট ফার্মের’ উদ্ভব হচ্ছে যাদের কাজই হচ্ছে টাকার বিনিময়ে অন্যকে আইডিয়া দেওয়া। আজিমভ এ ধরনের কাজকে নিরুৎসাহিত করছেন। কারণ যখন আপনি আইডিয়া বের করতে পারছেন কি পারছেন না তার উপর আপনার আয় কিংবা বেতন নির্ভর করছে, তখন আপনি স্বাভাবিকভাবেই ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করতে পারবেন না। ফলে ভালো কোনো আইডিয়া খুঁজে পেতে আপনাকে অনেক বেগ পেতে হবে। তাই অর্থের বিনিময়ে আইডিয়া নয়।
আজিমভের দেওয়া এই টিপসগুলো কিন্তু পঞ্চাশ বছরের পুরনো। কিন্তু এত বছরের পুরনো হলেও এগুলো কিন্তু এখনো সমান কার্যকর। তাই এরপর থেকে যখন নতুন কোনো আইডিয়ার দরকার হবে তখন আইডিয়া খুঁজতে গিয়ে আজিমভের বুদ্ধিগুলো মাথায় রাখবেন। তাহলেই খুব সহজে খুঁজে পেতে পারেন সেই আইডিয়াটি যা হয়তো বদলে দেবে আপনার জীবন!
ফিচার ইমেজ – realclearlife.com