তারুণ্য এক প্রত্যয়, চেতনার উৎস, অনুপ্রেরণার অজেয় শক্তি। যারা নিজ প্রতিভায়, উদ্যমে, কর্মযজ্ঞে বদলে দেয় পৃথিবী তারাই তো চিরনবীন। তাদের নিয়েই তো নজরুল-সুকান্ত রচনা করেছেন দ্রোহের-বিপ্লবের হাজারো গান-কবিতা, যা মর্মে মর্মে জাগায় জয়ের প্রতিধ্বনি। আজ আমরা বলতে এসেছি এমন কিছু তরুণ-তরুণীর গল্প, যারা দেখতে সাধারণ হলেও তাদের প্রতিভা আর কীর্তির গল্পগুলো অসাধারণের সংজ্ঞা পেরোয়।
আজ যাদের কথা বলবো, তাদের সকলের বয়স বিশ বা তার নিচে। কিন্তু তারা শৈশবেই বিশ্বকে বদলে দেবার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন। আর বিশ্বকে বদলাতে তারা কেউ বেছে নিয়েছিলেন শিল্প, তো কেউ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। কিন্তু একটি বিষয়ে তাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র ভিন্নতা ছিলো না। বিশ্বকে বদলে দেবার তাদের ধারণাই ইন্ধন যুগিয়েছে চলার পথে।
মিকাইলা উলমার ও ‘মি অ্যান্ড দ্য বি’স’
১৩ বছর বয়সী মিকাইলা উলমার, ‘মি অ্যান্ড দ্য বি’স’ নামক লেমোনেড প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী। হাইস্কুল শিক্ষার্থী যার গণিতে ‘সি’ গ্রেড পেতেও কষ্ট হয়ে যায়, কিন্তু সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রের ১৪টি অঙ্গরাজ্যে ৫০০ এর অধিক রিটেল স্টোরে তার কোম্পানির লেমোনেড বিক্রয় করা হয়। বার্ষিক ৩,৬০,০০০ বোতল লেমোনেড বিক্রি করে মিকাইলার প্রতিষ্ঠান মি অ্যান্ড দ্য বি’স। সফল একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার পাশাপাশি হাইস্কুলের নিয়মিত ক্লাস, হোমওয়ার্ক, পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করছে একজন ১৩ বছর বয়সী শিশু।
শুরুটা কীভাবে হয়েছিল?
তখন মিকাইলার মাত্র ৪ বছর বয়স। সে খোঁজ করছিলো এক চমকপ্রদ বিজনেস আইডিয়ার। উদ্দেশ্য- শিশুতোষ বিজনেস কম্পিটিশনে অংশ নেবে। ঠিক তখনই কোথায় থেকে যেন মৌমাছি এসে তার গায়ে হুল ফোটালো। তাও একবার নয়, পর পর দু’বার। ঠিক তখনই কেন যেন হঠাৎ মিখাইলার মনে মৌমাছি সম্পর্কে জানার তীব্র কৌতূহল জন্ম নিলো। খানিকটা জিজ্ঞাসাবাদ ও খানিকটা পড়াশোনা করে মিকাইলা জানতে পারলো, মৌমাছি ও এর মাধ্যমে সংগঠিত পরাগায়ন প্রক্রিয়া বাস্তুতন্ত্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং এই মৌমাছির সংখ্যাই আশঙ্কাজনকভাবে কমছে।
ঠিক তখনই মিকাইলার মনে জন্ম নেয় একটি ব্যবসায়িক ধারণার। সে একটি লেমোনেড বিক্রয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণের পরিকল্পনা করে যার নাম রাখে Me & The Bees Lemonade.
মিকাইলা টেক্সাসের স্থানীয় মধু দিয়ে লেমোনেড বানিয়ে এলাকার সকল খুচরো দোকানে বিক্রয়ের পরিকল্পনা করে। একইসাথে সে সিদ্ধান্ত নেয় লেমোনেড বিক্রি করে যে আয় হবে, তার ১০% শতাংশ সে সে সকল সংগঠনকে দান করবে যারা প্রকৃতিকে বাঁচাতে মৌমাছির জীবন রক্ষায় নিরন্তর কাজ করে চলেছে।
মিকাইলা ২০০৯ সালে তার বাবা-মা’র সহায়তায় বাসার সামনে টেবিল পেতে লেমোনেড বিক্রি করা শুরু করে। শুনলে অবাক হবেন, তার লেমোনেডের প্রস্তুত প্রণালীটি নেওয়া হয়েছিলো ১৯৪০ সালের ঘরোয়া রেসিপি থেকে। রেসিপিটি ছিলো মিকাইলার দাদীর। লেমোনেড বানাতে ব্যবহৃত হয়েছিলো মৌমাছির চাক হতে সংগৃহীত স্থানীয় মধু। ধীরে ধীরে আশেপাশের পিৎজার দোকানগুলোতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই লেমোনেড। সময়ের সাথে সাথে মিকাইলা হয়ে ওঠে আরও পরিপক্ক। সে তার বাবা থিওকে বিজনেস অপারেশন ও মা আন্দ্রেকে মার্কেটিং এর সহকারী নির্বাহী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়।
যদিও মিকাইলার মা-বাবা দুইজন বিজনেস গ্র্যাজুয়েট ছিলেন। কিন্তু ফুড ও বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে অভিজ্ঞ ছিলেন না। তারা মিকাইলাকে সে প্রসঙ্গে বললে প্রত্যুত্তরে মিকাইলা বলে পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে টিমওয়ার্কের উপর।
যখন মিকাইলাকে বাবা-মা’র নিয়োগ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন সে বলে-
“এমন অনেক সিদ্ধান্ত রয়েছে যা আমার বাবা-মা নিতে পারবেন কিন্তু আমি না, আবার এমন সিদ্ধান্তও রয়েছে আমি সরাসরি দিতে পারি, যা আমার বাবা-মা দিতে অপারগ। আমি জানি আমি এখনো অনেক ছোট, আমার জানার বহু বাকি… তাই তাদের মতামত আমার কাছে অবশ্যই গুরুত্ব বহন করে।”
মিকাইলা তার ব্যবসার সবচেয়ে বড় সুযোগটি পায় ২০১৫ সালে, যখন সে ‘হোল ফুড মার্কেটে’ লেমনেড সাপ্লাইয়ের কন্ট্রাক্ট পায়। এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী জেনা জেল্যান্ড বলেন,
“মিকাইলার মাঝে আমরা সে উদ্যোক্তার খোঁজ পাই, যে সামাজিক আদর্শকে আঁকড়ে ধরে বাঁচে। একইসাথে যার কাছে অতুলনীয় স্বাদের একটি পণ্য আছে।”
মিকাইলা ২০১৫ সালে তার বিজনেস আইডিয়াটি প্রতিভাবান উদ্যোক্তাদের ও বিনিয়োগকারীদের জন্য আয়োজিত এবিসি চ্যানেলের রিয়েলিটি টিভি শো শার্ক ট্যাংকে উপস্থাপন করে। তখন তার বয়স মাত্র নয় বছর। মিকাইলার বক্তব্যে মুগ্ধ হয়ে পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ফুবু’র প্রধান নির্বাহী ডেমন্ড জন মিকাইলার ব্যবসায়ে ৬০,০০০ ডলার বিনিয়োগ করেন।
অল্প বয়সেই মিকাইলার অর্জন বড় কম নয়। সে বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন হোয়াইট হাউসে নিমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। যেখানে বারাক ওবামা তার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
জেফরি সোরেস, সামিট বেভারেজ গ্রূপের মালিক মিকাইলা প্রসঙ্গে বলেন,
“মিকাইলা দারুণ ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। সফল উদ্যোক্তা তো হাজারো রয়েছে কিন্তু নিজেকে উপস্থাপন করার মতো ব্যক্তিত্ব ও সফল উপস্থাপনের ধরন অনেকের জানা নেই। সেটি মিকাইলা জানে।”
নিজের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন প্রসঙ্গে মিকাইলা বলেন,
“আমি সামনে নতুন নতুন আরও কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করতে চাই। বেশিদিন একটি কোম্পানি নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখা ক্লান্তিকর। আমি নতুন নতুন কোম্পানির ধারণা ও লোগো ডিজাইন করতে আগ্রহী। এছাড়াও আমি সামনের দিনে নতুন স্কুল, ইউনিফর্ম ও নতুন বন্ধুদের সাথে পরিচিত হতেও আগ্রহী।”
দ্য স্ট্রিট স্কুল- হাসান ও শিরীন জাফর এর সমাজসেবামূলক শিক্ষা উদ্যোগ
পনেরো বছর বয়সী হাসান এবং তেরো বছর বয়সী শিরিন জাফর ২০১৬ সালে পাকিস্তানের করাচিতে গৃহহীন শিশুদের জন্য স্ট্রিট স্কুল শুরু করেছিলে। সে সময় হাসান ছিলো নবম শ্রেণীর ছাত্র এবং শিরীন ছিলো সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী। দুই ভাই-বোন পথশিশুদের জন্য চালু করে এই স্কুল।
হাসানকে যখন এই স্কুল প্রতিষ্ঠার পেছনের গল্পটি বলতে অনুরোধ করা হয়, তখন সকলের সামনে পাকিস্তানের জনজীবনের এক অন্যরকম চিত্র ফুটে ওঠে। হাসান বলেন, পাকিস্তানে অনেক বাবা-মা শিশু শিক্ষাকে সমর্থন করে না। পরিবর্তে বাবা-মা বাচ্চাদের পথে অর্থের বিনিময়ে কাজ করতে বাধ্য করে। অসহায় শিশুরা পথে পথে ফুল, টিস্যু পেপার বিক্রয় করে অথবা ট্রাফিক সংকেতের স্থানে ভিক্ষা করে জীবিকা অর্জন করে।
এই সকল অসহায় শিশুদের জন্য হাসান ও শিরীন খায়বান-ই-শামশীর ক্যাফে ক্লিফটনের কাছাকাছি টেবিল-চেয়ার পেতে ৫০ এর অধিক শিশুদের দুই ঘণ্টা ব্যাপী পাঠদান করেন। এখানে পথশিশুদের গণনা ও বর্ণমালা সহ প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা হয়। স্ট্রিট স্কুল সপ্তাহে ছ’দিন বিকেল ৪টা ৩০ থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চালু থাকে।
প্রথমে স্ট্রিট স্কুলের কার্যক্রম বিনামূল্যে চললেও বর্তমানে অনেকেই স্ট্রিট স্কুলের অসহায় শিশুদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। এখন হাসান ও শিরিনের স্ট্রিট স্কুলের শিক্ষার্থীরা দৈনিক ৫০ টাকা ভাতা পাচ্ছে। এছাড়াও ক্লাসের মাঝে পাচ্ছে খাদ্য সামগ্রী, জুস এমনকি পোশাক ও।
এছাড়াও প্রাথমিক বেতন স্কেলের গ্রেড ১৫ এর অন্তর্ভুক্ত সরকারি স্কুল শিক্ষিকা রানা ইয়াসমীনও তার ব্যস্ত সময়সূচী থেকে সময় সময় বের করে শিরিন এবং হাসানকে ক্লাস পরিচালনা করতে সহায়তা করছেন। তিনি বলেন, এই শহরটিকে আরও শিক্ষিত করার জন্য এটি তার প্রচেষ্টা।
বর্তমানে স্ট্রিট স্কুলের শিক্ষার্থী দুশো’র অধিক। এই দুই ভাইবোন পরবর্তীতে তাদের স্কুলে বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম ও চালু করেছে।
জ্যাজ জেনিংস, ১৭, মিডিয়া ব্যাক্তিত্ত্ব ও তৃতীয় লিঙ্গ অধিকার কর্মী
জ্যাজ জেনিংস জন্মের সময় ছেলে শিশু হয়েই জন্মেছিলেন। কিন্তু ৩ বছর বয়সে তিনি জেন্ডার ডিসফোরিয়া নামক রোগে আক্রান্ত হন। তিনি সবচেয়ে কমবয়সী তৃতীয় লিঙ্গধারী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
জেনিংস বর্তমানে ফ্লোরিডায় বসবাস করছেন। বুঝতে শেখার পর থেকেই নিজের জনপ্রিয়তা ও পাবলিক প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে তৃতীয় লিঙ্গের অধিকারীদের নিজের অধিকার ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সচেতন করে তুলছেন। তিনি এই বিষয়ে দুটি বই লিখেছেন এবং মিডিয়াতে নানা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এর পাশাপাশি তিনি টিএলসি চ্যানেলে নিজের প্রোগ্রামও করেছেন।
জ্যাজ জেনিংস যতক্ষণ পর্যন্ত না মেয়েদের খেলার টিমে জায়গা পেয়েছেন, ততদিন তিনি ইউএস সকার ফেডারেশন এর বিরুদ্ধেও লড়েছেন। জ্যাজ ও তার অভিভাবক মিলে একটি সমাজসেবামূলক সংস্থাও চালান। সংস্থাটি কমবয়সী তৃতীয় লিঙ্গের অধিকারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
ইউসরা মার্দিনি, জীবন বাঁচানো এক সাঁতারু
ঘটনাটি ২০ বছর বয়সী ২০১৬ রিও অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারী সাঁতারু ইউসরা মার্দিনি’র জীবন থেকে নেওয়া।
মার্দিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দামাস্কাসের একজন প্রতিভাবান সাঁতারু ছিলেন এবং তিনি সিরিয়ার অলিম্পিক কমিটির প্রতিযোগীও ছিলেন। সামরিক আগ্রাসনে দেশটির অস্থিরতা তখন চরম পর্যায় ছিলো। তাকে প্রায়ই এমন সব সুইমিং পুলে প্রশিক্ষণ নিতে হতো, যার ছাদ বোমা হামলায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। মার্দিনি বলেন,
“কখনও কখনও আমরা যুদ্ধের কারণে আমরা ঠিকমত প্রশিক্ষণ নিতে পারিনি, মাঝে মাঝে এমন পুলে সাঁতার কেটেছি যেখানে ছাদগুলো বোমার আঘাতে তিন বা চার জায়গায় খোলা ছিল।”
দামাস্কাস এর পরিস্থিতি ক্রমশ অস্থির হয়ে ওঠে এবং মার্দিনি ও তার বোন সারাহ জীবন বাঁচাতে অবশেষে লেবানন ও তুরস্কের মধ্য দিয়ে সিরিয়া ছেড়ে গ্রিসে পালিয়ে যান।
সাল ২০১৫, যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়াতে যখন জীবন বাঁচানো দায়, তখন সিরিয়ান শরণার্থী ও অলিম্পিক সাঁতারু ইউসরা মার্দিনি, বোন সারা মার্দিনি ও তাদের পরিবার সহ ২০ জন শরণার্থী ডিঙ্গি নৌকায় গ্রিক দ্বীপ লেবসে আশ্রয় নিতে রওনা হন। তুরস্ক থেকে গ্রিসের পথে রওনা হবার ৩০ মিনিট পর আইজিন সাগরে ভাসমান অবস্থায় নৌকার ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে নৌকাটি সাগরে ডুবতে থাকে। কারণ নৌকাটির ধারণক্ষমতা ছিলো সর্বোচ্চ ৬ জন, কিন্তু নৌকায় আরোহী ছিল ধারণক্ষমতার বেশি। নৌকার মাত্র ৪ জন আরোহী সাঁতার জানতেন। জীবন বাঁচাতে তারাই সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
ইউসরা মার্দিনি বলেন,
“আমরা মাত্র চারজন ছিলাম, যারা জানতাম কীভাবে সাঁতার কাটতে হয়। আমার দুটি হাত, একটি সাঁতার কাটায় ব্যস্ত ছিলো এবং অপরটি নৌকার সাথে সংযুক্ত দড়িটি টেনে চলেছিলো। সমুদ্রের ঠাণ্ডা পানিতে আমরা ডাঙ্গার সন্ধানে সাড়ে তিন ঘণ্টা সাঁতরেছিলাম। এমন মুহূর্ত এসেছে আপনার মনে হবে শরীর প্রায় অবশ…মৃত্যু আপনার সন্নিকটে। সেই মুহূর্তটি কীভাবে বর্ণনা করবো, আমি জানি না।”
তিনি আরও বলেন,
“যদিও আজও আমি দিগন্তবিস্তৃত উন্মুক্ত সাগর ঘৃণা করি, কিন্তু জীবন বাঁচানোর সেই স্মৃতি আমার জন্য দুঃস্বপ্ন নয়। আমি মনে করি সাঁতার না জানলে আমি কখনো বাঁচতে পারতাম না। তাই এই জীবন-মৃত্যুর অভিজ্ঞতা আমার জন্য একটি ইতিবাচক স্মৃতি।”
লেবস, মেসেডোনিয়া, সার্বিয়া, হাঙ্গেরি ও অস্ট্রিয়া ভ্রমণের পর ইউসরা ও সারাহ মার্দিনি তাদের চূড়ান্ত গন্তব্য জার্মানি পৌঁছান।ইউসরা মার্দিনি ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকে ১০ জনের শরণার্থী দলে প্রতিযোগী হিসেবে অংশ গ্রহণ করে ১০০ মিটার বাটারফ্লাই ইভেন্টে ৪১তম ও ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইল ইভেন্টে ৪৫তম স্থান অর্জন করেন।
বর্তমানে মার্দিনি জার্মানির বার্লিনে বসবাস করছেন ও ২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিকের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছেন। এছাড়াও ইউসরা মার্দিনি নিজের অভিজ্ঞতা ও জীবন নিয়ে সম্প্রতি একটি বই লিখেছেন যা প্রকাশিত হয়েছে ২০১৮ এর ১৮ই মে, নাম Butterfly: From Refugee to Olympian, My Story of Rescue, Hope and Triumph।
২০১৯ সালে তাকে নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের কথা চলছে।
অ্যান মকোসিনস্কি, উদ্ভাবক
অ্যান মকোসিনস্কি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী একজন প্রতিভাবান উদ্ভাবক। ২০ বছর বয়সী কানাডার ভিক্টোরিয়ার অধিবাসী এই তরুণী এখন ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়াতে অধ্যয়নরত। ২০১৩ সালে ১৫ বছর বয়সে অ্যান আবিষ্কার করেন বিকল্প শক্তিতে চালিত টর্চ লাইট, যা মানুষের দেহের উত্তাপ কে বিদ্যুতে রূপান্তর করে জ্বালাতে পারে এলইডি বাল্ব। অ্যান তার ফিলিপিনে বসবাসকারী বন্ধুর জন্য এই টর্চটি বানিয়েছিলেন, যার বাসায় বিদ্যুৎ বা ব্যাটারি কিছুই ছিলো না। সে রাতে পড়াশোনা করতে পারতো না। অ্যানের আবিষ্কৃত ‘হলো ফ্ল্যাশলাইট’ স্থানীয় বিজ্ঞান মেলার দ্বিতীয় স্থান পেয়েছিলেো এবং এরপর ২০১৩ সালে গুগল সায়েন্স ফেয়ার এর শীর্ষ পুরস্কার জিতেছিলো আবিষ্কারটি। কানাডা-ওয়াইড সায়েন্স ফেয়ারে স্বর্ণপদক এবং এনার্জি অ্যাওয়ার্ড এবং ইন্টেল ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ফেয়ারে চারটি পুরস্কারও জেতে অ্যানের হলো ফ্ল্যাশলাইট।
তার ঠিক ৩ বছর পরে অ্যান আবিষ্কার করেন ই-ড্রিঙ্ক মগ। এই মগে আপনি গরম কফি বা চা যা-ই খান না কেন, সেই উত্তাপ থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ আপনার ব্যবহৃত মোবাইল, ল্যাপটপ বা ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেটকে চার্জ করতে পারবে এবং তা ন্যূনতম ৩০ মিনিট সচল থাকবে।
সোফিয়া তোমভ, গবেষক
টেনেসির সোফিয়া ২০১৬ সালে ডিসকভারি এডুকেশন থ্রি এম ইয়ং সায়েন্টিস্ট চ্যালেঞ্জে ফাইনালিস্ট হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। সোফিয়ার উপস্থাপিত প্রজেক্টটি রোগী ও চিকিৎসক উভয়কেই পরামর্শকৃত ঔষধ গ্রহণ করার পূর্বেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানাতে সক্ষম।
সোফিয়া বিজনেস ইনসাইডার এর সাথে সাক্ষাতকালীন বলেন যে, একটি ফারমাসিউটিক্যালসের বিজ্ঞাপন দেখে তার মাথায় প্রোজেক্টের ধারণাটি আসে। তিনি জানতে পারেন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এইডস, ডায়াবেটিস, ফুসফুসের রোগ, বা নিউমোনিয়া থেকেও বেশি মৃত্যু ঘটায়।
সোফিয়া গবেষণায় জানতে পারেন ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেহের জিনকে প্রভাবিত করে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির সম্মুখীন করে। কিন্তু দেহের ঠিক কোন জিনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা অনুসন্ধানে চিকিৎসকের দীর্ঘ সময় লেগে যায়, যা রোগীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়।
তাই সোফিয়া এমন একটি অ্যালগরিদম আবিষ্কার করেন, যা জিন প্রতিস্থাপনের গতি দ্রুত করে ফেলে। একাধিক কম্পিউটার প্রসেসর ব্যবহার করে কোডিং এর সাহায্যে আক্রান্ত জিন খুঁজে বের করার কাজ দ্রুততর হয়। সোফিয়ার এই এক প্রকল্প বাঁচাতে পারে লাখো প্রাণ।
ইউনিভার্সিটি অব টেনেসির শিক্ষার্থী সোফিয়া তোমভ বর্তমানে আলঝেইমার নিয়ে গবেষণা করছেন।
ললিতা প্রসিদা শ্রী পাদা শ্রীশাই, উদ্ভাবক
২০১৬ সালে ভারতের ওড়িশায় বসবাসকারী ক্লাস নাইন পড়ুয়া শিক্ষার্থী ললিতা ভুট্টা ক্ষেতের পাশ দিয়ে বাসায় ফেরার সময় দেখে, চাষীরা একপাশে ভুট্টার খোসা জমা করে রেখেছে। সে কৌতূহলবশত কিছু খোসা বাসায় নিয়ে আসে।
বাসায় এনে ভুট্টার খোসা পানিতে ভিজিয়ে রাখে ললিতা। কিছুক্ষণ পর খেয়াল করে পানি যেন আগের চেয়ে বেশি পরিষ্কার লাগছে। এরপর ললিতা শুষ্ক ভুট্টার খোসা পানিতে ভিজিয়ে পরীক্ষা চালায়। এবার সে নিশ্চিত হয় ভুট্টার খোসা পানির দূষণ হ্রাস করছে। সময়ের সাথে ললিতা ভুট্টার খোসা ব্যবহার করে দূষিত পানিকে ৭০%-৮০% বিশুদ্ধ করার প্রক্রিয়া আবিষ্কার করে, যা তাকে গুগলের বিজ্ঞান মেলায় বিজয়ী করে ১০০০০ মার্কিন ডলার জেতায়।